ডার্টি গেম – ৩৭

কাজী আনোয়ার হোসেন

সাঁইত্রিশ

বিসিআই হেডকোয়ার্টার, ঢাকা।

এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে বেশ ক’টা দিন।

আজ অফিসে এজেন্টদের নিজেদের মধ্যে চলছে ফিসফাস করে আলাপ। কেমন যেন অস্থির হয়ে গেছে দুর্ধর্ষ মানুষগুলো। এখন নিজেদের অফিস ত্যাগ করে জড় হয়েছে কনফারেন্স রুমে।

‘আমি কিন্তু আগেই জানতাম,’ জোর দিয়ে আবারও বলল সলীল।

‘তা-ই বলে এত জলদি?’ আপত্তির সুরে বলল রূপা। ‘কিন্তু ও তো এমনই,’ বলল জাহেদ। সোহানার দিকে তাকাল। ‘তুমি কী বলো?’

চুপ করে থাকল সোহানা।

‘উনি কেন যে নিজের ভালটা বুঝতে চাইলেন না,’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল বিসিআই জুনিয়র এজেন্ট রাশেদুন্নবী।

ওর কথায় মাথা দোলাল রায়হান রশিদ।

মন খারাপ করে চেয়ারে বসে আছে সোহেল। একঘণ্টা আগে বিসিআই-এর জুনিয়র এজেন্ট অণু কর্মকার ফোন করে কথা বলেছে ওর সঙ্গে।

গাজিপুরের জঙ্গলে বিসিআই-এর জন্যে নির্মিত বিশেষায়িত ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছিল রানা। চারদিকের জঙ্গল ও বাড়ি ঘিরে রেখে পাহারা দিচ্ছিল অণুরা। কিন্তু কখন যেন নিজের কেবিন থেকে উধাও হয়ে গেছে রানা। তার আগে আবার টেবিলে রেখে গেছে ছোট একটা চিঠি: ‘অনেক তো হলো! আর পাহারা দিতে হবে না। আমি ভাল আছি। এবার যে-যার মত বাড়িতে ফিরে বিশ্রাম নাও!’

‘আমাদের মত ওদেরও প্রতিটি ট্রেনিং করা আছে, কিন্তু আমরা তো আর মাসুদ রানা নই,’ বলল সলীল। ‘মজা করার জন্যেই চিঠি রেখে গেছে ও!’

‘কিপটে সোহেল ভাইয়ের মস্তবড় ক্ষতি হয়ে গেল,’ বলল রূপা। ‘তাই না, সলীলদা আর জাহেদ ভাই?’

গত ক’দিন ধরে ওরা আলাপ করেছে, যে-কোন দিন বিরক্ত হয়ে ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে সোজা অফিসে চলে আসবে রানা। এটা নিয়ে সোহেলের সঙ্গে বাজি ধরেছিল সলীল ও জাহেদ। আজ হেরে গেছে সোহেল। আর সেজন্যে আধঘণ্টা আগে অর্ডার দিয়ে বিশাল এক সাত পাউণ্ডের ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক আনাতে হয়েছে ওকে। কেকটা এখন আছে রানার অফিসের টেবিলের ওপরে।

‘আমি হেরে গেলেও কিন্তু জিতে গেছি,’ আত্মসমর্থন করল সোহেল। ‘রানা যে এখন সুস্থ, সেটা তো প্রমাণ হয়ে গেল!’

‘তা ঠিক,’ হেসে ফেলল রূপা। ‘তবে এত টাকা গচ্চা দিতে হলো বলে আপনার প্রতি রইল আমার সমবেদনা।’

‘এই ফাজিল মেয়েটাকে অফিস থেকে কেন যে বের করে দেয় না, সেটা বুঝতে পারি না,’ মুখ গম্ভীর করল সোহেল। আরও কিছু বলত, কিন্তু ইন্টারকম বেজে উঠতেই রিসিভার তুলে কানে ঠেকাল। ‘তুমি কিছু বলবে, মোজাম্মেল?’

‘জী, স্যর, এইমাত্র লিফটে উঠে পড়লেন মাসুদ স্যর, ‘ বলল অবসর-প্রাপ্ত আর্মির হাবিলদার।

‘ঠিক আছে, চারপাশে চোখ রাখো,’ রিসিভার ক্রেডলে নামিয়ে রাখল সোহেল। বড় করে শ্বাস ফেলে বলল, ‘রানা তা হলে পৌঁছে গেছে।’

ওরা সবাই চলে গেল কনফারেন্স রুমের দরজার কাছে। সবার কান খাড়া।

লিফট উঠে এলে দরজা খুললেই আওয়াজ হবে টিং করে। আর তখনই হুড়মুড় করে করিডরে বেরিয়ে রানাকে চমকে দেবে ওরা।

এক এক করে পেরোচ্ছে মিনিট, অথচ দেখা নেই রানার। পরস্পরের দিকে তাকাচ্ছে ওরা।

এরপর পেরিয়ে গেল পুরো পাঁচ মিনিট।

‘বোধহয় বেশি অসুস্থ, হয়তো লিফটে অচেতন হয়ে গেছে?’ বলল সোহেল, ‘আমাদের বোধহয় খোঁজ নেয়া উচিত!’

‘আমারও তা-ই মনে হচ্ছে,’ বলল রূপা।

দুশ্চিন্তায় ফ্যাকাসে হয়ে গেছে সোহানার মুখ।

ওরা করিডরে বেরোবে, এমন সময় কনফারেন্স রুমে বেজে উঠল ইন্টারকম। ছুটে গিয়ে যন্ত্রটার স্পিকার চালু করল সোহেল, ‘হ্যালো?’

ওর দিকে চেয়ে আছে সবাই।

‘তোদের আনা কেক বেশ স্বাদের, বুঝলি, বোকা শালা?’ রানার ফুরফুরে কণ্ঠ শুনে চমকে গেছে সোহেল। ‘আর তোরা যে খাপ পেতে কনফারেন্স রুমে বসে আছিস, সেটাও আমি জানি। তাই ফায়ার এস্কেপ ল্যাডার বেয়ে উঠে এসেছি আমার অফিসে। এবার কেকের ভাগ যদি সত্যিই চাস্, তো জলদি করে আয়! ওটা কিন্তু এরই ভেতরে অর্ধেকের বেশি শেষ! ‘

‘হায়-হায়, রানা শালা তো আমাদেরকে বোকা বানিয়ে দিয়েছে!’ হাউমাউ করে উঠল সোহেল। ‘তার ওপরে খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে আমার আনা দামি কেক! অ্যাই, তোরা চল! জলদি! নইলে কিন্তু একটুকরো কেকও আর কপালে জুটবে না!’

কনফারেন্স রুম থেকে হুড়মুড় করে বেরিয়ে রানার অফিসে গিয়ে ঢুকল ওরা। আর ওখানেই থমকে গেল। মিশরের মামির মত সাদা ব্যাণ্ডেজে প্রায় মোড়া রানা কোঁৎ- কোঁৎ করে গিলে চলেছে কালো কেক।

‘তুই আগে বল্, এই গুরুতর অসুস্থ শরীরে ক্লিনিক থেকে কীভাবে বেরোলি?’ করুণ সুরে বলল সোহেল।

‘সবই আসলে আমার ওপরঅলার ইচ্ছে রে,’ সপ্তম তলার দিকে আঙুল তাক করে আরেক টুকরো কেক গালে চালান দিল রানা। ‘আজই সকালে আমাকে দেখতে গেলেন বস্। আর তারপর কেবিন ছেড়ে দেখা করলেন ডাক্তারের সঙ্গে। সেই সুযোগে ঘর থেকে বেরিয়ে ঘুষ গুঁজে দিলাম পরিচিত ড্রাইভারের পকেটে। একমিনিটে চেপে বসলাম বসের গাড়ির পেছনের ট্রাঙ্কে। পরের সবই বহু পুরনো ইতিহাস! কী রে, তোরা কি একআধ টুকরো কেক খাবিটাবি নাকি?’

ওর হাত আবারও কেকের দিকে ছোঁ দিয়েছে দেখে ওকে প্রায় ঘিরে ফেলল অন্যরা। রানা মেজর জেনারেল (অব.) রাহাত খানের ড্রাইভারকে ঘুষ দিয়ে গাড়ির পেছনে শুয়ে আরামসে অফিসে পৌঁছে যাওয়ায় সবার মুখে ফুটে উঠেছে মুচকি হাসি।

রানা ছাড়া অন্য কেউ দেখতে পেল না, চট্ করে চোখদুটো মুছে নিয়েছে সোহানা। এখন অপূর্ব সুন্দর মুখে একচিলতে হাসি।

***

অধ্যায় ৩৭ / ৩৭

সকল অধ্যায়

১. ডার্টি গেম – ১
২. ডার্টি গেম – ২
৩. ডার্টি গেম – ৩
৪. ডার্টি গেম – ৪
৫. ডার্টি গেম – ৫
৬. ডার্টি গেম – ৬
৭. ডার্টি গেম – ৭
৮. ডার্টি গেম – ৮
৯. ডার্টি গেম – ৯
১০. ডার্টি গেম – ১০
১১. ডার্টি গেম – ১১
১২. ডার্টি গেম – ১২
১৩. ডার্টি গেম – ১৩
১৪. ডার্টি গেম – ১৪
১৫. ডার্টি গেম – ১৫
১৬. ডার্টি গেম – ১৬
১৭. ডার্টি গেম – ১৭
১৮. ডার্টি গেম – ১৮
১৯. ডার্টি গেম – ১৯
২০. ডার্টি গেম – ২০
২১. ডার্টি গেম – ২১
২২. ডার্টি গেম – ২২
২৩. ডার্টি গেম – ২৩
২৪. ডার্টি গেম – ২৪
২৫. ডার্টি গেম – ২৫
২৬. ডার্টি গেম – ২৬
২৭. ডার্টি গেম – ২৭
২৮. ডার্টি গেম – ২৮
২৯. ডার্টি গেম – ২৯
৩০. ডার্টি গেম – ৩০
৩১. ডার্টি গেম – ৩১
৩২. ডার্টি গেম – ৩২
৩৩. ডার্টি গেম – ৩৩
৩৪. ডার্টি গেম – ৩৪
৩৫. ডার্টি গেম – ৩৫
৩৬. ডার্টি গেম – ৩৬
৩৭. ডার্টি গেম – ৩৭

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন