৪২. মনোরমার বিদ্রোহ

সমরেশ মজুমদার

মনোরমা এখন কিঞ্চিৎ সুস্থ। আর বাঙালি নায়েদের যা স্বভাব, গায়ে সামান্য জোর আসামাত্রই সমস্ত অসুস্থতা বিস্মৃত হওয়া, মনোরমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হল না। দিন দুয়েক বাদেই তিনি রান্নাঘরে ঢুকলেন দীপাবলীর প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও। এবং অবশ্যই রান্নাঘরের ব্যবস্থা তাঁকে খুশি করল না। নিজের কাজ চালানোর জন্যে শটকার্ট মেথডে রান্নাঘর সাজিয়েছিল দীপাবলী। অবশ্য সাজানো শব্দটিও একটু বাড়াবাড়ি মনে হবে। মনোরমা বলেই বসলেন, ‘ইস, তুই কী রে? ব্যাটাছেলেদের মতো রান্নাঘরের হাল করে রেখেছিস! তোর শ্বশুর-শাশুড়ি দেখলে কী বলবে?’

‘তাঁরা নিশ্চয়ই এখানে দেখতে আসছেন না!’

‘আসতেও তো পারেন। ছেলের বউয়ের কাছে আসবেন না-ই বা কেন?’

‘তোমরা আমাকে ছেলেবেলায় এসব শেখাওনি কেন?’

‘মেয়েছেলেকে আবার রান্নাঘর, রান্না শেখাতে হয় নাকি? নিজেই শিখে নেয়। আমাকে কে শিখিয়েছিল? অবশ্য তোর মতো বই মুখে নিয়ে বসার সুযোগ হয়নি আমার।’

‘ঠিক আছে। আমার বান্নাঘর নিয়ে তোমার মাথা ঘামানোর দরকার নেই।’

‘বা রে বা। আমি কি এ-বাড়িতে থাকব না?’

‘থাকবে না মানে?’

‘তা হলে আমার আমার করছিস কেন? এখানে তো আমিও রাঁধব।’

‘ওরে বাবা, সেটা এখন নয়। ভাল করে সেরে ওঠো, গায়ে জোর হোক—।’

‘আমি ভাল হয়ে গেছি। তুই যদি জোর করে শুইয়ে রাখিস তা হলে মরে যাব। আমাকে আমার কাজ করতে দে। তুই বরং কাল থেকে অফিসে যা।’

দীপাবলী হালটা মনোরমার হাতে ছেড়ে দিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে বলল, ‘তোমার জীবনে আর একটা পর্ব যোগ হল।’

মনোরমা ততক্ষণে এটা নেই সেটা নেই শুরু করে দিয়েছেন। উত্তর দিলেন না। দীপাবলী বলল, ‘ছেলেবেলায় বাপের সংসার, যৌবনে স্বামীর, প্রৌঢ়া অবস্থায় ছেলের আর বার্ধক্যে নাতনির সংসার সামলাতে জন্মেছ বুঝি তুমি?’

মনোরমা প্যাকেটে ফেলে রাখা তেজপাতার জন্যে কৌটো খুঁজছিলেন, বললেন, ‘যাক, স্বীকার করলি তা হলে যে সংসার করছিস। আজই গোটা দশেক ছোট-বড় কৌটো কিনে নিয়ে আয়। বাঙালির রান্নাঘরে সবচেয়ে কাজের জিনিস হল কৌটো।’

দীপাবলী আর কথা বাড়াল না। মনোরমা নানারকম ত্রুটি ধরতে লাগলেন। রান্নার সময় এগুলোর অভাব বুঝলেও তা নিয়ে মাথা ঘামায়নি সে। শেষপর্যন্ত ফ্রিজের দরজা খুললেন বৃদ্ধা, ‘দ্যাখ তো কত সুবিধে হয়েছে এখন। এ-বেলায় রান্না করে ও-বেলা পর্যন্ত খাবার রাখতে আমার বুক ঢিপঢিপ করত। টকে গেলে তো তোর বাপ মুখে দিত না। নাক ছিল খুব। এখানে কতদিন ঠিক থাকে খাবার?’

‘সাত দিন মোটামুটি চালানো যায়।’

‘তুই তাই করিস?’

‘প্রায়ই। খাওয়ার সময় গরম করে নিই।’

‘খেতে বিশ্রী লাগে না?’

‘একটু স্বাদ পালটায়। তবু সময় তো বাঁচে। পরিশ্রমও।’

কাজের লোক পাসনি এখানে?’

‘রাখতে সাহস হয় না। সাৱাদুপুর একা থাকবে। কী হতে কী হয়ে যাবে!’

‘বিশ্বাসী লোক পাওয়া যায় না?’

‘বিশ্বাস? তুমি তোমার নিজের নাতিকে বিশ্বাস করতে পারো?’

মনোরমা চুপ করে গেলেন। খোঁচাটা একটু বেশি হয়ে গিয়েছে বুঝে দীপাবলী বলল, ‘ঠিকে লোক রেখেছিলাম। দু’বেলা এসে রান্না করবে, ঘর পরিষ্কার করবে। তিন দিন আসে তো দু’দিন আসে না। তার ওপর সকালে আমার বেরুনোর সময় তার কাজ শেষ হয় না। তার হাতে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হত। শেষপর্যন্ত তাকেও বাদ দিলাম।’

‘কেন?’

‘একদিন বাইরের ঘরের দরজার পাশে পোড়া বিড়ি দেখেছিলাম।’

‘বিড়ি খেত বুঝি? বাগানের মদেশিয়া মেয়েরা তো খায়।’

‘না খেত না। তাই বলেছিল আমাকে। বিড়িটা কোত্থেকে এসেছিল বলতে পারেনি।’

‘ও। তোর একা থাকতে ভয় করে না?’

‘কেন? দরজা বন্ধ থাকলে ভয় কী?’

‘রাত্রে যদি শরীর খারাপ হয়?’

মাথাটা পেছনদিকে হেলাল দীপাবলী, ‘কী আবার হবে! মরে যাব।’

‘ওটা তো অত সহজ নয়। তা হলে এত চাইলেও আমার মরণ হচ্ছে না কেন?’

‘প্লিজ, আবার শুরু কোরো না। আমার কাছে এসেও তোমার মরার ইচ্ছে হচ্ছে?’

মনোরমা কিছু বললেন না। এখন সকাল। তরকারির ঝুড়িটা নিয়ে বললেন, ‘এ কী রে! শুধু কয়েকটা আলু আর পেঁয়াজ পড়ে আছে।’

‘তাতেই হয়ে যাবে। ডাক্তার তোমাকে আলুসেদ্ধ ভাত আর দুধ খেতে বলেছে।’

‘তই কী খাবি?’

‘আমিও তাই।’

‘তার মানে? তুই মাংস ডিম খাস না?’

‘খাই। কিন্তু ওগুলো কিনতে হলে বাজারে যেতে হবে। সেই ইচ্ছেটা নেই।’

‘আশ্চর্য কুঁড়ে তো!’

মনোরমাকে একা ফ্ল্যাটে রেখে প্রথমদিন অফিসে গিয়ে বেশ অস্বস্তি হয়েছিল। নতুন জায়গায় বুড়ি একা কীরকম থাকবে কে জানে। বেরোবার আগে পইপই করে বলে দিয়েছিল যেন দরজা না খোলে। যেই আসুক, দরজা বন্ধ রেখেই কথা বলে। কলকাতার ফ্ল্যাটে ডাকাতির গল্প বলে সে মনোরমাকে সাবধান করে দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও অস্বস্তিটা যায়নি।

কলকাতা ইতিমধ্যে ক্রিকেট জ্বর কাটিয়ে উঠেছে। ওই পাঁচটা দিন প্রায় পুরো অফিস ফাঁকা। ইডেনে যত লোক ধরে তার বহুগুণ সরকারি অফিসগুলোতে কাজ করেন। মাঠে যাঁরা খেলা দেখতে যান তাঁদের সকলেই সরকারি কর্মচারী এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। কিন্তু খেলার ওই ক’টি দিন হাজিরা খাতায় সই করে দলে দলে মাঠে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে যান। যেন মাঠে যাওয়ার কথা বললে অঘোষিত ছুটিটি পাওয়া যাবে। এমনকী এই ক’দিন কোনও আন্দোলন অথবা গেট মিটিং বন্ধ। সেগুলোর প্রয়োজন খেলার সময় সাময়িকভাবে জরুরি নয়।

কিন্তু দীপাবলী মনে মনে স্বীকার করে যে মেয়েদের নিয়ে তার সেকশন খারাপ চলছে না। বরং বেশ ভাল কাজ হচ্ছে। এতদিন এঁরা দায়িত্ব পাননি। অফিসে এসে ফাঁকি দেবার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে এঁদের। যে-মানসিকতায় অফিস টাইমের বাসে কোনও মহিলা কর্মীকে পুরুষরা পরের বাসে আসার উপদেশ দেয়, ঠিক সেই মানসিকতাতেই একজন সিনিয়ার মহিলাকে চালান পোস্টিং করার দায়িত্ব দেওয়া হত মুখরক্ষা করার জন্যে। এখন কাজ করার স্বাধীনতা পেয়ে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। অন্তত কোনও পার্টিকে হ্যারাস করা হচ্ছে এমন অভিযোগ এখন পর্যন্ত ওঠেনি।

অফিসারদের কোনও কমনরুম নেই যেখানে সবাই মিলে বসতে পারে। একমাত্র আই এ সি-র ঘরে মিটিং থাকলে এর সঙ্গে ওর দেখা হয়। দীপাবলীর সঙ্গে প্রত্যেকের এখন মৌখিক আলাপ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্ত। সিনহা হাল ছাড়েননি। লোকটা তলায় তলায় যাই করুক সামনাসামনি অত্যন্ত ভদ্রলোক। কথাবার্তায় কোনও ত্রুটি রাখে না। আই এ সি-র ঘরে এক মিটিং-এ নতুন অফিসারকে দেখল দীপাবলী। লম্বা ছিপছিপে এক মধ্যবয়সি মানুষ। আই এ সি প্রত্যেকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন।

ঘরে বসার কিছুক্ষণ বাদেই সেই ভদ্রলোক, যার নাম মলয় মিত্র, দরজায় এসে দাঁড়ালেন, ‘ভেতরে আসতে পারি? খুবই ব্যস্ত কি?’

দীপাবলি সামান্য অবাক, বলল, ‘না না। আসুন।’

মলয় সটান চেয়ার টেনে বসলেন, ‘আপনার কথা খুব শুনেছি, তাই কথা বলতে ইচ্ছে হল। গতকাল এখানে জয়েন করেছি। আপনার বছর পাঁচেক আগে মুসৌরিতে ছিলাম আমি। এতদিন আয়করে ছিলাম।’

‘আমার কথা কী শুনেছেন?’

‘সিস্টেম ভাঙতে চাইছেন। অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেন না।’

‘চাইলেই যে পারা যাবে এমন নিশ্চয়তা কোথায়? আর আমি একা কী করে পারব! চারপাশে একই নিয়ম যখন চলছে তখন আমিই বেনিয়ম।’

‘এইটে খুবই সত্যি কথা। তবে সুবিধে হল আপনি ঘুষ নিয়ে ধরা পড়লে ব্ল্যাক লিস্টেড হতে পারেন কিন্তু ঘুষ নিচ্ছেন না বলে সেরকম কিছুর সম্ভাবনা নেই।’

দীপাবলী হাসল, ‘ট্রান্সফার অর্ডার পেতে পারি।’

‘সেটা তো সবসময়ই। তবে আপনার ক্ষেত্রে হবে না।’

‘মানে?’

‘আপনার বড় সহায় হলেন ওয়েস্টবেঙ্গল সার্কেলের বড়সাহেব।’

‘আপনি এ-কথা কী করে জানলেন?’

‘উনিই বলেছেন। আপনার মতো একজন অনেস্ট সিনসিয়ার অফিসারের জন্যে উনি গর্বিত।’

দীপাবলী অবাক হল। এই ভদ্রলোকের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই। দু’জনের চাকরির পদের মধ্যে এতখানি দূরত্ব যে তা হবার সম্ভাবনাও নেই। তবু ভদ্রলোক যে তার কথা মনে রেখেছেন এইটেই আশ্চর্যের।

এখন বাড়িতে ফেরার কথা ভাবলে আরাম লাগে। ব্যাগ থেকে চাবি বের করে তালা খুলতে হবে না। বন্ধ ফ্ল্যাটের ভ্যাপসা গরম এবং গন্ধ সহ্য করতে হবে না। বেল টিপলেই মনোরম পরিচয় জানতে চান। সে হেসে বসে, ‘তোমার নাতনি।’ মনোরমা দরজা খুলে প্রথমেই এক গ্লাস জল এনে দেন। সেটা খেয়ে প্রথমদিন দীপাবলী বলেছিল, ‘তোমার ভাব দেখে মনে হচ্ছে আমি রাজ্য জয় করে এসেছি বলে আপ্যায়ন করছ!’

মনোরমা হাসেন, কথা বলেন না। বৃদ্ধার দিকে তাকালেই বোঝা যায় তিনি এখন অনেক ভাল আছেন। মুখচোখে বেশ প্রশান্তি। ইতিমধ্যে ওঁর জন্যে গোটা চারেক নরুন পেড়ে ধুতি কিনে দিয়েছে সে। জমিটা খুবই মোলায়েম। মনোরমা বলেছিলেন, ‘তোর বাবা এইরকম কাপড় কিনে দিত আমাকে।’ মুশকিল হয়েছিল ওঁর সেমিজ নিয়ে। কলকাতার দোকানে আজকাল রেডিমেড সেমিজ কিনতে পাওয়া যায় না। মনোরমা সঙ্গে যেসব নিয়ে এসেছেন তাদের অবস্থা খুবই করুণ। অর্ডার দিয়ে বানাতে হলে তাঁকে নিয়ে দোকানে যেতে হবে। জ্ঞান হওয়া তক যে-মহিলাকে সে সেমিজ পরা দেখে আসছে তার জন্যে জামা এবং সায়া কিনেছিল দীপাবলী। সংকোচের সঙ্গে বলেছিল, ‘তোমার সেমিজ পাওয়া যায়নি।’

সেগুলোর দিকে তাকিয়ে মনোরমা বলেছিলেন, ‘কেন এগুলো আনতে গেলি।’

‘বাঃ। তোমার জামার অবস্থা দেখেছ? এখানে অত পুরনো জিনিস পরা চলবে না। এখানে তোমার সব নতুন, তুমিও।’

প্রথম দিনে হয়নি। দ্বিতীয় দিনে প্রায় জোর করেই ভদ্রমহিলাকে সায়া ব্লাউজ পরাল সে। সত্যি সুন্দর দেখাচ্ছে। কিন্তু কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে দীপাবলী মাথা নেড়েছিল, ‘বড্ড সাদা দেখাচ্ছে। একটু রঙের ব্রেক থাকা দরকার।’

‘কী থাকা দরকার?’

‘অত সাদা সহ্য হচ্ছে না আমার।’

‘সহ্য হচ্ছে না বললে তো চলবে না। এতেই আমার পেটে বুকে অস্বস্তি হচ্ছে! বিধবাদের অত রঙের দরকার নেই।’

‘বাঃ। আমিও তো বিধবা।’

‘মারব মুখে এক থাপ্পড়। অলোক বেঁচে নেই?’

দীপাবলীর মজা লাগল, ‘আহা, একসময় তো বিধবা ছিলাম।’

‘তোর সঙ্গে আমি কথায় পারব না।’

রাতারাতি নয়, একটু একটু করে বৃদ্ধার আচরণে বদল আসছে। যে-মনোরমা এককালে ছোঁয়াছুঁয়ি বাদবিচারে মগ্ন থাকতেন এখন তিনি সেসব মুখেও উচ্চারণ করেন না। রোজ রাত্রে শোওয়ার সময় ঠাকুমা নাতনিতে গল্প হয়। জানার আগ্রহ ওঁর খুব। আজ সারাদিন অফিসে কী হল, বাসে যাওয়ার আসার পথে কী অভিজ্ঞতা হয়েছে, তার বিশদ বিবরণ দিতে হয় দীপাবলীকে। সেটা শুনে নিজস্ব মন্তব্য করেন তিনি।

আর এইসময় অলোকের কথা খুব মনে পড়ে দীপাবলীর। একই বিছানায় সে শুয়েছে। অলোক এবং মনোরমার সঙ্গে। প্রথম বিয়ের একটি রাতকে শোওয়া বলা চলে না। শেষের দিকে পাশে শুয়ে কথা বলার ক্ষমতা থাকত না অলোকের। কিন্তু অন্ধকার ঘরে পাশাপাশি শুয়ে গল্প করতে যে আরাম তার অভাববোধ করত তখন দীপাবলী। আজ অলোককে মনে পড়ছে বারংবার। আর তা মন থেকে সরাতেই সেই ছেলেবেলার মতো মনোরমার হাত আঁকড়ে শুয়ে থাকত সে। ওর এই শোওয়ার ভঙ্গিটার জন্যে মনোরমা হেসে বলেছিলেন, ‘তুই এখনও বড় হসনি রে। ছেলেবেলার কথা মনে আছে?’

অন্ধকার ঘরে দীপাবলী জবাব দিয়েছিল, ‘হুঁ। তখন তুমি অন্যরকম ছিলে।’

‘কীরকম?’

‘রাগী রাগী। গম্ভীর। শুচিবায়ুগ্রস্ত।’

‘যৌবনে বৈধব্য এলে বাঙালি মেয়েকে নিজেকে আড়াল করতে একটা কিছু নিয়ে থাকতে হয়। আমার পক্ষে ওইটে ছাড়া আর কিছু নেওয়ার মতো ছিল না।’

দীপাবলী চমকে উঠল। মনোরমা সব জেনেশুনেই ওই আচরণ করতেন? সে মহিলাকে যেন বুঝতে পারছিল না। আজ মনোরমার বয়স কত হবে? চিরকাল তো ওঁকে একইরকম দেখে আসছে। আশির এদিকে কোনওমতেই হবে না। চা-বাগানের অন্ধকারে যাঁর সারাজীবন কেটেছে তিনি কী করে এমন আধুনিক ব্যাখ্যা করেন?

মনোরমা বললেন, ‘শোন, কাল বাজারে যাবি।’

‘আচ্ছা।’

‘তোর জন্যে মাছ আনবি।’

‘কী দরকার? আমার মাছ-মাংস ছাড়া দিব্যি চলে যাচ্ছে।’

‘ওসব বাজে কথা রাখ। তুই কেন মাছ আনা বন্ধ করেছিস জানি না ভাবছিস?’

‘ও। তুমি জানো বুঝি। দ্যাখো, দুটো হেঁশেল হোক আমি চাই না।’

মনোরমা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন, ‘আগে আমারটা করে নেব তারপর—’

একঘরে আগে পবে চলবে না। অতএব এ-প্রসঙ্গ থাক।’

‘জামাই এলে নিরামিষ খাওয়াবি?ֹ’

‘খাবে।’

‘বাঃ। আমি থাকতে তা হতে পারে না।’

‘কেন?’

‘মনে হবে আমার জন্যে করছিস।’ মনোরম মাথা নাড়লেন।

দীপাবলী সময় নিল, ‘দ্যাখো, আমি যদি বলি হেঁশেল আলাদা না করলে মাছ আনব তা হলে তোমার ওপর চাপ দেওয়া হবে। যেন আমার কাছে আছ বলেই আমি জোর করে তোমাকে দিয়ে মানিয়ে নিচ্ছি।’

সকালে চা খাওয়ার পর যখন বাজারে বের হচ্ছে দীপাবলী তখন তাকে মাছ আনার কথা মনে করিয়ে দিলেন মনোরমা। দীপাবলী ঘাড় নাড়ল। মনোরমা হাসলেন, ‘আচ্ছা বাবা, আলাদা রান্না করব না।’

দীপাবলী আচমকা খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরল মনোরমাকে! তিনি চিৎকার করে উঠলেন, ‘ছাড় ছাড়! উঃ, তোর গায়ে কী জোর’!

সেদিন এক হেঁশেলে রান্না হল। একই কড়াইতে। দীপাবলী অঞ্জলির কথা ভাবছিল। বেঁচে থাকলে এই দৃশ্য দেখলে অঞ্জলি হাঁ হয়ে যেত। মনোরমার বাছবিচারের ধাক্কা সামলাতে জেরবার হতে হয়েছে অঞ্জলিকে। মনোরমার মনের এই পরিবর্তন শুধু পরিস্থিতির চাপে তা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু ঘটনাটা সত্যি।

একটি ব্যাপার মনোরমার কাছে কিছুতেই স্পষ্ট করতে পারেনি দীপাবলী। অলোকের সঙ্গে সম্পর্ক যে আর নেই এ কথা বলতে তার নিজের কন্ঠা হয়েছে। মনোরমা যা জানেন তার চেয়ে বেশ কিছু জানানোর আগ্রহ হয়নি। এর মধ্যে একদিন তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন অলোকের চিঠিপত্র এসেছে কিনা। দীপাবলী জবাবে হেসেছিল। তিনি নিশ্চয়ই সেটা এসেছে অর্থেই বুঝেছেন। হ্যাঁ, এটা অর্ধ মিথ্যা বলা হল। মুখে উচ্চারণ না করে সত্যি গোপন করা তো অর্ধ মিথ্যাই।

কিন্তু কোন সত্যিটা বলবে দীপাবলী? সত্যিটাই বা কী তাই তার ভাল জানা নেই। অলোকের সঙ্গে মতবিরোধ হয়েছে, একসঙ্গে থাকা মুশকিল হয়ে উঠেছিল, এমন সময় ট্রান্সফার অর্ডারটা এল এবং সে দিল্লি ছাড়ল। মোটামুটি ছবিটা এইরকম। এক্ষেত্রে কলকাতায় বসে সম্পর্ক নেই বলে ঘোষণা করলে হাতের লোহা এবং নামের পেছনে উপাধিটা যে উপহাস করবে। মনে মনে যাই জানুক, নিজেরা যা বুঝে নিক, পাঁচজনকে ডেকে বলার পেছনে যে-তথ্য থাকা দরকার তা এখনও তৈরি হয়নি। মনোরমাকে তাই বলা যায় না, আমাদের আর কোনও সম্পর্ক নেই।

এবং অবশ্যম্ভাবীভাবে আর একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে তাকে যার সম্ভাবনা এতদিন ছিল না। বৈধব্যজীবনে তো বেশ মানিয়ে নিয়েছিলে! একা একা জীবনটা কাটানো অভ্যেসে এসে গিয়েছিল। এবার কেউ তোমার ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি। অনেক দেখে ভেবেচিন্তে নিজে বিয়ে করেছিলে পছন্দের পুরুষকে, তা হলে তার সঙ্গে টিকতে পারলে না কেন? এই নির্মম প্রশ্নটি মনোরমার মুখ থেকে উচ্চারিত হোক দীপাবলী চায় না।

মনোরমার একটি চশমা আছে। প্রায় আঠারো বছর আগে সেটি করানো হয়েছিল। ডাঁটি ভেঙে যাওয়ায় সুতো দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। নাকের ডগায় তুললে হাস্যকর দেখায়। আঠারো বছরে চোখ আরও শক্তিহীন হয়েছে কিন্তু চশমা পালটানো হয়নি। মনোরমাকে পাওয়ার পরিবর্তন করিয়ে নতুন চশমা দিতে গেলে চোখের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু তিনি এই ফ্ল্যাটের বাইরে যাবেন না। বিকেলবেলায় বারান্দায় বসে রাস্তার যেটুকু দেখতে পান সেটাই হয় কলকাতাদর্শন। দীপাবলী তাঁকে কালীঘাট দক্ষিণেশ্বরের কথা বলেছিল। তিনি হাত নেড়ে না বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘চিঠি লেখার জন্যে চশমা দরকার। আমার তো চিঠি লেখার কোনও লোকই নেই। তাই চশমারও দরকার হয় না। বইপত্র তো পড়ি না।’

ব্যাপারটা দীপাবলীর পছন্দ হয় না। ইদানীং কেবলই মনে হয় মনোরমাকে আরও অনেককাল তার নিজের প্রয়োজনে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেই বাঁচাটা যদি ভালভাবে না হয় তো মুশকিল। কিন্তু মনোরমার কোনও চাহিদা নেই। সবকিছুই যেন তাঁর বেশ ভাল লাগে। এই ফ্ল্যাটের জীবনে তিনি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

মনোরমার সঙ্গে যে পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রমহিলার আলাপ হয়েছে তা জানতে পেরে দীপাবলী ভেবেছিল একটু সতর্ক করে দেবে। আলাপ থেকে মেলামেশা হতে বাধ্য। সেই মেলামেশা অনাবশ্যক কৌতূহলী করে তুলবে প্রতিবেশীকে। এইটে সে চায় না। কিন্তু বলব বলব করেও পারল না দীপাবলী। চব্বিশ ঘণ্টা ফ্ল্যাটে থেকে মনোরমা নিশ্চয়ই হাঁপিয়ে ওঠেন। ওইটুকু আলাপ যদি তাঁকে স্বস্তি দেয়, দিক। কয়েকদিন বাদে মনোরমা খবর দিলেন একটি পার্টটাইম কাজের লোকের ব্যবস্থা হয়েছে। পাশের ফ্ল্যাটের বউটি করে দিয়েছে। রান্না ছাড়া সব কাজ করবে। এখন তো তিনি আছেন। দীপাবলী অফিসে বেরিয়ে গেলেও কোনও অসুবিধে হবে না। এই অভাবটা মিটে গেল বলে দীপাবলী আপত্তি করার কোনও কারণই পেল না। যে-মেয়েটি এল সে স্বামী পরিত্যক্তা, সুন্দরবনে বাড়ি। এখানে লাইনের ধারে ঝুপড়িতে থাকে। মনোরমা তার সঙ্গে কথা বলেন। সেইসমস্ত কথা ধরাবাঁধা কাজের মধ্যে থাকে না। সুন্দরবনে মধু চাষ থেকে তার স্বামীর নির্যাতন পর্যন্ত কোনও প্রসঙ্গই বাদ যায় না। বছর তিরিশের একটি মেয়ে ঝুপড়িতে একা কী করে থাকে তাই নিয়ে মনোরমার অনেক দুশ্চিন্তা। কাউকে কিছু নিয়ে থাকতে হবে, মনোরমাও এই নিয়ে আছেন।

রবিবার সকালে বাজারে যায় দীপাবলী। সেদিন ভাঁড়ার একেবারে শূন্য হয়ে যায়। আগের রাত্রে সর্দি হয়েছিল। সকালের দিকে বেশ জ্বরোভাব। গায়ে হাতে ব্যথা। মনোরমা বললেন পেট গরমের সর্দি, বাড়ি থেকে বেরুতে হবে না। তিনি কাজের মেয়েটিকে বাজারে পাঠালেন। দীপাবলী নিশ্চিন্ত হয়েছিল। আজকের দিনটা কোনওমতে চলে গেলে সে সন্ধেবেলায় না হয় বাজারে যাবে। দুপুরের আগে শরীর ঠিক হয়ে গেল। খেতে বসল সে মনোরমার সঙ্গে। মনোরমার থালার দিকে তাকিয়ে সে অবাক। তিনি আলসেদ্ধ ডাল আর কাঁচালঙ্কা নিয়ে বসেছেন ভাতের সঙ্গে। দীপাবলীর পাতের পাশে বড় বাটিতে মাছ। সে জিজ্ঞাসা করল, ‘এটা কী হল?’

মনোরমা লজ্জা পেলেন, ‘আমারই ভুল রে। তোকে যে বেশি টাকা দিতে বলব তা মনে ছিল না। এদিকে আমি ওকে বলে দিয়েছিলাম তোর জন্যে ভাল মাছ আনতে। কেনার পর ওর হাতে আর টাকা ছিল না।’

‘কী আশ্চর্য! ও তরকারি কিনল না কেন? মাছের কী দরকার ছিল?’

‘আহা। বললাম না, আমারই ভুল। কিন্তু এতে আমার অসুবিধে হবে না। ওখানে কতদিন শুধু আলুসেদ্ধ ভাত খেয়েছি। ডালও জোটেনি৷’

‘না। আমি খাব না। এভাবে খাওয়া যায় না।’

‘সেকী? খাবি না মানে? একটা বেলা মানিয়ে নে।’

তর্ক চলল কিছুক্ষণ। হঠাৎ দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, ‘নিজেকে কষ্ট দিয়ে খুব আনন্দ পাও?’

‘এ-কথা কেন?’

‘মাছটা তুলে রাখো। আমি তুমি যা খাচ্ছ তাই খাব।’

‘ওমা। তা হলে মাছ আনালাম কেন? তোর খেতে অসুবিধে হবে।’

‘তোমার যদি না হয় আমার হবে না।’

‘আশ্চর্য! আমি বিধবা হবার পর মাছ খেয়েছি কখনও?’

‘খাওনি কেন?’

‘এদেশের বিধবারা খায় না বলে।’

‘আমিও তো বিধবা ছিলাম। যখন জোর করে খেতে লাগলাম তখন তুমি চেঁচামেচি করোনি কেন?’

‘সেটা তোর বাবার জন্যে। ও চাইত না তুই বিধবার মতো থাকিস।’

‘মাছ খেলে তোমার বৈধব্য নষ্ট হয়ে যাবে?’

‘আমি জানি না।’

‘আজকাল এইসব বাজে প্রথা কেউ মানে না।’

‘আমি তো আজকালকার মানুষ নই।’

‘তা হলে এককালে সহমরণে যেত সদ্যবিধবা। সেটা মানো?’

‘আমি আর তর্ক করতে পারছি না।’

‘তা ছাড়া, ঠাকুমা, তুমি বিধবা হয়ে আছ অভিমানে। আমরা এখনও জানি না ঠাকুরদা মারা গিয়েছেন কিনা। ঠিক তো?’

‘তিনি থাকুন বা না-থাকুন আমি বিধবা।’

‘হ্যাঁ, আমি তোমার এই মানসিকতাকে মেনে নিচ্ছি। কিন্তু তুমি বিধবা বলে মাছ খাবে না কেন? একসময় বুঝিয়েছিলে মাছ-মাংস-ডিম শরীরকে তপ্ত করে। বিধবার উচিত নয় ওসব খাওয়া। তা শরীর যে-বয়সে তপ্ত হয় সেই বয়সটাকে তুমি অনেককাল আগে ফেলে এসেছ, তাই না?’

‘আঃ। ফাজলামি হচ্ছে, না?’

‘তা হলে যুক্তি কোথায়?’

‘আমি অত যুক্তিফুক্তি জানি না। যা কোনওদিন করিনি—।’

‘দাঁড়াও। তুমি এর আগে কলকাতায় এসেছ? আসোনি। এমন ফ্ল্যাটবাড়িতে থেকেছ? থাকেনি। সায়া ব্লাউজ পরেছ? পরোনি। তা হলে? আমি তোমাকে স্পষ্ট বলে দিচ্ছি তুমি মাছ না খেলে আমিও খাব না।’

‘তুই আমার ওপর জোর করছিস। খাওয়া নিজের রুচিমতো করতে হয়।’

‘মাছে তোমার অরুচি?’

‘ষাট-পঁয়ষট্টি বছর না খেয়ে আছি, নাকি তারও বেশি, এখন খেয়ে কী হবে?’

‘তোমার শরীর ভাল থাকবে। চোখের প্রবলেম কমবে।’

‘ছাই।’

‘বেশ, তুমি মুখে তুলে দ্যাখো, যদি খেতে খারাপ লাগে খাবে না।’

‘আমার বমি হয়ে যাবে।’

‘হলে খাবে না আর।’

‘কী আরম্ভ করেছিস বল তো?’

‘কিছুই করিনি।’

মনোরমা পাথরের মতো বসে রইলেন। যেন অনেক অনেক বছর ধরে যে-বাঁধ শক্তহাতে গড়েছিলেন তা এখন ভেঙে পড়ার মুখে। দীপাবলী তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিল। প্রথমদিকে সে বিরক্ত হয়েছিল, তারপর যুক্তিবাদী এবং এখন স্রেফ কৌতূহল। কিন্তু সে একটা আশঙ্কাও করছিল। হঠাৎ যদি মনোবমা বলে বসেন তোর বাড়িতে আছি বলে তুই আমাকে নষ্ট করতে চাইছিস তা হলে পিঠ ঠেকাবার মতো কোনও দেওয়াল পেছনে পাবে না। এইসময় মনোরমা বললেন, ‘লোকে শুনলে ছি ছি করবে রে।’

‘কলকাতার লোকের অনেক কাজ আছে।’ দীপাবলী হাসল, ‘না। থাক। তোমাকে খেতে হবে না। যদি কখনও ইচ্ছে হয় বোলো। আমি মাছ খাচ্ছি, তুমি খেতে আরম্ভ করো।’

খাওয়া শুরু হল। দু’জনে চুপচাপ খাচ্ছিল। মনোরমা ধীরে খান। আলুসেদ্ধ ভাতেই তাঁকে বেশ তৃপ্ত মনে হচ্ছিল। দীপাবলী যখন মাছের বাটির দিকে হাত বাড়াচ্ছে তখন তিনি মুখ তুলে বললেন, ‘আমার জন্যে এই একটুখানি রেখে দিবি।’

‘মানে?’ এবার হতভম্ব দীপাবলী, ‘তুমি মাছ খাবে?’

‘বললাম তো!’

‘না বাবা। আমি জবরদস্তি করলাম বলে নিজেরই খারাপ লাগছে।’

‘সেটা করলি বলেই তো ইচ্ছে হচ্ছে।’

‘সত্যি?’ দীপাবলী খুব খুশি হল, ‘দাড়াও, রান্নাঘর থেকে এনে দিই।’

‘না। নষ্ট করে কোনও লাভ নেই। একটা টুকরো দে!’

‘দ্যাখো, তুমি আমার মন রাখতে খাচ্ছ না তো?’

‘তোর মন না রাখলে তুই কি আমাকে তাড়িয়ে দিতিস? তা হলে মন রাখার কথা উঠছে কেন? সেই বিধবা হবার পর খুব ইচ্ছে হত। ইচ্ছেটাকে একসময় মেরে ফেলেছিলাম। এখন তোর কথা শুনে মনে হল এটা তো মনের ব্যাপার। শরীর নিলে না খাওয়ার কী আছে!’

দীপাবলী বাটি থেকেই অনেকটা মাছ ভেঙে নিজের থালায় নিয়ে বাটিটাকে ঠেলে দিল আস্তে করে। মনোরমার ডাল খাওয়া যেন শেষ হচ্ছে না। নিজের খাওয়া হয়ে গেলে সে থালা তুলে বেসিনের পাশে রেখে হাত ধুয়ে শোওয়ার ঘরে চলে এল। মনোরমা মাছ খাচ্ছেন আর সে সামনে বসে আছে এতে ওঁর স্বস্তি না-ও হতে পারে। দীপাবলী সতর্ক হল। যে-কোনও মুহূর্তেই মনোরমার বমির শব্দ শুনতে পাবে বলে আশঙ্কা করছিল?

একটু বাদে জলপড়ার শব্দ হল। মনোরমা হাত ধুচ্ছেন, সে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ওদিকে কোনও অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে বলে এখনও মনে হচ্ছে না। মিনিট পাঁচেক বাদে মনোরমা ঘরে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ভাত খেয়ে আবার জ্বর আসবে না তো? শুলি যে?’

‘এমনি।’ সে মনোরমাকে জায়গা করে দিল।

পাশে শুয়ে মনোরমা কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলেন। দীপাবলী ওঁর কোমর জড়িয়ে ধরল। মনোরমা এবার বললেন, ‘এখন মনে হচ্ছে আমি কী বোকা!’

‘কেন?’ ওঁর কাঁধের কাছে মুখ ছিল দীপাবলীর।

‘কত বছর? ষাট-পঁয়ষট্টি বছর ধরে কত ভাল ভাল জিনিস থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে রেখেছি। এখন খুব আপশোস হচ্ছে রে!’

দীপাবলী চমকে উঠল। তার সামনে লোলচর্ম মনোরমা, যাঁর শরীরে সময় অজস্র দাঁত বসিয়েছে। সে বলল, ‘তুমি এখনও অনেকদিন বাঁচবে তা জানো।’

মনোরমা বললেন, ‘বাঁচতে যে খুব ইচ্ছে করে।’

‘তোমাকে বাঁচতেই হবে।’

দু’জন নিঃসঙ্গ মহিলা পাশাপাশি চুপচাপ শুয়ে রইল। দু’জনের হাত দু’জনকে স্পর্শ করে আছে। দীপাবলীর মনে হল মনোরমা আজ যে-বিদ্রোহ করলেন তার তুলনায় সে নিজে কিছুই করেনি। এইসময় কলিংবেল বেজে উঠল প্রচণ্ড জোরে। চমকে উঠে বসল দু’জনেই।

সকল অধ্যায়

১. ১. কাকভোর বলে কিছু নেই এখানে
২. ২. টেলিগ্রামটা ছিঁড়ল দীপাবলী
৩. ৩. এরকম একটা দিনের কথা
৪. ৪. অর্জুন নায়েক
৫. ৫. ঘুম এসেছিল অনেক রাত্রে
৬. ৬. এস ডি ওর অফিসে
৭. ৭. অবস্থা খুব গোলমেলে
৮. ৮. দীপাবলী বসে পড়ল
৯. ৯. সতীশবাবু
১০. ১০. দাদাবাবু
১১. ১১. বাঙালির চরিত্র
১২. ১২. শুতে বসতে অস্বস্তি
১৩. ১৩. ন্যাড়া গাছটা
১৪. ১৪. হাটতলা পেরিয়ে
১৫. ১৫. সকালে উঠেই তিরি চলে গিয়েছে
১৬. ১৬. দোতলা বাসের জানলা
১৭. ১৭. জীবন দাবা খেলার মত
১৮. ১৮. এ এক অপূর্ব আনন্দ
১৯. ১৯. দিল্লী শহরে
২০. ২০. ইন্টারভিউ কেমন হল
২১. ২১. খাম খুলে চিঠির ওপর নজর
২২. ২২. বুকের ভেতর জমে থাকা ছেলেবেলা
২৩. ২৩. ঘুম ভেঙ্গেছিল সাতসকালে
২৪. ২৪. কিছু জিনিসপত্র কেনার ছিল
২৫. ২৫. যাত্রাপথে
২৬. ২৬. কিছু ভাল ছেলেমেয়ে
২৭. ২৭. কর্মচারীদের আচরণবিধি
২৮. ২৮. শুভ্রাদের বাড়ির সামনে
২৯. ২৯. নতুন ফ্ল্যাটে
৩০. ৩০. দিল্লীতে দূরত্ব কোন সমস্যাই নয়
৩১. ৩১. সরকারি চাকরিতে
৩২. ৩২. চাকরির ক্ষেত্রে
৩৩. ৩৩. ঘরে বাইরে নিরন্তর যুদ্ধ
৩৪. ৩৪. প্রাথমিক পর্বে নির্লিপ্ততা
৩৫. ৩৫. এ এক অদ্ভুত সম্পর্ক
৩৬. ৩৬. দীপাবলী এবং অলোক
৩৭. ৩৭. হাওড়া স্টেশনে
৩৮. ৩৮. কলকাতা অফিসের এক নম্বর বস
৩৯. ৩৯. সুখের চেয়ে স্বস্তি ভাল
৪০. ৪০. মনোরমা কলকাতায়
৪১. ৪১. মনোরমার জ্বর
৪২. ৪২. মনোরমার বিদ্রোহ
৪৩. ৪৩. নিজের মনের অন্ধকার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন