পিপুফিশু

সমর পাল

এ বিষয়ে গল্প হলো এ রকম—

এক রাজা ঘোষণা করলেন যে, তার রাজ্যে সবচাইতে অলস ব্যক্তিকে তিনি দেখতে চান এবং তাকে পরস্কৃত করতে চান। ঢোল-শহরত করে প্রচার করা হলো রাষ্ট্রীয় ঘোষণা। ব্যতিব্যস্ত সারাদেশ। মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা বেশ তৎপর। রাজ্যময় ঘুরে বেড়াচ্ছে সেপাই-সান্ত্রী-বরকন্দাজ-পাইক। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তারা বাছাই করে করে বেশ কিছু অলস ব্যক্তিকে নিয়ে এলো রাজধানীতে। প্রতিযোগিতা হবে শ্রেষ্ঠত্বের। অতঃপর রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রদান করবেন মহারাজ স্বয়ং।

এক বিশাল মাঠে কুঁড়েদের জন্য তৈরি করা হলো খড়ের কুঁড়েঘর। আয়োজন পাকা। বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মানুষও প্রস্তুত। একেক কুঁড়েঘরে একেক অঞ্চলের তিনজন করে অলস থাকছে। পুরো প্রশাসন ও রাষ্ট্রের পরিচালকগণ ভীষণ ব্যস্ত এই প্রতিযোগিতা নিয়ে। যথাসময়ে মহারাজের হুকুমে রাতের বেলা ঘুমন্ত অলসদের কুঁড়েঘরগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হলো।

আগুনের শিখা ছড়িয়ে পড়তেই প্রায় সব কুঁড়েঘর থেকেই অলস ব্যক্তিরা ছুটে বেরিয়ে পড়লো বাইরে। মৃত্যুভয় তাদের আলস্য যেন দূর করে দিল। বিচারকরা দেখলেন একটি কুঁড়েঘর তখনো শূন্য হয়নি। পাত্রমিত্র সভাসদরা গেলেন ছুটে। সেখানে তিন অলস শুয়ে আছে। আগুন বাড়ছে কিন্তু তারা উঠবে না কিছুতেই। তাপ লাগছে শরীরে। চোখ বন্ধ করে আছে তিনজনই। কারণ তাকানো তো কাজের মধ্যেই পড়ে এবং তাতেও কষ্ট আছে।

প্রথম কুঁড়ে তাপের জন্য বলছে—কত রবি জ্বলে রে! অর্থাৎ কতগুলো সূর্য জ্বলছে। দ্বিতীয় কুঁড়ে বলছে–কেবা আঁখি মেলে রে—অর্থাৎ এ জন্য কে আর চোখ খোলে! আগুন ক্রমাগত বেড়ে পিঠ যেন পুড়ে যাচ্ছে সবার। তৃতীয় কুঁড়ে তখন বলে—পি পু ফি শু। অর্থাৎ পিঠ পুড়লো ফিরে শুই। এই কথা বললেও সে ফিরে আর শোয় না। ঐ অবস্থায় দ্রুততার সাথে রাজার লোকেরা এই তৃতীয় ব্যক্তিকে উদ্ধার করে কুঁড়ের বাদশা হিসেবে শ্রেষ্ঠ অলসের স্বীকৃতি দিল। অন্য দু’জন তৃতীয় অলসের মতো নড়াচড়া না করলেও লক্ষণীয় যে, তৃতীয় ব্যক্তি কথা বলতে সংক্ষিপ্ততম সময় ব্যয় করেছে। বাংলা প্রবাদে বড় কুঁড়েকে পি পু ফি শু বলে আখ্যায়িত করা হয়। তুলনীয় প্রবাদ হলো গোঁফ-খেজুরে।

সকল অধ্যায়

১. অকাল কুষ্মাণ্ড
২. অগস্ত্যযাত্রা
৩. অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার
৪. অতি দর্পে হত লঙ্কা
৫. অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই
৬. অতি মন্থনে বিষ ওঠে
৭. অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
৮. অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট
৯. অন্ধের হাতি দেখা
১০. অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
১১. অশ্বত্থামা হত ইতি গজ
১২. আগ নাংলা যে দিকে যায় পাছ নাংলা সে দিকে যায়
১৩. আষাঢ়ে গল্প
১৪. আসলে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া
১৫. ইল্লত যায় না ধুলে খাসলত যায় না মলে
১৬. ওঝার ব্যাটা বনগরু
১৭. কংসমামা
১৮. কাকতালীয় ব্যাপার
১৯. কালনেমির লঙ্কাভাগ
২০. কুম্ভকর্ণের ঘুম
২১. কুরুক্ষেত্র কাণ্ড
২২. কড়ায় গণ্ডায়
২৩. খর দজ্জাল
২৪. খাঞ্জা খাঁ
২৫. খয়ের খাঁ
২৬. গজকচ্ছপের লড়াই
২৭. গজকপিত্থবৎ
২৮. গদাই লশকরি চাল
২৯. গন্ধমাদন বয়ে আনা
৩০. গোঁফ খেজুরে
৩১. গোকুলের ষাঁড়
৩২. গৌরচন্দ্রিকা
৩৩. ঘরভেদী বিভীষণ
৩৪. ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে
৩৫. ঘুঁটো জগন্নাথ
৩৬. চিত্রগুপ্তের খাতা
৩৭. চেনা বামুনের পৈতা লাগে না
৩৮. চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
৩৯. ছকড়া নকড়া
৪০. জগা খিচুড়ি
৪১. জড়ভরত
৪২. ঢাক পেটানো
৪৩. ঢাকের বাঁয়া
৪৪. ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার
৪৫. ত্রিশঙ্কু অবস্থা
৪৬. দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার
৪৭. দশচক্রে ভগবান ভূত
৪৮. দেবতার বেলা লীলাখেলা পাপ লিখেছে মানুষের বেলা
৪৯. দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ
৫০. ধনুর্ভঙ্গ পণ
৫১. ধন্বন্তরি
৫২. ধর লক্ষ্মণ
৫৩. ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির
৫৪. ধর্মের ষাঁড়
৫৫. ধান ভানতে শিবের গীত
৫৬. ধুন্ধুমার কাণ্ড
৫৭. নরাণাং মাতুলক্রমঃ
৫৮. পরশুরামের কুঠার
৫৯. পরের ধনে পোদ্দারি
৬০. পাততাড়ি গুটানো
৬১. পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট বাপের বাড়ি ঝি নষ্ট
৬২. পিপুফিশু
৬৩. পোয়া বারো
৬৪. ফতো নবাব
৬৫. ফপর দালালি
৬৬. ফেউ লাগা
৬৭. বাজখাঁই আওয়াজ
৬৮. বিদুরের খুদ
৬৯. বিন্দেদূতী
৭০. ভবতি বিজ্ঞতমঃ ক্রমশো জনঃ
৭১. ভস্মে ঘি ঢালা
৭২. ভাগের মা গঙ্গা পায় না
৭৩. ভানুমতির খেল
৭৪. ভিজা বিড়াল
৭৫. ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা
৭৬. ভুশুণ্ডি কাক
৭৭. ভেড়াকান্ত
৭৮. ভেড়ার পাল
৭৯. মগের মুলুক
৮০. মরার সময় মকরধ্বজ
৮১. মাছি মারা কেরানি
৮২. মাছের মায়ের পুত্রশোক
৮৩. মান্ধাতার আমল
৮৪. মারের ওপর ওষুধ নাই
৮৫. মাৎস্যন্যায় অবস্থা
৮৬. যক্ষের ধন বা কুবেরের ধন
৮৭. যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা
৮৮. যত দোষ নন্দ ঘোষ
৮৯. যে দামে কেনা সেই দামে বিক্রি
৯০. রথ দেখা ও কলাবেচা
৯১. রাবণের চিতা
৯২. লঙ্কাকাণ্ড
৯৩. লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন
৯৪. লেফাফাদুরস্ত
৯৫. শকুনিমামা
৯৬. শনির দশা
৯৭. শাঁখের করাত
৯৮. শাপে বর
৯৯. শিখণ্ডী খাড়া করা
১০০. শিবরাত্রির সলতে
১০১. শুভঙ্করের ফাঁকি
১০২. শ্যাম রাখি কি কুল রাখি
১০৩. ষাঁড়ের গোবর
১০৪. সরফরাজি চাল
১০৫. সস্তার তিন অবস্থা
১০৬. সাক্ষীগোপাল
১০৭. সাত নকলে আসল খাস্তা
১০৮. হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী
১০৯. হরি ঘোষের গোয়াল
১১০. হরিহর আত্মা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন