ডার্টি গেম – ১৫

কাজী আনোয়ার হোসেন

পনেরো

আট ঘণ্টা আগে আলফা চপার থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে ইসাবেলা আলকারাযকে। সাগরে ডুবে যেতেই নোনা পানির সঙ্গে আরেকটু হলে গিলে নিত চাবি। সেক্ষেত্রে হাত-পায়ের শেকল খুলতে না পেরে মরত শ্বাস আটকে। অবশ্য কপাল ভাল, মুখ থেকে চাবি নিয়ে খুলতে পেরেছে কবজির তালা। ভেসে উঠে সাঁতরে গিয়ে উঠেছে সৈকতে। ওখানে বসে হড়হড় করে বমি করেছে। একটু সুস্থির হওয়ার পর পায়ের শেকল খুলে চারদিকে চেয়ে দেখল, আশপাশে কেউ নেই। তখনই মনে হলো, আর বুঝি দেখা হবে না আলকারাযের সঙ্গে। ভয়ে অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল ওর।

ইসাবেলার বয়স যখন মাত্র দশ, ওদের পরিবার ফেলে উধাও হয়ে গিয়েছিল ওর বাবা। খাবার জোগাড় করতে না পেরে ওকে আর ওর ছোট বোন এলাকে নিয়ে আকাপুলকোয় এক রিসোর্টে চাকরি নিয়েছিল ওদের মা। কাজের মেয়ে হিসেবে প্রতিদিন খাটত ষোলো ঘণ্টা। তাতে যা পেত, ছোট একটা কেবিনের ভাড়া দেয়ার পর খুব কম পয়সা থাকত খাবার কেনার জন্যে। পরের ছয় বছর প্রচণ্ড পরিশ্রম করল ইসাবেলার মা। এরপর একদিন হয়ে গেল অসুস্থ। কাজ করার আর সাধ্য থাকল না। এদিকে চাকরির বয়স হয়নি এলার। একা ইসাবেলার পক্ষে কঠিন হয়ে গেল কেবিনের মালিকের ভাড়া শোধ দেয়া। তা ছাড়া, ওদের তিনজনের খাবার আর মা-র ওষুধ জোগাড় করবে কীভাবে!

ইসাবেলার বয়স তখন মাত্র ষোলো বছর। দেহে এসেছে যৌবনের ঢেউ। আর সেটা দেখে অনেকে প্রশংসা করে শিস বাজায়। বাঁচার জন্যে যা করা জরুরি, সেটাই করল ইসাবেলা। আর সেজন্যে গোটা দুনিয়ার ওপরে ঘৃণা জন্মাল ওর মনে।

এরপর একসময়ে ওর শূন্য জীবনে এল আলেক্যান্দ্রো আলকারায। আকাপুলকোর পতিতালয়ে ওর সঙ্গে পরিচয় হলো তার। ইসাবেলার বয়স তখন উনিশ। আলেক্যান্দ্রোর চলছে তেইশ। গত তিন বছর নিজের দেহ বিক্রি করে মা, ছোট বোন আর নিজের জীবন কোনরকমে পার করে দিয়েছে ইসাবেলা। তত দিনে বুঝে গেছে, ওর কাছে আসলে কী চায় পুরুষেরা। কিন্তু আলেক্যান্দ্রো যেন অন্য ধরনের মানুষ। প্রথম দর্শনে ইসাবেলাকে ভালবেসে ফেলল সে। কী করে যেন বুঝল ওর মনের গভীর আকুতি। সমবেদনা দেখাতে গিয়ে ওকে ছোট করল না। দু’চার কথায় শুধু জানাল, ওর জীবনও খুব কষ্টের। শৈশব কেটেছে টিজুয়ানার ভয়ঙ্কর সব রাস্তায়। তবে এবার যখন দেখা পেয়ে গেছে ইসাবেলা নামের মরুভূমির অদ্ভুত সুন্দর গোলাপের, তো কোনভাবেই তাকে আর হারিয়ে যেতে দেবে না সে।

পতিতালয় ত্যাগ করে সে-রাতেই বিয়ে করল আলকারায ও ইসাবেলা। নিজের স্ত্রীকে পতিতার কাজ করতে দেবে না বলে নামকরা এক রিসোর্টে কাজ নিল আলকারায। ওখানেই পরিচ্ছন্নকর্মী হলো ইসাবেলা। দু’জন যে বেতন পেত, তাতে ওরা থাকত দারিদ্র্য সীমার নিচে। রাতে আলাপ করত, গোপনে ঢুকবে কি না ইউএসএতে। কিন্তু তাতে আছে বড় ধরনের বিপদ। পনেরো শ’ ডলার খরচ করে আগে একবার সে-দেশে গিয়ে ধরা পড়েছে আলকারায। ওকে ফেরত আসতে হয়েছে মেক্সিকোতে। যে ক’দিন আমেরিকায় ছিল, ছোট এক ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে বাস করত বেআইনী নয়জন অভিবাসী মিলে। যেসব চাকরি করেছে, সেই বেতনে পেট চালিয়ে নেয়া খুব কঠিন কাজ। সুতরাং ইসাবেলাকে বলেছে আলকারায, দুঃস্বপ্নময় ভিন দেশে না গিয়ে নিজেদের দেশে রয়ে যাওয়াই ওদের জন্যে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

আমেরিকায় ডাকাতির দায়ে পুলিশ ওকে খুঁজছিল, সেটা ইসাবেলাকে বলেনি আলেক্যান্দ্রো। একই কীর্তি করেছিল মেক্সিকোর বাজা ক্যালিফোর্নিয়ায়। ভেবেচিন্তে আলকারায একদিন জানাল, ওদের উচিত গুয়াতেমালায় গিয়ে চুরি- ডাকাতি করে জীবন চালিয়ে নেয়া। আর এতে মানা করেনি ইসাবেলা। বিয়ের একমাস পর যৎসামান্য যে টাকা জমাতে পেরেছে, সেটা নিয়ে রাতে বাইরে খেতে গেল ওরা। ফিরে এসে দেখল তচনচ হয়ে গেছে ওদের তেলাপোকায় ভরা ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্ট। আলকারাযকে ধরতে হানা দিয়েছিল দ্য ফেডারেল-এর লোক। এখানেও আর থাকতে পারবে না বুঝে মনের দুঃখে কার্ডবোর্ডের দেয়াল ঘুষি মেরে ভেঙে দিয়েছিল আলকারায। বুঝে গিয়েছিল, যত সৎ থাকার চেষ্টা করুক, এই দুনিয়া ওদেরকে সোজা পথে চলতে দেবে না।

পুলিশের লোক আলকারাযকে জেলে ভরবে ভাবতে গিয়ে আতঙ্ক চেপে ধরল ইসাবেলাকে। বুঝে গেল, আলকারাযকে ছাড়া একা যে টাকা রোজগার করতে পারবে, তাতে ওর একারই চলবে না। সেক্ষেত্রে আবার হতে হবে পুরুষমানুষের ভোগ্য পণ্য। আলকারাযের মতই মানব-সমাজটাকে চরমভাবে ঘৃণা করতে লাগল ইসাবেলা। স্বামীকে বলল, ‘তুমি যেখানে যাবে, আমিও সেখানে যাব। তোমাকে আমি হারাতে চাই না।’

আগে মস্তানদের এক দলে ছিল আলকারায। কাউকে গুলি না করলেও তাদের কাছ থেকে শিখেছে আগ্নেয়াস্ত্র চালানো। ইসাবেলাকে সে জানাল, পারতপক্ষে কাউকে গুলি করবে না ওরা। কিন্তু দরকারে যেন নিজেদের বাঁচাতে পারে, সেজন্যে ওদের চাই আগ্নেয়াস্ত্র। পরিচিত এক মস্তানের কাছ থেকে দুটো .৩৮ স্মিথ অ্যাণ্ড ওয়েসন রিভলভার কিনল সে। ইসাবেলাকে নিজের হাতে শেখাল কীভাবে গুলি করতে হয়। পরিকল্পনা করল ওরা, দেরি না করে চলে যাবে গুয়াতেমালার দক্ষিণে। ওখানে ওদেরকে চেনে না কেউ।

এরপর প্রথম ডাকাতিটা ওরা করল মাযাটেনানগোর ছোট এক মুদি দোকানে। কাউন্টারের তলা থেকে অস্ত্র বের করতে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে কর্মচারীর বুকে দুটো গুলি করল ইসাবেলা ও আলকারায। আর একবার খুন করে বসার পর ওরা বুঝল, আর যাই হোক ডাকাতির কখনও কোন সাক্ষী রাখতে নেই।

গুয়াতেমালায় সন্ধ্যার পর চলল ওদের দু’জনের ডাকাতি। দু’মাসে চোদ্দটা দোকান ও পেট্রল পাম্প লুঠ করল। সবমিলে তাতে ব্যয় হলো আঠারোটা গুলি। কিন্তু উনিশতম লুটের সময় ওদেরকে চিনে গেল এক লোক। তার চেয়েও খারাপ কথা, গুলি করলেও মরল না সে।

পরে ইসাবেলাকে বলেছে আলকারায, কপাল মন্দ হলে আসলে যা হয়, তা-ই হয়েছে। চিরকাল ধরে ওদেরকে তাড়া করে এসেছে চরম দুর্ভাগ্য, কাজেই এখনই বা ভাগ্য ভাল হবে কেন!

আহত লোকটার বর্ণনা অনুযায়ী পুলিশের লোক এঁকে নিল ওদের মুখের ছবি। মাত্র এগারো দিন পর ধরা পড়ল ওরা। একবছর পর আদালত থেকে রায় দেয়া হলো মৃত্যুদণ্ডের। জেলে বসে মরণের দিন গুনতে লাগল ওরা। তারপর পৌনে দু’বছর পর ওদেরকে কারাগার থেকে বের করে আনল ব্র্যাড স্টিল। তবে তাতে আসলে কোন লাভ হয়নি। আজ বা কাল অন্য কোন অপরাধীর হাতে খুন হবে ওরা!

সৈকতের বালিতে বসে এসব ভাবতে গিয়ে আরও তিক্ত হয়েছে ইসাবেলার মন। উঠে এগিয়ে গেল জঙ্গলের দিকে। বারবার ভাবছে, যেভাবে হোক খুঁজে নিতে হবে স্বামীকে।

কিছুক্ষণ পর দূরে বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনে বুঝে গেল, ফেটে গেছে কারও গোড়ালির বোমা! মনে মনে প্রার্থনা করল ইসাবেলা, খুন হওয়া লোকটা যেন অচেনা কেউ হয়। আলকারায যদি মারা যায়, সেক্ষেত্রে ওর উচিত হবে নিজের গোড়ালির বোমা ফাটিয়ে মরে যাওয়া। তাতে মানসিক আর দৈহিক যন্ত্রণা কম হবে ওর।

হেলিকপ্টারে কানে কানে বলেছে আলকারায, একবার তীরে উঠলে যেন জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ে ও। দ্বীপ খুব বড় নয়। ওকে খুঁজে নেবে আলকারায। যে সৈকতের কাছ থেকে বোমার আওয়াজ এসেছে, তাতে মনে হয় না খুন হয়েছে ওর স্বামী।

এসব ভাবতে ভাবতে সৈকত পার করে জঙ্গলে ঢুকল ইসাবেলা। ওর মনে হলো, যে-কোন সময়ে দেখা হবে কারও সঙ্গে। ভয় নিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটার পর পৌঁছে গেল এক নদীর তীরে। পাশের ঘন জঙ্গলে আছে বড় একটা ডোবা। ওখানে ঢকঢক করে পানি খেয়ে তারপর গা থেকে লবণ ধুয়ে নিল ইসাবেলা। ভাবল, এখানেই অপেক্ষা করবে স্বামীর জন্যে।

বহুক্ষণ পর আবারও শুনতে পেল দ্বিতীয় বিস্ফোরণের আওয়াজ। ইসাবেলার জানা নেই, বোমার আঘাতে উবে গেছে রাশান দানব। গুরুগম্ভীর শব্দ এসেছে দ্বীপের ভেতর দিক থেকে। আবারও হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন থেমে গেল ওর। কে জানে কে মারা গেল! স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করল ও, যেন বেঁচে থাকে ওর স্বামী।

এরপর পেরোল আরও একঘণ্টা। সূর্য হেলে যেতেই জঙ্গলে নেমে এল অন্ধকার। ইসাবেলার বুকে আবারও চেপে বসল ভয়। বুঝে পেল না ডোবার ধারে বসে কোন লাভ হবে কি না। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ওকে কীভাবে খুঁজে নেবে ওর স্বামী? আবার নদীর ধারে এসে উজানের দিকে চলল ইসাবেলা। সিকি মাইল যেতে না যেতেই হালকা হলো সামনের জঙ্গল। গাছের ফাঁক দিয়ে দেখতে পেল বিকেলের হলদেটে আলো। আর তখনই ঝোপঝাড়ের ভেতরে শুনল কার যেন পায়ের আওয়াজ। আরেকটু হলে স্বামীর নাম ধরে ডেকে বসত ইসাবেলা। নিজেকে সামলে লুকিয়ে পড়ল বড় এক গাছের গুঁড়ির ওদিকে। বেচারি জানে না চোখে পড়ে গেছে ও।

নদীর ধারে ইসাবেলার দিকে চেয়ে আছে রুপার্ট শ্যানন, ঠোঁটে শয়তানির হাসি। শিকার ধরার জন্যে এক পা এগোতেই ঝিলিক দিল তার হাতের ছোরা।

চোখের কোণে ঝলকানি দেখে ঘুরে তাকাল ইসাবেলা। পরক্ষণে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ছুটে চলল জঙ্গলের অন্যদিক লক্ষ্য করে। কিন্তু শুকনো এক ডালে পা বেধে হুড়মুড় করে পড়ে গেল মাটিতে। ওর ডানহাতে খচ করে লাগল চোখা এক পাথর। শরীর পিছলে নেমে গেল নদীর তীরে। তীব্র ব্যথা সহ্য করে শ্যাননের দিকে তাকাল ইসাবেলা। দুটো গাছ পাশ কাটিয়ে তীরের বেগে ওর দিকেই ছুটে আসছে লোকটা!

.

‘ডার্লিং ইসাবেলা, বাঁচতে চাইলে ঝেড়ে দৌড় দাও!’ নিচু গলায় বলল স্টিল। বিশাল তাঁবুর ভেতরে নিজের চেয়ারে আরাম করে বসে আছে সে।

তার কথা শুনেই যেন উঠে দাঁড়িয়ে ছুট দিল ইসাবেলা। গতি হরিণীর মত। তবে বেশিক্ষণ এভাবে দৌড়াতে পারবে না। উড়ে চলেছে এক গিরিখাদের মাঝ দিয়ে। এরই ভেতরে জ্বলতে শুরু করেছে ফুসফুস। দৌড়ের ভেতরে একবার ঘুরে তাকাল ইসাবেলা। পেছনে এখন কেউ নেই। মনে মনে বলল, ভাগ্য ভাল হলে হয়তো ওকে হারিয়ে ফেলেছে লোকটা। একটা ঘন ছায়া দেখে ওখানে থামল ইসাবেলা। ভাবছে, বিশ্রাম করে নেবে একটু। ব্যথায় টনটন করছে ডানহাতের হাড়। তালু চোখের সামনে তুলে দেখল মাংস কেটে দরদর করে রক্ত পড়ছে। পোশাকে হাত মুছে এদিকে- ওদিকে তাকাল। আর তখনই শুনতে পেল পেছনে পায়ের আওয়াজ।

চরকির মত ঘুরে তাকাল ইসাবেলা।

ওর দিকেই ছুটে আসছে কে যেন!

মানুষটা অন্য কেউ নয়, তার আলেক্যান্দ্রো!

চোখে অশ্রু নিয়ে ফুঁপিয়ে উঠল মেয়েটা।

ইসাবেলার সামনে এসে নিচু গলায় বলল আলকারায, ‘আমার জান!’ হাত থেকে শেকল ফেলে প্রিয় স্ত্রীকে কোলে তুলে নিল সে। উন্মাদের মত পরস্পরকে চুমু দিল তারা।

ইসাবেলার হাতের তালু কেটে গেছে দেখে তিক্ত হলো আলকারাযের মুখ। নিচু গলায় জানতে চাইল, ‘কেটে গেল কীভাবে?’

প্রায় ফিসফিস করে বলল ইসাবেলা, ‘আমাকে ধাওয়া করেছিল সেই ইংরেজ লোকটা। তবে কোনমতে পালিয়ে আসতে পেরেছি। কাছেই কোথাও আছে সে।’

‘আমি কুত্তাটাকে নিজের হাতে খুন করব,’ রেগে গিয়ে বলল আলকারায।

‘না, চলো, আমরা এখান থেকে পালিয়ে যাই,’ কাঁপা গলায় বলল ইসাবেলা।

‘আমি কুত্তাটার হাড়গোড় ভেঙে দেব,’ চাপা স্বরে বলল আলকারায। ‘আমার কাছ থেকে কোন মাফ পাবে না সে।’ অন্য কেউ তার স্ত্রীর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সেটা ভাবতে গিয়ে ভীষণ রেগে গেছে সে। আবার ইসাবেলার হাতের তালু দেখল। ‘আগে বন্ধ করতে হবে রক্ত পড়া।’ টি-শার্ট খুলে ফড়ফড় করে ওটা ছিঁড়ে ইসাবেলার তালু কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দিল সে।

নিজের গোড়ালির ব্রেসলেটের দিকে চেয়ে আছে ইসাবেলা।

ডায়ালে এখন: ১৭:৩১:০৫।

বেসুরো কণ্ঠে বলল ও, ‘আলেক… আমরা কি মারা যাব?’

স্ত্রীর মাথা ভরা কালো চুলে হাত বুলিয়ে দিল আলকারায। খয়েরি বড় চোখদুটোয় দৃষ্টি রেখে গলা শুকিয়ে গেল ওর। এ-প্রশ্নের কী জবাব দেবে ও? প্রতিযোগিতা করতে এই দ্বীপে ওদেরকে ধরে এনেছে বদ্ধ এক উন্মাদ। বলে দিয়েছে, বাকি নয়জনকে খুন করতে পারলে শেষেরজন হবে বিজয়ী। আলকারায অবশ্য ভেবে রেখেছে, যেভাবে হোক সেই দশম প্রতিযোগী করে তুলবে ইসাবেলাকে। তাতে মৃত্যু হোক তার নিজের। মনের ভেতরে কু ডাকছে তার। বুঝতে পারছে যে তার চেয়ে অনেক যোগ্য প্রতিযোগী রয়ে গেছে। স্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে আলতো করে ওর কপালে চুমু দিল আলকারায। নিচু গলায় বলল, ‘দেখো, বেলা, অন্যরা মরবে। আমরা নই।’

‘বাহ্! তোমাদের ভেতরে কত রোমাণ্টিকতা!’ মাত্র পনেরো ফুট দূর থেকে টিটকারির সুরে বলল শ্যানন, হাতে চকচকে ছোরা। ‘আমি বোধহয় তোমাকে বলতে ভুলে গেছি, তোমার বউ কিন্তু খুব সেক্সি!’ এক কান থেকে আরেক কানে চলে গেছে তার হাসি।

ইসাবেলাকে মাটিতে নামিয়ে ঝট্ করে শেকল তুলে নিল আলকারায। চাপা স্বরে স্ত্রীকে বলল, ‘তুমি পালিয়ে যাও, বেলা! আমি এদিকটা দেখছি!’

স্বামীকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছে না ইসাবেলা, কিন্তু ওর চেয়ে অনেক ভাল বোঝে আলেক। গিরিখাদের ভেতর দিয়ে দৌড় দিল সে।

ছুটে গিয়ে শ্যাননের মাথা লক্ষ্য করে সাঁই করে শেকল চালাল আলকারায। তবে চট্ করে মাথা নিচু করে নিল প্রাক্তন কমাণ্ডো। বামহাতে মেক্সিকানের চোয়ালে বসিয়ে দিল প্রচণ্ড ঘুষি। একই সময়ে কোপ দিয়েছে তার বাহুর ওপরে। ভীষণ ব্যথা পেয়ে ফুঁপিয়ে উঠল আলকারায।

‘আরও জোরে দৌড় দাও, আমার ডার্লিং! গতি সবসময় মানুষের জীবনের সব!’ উৎসাহ দেয়ার ভঙ্গিতে ইসাবেলাকে বলল শ্যানন। ‘আর ওই তুমুল বেগেই তোমার যৌনাঙ্গে ঢুকব আমি!’

কথা বলতে গিয়ে তিন সেকেণ্ড ব্যয় করেছে শ্যানন, আর এই সুযোগে গায়ের জোরে তার কিডনির ওপরে শেকল ঘুরিয়ে মেরেছে আলকারায। অন্যহাতে বসিয়ে দিয়েছে লোকটার চোয়ালে ঘুষি। শ্যানন আকারে বড়, শক্তিও বেশি। তবে ছোটবেলা থেকে পথঘাটে মারপিটের অভিজ্ঞতা কম নয় আলকারাযের। ঝোড়ো বেগে হামলা করছে সে। সামনে বেড়ে ইংরেজ লোকটার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তার এক ঘুষি খেয়ে শ্যাননের হাত থেকে ছিটকে নদীতে গিয়ে পড়ল ছোরা। আর তখনই আর্তচিৎকার করে উঠল এক মেয়ে।

কণ্ঠস্বর ইসাবেলার!

চরকির মত ঘুরে ওদিকে তাকাল আলকারায।

এইমাত্র ইসাবেলার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তানাকা। শ্যাননের আনা শেকলে জড়িয়ে নিয়েছে বেচারির দুই হাঁটু।

‘আলেক! সাবধান! আলেক!’ কেঁদে উঠল ইসাবেলা।

আলকারায অন্যদিকে চেয়ে আছে দেখে নদীর তীর থেকে শুকনো একটা ডাল তুলে নিয়েছে শ্যানন। ওটা দিয়ে প্রচণ্ড বেগে বাড়ি দিল মেক্সিকান ডাকাতের বাম হাঁটুর বাটিতে। খটাস্ আওয়াজে ফেটে গেল হাড়। ব্যথার চাপা গর্জন ছেড়ে মাটিতে হুড়মুড় করে পড়ল আলকারায। ধীর পায়ে সরে গিয়ে স্বচ্ছ জলের নদী থেকে ছোরা তুলল শ্যানন। ফিরে এসে ধারাল ফলা ঠেসে ধরল শত্রুর গলার ওপরে। ‘এখন কেমন হয় তোকে জবাই করলে? দেব জোর একটা পোঁচ?’

তানাকার দিকে তাকাল সে। এরই ভেতরে শেকলে মেয়েটার পা বেঁধে নিয়েছে জাপানি তস্কর। দল গড়ে তারা কাজের কাজ করেছে বলেই মনে হলো শ্যাননের।

সকল অধ্যায়

১. ডার্টি গেম – ১
২. ডার্টি গেম – ২
৩. ডার্টি গেম – ৩
৪. ডার্টি গেম – ৪
৫. ডার্টি গেম – ৫
৬. ডার্টি গেম – ৬
৭. ডার্টি গেম – ৭
৮. ডার্টি গেম – ৮
৯. ডার্টি গেম – ৯
১০. ডার্টি গেম – ১০
১১. ডার্টি গেম – ১১
১২. ডার্টি গেম – ১২
১৩. ডার্টি গেম – ১৩
১৪. ডার্টি গেম – ১৪
১৫. ডার্টি গেম – ১৫
১৬. ডার্টি গেম – ১৬
১৭. ডার্টি গেম – ১৭
১৮. ডার্টি গেম – ১৮
১৯. ডার্টি গেম – ১৯
২০. ডার্টি গেম – ২০
২১. ডার্টি গেম – ২১
২২. ডার্টি গেম – ২২
২৩. ডার্টি গেম – ২৩
২৪. ডার্টি গেম – ২৪
২৫. ডার্টি গেম – ২৫
২৬. ডার্টি গেম – ২৬
২৭. ডার্টি গেম – ২৭
২৮. ডার্টি গেম – ২৮
২৯. ডার্টি গেম – ২৯
৩০. ডার্টি গেম – ৩০
৩১. ডার্টি গেম – ৩১
৩২. ডার্টি গেম – ৩২
৩৩. ডার্টি গেম – ৩৩
৩৪. ডার্টি গেম – ৩৪
৩৫. ডার্টি গেম – ৩৫
৩৬. ডার্টি গেম – ৩৬
৩৭. ডার্টি গেম – ৩৭

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন