কাজী আনোয়ার হোসেন
মতিঝিল, ঢাকা।
বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স-এর হেডকোয়ার্টার। সোমবার দুপুর দেড়টা। নিভিয়ে রাখা হয়েছে সাততলা দালানের ষষ্ঠ তলার কিছু অফিসের বাতি। করিডরে আপাতত কেউ নেই। দুনিয়ার নানান দেশে জরুরি মিশনে আছে বেশিরভাগ এজেন্ট। অফিসে রয়ে গেছে মাত্র ক’জন-সোহেল আহমেদ, সলীল সেন, জাহেদ, রূপা ও জুনিয়র এজেন্ট রায়হান রশিদ। ওদেরও অফিশিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকার কথা, কিন্তু বসের নির্দেশে হাজির হয়েছে কমপিউটার ডিপার্টমেন্টে। আজ ভোরে দেশে ফিরে এসেছে সোহানা। অফিসে আসত আগামীকাল সকালে, তবে আধঘণ্টা আগে ফোন করে ওকে ডেকেছেন বিসিআই চিফ মেজর জেনারেল (অব.) রাহাত খান।
একটু আগে বিসিআই-এর কমপিউটার ডিপার্টমেন্ট থেকে মেইন সুপার কমপিউটারের এক্সটেণ্ডেড লাইন দেয়া হয়েছে সপ্তম তলায় চিফের পার্সোনাল কমপিউটারে। এখন গম্ভীর চেহারায় এলইডি স্ক্রিনের দিকে চেয়ে আছেন তিনি।
কমপিউটার ডিপার্টমেন্টে ডার্টি গেম-এর প্রতিযোগিতা দেখতে গিয়ে বিসিআই এজেন্টরা বুঝে গেছে, ভয়ঙ্কর এই মরণপণ লড়াইয়ে নয়জন খুনি ও ধর্ষককে খুন করতে পারলে তবেই প্রাণে বাঁচবে ওদের বন্ধু মাসুদ রানা।
ডেস্কে ইন্টারকম বাজতে কল রিসিভ করল বিসিআই-এর কমপিউটার ডিপার্টমেন্টের চিফ রায়হান রশিদ।
‘এইমাত্র এলেন সোহানা ম্যাডাম,’ জানাল আর্মি থেকে অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার মোজাম্মেল শেখ।
অন্য এক স্ক্রিনে রায়হান রশিদ দেখল, গ্রাউণ্ড ফ্লোরে ঢুকে মেইন লিফট দুটো পেছনে ফেলে ডানে বাঁক নিল সোহানা। অচেনা কেউ ওদিকে যায় না। ভুল করে গেলেও দেখে ওখানে আছে পরিত্যক্ত জং-ধরা লিফট। সোহানা ডানহাতের তালু ওটার পাশের দেয়ালে ভাঙাচোরা অ্যাকসেস কন্ট্রোল ডিভাইসের সামনে নিতেই দেখা গেল জং-ধরা দরজার গায়ে দেখা দিয়েছে চার ইঞ্চি বর্গাকার চকচকে স্ক্রিন। ওখানে ভার্চুয়াল কিবোর্ডে নিজের পিন নম্বর দিতেই খুলে গেল দরজা। তবে ওটা আসলে লিফট নয়, আধুনিক স্ক্যানার। আপাদমস্তক ডিজিটালি নিরীক্ষা করা হবে আগত মানুষটার, যাতে ক্ষতিকর কিছু বহন করলে সেটা ধরা পড়ে। সোহানা ভেতরে ঢুকতেই লেগে গেল দরজা। ভেতরটা ঝকঝকে তকতকে। সোহানার জানা আছে, ইতোমধ্যে কাজ করছে অদৃশ্য স্ক্যানার। ওর প্রতিটি পদক্ষেপ সিসিটিভিতে দেখছে সিকিউরিটির লোকজন।
স্ক্যানিং শেষ হয়ে যেতেই নিজ থেকে খুলল উল্টোদিকে আরেকটা দরজা। সোহানা বেরিয়ে এল ফাঁকা বেসমেন্ট এরিয়ায়। এখানে আরেকটা লিফটে, চেপে উঠল ছয়তলায়। ওর অফিস এই ফ্লোরেই। লিফটের দরজা খুলে যেতেই বিস্মিত হলো ও। করিডরে দাঁড়িয়ে আছে সোহেল, সলীল, জাহেদ, রূপা, রায়হান রশিদ ও সিকিউরিটি টিমের সদস্যরা।
‘কী?’ ভুরু কুঁচকে বলল সোহানা। ‘একসঙ্গে সবাই হঠাৎ করে হাজির?’
অন্যরা বুঝে গেল, সোহানাকে কিছুই বলেননি বস্।
‘ইয়ে, সোহানা, তুমি বরং কমপিউটার সেকশনে এসো, ‘ খুক খুক করে কেশে উঠল সোহেল।
‘কেন, বিশেষ কিছু দেখতে হবে?’ সবার মুখ শুকিয়ে গেছে দেখে জানতে চাইল সোহানা, ‘আসলে কী হয়েছে?’
‘পরে বলছি, আগে এসো,’ কমপিউটার ডিপার্টমেন্টের দরজা দেখাল সোহেল।
‘বেশ, অন্যদের পিছু নিল সোহানা।
ওরা ঢুকে পড়ল কমপিউটার ডিপার্টমেন্টে। বিশাল ঘরে কাজ করছে ক’জন ব্যস্ত অপারেটর। তাদেরকে পাশ কাটিয়ে মেইন কমপিউটারের মস্ত স্ক্রিনের সামনে থামল সোহেল। আগেই ওখানে রাখা আছে ক’টা চেয়ার। হাতের ইশারায় ওগুলো দেখাল রায়হান রশিদ। ‘আপনারা বসুন।’
সবাই বসতেই কৌতূহলী গলায় জিজ্ঞেস করল সোহানা, ‘আসলে কী হয়েছে? সবাই এত গম্ভীর কেন? আমি দেশে ফিরতে না ফিরতেই কল করে কেন আসতে বললেন বস্?’
‘তুমি তো জানো, রানা ছিল এল সালভেদরের পাহাড়ি দুর্গ সোনসোনেট কারাগারে,’ শুষ্ক গলায় বলল সোহেল। ‘আমরা স্থির করেছিলাম ওখান থেকে ওকে বের করে আনব। এই ব্যাপারে কথা হয়েছিল বসের সঙ্গে।’
‘হ্যাঁ,’ বলল সোহানা, ‘কোঅর্ডিনেটর হব আমি।’
‘তবে রানা এখন আছে প্রশান্ত মহাসাগরের অচেনা এক দ্বীপে,’ বলল সোহেল। বাকি কথা বলতে হাতের ইশারা করল রায়হান রশিদকে।
‘আপনি আগে দেখুন কমপিউটার স্ক্রিন,’ সোহানাকে বলল রায়হান। ‘পরে আলাপ হবে।’
স্ক্রিনের দিকে তাকাল সোহানা।
ওখানে মুভি পোস্টারের মত গ্রাফিক। ব্যাকগ্রাউণ্ডে জং- ধরা জেলখানার সেল ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় সবুজ দ্বীপের দৃশ্য। ইমেজে ফাঁসির মঞ্চ, পিচ্ছিল দড়ি ও ইলেকট্রিক চেয়ার। নিচে বন্দিদের ছবি ও নাম। ক্লোযআপ করা হয়েছে রূপসী রোযি ইয়াসিমানের ছবি। পাশে রুপার্ট শ্যাননের সাইকোটিক চেহারা। খাড়া এক ক্লিফের কাছ থেকে সরে জঙ্গলে গিয়ে ঢুকছে অন্যরা। রানাকে অনেক পরে পেয়ে ওর ছবি আপলোড করেছে স্টিলের ক্রুরা।
স্ক্রিনের ডিজিটাল তারিখ ও সময় বলছে: আজ সোমবার, ১৭:৩৩:০০।
সোহানার জানার কথা নয়, একটু পর মেক্সিকান মেয়ে ইসাবেলাকে ধর্ষণের পর খুন করবে প্রাক্তন এসএএস মেজর রুপার্ট শ্যানন।
মাউস দিয়ে কমপিউটার স্ক্রিনে রায়হান ক্লিক দিতেই ফুটে উঠল একটি রঙিন মেন্যু:
রুলস্
কনটেস্ট্যান্টস্
গো টু লাইভ!
ব্র্যাড স্টিল-বায়োগ্রাফি
রায়হান কনটেস্ট্যান্ট্স আইকনে ক্লিক দিতেই স্ক্রিনে এল দশজন মানুষের পাসপোর্ট ছবি। সেগুলোর তিনটে এখন লাল ক্রসচিহ্ন দেয়া। নিচে মৃতদের নাম:
রাশান, ম্যানইয়া লোপাতিন।
ইতালিয়ান, এনযো বিয়াঞ্চি।
এবং জার্মান, ডেরেক স্লাইডার।
দশম ছবি দেখে মুখ শুকিয়ে গেল সোহানার
‘দুনিয়ার সবচেয়ে হারামি ক’জন খুনির সঙ্গে লড়বে মাসুদ ভাই,’ জানাল রায়হান। এফবিআই স্পেশাল এজেন্ট এডওয়ার্ড সিমন্সের কাছ থেকে যা জেনেছে, সেটা এবার গড়গড় করে বলল সে। কথা শেষ করে ক্লিক দিল রানার বায়োগ্রাফির ওপরে। ঝড়াৎ করে খুলে গেল নতুন পেজ। ওখানে আছে ব্র্যাড স্টিলের তৈরি করে নেয়া রানার নকল পরিচয়।
ঢাকা শহরে মৌলবাদী এক মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছে বিকৃত মস্তিষ্কের ভয়ঙ্কর নরপশু মাসুদ রানা। তরুণ বয়সে ঢাকা শহরে নামকরা এক ক্যাথোলিক চার্চে হামলা করে। তাতে খুন হয়ে যায় তেরোজন যাজক ও নান। অবশ্য প্রমাণের অভাবে পরে জেলখানা থেকে মুক্তি দেয়া হয় রানাকে। ডিভি লটারিতে জিতে চলে গিয়েছিল আমেরিকায়। একুশ সালে গভীর রাতে অকটেন ঢেলে আগুন দিয়েছে আর্কানসাসের লিটল রকের এক ব্যাপটিস্ট চার্চে। তাতে খুন হয়েছে ছয় যাজক ও এতিমখানার আঠারোজন নাবালক ছেলে। এরপর রানা আমেরিকা থেকে পালিয়ে গিয়ে ঢুকেছে এল সালভেদরে। বাইশ সালে পঙ্গু ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছেলেমেয়েদের একটি হাসপাতালে ফাটিয়ে দিয়েছে শক্তিশালী প্লাস্টিক বোমা। সেই বিস্ফোরণে মারা গেছে বারোজন মহিলা নার্স আর তেত্রিশজন অসহায় ছেলেমেয়ে। তারপর…
আর কিছু না পড়েই সোহেলের চোখে তাকাল সোহানা। ‘এসব কী? এটা কী ধরনের মস্করা?’
মাথা নাড়ল সোহেল। ‘না, সোহানা, এটা মস্করা নয়। গোটা দুনিয়া জুড়ে ওর নামে এসব ছড়াচ্ছে প্রযোজক ব্র্যাড স্টিল।’
‘সত্যিটা আমরা জানলেও সাধারণ মানুষ সেটা জানে না, বলল সলীল, ‘তারা ভাবছে এসব নৃশংস খুনিদের মতই রানাও একই ধরনের রক্তপিশাচ।’
‘এখন আমাদের তা হলে কী করা উচিত?’ বলল সোহানা।
‘তুমি তো দেখলে সবার গোড়ালিতে টাইম বম,’ বলল সোহেল, ‘ফাটবে সতেরো ঘণ্টার একটু পর। প্রশান্ত মহাসাগরের ওদিকে আছে দু’ শ’র বেশি দ্বীপ। আমরা জানি না ঠিক কোথায় আছে রানা। যদি জিপিএস লোকেশন পাঠাতে পারে, তবুও ঠিক সময়ে ওখানে বোধহয় পৌঁছুতে পারব না আমরা।’
‘তাই বলে…’ প্রতিবাদ করতে গিয়েও চুপ হয়ে গেল সোহানা। রাগে লালচে হয়ে গেছে ওর অপরূপ সুন্দর মুখ।
‘আমাদের আসলেই কিছু করার নেই,’ বিড়বিড় করল জাহেদ।
মেনে নিতে কষ্ট হলেও কথাটা চরম সত্যি,’ নিচু গলায় বলল সোহেল। ‘দেখা যাক বস্ কোন পথ খুঁজে বের করতে পারেন কি না।’
ডার্টি গেমের লাইভ ভিডিয়ো চালু করল রায়হান।
কমপিউটার রুমে নেমেছে পিন-পতন নীরবতা।
থমথম করছে সোহানা, সোহেল, জাহেদ ও সলীলের মুখ। আগে কখনও এত অসহায় বোধ করেনি ওরা।
.
সন্ধ্যার আগে দ্বীপ জুড়ে নেমে এসেছে অপার্থিব মায়াবী এক পরিবেশ। চারদিকের আকাশ এখন গভীর নীল জলের পুকুরের মত। লাল-বেগুনি দিগন্তরেখার আগে ভেসে বেড়াচ্ছে গোলাপী ও কমলা ছেঁড়া মেঘের ভেলা। একটু পর আকাশের কালো চাদরের বুকে ফুটে উঠবে কোটি কোটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তপ্ত হাওয়ায় সর-সর শব্দে নড়ে উঠছে পাম গাছের সবুজ পাতা।
প্রেমিক-প্রেমিকার জন্যে সত্যি চমৎকার এক আবহ। এবং তেমনটা মনে হবে বলেই এ-দ্বীপটি বেছে নিয়েছে স্টিল। তার প্রতিটি শো-তে ছিল ভয়াবহতা আর মজা। প্রেমিকার কোলে মাথা রেখে আয়েস করে বিশ্রাম নেয়ার জন্যে এখানে হাজির হয়নি স্টিল। প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছে গত একমাস ধরে। আর তারই ফল আজকের ডার্টি গেম। মস্ত তাঁবুর ভেতরে সবার সামনে রিটা অপমান করলেও মেয়েটার প্রতি আকর্ষণ কমে যায়নি তার। এই শো শেষ হলে বিছানায় তুলতে গেলে বোধহয় বাধা দেবে রিটা। আর তখন ওকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ফূর্তি করার সময় মনে মনে হাসবে স্টিল।
ওদের যে তাঁবু, তার সামনে ছোট্ট বারান্দায় বসে দূরে চেয়ে আছে রিটা। আবছা আলোয় ওকে দেখে নিজের রুচির প্রশংসা না করে পারল না স্টিল। দুনিয়ার দশ সুন্দরীর একজন হচ্ছে এই রিটা। যখন ওর প্রবল আকর্ষণে সব ভুলে ঘনিষ্ঠ হবে মেয়েটা, দারুণ লাগবে স্টিলের। আসলে কোন মেয়ে কখনও উপেক্ষা করতে পারে না তাকে।
সময় হলে নিজের ভুল ঠিকই বুঝবে রিটা।
ওকে সুযোগ করে দেয়ার জন্যে স্টিলের বোধহয় এখন উচিত গিয়ে ওর ঠোঁটে চুমু দেয়া। প্রেমিক-প্রেমিকার ঝগড়া হওয়ার পর দারুণ লাগে যৌন-মিলন করতে, ভাবল স্টিল। রিটার সামনে থেমে নরম সুরে বলল সে, ‘তুমি কি সত্যিই আমাকে ঘৃণা করো?’ তার দু’হাতে বরফ দেয়া কফির দুটো মগ। সূর্যাস্তে লাটিস কফিতে চুমুক দিতে পছন্দ করে রিটা।
মাথা সামান্য পিছিয়ে মৃদু স্বরে বলল মেয়েটা, ‘হ্যাঁ।’
অর্থাৎ সত্যি ঘৃণা করে। বেশ বিরক্ত হলো স্টিল। পরক্ষণে ভাবল, কিন্তু
কিন্তু এটা তো হতে পারে না! ওকে ভালবাসে মেয়েটা। তার মানে আসলে ঘৃণা করছে ওর কাজটাকে। দ্বিধার ভেতরে পড়েছে রিটা। বুঝতে পারছে ওকে ঠকায়নি স্টিল। এমন কী কোন মিথ্যাও বলেনি। এটা ঠিক, ডার্টি গেমের বিষয়ে রিটার সঙ্গে খুঁটিনাটি কোন আলাপ করেনি। তবে সেটা তো হতেই পারে। স্টিল একজন সফল পুরুষ, নিজের কাজ ভালবাসে। সুতরাং ভাল হোক বা মন্দ, যে-কোন মেয়ের উচিত ওকে মন থেকে ক্ষমা করে দেয়া। রিটাকে তো মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে এই দ্বীপে আসতে বাধ্য করেনি স্টিল। যদিও মনে হচ্ছে এখানে এসে নিজের ওপরে রেগে গেছে মেয়েটা।
‘আমি তো তোমাকে আগেই বলেছি, কী ধরনের শো তৈরি করব,’ ফিসফিস করল স্টিল। ‘তুমি তো সবই জানতে, তা-ই না?’
মুখ তুলে তাকে দেখল রিটা। ধীরে ধীরে মাথা দোলাল।
‘আমি কী ধরনের কাজ করি, সেটা জেনেও এলে কেন?’
কোন জবাব দিল না মেয়েটা। দু’জনই জানে কেন এসেছে রিটা। স্টিলের প্রেমে পড়েছে সে। সবার গোড়ালিতে টাইম বম সেট করার আগে সেই ভালবাসায় কোথাও কোন খামতি ছিল না। এমন কী এতকিছুর পরেও মনের অনুভূতি চেপে রাখতে পারছে না রিটা।
বারান্দায় ওর পাশে বসে কফির মগ মেঝেতে রাখল স্টিল। গভীরভাবে চুমু দিল রিটার ঠোঁটে। প্রত্যুত্তরে আগ্রহ নিয়ে চুমু ফেরত দিল মেয়েটা। বরাবরের মতই ভেঙে গেল ওর তৈরি বাঁধ। পরস্পরকে জড়িয়ে ধরল স্টিল ও রিটা ওদের এই ভালবাসার আড়ালে কী লুকিয়ে আছে, জোর করে সেটা ভুলে যেতে চাইল মেয়েটা। মনস্থির করল, আর কখনও মৃতপ্রায় মানুষের আর্তনাদ শুনতে যাবে না। সেক্ষেত্রে এত কষ্ট পেতে হবে না ওকে। মাত্র আঠারো ঘণ্টার ভেতরে শেষ হবে এই অনুষ্ঠান। আর তারপর একসময়ে মনের আয়নায় জমে যাবে প্রচুর ধুলো। তখন আগের মত মনের ভেতরে হানা দেবে না আজকের দগদগে স্মৃতি।
হঠাৎ ইসাবেলার ভয়ঙ্কর মৃত্যু-দৃশ্য মনে পড়তেই ঠোঁট থেকে ঠোঁট সরিয়ে সঙ্গীর চোখে তাকাল রিটা। কী করে যেন মিলেমিশে গেল মেক্সিকান মেয়েটার লাশ ও স্টিলের চেহারা।
সরে বসে ফিসফিস করে বলল রিটা, ‘আমি আর কখনও তোমার কাছ থেকে কোন চুমু নেব না।’ কথা না বাড়িয়ে উঠে গিয়ে ঢুকে পড়ল তাঁবুর ভেতরে। কুঁকড়ে বসল একটা চেয়ারে। আজ দৈহিক মিলনে নিজেকে জড়াতে পারবে না। হয়তো বহু বছর আর স্টিলের কাছে যাওয়া হবে না।
বারান্দায় চুপ করে বসে থাকল স্টিল। কোন দিনই উপেক্ষা সহ্য করে না সে। বিশেষ করে সেটা যদি আসে কোন মেয়ের তরফ থেকে। স্টিলের মনে পড়ল, কী ভয়াবহভাবেই না ইসাবেলাকে জোর করে ধর্ষণ করেছে শ্যানন। তারও ইচ্ছে হলো তাঁবুতে ঢুকে দু’হাতে ছিঁড়ে ফেলতে রিটার পোশাক। মেয়েটা পছন্দ করুক না করুক, গায়ের জোরে ওকে ভোগ করতে পারলে এখন ভাল লাগবে তার। রিটার বোঝা উচিত, যুদ্ধ চলছে এই দ্বীপে। আর যুদ্ধে সবকিছুই আসলে বৈধ।
নিজের প্রিয় শো-র কথা ভেবে যৌন-আকাঙ্ক্ষা দমন করল স্টিল। রিটাকে নিয়ে ফূর্তি করতে গিয়ে ডার্টি গেমের কথা ভুলে গেলে ওর চলবে না। এখনও বেঁচে আছে ছয় অপরাধী। তাদের পাঁচজনের মৃত্যু চমৎকারভাবে দেখাতে হবে দর্শকদের কাছে। সুতরাং ওদিকে দিতে হবে পূর্ণ মনোযোগ।
কফির মগ ফেলে রেখে বিশাল তাঁবুর দিকে চলল সে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন