সমরেশ মজুমদার
ঘরে-বাইরে নিরন্তর যুদ্ধ, যুদ্ধটা নিজের সঙ্গে। একদিকে অলোকের কথাবার্তা, আচার আচরণ, মায় জীবনযাত্রা পালটে যাচ্ছে একটু একটু করে, অন্যদিকে অফিসের চটচটে আবহাওয়া, প্রতিমুহূর্তে মনের বিরুদ্ধে কাজ করে যেতে বাধ্য হওয়ায় দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল দীপাবলীর। কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না সে। এই জীবনে সে এটুকু শিখেছে, স্রোতে গা ভাসাতে না পারো উজানে সাঁতরাতে চেষ্টা করো, কিন্তু কখনই জল ছেড়ে সরে দাড়িয়ো না, তা হলেই তুমি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। একদা সে এই ভুল করেছিল নেখালি থেকে চাকরি ছেড়ে চলে এসে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যাওয়া ছাড়া কোনও পথ নেই।
বাইরের জগৎ থেকে একধরনের আপাত উদাসীনতা দিয়ে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা যায়, কিন্তু ঘরের আবহাওয়া ভারী হয়ে গেলে নিশ্বাসে কষ্ট আসবেই। মেনে নেওয়া বা মানিয়ে নেওয়ার চিরাচরিত ফর্মুলা অনুসরণ করলে যদি কিছুটা স্বস্তি আসে এবং একসময় সেই স্বস্তির পথ ধরে শান্তি তৈরি হয় তা হলে সেটাই করা উচিত বলে মনে হল দীপাবলীর। নিজেকে অনেক বোঝাল সে। লড়াই করা মানে সবসময় দাঁত এবং নখের ব্যবহার নয়।
শনিবার সরকারি ছুটি কোনও একটি পরব উপলক্ষে। সকালে ঘুম থেকে উঠে জীবনযাপন স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়নি। অলোক ওঠেনি। পাশবালিশ জড়িয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। বাথরুমে ঢুকে কাপড় পালটাতে গিয়ে দীপাবলী বুঝতে পারল শরীরে বেশ অস্বস্তি। গতরাত্রে যা প্রথমদিকে বিস্ময়, মাঝখানে আনন্দ এবং শেষে বিরক্তিকর হয়ে দাড়িয়েছিল তাই আজ জানান দিচ্ছে। বিশেষ করে বুকের চারপাশ দপদপ করছে। দাঁত ব্রাশ করে অনেকখানি জল ঢেলে স্নান করল সে। কিন্তু শরীর থেকে বেদনা একটুকুও কমল না।
এমন অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যে কখনও হয়নি। গতরাত্রে ঈষৎ মাতাল অলোক হঠাৎই হিংস্র হয়ে উঠেছিল। সে তার শরীরকে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। শরীর নিয়ে সেই খেলায় কোনও মমতা ছিল না। ব্যথা পেয়ে চিৎকার করেছে দীপাবলী। জড়ানো গলায় অলোক বলেছে, ‘ওহো, ডোন্ট সাউট, আনন্দটা মাটি কোরো না।’ ব্যথা সইতে না পেরে দীপাবলী বলেছিল, ‘এত জোরে চাপ দিচ্ছ কেন?’
জড়ানো গলায় অলোক জবাব দিয়েছিল, ‘ইউ উইল গেট প্লেজার আউট অফ ইট। বীরভোগ্যা বসুন্ধরা। পুতুপুতু করে আদর করে বলে একালের পুরুষবা মেয়েদের কন্ট্রোল করতে পারে না। এনজয় ইট।’
‘আঃ। নাঃ। ছাড়ো?’ চিৎকার করে উঠেছিল দীপাবলী, আবার।
‘না, ছাড়ব না। কেমন করে একটা ফ্রিজকে গ্যাস বার্নারে টার্ন করতে হয় আজ তা আমি দেখিয়ে দেব।’
‘কী বললে তুমি?’
‘ইয়েস, ইউ আর কোল্ডি। ফ্রিজিড ওমেন। বাট ডোন্ট ওরি, আই উইল টার্ন ইউ—’কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর স্তব্ধ হয়েছিল দীপাবলী। বিয়ের পর অনেক অবসর মুহূর্তে নানান কথার মধ্যে অলোক ওইসব মেয়েদের কথা বলেছে যারা তাদের স্বামীদের বিছানায় সুখী করতে পারে না। শুধু তাদের শীতলতার জন্যেই দাম্পত্যজীবনে ভাটা এসে যায়। এমন অনেক নারী আছে যারা সংসারের সব কাজে অত্যন্ত নিপুণা, কথাবার্তা, গান এবং সেবায় যাদের কোনও তুলনা মেলা ভার, কিন্তু একান্তের জীবনে যারা গুটিয়ে যায় শামুকের মতো। অলোক সুর করে লাইনটা গেয়ে বলত, ‘এটা ঠিক গানের মতো, একজন গাইবে গলায় আর একজন মনে মনে। নইলে সেটা আর যাই হোক গান হবে না।’ কিন্তু কখনই তার কথায় অতৃপ্তির সুর বাজেনি। একথা ঠিক প্রথম দিকে দীপাবলীর মনে যৌনজীবন সম্পর্কে কিছুটা ভীতি ছিল। তার ছাত্রীজীবনে কেউ যৌনজীবন সম্পর্কে কোনও উপদেশ দেয়নি। কোনও পাঠ্যপুস্তকে সে এ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেনি। পরবর্তীকালে বাস্তবের সঙ্গে লড়াই করার মুহূর্তে এ-সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি হয়নি। তার ধারণা ছিল ঘটনাটা ঘটানো হয় শুধু সন্তান জন্মানোর জন্যে। বলতে গেলে অলোক তাকে প্রায় হাতে ধরেই ওই জীবনের আনন্দ পেতে শিখিয়েছে। শরীর শুধু সন্তান দেয় না, তাকে মন্দিরের মতো ব্যবহার করে আর একধরনের পবিত্র আনন্দ পাওয়া যায় এই বোধও সে পেয়েছিল অলোকের কাছ থেকেই। কিন্তু এসবের সময়ে অলোক কখনই তাকে শীতল বলেনি। তার চেয়ে বড় কথা সে নিজে জানে শীতল নয়। কিন্তু আলো জ্বলুক বললেই আলো জ্বলে না। তার জন্যে কেরোসিন অথবা হ্যারিকেনের সঙ্গে দেশলাইয়ের আয়োজন করতে হয় এবং সুইচ টেপার জন্যে হাত বাড়াতে হয়। এই প্রস্তুতি ছাড়া চরমমুহূর্ত কল্পনা করতে পারে না দীপাবলী।
গতরাত্রে অলোক কোনওরকম মানসিক প্রস্তুতির সুযোগই দেয়নি। একাই একশো শকুন হয়ে ধারালো ঠোঁটের আঘাত হেনেছিল। তারপর যখন নিঃশেষিত হল তখন গোড়াকাটা কলাগাছের মতো পড়ে গেল বিছানায়। দীপাবলী নিজেকে বোঝাতে চেয়েছিল, কখনও কখনও পুরুষেরা হয়তো এমন নির্মম আচরণ করে। হয়তো ওদের মধ্যে পাশবিক প্রবৃত্তি যা আদিম কাল থেকে একটু একটু করে সুপ্ত হয়ে আসছে তা হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে জেগে ওঠে। তাকে এটাকেও উপেক্ষা করতে হবে। ওষুধ খেয়ে শরীরের এই ব্যথা নিশ্চয়ই মরে যাবে। শুধু তার মনে হচ্ছিল যদি মনের পেইনকিলার ট্যাবলেট বাজারে বিক্রি হত!
পবিষ্কার হয়ে চান করল দীপাবলী। কাপ হাতে শোওয়ার ঘরে ঢুকে অলোককে শুয়ে থাকতে দেখে আজই হঠাৎ খুব অশ্লীল বলে মনে হল। তাড়াতাড়ি চায়ের কাপ নামিয়ে সে একটু গলা তুলেই ওকে ডেকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। এখনও রোদ ওঠেনি। বারান্দার চেয়ারে বসে একা চা খেল সে। আজ দুপুরে কোথাও খাওয়ার কথা নেই। বাড়িতেই রান্না করবে সে। একদিন কথায় কথায় অলোক বলেছিল চিংড়ি মাছের বাটিচচ্চড়ি আর পারশে মাছের ঝাল ওর খুব প্রিয় খাবার। হাঁটতে হাঁটতে বাজারটা করে এলেই হয়। না-রোদ এই সকালে হাঁটতে খারাপ লাগবে না। চা খেয়ে কাপ-প্লেট রান্নাঘরের বেসিনে নামিয়ে দীপাবলী বাজারের থলি নিয়ে শশাওয়ার ঘরের দরজায় এসে দেখল অলোক বিছানায় বসে চা খাচ্ছে। দীপাবলী বলল, ‘আমি একটু মাছ কিনে আনছি।’
‘তুমি, মাছ? আমি থাকতে? না না, আমি যাচ্ছি।’
‘কিছু হবে না। তুমি রেস্ট নাও, আমার যেতে ভাল লাগবে।’ দীপাবলীর মুখে আচমকা একটা ভাললাগা ফিরে এল। সে যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঠিক তখনই অলোক তাকে ডাকল, ‘এই শুনছ?’
দীপাবলী সামান্য মুখ ফেরাল। কোনও কথা বলল না।।
‘ডিড আই হার্ট ইউ?’
কী জবাব দেবে দীপাবলী! এতক্ষণের ভাবা সমস্ত কথা উগরে দেবে? যদি দেয় তা হলে কথা বাড়বে। হয়তো তর্ক হবে এবং শেষপর্যন্ত একটা তেতো আবহাওয়ায় দিনটা কাটবে। সে হাসল, কিছু বলল না, তারপর দরজার দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু এই সামান্য প্রশ্ন এবং তার আগের বাজারে যাচ্ছে শুনে অলোকের ব্যস্ততা দেখে মন বলতে লাগল এই মানুষের সঙ্গে গতরাত্রের মানুষের কোনও মিল নেই। অথচ দুটো মানুষই সত্যি। সে ঠিক করল, দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর অলোককে বুঝিয়ে বলবে। যাতে ভবিষ্যতে গতরাত্রের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তার ব্যবস্থা করবে।
মিনিট দশেক হাঁটার পর যে বাজারটা তার আয়ু বেশিদিনের নয়। সবজির আধিক্য বেশি। এখানে আলু পেঁয়াজ এবং অন্যান্য সবজি কিনলে লঙ্কা অথবা ধনেপাতা ফাউ পাওয়া যায়। আর তরিতরকারি কলকাতার থেকে অনেক বেশি তাজা এবং স্বাস্থ্যবান। মাছের জায়গায় এসে দেখল আড় জাতীয় মাছই বেশি। পোনা আছে এবং তা বরফের। পারশে নেই চিংড়ি তো দূরের কথা। অর্থাৎ ইচ্ছে হলেই এখানে তেমন রান্না করা যাবে না। অলোক বলে বাঙালি এলাকায় নানারকম মাছ আনে এরা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আরও কয়েক ঝুড়ি নতুন মাছ এলে ট্যাংরা পেল সে। ট্যাংরা আর পোেনা নিয়ে ফিরে আসতে হল।
বাড়িতে ফিরতেই আর একটা চমক। ব্রেকফাস্ট তৈরি করে ফেলেছে অলোক। বলল, ‘চায়ের জল গরম হয়ে গিয়েছে চটপট হাত ধুয়ে এসো।’ দীপাবলীর ইচ্ছে করছিল অলোককে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু বাজারের ব্যাগে হাত জোড়া, সে নরম গলায় বলল, ‘থ্যাঙ্কু।’
চা খেতে খেতে টুকটাক গল্প। অলোক খবরের কাগজ পড়ছে। বাজারে মাছ ভাল পায়নি জানাল দীপাবলী। সেটা শুনে অলোক বলল, ‘হুট করে চলে গেলে, নইলে গাড়ি নিয়ে বের হতাম।’
দীপাবলী বলল, ‘কিন্তু আমার নিজের হাতে বাজার করতে ইচ্ছে করছিল।’
অলোক হাসল, ‘দ্যাখো, তোমার হাত কীরকম রান্না করে।’
তারপর সারাটা সকাল কেটে গেল রান্নাঘরে। অলোক শুয়ে বসে বই পড়ে সময়টা কাটাল। ট্যাংরা মাছের ঝাল, রুইয়ের কালিয়া, ডাল, পোস্ত এবং ঝুরঝুরে ভাত তৈরি হবার আগেই দু’বার তাগাদা দিয়ে স্নান করিয়েছে দীপাবলী অলোককে। তারপর নিজে স্নান সেরে টেবিলে খাবার সাজাল।
অলোক এল পাজামা পাঞ্জাবি পরে। এখন তার মেজাজ বেশ ভাল। এসেই টেবিল দেখে জিভে শব্দ করল, ‘মাই গড। এ কী করেছ? এ যে দেখছি দারুণ ব্যাপার।’
দীপাবলী নরম হাসল, ‘কেমন হয়েছে জানি না। কোনওদিন তো এসব রান্নার সুযোগ পাইনি। ভয়ে ভয়ে কোনওমতে—!’
‘সুযোগ কেউ দেয় না, করে নিতে হয়। বসে পড়ো, আমি আর ওয়েট করতে পারছি না।’ চেয়ার টেনে নিল অলোক।
দীপাবলী বসল না। এবং এই মুহূর্তে সে একজন যথার্থ বঙ্গরমণী কিংবা পৃথিবীর অন্যান্য রমণীদের মতো এক অদ্ভুত রসে ভরপুর— যা না-প্রেম না-স্নেহ না বাৎসল্য না-শ্রদ্ধা নাকামনা, অথচ সবটাই জড়িয়ে মিশিয়ে একাকার। সে ভাত ঢেলে দিল পরিচ্ছন্ন হাতে। অলোক বলল, ‘না তা হবে না। তোমাকে আমার খাওয়ার তদারকি করতে হবে না। তুমিও বসে পড়ো একসঙ্গে।’
দীপাবলী মাথা নাড়ল, ‘না, খাও না, আমি একটু বাদে বসছি!’ অলোক এক মুহূর্ত তাকাল, ‘তা হলে ঘোমটা দাও।’
‘মানে?’ হকচকিয়ে গেল দীপাবলী।
‘এককালে বাংলাদেশের বউরা যখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পরিবেশন করে যেত তখন তাদের মাথায় ঘোমটা থাকত।’ অলোক হাসল।
হাসিটা সংক্রামিত হল। দীপাবলী বলল, ‘ঠিক মনে করতে পারছি না। একটা ছবি দেখেছিলাম, রবীন্দ্রনাথ হাঁটুমুড়ে পাত পেতে খেতে বসেছেন আর ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী পরিবেশন করছেন। মেয়েরাও ছিল কিন্তু কারও মাথায় ঘোমটা—।’
‘বেসিক জায়গাটায় গোলমাল করে ফেললে।’ থামিয়ে দিল অলোক, ‘রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ওঁদের সম্পর্কটা কী ভাবছ না!’
‘খাও তো, কথা বাড়িও না।’
অলোক খেতে শুরু করল। দীপাবলী দেখছিল। গতরাত্রের মানুষটিকে এই চেহারার সঙ্গে কেউ মেলাতে পারবে না। এই সত্যিটুকু দিয়ে ওই সত্যিটুকুকে মুছে ফেলা যায় না। ওটাকে তো সে মিথ্যে ভাবতে পারছে না। তা হলে সত্যি কি মোছা যায়?
স্বচ্ছন্দ ভঙ্গি নিয়ে খাচ্ছিল অলোক। মাছে হাত দিতেই যেন আড়ষ্ট হল। দীপাবলী দেখল মুখে দিয়ে চোখ তুলতে গিয়েও নামিলে নিল সে। মুখটা কেমন থমথমে হয়ে যাচ্ছে। এতক্ষণ যে হাসিখুশি ভাবটা ছিল তা উধাও। সে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘কী হয়েছে?’
‘কী বলব!’ হাত গুটিয়ে নিল অলোক।
‘মানে?’
‘পোস্ত থাকলে আর একটু দাও, খেয়ে উঠে পড়ি।’
‘সেকী, মাছ খাবে না?’
‘নাঃ। খাওয়া যাচ্ছে না।’
‘আশ্চর্য! কী হয়েছে বলবে তো!’
‘এটা কোনও রান্নাই হয়নি। টেস্টলেস, জল কাটছে, এটা কি ঝাল হয়েছে?’
‘আমি তো বললাম আমার কোনও এক্সপেরিয়েন্স নেই।’
‘নেই তো রাঁধতে যাও কেন? আঃ, মা এটা যা রাঁধে তারপর এসব খাওয়া যায় না। আর রাঁধতে জানি না মানে এই?’
‘ঠিক আছে, কালিয়া দিচ্ছি, ওটা খেয়ে দ্যাখো।’
‘দরকার নেই, আমাকে পোস্ত দাও। ওটা তবু খাওয়া চলে।’
‘একবার মুখে নিয়ে দ্যাখো—!’
‘মুখটার বারোটা বাজার চান্স আছে দীপা!’
হঠাৎ প্রচণ্ড রাগ হয়ে গেল দীপাবলীর। সে ঘুরে সোজা চলে এল শোওয়ার ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ল। সমস্ত শরীর নিংড়ে আচমকা জল উঠে এল চোখে। নিজের অজান্তেই কেঁদে যাচ্ছিল সে। এবং এই কান্নার সঙ্গে অদ্ভুত কাঁপুনি ছড়িয়ে পড়ছিল শরীরে।
খানিক বাদে দরজায় শব্দ হল, অলোকের গলা পাওয়া গেল। সে দরজা খুলতে বলছে। হঠাৎ মাথা গরম করে সিন না করার জন্যে অনুরোধ করছে। অনুরোধ না আদেশ? দীপাবলী সাড়া দিল না। তারপর সব চুপচাপ। যেন এ বাড়িতে দ্বিতীয় প্রাণীর অস্তিত্ব নেই।
একসময় শক্তি ফিরে এল। দীপাবলী বিছানায় উঠে বসল। মুখ ফিরিয়ে আয়নার দিকে তাকাল। নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ খুব লজ্জা পেল সে। এভাবে ছুটে এসে বিছানায় ভেঙে পড়ল কেন? তার স্বভাবে তো এমনভাবে কান্না নেই। অলোকের রান্না অপছন্দ হয়েছে, সে তা মুখ ফুটে বলেছে। কোনটা খাবে বা না খাবে সেটা ওর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। তা হলে সেটা শুনে এমনভাবে আহত হওয়ার কী যুক্তি আছে? নাকি সে নিজে রান্না করেছে বলে ভেবেই রেখেছিল অলোক সবকিছু খুব তৃপ্তি নিয়ে খাবে! এমন ভাবনা বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কী!
দীপাবলী চোখ মুছল। দরজা খুলল। ঘরের বাইরে এসে দেখল অলোক নেই। কোথাও নেই। বারান্দাও ফাঁকা। বাইরের দরজার ল্যাচ টেনে দেওয়া। অলোক বেরিয়ে গিয়েছে। হঠাৎ খুব একা মনে হতে লাগল। এইভাবে না বলে অলোক কখনও বাড়ি থেকে বের হয়নি। তারপরেই মনে হল হয়তো উত্তেজনার বশে অলোক কাছেপিঠে গিয়েছে। একটু ঘুরেফিরেই চলে আসবে। কিন্তু এমন ভরদুপুরে কোথায় যেতে পারে অলোক!
ঘড়ি দেখল সে। দুপুর দুটো। ঠোঁট কামড়ে খাওয়ার টেবিলটাকে দেখল একবার। তারপর যা কিছু বের করেছিল সব ফিরিয়ে নিয়ে গেল রান্নাঘরে। টেবিল পরিষ্কার করে হাত ধুয়ে বাইরের ঘরের চেয়ারে চুপচাপ বসে রইল। তার খিদের অনুভূতিটাই মরে গিয়েছিল।
বিকেল পাঁচটায় দরজায় শব্দ হল। অলোক ফিরল তার মাকে সঙ্গে নিয়ে। ঘরে ঢুকে শাশুড়ি বললেন, ‘তোমার খাওয়াদাওয়া হয়েছে তো? আমি ওকে খুব বকলাম। রান্না একটু খারাপ হয়েছে তো এভাবে রাগারাগি করতে হবে? একদম বাপের স্বভাব পেয়েছে। তুমি নিশ্চয়ই বিয়ের আগে বলোনি দারুণ কিছু রান্না করতে পারো?’
‘না। বরং বলেছিলাম একদম জানি না। শুনে বলেছিল ওটা কোনও সমস্যাই না। দু’জনে চাকরি করছি যখন তখন একটা রান্নার লোক রেখে দেবে।’
দীপাবলী বলামাত্র অলোক বলল, ‘আমি খেতে পারিনি এটা আমার সমস্যা। তাই বলে বেডরুমের দরজা বন্ধ করা হবে কেন? ওখানে তো আমারও প্রয়োজন থাকতে পারে।’
‘ঠিক আছে, তুই আর কথা বাড়াস না। তুমি খাওনি?’
‘ঠিক আছে, বসুন।’
অলোক ভেতরের ঘরে চলে গেল। শাশুড়ি বসলেন। এই ভদ্রমহিলা ওদের এই ফ্ল্যাটে কয়েকবার এসেছেন। বেড়িয়ে গেছেন। তারা যে আলাদা হয়ে আছে এতে যেন উনি বেশ স্বস্তি পান। ভদ্রমহিলা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ঠিক কীভাবে রান্না করেছিলে বলো তো?’
দীপাবলী বলল, শুনে ভদ্রমহিলা শুধরে দিচ্ছিলেন। সেই রন্ধনপ্রণালী চুপচাপ শুনছিল দীপাবলী। যেন পুরোটাই বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন এমন ভেবে নিয়ে শাশুড়ি বললেন, ‘এভাবে করলে ও খুশি হবে।’
দীপাবলী মাথা নাড়ল, ‘বোধহয় না। ওর সবসময় মনে হবে যে মায়ের মতো হয়নি। অথচ হোটেলে এর চেয়ে অখাদ্য মুখ বুজে-খেয়ে যায়।’
ভদ্রমহিলা হাসলেন, ‘এটাই তো বিপদ। তুমি আর কী ঝগড়া করছ! ওদিকে বাড়িতে যা আরম্ভ হয়েছে তোমাকে কী বলব! একেবারে চুলোচুলি হবার জোগাড়। ওদের যদি আলাদা করে দিতে পারতাম তা হলে স্বস্তি হত।’
শাশুড়ি যেন মনের মতো প্রসঙ্গ পেয়ে গেলেন। একনাগাড়ে তাঁর বড়বউয়ের নিন্দে করে গেলেন তিনি। দু’-একবার মৃদু বাধা দিতে চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল দীপাবলী। একজনের সম্পর্কে তার অসাক্ষাতে এমন কটু সমালোচনা করা যে শোভন নয় তা ভদ্রমহিলা কখনই বুঝতে পারবেন না।
দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনি চা খাবেন?’
‘চা? দাও। হুট বলতে তো চলে এলাম।’
অতএব রান্নাঘরে ঢুকল দীপাবলী। ভদ্রমহিলা পেছনে পেছনে এসে দরজায় দাঁড়ালেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবসময় গলা জড়াজড়ি ভাব হবে এমন কেউ ভাবে না। একটু আধটু ঝগড়া না হলে আলুনি হয়ে যায় সব। তবে আমরা অল্পবয়সে এসে ঝগড়ার বদলে ঝগড়া করতে ভয় পেতাম। তাই এবেলার গোলমাল ওবেলাতেই মিটে যেত। তোমরা তো যে যার খুঁটি ছাড়বে না, এই তো বিপদ।’
‘খুঁটি ছাড়ার ব্যাপার নয়। সব জেনেশুনেও কেউ যদি অবুঝ হয়, অপমান করে, তখন কিছু বলার থাকে না।’
‘ওই তো মুশকিল। বলার না থাকলে খেয়োখেয়ি বাড়ে। তারপর একদিন আলাদা। চটপট বাচ্চা হলে এইসব গোলমাল চাপা পড়ে যায়।’
দীপাবলী আড়চোখে শাশুড়িকে দেখল। সে কিছু বলল না। এখন মনের অবস্থা যা তাতে এমন কথা শুনে লজ্জিত হবারও অবকাশ নেই।
সন্ধের মুখে ওরা তিনজন বারান্দায় বসে চা খেল। অলোককে ডেকে এনেছিলেন তার মা। দীপাবলী বসেছিল শাশুড়ির পাশের চেয়ারে, একটু দূরত্ব রেখে। খালিপেটে চা খেতে খুব খারাপ লাগাছিল, গা গোলাচ্ছিল। কিন্তু বাকি দু’জনের মুখ দেখে মনে হচ্ছিল এইসময়ে চা বেশ উপভোগ্য।
হঠাৎ শাশুড়ি বললেন, ‘তোমার কিন্তু একটা কাজ না করা অন্যায় হয়েছে।’
অবাক হয়ে তাকাল দীপাবলী, ‘কোনটা?’
‘তোমার বিয়ের খবর বাড়িতে দাওনি। এত মাস হয়ে গেল ওঁরা কিছুই জানেন না! যাই হোক না কেন, ওঁরা তো এককালে অনেক করেছেন তোমার জন্যে!’
দীপাবলী মাথা নাড়ল, ‘আপনি জানেন না, আমি যাঁকে ঠাকুমা বলি তাঁকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি।’
ভদ্রমহিলা ব্যাগ খুললেন, ‘এই দ্যাখো, উনিই লিখেছেন আমাকে।’
এগিয়ে ধরা খামটা নিল দীপাবলী। ও-বাড়ির ঠিকানায় এসেছে। খামের ওপরে ইংরেজি লেখাটা ঠাকুমার নয়। ভেতরে খাতার পাতা ছেঁড়া কাগজে ঠাকুমা লিখেছেন, ‘কল্যাণীয়াষু, দীর্ঘকাল অপেক্ষা করার পর নিতান্ত বাধ্য হয়ে এই চিঠি লিখছি। যদি কোনও অসুবিধে করে ফেলি তা হলে কিছু মনে করবেন না। আমি দীপাবলীর ঠাকুরমা।
বেশ কয়েকমাস আগে আপনাদের এক পরিচিত মানুষ এখানে এসে দীপাবলী সম্পর্কে খোঁজখবর করেন। আমরা জানতে পারি তিনি দীপাবলীর বিয়ের আগে তার সম্পর্কে জানতে চান। সেইসময় তাঁকে সব কথা অকপটে বলা হয়। কারণ মেয়েদের বিবাহিত জীবনে তার অতীতের কোনও ঘটনা লুকিয়ে রাখা উচিত নয়, কোনও লাভও হয় না। আমাদের মেয়েটি জীবনে সুখ পায়নি। অথচ আর পাঁচটা মেয়ের চেয়ে সে রূপে-গুণে অনেক ভাল। আমাদের ভুলের বোঝ সে এতকাল বহন করছে। তাই তার বিবাহের খবরে আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম। এর কিছুকাল পরে আপনাদের পাঠানো নিমন্ত্রণপত্র পেলাম। সেখানেই আপনার ঠিকানা পেয়েছি। কিন্তু সেইসঙ্গে আমি দুঃখ পেয়েছি এই কারণে যে আমাদের মেয়ে ওই কথা দু’লাইন লিখে জানায়নি বলে। শেষবার সে যখন এসেছিল তখন অনেক ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়ে গিয়েছিল। তাই সে এমন সুখবর নিজে জানাবে তাই আশা করেছিলাম। কিন্তু সে-আশা তো পূর্ণ হয়নি। তার পরেও অনেক মাস কেটে গেল তার কোনও খবর নেই। নিমন্ত্রণপত্র যখন ছাপা হয়েছে তখন নিশ্চয়ই তার বিয়েতে কোনও অসুবিধে ঘটেনি। সে নিশ্চয়ই আপনার সংসারে বউ হয়ে সুন্দরভাবে সংসার করছে। তবে সে চাকরি করতে ওদেশে গিয়েছিল তাই ঠিক কোথায় আছে তা আমার জানা নেই। আপনি যদি এই চিঠি পেয়ে অনুগ্রহ করে আমাকে তার ঠিকানা জানান তা হলে বড় উপকার হয়। কারণ এই মুহূর্তে তাকে আমার খুব দরকার। ভগবানের আশীর্বাদে নিশ্চয়ই আপনারা সবাই ভাল আছেন। ইতি আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষিণী, দীপাবলীর ঠাকুরমা।’
সেকেন্ড দশেক চুপ করে থেকে চিঠিটা ফেরত দিল দীপাবলী। শাশুড়ি বললেন, ‘তোমার চিঠি নিশ্চয়ই উনি পাননি। তুমি আজকালের মধ্যেই আবার চিঠি লিখো। আমিও লিখব।’ তারপর চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে বললেন, ‘আমাকে এখনই উঠতে হবে রে।’
অলোক বলল, ‘চলো।’
ভদ্রমহিলা দীপাবলীকে বললেন, ‘এবার থেকে কোনও রান্নার ব্যাপারে সমস্যা হলে সোজা আমার ওখানে চলে যাবে।’
দীপাবলী মাথা নাড়ল, ‘তার চেয়ে আপনি যদি একজন ভাল রান্নার লোক পাঠিয়ে দেন তা হলে খুব কাজে লাগবে।’
‘কাজের লোক তবু পাওয়া যায় কিন্তু রান্নার লোক দিল্লিতে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এখানকার লোকের হাতের রান্না তোমরা কেউ খেতে পারবে না। এক, কারও বাড়ি থেকে কোনও বাঙালি রাঁধুনি যদি কাজ ছেড়ে দেয় তা হলেই তাকে—। দেখি।’
মা এবং ছেলে নেমে গেল। দীপাবলী ওদের যাওয়া দেখল। অলোক তার সঙ্গে একটিও কথা বলেনি আর। চায়ের কাপ-ডিশ ধুয়ে মনে হল পেটে চিনচিনে ব্যথা করছে। এটা যে খিদের জন্যে তা বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। মনে পড়ল ছেলেবেলায় ঠাকুমাকে দেখেছে নানান তিথিতে সারাদিন না খেয়ে থাকতে। কখনও সেজন্যে তাঁর কষ্ট হচ্ছে বলে মনে হয়নি। বরং না খেয়ে থাকাটাই তাঁর কাছে বেশ আনন্দের ছিল। আর সে মাত্র দশ ঘণ্টা না খেয়েই পেটে চিনচিনে ব্যথা বাধিয়ে বসল।
দীপাবলী গোটা তিনেক পাউরুটির পিস টোস্ট করে মাখন মাখিয়ে খেয়ে নিল। পেটে জল যাওয়ামাত্র অস্বস্তি কাটল। তারপর সে চিঠি লিখতে বসল। বিয়ের পর সমস্ত খবর জানিয়ে লেখা চিঠিটা কেন ঠাকুমা পায়নি তা বুঝতে পারছিল না সে। চিঠি না পৌঁছোনোর কোনও কারণ নেই, তবে কি সেটা ঠাকুমার হাতে কেউ দেয়নি? বিবাহের আগে, বিবাহ এবং তার পরবর্তীকালের কথা যতটুকু লেখা যায় ততটুকু জানিয়ে সে চিঠি শেষ করল। খামে ভরে ঠিক করল এবার রেজিষ্ট্রি করে পাঠাবে যাতে আর মাঝপথে উধাও হয়ে না যায়। কী ব্যাপারে তাকে ঠাকুমার দরকার তা জানার কৌতূহল বাড়ছিল। খাম বন্ধ করার পরে চুপচাপ বসে রইল দীপাবলী। তা হলে অলোকদের বাড়ি থেকে তার সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছিল। এতে কোনও অন্যায় নেই। একটা অজানা অচেনা মেয়ের কথা শুনে তাকে ঘরের বউ করে নিতে কেউ চাইবে না। সে যদি মা হত তবে একই কাজ করত। কিন্তু এটা নিশ্চয়ই অলোকের অজানা ছিল না। আর অলোক ব্যাপারটা ঘুণাক্ষরেও তাকে জানায়নি কেন?
নিশ্বাস ফেলল দীপাবলী, জোরেই, অজান্তে। হঠাৎ তার মনে হল যদি ওরা খোঁজ নিয়ে জানত সে যা বলেছে তার সঙ্গে পাওয়া খবরের কোনও মিল নেই, তা হলে কী করত? অলোক কি তার সমস্ত ভালবাসা এক মুহূর্তে বর্জন করত? যতই সত্যি হোক যে-কেউ খোঁজখবর না নিয়ে বিয়ের দিকে এগোয় না। তবু দীপাবলীর মনে হচ্ছিল তার একটা পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আর এই ভাবনাটাই একটা খারাপ লাগা তৈরি করছিল।
অলোক এল ঘণ্টা দুয়েক বাদে। দরজা খুলে দিতেই প্রায় স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞাসা করল, ‘কিছু খেয়েছ?’
‘হুঁ।’
‘কী?’
‘খেয়েছি।’
অলোকের হাতে বড় একটা প্যাকেট। সেটি থেকে একটা বাক্স বের করে ডাইনিং টেবিলে রাখল, ‘এটায় ফিশফিঙ্গার, বোনলেস চিকেন, কাবাব আর বিরিয়ানি আছে। ফিশ ফিঙ্গারটা এখন খেয়ে নেওয়া যেতে পারে।’
‘এভাবে কতদিন চলবে?’
‘দেখা যাক। শোনো, উই হ্যাভ এনাফ। আর কোনও তর্ক নয়।’
অলোক বাথরুমে ঢুকে গেল। দীপাবলী বড় প্লেটে ফিশফিঙ্গার ঢেলে বাকিগুলো রান্নাঘরে নিয়ে গেল। বড় প্যাকেটটা তখনও বেশ ফোলা। সেটায় হাত দিতে একটা ভোদকার বোতল বেরিয়ে এল, সঙ্গে স্কোয়াশ। দীপাবলী অবাক হল। বাড়িতে বসে মদ্যপান কখনও হয়নি। তা হলে কি অলোক বন্ধুদের আসতে বলেছে?
অলোক তাজা হয়ে বেরিয়ে বলল, ‘বারান্দায় বসব। ভাল হাওয়া আছে ওখানে। ছোট টেবিলটা নিয়ে যাচ্ছি তুমি জলের ব্যবস্থা করো।’
আয়োজন সম্পূর্ণ হল। দীপাবলী চুপচাপ বসেছিল। গ্লাস আনার সময় অলোক জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি খাবে না?’
মাথা নেড়ে না বলল দীপাবলী।
অলোক কাঁধ নাচাল, ‘একা খেতে খারাপ লাগে। না খাও, একটা হোল্ড করতে তো পারো। আমি তোমাকে সাহেব বিবি গোলামের ছোট বউঠানের মতো নেশা করতে বলছি না!’
দীপাবলী আচমকা নিজেকে পালটে ফেলল। সোজা দাঁড়িয়ে বলল, ‘তুমি বসো, আমি নিয়ে আসছি।’ ওর পরিবর্তনে অলোকের চোখেও বিস্ময় ফুটল।
স্কোয়াশ মেশানো ভদকায় চুমুক দিল দীপাবলী। স্কোয়াশের গন্ধ আড়াল করে রেখেছে অ্যালকোহলকে। তার যখন একটা গ্লাস শেষ হল তখন অলোক চতুর্থটি ভরেছে। ফিশফিঙ্গারের প্লেট খালি। হঠাৎ অলোক বলল, ‘দীপা, ইউ বিলিভ মি, দুপুরে ওসব কথা বলতে চাইনি আমি। বলার জন্যে মনে কোনও প্রিপারেশন ছিল না। হঠাৎ বলে ফেললাম। আই অ্যাম সরি।’
‘ঠিক আছে। এবার কি খাবার গরম করব?’ দীপাবলী উঠে দাঁড়াল।
‘প্লিজ।’ চুমুক দিল অলোক, ‘এখন কি আমি একটা রিওয়ার্ড পেতে পারি?’
‘না।’ দীপাবলী ধীরে ধীরে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।
অলোক সেদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করল, ‘তুমি মাতালদের ঘেন্না করো। বাট আই অ্যাম নট ড্রাঙ্ক! তাই না?’ কথাগুলো দীপাবলীর কাছে পৌঁছাল না।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন