৪. রমলা সেন

সমরেশ মজুমদার

মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল অমরনাথের।

শেষ হাতে নবনীর দোষে হেরে গেলেন তিনি। নবনী তাঁদের বাগানের মেজ গুদামবাবু। খুব উৎসাহ তাস খেলার অথচ শেষ সময়ে মাথা ঠিক রাখতে পারে না। মাত্র চারটে রং পেয়ে বারো পয়েন্টেই ডবল দিয়ে বসল থ্রি স্পেডসে। প্রতিপক্ষ ওটি করে জিতে গেল। তা না হলে ওরা গেম করলেও অমরনাথই জিততেন। খেলা শেষ হলে নবনী মুখ কালো করে বলল, ‘আমি ভেবেছিলাম দাদা আপনার হাতে দুটো রং আর ডায়মন্ডের অনার্স কার্ড থাকবে।’

কঠোর মুখে অমরনাথ বলেছিলেন, ‘যদি এইরকম ভাবা বন্ধ করতে না পারো তা হলে আমার পার্টনার হয়ে খেলতে এসো না। তোমার সঙ্গে খেলতে আমার আর ইচ্ছেও নেই।’

এইসময় ঘ্যানর ঘ্যানর করলে আরও রাগ হয়ে যায়। সুনীলবাবু রাত্রের খাওয়া খেয়ে যেতে অনুরোধ করছিলেন প্রতিযোগীদের। অমরনাথ অজুহাত দেখিয়ে একাই বেরিয়ে পড়লেন সাইকেল নিয়ে। দূরত্ব বেশি নয়। বড়জোর পাঁচ মাইল।

পূর্ণিমা চলে গেলেও এখন একটু বেশি রাতে চাঁদ ওঠে, অল্প জ্যোৎস্না নামে। কিন্তু আকাশ এখনও মেঘলা। দেবীপক্ষ হয়ে গিয়েছে। দু’পাশে চা বাগান। অন্ধকার যেন আঁটোসাঁটো হয়ে আছে। মন খারাপের ঘোরে মাইলখানেক আসার পরে হঠাৎ খেয়াল হল একা একা এই পথে এত রাত্রে আসা ঠিক হয়নি। মানুষের ভয় নেই, কিন্তু চিতা আছে দু’পাশের চায়ের বাগানে। মাইল তিনেকের মধ্যে কুলি লাইনও নেই। রাস্তার দু’পাশে ঝাপড়া হয়ে আছে আম কাঁঠালের গাছ, সার সার। বাঁ হাতে টর্চ জ্বেলে সাইকেল চালাচ্ছিলেন। তাগিদ থাকায় জোরে প্যাডেল ঘোরাচ্ছিলেন।

বিনাগুডির মোড় ছাড়িয়ে রাস্তাটা বাঁদিকে ঘোরামাত্র অমরনাথ টর্চের আলোয় একটা পুরনো হুডওয়ালা অস্টিন গাড়ি দেখতে পেলেন। রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। অমরনাথ সেটাকে লক্ষ করবেন না ঠিক করে একই স্পিডে সাইকেল চালাতে গিয়ে দেখলেন গাড়ি থেকে কেউ একজন নেমে এসে চিৎকার করল, ‘স্টপ, স্টপ, হেল্‌প, হেল্‌প।’ গলাটা মেয়েদের বলেই অমরনাথ বাধ্য হলেন সাইকেল থামাতে। মধ্যবয়সিনী এক মহিলা তড়বড়ে ইংরেজিতে কিছু বলে গেলেন। সাহেবদের সঙ্গে কাজ করে অমরনাথ এখন ইংরেজিতে মোটামুটি অভ্যস্ত। কিন্তু তিনি কিছুই ধরতে পারলেন না। অমরনাথ লক্ষ করলেন মহিলার পরনে শাড়ি। অতএব তিনি হিন্দিতে জিজ্ঞাসা করলেন সমস্যাটা কী?

মহিলা চোস্ত্‌ হিন্দিতে বললেন, ‘আমার গাড়ি বিগড়ে গেছে। তখন থেকে বসে আছি অথচ এই রাস্তায় কেউ আসছে না। ভয়ে আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছিল।’

‘আপনি এখানে এত রাত্রে কী করছিলেন?’

‘আশ্চর্য! আমি কী করছিলাম সেটা বুঝতে পারছেন না? আমাকে আজ রাত্রেই শিলিগুড়িতে যেতে হবে। এখানে মেকানিক কোথায় পাওয়া যাবে?’ মহিলা এক নিশ্বাসে প্রশ্ন করলেন।

‘এখানে তো পাবেন না। গাড়িতে কি আপনি একা আছেন?’

‘হ্যাঁ। আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’

‘এখান থেকে কয়েকমাইল দূরে এক চা-বাগানে আমি কাজ করি।’

‘আচ্ছা! ওই বাগানে গেস্টহাউস আছে?’

‘তা আছে। কিন্তু সেখানে থাকতে গেলে বড়সাহেবের অনুমতি লাগবে।’

‘সেটা পেতে আমার কোনও অসুবিধে হবে না। আপনি বাগানে গিয়ে একটা এসকর্ট গাড়ি পাঠিয়ে দিন চটপট।’ মহিলা হুকুম করলেন।

‘গাড়ি পাঠাবার ক্ষমতা আমার নেই।’

‘আপনার বড়সাহেবকে বলুন একজন মহিলা গাড়ি নিয়ে অসুবিধায় পড়েছেন।’

‘তাঁকে বলা যাবে না। কারণ ছুটির দিনে তিনি মদ খেয়ে ঘুমিয়ে থাকেন।’

‘এইসব পুরুষগুলোর জন্যে দেশটা উচ্ছন্নে গেল। তা হলে কী করা যায়?’ ভদ্রমহিলাকে চিন্তিত দেখাল, ‘এই গাড়ি চুরি করার জন্যে এত রাত্রে এখানে কেউ আসবে মনে হয়?’

‘না আসাই স্বাভাবিক।’ অমরনাথ বুঝতে পারছিলেন না তাঁর কী করা উচিত।

ভদ্রমহিলা অমরনাথকে পেরিয়ে সরাসরি তাঁর সাইকেলের ক্যারিয়ারে উঠে বসলেন, ‘চলুন। এই জঙ্গলে পড়ে থাকলে কাল সকালে কেউ আমাকে খুঁজে পাবে না।’

প্যাডেল ঘোরাতে গিয়ে সাইকেলটা একটু নড়বড়ে হতেই ভদ্রমহিলা ধমকে উঠলেন, ‘ঠিকভাবে চালান, পড়ে যাওয়াটা আমার ভাল লাগবে না।’ ডাবলক্যারি করার অভ্যাস নেই, চেষ্টা করে নিজেকে সামলে নিলেন অমরনাথ। এ-জীবনে কোনও মহিলাকে সাইকেলের পেছনে নিয়ে চালাননি তিনি। অস্বস্তি হচ্ছিল খুব। কিন্তু দুশ্চিন্তা হচ্ছিল, এঁকে নিয়ে তিনি কোথায় যাবেন? বড়সাহেবকে ডাকতে গেলে চাকরি যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। পি ডব্লু ডি-র বাংলোতে গিয়ে অবশ্য চৌকিদারকে অনুরোধ করা যায় এঁকে একরাত থাকতে দেবার জন্যে। কথাবার্তা এবং চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সম্পন্ন ঘরের শিক্ষিতা। মহিলা। কিন্তু চৌমাথায় পৌঁছাতে চেনা লোকজন যদি এই দৃশ্য দ্যাখে তা হলে আর চা-বাগানে টিকতে হবে না। অমরনাথ ঘামতে লাগলেন! পেছনে যিনি বসে আছেন তিনি আপাতত শব্দহীনা। মহিলার সাহস খুব। এই রাত্রে একা গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। মেমসাহেবদের গাড়ি চালাতে দেখেছেন অমরনাথ কিন্তু কোনও ভারতীয় মহিলাকে এই প্রথম দেখলেন। তার ওপর একদম অপরিচিত একটি মানুষের সাইকেলের পেছনে কী অবলীলায় চড়ে বসলেন। অমরনাথ না হয়ে কোনও কুমতলববাজও তো হতে পারত। সঙ্গে সঙ্গে আর একটা ভাবনা মাথায় এল। চা-বাগানের রাস্তায় অনেকেই রাত দুপুরে তেনাদের দর্শন পায়। অমরনাথের প্রতি তেনারা এখন পর্যন্ত দয়া করেননি। আজ সেটাই হল না তো। অমরনাথের সর্বাঙ্গে কাঁটা ফুটল। তিনি আরও জোরে প্যাডেল ঘোরাতে লাগলেন। শেষপর্যন্ত চৌমাথা এসে গেল। দোকানপাট বন্ধ। সারাদিন হাটের পর আর কেউ জেগে নেই। একেবারে নদী পেরিয়ে নিজের কোয়ার্টার্সের সামনে এসে অমরনাথের মনে হল ইনি তিনি নন। হলে এতটা দূর এভাবে আসতে পারতেন না। নিজের বোকামির জন্যে লজ্জা পেলেন তিনি। কিন্তু এখন কী উপায় হবে? কোথায় রাখতে যাবেন এঁকে? চৌমাথায় নামিয়ে দিলে মুক্তি পাওয়া যেত। এখন তো ফিরে যাওয়া যায় না। বাবুদের কোয়ার্টার্সের আলো নিবে এসেছে। কেউ তাদের দেখতে পায়নি।

সাইকেল থেকে নেমে অমরনাথ বললেন, ‘আমি আমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গিয়েছি, এবার আপনি ঠিক করুন কোথায় যাবেন।’ ভদ্রমহিলা সহজ ভঙ্গিমায় নেমে পড়লেন ক্যারিয়ার থেকে। এখন মাঠ আকাশ ঘুটঘুটে অন্ধকারে মোড়া। শুধু অমরনাথের বাইরের ঘরের জানলা দিয়ে হ্যারিকেনের আলোর ফালি বাইরে পড়ছে। ভদ্রমহিলা সেই দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওখানে আপনি থাকেন?’

‘হ্যাঁ। ওটা আমার কোয়ার্টার্স।’ অমরনাথ ঈষৎ শঙ্কিত হলেন।

‘আপনার আত্মীয়স্বজন?’

‘সবাই আছেন?’

‘আপনি তো বাঙালি?’ কথাবার্তা এতক্ষণ হিন্দিতে হচ্ছিল, কুলিকামিনদের সঙ্গে কাজ করতে করতে যে-হিন্দি অমরনাথ শিখেছেন তাকে শিক্ষিত হিন্দি বলা যায় না। ভদ্রমহিলা সে-তুলনায় বেশ তুখোড়। হঠাৎ বাংলা ব্যবহার করলেন তিনি। অমরনাথ বলেন, ‘হ্যাঁ। আমার নাম অমরনাথ মুখোপাধ্যায়।’ মহিলা চারপাশে নজর বুলিয়ে নিলেন। তারপর বললেন, ‘তা এতক্ষণ এ-কথা বলতে কী অসুবিধে হয়েছিল বুঝি না। চলুন আজ রাত্রে আপনার বাড়িতেই থাকব। মদোমাতাল সাহেবকে ডেকে তোলার ধকল আর নেব না।’

‘আপনি আমার বাড়িতে থাকবেন?’ অমরনাথ ফ্যাসফেসে গলায় জিজ্ঞাসা করলেন।

‘রাস্তায় পড়ে থাকতে পারি না তো। আমার নাম রমলা সেন। কেশবচন্দ্র সেনের নাম শুনেছেন?’

‘কেশবচন্দ্র?’ চিনতে পারলেন না অমরনাথ।

‘নববিধান, ব্রাহ্মসমাজ? বুনো জায়গায় থেকে কী অশিক্ষিত হয়ে আছেন বলুন তো।’

এবার অমরনাথ চিনতে পারলেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, কিন্তু তিনি তো অনেককাল হল গত হয়েছেন। আপনি অমন হুট করে বললে আমি ঠাওর করব কী করে?’

‘করা উচিত। যদি বলি রবীন্দ্রনাথের নাম শুনেছেন তা হলে তো পাড়ার কোনও রবির কথা নিশ্চয়ই ভাববেন না। আমি কেশব সেনের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। চলুন ভেতরে।’

প্রতিক্রিয়া কী হবে জানেন না। নিজেকে তিনি কিছুটা রক্ষণশীল বলে মনে করেন কিন্তু গোঁড়ামি নেই। সেটা আছে অঞ্জলির। চাল চলন বলনে। মনোরমা ব্যাপারটাকে কী চোখে দেখবেন সেটাও একটা প্রশ্ন। কিন্তু এখন কিছু করার উপায় নেই। নবনীর ওপর আবার রাগ এল তাঁর। শেষ হাতটা যদি বোকার মতো ডাবল না দিয়ে বসত তা হলে দু’জনে একসঙ্গে ফিরে আসতেন। পথে রমলা সেনকে পেলে তিনি থেকে যেতেন নবনীর বাড়িতে। সে থাকে একা। বিয়ে থা করেনি। রমলা সেনের আপত্তি হলে নবনী তাঁর বাড়িতে চলে আসতে পারত। কিন্তু এসব ভেবে আর লাভ কী। অমরনাথ দরজার কড়ার মৃদু আওয়াজ করলেন।

সঙ্গে সঙ্গে অঞ্জলির গলা ভেসে এল, ‘কে?’

‘আমি।’ জানান দিয়েই সংশোধন করে নিলেন অমরনাথ, ‘আমরা।’

ভেতরে অঞ্জলির গলা আর একটু উঁচুতে উঠল, ‘কী তাস খেলার নেশা বাবা, রাত কত হল তাও খেয়াল করো না। কতক্ষণ এভাবে জেগে থাকা যায়!’

দরজাটা যখন খুলছে তখন রমলা সেন খেঁকিয়ে উঠলেন, ‘আপনি তাস খেলেন?’

অমরনাথ দেখলেন অঞ্জলি যেন একটু অপ্রস্তুত। সে ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। রমলা অঞ্জলির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনি জেগে থাকেন কেন? এই ভদ্রলোক নিজের শখ মেটাতে যদি শেষরাত করেন তা হলেও আপনি জেগে থাকবেন? না না, অমরনাথবাবু, আপনি তাস খেলতেই পারেন, সারারাতও পারেন, কিন্তু উনিও তখন ঘুমাতে পারেন।’

অমরনাথ তাড়াতাড়ি বললেন, ‘এসব কথা এখন থাক। আপনি ভেতরে এসে বসুন।’

অঞ্জলি দরজা থেকে সরে দাঁড়াল। ঘরে ঢুকে রমলা বললেন, ‘আপনাদের ইলেকট্রিসিটি নেই।’

‘না। এখনও আসেনি।’

‘চায়ের বাগান কীসে চলে, ইলেকট্রিক লাগে না ফ্যাক্টরিতে?’

‘ওখানে আছে। সাহেবদের কোয়ার্টার্সে আছে।’

‘দিস ইজ ব্যাড।’ রমলা বসে পড়লেন চেয়ারে, ‘বসলাম। আপনার সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে শরীরে ব্যথা হয়ে গিয়েছে।’

অমরনাথ স্ত্রীর দিকে তাকালেন। সেই মুহূর্তে অঞ্জলি চোখ তুলল। অমরনাথ বুঝলেন এখনই সব কথা খুলে না বললে সমস্যা বাড়বে। তিনি সাইকেলটাকে বারান্দা থেকে তুলে ঘরের এক পাশে রেখে বললেন, ‘তেলিপাড়া থেকে আসছিলাম। মাঝরাস্তায় দেখি এঁর গাড়ি খারাপ হয়ে আছে। জায়গাটা খারাপ, উনি সাহায্য চাইলেন। এত রাত্রে কোথায় নিয়ে যাব— ।’

‘আপনার স্ত্রী তো?’ চেয়ারে বসেই হাত তুললেন রমলা সেন।

‘হ্যাঁ। ওর নাম অঞ্জলি?’

‘নমস্কার। আমার নাম রমলা সেন। কলেজে পড়াই। এসেছিলাম এক ভদ্রলোকের অনুরোধে তার চা-বাগানে। আজ সকালেই এসেছিলাম। সন্ধের পরে বুঝলাম লোকটা মোটেই ভদ্রলোক নয়। তাই ফিরে যাচ্ছিলাম। পথে গাড়ি খারাপ হয়ে গেল। আজকের রাতটা ভাই এখানেই থাকব। আপনার আপত্তি নেই তো?’

‘এতক্ষণে অঞ্জলি কথা বলল, ‘না না। বেশ তো।’

‘আমাকে নিয়ে কোনও চিন্তা করবেন না। মশা আছে?’

অমরনাথ বললেন, ‘হ্যাঁ। মশারি টাঙালে অসুবিধে হবে না।’

অঞ্জলি আবার স্বামীকে দেখে নিয়ে বলল, ‘আপনি একটু বিশ্রাম করুন। আমি আসছি।’

এখন চা-বাগানে গভীর রাত। দুটো প্রায় ঘুমন্ত ঘর পেরিয়ে অঞ্জলি ভেতরের বারান্দায় চলে এসে মনোরমার দরজায় মৃদু অথচ দ্রুত আঘাত করল, ‘মা মা। উঠুন, একবার।’ মনোরমা খানিকটা অবাক হয়ে আঁচল সামলাতে সামলাতে দরজা খুলে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী হল, অমর ফেরেনি এখনও?’

অঞ্জলি মাথা নাড়ল, ‘না না। ফিরেছে। কিন্তু সঙ্গে একজন ভদ্রমহিলাকে নিয়ে এসেছে। কলেজে পড়ান। চোখে মুখে কথা বলেন। আজ রাত্রে এখানে থাকবেন। কিন্তু কী খেতে দেব বুঝতে পারছি না বলে আপনাকে ডাকলাম। আপনি একবার চলুন।’

‘আমি গিয়ে কী করব!’ মনোরমা জানতে চাইলেন, ‘কোত্থেকে নিয়ে এল অমর ওকে?’

‘রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে পড়েছিল। আপনার ছেলের কাছে সাহায্য চেয়েছিল।’

‘ওমা। রাতবিরেতে অজানা অচেনা মেয়েমানুষ সাহায্য চাইলেই তাকে বাড়িতে বয়ে আনতে হবে। কবে ওর আক্কেল হবে বলো দিকিনি! জীবনে একবার ভুল করলে তো মানুষের শিক্ষা হয়।’ মনোরমার গলা ওপরে উঠছিল। অঞ্জলি সাততাড়াতাড়ি ইশারা করতে সেটা নেমে এল। পাশেই কৌতূহলী চোখে বিছানা ছেড়ে এসে দাঁড়িয়েছে দীপা। অঞ্জলি তাকে কড়া গলায় বলল, ‘অ্যাই, শুতে যা। সারাপৃথিবী ঘুমিয়ে পড়েছে আর মেয়ের চোখ ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে।’

মনোরমা তখন সমস্যার ভেতরে ঢুকে গিয়েছেন, ‘কী খায়— যদি একবার জিজ্ঞাসা করে নিতে।’

অঞ্জলি বলল, ‘আমার লজ্জা করছে।’

হঠাৎ দীপা প্রশ্ন করল, ‘আমার লজ্জা করবে না! আমি জিজ্ঞাসা করে আসব?’

মনোরমা অবাক হয়ে বললেন, ‘এমা! কী ব্যাপারে কথা বলছি তুই জানিস?’

দীপা মাথা নাড়ল, ‘হ্যাঁ। তুমিই তো বলো সবসময় চোখ খোলা আর কান খাড়া করে থাকবি।’

অঞ্জলি হাসি চাপল। তারপর বলল, ‘তুই ঘুমের মধ্যেও তাই করিস বুঝি!’

‘আমার তো ঘুম আসেইনি। যাব?’ দীপা ছটফটিয়ে উঠল।

মনোরমা বললেন, ‘দাঁড়াও।’ তারপর অঞ্জলিকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘অমর ওখানে আছে?’

অঞ্জলি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। মনোরমা নাতনিকে বললেন ‘তুই গিয়ে তোর বাবাকে জিজ্ঞাসা করবি উনি ভাত না রুটি খাবেন?’

দীপা ছুটল। চার পা গিয়েই সে কোনওমতে নিজেকে সামলে নিয়ে ফিরে এল, ‘আমার পিঠের বোতামটা লাগিয়ে দাও না।’

অঞ্জলি সেখানে হাত দিয়ে হতাশ হল, ‘তুই আবার এই জামাটা পরে শুয়েছিস? তোকে বলেছিলাম না বোতাম না-লাগানো পর্যন্ত এটা পরবি না।’

একটা তো ছিল। আমার খুব আরাম লাগে শুতে— ।’

‘আরাম লাগে! এর মধ্যেই আরাম বুঝে গিয়েছ! যাও খুলে অন্য জামা পরে নাও। যে-বোতামটা ছিল সেটিও হারিয়েছ।’

জামা শরীরে গলালেই চুলে চিরুনি বোলাতে হয়। কিন্তু আয়নার কাছাকাছি কোনও হ্যারিকেন জ্বলছে না। নিজের আবছা মুখের দিকে তাকিয়ে আন্দাজে চিরুনি চালিয়ে দীপা বাইরের ঘরের দরজায় চলে এল। তামরনাথ কিছু বলছিলেন মেয়েকে দেখে চুপ করে গেলেন। দীপা আর একটু এগোতেই ভদ্রমহিলাকে দেখতে পেল। কীরকম করে শাড়ি পরা। মায়েদের বয়সি হবে। মুখটা সুন্দর কিন্তু খুব শক্ত শক্ত। সে জিজ্ঞাসা করল, আপনি রুটি না ভাত খাবেন?’

‘আমি যে কিছু খাব তা ভাবলে কী করে?’ রমলা সেন হাসলেন।

‘সারারাত তো না খেয়ে কেউ থাকে না।’

‘ইন্টারেস্টিং! তুমি কি শুনেছ পৃথিবীর অনেক লোক একবেলা খেয়ে থাকে?’

‘শুনলাম।’

‘বাঃ! কী নাম তোমার?’

‘দীপাবলী মুখোপাধ্যায়। আপনার নাম?’

‘রমলা সেন।’ রমলা যেন একটু থমকে গেলেন।

‘কী খাবেন বলুন?’

‘যা তোমাদের সুবিধে। তোমার খাওয়া হয়ে গেছে?’

‘কখন। বাবার জন্যে মা বসে থাকে, আজ আপনি এলেন।’

রমলা সেন উঠলেন, ‘আপনার স্ত্রী কোথায় অমরনাথবাবু? কী যেন নাম! অঞ্জলি।’

রমলা দীপার পাশ কাটিয়ে ভেতরের ঘরে ঢুকে গলা তুললেন, ‘ভাই অঞ্জলি! অঞ্জলি!’ মেয়ের পেছন পেছন উত্তরটা শোনার জন্যে চলে এসেছিল অঞ্জলি, অতএব একদম মুখোমুখি পড়ল। রমলা তাকে দেখামাত্র বললেন, ‘শোনো, তুমি যদি ব্যস্ত হও তা হলে ভাই আমি খুব লজ্জায় পড়ব। তোমাদের দু’জনের জন্যে যা আছে তাই ভাগ করে তিনজনে খাব। তোমাদের যদি কষ্ট হয় তা হলে একটু মেনে নাও, বুঝলে।’

অঞ্জলি বলল, ‘এই বাড়িতে যখন এসেছেন তখন ব্যাপারটা আমাদের ওপর না হয়, ছেড়ে দিন। আপনি বরং হাতমুখ ধুয়ে নিন।’

সঙ্গে সঙ্গে রমলা সেন গলা তুললেন, ‘আচ্ছা জ্বালাতন তো। এই করেই বাঙালি মেয়েরা নষ্ট হয়ে গেল। এই রাতদুপুরে তুমি রাঁধতে বসবে? পাগল। আচ্ছা বাবা, যদি তোমাদের বেশি খাবার না থাকে তা হলে আমায় একবাটি মুড়ি দাও। তাতেই চলবে।’

অঞ্জলি তো হতবাক। একদম অচেনা মানুষ এমন ধমক দিয়ে কথা বলতে পারে! এইসময় মনোরমার গলা ভেসে এল ভেতরের বারান্দায় যাওয়ার দরজা থেকে, ‘উনি যা বলছেন তা তো ভালই। বাড়িতে যা আছে তাই ধরে দাও। অতিথি নারায়ণ, যত্নের সঙ্গে যা দেবে তাতেই তিনি খুশি হন।’

রমলা সেন এগিয়ে গেলেন, ‘আপনি কে হন এঁদের?’

‘অমর আমার ছেলে।’ মনোরমা জানালেন।

‘নমস্কার।’ রমলা সেন হাত জোড় করলেন, ‘আপনার কথা আমার খুব ভাল লাগল। তবে আমি নারায়ণ টারায়ন বুঝি না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আপনাদের ঘুম থেকে তুলে খুব অন্যায় করেছি।’

‘তা কেন? এইসময় কোনও আত্মীয়স্বজন তো দূরদেশ থেকে উপস্থিত হতে পারত। যাও বউমা, দাঁড়িয়ে থেকে রাত বাড়িও না।’ মনোরমা ফিরে গেলেন নিজের ঘরে।

দীপার ঘুম আসছিল না। এইরকম কথাবার্তা কোনও মহিলা বলতে পারে জেনে সে বারেবারে চমকিত হচ্ছিল। রমলা সেন হাত মুখ ধুলেন। অমরনাথের সঙ্গে রান্নাঘরে পিঁড়ি পেতে বসে খেলেন। অঞ্জলিকে বারংবার বলতে লাগলেন একসঙ্গে খাওয়ার জন্যে। অঞ্জলি রাজি হচ্ছিল না। ব্যাপারটা তার অভ্যেসই নেই। কিন্তু রমলা জেদ ধরলেন অঞ্জলি যদি না খান তা হলে তিনিও খাবেন না। বললেন, ‘আমি কি মনে করব যে তুমি একসঙ্গে খাচ্ছ না কারণ আমার ধর্মটা ব্রাহ্ম।’ অঞ্জলি প্রতিবাদ করল। এবং শেষপর্যন্ত একসঙ্গে খাওয়া শুরু করল। যদিও দূরত্বটা ছিল অনেকটাই। রান্নাঘর থেকে খাওয়ার ঘর অন্তত হাত দশেক। দীপা পুরো ব্যাপারটা দেখল। তারপর মায়ের কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘মা, ব্রাহ্ম মানে কী? খ্রিস্টান?’ ধন্দ ছিল অঞ্জলির। শব্দটা সে শুনেছে কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও চেনাজানা মানুষকে ওই ধর্মাচরণ করতে দ্যাখেনি। অঞ্জলি চাপা গলায় বলল, ‘চুপ করো।’

অমরনাথ কিন্তু আশ্চর্যরকমের চুপ করে গিয়েছিলেন। অঞ্জলি নিজে আলাদা না খেয়ে তাঁকে আলাদা দিলেই বেশি খুশি হতেন। এ-বাড়িতে একটা বেশি ঘর আছে। সকালে ছেলেমেয়েরা সেখানে পড়ে। খাটও আছে। ভদ্রমহিলার শোওয়ার কোনও অসুবিধে হবে না। কিন্তু এমন সৃষ্টিছাড়া মহিলার কথা তিনি গল্প উপন্যাসেও পড়েননি। আড় চোখে দেখলেন একবার। অন্ধকার রাস্তায় তাঁকে থামাবার পর যে-রেটে প্রথমে ইংরেজি এবং পরে হিন্দি বলছিলেন তা এখন দেখলে অনুমান করা শক্ত।

খাওয়া শেষ হল আগে অঞ্জলিরই। রবিবার বলেই বাড়িতে মাছ ছিল। ভাগ করে নিতে অসুবিধে .হয়নি। অঞ্জলি বাইরের ঘরে বিছানা করে দিয়ে নিজের দুটো ভাল শাড়ি বের করল। যা পরে আছেন রমলা সেন তা পরে নিশ্চয়ই রাত্রে শোবেন না।

ঘরে ফিরে এসে রমলা সেন বললেন, ‘চমৎকার খেলাম। জঙ্গলে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল বাঘের পেটে যেতে হবে— নিজের পেট ভরাবার কথা চিন্তাতেও আসেনি। তোমার স্বামীটি ভাই খুব ভাল মানুষ। অন্ধকারে একা পেয়েও কোনও বিরক্ত করেনি।’

অঞ্জলি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘ওমা, আপনাকে বিরক্ত করতে যাবে কেন?’

‘আচ্ছা মেয়ে তো তুমি? পুরুষমানুষ মেয়েদের কেন বিরক্ত করে তা জানো না? এই এতটা পথ এক সাইকেলে এলাম, একবার পেছন ফিরেও তাকায়নি যেন আমি একটা ভয়ংকর জীব। স্ত্রী হিসেবে তুমি এইজন্যে গর্বিত হতে পারো।’

অঞ্জলির কথাগুলো ভাল লাগল না। যত বিপদই হোক, হুট করে একটা অপরিচিত পুরুষের সঙ্গে সাইকেলে কেউ আসে! অঞ্জলি বলল, ‘আপনার সাহস তো খুব।’

‘ওইটেই তো সম্বল।’ রমলা সেন শাড়িদুটো দেখলেন, ‘আরে এ কী করেছ! না না তোমার শাড়ির দরকার নেই। এগুলো তুমি নিয়ে যাও।’

‘আপনি রাত্রে ওইটে পরেই শোবেন? নষ্ট হয়ে যাবে কাল সকালে!’

‘সেটা আমি বুঝব। আমি অন্যের ব্যবহার করা শাড়ি পরে শুতে পারি না। শরীর কেমন করে। তা ছাড়া এ-ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলে সব ল্যাঠা চুকে গেল!’

অঞ্জলি হেসে ফেলল। দীপা দাঁড়িয়ে ছিল দরজায়। সেদিকে নজর পড়তে অঞ্জলি বলল, ‘তুমি এখনও ঘুমোওনি? যাও, শুয়ে পড়ো গে।’

দীপা বলল, ‘আমার চোখে ঘুমই আসছে না।’

রমলা সেন বললেন, ‘বাঃ! খুব ভাল। এসো, ততক্ষণ তোমার সঙ্গে গল্প করি। ঘুম এলেই যে যার বিছানায় চলে যাব।’

অঞ্জলি কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। রমলা সেন চেয়ারে বসলেন। বসে দীপাকে ডাকলেন, ‘ওখানে কেন, তুমি বরং ওই খাটে উঠে বসো।’

কৌতূহলে দীপার পেট ফেটে যাচ্ছিল। বিছানায় উঠে পা ঝুলিয়ে বসে বলল, ‘তোমার বাড়িতে আর কে কে আছে?’

রমলা সেন হাসলেন, ‘কেউ নেই শুধু একটা কাজের মেয়ে ছাড়া।’

‘তুমি বিয়ে করোনি?’

‘হুঁ। করেছিলাম।’

‘তোমার বর কোথায় থাকে?’

‘এখন তিনি আব আমার বর নন। তাই আমি আমার মতো থাকি!’

‘ওমা। একবার বর হলে আবার বর নয় হবে কেন?’

‘হয়। ধরো, তোমার কোনও বন্ধু তোমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করল। তুমি তার সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিলে। সে কি আর তোমার বন্ধু থাকবে? থাকবে না।’

‘বর কি বন্ধু?’

‘হ্যাঁ। কিছু সম্পর্ক আছে যা মানুষ জন্মমাত্র পেয়ে যায়। যেমন মা বাবা দাদা বোন মাসি পিসি এইসব। এগুলো পেতে মানুষকে কিছু অর্জন করতে হয় না। রক্তসূত্রেই এসে যায়। কিছু সম্পর্ক মানুষ বড় হতে হতে তৈরি করে নেয়, যেমন বন্ধু বান্ধবী স্বামী। এগুলো নির্ভর করে মনের ওপর। তাই মন না মানলে পরিবর্তন আনা যায়।’

দীপা অবাক হয়ে শুনছিল। সত্যি তাই। বিশুর সঙ্গে তোতনের একসময় খুব বন্ধুত্ব ছিল। এখন ওরা কথাই বলে না। কিন্তু মা যদি কথা বন্ধ করে দেয় তবু মা-ই থাকে। কিন্তু বাবা কষ্ট পেলে মাকে ছেড়ে যেতে পারে, মা-ও তাই? সে জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি ব্রাহ্ম? ব্রাহ্ম মানে কি খ্রিস্টান?’

রমলা সেন মাথা নাড়লেন, ‘না, ওটা একটা আলাদা ধর্ম। হিন্দু মুসলমান খ্রিস্টানের মতো। এখন বললে তুমি বুঝবে না।’

দীপা মাথা নাড়ল, ‘বিয়ে হয়ে গেলে বুঝতে পারব।’

এইটুকুনি মেয়ের মুখে এই কথাটি শুনে হকচকিয়ে গেলেন রমলা সেন, ‘মানে?’

‘ঠাকুমা বলেছে আমি যেসব কথা এখন বুঝতে পারব না তা বিয়ে হয়ে গেলে পারব।’ দীপা হাসল, ‘ঠাকুমার তো দশ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল তাই তখন থেকেই বুঝেছিল।’

রমলা সেনের খুব কষ্ট হল। হঠাৎই সেইসঙ্গে একটু রেগেও গেলেন, ‘শোনো, তোমার ঠাকুমা তো অনেক আগে জন্মেছিলেন তাই তাঁর সময়ের নিয়ম ছিল আলাদা। বিয়ের সঙ্গে বোঝাবুঝির কোনও সম্পর্ক নেই। পড়াশুনা যত করবে, যত নিজের জ্ঞান বাড়াবে, চারপাশের মানুষকে যত জানতে চাইবে, তত সবকিছু বুঝতে পারবে। তুমি এখানকার স্কুলে পড়ো?’

‘হ্যাঁ।’ পড়াশুনার প্রসঙ্গ তুলতে দীপার মোটেই ভাল লাগছিল না।

‘এখানে কোন ক্লাস পর্যন্ত আছে?

‘এইট।’

‘তারপর সবাই কোথায় পড়তে যায়?’

‘বানারহাট, নয় বীরপাড়ায়। যাদের সুবিধে আছে তারা জলপাইগুড়িতে যায়।’

‘তুমি কোথায় যাবে?’

‘জানি না।’

‘শোনো, তোমাকে অন্তত গ্র্যাজুয়েট হতে হবে। বি এ পাশ করলে গ্র্যাজুয়েট বলা হয়।’

‘আচ্ছা!’

‘আচ্ছা মানে? তুমি কি বুঝতে পারছ আমার কথা? গ্র্যাজুয়েট না হলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। এই দ্যাখো, তোমার মা ঠাকুমা এখানে আছেন, যদি তোমার বাবা রেগে গিয়ে ওঁদের বাজার করে না দেন, টাকাপয়সা না দেন, খারাপ ব্যবহার করেন, তা হলে ওঁরা কী খেয়ে পরে বাঁচবেন, বলো?’

‘খাওয়াই হবে না।’

‘ওঁরা যদি শিক্ষিত হতেন তা হলে চাকরি করে টাকা রোজগার করতে পারতেন। কারও দয়ার ওপর বাঁচতে হত না। এই দ্যাখো আমি, কলেজে পড়াই, মাইনে পাই, নিজের একটা গাড়ি আছে তাতে চড়ে যেখানে ইচ্ছে বেড়াতে যাই, আমাকে কারও দয়ায় বাঁচতে হয় না। তোমাকে আমার মতো হতে হবে।’

‘আর তোমার বর?’

‘তার মতো সে আছে। আবার বিয়ে করে বউ নিয়ে ঘর করছে।’

‘তুমি আবার বিয়ে করোনি কেন?’

‘ইচ্ছে হয়নি বলে।’

দীপা পূর্ণদৃষ্টিতে রমলা সেনকে দেখল। রমলা হাসলেন। তারপর নিজের ব্যাগ থেকে একটা কাগজ কলম বের করে কিছু লিখে সেটা দীপার হাতে দিলেন, ‘এখানে আমার ঠিকানা লিখে দিলাম। তুমি প্রত্যেক মাসে একটা করে চিঠি দেবে আমাকে মনে করে, বুঝলে? আমরা চিঠিতে মনের কথা বলাবলি করব। তোমাকে আমার খুব মিষ্টি লাগছে দীপাবলী।’

কাগজটা ভাঁজ করে উঠে পড়ল দীপা, ‘তুমি এখন ঘুমাবে?’

‘চেষ্টা করব। তোমার ঘুম পেয়েছে বুঝি? যাও, শুয়ে পড়ো। গুড নাইট।’

দীপা কাগজটা নিয়ে পাশের ঘরে ঢুকে দেখল বাবা শুয়ে পড়েছে। মা গালে হাত দিয়ে বসে রয়েছে বিছানার পাশে। সে ভেজানো দরজা খুলে অন্ধকার বারান্দায় চলে এল। সঙ্গে সঙ্গে উঠোনের গাছপালাগুলো বিচিত্র ছবি এঁকে ফেলতেই এক দৌড়ে ঠাকুমার দরজায় পৌঁছে জোরে ঠেলতেই দরজাটা খুলে গেল। মনোরমা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর নাক মৃদু ডাকছিল। দীপা দরজা বন্ধ করে ঠাকুমার পাশে নিঃশব্দে শুয়ে পড়ল। তারপর হাতের কাগজটা বালিশের তলায় ঢুকিয়ে দিয়ে মনে মনে বলল, ‘গুড নাইট’! বলেই ফিক করে হেসে ফেলল।

দরজা বন্ধ করে পাশে শুতে শুতে অঞ্জলি বলল, ‘মনে হচ্ছে তুমি খাল কেটে কুমির আনলে’

‘কেন?’ অমরনাথের আজ কিছুতেই ঘুম পাচ্ছিল না। এমন বিচিত্র মহিলা তিনি কখনও দ্যাখেননি কুমির শব্দটা শুনে অস্বস্তি হল। অঞ্জলি তাঁকে সন্দেহ করছে নাকি!

‘এতক্ষণ কানে তুলো দিয়ে বসেছিলে নাকি? পাশের ঘরে যেসব কথা হচ্ছিল শোনোনি?’

‘শুনেছি।’ স্বস্তিটা ফিরে এল অমরনাথের।

‘মেয়েটার মনে একগাদা উলটোপালটা ভাবনা ঢুকিয়ে দিলেন উনি।’

‘কাল সকালেই সব ভুলে যাবে।’

‘ভাল মন্দ বিবেচনা করছি না, হুট করে একজন অচেনা মহিলাকে নিয়ে এলে কী করে তাই ভাবছি। এই বাগানের আর কেউ নিয়ে আসত? কখ্খনও না।’ অঞ্জলির গলায় এবার জ্বালা। ব্যাপারটা যে ঠিক হয়নি তা মনে মনে জানেন অমরনাথ। তাই চুপ করে থাকাই শ্রেয় বলে মনে করলেন।

অঞ্জলি জবাব না পেয়ে বলল, ‘আজ সারাটা রাত জেগে বসে থাকতে হবে।’

‘কেন,’ অমরনাথ প্রশ্ন না করে পারলেন না।

‘চমৎকার বুদ্ধি। তুমি না জেনে শুনে বাড়িতে এনেছ বলেই আমাকে বিশ্বাস করতে হবে তার কী মানে আছে। অমন গায়ে পড়ে পড়ে কথা বলা, স্বামীর সঙ্গে না-থাকা মেয়ে আসলে যে কী তাই তো জানি না। সকালে উঠে যদি দেখি বাড়ি সাফ হয়ে গিয়েছে তখন কাউকে ঘটনাটা বলতে পারব? কেউ বিশ্বাস করবে?’

রমলা সেনকে আর যাই হোক চোর ভাবতে পারছেন না অমরনাথ। চোর কখনও গাড়ি চালায় না। চোর কখনও তিনটে ভাষায় অনর্গল কথা বলে না। বরং তাঁর মনে হচ্ছিল ভদ্রমহিলা এ-বাড়িতে জোর করে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে আছেন। এই মুহূর্তে তাঁর মনে হল অঞ্জলি মালবাজারে বড় হয়েও একেবারে গেঁয়ো হয়ে আছে। সেই তুলনায় মনোরমা অনেক আধুনিক। তিনি বমলাকে গ্রহণ করতে কোনও আড়ষ্টতা দেখাননি।

পাশ ফিরে শুতে গিয়েই সকালবেলার ঘটনাটা মনে পড়ল অমরনাথের। সারাদিন এমন ঝামেলায় কেটে গেল যে অঞ্জলিকে বলারই সময় পাননি। পাতিবাবুর বেয়াই দীপার জন্যে একটি সম্বন্ধ এনেছেন। অমরনাথের মনে হল প্রসঙ্গটি তুললে অঞ্জলির মন রমলা সেন থেকে সরে আসবে। কিছুক্ষণ চুপচাপ কাটার পর অমরনাথ চাপা গলায় বললেন, ‘আজ সকালে একটা কাণ্ড হয়েছে। কী করব বুঝতে পারছি ন।’

অঞ্জলি কোনও উত্তর দিল না। অমরনাথ তার একটু সময় কাটিয়ে বললেন, ‘বাজারে যাবার সময় পাতিবাবু ডেকে পাঠালেন। ওঁর বেয়াই এসেছেন জলপাইগুড়ি থেকে। গেলাম। ভদ্রলোক দীপাকে দেখেছেন। ওঁর ভাইপোর জন্যে গৌরী খুঁজছেন। বললেন, খুব পছন্দ হয়েছে দেখে। যদি আমাদের অমত না থাকে তা হলে শুভকাজটা করে ফেলতে পারেন।

অঞ্জলি বিছানা থেকে উঠে পড়ল। অমরনাথ ঈষৎ হতচকিত। এই বুঝি কোনও কাণ্ড করে বসে। কিন্তু অঞ্জলি শুধু কুঁজো থেকে এক গ্লাস জল গড়িয়ে নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফের বিছানায় ফিরে উলটো মুখ করে শুয়ে পড়ল। অমরনাথ কী করবেন ভেবে পেলেন না। মনে হয়েছিল পাতিবাবুর বেয়াইয়ের প্রস্তাব শুনে অঞ্জলি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবে, এবং তাই নিয়ে কিছুক্ষণ কথা চালাবে। অথচ এসবের কিছুই হল না।

কাজের দিন প্রায় অন্ধকার থাকতেই ঘুম থেকে উঠতে হয় অমরনাথকে। সাড়ে ছ’টায় তাঁকে পৌঁছে যেতে হয় অফিসে। শীত এখনও নামেনি কিন্তু দিন ছোট হয়েছে, সকাল হচ্ছে একটু দেরি করেই। কেডসের ওপর হাফপ্যান্ট আর মোটা হাওয়াই শার্ট পরে অঞ্জলির দেওয়া চা খেয়ে নিলেন তিনি। ছেলেরা ঘুমাচ্ছে। এইসময় দীপা শিউলি তুলে ফিরল। আজ তার হাতে ছোট্ট বেতের সাজি। অমরনাথ মেয়েকে দেখলেন। ঘরের হ্যারিকেন এখনও নেবানো হয়নি। নরম গলায় বললেন, ‘কখন গিয়েছিলি ফুল তুলতে?’

‘অনেকক্ষণ!’ দীপা হাসল। এখনও মুখ ধোয়নি সে।

‘ভয় করে না। বাইরে তো কেউ নেই!’

‘ওমা, ভয় পাবে কেন?’

অঞ্জলি খাটে বসে লক্ষ করছিল দু’জনকে, বলল, ‘ফুলগুলো ঠাকুরঘরে রেখে এসে পাশের ঘরে ওঁর ঘুম ভাঙাও।’ দীপা মাথা নেড়ে অদৃশ্য হতেই অমরনাথের মন ভাল লাগল। কথাটা নিজের মুখে বলতে কেমন যেন বাধোবাধো লাগছিল। ও-ঘরের দরজা না খোলালে তিনি সাইকেল পাবেন না। এতটা রাস্তা সাইকেল ছাড়া যাওয়াও অসম্ভব। আর তখনই অঞ্জলি চাপা গলায় বলল, ‘বাইরের ঘরে যিনি আছেন তাঁর জন্যে কী কী করতে হবে?’

‘কী আর করবে? ঘুম থেকে উঠলে এক কাপ চা করে দিয়ো। কাজের মানুষ চলে যাবেন?’

‘ওঁর গাড়ি নাকি কোথায় পড়ে আছে?’ অঞ্জলির কথার মধ্যে একটু বাঁকা সুর।

‘হ্যাঁ, সেটা উনি বুঝবেন। জিজ্ঞাসা করলে বলে দিয়ে পেট্রল পাম্পে গিয়ে খবর নিতে।’

দীপার দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভেঙে গেল রমলা সেনের। ইংরেজিতে তিনি অপেক্ষা করতে বলে বাঁ হাতে হাই-তোলা মুখ ঢাকতে ঢাকতে দরজা খুলতেই দীপা অবাক হয়ে গেল। রমলা রায় শুধু সায়া আর ব্লাউজ পরে রয়েছেন। ওই অবস্থায় বললেন, ‘গুড মর্নিং।’

দীপার মনে পড়ল কাল রাত্রে উনি তাকে গুড নাইট বলেছিলেন। গুড শব্দটা পালটায়নি শুধু নাইটটা মর্নিং হয়ে গেল। দীপা বলল, ‘বাবা অফিসে যাবে তো, তাই— |

সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় করে আঁতকে উঠলেন রমলা সেন। তারপর দ্রুত ফিরে গিয়ে শাড়িটাকে শরীরে জড়িয়ে নিলেন। এত দ্রুত শাড়ি পরতে কাউকে দ্যাখেনি দীপা। সে আরও মুগ্ধ হল। তিনি ভদ্রস্থ হওয়ামাত্র সে গলা তুলল, ‘বাবা, ওঁর হয়ে গিয়েছে। তুমি এখন আসতে পারো।’

কয়েক সেকেন্ড বাদে অমরনাথ ঘরে ঢুকলেন, ‘নমস্কার। রাত্রে ঘুম হয়েছিল তো? আসলে আমার সাইকেলটা এখানে ছিল বলে আপনাকে বিরক্ত করা হল। ঠিক আছে আপনি চা-টা খেয়ে নিন, আমি চলি, ডিউটি আর কী!’

‘আপনি তো নিজেই সব বলে যাচ্ছেন, আমি তো সুযোগই পেলাম না।’ রমলা হেসে ফেললেন, ‘ঠিক আছে। আসুন। আশ্রয় দেবার জন্যে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।’

দীপা দেখল বাবা কেমন একটা অদ্ভুত রকমের মুখের ভঙ্গি করে বাইরের দরজা খুলে সাইকেল নিয়ে মাঠে নেমে গেল। বারান্দায় রমলা এগিয়ে গেলেন। দীপা ওঁর পাশে দাঁড়াতেই মনে হল বাবা আজ একটু বেশি জোরে সাইকেল চালাচ্ছে। কেন?

শিশির ভেজা ঘাস, কুড়িয়ে নেওয়ার পরেও নতুন করে ঝরে পড়া শিউলি, চাঁপার গন্ধ মাখা বাতাস, আর সূর্য-উঠব-উঠব সময়ের আকাশ দেখতে দেখতে রমলা সেন বললেন, ‘ফ্যান্টাস্টিক!’

দীপা অবাক হয়ে তাকাল। ফ্যান্টাস্টিক কথাটার মানে কী? রমলা সেন তার পরেই বললেন, ‘দীপা, একদিক দিয়ে তুমি খুব লাকি! এমন একটা জায়গায় বড় হচ্ছ যেখানে প্রকৃতি দু’হাত ভরে মানুষের মন ভরানোর উপকরণ সাজিয়ে রেখেছে।’

এইসময় অঞ্জলি দরজায় এসে বলল, ‘আপনি চায়ের সঙ্গে কী খান?’

‘কিছু না। শুধু চা। আমি একটু বাথরুম থেকে ঘুরে আসি। দ্যাখো ভাই, কাল রাতে অন্ধকারে কোনও অসুবিধে হয়নি, আজ আলো ফুটতেই— ।’ হেসে ফেলেন রমলা সেন, ‘আমাকে একটা তোয়ালে দেবে? মানে, একটা গামছা হলেও চলবে।’

তাস খেলে প্রাইজ পাওয়া একটা বিরাট তোয়ালে আলমারি থেকে বের করে দিল অঞ্জলি।

আধঘণ্টা বাদে রমলা সেন বিদায় নিলেন। মনোরমাকে বললেন, ‘মাসিমা, নিশ্চয়ই আপনাদের খুব অদ্ভুত লেগেছে। কিন্তু কাল এখানে আশ্রয় পেয়ে আমি উপকৃত হয়েছি।’

মনোরমা বললেন, ‘মানুষের বিপদে আপদে এটুকু না করলে কি চলে। কিন্তু তুমি একা একা ঘুরে বেড়াও কেন মা? এটা ঠিক নয়।’

রমলা কিছু বলতে গিয়ে সামলে নিলেন, ‘না। আপনার সঙ্গে তর্ক করব না।’ তারপর অঞ্জলিকে বললেন, ‘রাগ করা উচিত ছিল তোমারই। স্বামী যদি রাতবিরেতে একজন অচেনা মেয়েকে ধরে নিয়ে আসে তা হলে কোনও বউই খুশি হতে পারে না। তবে বলি ভাই, স্বামীটি সত্যি ভাল পেয়েছ। আর হ্যাঁ, এই মেয়েটাকে পড়াশুনা করতে দিয়ো। ওর ভেতরে কৌতূহল আছে। ওকে চট করে বিয়েথা দিয়ে দিয়ো না।’

অঞ্জলি ঠোঁট টিপলেন। দীপা তাঁকে মাঠ পেরিয়ে আসাম রোড পর্যন্ত এগিয়ে দিল। অঞ্জলি অমরনাথের কথামতো রমলাকে পেট্রল পাম্পের সন্ধান দিয়ে দিয়েছে। ওখানে গেলে তিনি এখন মেকানিক পেয়ে যাবেন। রমলা দীপার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘এবার আসি। মন দিয়ে পড়াশুনা করবে। বড় হবে। আমার ঠিকানাটা লিখে দিয়েছি, ওটা একটা খাতায় লিখে রাখবে আর প্রত্যেক মাসে একটা করে চিঠি দেবে আমাকে। বুঝলে? তোমাকে আমার কিছু দেওয়া উচিত ছিল। সঙ্গে তো নেই আমি শিলিগুড়িতে গিয়েই পাঠিয়ে দেব তোমায়।’

আসাম রোড ধরে চৌমাথার দিকে যে-শরীরটা চলে গেল তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল দীপা। এতকালের চেনাশোনা কোনও মানুষের সঙ্গে এঁর কোনও মিল নেই। মা বা ঠাকুমার থেকে অনেক অনেক তফাত।

দিন সাতেক বাদে দীপার নামে একটা পার্সেল এল। সবাই খুব অবাক। দীপা নিজে দারুণ উত্তেজিত। এই প্রথম তার নামে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে কিছু এল। মোড়ক খুলতে, বইটা বেরিয়ে এল। দীপা নামটা পড়ল, ‘লেটার্স ফ্রম এ ফাদার টু এ ডটার।’

সকল অধ্যায়

১. ১. আজ সারাটা দিন সূর্যদেব উঠলেন না
২. ২. মেয়েরা কি ভূত হয়
৩. ৩. ভালো-মন্দ বোঝার বয়স
৪. ৪. রমলা সেন
৫. ৫. সত্যসাধন মাস্টার
৬. ৬. বৃষ্টিটা চলে যাওয়ার পরে
৭. ৭. চারদিন পৃথিবীটাকে দ্যাখেনি দীপা
৮. ৮. দীপাবলীর বিয়ে
৯. ৯. বাসর এবং বউভাত
১০. ১০. দীপাবলীর ফুলশয্যা
১১. ১১. পুত্ৰটি দেহ রেখেছে
১২. ১২. রমলার চিঠি
১৩. ১৩. প্ৰাপ্তবয়স্কতা শরীরের না মনের
১৪. ১৪. চাবাগানের আশেপাশে
১৫. ১৫. আসাম রোড
১৬. ১৬. একটি মানুষের চেহারা
১৭. ১৭. জলপাইগুড়ি শহরে
১৮. ১৯. রমলা সেনের কাছে
১৯. ১৮. পুলিশের লাঠিচার্জ
২০. ২০. জলপাইগুড়ির হোস্টেলের মেয়ে
২১. ২১. দুশ্চিন্তার ছাপ
২২. ২২. একতারা বাজিয়ে গান
২৩. ২৩. দুর্দান্ত ব্যবসাদার প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়
২৪. ২৪. সত্যসাধন মাস্টার এসে পড়বেন
২৫. ২৫. অমরনাথ হতভম্ব
২৬. ২৬. তিনদিন ধরে সমানে বৃষ্টি
২৭. ২৭. অমরনাথের শরীর
২৮. ২৮. কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
২৯. ২৯. প্রৌঢ় ভদ্রলোকটি হাঁটছিলেন
৩০. ৩০. এক অদ্ভূত অভিজ্ঞতা
৩১. ৩১. বাড়িটা শুধু পুরনো নয়
৩২. ৩২. উত্তর কলকাতার পথে পথে
৩৩. ৩৩. কলেজ এবং হোস্টেলের বাইরে
৩৪. ৩৪. দীপা অঞ্জলির দিকে তাকাল
৩৫. ৩৫. অমরনাথ শুয়ে আছেন
৩৬. ৩৬. ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্ৰচণ্ড অসহায়তাবোধ
৩৭. ৩৭. তিনতলার ব্যালকনি
৩৮. ৩৮. দীপা চুপ করে আছে
৩৯. ৩৯. সুভাষচন্দ্র এগিয়ে এলেন
৪০. ৪০. মেয়েটির নাম লাবণ্য
৪১. ৪১. বিছানায় টান টান দীপা
৪২. ৪২. কলেজের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
৪৩. ৪৩. কিছু মানুষ খুন হলেন
৪৪. ৪৪. কেমন একটা সংসার-সংসার ভাব
৪৫. ৪৫. রাধা চলে এল সেজেগুজে
৪৬. ৪৬. দ্বিতীয় অভিনয় হয়ে যাওয়ার পরে
৪৭. ৪৭. কলোনি থেকে কলেজ পাড়ায়
৪৮. ৪৮. স্কটিশ চার্চ কলেজে জানাজানি হয়ে গেল
৪৯. ৪৯. একদম লেডি
৫০. ৫০. রমলা সেন চোখ ছোট করলেন
৫১. ৫১. সাতকাহন প্ৰথম পর্ব সমাপ্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন