সরফরাজি চাল

সমর পাল

মোড়লগিরি, ফোঁপর দালালি, অনাবশ্যক বা অনধিকার কর্তাগিরিকে বাংলা প্রবাদে সরফরাজি চাল হিসেবে চিহ্নিত করার হয় ব্যঙ্গার্থে। আবার ফারসি শব্দ সরফরাজ অর্থও মোড়ল, নেতা বা কর্তা। বাহাদুরি, মোড়লি, মাতব্বরি, মুরুব্বিয়ানা, চালাকি, অনাবশ্যক কর্তৃত্ব প্রদর্শন, আস্ফালন ইত্যাদি অর্থে প্রযোজ্য হয় সরফরাজি প্রবাদটি। এ প্রবাদের উৎসে রয়েছেন বাংলা-বিহার- উড়িষ্যার নবাব সরফরাজ খান (১৭৩৯-১৭৪০ খ্রি.)।

নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর মৃত্যুর পর তার জামাতা সুজাউদ্দিন খান বাংলা- বিহার উড়িষ্যার নবাব (সুবেদার) হন ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দর জুলাই মাসে। তিনি মারা যান ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মার্চ তারিখে। অতঃপর সুজাউদ্দিনের পুত্র সরফরাজ খান বাংলার মসনদে বসেন। কিন্তু তিনি নিতান্ত অলস, অকর্মণ্য ও দুশ্চরিত্র ছিলেন বলে শাসনকাজে তেমন যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেননি। শোনা যায় যে, তার হেরেমে ১৫০০ রমণী ছিল। তাদের সাথে সরফরাজ খান প্রমত্ত অবস্থায় দিনরাত কাটাতেন কিন্তু তিনি মদ্যপান করতেন না। কোনো সুন্দরী রমণীর কথা শুনলে অসহিষ্ণু হয়ে তিনি ন্যায়নীতিবোধ হারিয়ে ফেলতেন।

১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দেই নাদির শাহ দিল্লি আক্রমণ করে লণ্ডভণ্ড করে দেন সবকিছু। ভীত সরফরাজ খান বাংলার তিন বছরের খাজনা নাদির শাহের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, এমনকি নাদির শাহের নামে মুদ্রা পর্যন্ত প্রচলন করলেন। বিষয়টি তৎকালীন মোগল-সম্রাট মুহম্মদ শাহের (১৭১৯-১৭৪৮ খ্রি.) বিরাগ সৃষ্টি করেছিল বিরুদ্ধবাদী অমাত্যদের কৌশলে।

সরফরাজ খান স্বেচ্ছাচারী ছিলেন। পিতার আমলের বিশ্বাসী ও অনুগতদের প্রতি প্রচণ্ড অন্যায় ব্যবহার করেন তিনি। জগৎশেঠের সুন্দরী পুত্রবধূকে তার অন্তঃপুরে পাঠাতে বাধ্য করেন। তার প্রতি আপাত নতিস্বীকারের ভান করে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সূচনা হয়। নিজের ক্ষমতা, রাজামাত্য ও কর্মচারীদের বিশ্বাস এবং শাসন-সংক্রান্ত জ্ঞান সবকিছুতেই সরফরাজ খান অনভিজ্ঞ, অনবহিত ও অন্ধ ছিলেন। নিজেকে তিনি শক্তিমান বলে মনে করতেন এবং যাচ্ছেতাই আচরণ করতেন, নবাবি ফলাতেন। এ অবস্থায় বাংলায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এই সুযোগে বিহারের নায়েব নাজিম আলীবর্দি খান দিল্লির সম্রাট মুহম্মদ শাহের নিকট প্রচুর উপঢৌকন প্রেরণ করে হিসামউদ্দিন সুজাউল মুল্ক মহব্বত জঙ্গ উপাধি এবং বাংলা-বিহার- উড়িষ্যার শাসনকর্তৃত্ব লাভ করেন।

অতঃপর ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে সরফরাজ খানকে গিরিয়ার যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত করেন আলীবর্দি খান। অলস, অকর্মণ্য অথচ নবাব হিসেবে ক্ষমতার দাপট প্রকাশে সরফরাজ খান বাংলার এক প্রবাদ- পুরুষরূপে পরিচিত হয়ে আছেন।

সকল অধ্যায়

১. অকাল কুষ্মাণ্ড
২. অগস্ত্যযাত্রা
৩. অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার
৪. অতি দর্পে হত লঙ্কা
৫. অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই
৬. অতি মন্থনে বিষ ওঠে
৭. অতি লোভে তাঁতি নষ্ট
৮. অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট
৯. অন্ধের হাতি দেখা
১০. অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
১১. অশ্বত্থামা হত ইতি গজ
১২. আগ নাংলা যে দিকে যায় পাছ নাংলা সে দিকে যায়
১৩. আষাঢ়ে গল্প
১৪. আসলে মুষল নাই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া
১৫. ইল্লত যায় না ধুলে খাসলত যায় না মলে
১৬. ওঝার ব্যাটা বনগরু
১৭. কংসমামা
১৮. কাকতালীয় ব্যাপার
১৯. কালনেমির লঙ্কাভাগ
২০. কুম্ভকর্ণের ঘুম
২১. কুরুক্ষেত্র কাণ্ড
২২. কড়ায় গণ্ডায়
২৩. খর দজ্জাল
২৪. খাঞ্জা খাঁ
২৫. খয়ের খাঁ
২৬. গজকচ্ছপের লড়াই
২৭. গজকপিত্থবৎ
২৮. গদাই লশকরি চাল
২৯. গন্ধমাদন বয়ে আনা
৩০. গোঁফ খেজুরে
৩১. গোকুলের ষাঁড়
৩২. গৌরচন্দ্রিকা
৩৩. ঘরভেদী বিভীষণ
৩৪. ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে
৩৫. ঘুঁটো জগন্নাথ
৩৬. চিত্রগুপ্তের খাতা
৩৭. চেনা বামুনের পৈতা লাগে না
৩৮. চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
৩৯. ছকড়া নকড়া
৪০. জগা খিচুড়ি
৪১. জড়ভরত
৪২. ঢাক পেটানো
৪৩. ঢাকের বাঁয়া
৪৪. ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার
৪৫. ত্রিশঙ্কু অবস্থা
৪৬. দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার
৪৭. দশচক্রে ভগবান ভূত
৪৮. দেবতার বেলা লীলাখেলা পাপ লিখেছে মানুষের বেলা
৪৯. দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ
৫০. ধনুর্ভঙ্গ পণ
৫১. ধন্বন্তরি
৫২. ধর লক্ষ্মণ
৫৩. ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির
৫৪. ধর্মের ষাঁড়
৫৫. ধান ভানতে শিবের গীত
৫৬. ধুন্ধুমার কাণ্ড
৫৭. নরাণাং মাতুলক্রমঃ
৫৮. পরশুরামের কুঠার
৫৯. পরের ধনে পোদ্দারি
৬০. পাততাড়ি গুটানো
৬১. পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট বাপের বাড়ি ঝি নষ্ট
৬২. পিপুফিশু
৬৩. পোয়া বারো
৬৪. ফতো নবাব
৬৫. ফপর দালালি
৬৬. ফেউ লাগা
৬৭. বাজখাঁই আওয়াজ
৬৮. বিদুরের খুদ
৬৯. বিন্দেদূতী
৭০. ভবতি বিজ্ঞতমঃ ক্রমশো জনঃ
৭১. ভস্মে ঘি ঢালা
৭২. ভাগের মা গঙ্গা পায় না
৭৩. ভানুমতির খেল
৭৪. ভিজা বিড়াল
৭৫. ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা
৭৬. ভুশুণ্ডি কাক
৭৭. ভেড়াকান্ত
৭৮. ভেড়ার পাল
৭৯. মগের মুলুক
৮০. মরার সময় মকরধ্বজ
৮১. মাছি মারা কেরানি
৮২. মাছের মায়ের পুত্রশোক
৮৩. মান্ধাতার আমল
৮৪. মারের ওপর ওষুধ নাই
৮৫. মাৎস্যন্যায় অবস্থা
৮৬. যক্ষের ধন বা কুবেরের ধন
৮৭. যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা
৮৮. যত দোষ নন্দ ঘোষ
৮৯. যে দামে কেনা সেই দামে বিক্রি
৯০. রথ দেখা ও কলাবেচা
৯১. রাবণের চিতা
৯২. লঙ্কাকাণ্ড
৯৩. লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন
৯৪. লেফাফাদুরস্ত
৯৫. শকুনিমামা
৯৬. শনির দশা
৯৭. শাঁখের করাত
৯৮. শাপে বর
৯৯. শিখণ্ডী খাড়া করা
১০০. শিবরাত্রির সলতে
১০১. শুভঙ্করের ফাঁকি
১০২. শ্যাম রাখি কি কুল রাখি
১০৩. ষাঁড়ের গোবর
১০৪. সরফরাজি চাল
১০৫. সস্তার তিন অবস্থা
১০৬. সাক্ষীগোপাল
১০৭. সাত নকলে আসল খাস্তা
১০৮. হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী
১০৯. হরি ঘোষের গোয়াল
১১০. হরিহর আত্মা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন