সমর পাল
ঋকবেদের অনেক শ্লোক লিখেছেন ঋষি অঙ্গিরা। তিনি ব্রহ্মার মানসপুত্র হিসেবে পরিচিত। কর্দম ঋষির কন্যা শ্রদ্ধাকে তিনি বিয়ে করেন। অঙ্গিরার পুত্র উতথ্য মুনি। উতথ্যের স্ত্রী মমতার গর্ভে উতথ্যের ছোট ভাই বৃহস্পতির ঔরসে জন্ম হয় ভরদ্বাজমুনির। ভরদ্বাজের পুত্র দ্রোণাচার্য ছিলেন কুরু-পাণ্ডব উভয় বংশের অস্ত্রগুরু। তবে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন দুর্যোধনের পক্ষে, কারণ তিনি কৌরবদের অন্নে প্রতিপালিত ছিলেন।
দ্রোণের স্ত্রী কৃপীর (মহর্ষি শরদ্বানের কন্যা। এর ভাই কৃপাচার্য। মহারাজ শান্তনু এদের কৃপা করে পালন করেছিলেন বলে এই নাম) গর্ভে জন্ম হয় পুত্ৰ অশ্বত্থামার। পিতা দ্রোণের কাছে তিনি অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তিনি পিতার মতোই দুর্যোধনের পক্ষে ছিলেন।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পাণ্ডবপক্ষে মালবরাজ ইন্দ্রবর্মা ছিলেন। তার একটি হাতির নাম অশ্বত্থামা। যুদ্ধে প্রবল পরাক্রান্ত দ্রোণের হাতে (একাদশ থেকে পঞ্চদশ দিবস এই পাঁচদিন দ্রোণ ছিলেন কৌরব পক্ষের সেনাপতিত্বে) পাণ্ডবপক্ষের বহু সেনাপতির প্রাণ যায়। তাকে থামাতে না পারলে পাণ্ডবদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। পুত্র অশ্বত্থামাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন দ্রোণ। সুতরাং কৃষ্ণের পরামর্শ অনুযায়ী জোরে জোরে প্রচার করা হয় যে, যুদ্ধে অশ্বত্থামা নিহত হয়েছেন। এ প্রচারণা দ্রোণ সহসা বিশ্বাস না করে সত্যবাদী যুধিষ্ঠিরের বক্তব্য শুনতে চাইলেন। যুধিষ্ঠির এই মিথ্যা অপপ্রচারে রাজি হলেন না। সবাই বিমর্ষ।
ভীম গদার আঘাতে ইন্দ্রবর্মার অশ্বত্থামা নামক হাতিকে মেরে ফেলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণের প্ররোচনায় ভীমের সমর্থনে যুধিষ্ঠির উচ্চৈঃস্বরে দ্রোণকে বললেন— অশ্বত্থামা হতঃ। অতঃপর ধীরে ধীরে বললেন—ইতি গজঃ। অর্থাৎ-অশ্বত্থামা নামের হাতি নিহত হয়েছে। ইতি গজঃ অংশটি যুদ্ধের প্রবল কোলাহলে দ্রোণের কানে পৌঁছেনি বলে যুধিষ্ঠিরের অশ্বত্থামা হতঃ অংশটি শুনে দ্রোণাচার্য পুত্রশোকে অধীর হয়ে অস্ত্রত্যাগ করেন। রথের উপরেই তার মৃত্যু ঘটে। এই মিথ্যা ভাষণের জন্য অবশ্য পরবর্তীকালে যুধিষ্ঠিরকে নরক দর্শন করতে হয়েছিল। কোনো কথা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে না বলে কিছু সত্য গোপন করা বিষয়ে আমাদের সমাজে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। সংক্ষেপে ‘হত গজ করা’ ‘কিংবা ‘হত গজ করে সারা’- এভাবেও প্রবাদটি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন