সমরেশ মজুমদার
সারাদেশ থেকে যাচাই করে নেওয়া কিছু ভাল ছেলেমেয়ে প্রতি বছর মুসৌরির আকাদেমিতে আসে তিন মাসের কোর্স করতে। এরাই শিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে আবার সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়বে সরকারি অফিসার হয়ে। ভারত সরকারের শাসনযন্ত্রের হাত শক্ত করবে এরা। মুসৌরির ফাউন্ডেশন কোর্সে নিজেকে মানিয়ে নিতে বিন্দুমাত্র অসুবিধে হল না দীপাবলীর। ভাল হস্টেল, নিয়ম মেনে পড়াশুনো, খাওয়া, ঘুমানো আর শীতল পরিবেশ মন ও শরীরকে চাঙ্গা করতে খুব সাহায্য করে। শুধু আই আর এস নয় অন্য উইং-এর সমস্ত ছেলেমেয়ে একসঙ্গে জড়ো হওয়ায় সত্যিকারের সর্বভারতীয় চেহারা নিয়েছে আকাদেমি। মেয়েদের সংখ্যা খুবই কম। দীপাবলীকে নিয়ে ওদের ব্যাচে মাত্র পাঁচ জন। দু’জন করে একটি ঘরে থাকার ব্যবস্থা। নিজেকে পঞ্চমে নিয়ে যাওয়ায় তার ভাগ্যে পুরো ঘর জুটেছে।
রেভিনিউ সার্ভিসের জন্যে যারা নির্বাচিত তাদের তিন মাস পরে যেতে হবে নাগপুরে। কিন্তু অন্যান্যদের অনেক বেশি সময় থেকে যেতে হবে এখানে। অনীশ চ্যাটার্জি নামের একটি বঙ্গসন্তান আই পি এস পেয়েছে। তাকে ছয় মাস থাকতে হবে এখানে। ওর সঙ্গে আলাপ হয়েছে দীপাবলীর। বেচারা এত পরিশ্রম করতে হবে ভাবেনি। ম্যানেজমেন্ট, ভারতীয় অর্থনীতি, ইতিহাস থেকে সিভিল ডিফেন্স, পিটি ড্রিল এবং ঘোড়ায় চড়া— কী না করতে হচ্ছে তাকে। এখান থেকে সে যাবে মাউন্ট আবুতে। সেখানে পড়বে অপরাধবিজ্ঞান, আদালতি আইন, মোটর ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে আস্তাবল পরিচালনা। আর তারও পরে দু’মাসের জন্যে ব্যারাকপুরের পুলিশ কলেজে। তানীশ যেন পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচে। একটু বেশি ভাল ছেলে, সরল ধাতের। আই এ এস বে বলে ভেবেছিল, দ্বিতীয় প্রেফারেন্সে আই পি এস দেওয়ার সময় কল্পনা করতে পারেনি সেটাই তার ভাগ্যে জুটবে। এই খাটুনি এখন তার কাছে আতঙ্কের হয়ে উঠেছে। দীপাবলী তাকে উৎসাহিত করত। দেখা হলেই বলত, “এবারে ব্যাচে আপনিই একমাত্র বাঙালি। আপনি যদি পালিয়ে যান তাহলে সেটা পশ্চিমবাংলার কলঙ্ক হয়ে দাঁড়াবে। সবাই আমাদের ছি ছি করবে। আর ক’টা দিনের কষ্ট তো, প্লিজ পালাবেন না।’
ছেলেটির বয়স কম, গ্র্যাজুয়েশনের পরেই পরীক্ষায় বসেছিল! আপনি না বললে স্বস্তি হত। এরকম মুখচোরা লাজুক ছেলে পরবর্তীকালে কী ধরনের পুলিশ অফিসার হবে আন্দাজেও আসত না দীপাবলীর। এখানে সবাই তাকে ব্যানার্জি বলে ডাকে। প্রথমদিন একটি পাঞ্জাবি ছেলে তাকে মিস ব্যানার্জি বলে ডেকেছিল। সে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে, ‘মাপ করবেন আমি মিস নই। যেহেতু আমার বিয়ে হয়েছিল এবং সেই ভদ্রলোক বিয়ের পরদিন মারা গিয়েছিলেন তাই আমি বিধবা। কিন্তু আপনি আমাকে শুধু ব্যানার্জি বলেই ডাকবেন।’
খবরটা পাঁচকান হয়ে গিয়েছিল দু’দিনেই। দীপাবলীর ভাল লেগেছিল, কেউ তাকে কোনও প্রশ্ন করেনি এর পরে, নির্বিকার মুখে ব্যানার্জি বলেই ডেকেছে।
যে-চারটি মেয়ে তার হস্টেলে থাকে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থান ভারতীয় মানের অনেক ওপরে। এদের মধ্যে শকুন্তলা গুপ্তার সঙ্গে মোটামুটি ভাব হয়েছে দীপাবলীর। একটা ব্যাপারে দু’জনে একমত, মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যায় না। শকুন্তলারও মেয়েবন্ধু খুব কম। একই ব্যাপার দীপাবলীরও। মায়া ছাড়া তার কোনও মেয়েবন্ধু ছিল না। শকুন্তলা এখানে আসার মাসখানেকের মধ্যেই অর্জুন নামে এক পাঞ্জাবি ছেলের প্রেমে পড়েছে। ওরা দু’জনেই অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের। প্রেম এর মধ্যেই বেশ ঘনীভূত। চিন্তা হচ্ছে কাজে যোগ দিলে বিয়ে হবে কী করে! কারণ দু’জন দুই প্রদেশে পোস্টিং পাবে।
তিনটের পরে আজ কোনও ক্লাস নেই। মুসৌরির আকাশে এখন চাপ চাপ মেঘ। এরকম চলছে দিন দুয়েক হল। মেঘ আছে কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না। একটু সেজেগুজেই দীপাবলী হস্টেল থেকে বের হল। শকুন্তলা ধারেকাছে নেই। কিছুটা হাঁটার পর সে অনীশকে দেখতে পেল। সাদা ফুলপ্যান্ট আর ব্লেজার পরে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে। ওকে দেখে এগিয়ে এল, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’
‘ম্যালের দিকে!’
‘অতটা!’
‘কী এমন দূরত্ব! কী করা হচ্ছে?’
‘কিছু না। ভাল লাগছে না। আমার লাকটাই খুব খারাপ।’
‘কেন?’
‘আই এ এস পেলাম না। এস পি হয়ে জেলায় গেলে ডি এম যা বলবে তাই করতে হবে। অথচ আমি ডি এম হতে পারতাম।’
‘ডি এম-কে তো এস পি-র ওপর ভরসা করতে হয়।’
‘ওই পর্যন্ত!’ অনীশ সঙ্গে হাঁটছিল। দীপাবলীর অস্বস্তি হল। অথচ ছেলেটা এত ভাল যে তাকে কিছু বলতেও দ্বিধা হচ্ছিল। গতকাল অলোকের চিঠি এসেছে। আজ দুপুরে ও দিল্লি থেকে মুসৌরিতে পৌছাবে। ঠিক চারটের সময় ও থাকবে হুইসপারিং উইন্ডোতে। এর আগে এখানে দীপাবলী আসার পরপরই অলোক দেখা করতে এসেছিল। তখন ওই হুইসপারিং উইন্ডোতেই বসেছে। নির্জন সুন্দর রেস্টুরেন্ট। একটা মানুষ শুধু তার সঙ্গে কথা বলতে দিল্লি থেকে এত দূরে আসছে আর সে যদি অনীশকে সঙ্গে নিয়ে যায় তা হলে কীরকম প্রতিক্রিয়া হবে? অনীশকে এ-কথা বলতে গিয়েও মত পালটাল দীপাবলী। দেখাই যাক না কী করে অলোক! যদি রেগে যায় কতখানি রাগতে পারে সেটাও জানা দরকার।
হাঁটতে হাঁটতে অনীশ গল্প করছিল। সে দার্জিলিং-এ গিয়েছে। মুসৌরি দার্জিলিং-এর কাছে কিস্যু নয়। ওই লাল টিপ্পা, টোপ টিপ্পা অথবা লম্বা ম্যাল যেখানে ভাল বসার জায়গা নেই, এই তো হল মুসৌরি। শুধু ঠান্ডাটা আর পাহাড়। কিন্তু দার্জিলিং-এর পাহাড় আরও সুন্দর দেখতে। কথাগুলো ঠিক। কিন্তু তবু দীপাবলীর মনে হল মুসৌরি তো কলকাতা নয়। কলকাতায় বাস করা যায় না, সেখানে বাস করতে হয়। কিছুক্ষণ হাঁটার পর অনীশ বলল, ‘দুত একদম ভাল লাগছে না। আপনার কেমন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে, আমাকে এখনও পড়ে থাকতে হবে’।
‘দীপাবলী হাসল, ‘নাঃ, আপনাকে দিয়ে চলবে না।’
‘মানে?’ যেন খোঁচা খেল অনীশ।
‘এইরকম ছেলেমানুষকে লোকে এস পি বলে মানবে?’
‘আমি এখনই এস পি হব নাকি। মাউন্ট আবুতে এক বছর কাটিয়ে, যেতে হবে ব্যারাকপুরে। সেখানে দু’মাস পড়তে হবে। তারপর কোন থানায় দশ সপ্তাহ দারোগার কাছে কাজ শিখতে হবে। এরপরে এস ডি পি-ও দু’বছর এবং এ এস পি হয়ে মিনিমাম তিন বছর কাটলে তবে এস পি হতে। পারব। অনেক সময় লাগবে। তদ্দিন যদি টিকে থাকি তা হলে লোকে মানতে বাধ্য হবে।’ অনীশ দম নিল, ‘আচ্ছা, আপনি শুধু শুধু ম্যালে বেড়াতে যাচ্ছেন?’
‘শুধু শুধু হবে কেন? আমার এক বন্ধু আসবে দিল্লি থেকে। তার সঙ্গে দেখা করব।’
‘তা হলে আমি যাচ্ছি কেন?’
‘আপনার হাতে কোনও কাজ নেই এবং আমারও অসুবিধে হবে না তাই।’
‘কিন্তু আপনার বন্ধু তো কিছু মনে করতে পারে! ’
‘সেটাই দেখতে চাই। দীপাবলী হাসল।’
ঠান্ডাটা আজ যেন একটু বেশি। নাকের ডগা চিনচিন করছিল। অনীশ বলল, ‘জানেন, আমার এক বান্ধবী ছিল। কলেজে পড়ার সময়। কিন্তু আমি আই পি এস নিয়েছি জানার পরে বলে দিয়েছে যে কোনও সম্পর্ক রাখবে না।’
‘কেন?’
‘সে নাকি পুলিশকে দু’চক্ষে দেখতে পারে না।’
‘মেয়েটি ভাল।’
‘মানে?’
‘মনের কথা অকপটে বলেছে। এইজন্যেই আপনার মন খারাপ বুঝি?’
‘হ্যাঁ, সব মিলিয়েই।’
‘এরকম ছেলেকে ভাই বা পুত্র হিসেবে মমতায় বাঁধা সম্ভব কিন্তু মানুষ হিসেবে সমালোচনা করতেই হয়। দীপাবলী কিছু বলল না। অনীশের মনে এখনও সারল্য আছে। এই সারল্য হয়তো তাকে কিছুটা ব্যক্তিত্বহীন করছে। তা ছাড়া এখন আর তর্ক করে মেজাজ খারাপ করতেও ইচ্ছে করছিল না। হয়তো এই অনীশ একদিন পরিস্থিতির চাপে নেখালিতে চাকরি করার সময় দেখা এস পি-র মতো হয়ে যাবে। সেইটেই স্বাভাবিক, অন্তত ভারতবর্ষে।
ম্যালের মুখে হুইসপারিং উইন্ডো রেস্তোরাঁর দরজা পেরিয়ে ওরা ভেতরে ঢুকতেই প্রথমে শকুন্তলা আর অর্জুনকে দেখতে পেল। তন্ময় হয়ে গল্প করছে। অর্জুনই ওদের দেখতে পেল প্রথমে। তৎক্ষণাৎ সোজা হয়ে দাড়িয়ে হাসল, ‘হাই’।
দীপাবলী মাথা নাড়ল, ‘আপনারা গল্প করুন, আমরা অন্য টেবিলে বসছি।’
শকুন্তলার চোখে বিস্ময়। সে যেন ভাবতেই পারছে না অনীশকে নিয়ে এখানে আড্ডা মারতে আসতে পারে দীপাবলী। ওদের পাশ কাটিয়ে একটু এগিয়ে দীপাবলী বুঝতে পারল অলোক এখনও আসেনি। এত দেরি হবার কথা নয়। হঠাৎ মনের মধ্যে ভার জমল, সেইসঙ্গে ভাবনা। অনীশ জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনার বন্ধু কোথায়?’
‘আসেনি দেখছি।’
‘যাক, ভাল হল, আমি আসায় আপনাকে একা ফিরে যেতে হবে না। যাবেন তো?’
‘এখনই? একটু অপেক্ষা করে দেখি।’
জানলার ধারে যে-খালি টেবিল সেটি দখল করল দীপাবলী। অতএব উলটোদিকে বসল অনীশ। বসে দেখল দীপাবলী কাচের ভেতর দিয়ে রাস্তা দেখছে। মেঘগুলো আরও নীচে নেমে এসেছে। কেমন একটা স্যাতসেঁতে ময়লাটে ভাব ছড়িয়ে আছে মুসৌরিতে। বেয়ারা এসেছিল। অনীশ তাকে দুটো কফি দিতে বলল। তারপর হাসল, ‘আগে না কোনও মেয়ের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে ঢোকার কথা কল্পনাই করতে পারতাম না। আমার বন্ধুটি তো খুব রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে স্কুলে যেত ঝি অথবা দাদুর সঙ্গে। বুঝতেই পারছেন—।’
অনীশ বলে যাচ্ছিল। প্রথমদিকে কিছু কথা কানে ঢুকলেও শেষপর্যন্ত সেগুলো আর স্পর্শ করছিল না দীপাবলীকে। সে কিছুতেই বুঝতে পারছিল না কেন অলোক দেরি করছে। অলোকের যে স্বভাব তাতে এমন হতেই পারে না। আগের চিঠিতেই অন্য একটি প্রসঙ্গে অলোক লিখেছিল, চরিত্রহীন বলতে শরৎচন্দ্র কী বোঝাতে চেয়েছেন জানি না, অভিধানে লম্পট বা মন্দ চরিত্র বলা হয়েছে, কিন্তু এ নিয়ে বিতর্ক উঠতেই পারে। আমার কাছে চরিত্রহীন শব্দের অর্থ, যে কথা দিয়ে কথা রাখে না।
অলোক অসুস্থ হতে পারে। অসুস্থতার খবর তার কাছে পৌঁছাতে দেরি হওয়া অসম্ভব নয়। ভাবনাটা মাথায় আসতেই আর এক ধরনের অস্বস্তি আরম্ভ হল। অলোক কী ধরনের অসুস্থ, তা না গিয়ে কি জানা যাবে? এখানে যা ব্যবস্থা একমাত্র রবিবার ছাড়া ছুটি পাওয়া যাবে না। স্টেশন লিভ করতে কি এরা দেবে?
হঠাৎ কানে এল অনীশের গলা, ‘ও, আপনি আমার কোনও কথাই শুনছেন না।’
সামলে নিতে চাইল দীপাবলী, ‘না না। বলুন।’
‘বৃষ্টি আসছে কিন্তু।’
দীপাবলীর মনে হল বৃষ্টি এলে অন্তত অনীশের অসুবিধে হবে। তার জন্যে ও বেচারাকে ভিজতে বলতে পারে না। অতএব ওঠা উচিত। কিন্তু— সে শেষ বাহানা নিল, ‘কফি আসুক, খেয়েই উঠব।’
অনীশ হাত নেড়ে বেয়ারাকে ডাকল। এবং তখনই দীপাবলী কাচের ভিতর দিয়ে অলোককে দেখতে পেল। বেশ দ্রুত গতিতেই হেঁটে আসছে। এই সুন্দর স্বাস্থ্যের মানুষটির সঙ্গে সে জীবন যোগ করতে যাচ্ছে! অদ্ভুত রোমাঞ্চ এতক্ষণের সমস্ত উদ্বেগ ভুলিয়ে দিল।
দীপাবলী মুখ ঘোরাচ্ছিল না। এতক্ষণে নিশ্চয়ই রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়েছে অলোক। সে যেখানে বসে আছে দরজাটা তার অনেক পেছনে। একই সঙ্গে বেয়ারা এবং অলোক ওদের টেবিলে এল। অলোক বলল, ‘সরি, ট্রেন এত লেট ছিল যে—।’
দীপাবলী অলোকের মুখের দিকে তাকিয়েই অনীশকে দেখল। বেচারা কেমন আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে। অলোক অনীশের পাশের চেয়ার টেনে নিয়ে বসল, ‘কতক্ষণ এসেছ?’
‘যখন আসবে বলে লিখেছিলে।’
‘লাইনে গোলমাল ছিল। আমার তো ভয় হচ্ছিল শেষপর্যন্ত পৌঁছাতে পারব কিনা।’
‘তোমাকে এত কষ্ট করে এখানে আসতে হবে না।’
‘এটা আমার সমস্যা।’
দীপাবলী মুহূর্তেই সহজ হয়ে গেল। সে অনীশের সঙ্গে অলোকের আলাপ করিয়ে দিল। অলোক বলল, ‘বাঃ, খুব ভাল। আমি তো প্রথম দিকে জানতাম দীপা আই পি এস করবে। ভয়েই এগোতে পারিনি।’
কথা বেশ সহজ গতিতে এগোচ্ছিল যদিও অনীশ বলছিল খুব কম। ওর উপস্থিতি অলোককে বিন্দুমাত্র বিচলিত করেনি। দীপাবলীর ভাল লাগল এটা। অলোক বলল, ‘তুমি কাস্টমস না নিয়ে ইনকাম ট্যাক্স নিলে?’
‘হ্যাঁ। এবার নাগপুরে যেতে হবে।’
‘নাগপুর অনেকদূর। সেখানে হাজিরা দিতে পারব না।’
‘আমি তোমাকে বলেছি কখনও হাজিরা দিতে?’
‘মনে মনে না বললে আমার খুব খারাপ লাগবে।’
দীপাবলী হেসে ফেলল। কফি খাওয়া হয়ে গেলে দাম দিতে গেল অনীশ। দীপাবলী আপত্তি করল! ‘একদম না। আমি দেব।’
ছেলেটিকে প্রথমে রাজি করানো যাচ্ছিল না। শেষপর্যন্ত মেনে নিয়ে সে বলল, ‘তা হলে ব্যানার্জি, আপনারা গল্প করুন, আমি চলি।’
‘কোন রাজকার্য আছে?’
হঠাৎ কথা ফুটল অনীশের ঠোঁটে, ‘আফটার অল এখন রাজকর্মচারী। তাই একটা কাজ খুঁজে নিতে দেরি হবে না। উনি অতটা দূর থেকে কথা বলতে এসেছেন, আমার সামনে বসে থাকা ঠিক হবে না।’
দীপাবলী প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই অলোক বলল, ‘আপনার বিচক্ষণতা আমাকে মুগ্ধ করছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।’
মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল অনীশ। খুব খারাপ লাগল দীপাবলীর। তারা তিনজনেই চমৎকার আড্ডা মারতে পারত। অনীশকে একটু লাজুক, বেশি রকমের গুডিবয় বলে মনে হত এতদিন, কিন্তু ও যে এমন অমিশুক তা মনে হয়নি। অবশ্য তাই বা কী করে বলা যায়, তার সঙ্গে দেখা হলে অনীশ চমৎকার কথা বলে। সারল্য থাকে কিন্তু সেইসঙ্গে আন্তরিকতাও।
‘কী ভাবছ?’
অলোকের প্রশ্নে সংবিৎ এল। মাথা নেড়ে বলল, ‘ও কেমন অদ্ভুতভাবে চলে গেল।’
‘তোমার ভক্ত?’
‘আমি কি গুরুটুরু যে ভক্ত হবে?’
‘ইংরেজিতে ফ্যান যাকে বলে বাংলায় তার প্রকৃত প্রতিশব্দ হল ভক্ত। অবশ্য তেমন হলে আমার উপস্থিতি ওর পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হত না।’
‘যা তা বলছ কিন্তু!’ দীপাবলী মুখ ফেরাল। অলোক হাসল। দীপাবলী বলল না, বলতে পারল না, সে অনীশের নয়, অলোকের প্রতিক্রিয়া দেখতে চেয়েছিল। অলোক এত সহজ এবং স্বাভাবিক যে নিজের ভাবনার জন্যে লজ্জিত সে।
অলোক বলল, ‘যাক, কী ঠিক করলে?’
‘কীসের?’ দীপাবলী মুখ তুলল।
‘নাগপুর থেকে বেরিয়ে—?’
‘শুনলাম আমাকে কলকাতায় পোস্টিং দেবে। আমি যেহেতু ওয়েস্টবেঙ্গল ক্যাডারের তাই সেটাই চল।’
‘তুমি কলকাতায় আর আমি দিল্লিতে থাকব? আমার পক্ষে তো কলকাতায় গিয়ে সেট্ল করা সম্ভব না।’ অলোক গলা নামাল, ‘তুমি অনুরোধ করতে পারো না দিল্লিতে পোস্টিং-এর জন্যে।’
‘পারি।’
‘তাই করো, প্লিজ। মহিলাদের অনুরোধ কর্তৃপক্ষ নস্যাৎ করতে পারবেন না।’
‘দিল্লিতে চাইলে বোধহয় আর পশ্চিমবাংলায় ফিরে যাওয়া যাবে না।’
দরকারই বা কী? তোমার তো সেখানে কোনও পিছুটান নেই। আর ছুটিছাটায় নিশ্চয়ই যেতে পারব আমরা।’
‘আমরা?’ দীপাবলীর মুখে রক্ত জমল।
‘কী হচ্ছে কী? এখনও সত্যিটাকে স্বীকার করতে পারছ না?’
‘বড় ভয় হয়।’
‘ভয়! কেন?’
‘জানি না।’
‘ওঃ। তুমিও নার্ভাস হচ্ছ? শোনো, মা বলেছেন তোমার সঙ্গে এ-ব্যাপারে পরিষ্কার কথা বলে যেতে।
ব্যাপারটা কীভাবে করতে চাও?’
দীপাবলীর চিবুক নামল, ‘আমি জানি না।’
‘আরে, জানি না বললে হবে নাকি? আমাদের বাড়ি থেকে তোমার মা বা ঠাকুমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে কি? তাঁরা তো পাত্রীপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে পারেন।’
‘দাঁড়াবেন কিনা জানি না কিন্তু আমি চাই না।’
‘এ-কথা আমি মাকে বলেছিলাম। কিন্তু ওঁর প্রশ্ন বিয়েটা কীভাবে হবে?’
দীপাবলী সোজা হয়ে বসল, ‘আমার পক্ষে বিয়ের পিড়িতে বসে মন্ত্র উচ্চারণ করা একদম সম্ভব নয়। অতএব ওসবের প্রয়োজন নেই।’
অলোক চুপ করে গেল। দীপাবলী জানলা দিয়ে বাইরে তাকাল। কিছুক্ষণ কারও মুখে কোনও কথা নেই। শেষপর্যন্ত অলোকই বলল, ‘তুমি এখনও মনে রেখেছ?’
‘মনে রাখিনি, এগুলো জন্মটিকার মত, মন থেকে ওঠে না। কিন্তু তার জন্যে নয়, আমি ওসব মন্ত্রে বিশ্বাস করি না। ইউজলেস। বিয়ের পিঁড়িতে বসে যে শব্দগুলো মানুষ বলে তা অন্যের শেখানো। পাখির বুলি আওড়ানোর মতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জীবন অন্য কথা বলে কিছুদিনের মধ্যেই। হ্যাঁ, খেলা হিসেবে পাঁচজনকে দেখিয়ে ওইভাবে বিয়ে করার মধ্যে যে মজা আছে তা অন্তত আমার ক্ষেত্রে নেই, কারণ ওই ব্যবস্থাটাকে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। তুমি বা তোমার মায়ের যদি এর বিকল্প ব্যবস্থায় তৃপ্তি না হয় তা হলে অলোক, তুমি যে-কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারো।’
হঠাৎ টেবিলে রাখা দীপাবলীর হাতের ওপর নিজের হাত রাখল অলোক, ‘তুমি অনর্থক উত্তেজিত হচ্ছ! বিকল্পে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু দিনটা কবে ঠিক করছ?’
‘এখন নয়। নাগপুর থেকে বেরিয়ে।’
‘এখনও দেড় বছর?’
‘আমি ঝাড়া হাত-পা হতে চাই।’
‘অগত্যা মানতে হচ্ছে।’
‘আরও কিছু কথা ছিল।’
‘শুনব, আর এক কাপ চা বা কফি বলবে?’
‘আমি খাব না। তুমি খেতে পারো।’
‘না থাক। চলো।’
‘স্ত্রী হিসেবে আমার কাছে তুমি ঠিক ঠিক কী চাও?’
অলোক চোখ বন্ধ করল, ‘নাথিং। ভেবে পাচ্ছি না।’
‘আমি কতগুলো ব্যাপারে সারেন্ডার করছি। বারো বছর থেকে যে ওলট-পালট হয়েছিল তারপরে আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্বাভাবিকভাবে আমি বড় হইনি। কলেজ থেকে তো হস্টেলে হস্টেলে অথবা ঘর ভাড়া করে আছি। রান্নাবান্না শেখার সুযোগই পাইনি। তা ছাড়া চা-বাগানের বাড়িতেও খুব সাদামাটা রান্না হত। তোমাদের বাড়ির খাবার আমি খেয়েছি। আমার রান্না খেতে তাই তোমার খুব অসুবিধে হবে।’ দীপাবলী সোজাসুজি বলে ফেলল।
‘এটা কোনও প্রবলেম নয়।’
‘তুমি জানো না। মানুষ খাওয়ার সময় নিজের তৃপ্তি খোঁজে।’
‘বাব্বা। আমি বলছি রান্না কোনও প্রবলেম নয়। দু’জনে রোজগার করব, অতএব রান্নার লোক রেখে দিলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
‘দ্বিতীয় পয়েন্ট হল, আমি চাকরি করব, আমার স্বাধীনতা কতখানি?’
‘যতখানি চাও। আমরা এমন কিছু করব না যাতে কেউ অসম্মানিত হতে পারি। আমরা কেউ পরাধীন নই যে স্বাধীনতার প্রশ্ন উঠবে।’
‘আর আমার কিছু বলার নেই।’
‘আমার আছে।’ চট করে বলে ফেলল অলোক।
‘বলে ফ্যালো।’
‘যখন তোমার মনে কোনও প্রশ্ন জমবে তুমি আমাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করবে। এনি থিং, মনে মনে সেটাকে পাকাবে না।’
‘চেষ্টা করব।’
‘মদের ব্যাপারে তোমার কোনও অ্যালার্জি আছে?’
‘মানে?’ আঁতকে উঠল দীপাবলী, ‘আমি কি মদ খাই যে অ্যালার্জি হবে কিনা বুঝতে পারব?’
‘আহা, তা বলছি না। আমি মদ খেলে তুমি সহ্য করবে?’
‘তুমি মদ খাও?’
‘খুব কম। কখনও কোনও পার্টিতে গেলে এক-আধ পেগ।’
‘অ্যাভয়েড করা যায় না?’
‘একটু রূঢ় হতে হয়।’ অলোক হাসল, ‘বুঝতে পেরেছি।’
দীপাবলী মাথা নাড়ল, ‘না। যেমন আছ তেমনই থাকো। কিন্তু কথা দিতে হবে কখনও মাতাল হবে। না। মাতালদের আমি ঘেন্না করি।’
‘তথাস্তু। আমি তোমার কাছে ঘেন্না পেতে চাই না।’
দীপাবলী হাসল, ‘আচ্ছা আমরা কেমন অফিশিয়াল কথা বলছি, না?’
‘জানি না অন্য কেউ এরকম বলে কিনা! তবে বলে নিয়ে কোনও ক্ষতি করিনি আমরা। পরে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে আগে বলে নেওয়া ঢের ভাল।’
‘চলো, এখান থেকে বের হই। একটু হাঁটি।’
‘গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে।’
‘পড়ুক, এই বৃষ্টি গায়ে লাগবে না।’
বাইরে বের হওয়ামাত্র মনে হল ঠান্ডার দাঁত আরও ধারালো। শালটাকে মাথার ওপর তুলে দিল দীপাবলী। কুচি কুচি বৃষ্টি পড়ছে। মাঝে মাঝে হাওয়া এসে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের। হাঁটতে ভাল লাগছিল। দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, ‘কোন হোটেলে উঠেছ?’
‘এবার স্নো পিকে। খুব সুন্দর ঘর।’
‘কাল চলে যাবে?’
‘হ্যাঁ।’
দীপাবলীর খুব খারাপ লাগল। এই এক রাত্রের জন্যে আসা কেন? কেন অলোক বলতে পারে না সাত দিন থাকব। তা হলে প্রত্যেকটা দিন নতুন বলে মনে হত। সে বলে ফেলল, ‘তুমি খুব কৃপণ। দিতে পারো না।’
‘বদনাম দিচ্ছ কেন?’
‘এইভাবে একরাত্রের জন্য কেন এলে?’
অলোক থতমত হয়ে তাকাল। শালের প্রান্তে কপালের ওপর যে চুলগুলো বেরিয়ে ছিল তাতে জলের কণা মুক্তোর মতো ঝুলছে। মুখ ভেজা। সে গাঢ় গলায় বলল, ‘আই অ্যাম সরি। এর পরের বার কয়েকদিন থাকার পরিকল্পনা নিয়ে আসব। আমি বুঝতে পারিনি।’
‘থাক। তোমাকে কিছু করতে হবে না। জোর করে আদায় করে কিছু সুখ হয় না। আমি বলছি বলে তুমি আসবে, নিজে থেকে যখন আসতে পারোনি তখন বেশিদিন থাকার জন্যে আসতে হবে না।’
‘আমি ক্ষমা চাইছি তো!’
‘ভেতর থেকে যেটা আসবে সেটাই করবে। আমি বলছি বলে কিছু করতে হবে না।’ দীপাবলীর গলায় অভিমানের সুর এবার স্পষ্ট।
‘বেশ, করব না।’
শোনামাত্র খুব রাগ হয়ে গেল। আশ্চর্য! তার কথা শুনে যেন বেঁচে গেল অলোক। বেশি দিন কাজ ছেড়ে থাকতে হবে না আর। কিন্তু খুব দ্রুত নিজেকে সামলে নিল সে। কী ছেলেমানুষের মতো ঝগড়া করছে সে। সে যা বলছে অলোক তাতেই সায় দিচ্ছে। সে কেন চাইছে অলোক তার মনের কথা বুঝে নিক, মুখের কথার মানে না ধরুক। এগুলোর জন্যে সময় দরকার হয়। দু’জনকে ভালমতো জানার জন্যে সময়। সেটা তো এখনও হয়নি। খানিকটা যাওয়ার পর, আলো যখন বেশ কমে এসেছে, অলোক বলল, ‘চলো, আমার হোটেলে গিয়ে একটু বসবে।’
এর আগেরবার দীপাবলী অলোকের হোটেলে গিয়েছিল। নির্জন একটি ঘরে অলোক তার সঙ্গে আধঘণ্টা গল্প করেছিল। তখন প্রতিটি মুহূর্তে একধরনের উত্তেজনা এবং আশঙ্কা একইসঙ্গে কাজ করে গিয়েছিল তার মনে। অথচ অলোক তার হাত পর্যন্ত স্পর্শ করেনি সেইসময়। হস্টেলে ফিরে হঠাৎই সে নিজের মনখারাপ আবিষ্কার করেছিল। সিনেমা বা উপন্যাসে দুটি প্রেমিক প্রেমিকা ওই অবস্থায় থাকলে পরস্পরকে আদর করে। হস্টেলে শুয়ে তার মনে হয়েছিল অলোক তাকে উপেক্ষা করেছে। অথচ ওর সঙ্গে হোটেলের ঘরে গল্প করার সময় আশঙ্কা ছিল যে-কোনও মুহূর্তে অলোক মুখোশ খুলে ফেলবে। একই মানুষ বিপরীত ভাবনা ভেবেছে একই দিনে। আজ অলোকের প্রস্তাব শোনামাত্র সে কেঁপে উঠল। দীপাবলী এবার নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। সে মুখ ফিরিয়ে অলোকের দিকে তাকাল। অলোকের চিবুকের ওপর একটা সুন্দর ভাজ আছে। অনেকসময় একা থাকতে থাকতে সে ওই ভাঁজটার কথা ভেবেছে। কেমন আদুরে। আঙুলের ডগা দিয়ে ভাঁজটাকে স্পর্শ করার লোভ হত। এখনও হল।
সে মাথা নাড়ল না, আজ থাক। ওয়েদার ভাল নয়’।
‘কী এমন হবে! চলো না! ঘরটা ভাল লাগবে।’
‘ঘরের জন্যে যাব কেন? আর যদি যেতেই হয় তা হলে একেবারেই যাব।’
‘বেশ। তোমার যা ইচ্ছা।’
ওরা হস্টেলের দিকে নির্জন পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিল। বৃষ্টি হচ্ছে না এখন। দু’পাশের লম্বা গাছগুলো ভেজা বলেই ছায়া তাদের শরীরে আরও এঁটে বসেছে। দীপাবলী নিচু গলায় বলল, ‘তুমি আমাকে ভুল বুঝবে না।’
‘না। কিন্তু তুমি দিল্লির জন্যে চেষ্টা করবে।’
‘নিশ্চয়ই।’
একদল ভেড়া গলায় ঘন্টা বাজিয়ে নেমে আসছে ওপর থেকে। পৃথিবী ছায়াময়। ওরা দু’জনে প্রাণীগুলোকে যেতে দিল। গুঁতোগুতি করে প্রত্যেকে প্রথমে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আর একটু এগোতে পথটা যেখানে বাঁক নিয়েছে সেখানে পৌছেই থমকে গেল দু’জনে। বাঁকের শেষে একটা বড় পাথরের পাশে অর্জুন আর শকুন্তলা দাঁড়িয়ে আছে আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে। একটুও নড়ছে না। সমস্ত বিশ্ব ভুলে গিয়েছে যেন। ওদের পাশ দিয়েই ভেড়াগুলোকে নিয়ে গেছে রাখাল। তখনও কি ওরা ওই অবস্থায় ছিল। এইভাবে প্রকাশ্যে? হোক রাস্তা নির্জন—! অলোক বলল, ‘ওদের ডিস্টার্ব করা উচিত হবে না। একটু অপেক্ষা করো।’ দীপাবলী মাথা নাড়ল। কয়েক সেকেন্ড পরেই শকুন্তলা আলিঙ্গনমুক্ত হয়ে অর্জুনের হাত ধরে হাঁটা শুরু করল।
অলোক বলল, ‘বাঁচা গেল।’ দীপাবলীর মন কেমন তেতো হয়ে যাচ্ছিল। সে নিচু গলায় বলল, ‘তুমি ফিরে যাও। এখান থেকে আমি একাই যেতে পারব। বেশি দূর নয়।’
‘তোমার কি অস্বস্তি হচ্ছে?’
‘দীপাবলী একটুও দ্বিধা করল না, হ্যাঁ।’
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন