সমরেশ মজুমদার
আজকের সকালটা একদম অন্য চেহারা নিয়ে এল।
সূর্যদেব নেই। এরকম বিস্ময়কর ব্যাপার এখানে সচরাচর ঘটে না। যদিও মাসের নাম শ্রাবণ তবু অনেক বছর এমনটা কেউ দ্যাখেনি। সতীশবাবু পর্যন্ত অফিসে এসে বললেন, ‘কী হল বলুন তো। প্রলয় ট্রলয় হচ্ছে নাকি?’
দীপাবলী অফিসের সামনে মাঠে দাঁড়িয়েছিল। আকাশে মেঘেরা নাচতে নাচতে যাচ্ছে। বলা যায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার স্বস্তি পাচ্ছে না। যেন ভুল পথে চলে এসে বড় বেকায়দায় পড়েছে। অথচ সেই কারণেই মাটির চেহারা বদলে গিয়েছে এর মধ্যে। মেঘের ছায়ায় মাখামাখি মাটিদের বড় মোলায়েম লাগছে। মহাদেববাবু বললেন, ‘নাইনটিন ফিফটি টু-তে এইসময় বেশ বৃষ্টি হয়েছিল।’
বংশী বলল, ‘আসুক আসুক, প্রাণভর ঢালুক। হা ভগবান, শেষপর্যন্ত দয়া হল তোমার!’ লোকটার গলায় আনন্দ কলবল করছিল।
সতীশবাবু বললেন, ‘দাঁড়া বংশী। দর্শন দিয়ে বিদায় নেবে কিনা কে জানে। যতক্ষণ না বর্ষায় ততক্ষণ বিশ্বাস নেই।’
কয়েকজন মানুষ মাঠের বুকে দাঁড়িয়ে চাতকের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। শুধু এই ক’জন মানুষ নয়, দীপাবলী জানে আজ এখন এই জেলায় প্রায় প্রতিটি মানুষ মেঘের স্পর্শ পেতে চাইছে। এখন মেঘের রং শ্লেটের মতো। সবাই চাইছে তাতে আরও কালো রঙের পোঁচ লাগুক।
নেখালির মানুষ এখন জলের জন্যে আর দূরান্তে যায় না। কুয়ো হয়ে গিয়েছে তাদের জন্যে। নলকূপ বসেছে। তাতে জল উঠছে। সেই জলে একটু কষাটে ভাব, তবু জল তো। নলকূপ বসেছে অফিসের সামনে, বাবুদের পাড়ায়। সামনের বছর বোঝা যাবে বছরের সব সময় তাতে জল থাকবে কিনা।
সতীশবাবু বললেন, ‘এরকম মেঘ যদি বছরের সাতটা দিনও আসত আর ঝরে পড়ত তা হলে কুয়োগুলো কখনওই শুকোত না।’
মেঘ দেখতে সত্যি বড় আরাম হচ্ছিল তবু দীপাবলী অফিসে ফিরে গেল। তার দেখাদেখি সবাই। বৃষ্টি কখন নামবে কেউ জানে না। তার জন্যে অপেক্ষা করে কাজ নষ্ট করার কোনও মানে নেই।
চেয়ারে বসে খোলা জানলার দিকে তাকাতেই এক ঝলক শীতল হাওয়া ছুটে এল। দীপাবলীর হঠাৎ মনে হল সমস্ত চরাচর যেন কাঁটা হয়ে আছে। কেমন প্রেমিকা প্রেমিকা ভাব। বড় আদুরে। কাজ করতে বসেও কাজে মন আসছে না। এখন তার বুকে কোনও গোলমাল নেই। নেখালির মানুষগুলোও শান্ত। নলকূপের জলে চাষ হয় না। যদি কখনও বিদ্যুৎ যায় ওখানে তা হলে অবস্থাটা পালটাবে। শুধু পানীয় জল দিয়ে পেট ভরে না। ওদের অবস্থার কোনও পরিবর্তন হল না। অথচ জল পেয়েই লোকগুলো এমন বিগলিত যেন সব পাওয়া হয়ে গিয়েছে। মানুষ কত অল্পে সন্তুষ্ট হয় তা এদের না দেখলে বোঝা যাবে না।
অর্জন নায়েক অনেকদিন এদিকে আসেনি। অথচ সেইসব কাজের দিনে, যখন প্রতি নলকূপ যত্ন করে বসানোর কথা, প্রতিটি কুয়ো পাকাপোক্ত তৈরি করতে হবে, তখন অর্জুন ছিল খুবই বিনীত৷ এ-তল্লাটের সমস্ত সরকারি কাজের ঠিকা তার জন্যে অপেক্ষা করছে কিন্তু সেটা বোঝাবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি। এমনকী সতীশবাবু পর্যন্ত বলেছেন, ‘মেমসাহেব, আপনার কাছে এলে অর্জুনবাবু অন্য মানুষ হয়ে যান।’
‘কীরকম?’ মজা লেগেছিল দীপাবলীর।
‘অন্য সময় লোকটা দু’হাতে মাথা কাটে। পান থেকে চুন খসলে আর রক্ষে নেই নীতির বাদবিচার নেই। স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না। নিজের লাভের জন্যে কত কুকর্ম করেছে তার ঠিক নেই। কিন্তু আপনার সামনে এলে যেন ওর চেহারা বদলে যায়।’
‘কেন বলুন তো?’
‘বুঝতে পারি না।’
‘হয়তো অন্য মতলব আছে।’
‘না মেমসাহেব। পেটে মতলব চেপে এত দিন অপেক্ষা করার পাত্র অর্জুনবাবু নয়। এর মধ্যে ঝুলি থেকে সাপ ঠিক ফণা তুলত।’
‘তা হলে?’
‘ওইটেই তো হয়েছে মুশকিল। বোঝা যাচ্ছে না।’
সত্যি বোঝা যায়নি। এবং ওর ঠিকাদারি লক্ষ করে সতীশবাবু জানিয়েছিলেন যে মনে হচ্ছে তার হিসেব সব বদলে যাবে। গিয়েছিলও। অর্জুন নাকি একটি পয়সাও লাভ করেনি। কাজ যা হবার তার দ্বিগুণ হয়েছে বললে হয়তো বেশি বলা হবে কিন্তু এতটা হবার কথা ছিল না। দীপাবলী অর্জুনকে কিছু বলেনি। কিন্তু মনে হয়েছিল বলা দরকার। বাড়তি খরচ হলে সে নিশ্চয় ছাড়ত না। অর্জুনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায়নি সে।
ওইসব কাজকর্ম হয়ে যাওয়ার পর অর্জুন আর এ-তল্লাটে আসেই না। ব্যাপারটা ক্রমশ দীপাবলীর পক্ষে অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোখের সামনে ওইরকম চরিত্রের লোক থাকলে তার গতিবিধির আন্দাজ করা যায়। চোখের আড়ালে কী ফন্দি আঁটছে তা ঠাওর করা মুশকিল।
এইসময় চিৎকার উঠল। চমকে বাইরে তাকাল সে। বৃষ্টি হয়েছে। বেশ বড় বড় ফোঁটা। পাতাবিহীন শুকনো গাছটা যেন আচমকা নড়ে উঠল প্রথম জলের স্পর্শ পেয়ে। আকাশ নেমে আসছে পৃথিবীতে। দীপাবলী উঠে পড়ল।
বাঙালির চরিত্র অধিকাংশ সময় তার বিপরীত আচরণ করে। করার মুহুর্তেও সে নিঃসাড় থাকে। যাকে সে চায় অথবা তীব্র কামনা করে তাকে পাওয়ার সময় আচমকাই তার ভেতরে এক দর্শক গজিয়ে ওঠে যে নির্লিপ্ত হয়ে দেখতেই ভালবাসে। কিংবা নিবিড় করে পাওয়ার সুখ বাঙালি নিতে জানে না বলেই সবসময় একটা দূরত্ব রাখতে চায়। অথচ বাঙালির আকাঙক্ষার শেষ নেই।
বাবুদের ঘরে ঢুকে এইসব কথা এক লহমায় দীপাবলীর মাথায় খেলে গেল। সবাই অবাক বিস্ময়ে জানলা বন্ধ করে শুধু দরজা দিয়ে বৃষ্টি দেখছে। যে-বৃষ্টির জন্যে বছরের পর বছর কাতর প্রার্থনা তা যখন এল তখন ঘরের নিরাপদ জায়গায় নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে। সে জিজ্ঞাসা না করে পারল না, ‘কী ব্যাপার, আপনারা ভিজবেন না?’
সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। দীপাবলী বলল, ‘এরকম বৃষ্টি আবার কত বছর বাদে হবে কে জানে। ভিজুন, গায়ে মাথায় বৃষ্টি মাখুন।’
বংশী বলল, ‘ওরে ব্বাবা, বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার জ্বর হয়।’
দীপাবলী দরজার সামনে দাঁড়াল, ঝড় নেই, কিন্তু বৃষ্টির দাপট বেশ। চরাচর সাদা হয়ে আছে। একটু হিমবাতাস বৃষ্টির গন্ধ চুরি করে আসছে মাঝে মাঝে। দীপাবলী বলল, ‘সতীশবাবু, আপনার সঙ্গে তো ছাতা আছে?’
‘হ্যাঁ মেমসাহেব।’
‘দাঁড়ান, আমি ভেতর থেকে ছাতা নিয়ে আসছি। একবার আশেপাশে ঘুরে দেখে আসি চলুন।’ জবাবের জন্যে অপেক্ষা না করে সে ভেতরে চলে এল। শোওয়ার ঘরে পৌঁছে তিরিকে ডাকতে গিয়ে সে থমকে দাঁড়াল। উঠোনে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে মুখ ওপরের দিকে তুলে তিরি বৃষ্টিতে স্নান করছে। এর মধ্যেই ওর শাড়ি ভিজে গেছে। জল গড়াচ্ছে সমস্ত শরীর বেয়ে। মেয়েটাকে এইসময় দারুণ দেখাচ্ছে। দীপাবলীর মনে হল তিরির বৃষ্টিভেজা আনন্দের থেকে বৃষ্টির তিরিকে উপভোগ ঢের বেশি আরামের। বারান্দা থেকে ছাতা নিয়ে যেতেই তিরির নজর পড়ল তার ওপরে। সেখানে দাঁড়িয়েই চিৎকার করে বলল, ‘দিদি, কুয়োর জল বাড়ছে।’
‘কুয়োর জল নয় বৃষ্টির জল। একটা কিছু দিয়ে কুয়োর মুখ ঢেকে রাখ না হলে পরে ঘোলা হয়ে যাবে, খাওয়া যাবে না।’
‘ওমা, তাই তো!’ মেয়েটা ছুটল।
ছাতা মাথায় খালি পায়ে মাঠে নেমেই বোঝা গেল মাটি এর মধ্যে গলতে আরম্ভ করেছে। মাসের পর মাস পুড়ে খাক হয়ে থাকা মাটি একটু জলের আদর পেতেই নরম হতে শুরু করেছে। সামলে পা ফেলতে হচ্ছে।
ছাতিতে টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটা, সতীশবাবু বললেন, ‘কেনার পর থেকে এতগুলো বছর গেল কিন্তু আমার ছাতি এই প্রথম জলে ভিজল। রোদে রং নষ্ট হয়ে গিয়েছে কিন্তু কাপড় মজবুত আছে।’
‘খুব অবাক করে দেওয়া বৃষ্টি, বলুন।’ পাশে হাঁটছিল দীপাবলী। বৃষ্টি তার ছাতাকে এখন তোয়াক্কা করছে না তেমন। এরই মধ্যে ডানদিকটা ভিজেছে বেশ।
‘সত্যি মেমসাহেব। প্রকৃতি পালটে গেল নাকি।’
‘শুনুন।’ বৃষ্টির জল হাতে নিয়ে মুখে বোলাল দীপাবলী, ‘আপনি সেদিন আমাকে মা বলেছিলেন, আমার খুব ভাল লেগেছিল। মেমসাহেব ম্যাডাম শব্দদুটো আর আপনার মুখে শুনতে চাই না।’
‘সেদিন মন অবশ ছিল, বলে ফেলেছিলাম।’
‘এবার থেকে মনকে বশে এনে বলবেন।’ দীপাবলী দাঁড়িয়ে গেল। সেই ন্যাড়া গাছটা এখন ভিজে চুপসে গিয়েছে। সে লক্ষ করল জল ঝরছে কিন্তু মাটির ওপর জমছে না! সতীশবাবুকে সেটা বলতেই তিনি হাসলেন।
‘হাসলেন যে?’
‘মা, একটা গ্রাম্য প্রবাদের কথা মনে পড়ে গেল।’
‘কী প্রবাদ?’
‘আপনার সামনে বলতে সংকোচ হবে। বলাও ঠিক হবে না।’
‘আপনি অশ্লীল কথা বলতে পারেন বলে আমার মনে হয় না।’
‘না না অশ্লীল নয়। তবে আমাদের গ্রাম্যজীবনের অনেক কিছুই খুব মোটা দাগের ছিল, জীবন থেকে নিয়েই বলা হত অনেক কথা যা শহরের মানুষের কানে অশ্লীল বলে ঠেকতে পারে।’
ততক্ষণে বাঁ দিকটাও ভিজতে আরম্ভ করেছে। এমন মোলায়েম আরামে দীপাবলী একটু উদার হল, ‘ঠিক আছে, গৌরচন্দ্রিকা বাদ দিন, আমি কিছু মনে করব না।’
আবার হাঁটতে শুরু করলেন সতীশবাবু। দূরে কোথাও সমবেত উল্লাসধ্বনি ভেসে আসছে। তিনি সে দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘নতুন বিয়ের পর দ্বিরাগমনে মেয়ে ফিরে এলে পাড়ার বয়স্কা মহিলারা জিজ্ঞাসা করেন, কী রে বিয়ের জল গায়ে পড়েছে? মেয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে। কেউ বলে, কিন্তু বুঝতে পারা যাচ্ছে না তো! সঙ্গে সঙ্গে কোনও বয়স্কা মুখ ঝামটা দেন, গনগনে উনুনে এক হাতা জল পড়লে বুঝতে পারো তোমরা? তা আমার এখন এই মাটিতে বৃষ্টি পড়া দেখে এইসব কথা মনে পড়ছিল। কত বছরের শুকিয়ে থাকা মাটির বুক তো, এখন যা পাচ্ছে শুষে নিচ্ছে। সাত দিন ধরে এমন বৃষ্টি হলে হয়তো সে ভরাট হবে, জল জমবে পায়ের পাতায়।’ সতীশবাবু ধীরে ধীরে বলে গেলেন।
দীপাবলী মুখ ফিরিয়ে নিল। হ্যাঁ, অবশ্যই ইঙ্গিতবহ কথাবার্তা কিন্তু সতীশবাবুর বলার ধরনে তা মোটেই অশ্লীল বলে মনে হল না। কিন্তু এই লোকটির বুকে যে এত রস আছে তা সে কখনওই আন্দাজ করতে পারেনি। স্ত্রী নেই, তাঁর কাজকর্ম কবে শেষ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু নিজের সিটে বসে কাজ না থাকলে মানুষটার মাথা নীচের দিকে ঢলে থাকে। অথচ ভেতরে ভেতরে উনি একটি মরূদ্যান বহন করে যাচ্ছেন।
এখন ছাতা মাথার ওপর ধরা বটে কিন্তু শাড়ি জামা আর শুকনো নেই। সতীশবাবুরও সেই দশা। ওরা হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা রাস্তা চলে এসেছিল। হাটতলার বিপরীত দিকে ন্যাড়া মাঠের ধার দিয়ে যেতে যেতে দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, ‘এইসব জমি কার সতীশবাবু?’
‘সিলিং তৈরি হবার পর বেনামে রয়েছে। বলা হয়েছে ধানিজমি কিন্তু জীবনে ধান হয়নি। বেনামীদের কাউকে চিনবেন না, অর্জুনবাবু জানেন সব।’
‘অর্থাৎ অর্জুন নায়েকের জমি?’
‘লোকে তো তাই বলে।’
‘একবার সবাইকে ডেকে পাঠান তো!’
‘কাদের?’
‘ওই বেনামীদের।’
‘চলে আসবে। দুটো টাকা পেলে কাঁড়ি কাঁড়ি মিথ্যে কথা বলতে এখানকার অনেক লোক লাইন দেবে।
‘এরকম বৃষ্টি হলে এইসব জমিতে ধান না হোক অন্য কিছু চাষ শুরু করতে পারবে অর্জুনবাবু। কিন্তু করবে কি?’
সতীশবাবু জবাব দিলেন না।
ওরা একসময় নেখালির কাছে পৌঁছে গেল। এখন বৃষ্টির তেজ নেই বললেই হয়। পড়ছে তবে তা না পড়ার মতনই। মেঘ পাতলা হচ্ছে আকাশে। কিন্তু ওদের দেখতে পেয়েই চিৎকার উঠল। সতীশবাবু বললেন, ‘আরে। এরা সব এতক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজছিল!’
দীপাবলীও তাই দেখল। নেখালির প্রায় প্রতিটি সুস্থ মানুষ ভিজে চুপসে গ্রামের মাঝখানে বসে ছিল। তাদের দেখতে পেয়েই চিৎকার করে হাত নাড়তে লাগল। একটি প্রৌঢ়া ছুটে এসে হঠাৎ সাষ্টাঙ্গে পড়ে গেল দীপাবলীর সামনে, পড়ে গিয়ে বলতে লাগল, ‘তুমি হলে দেবী, সাক্ষাৎ মা। তুমি প্রথমে আমাদের মাটি থেকে জল দিলে তারপর আকাশ থেকে ঢাললে। হে মা, আমরা না জেনে কত অপরাধ করেছি, আমাদের ক্ষমা করো।’
যা ছিল একটি মানুষের আর্তি তা ছড়িয়ে পড়ল অনেকের মধ্যে। বিশেষ করে যারা বয়স্ক তারা এসে লুটিয়ে পড়ল দীপাবলীর সামনে। ভেজা কাপড় সেঁটে আছে শরীরে, হাতে ছাতা, প্রচণ্ড অস্বস্তিতে পড়ল সে। গলা তুলে বলল, ‘আরে তোমরা করছ কী?’
কিন্তু মানুষগুলো যেন নেশাগ্রস্ত। সাক্ষাৎ দেবীর দর্শন পেয়ে এখন দিশেহারা। এই আবিষ্কারের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ছে মুখে মুখে। কেউ একজন চিৎকার করল, ‘জয় মেমসাব কি জয়।’ সঙ্গে সঙ্গে প্রতিধ্বনিত হল, ‘মেমসাব কি জয়।’
সতীশবাবু লক্ষ করছিলেন চুপচাপ। এখন পর্যন্ত কেউ দীপাবলীকে স্পর্শ করেনি। কিন্তু ব্যাপারটা ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি চিৎকার করলেন, ‘শোনো সবাই, মেমসাহেব কুয়ো নলকূপ খুঁড়ে দিয়েছেন বটে কিন্তু বৃষ্টি দিয়েছেন ভগবান, এর পেছনে মেমসাহেবের কোনও হাত নেই।’
যে-প্রৌঢ়া মাটিতে প্রথমে পড়েছিল সে এবার সোজা হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আলবত আছে। তুমি কী জানো বুড়ো! এই গ্রামে বউ হয়ে এসেছি এত বছর কখনও এমন বৃষ্টি দেখিনি। এটা এমনি এমনি হল বললে বিশ্বাস করব? মেমসাহেব মাটি থেকে জল তুলেছেন বলে আকাশ থেকে বৃষ্টি এল। মেমসাহেব, তুমি আমাদের দেবী।’
দেবী, দেবী, দেবী। পাগলের মতো শব্দটা উচ্চারিত হল মুখে মুখে। দীপাবলীর সমস্ত শরীরে শিহরন এল। সে বুঝতে পারছিল না কী করবে! সতীশবাবু বললেন গলা চড়িয়ে, ‘ঠিক আছে, তোমাদের কথা মানলাম। কিন্তু মেমসাহেব দেখতে এসেছেন যে বৃষ্টি পেয়ে তোমরা কী করেছ?’
সঙ্গে সঙ্গে দেখাবার ধুম পড়ে গেল। যেসব জায়গায় মাটিতে গর্ত খোঁড়া ছিল আগে থেকেই সেখানে কিছু একটা বিছিয়ে দিয়ে মাটি আড়াল করে বৃষ্টির জল ধরার চেষ্টা হয়েছে। যে-যার ঘটিবাটি আকাশের তলায় রেখে বৃষ্টির জল সঞ্চয় করেছে। কুয়োগুলো এখন আধা ভরতি।
এসব দেখা হয়ে গেলে দীপাবলী বলল, ‘দ্যাখো ভাই, আজ বৃষ্টি হল, কাল না-ও হতে পারে। এখনই যে যার মাটিতে কিছু বীজ লাগিয়ে দাও। অবশ্য রোদ উঠলে সেগুলোকে বাঁচানো মুশকিল হবে কিন্তু কে বলতে পারে কিছুদিন আকাশে মেঘ থাকবে না। তাই না?’
এক বুড়ো বলল, ‘ঠিক কথা। মিঠাই চলে গিয়েছে অর্জুনবাবুর বাড়িতে বীজ আনতে। আমাদের তো ওসব কিছু নেই। অর্জুনবাবু দিলে না হয় লাগিয়ে দেব মাটিতে। আমরা তাই মিঠাইকে পাঠিয়েছি। ও বললে অর্জুনবাবু না বলবে না।’
‘বাঃ। তোমরা যে নিজে থেকে পাঠিয়েছ তাতে খুশি হলাম। সতীশবাবু, আমরা কোনও সাহায্য করতে পারি?’
সতীশবাবু বললেন, ‘সেই অ্যারেঞ্জমেন্ট নেই, তবে এস ডি ও সাহেবের ওখানে গেলে কিছু একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হয়ে যাবে।’
এরই মধ্যে গ্রামের কিছু কিছু অংশ কাদাকাদা হয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ সেই কাদা তুলে ভাঙা দেওয়ালে জুড়ে দিচ্ছে। মাটির চেহারাই বদলে গিয়েছে জল পেয়ে। উৎসব লেগে গিয়েছে গ্রামে। শুধু একটা গ্রাম নয়, এই জেলার শুকিয়ে থাকা সমস্ত গ্রামেই বোধহয় আজ এই মুহূর্তে একই ছবি দেখা যাবে।
বৃষ্টি থামল। সবাই আকাশের দিকে তাকাচ্ছে। আবার সেই আতঙ্কের সূর্যটা এখনই না হাজির হয়। কিন্তু মেঘ আছে। অবশ্য তাদের চলার গতি বেড়েছে। দীপাবলীর মনে পড়ল, জলপাইগুড়ির মানুষ আকাশে মেঘ দেখলে আতঙ্কিত হত। মেঘ কাটাবার জন্যে ঝিনুক পুঁতত মাটিতে। মেঘ মানেই বন্যা, বিপর্যয়। আর ঠিক তার বিপরীত ছবি এখানে। একই পৃথিবীর মানুষের চাওয়া কেমন দু’রকম হয়ে যায়। সতীশবাবু বললেন, ‘মা, এবার ফিরে চলুন।’
দীপাবলীকে ঘিরে ওদের উচ্ছ্বাসের প্রাবল্য এখন কমেছে। যদিও কিছু মানুষ ওদের পেছন পেছন ঘুরছে। দীপাবলী বলল, ‘আপনি ফিরে গিয়েই কিছু ব্লিচিং পাউডার পাঠিয়ে দেবেন যাতে কুয়োগুলোর জল ঠিক থাকে। বৃষ্টির জল ওখানে বেশ জমে গিয়েছে।’ সতীশবাবু ঘাড় নাড়লেন।
ফেরার মুখে একটি বুড়ি ছুটে এল। তার অঙ্গের কাপড় শতছিন্ন। মুখে অজস্র ভাঁজ। বুড়ির হাতে একটা টিনের গ্লাসে তরল পদার্থ আর অন্য হাতে একটা গুড়ের বাতাসা। পথ আগলে বলল, ‘মা, তুই এটুকু খেয়ে যা।’
দীপাবলী সতীশবাবুর দিকে তাকাল। সেটা বুঝতে পেরেই বুড়ি বলল, ‘তুই দেবী, আমাদের ওপর এত কৃপা করলি, আমি তোকে খালি মুখে চলে যেতে দেব না। এই একটা বাতাসা আমার ঘরে ছিল আর এইটে আমি নিজের হাতে তৈরি করেছি।’
দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, ‘জিনিসটা কী?’
‘পচাই। খেলে গায়ে বল পাবি।’
‘পচাই বানাচ্ছ কী করে?’
‘ওই মিঠাই এনে দেয়।’ বুড়ি গলা নামিয়ে বলে, ‘আমার হাতের পচাই খেতে খুব ভালবাসে অর্জনবাবু। ওর দয়ায় বেঁচে আছি।’
‘কিন্তু আমি তো এসব খাই না।’
‘আমি জানি। তোদের মতো মেয়েছেলে এসব খায় না। কিন্তু একটু মুখ দিয়ে দ্যাখ, ভাল লাগবে খুব।’ বুড়ি ফোকলা দাঁতে হাসল।
দীপাবলী বুড়ির হাত থেকে বাতাসাটা নিল, ‘এত করে বলছ যখন তখন আমি বাতাসাটা নিলাম।’ সেটা মুখে দেওয়ামাত্র শরীর গুলিয়ে উঠল। বিশ্রী স্বাদ এবং তার চেয়ে খারাপ গন্ধ। অথচ মুখ থেকে বের করে দেওয়াও যাচ্ছে না। কোনওবকমে সেটা পেটে চালান করে সে পা বাড়াল। গ্রামের বাইরে পোঁছে তার মনে পড়ে গেল, ‘আঃ, একদম ভুলে গিয়েছিলাম।’
‘কী মা?’ সতীশবাবু জানতে চাইলেন।
‘ওই মাতলি মেয়েটাকে দেখতে চেয়েছিলাম।’
‘ও। তা মাতলি কি এখন গ্রামে আছে? ফিরে যাবেন?’
‘না। চলুন।’
চুপচাপ কিছুক্ষণ হাঁটার পর দীপাবলী বলল, ‘আচ্ছা সতীশবাবু, আপনার কখনও মনে হয়েছে সরকার কেন আমাদের এখানে মাইনে দিয়ে রেখেছেন? কতটুকু কাজ করতে হয় আমাদের? কতটুকু কাজ করার ক্ষমতা আমাদের দেওয়া হয়েছে? চার পাশে এত সমস্যা অথচ আমরা কিছুই করতে পারি না।’
সতীশবাবু মাথা নাড়লেন, ‘কথাটা ঠিক মা। তবে দেখুন, আপনার আগে যেসব অফিসার এসেছিলেন তাঁদের মাথাতেও কাজ করার কোনও ইচ্ছে ছিল না। নইলে তাঁরাও তো চেষ্টা করতেন ওদের জন্যে একটু পানীয় জলের ব্যবস্থা করার।’
‘হ্যাঁ। সেটাই তো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
নেখালিতে কুয়ো নলকূপ বসার পর কাছাকাছি আরও পাঁচটা গ্রামের মানুষ এসে দাবি জানিয়েছিল, তাদেরও সমান সুবিধে চাই। নেখালির মানুষ পাবে আর তারা কী দোষ করল। মন্ত্রীমশাইকে এনে শুধু নেখালি দেখানো হল কেন? তাদের গ্রামেও তো নিয়ে যাওয়া যেত। সতীশবাবু ওদের বোঝাতে চেয়েছিলেন, সরকার বাহাদুর যে টাকা দিয়েছেন তাতে নেখালির বাইরের গ্রামগুলোতেও একটা করে নলকূপ বসেছে। অতএব কাউকে বঞ্চিত করার ইচ্ছে তাঁদের ছিল না। টাকা বেশি পাওয়া গেলে সমানভাবে ব্যবস্থা করা যেত। মন্ত্রীমশাই দেখতে চেয়েছিলেন বলে তাঁকে নেখালিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লোকগুলো অবশ্যই এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হয়নি। কেউ একজন চেঁচিয়ে বলেছিল, নেখালির মেয়ে মেমসাহেবের বাড়িতে কাজ করে বলেই উনি ওই গ্রামকে বিশেষ সুবিধে দিয়েছেন। এটা অন্যায় খুব অন্যায়।
লোকগুলো দাবি জানিয়েছিল কিন্তু মারমুখী হয়নি। ওদের সেই অভ্যেস বা ক্ষমতা ছিল না। সতীশবাবু অবশ্য সন্দেহ করেছিলেন ওদের এই আসার পেছনে অন্য কারও হাত আছে। মুখে নামটা উচ্চারণ না করলেও এখন তো বুঝতে বাকি নেই। জেলায় এই তল্লাটে অর্জুন নায়েক যেন বাতাসের মতো জড়িয়ে আছে সর্বত্র। কোনও কিছুই তাকে বাদ দিয়ে হয় না। এমনকী এখানে যে প্রাইমারি স্কুল রয়েছে পদাধিকার বলে সে তার প্রেসিডেন্ট কিন্তু সেক্রেটারি অর্জুন নায়েক। যদিও আজ পর্যন্ত সেই স্কুলে কোনও মিটিং হয়নি। দু’জন মাস্টার প্রায় ছাত্রবিহীন অবস্থায় স্কুল চালাচ্ছেন। কোনওরকম সরকারি সাহায্য নিয়মিত তাঁরা পান না। ওঁদের চেয়ে সত্যসাধন মাস্টারের অবস্থা ঢের ভাল ছিল। তিনি অন্তত কিছু সচ্ছল অভিভাবকের ছেলেমেয়েকে ছাত্র হিসেবে পেয়েছিলেন।
দীপাবলী সতীশবাবুকে বলল, ‘চলুন, ওদিকের গ্রামটা দেখে আসি।’
‘এখান থেকে অন্তত ক্রোশ দুই হবে।’
“আপনার কষ্ট হবে?’
‘আপনার হবে। অভ্যেস নেই তো।’
‘ঠিক আছে। হোক।’
যাৱা চিনত তারা এল, যারা চিনত না সতীশবাবুকে সঙ্গে দেখে চিনে ফেলল। এই ব্লকে একজন মহিলা অফিসার আছেন এ-খবর তো সবার জানা। গ্রামের মেয়েরা ড্যাবডেবিয়ে দেখছে তাকে। দীপাবলীর মনে হল নেখালির মানুষদের চেয়ে এদের অবস্থা ভাল। সতীশবাবু বললেন, ‘এ গ্রামের কেউ-না-কেউ হয় হাটতলা নয় শহরে গঞ্জে চাকরি করছে। তফাত এই কারণেই।’
বৃষ্টির কারণে লোকগুলো খুশি। কিন্তু তারা দেখাল সদ্য বসানো টিউবয়েল টিপলেও জল আসছে না। প্রথম দিন ঘোলা জল বেরিয়েছিল। দ্বিতীয় দিনে পরিষ্কার। সাত দিনের মাথায় সেই যে বিগডাল আর কাজ করছে না। দীপাবলী প্রশ্ন করল, ‘কল খারাপ হয়েছে খবরটা দাওনি কেন?’
একজন বলল, ‘দিয়েছিলাম, কাজ হয়নি।’
‘আশ্চর্য! কাকে দিয়েছিলে? সতীশবাবু, আমায় বলেননি কেন?’
সতীশবাবু সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করলেন লোকটাকে, ‘আমাদের অফিসে গিয়েছিলি?’
লোকটা মাথা নাড়ল, ‘না। অর্জুনবাবুর লোক কল বসিয়েছে তাই তাকেই খবর দিয়েছিলাম। তিনি বলে দিয়েছেন এখন কিছু হবে না।’
হঠাৎ মাথা গরম হয়ে গেল দীপাবলীর। এদের কিছু বলে অবশ্য লাভ নেই। অর্জুনের সঙ্গেই কথা বলবে সে। লোকটা যেন রাজার মতো এই অঞ্চল দখল করে বসে আছে। সতীশবাবু বললেন, ‘কল বসিয়েছে সরকার। অর্জুনবাবু ঠিকা নিয়েছিলেন। আমরা না বললে তিনি সারাবেন কী করে? যখন কিছু সমস্যা হবে তখন অফিসে গিয়ে বলবি তোরা। এ হে, ঠিক সময়ে জানালে এতদিনে কল ঠিক হয়ে যেত তোদের।’
গ্রামের মানুষ অবশ্য একটি কলের ওপর নির্ভর করে না। দীপাবলী দেখল অন্তত চারটে গভীর কুয়ো আছে। সেগুলোর গঠন বেশ মজবুত। জানা গেল অর্জুনবাবুর বাবার আমলে ওগুলো তৈরি হয়েছিল।
ভিজে যাওয়া শাড়ি এরই মধ্যে প্রায় শুকিয়ে আসছিল। ফেরার সময় দীপাবলী টের পেল পায়ে যন্ত্রণা হচ্ছে। দূরত্ব কম নয়, দুপুর গড়িয়েছে, তার ওপর সহজ পায়ে হাঁটা যাচ্ছে না ভেজা মাটির জন্যে। তবু তার ইচ্ছে করছিল সোজা অৰ্জুনবাবুর বাড়িতে গিয়ে কৈফিয়ত চাইবে। কল বসবার এত অল্প সময়ের মধ্যে তা খারাপ হয় কী করে। আর সারানো হবে কি না তা বলার মালিক তিনি নন।
অফিসে যখন ফিরে এল ওরা তখন শরীর একদম বিপর্যস্ত। বাবুরা সবাই খেতে চলে গিয়েছে দরজা বন্ধ করে। সতীশবাবু বেশ কাহিল হয়ে পড়েছিলেন এতটা হেঁটে। তিনি বাড়ি ফিরে গেলে দীপাবলী স্নান করে এসে শুয়ে পড়ল। তিরি জিজ্ঞাসা করল, ‘খেতে দেব?’
‘একটু পরে। দুটো পায়ে খুব ব্যথা করছে।’
‘অনেক হেঁটেছ?’
‘হ্যাঁ।’
‘গরম তেল মালিশ করে দেব?’
চট করে উঠে বসল দীপাবলী। আজ পর্যন্ত তার পায়ে কেউ তেল মালিশ করে দেয়নি! সে হাসল, ‘না রে। তুই খাবার দে।’
খাওয়ার পর আবার বৃষ্টি নামল। এবার আরও জোরে। আকাশ অন্ধকার করে। সেইসঙ্গে হাওয়া। ফলে জানলা বন্ধ করতে হল। বেলা সাড়ে তিনটেতে লণ্ঠন জ্বালতে হল তিরিকে। গতকালের কোনও মানুষ আজকের এই দিনটাকে কল্পনা করতে পারত না। মাথার ওপর টিনের চালে বড় বড় শব্দ হচ্ছে। সেইসঙ্গে শোঁ শোঁ হাওয়ার গর্জন। চোখ বন্ধ করতেই কথা এল, সেইসঙ্গে সুর। ‘অন্তরে আজ কী কলরোল দ্বারে দ্বারে ভাঙল আগল, হৃদয় মাঝে জাগল পাগল আজি ভাদরে। আজ এমন করে কে মেতেছে বাহিরে ঘরে॥’
সারাপৃথিবী ধুয়ে দিয়ে বৃষ্টি থামল শেষ বিকেলে। আর আকাশের ফাঁক গলে পৃথিবীতে লুটিয়ে পড়ল এক কনে-দেখা আলো। আজ বিকেলে সারাদিনের জন্যে অফিস ছুটি দিয়ে দিয়েছিল দীপাবলী। এমন দিন হয়তো আর আসবে না। যে-যার ঘরের মানুষদের নিয়ে সুখটুকু ভোগ করুক। ভেজা মাটিতে সে দাঁড়িয়ে ওই আলো দেখছিল। অনেককাল বাদে হলুদ শাড়ি পরেছে আজ। সেই শাড়ির রং আর আকাশের কনে-দেখা আলো মাখামাখি। এলো চুলে হাত বুলিয়ে রোদ মাখাচ্ছিল দীপাবলী। এমন সময় পিয়নটিকে আসতে দেখল। কাছে এসে নমস্কার করে বলল, ‘টেলিগ্রাম।’
সই করে খাম ছিঁড়ে চোখ রাখল দীপাবলী। ছোট তিনটে কথা। ‘আমরা আসছি। অমল।’
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন