৪০. মেয়েটির নাম লাবণ্য

সমরেশ মজুমদার

মেয়েটির নাম লাবণ্য। পুরনো কালের চেয়ারে বসে নাম শুনে চমকে গেল দীপা। দশ বছরের মিষ্টি চেহারার মেয়েটি বলল, ‘আমার নাম লাবণ্য মিত্র।’

মেয়েটির পাশে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন তার দিদিমা। মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি খুব খুশি, নাতনির জন্যে মাস্টারনি জোগাড় করতে পেরে নিশ্চিন্ত হয়েছেন। দীপা তাঁকেই জিজ্ঞাসা করল, ‘ওর নাম কে রেখেছিল?’

‘আমি।’ বৃদ্ধা খুব গর্বিত ভঙ্গিতে জবাব দিলেন।

‘কিছু মনে করবেন না, ওর মায়ের নাম কী ছিল?’

‘ওমা, মনে করা কেন? ওর মাকে আমি দুলু বলে ডাকতাম, ভাল নাম ছিল গোলাপ, গোলাপবালা। একেবারে গোলাপের মতো রং ছিল তো!’

হঠাৎ লাবণ্য ঘাড় শক্ত করে বলে উঠল, মায়ের কথা আমার সামনে বলবে না।’

দীপা আবার অবাক, ‘কেন?’

‘না। যে আমার জন্ম দিয়ে চলে গেছে ভগবানের কাছে, তার নাম করবে না।’

দীপা কয়েক মুহূর্ত কথা বলতে পারল না। সেই ভদ্রমহিলা যিনি তাকেও জন্ম দিয়ে মারা গিয়েছিলেন, তাঁর নাম জেনেছে সে অনেক বড় হয়ে, বিয়ের আগে। কিন্তু সেটা জানার পর তার তো এমন প্রতিক্রিয়া হয়নি। সে বৃদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘লাবণ্য নামটা আপনি কোথায় পেলেন? কেউ তো চট করে রাখে না।’

‘কোথায় আর পাব মা! আগে চাইতাম মেয়ে সুন্দরী হোক, রূপসি হোক, দেখে পাঁচজনের চোখ পুড়ে যাক। কিন্তু সব ছেড়েছুড়ে দেবার পর মনে হত সুন্দরী রূপসি মানে তো হাজার সমস্যা। তার চেয়ে হাত পা চোখ মুখ নিখুঁত হোক আর মুখে লাবণ্য থাক। যত বড় সুন্দরী হোক যদি লাবণ্য না থাকে তা হলে সব রূপ মাঠে-মারা যাবে। তা ওর মা যখন মারা গেল তখন কোলে নিয়ে ভাবছি এ মেয়ের কী নাম দেওয়া যায়। একটু আলাদা রকম, মানে আমাদের থেকে আলাদা। রেখে দিলাম লাবণ্য।’ বৃদ্ধা হাসলেন, ‘প্রথমে অবশ্য লাবণ্যপ্রভা রেখেছিলাম। তা এখানে একটা সিড়িঙ্গে লোক আছে, আমাকে দিদির মতো দেখে, হারমোনিয়াম বাজিয়ে গায়, মেয়েদের রবিঠাকুরের গান শেখায় যে শিখতে চায়, সে শুনে বলল, ওসব প্রভাট্রভা ছেঁটে দাও। তুমি একেবারে রবি ঠাকুরের বুকের খাঁচায় হাত ঢুকিয়ে দিয়েছ!’

‘খুব ভাল বলেছেন উনি। আপনি রবীন্দ্রনাথের নাম শুনেছেন তা হলে?’

‘ওমা, শুনব না কেন? এই তো, ওই গলি দিয়ে সোজা গেলে চিৎপুর-গণেশ টকি আর তারপরেই রবিঠাকুরের বাড়ি। ওঁর কত গান কঞ্চি ভাইয়ের কাছে শিখেছিলাম!’

‘কঞ্চি ভাই?’

‘ওই যে সিড়িঙ্গে, যে হারমোনিয়াম বাজায়।’ বৃদ্ধা ভেতরে চলে গেলেন।

প্রথমদিন লাবণ্যকে জানতেই চলে গেল। ও কী পড়তে ভালবাসে, বইপত্তরগুলোর সঙ্গে পরিচিত হতে সময় নিল দীপা। সেইসঙ্গে লাবণ্যর সঙ্গে আলাপ। মেয়েটাকে প্রথমে একটু জেদি ধরনের মনে হয়েছিল কিন্তু কথা বলে ধারণা পালটাল। জানার আগ্রহ আছে খুব। একমাত্র লাবণ্য বলল, ‘জানো, দিদিমা যখন এসে বলল মাস্টারনি ঠিক হয়েছে তখন আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। আমার ক্লাসের অঙ্কদিদির মতো যদি তুমি হও!’

‘কেন? অঙ্কদিদি কেমন?’

‘পাহাড়ের মত। রাগলে আগ্নেয়গিরি হয়ে যান।’

‘গুরুজনদের সম্পর্কে এভাবে কথা বলতে নেই!’

‘বাঃ। উনি নিজেই বলেন। রাগলে আমি আগ্নেয়গিরি!’

ভঙ্গিটা নকল করে দেখাল লাবণ্য। হেসে ফেলল দীপা, ‘তা হোক, তুমি বলবে না। শোনো লাবণ্য, আমি তোমাকে যা পড়াব তা যদি তুমি বুঝতে না পারে তা হলে আমাকে জিজ্ঞাসা করবে। কখনও লজ্জা করবে না। তুমি স্কুল থেকে ফেরো চারটের সময়?’

‘হ্যাঁ। দশটার সময় যাই।’

‘দীপা জিজ্ঞাসা করল, ‘কে নিয়ে যায়?’

‘দিদিমা।’

‘কাল কী পড়া আছে?’

‘কালকের পড়া হয়ে গিয়েছে।’

‘বাঃ, তুমি দেখছি খুব ভাল মেয়ে। আমি আসব সোম বুধ আর শনি।’

‘তুমি যদি রোজ আমাদের বাড়িতে আসো তা হলে খুব ভাল হয়।’

‘কেন?’

‘তোমাকে আমার খুব ভাল লেগেছে। এখানে যেসব মেয়ে থাকে তারা কেউ স্কুলে যায় না, বই পড়ে না ওদের কথা শুনতে আমার একটুও ভাল লাগে না।’

‘শুনো না।’

‘শুনি না তো। আমি কারও সঙ্গে মিশি না।’

‘ঠিক আছে, যদি দেখি তোমার প্রয়োজন হচ্ছে তা হলে অন্য দিনও আসব।’

‘তুমি কলেজে পড়ো, না?’

‘হ্যাঁ।’

‘আমি যে কবে কলেজে পড়ব!’

দীপা হাসতে গিয়ে থেমে গেল। সত্যসাধন মাস্টারের মুখ হঠাৎ মনে পড়ে গেল তার। একদিন সে সত্যসাধন মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করেছিল একই কথা। তিনি বলেছিলেন, ‘কাজ কইর্যা যাও মন দিয়া, সময় হইলেই ফল পাইবা।’

মনটা কেমন ভিজে উঠল। সে ঠিক করল সত্যসাধনবাবু যে-পদ্ধতিতে তাকে পড়াতেন সেই একই পদ্ধতিতে সে লাবণ্যকে পড়াবে। এইসময় দু’হাতে দুটি থালা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন বৃদ্ধা। সেদিকে নজর যেতে চমকে উঠল দীপা, ‘একী!’

‘এ সামান্য। একটু জলখাবার।’

এক থালা লুচি বেগুনভাজা আর অন্যটিতে তিন-চার রকমের মিষ্টি। দীপা তীব্র প্রতিবাদ করল, ‘অসম্ভব। আমি এ-সময়ে এত খাই না।’

বৃদ্ধা মাথা নাড়লেন, ‘না মা, খেতে তোমাকে হবেই, আজ প্রথম দিন এ-বাড়িতে তুমি এলে। না খেয়ে চলে গেলে লাবণ্যর ঘোর অকল্যাণ হবে।’

‘আপনি এসব একদম বিশ্বাস করবেন না। আমার খাওয়ার ওপর ওর কল্যাণ নির্ভর করবে না। ও যা কাজ করবে সেইমতো ফল পাবে।’ দীপা ওঠার জন্য তৈরি হল।

‘মা, একটা কথা বলব।’ বৃদ্ধা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন।

‘তুমি যা বললে তা যদি সত্যি হয় তা হলে কাজের জন্য ফল ভোগ করছি আমি। তুমি কি সেই কারণেই এই বাড়িতে খেতে চাইছ না?’ বৃদ্ধা মাথা নাড়লেন, ‘তা হলে আমি তোমাকে জোর করব না।’

কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল বুঝতে। এবং বোঝমাত্র দীপা প্রতিবাদ করে উঠল, ‘এসব আপনি কী বলছেন? আমার মাথায় অমন ভাবনা একবারও আসেনি। তা ছাড়া আপনার অতীতের পরিচয় আমার জানার দরকার নেই। আপনি আমার ছাত্রীর দিদিমা, এইটুকুই যথেষ্ট।’

এইসময় লাবণ্য বলল, ‘তুমি একটুও খাবে না?’

দীপা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল, ‘আচ্ছা, দাও। তবে এতগুলো নয়। আমি খুব অল্প খাই।’তৎক্ষণাৎ বৃদ্ধার মুখে হাসি ফুটল।

তিনি একটি দাসীকে নির্দেশ দিতে খালি থালা এল। দীপা লক্ষ করল থালার চেহারা আয়নার মতো পরিষ্কার। এর গঠনও অভিনব। বৃদ্ধা সেটা বুঝতে পেরে বললেন, ‘এগুলো অনেক যুগ ধরে তোলা ছিল। আমরা ব্যবহার করিনি কখনও। তুমি আসবে বলে নামিয়ে মাজিয়ে রেখেছিলাম।’

‘এরকম আর করবেন না। আমাকে আলাদা না ভাবলেই ভাল হত।’

‘ওমা! তুমি আলাদা না?’

‘নিশ্চয়ই না। আমার সঙ্গে লাবণ্যর তফাত কোথায়?’

কথাটা শুনে বৃদ্ধা খুব খুশি হলেন। লাবণ্যকে একটা কাজের অছিলায় অন্য ঘরে পাঠিয়ে বললেন, ‘সবসময় খুব ভয়ে ভয়ে থাকি মা। স্কুলে যদি জানতে পারে কোন বাড়ি থেকে এসেছে তা হলে তো ছাড়িয়েও দিতে পারে। কোনও বন্ধুর বাড়িতে যেতে দিই না, কাউকে আসতেও বলে না। এরই মধ্যে ওইটুকুনি মেয়ে সব বুঝে গিয়েছে।’

‘আপনারা কি মিত্র?’

‘না গো। যে-মানুষটির সঙ্গে ওর মা শেষ এক বছর ছিল সে হল মিত্র। তা সত্যি কথা কী বলব মা, মেয়ের মৃত্যুর পর মিত্তির এসে বলে গিয়েছিল লাবণ্যর জন্য যখন যা প্রয়োজন হবে তাকে বলতে। লোক তো খারাপ নয়। স্কুলে ভরতির সময় সঙ্গে গিয়ে বাপ বলে নিজের পরিচয় দিয়েছে। তাই বা কে দেয়?’

‘তিনি এখানে এখন আসেন?’

‘না সে বিয়েথা করেছে, ছেলেমেয়ে হয়েছে। তবে খবর দিলে বাইরে দেখা করে। লাবণ্য তাকে দেখেছে স্কুলে ভরতির দিন।’

‘কিছু বলেনি?’

‘কী বলবে। তখন ও এত বাচ্চা ছিল ব্যাপারটা বুঝতেই পারেনি।’ বৃদ্ধা হাসলেন।

‘কিছু মনে করবেন না, আপনার এখন চলে কী করে?’ প্রশ্নটা করা উচিত না তবু না করে পারল না দীপা। তার কৌতূহল বাড়ছিল।

‘কুঁজো গড়িয়ে। যা আছে তাতে এ-মেয়ের বিয়ে হয়ে যাবে। তারপর তো সব ফক্কা। আমি যখন থাকব না তখন কুঁজো শুকিয়ে গেলে ক্ষতি কী। আচ্ছা মা, তুমি তো নাতনির সঙ্গে কথা বললে, কী মনে হল?’

‘কী ব্যাপারে?’

‘বি এ এম এ চাই না, ম্যাট্রিকটা পাশ করতে পারবে তো?’

‘আপনি যেভাবে সামলে রাখছেন তাতে ও এম এ পাশ করে যাবে, দেখবেন।’

‘না মা। অত আশা করি না। অতি বড় বিদ্যেধরীও না পায় বর। ভাল একটা ছেলে দেখে বিয়ে দেব যে ওকে হেনস্থা করবে না। পেটে যদি সামান্য বিদ্যে থাকে তা হলে সমাজে চলতে ফিরতে পারবে। আমরা যা পাইনি ও তা পেলেই আমি খুশি।’

যে-বুড়ো চাকরটি দরজা খুলেছিল তাকে বৃদ্ধা বললেন বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। দীপা আপত্তি করল, ‘এখান থেকে সরাসরি কোনও বাস নেই আমার হস্টেলে যাওয়ার। ওকে পাঠাতে হবে না, আমি একাই যেতে পারব।’

বৃদ্ধা মাথা নাড়লেন, ‘না মা। সন্ধে হয়ে গিয়েছে। তোমাকে কেউ যদি অসম্মান করে তা হলে আমি শান্তি পাব না। হরি সঙ্গে যাক। ও তোমাকে ছাতুবাবুর বাজারের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসবে। হরি, সাবধানে যাবি।’

হরি বলল, ‘তুমি তো আমাকে চল্লিশ বছর ধরে দেখছ। কোনও ভয় নেই। চলুন।’

আজ বিকেলে যখন সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ দিয়ে এই এলাকায় এসে বাড়ি খুঁজছিল তখন অনেকেই অবাক হয়ে গিয়েছিল। লোকগুলো জুলজুল করে দেখছিল তাকে। পানের দোকান, বাড়ির রোয়াকে বসা মানুষগুলোর একজন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘কী চাই বলুন তো?’

দীপার বক্তব্য শুনে লাবণ্যদের বাড়ির দরজায় পৌঁছে দিয়ে বারেবারে ঘুরে দেখছিল। লাবণ্যদের বাড়িতে ওঠার সিঁড়ি আলাদা। সিঁড়ির মুখে লেখা রয়েছে ‘গৃহস্থদের বাড়ি’। অর্থাৎ এ-পাড়ায় নোটিশ ঝুলিয়ে বলতে হয়, আমি গৃহস্থ। কিন্তু এখানে আসার সময় খান্না সিনেমার সামনে দাঁড়ানো মেয়েগুলোর মতো কাউকে নজরে পড়েনি।

হরির সঙ্গে রাস্তায় নেমে দীপার চোখে তেমন কিছু পড়ল না। শুধু উলটো দিকের রকে বসা একটা লোক চেঁচিয়ে উঠল, ‘ও হরিদা, যাচ্ছ কোথায়?’

‘দিদিমণিকে পৌঁছে দিতে।’

‘বাড়িউলির নাতনিকে পড়াবে বুঝি?’

‘তোর এত খবরে কী দরকার?’

‘না না। অনেক উটকো মেয়ে তো রোজ আসছে। তা তোমাদের ঝিয়ের কাছে শুনলাম বাড়িউলি মাস্টারনি রেখেছে। এ-পাড়ায় তো কোনওদিন দেখিনি।’

‘দেখে রাখ। পাঁচজনকেও বলে দিবি। অন্যরকম কিছু হলে চোখ গেলে দেব।’

কথাগুলো বলে হরি সসম্ভ্রমে বলল, ‘চলুন দিদিমণি। দাঁড়াবেন না।’

হাঁটতে হাঁটতে দীপা জিজ্ঞাসা করল, ‘লোকটা কে?’

‘দালাল। আর কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না। ওই বলে দেবে সবাইকে। আসুন রাস্তা পার হই।’ বাস গাড়ি সামলে পার্কের ফুটপাতে পৌঁছে হরি বলল, ‘এই ফুটপাত দিয়ে ভদ্রলোকের মেয়েরা হাঁটে। বিকেলে আপনি এই ফুটপাত দিয়ে এসে এখান থেকে রাস্তা পার হবেন। কেউ কিছু বলবে না, তবু যদি বলে ফেলে আমার নাম করবেন।’

‘আমার কিন্তু জায়গাটা দেখে কলকাতার অন্য রাস্তার মতনই মনে হচ্ছে!’

‘আমাদের বাড়িটা তো মুখে তাই অমন মনে হচ্ছে। ভেতরে চিৎপুর পর্যন্ত এখন মচ্ছব বসে গিয়েছে। মা খুব চেষ্টা করেছিল বাড়ি বিক্রি করে ভদ্রপাড়ায় উঠে যেতে। কিন্তু যারা কিনবে তারা দামই দিতে চায় না।’ হরি মাথা নেড়ে কথা বলছিল।

ছাতুবাবুর বাজারের সামনে এসে দীপা বলল, ‘এবার তুমি চলে যাও।’

হরির বোধহয় ইচ্ছে ছিল আর একটু যাওয়ার কিন্তু দীপা আমল দিল না। বাঁদিকের ফুটপাত ধরে সে হনহনিয়ে হেঁটে এল হেদোর সামনে। এসে স্বস্তি হল। কিন্তু তখনই কানে এল একটা গলা, “নিশ্চয়ই হস্টেলের মেয়ে।’ দ্বিতীয় গলা বলল, ‘বাঙালও হতে পারে।’

সে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল কয়েকজন লোক ফুটপাতে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল, গলাদুটো শোনা গেছে তাদের মধ্যে থেকেই। খামোকা গায়ে পড়ে ঝগড়া করে কোনও লাভ নেই। এরা নিশ্চয়ই উত্তর কলকাতার মেয়েদের সন্ধের পর একা দেখতে অভ্যস্ত নয়। ফুটপাত পার হয়ে ওপারে যাওয়ার জন্য রাস্তায় নামতে দীপার সমস্ত শরীরে যেন বিদ্যুৎ বয়ে গেল। সে কী করবে বুঝতে পারছিল না। ধীরে ধীরে ট্রামবাস দেখে রাস্তাটা পার হয়ে এল।

বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিল অসীম। দীপা যখন রাস্তা পার হচ্ছে তখন সে দেখতে পেয়েছিল তাকে। কী করবে বুঝে ওঠার আগেই দীপা সামনে এসে দাঁড়াল।

অসীম জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি? এত রাত্রে?’

‘পড়াতে গিয়েছিলাম।’ দীপা আবিষ্কার করল তার কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেক দিন পরে অসীমকে দেখল সে। এখন মনে হচ্ছে অনেক অনেক দিন।

‘পড়াতে? তুমি টিউশনি করছ নাকি?’

‘হ্যাঁ।

‘কোথায়?’

‘সোনাগাছিতে। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর ওপরে।’ সরল গলায় বলল দীপা।

অসীম হাঁ হয়ে গেল। সে অবাক চোখে দীপাকে দেখল, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? কী করে এই টিউশনিটা পেলে? ‘পেয়ে গেলাম।’

দীপা হাসার চেষ্টা করল, ‘তখন জিজ্ঞাসা করলে এত রাতে? রাত তো সবে শুরু হয়েছে। আর মাথা যে খারাপ হয়েছে তা কেউ বলেনি। তুমি এখানে?’

‘তোমার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।’

‘আমার সঙ্গে?’

‘গিয়ে শুনলাম তুমি হস্টেলে নেই।’

‘তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছ?’

‘আমি কি তোমার জন্যে এর আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকিনি?’

‘থেকেছ। তখন সময়টা অন্যরকম ছিল। কিন্তু ব্যাপারটা কী?’

‘তোমার সঙ্গে কয়েকটা জরুরি কথা আছে।’

‘কিন্তু আমি এখন খুব ক্লান্ত।’কথাটা বলার আগে দীপা বিন্দুমাত্র ভাবেনি। বলে ফেলে মনে হল ঠিক বলেছে। এতদিন যে স্বেচ্ছায় দূরে থেকেছে তার খেয়ালখুশি মতো সে কথা বলবে কেন? দীপা ঘুরে দাঁড়াল, ‘তোমার দরকারটা যদি খুব জরুরি হয় তা হলে পরে দেখা করতে পারো। আগামীকাল আমি কলেজে থাকব।’

অসীম তাড়াতাড়ি চলে এল সামনে, ‘দীপা, প্লিজ। এত নিষ্ঠুর হয়ো না।’

‘নিষ্ঠুর আমি! চমৎকার!’

‘তুমি আজ আমাকে একটু সময় দাও।’

‘বাঃ, একটু আগে বললে এত রাত্রে ফিরছি কেন? এত রাত্রে সময় দেব কী করে?’

‘কিন্তু আমার যে আজই বলা দরকার।’

‘তোমার ইচ্ছেমতো সবসময় কাজ হবে এমন ভাবছ কেন?’

‘বুঝতে পারছি আমি তোমার ওপর জোর করছি!’

‘জোর করতে যে অধিকার বোধ প্রয়োজন হয় তা তোমার নেই। তুমি নিজেই তা হারিয়েছ। যেদিন আমার মামা হস্টেলে এসেছিলেন সেইদিন তুমি উধাও হয়ে গিয়েছিলে। আমার সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন বোধ করোনি। তারপর আমার ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গিয়েছে তার কোনও খবর নেবার ইচ্ছেও হয়নি তোমার। আবার আজ বলছ আমি নিষ্ঠুর।’

‘আমি কেন উধাও হয়েছিলাম তুমি জানো না?’

‘আমার আর জানার দরকার নেই। আমাকে হস্টেলে যেতে দাও।’

‘দাঁড়াও। সেদিন তুমি যখন দারোয়ানের সঙ্গে ভেতরে চলে গেলে তখন তোমার মামা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি কে? আমাব সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কী? উনি নিজের পরিচয় দিতে আমি বলেছিলাম আমরা বন্ধু। উনি ঠাট্টা করে বলেছিলেন এ-দেশে ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব হয় না। এটা বিলেত আমেরিকা নয়। আমি বলেছিলাম, সময় পালটাচ্ছে, আপনাদের ধারণাটাও বদলে নেওয়া দরকার। উনি খুব খেপে গেলেন। বললেন তিনি তোমার গার্জেন। তোমার সঙ্গে যদি আমি মিশি তা হলে তিনি স্টেপ নেবেন। কারণ এতে তোমার ক্ষতি হবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কীসের ক্ষতি? উনি বললেন, তুমি বিবাহিতা। তোমার স্বামী কিছুদিন আগে মারা গিয়েছে। তোমার শ্বশুরবাড়ির সমস্ত সম্পত্তি দখল পেতে যাচ্ছ। কিন্তু এসময় যদি একজন হিন্দু বিধবার চরিত্রে কলঙ্কের ছাপ পড়ে তা হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আমি যদি সত্যি তোমাকে বন্ধু বলে মনে করি তা হলে তোমার উপকারের জন্যে আর কখনও যেন দেখা না করি। সেদিন তুমি নিজেকে বিধবা বলেছিলে। বলেছিলে বিয়ের রাত্রে তোমার স্বামী মারা গিয়েছিলেন। আমি বিশ্বাস করতে চাইনি। ভেবেছিলাম তুমি আমাকে পরীক্ষা করার জন্য একটা গল্প বানিয়ে বলছ। পরে একা দাঁড়িয়ে ভেবেছিলাম যদি সত্যি হয় তা হলে আমার কী? আমি তো তোমাকে ভালবাসি, তোমার অতীত নিয়ে আমার কী হবে। কিন্তু তোমার মামা যখন বললেন কিছুদিন আগে তোমার স্বামী মারা গিয়েছেন তখন সব এলোমেলো হয়ে গেল। বুঝলাম তুমি মিথ্যে বলেছ আমাকে। আমি সহ্য করতে না পেরে চলে গিয়েছিলাম।’

পাথরের মতো দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছিল দীপা। তার সমস্ত শরীর যেন ধীরে ধীরে রক্তশূন্য হয়ে যাচ্ছিল। কোনওরকমে সে জিজ্ঞাসা করতে পারল, ‘তা হলে আজ এলে কেন?’

‘না এসে উপায় ছিল না।’

‘আমি একটু বসব। দাঁড়াতে পারছি না।’

‘তোমার হস্টেল অবধি যেতে পারব না?’ দীপার বলার ভঙ্গিতে ব্যস্ত হয়ে উঠল অসীম।

‘এখন আর তোমাকে ঢুকতে দেবে না।’ অত্যন্ত ক্লান্ত দেখাচ্ছিল দীপাকে।

এইসময় একটা ট্রাম আসছিল শ্যামবাজারের ডিপো থেকে। অসীমা দীপাকে বলল, ‘এটায় ওঠো।’

‘কেন?’

‘বসতে পারবে।’

অসীমকে উঠতে দেখে দীপা অনুসরণ করল। ট্রামে যাত্রী ছিল হাতে গোনা। ওরা একেবারে সামনে এগিয়ে গিয়ে ড্রাইভারের পেছনে বসল। দীপার মনে হল সে বেঁচে গেল। হঠাৎ সমস্ত শরীর থেকে ঘাম বেরুচ্ছিল, ভিজে যাচ্ছিল এবং সেইসঙ্গে মাথা ঘোরা। বসতে পেরে তাই আরাম হল। ট্রাম চলতে শুরু করলে বাতাস লাগল মুখে। সে চোখ বন্ধ করল, হঠাৎ এভাবে শরীর খারাপ করছে কেন?

‘রুমালে ঘাম মুছে নাও।’ নিচু গলায় বলল অসীম যদিও তার কোনও দরকার ছিল না। পেছনের সিটগুলো একদম খালি৷ ট্রাম চলার সময় যে-শব্দ হয় তাতে কথা বেশি দূরে যেতেও পারে না। দীপা খুব দুর্বল হাতে ঘাম মুছল। একটা গা-গুলানি ভাব পাক খাচ্ছে পেটে। শিরাগুলো ঝিমঝিম করছে। আচমকা সে আবিষ্কার করল যদি সে অসুস্থ হয়ে যায় তা হলে তাকে দেখার কেউ নেই। হস্টেল থেকে হয়তো হাসপাতালে ভরতি করে বাড়িতে চিঠি দেবে। কিন্তু কেউ আসবে না দায়িত্ব নিতে। এই পৃথিবীতে যতক্ষণ শরীর ঠিক থাকে ততক্ষণ সব সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঁচা যায়। কাউকে তোয়াক্কা না করে একা থাকা সম্ভব যতক্ষণ শরীর তাজা থাকে। কিন্তু অসুস্থ হলেই একজন সঙ্গী দরকার হয় যে খুব কাছের মানুষ। অসীম জিজ্ঞাসা করল, “কেমন লাগছে এখন?’

একটু সময় নিয়ে দীপা বলল, ‘ভাল।’

‘ডাক্তারের কাছে যাবে?’

‘ডাক্তার? দীপা মাথা নাড়ল, ‘না না। আমি ঠিক আছি।’

সারাটা পথ অসীম কোনও কথা বলল না। কী করে যে ট্রামটা ধর্মতলায় পৌঁছে গেল-তা টের পায়নি দীপা। চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে থাকতে একটু আচ্ছন্নের মতো হয়ে গিয়েছিল। কাছে কেউ চিৎকার করতেই তার চোখ খুলে গেল। দেখল ট্রামটা দাঁড়িয়ে আছে কার্জন পার্কে। কামরায় তার পাশে অসীম ছাড়া কেউ নেই। শরীরের ক্লান্তি অনেক কমে গেছে, গা-গুলানি ভাব আর নেই। সে কথা বলল, ‘ট্রাম যাবে না?’

‘সামনের ট্রাম ছাড়লে এটার চান্স। আমরা ডিপোতে বসে আছি। শরীর কেমন?

‘ভাল লাগছে।’

‘কী হয়েছিল বলো তো?’

‘জানি না?’

‘অনেকক্ষণ খাওয়াদাওয়া করোনি?’

না তো। সন্ধে নাগাদ একথালা খেয়েছি।’

‘অম্বল হয়ে গিয়েছে?’

‘না।’

‘তুমি তো বললে টিউশনি থেকে আসছ!’

‘হ্যাঁ। ওখানেই খেয়েছি।’

‘কীরকম বাড়ি?’

‘সে তোমার শুনে দরকার নেই। এখন একটু চা খেলে ভাল হত।’

‘ভাঁড়ে চা বিক্রি করছে। খাবে?’

‘আমি কখনও খাইনি।’

‘গঙ্গাজলে গুড় আদা দিয়ে চা করে।’

‘গঙ্গাজলে? যাঃ।’

পাশের ছাউনির নীচে একটা লোক জ্বলন্ত উনুনে কেটলি বসিয়ে চা বিক্রি করছে। অসীম তাকে ডেকে দুটো ভাঁড় দিতে বলল। গরম চায়ে চুমুক দিয়ে আদার গন্ধ পেল দীপা। কিন্তু ভাল লাগল। শরীরটা একটু একটু করে তাজা হয়ে যাচ্ছে।

চায়ের ভাঁড় জানলা ঘেঁষে ফেলে দিয়ে অসীম বলল, ‘এত অল্প পয়সায় বসার জায়গা, চা খাওয়া পৃথিবীর কোনও রেস্টুরেন্টে পেতে না। সেই সঙ্গে বেড়ানোটা উপরি।’

‘দেখছি তাই।’

‘তোমার কি এরকম হঠাৎ হঠাৎ শরীর খারাপ হয়?’

‘কখনও হয়নি।’

‘আজ হল কেন?’

‘জানি না। তোমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে—।’

‘আই অ্যাম সরি।’

‘কেন?’

‘আমি না দাঁড়িয়ে থাকলে শরীর খারাপ হত না।’

দীপা চুপ করে গেল। সামনের ট্রামটা এখন ডিপো ছেড়ে যাত্রা শুরু করেছে। সে লক্ষ করল অসীম বসেছে তার সঙ্গে স্পর্শ বাঁচিয়ে। এটা ভাল লাগল। দীপা কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করল। অসীমের মুখে টানা ঘটনাগুলো শুনতে শুনতে তার অস্বস্তি শুরু হয়েছিল। মামা যে ওভাবে মিথ্যে কথা বানিয়ে বলতে পারে— শোনামাত্র যে-উত্তেজনা মনে জন্ম নিয়েছিল তাই তার শরীর খারাপ করে দিল। শুধু মামা নয়, একই সঙ্গে অসীমের ওপর রাগ জন্মেছিল তার। মামার মুখে যা শুনেছে তাই বিশ্বাস করে দূরে গিয়েছিল অসীম। মামাকে সে সেইদিন প্রথম দেখল। তার উচিত ছিল দীপাকে ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করা। এই দায়িত্বটুকু পালন করার কথা ওর একবারও মনে এল না। পুরুষ জাতটা কি সন্দেহ আঁকড়ে থাকতে এত ভালবাসে? দীপা ভেবে পাচ্ছিল না।

ট্রাম আবার শ্যামবাজারের দিকে ফিরছে। সন্ধে পেরিয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ। এবার বেশকিছু যাত্রী উঠেছেন। হস্টেলের গেট বন্ধ হবার আগে না পৌঁছালে ঝামেলা হবেই। গ্লোরিয়ার ঘটনাটা ঘটার পর থেকে কড়াকড়ি খুব বেড়ে গিয়েছে। অসীম বসে আছে চুপচাপ। মুখ ফিরিয়ে কথা বলল দীপা, কী বলতে এসেছিলে?’

‘না, থাক।’

‘কেন?’

‘তুমি অসুস্থ—।’

‘এখন ঠিক হয়ে গিয়েছি।’

অসীম নিশ্বাস ফেলল, ‘আমি একটা চাকরি পেয়েছি।’

‘বাঃ, খুব ভাল খবর।’ সবকিছু ভুলে গিয়ে উচ্ছল হল দীপা।

‘তুমি খুশি?’

‘নিশ্চয়ই।’ দীপা অসীমের হাতে হাত রাখল, ‘কোথায়?’

‘দিল্লিতে। বাবার এক বন্ধুর সোর্সে। ভাল চাকরি। এখনই তিনশো টাকা পাওয়া যাবে।’

‘তিন শো! বাপস। অনেক টাকা!’

‘হ্যাঁ, অনেক।’

‘আরে, এভাবে বলছ কেন?’

‘তুমি কি চাও আমি এই চাকরি করি?

‘আমার চাওয়ার সঙ্গে তোমার চাকরি করার কী সম্পর্ক?’

অসীম মুখ ফিরিয়ে নিল। দীপা ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। ট্রামটা খালি রাস্তা পেয়ে বেশ জোরে ছুটছে। দোকানপাট বন্ধ হতে আরম্ভ করেছে। শেষপর্যন্ত অসীম বলল, ‘তুমি আমাকে ক্ষমা করবে না?’

‘কেন?’

‘আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম।’

কী ব্যাপারে?’

‘আমি তোমাকে সন্দেহ করেছিলাম।’

‘সেটা যে সত্যি নয় তার প্রমাণ কি তুমি পেয়েছ? মামার কথা সত্যি নয় তাই বা ভাবলে কী করে? আর এসবের সঙ্গে তোমার চাকরি করারই বা কী সম্পর্ক?’

‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই দীপা!’

নড়ে উঠল দীপা। একরাশ ভাল লাগার ঢেউ যেন তাকে নিয়ে লোফালুফি করছে।

ট্রাম ততক্ষণে মাঝপথ পার হয়ে গিয়েছে। দীপা অসীমের দিকে না তাকিয়ে বলল, “কিন্তু আমি তো তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম।’

‘আমি সব ভুলে যেতে চাই দীপা। তোমার সঙ্গে দেখা না করে আমি একটুও ভাল ছিলাম না। আমি জানি না তোমার কষ্ট হয়েছে কিনা।’

‘হয়েছে।’

‘তা হলে?’

‘কী তা হলে?’

‘ওসব কথা তুলছ কেন?’

‘তুমি এখনই বিয়ের কথা তুলছ কেন?’

‘আমি একা দিল্লিতে যাব না।’

‘কেন?’

‘না। তোমাকে কলকাতায় ফেলে রেখে আমি দিল্লিতে গিয়ে ভাল থাকব না।’

‘কিন্তু তোমাকে তো অপেক্ষা করতে হবেই অসীম।’

‘ও, তোমার সেই আই এ এস? ওটা এখনও মাথায় ঢুকে আছে?’

‘আছে। সহায় সম্বলহীন বাঙালি মেয়ের ওপরে উঠার একমাত্র পথ হল এইসব কম্পিটিটিভ পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেওয়া। অন্তত মামা কাকার রেফারেন্স এখনও লাগে না।

‘তুমি আমাকে ব্যঙ্গ করছ?’

‘আমি, তোমাকে, কীভাবে?’

‘ওই যে দিল্লির চাকরি বাবার বন্ধুর মারফত পেয়েছি বলে। আমি জানি আমার অনেক বন্ধুর কথাটা শোনামাত্র বুক টাটাচ্ছে। এই বাজারে তিনশো টাকা মাইনে ক’জন পায়?’

‘তুমি কি আমাকে তোমার ওইসব বন্ধুর দলে ফেলছ?’

‘না না। কিন্তু তোমার কথা বলার ধরন এমন—!’

‘অসীম, তুমি আমার একটা কথা শুনবে?’ ওর হাত আবার স্পর্শ করল দীপা।

‘নিশ্চয়ই!

‘তুমি দিল্লিতে চলে যাও। আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাসো। কিন্তু আমার সঙ্গে তোমার মিলছে না। যে-কোনও বিষয়ে কথা বললে মনে হয় আমাদের ঝগড়া বেধে যাবে। এই অবস্থায় বেশিদিন আমরা একসঙ্গে থাকতে পারব না। ভালবাসা এক জিনিস আর পরস্পরকে বুঝতে পারা আর এক জিনিস!’

‘তুমি আবার আমার সঙ্গে খেলা করছ!’

‘খেলা! তুমি খেলা বললে?’

অসীম চট করে উঠে দাঁড়াল, ‘শোনো, আমি শুনেছি আই এ-এস-এ ম্যারেড মেয়েরা চান্স পায় না। অতএব তোমার কোনও চান্স নেই।’ বলে কোনও জবাবের অপেক্ষায় না থেকে হনহন করে গেটের কাছে চলে গেল। ট্রামটা বিবেকানন্দ রোডে থামতে অসীম নেমে পড়ল। তারপর একবারও না তাকিয়ে অন্ধকার গলিতে ঢুকে পড়ল। দীপার মাথায় তখন কিছুই ঢুকছিল না। অসীমের শেষ কথাটা তাকে যেন অসাড় করে দিয়েছে। ট্রাম ছাড়ল।

সকল অধ্যায়

১. ১. আজ সারাটা দিন সূর্যদেব উঠলেন না
২. ২. মেয়েরা কি ভূত হয়
৩. ৩. ভালো-মন্দ বোঝার বয়স
৪. ৪. রমলা সেন
৫. ৫. সত্যসাধন মাস্টার
৬. ৬. বৃষ্টিটা চলে যাওয়ার পরে
৭. ৭. চারদিন পৃথিবীটাকে দ্যাখেনি দীপা
৮. ৮. দীপাবলীর বিয়ে
৯. ৯. বাসর এবং বউভাত
১০. ১০. দীপাবলীর ফুলশয্যা
১১. ১১. পুত্ৰটি দেহ রেখেছে
১২. ১২. রমলার চিঠি
১৩. ১৩. প্ৰাপ্তবয়স্কতা শরীরের না মনের
১৪. ১৪. চাবাগানের আশেপাশে
১৫. ১৫. আসাম রোড
১৬. ১৬. একটি মানুষের চেহারা
১৭. ১৭. জলপাইগুড়ি শহরে
১৮. ১৯. রমলা সেনের কাছে
১৯. ১৮. পুলিশের লাঠিচার্জ
২০. ২০. জলপাইগুড়ির হোস্টেলের মেয়ে
২১. ২১. দুশ্চিন্তার ছাপ
২২. ২২. একতারা বাজিয়ে গান
২৩. ২৩. দুর্দান্ত ব্যবসাদার প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়
২৪. ২৪. সত্যসাধন মাস্টার এসে পড়বেন
২৫. ২৫. অমরনাথ হতভম্ব
২৬. ২৬. তিনদিন ধরে সমানে বৃষ্টি
২৭. ২৭. অমরনাথের শরীর
২৮. ২৮. কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
২৯. ২৯. প্রৌঢ় ভদ্রলোকটি হাঁটছিলেন
৩০. ৩০. এক অদ্ভূত অভিজ্ঞতা
৩১. ৩১. বাড়িটা শুধু পুরনো নয়
৩২. ৩২. উত্তর কলকাতার পথে পথে
৩৩. ৩৩. কলেজ এবং হোস্টেলের বাইরে
৩৪. ৩৪. দীপা অঞ্জলির দিকে তাকাল
৩৫. ৩৫. অমরনাথ শুয়ে আছেন
৩৬. ৩৬. ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্ৰচণ্ড অসহায়তাবোধ
৩৭. ৩৭. তিনতলার ব্যালকনি
৩৮. ৩৮. দীপা চুপ করে আছে
৩৯. ৩৯. সুভাষচন্দ্র এগিয়ে এলেন
৪০. ৪০. মেয়েটির নাম লাবণ্য
৪১. ৪১. বিছানায় টান টান দীপা
৪২. ৪২. কলেজের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
৪৩. ৪৩. কিছু মানুষ খুন হলেন
৪৪. ৪৪. কেমন একটা সংসার-সংসার ভাব
৪৫. ৪৫. রাধা চলে এল সেজেগুজে
৪৬. ৪৬. দ্বিতীয় অভিনয় হয়ে যাওয়ার পরে
৪৭. ৪৭. কলোনি থেকে কলেজ পাড়ায়
৪৮. ৪৮. স্কটিশ চার্চ কলেজে জানাজানি হয়ে গেল
৪৯. ৪৯. একদম লেডি
৫০. ৫০. রমলা সেন চোখ ছোট করলেন
৫১. ৫১. সাতকাহন প্ৰথম পর্ব সমাপ্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন