৯. সতীশবাবু

সমরেশ মজুমদার

পৃথিবী থেকে প্রিয়তম মানুষ অকস্মাৎ সরে গেলে যে-অন্ধকার নেমে আসে তার স্থায়িত্ব কতটুক? কারও কারও হয়তো শ্মশান থেকে বেরিয়ে আসার পরেই তা দূর হতে আরম্ভ করে, কেউ সারাজীবন মনের আনাচে কানাচে তাকে আঁকড়ে থাকেন। তবু যে-কোনও চলে যাওয়া মানেই জলের বুকে গর্ত খোঁড়া, যা পর মুহূতেই ঝাঁপিয়ে পড়া জলের ঢেউয়ে বুজে যায়, বেঁচে থাকার নিয়মে সেইটেই শেষ সত্যি হয়ে দাঁড়ায়। এই ঘরবাড়ি, জমি বাগান, আত্মীয়তা অথবা ভালবাসা যা একটি মানুষ বুক ভরে ভালবাসে জীবন ধরে, তার আয়ু কতদিন এমন ভাবনা সচরাচর আসে না। যারা পড়ে রইল তাদের হাহুতাশের সময় খুব কম, কারণ মানুষ ভুলে যেতে বড় ভালবাসে।

সতীশবাবু দীপাবলীকে খুব ধাক্কা দিলেন। ভুলে যাওয়া এক কথা আর ভুলবার চেষ্টা করা আর এক। স্ত্রীর মৃতদেহের পাশে যে-মানুষ পাথরের মতো বসে থাকতে পারেন সেই মানুষ দাহ করে ফিরে এসে অফিসের কাজ করবেন কেন? ভুলে যাওয়ার এই চেষ্টা যেন আন্ডারলাইন করা। স্ত্রীর মুখাগ্নি করেছিলেন ভদ্রলোক। পরদিন আচার অনুযায়ী পোশাক পরে অফিসে এলেন ঠিক সময়ে। যেন কিছুই ঘটে যায়নি এমন ভঙ্গিতে কাজ শুরু করলেন। ভুলে যাওয়ার এই অতিরিক্ত চেষ্টাই বলে দিচ্ছে তিনি ভুলতে পারবেন না। ধুয়ে ফেলার জন্যে জল দরকার হয়। অন্য বাবুদের মুখে দীপাবলী শুনেছে সতীশবাবু একবারও কাঁদেননি। জমে-যাওয়া সেই কান্নার ওপর প্রাত্যহিকের ভিত গড়ছেন ভদ্রলোক, যে-কোনও মুহূর্তে গলন বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

দুপুরের ছুটির আগে দীপাবলী সতীশবাবুকে ডেকে বলল, ‘সতীশবাবু, আমার মনে হয় কিছুদিন আপনার ছুটি নেওয়া উচিত।’

চমকে উঠলেন ভদ্রলোক, ‘কেন?’

উত্তরটা দেওয়া গেল না। কথা ঘোরাল দীপাবলী, ‘এইসময় তো কিছু নিয়মকানুনের মধ্যে আপনাকে থাকতে হচ্ছে। সেসব করে চাকরিতে আসলে পরিশ্রম হবে।’

‘না। একা বসে থাকলে দম বন্ধ হয়ে আসে। এখানে এলে তবু ফাইলপত্তর পাঁচজন মানুষ দেখে নিশ্বাস নিতে পারি। তবে আপনি যদি আদেশ করেন তা হলে ছুটি নিতে আমি বাধ্য।’ মাথা নিচু করে বললেন বৃদ্ধ।

মাথা নাড়ল দীপাবলী, ‘ঠিক আছে, যাতে আপনার স্বস্তি হয় তাই করুন।’

‘ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ।’ বৃদ্ধ মাথা নেড়ে দরজার দিকে এগিয়েই আবার ফিরে দাঁড়ালেন, ‘নেখালির জন্যে যে প্রপোজাল পাঠিয়েছেন সেটা খুব ভাল হয়েছে।’

‘লাভ হল না সতীশবাবু। ডি এম বলেছেন একটা পয়সাও পাওয়া যাবে না।’

‘সেকী! মন্ত্রীমহাশয় নিজের মুখে বলে গিয়েছেন সাহায্য দেবেন।’

‘আমার চেয়ে আপনার এই ব্যাপার ভাল বোঝার কথা সতীশবাবু। আপনি তো অনেকদিন ধরে কাজ করছেন ডিপার্টমেন্টে।’

সতীশবাবু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন।

দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, ‘কিছু বলবেন বলে মনে হচ্ছে।’

‘হ্যাঁ। আমি তো ব্রিটিশ আমল থেকে কাজ করছি। তা তারা সহজে প্রতিশ্রুতি দিত না। তবে দিলে অবশ্যই রাখত। ওটাই ওদের চরিত্র ছিল। কিন্তু এর জন্যে আমাদের খুব অসুবিধেয় পড়তে হতে পারে।’

‘অসুবিধে কেন?’

‘মেমসাহেব, যারা কখনও কিছু পায়নি, পাওয়ার আশা কেউ দ্যাখ্যায়নি, তারা চিরকাল মাথা নিচু করে থাকে। কিন্তু আমরা ওদের মনে বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিয়েছি পাবে বলে, স্বয়ং মন্ত্রীমশাইকে ওরা চোখে দেখল, এখন না পেলে হইচই করতে পারে।’

‘বুঝলাম। দেখা যাক।’ দীপাবলী গম্ভীর হয়ে গেল। সতীশবাবু ধীরে ধীরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। এবং তারপরেই জিপের আওয়াজ পাওয়া গেল। দীপাবলী ভেতরে যাবে বলে উঠে দাঁড়িয়েছিল, শব্দটা কানে আসামাত্র শক্ত হল। অর্জুন যদি মনে করে যখন ইচ্ছে তখন এলে সে দেখা করবে তা হলে ভুল করছে। অন্তত আজ দুপুরের ছুটির এই সময়ে সে দেখা করছে না। প্রয়োজন হলে অফিসের সময় আসতে বলে দেবে সে সতীশবাবুকে দিয়ে। কিন্তু সতীশবাবু ফিরে এসে বললেন, ‘দারোগাবাবু দেখা করতে এসেছেন। বললেন, মিনিট দুয়েকের ব্যাপার।’

দারোগার নাম শুনে অবাক হল সে। লোকটার কথা একেবারে ভুলে গিয়েছিল। সে মাথা নেড়ে বলল, ‘আসতে বলুন।’

দারোগা ঘরে এলেন, উলটোদিকের চেয়ারে বসলেন, বসে হাসলেন।

‘কী ব্যাপার, বলুন!’

‘আপনার নেখালির মানুষরা খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে একটা বড় গোলমাল হতে পারে।’ দারোগা হাসলেন।

‘কীসে মনে হচ্ছে এ-কথা?’

‘মনে হচ্ছে না, আমার কাছে পাকা খবর আছে। পরশুদিন বাইরে থেকে একজন লোক এসেছিল ওখানে। মনে হয় সেই তাতিয়েছে। লোকটি শুনলাম আপনার এখানেই উঠেছিল।’ আবার হাসলেন দারোগা।

‘আপনি কী বলতে চাইছেন?’ সোজা হল দীপাবলী।

‘কিছুই না। তার ওপর কুয়োগুলো অর্ধেক খুঁড়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। মানুষ জলের কোনও দেখাই পাচ্ছে না। যারা কাজ করছিল তারা নেখালির লোকদের বলে গিয়েছে আপনাদের অনুমতি না থাকায় কুয়ো খোঁড়া বন্ধ হয়েছে।’

‘মিথ্যে কথা। ওগুলো অর্জুনবাবু খোঁড়াচ্ছিলেন, আমরা বন্ধ করতে বলিনি।’

‘ও। অর্জুন নায়েক। আমার কিছু বলার নেই। আপনাকে জানানো আমার কর্তব্য তাই জানিয়ে গেলাম। ঝামেলা হলে সদর থেকে ফোর্স আনাতে হবে। আমার যা সম্বল তা দিয়ে কিছু করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। চলি মেমসাহেব, আর বিরক্ত করব না।’ উঠে দাঁড়ালেন দারোগা, ‘একটা কথা আপনাকে বলা হয়নি।’

দীপাবলী তাকাল।

‘আমার ট্রান্সফার অর্ডার এসে গিয়েছে। বর্ডারে পোস্টেড হয়েছি। স্মাগলার ধরতে হবে। শাপে বর একেই বলে। তাই যাওয়ার আগে আমি এমন কিছু করতে চাই না যা নিয়ে কাগজে লেখালেখি হয়। নমস্কার।’ দারোগা চলে গেলেন।

কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল দীপাবলী। মন্ত্রীর কোপনজরে পড়ে লোকটা যাতে আরও অসৎ হতে পারে তার রাস্তা খুঁজে পেল। অদ্ভুত শাসনব্যবস্থা। কিন্তু দারোগা যা বলল তা যদি সত্যি হয়—। সতীশবাবুকে ডাকতে গিয়ে থমকে গেল সে। যে-লোকটাকে শোকের কারণে সে ছুটি নিতে বলেছে তাকে ডেকে কাজ চাপানো কি উচিত হচ্ছে? এক মুহূর্ত চিন্তা করে দীপাবলী বাইরে বেরিয়ে এসে দেখল সতীশবাবু যাওয়ার জন্যে তোড়জোড় করছেন। পিয়ন দরজা বন্ধ করার জন্যে তৈরি। সে সতীশবাবুকে বলল, ‘আপনি নিশ্চয়ই সব কথা শুনতে পেয়েছেন। আমি ভাবছি বিকেলে একবার নেখালিতে যাব।’

‘কখন?’ সতীশবাবু ঝাপসা চোখে তাকালেন।

‘একটু বোদ মরলে, পাঁচটা নাগাদ।’

‘সাড়ে চারটেতে বেরুলে সন্ধের আগে ফিরে আসা যায়। আমি ঠিক ওই সময়ে চলে আসব যদি আপনার আপত্তি না থাকে।’

‘আপনি এই অবস্থায় যাবেন?’

‘আমাকে কাজ করতে দিন মা!’

দীপাবলী চমকে উঠল। এখানে আসার পর থেকে সতীশবাবু তাকে সবসময় সম্মান দেখিয়েছেন দূরত্ব রেখে। মেমসাহেব শব্দটি বলার সময় যথেষ্ট সম্ভ্রম দেখিয়েছেন। কিন্তু কখনও মা বলে ডাকেননি। সচরাচর কেউ তাকে মা বললে, অন্তত চাকরির ক্ষেত্রে, মা ডাক শুনতে তার যথেষ্ট আপত্তি আছে। কিন্তু এখন এইসময় দীপাবলীর মনে হল সতীশবাবু যেন শব্দটির প্রকৃত অর্থের কাছে আত্মসমর্পণ করছেন। সে তাই না বলে পারল না, ‘ঠিক আছে আসবেন।’

কাল রাতে লক্ষ করেনি, আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই দীপাবলী বুঝতে পেরেছে তিরির মেজাজ ভাল নেই। গম্ভীর মুখে সব কাজকর্ম করছে। কোনও কোনও জিনিস দু’বার বলতে হচ্ছে। গত রাত্রে সতীশবাবুকে সঙ্গে নিয়ে সে ফিরেছিল। উৎসুক তিরি হয়তো শমিতের শরীরের অবস্থা জানতে চেয়েছিল। সতীশবাবুর সামনে সেসব কথা তোলার ইচ্ছে হয়নি দীপাবলীর। তা ছাড়া কাজের লোকের কাছে আগবাড়িয়ে শমিতের চিকিৎসার গল্প করতেও ইচ্ছে হয়নি।

দুপুরের ছুটিতে ঘরে ঢুকে সে তিরিকে খাবার দিতে বলতে গিয়ে মন পালটাল। ধারে কাছে ছিল না মেয়েটা, গলা তুলে সে ডাকল, ‘তিরি!’

একটু বেশি সময় পরেই যেন তিরি দরজায় এসে দাঁড়াল। মুখ চোখ শাড়ির ভাঁজে যেন আলস্য মাখামাখি। মুখ বেশি শুকনো। দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, ‘কী হয়েছে?’

‘কার?’

‘তোর?’

‘কিছু না!’ তিরি মুখ ফেরাল।

‘শোন, নেখালিতে ঝামেলা পাকাতে পারে এমন কাউকে চিনিস?’

‘ঝামেলা?’ সত্যি হকচকিয়ে গেল তিরি।

‘হ্যাঁ, এই ধর সবাইকে খেপিয়ে দেওয়া, দল তৈরি করা, এসব কে করতে পারে ওখানে? তুই তো সবাইকে চিনিস তাই জিজ্ঞাসা করছি।’

‘আমি কী করে বলব!’

‘আশ্চর্য! ওখানে জন্মেছিস তুই আর জানিস না?’

‘আমি তো অনেকদিন ওখানে থাকি না।’

কথাটা সত্যি, কিন্তু দীপাবলীর মনে হল তিরি ইচ্ছে করেই তার সঙ্গে সহযোগিতা করছে না। সে বিরক্ত গলায় বলল, ‘খেতে দে।’

চা-বাগানে থাকার সময় বাড়িতে পোস্তর চল ছিল না। আশেপাশেও কেউ খেত বলে কখনও শোনেনি। কিন্তু এখন কলাই ডাল আর পোস্ত প্রায় নিয়মিত মেনু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিরি পোস্তটা ভালই রাঁধে। একটা দিশি দিশি গন্ধ বের হয় যার টানে অনেকটা ভাত খাওয়া যায়। আজ মাছ ডিম ছিল না। মাছ তো পাওয়া যায় কালেভদ্রে। তাও চালানি। ডিম বা মাংস রোজ খেতে ভাল লাগে না। মাংস কাটা হয় দু’দিন। পোস্তভাজা দিয়ে ডালভাত খেয়ে দীপাবলী বিছানায় ফিরে এল। এইসময় তার মনোরমার কথা খুব মনে পড়ে। অনেকদিন চিঠি লেখা হয়নি। আজ চিঠি লিখতে বসল সে। সামান্য দু’-চারটে কথা। নিজেরটা বলার চেয়ে মনোরমার খবর জানার আগ্রহই তাতে বেশি।

লেখা শেষ হলে দীপাবলী দেখল তিরি খেয়েদেয়ে বাইরের ঘরে যাচ্ছে, সম্ভবত সেখানেই শোবে সে। দীপাবলী বলল, ‘আজ আর হাসপাতালে গেলাম না, ডাক্তারবাবু বললেন, দাদাবাবুর কোনও বিপদের ভয় নেই।’

তিরি দাঁড়িয়ে পড়ল, ‘কাল তোমার সঙ্গে কথা বলেছে?’

‘হ্যাঁ। বিকেলে তো ভালই দেখে এলাম।’ বলতে বলতে সে লক্ষ করল তিরির মুখের চেহারা সহজ হয়ে যাচ্ছে। খুব অবাক লাগল। তিরি মেঝের দিকে মুখ নামিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কবে ফিরে আসবে দাদাবাবু?’

‘শরীর একদম ঠিক হলে ফিরবে। এই রোদ লাগিয়েও যে বেঁচে গেল তা ভাগ্যে লেখা ছিল বলেই।’

‘শুধু রোদ লাগিয়েছে নাকি? দিনভর মদ খেয়েছে।’

‘মদ মানে, দিশি মদ?’

‘তাই তো খায় সবাই। মাতলি বলে একটা বিধবা আছে, তার ঘরেই তো বসে ছিল সবাই। মাতলি কে জানো?’

‘না।’

‘যে তোমাকে এসে ভাল ভাল কথা বলে তার সঙ্গে ছিল এতদিন, এখন গরিব মেয়েগুলোকে লোভ দেখিয়ে নিয়ে যায় বাবুর কাছে।’

‘তুই এত কথা জানলি কী করে?’

‘জানি।’

‘মাতলির ঘরে দাদাবাবু গেল কী করে?’

‘সবার তো হাড়জিরজিরে চেহারা। বাবুর পয়সায় মাতলির গতর ভাল। বয়স হয়েছে বোঝা যায় না। পুরুষমানুষকে টানবেই। সপ্তাহে একদিন এসে নেখালিতে থাকে ধান্দার জন্যে। মরবি তো মর দাদাবাবুও ওইদিন গিয়েছিল।’

‘কিন্তু তুই এত কথা বলছিস, কেউ এসেছিল নেখালি থেকে?’

‘হ্যাঁ।’

‘কে?’

‘কে আবার, ওই মাতলি।’

‘এখানে এসেছিল?’

‘হ্যাঁ। দাদাবাবুকে নিয়ে তুমি হাসপাতালে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে মাথায় টোকা দিয়ে এসেছিল। ওই রোদ বলে দরজা খুলেছিলাম।’

‘কী জন্যে এসেছিল?’

‘কী জন্যে আবার, জানতে।’

‘জানতে! কী জানতে?’

‘দাদাবাবু তোমার কে হয়।’

‘তুই কী বললি?’

‘বললাম আত্মীয়। তা জিজ্ঞাসা করল কীরকম আত্মীয়, কাছের না দূরের? আমি বললাম একেবারে নিজের মামাতো ভাই। না বললে তো ওর পেট খালি থাকত। জিজ্ঞাসা করলাম ওর এসব খবরে কী দরকার। তা হেসে বলল, কখন কী কাজে লাগে কে বলতে পারে। দারোগাবাবু নাকি তোক পাঠিয়ে জানতে চেয়েছে তার ঘরে কে ছিল? একদম মিথ্যে কথা। আসলে খবরটা ও দেবে অর্জুনবাবুকে। ডাইনিটা সেইজন্যে এসেছিল।’

‘কখন গেল?’

‘আমি যখন চেঁচামেচি করলাম।’

‘চেঁচামেচি কেন করতে হল?’

‘বাঃ করব না? আমাকে বলে কিনা, বাবুদের ঘরের খেয়ে শরীরটাকে কী সাজিয়ে রেখেছিস তিরি? অর্জুনবাবুর তোকে দেখে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। কেন এখানে ভাত কাপড়ের জন্যে পড়ে আছিস। তুই একবার রাজি হয়ে গেলে রানির মতো থাকতে পারবি। এটা শুনে আমি চুপ করে থাকব?’

প্রচণ্ড রাগ হয়ে গেল দীপাবলীর, ‘ঠিক আছে, আমি অর্জুনবাবুর সঙ্গে কথা বলব।’

সঙ্গে সঙ্গে আঁতকে উঠল তিরি, ‘না না, কখ্খনও বোলো না।’

‘কেন?’ কপালে ভাঁজ পড়ল দীপাবলীর।

‘তোমার সঙ্গে যে ভাল ব্যবহার করে তাকে তাই করতে দাও। তা হলে চট করে খারাপ করতে পারবে না।’

‘খারাপ ব্যবহার যে করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়?’

মাথা নাড়ল তিরি, ‘না, করবে না।’

‘আমি সরকারি চাকরি করি বলে?’

‘না না! লোকটার কত পয়সা, কলেজে পড়েছে, ইচ্ছে করলেই শহর থেকে সুন্দরী বউ আনতে পারে। কিন্তু বিয়ে করবে না। ওর নজর সবসময় নিচু জাতের মেয়েদের দিকে। মাতলি বলে মেয়ে ফরসা হলে নাকি ওর মনে ধরে না। তাই তোমার কোনও ক্ষতি করবে না।’

চুপ করে বসে রইল দীপাবলী। এসব কথাবার্তার সঙ্গে তার দেখা অর্জুনের চেহারাটা কি মিলছে? গত রাত্রের নির্জন রাস্তায় অর্জুন মদ খেয়েও তাকে তো কোনও অসম্মান করেনি। সেটা কি সে নিচুতলার মেয়ে নয় বলেই? এমন অদ্ভুত চরিত্রের কথা সে কখনও শোনেনি।

দীপাবলী বলল, ‘আজ বিকেলে নেখালিতে গেলে মাতলির দেখা পাব?’

‘না। ও আবার হাটতলায় চলে গিয়েছে।’

‘হাটতলায়?’

‘হ্যাঁ, ওখানে অর্জুনবাবু ওর ঘর করে দিয়েছে। কিন্তু নেখালিতে কেন যাবে তুমি?’ তিরি এগিয়ে এল।

‘ওখানে নাকি কিছু লোক ঝামেলা পাকাবার চেষ্টা করছে।’

‘কেন?’

‘সেটাই জানতে হবে। তুই তো কিছু বললি না কে ঝামেলা পাকাতে পারে।’

‘ওখানকার ছেলেদের সর্দার হল মিঠাই। অর্জুনবাবুর লোক।’

‘মিঠাই। কী করে লোকটা?’

‘অর্জনবাবুর কাছে কাজ করে। দাদাবাবুর সঙ্গে সারাদিন মিঠাই ছিল। আচ্ছা দিদি, দাদাবাবু এমন ভুল কেন করল বলো তো? কেন সারাদিন মাতলির ঘরে বসে মদ খেতে গেল!’ ঝরঝর কেঁদে ফেলল তিরি।

এতক্ষণ যা ছিল ছড়ানো ছিটানো, চোখ উপচে জল পড়তে দেখে তা হল জমাট। শমিত সম্পর্কে দু’দিন দেখেই তিরি কেন এত সহানুভূতিশীল হয়ে উঠল? শমিতের একটা আকর্ষণ আছে যা শিক্ষিত মেয়েদের আকর্ষিত করে। জীবন নকল করে বড় হয়ে ওঠা তিরির তাতে শুধু ভয় পাওয়ার কথা। এমন কোনও অবকাশ খুব বেশিক্ষণের ছিল না যাতে তিরি মোহিত হতে পারে। আর এইটুকু ভাবলেই শরীর গুলিয়ে উঠল দীপাবলীর। শমিত আর যাই হোক নিজের রুচি এত নীচে নামাবে না। সে অন্তত নিজে প্রশ্রয় দেবে না। ছিল তো দুটো রাত আর আধখানা দিন। আধখানাও নয়। তার মধ্যে সময় পাওয়ার কথাও নেই। কিন্তু এই চোখের জল দীপাবলীর সব হিসেব গুলিয়ে দিল।

সে নিজের মুখেও কিছু প্রশ্ন করতে পারছিল না অথচ জানবার জন্যে ছটফটানি শুরু হয়ে গেল। দীপাবলীর কাছ থেকে কোনও সাড়া না পেয়ে তিরি ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল দ্রুত পায়ে। হয়তো কান্নার জন্যে ওর লজ্জা হয়েছিল। দীপাবলী নিজেকে বোঝাবার চেষ্টা করল, সে হয়তো খামোকা নীচে নামছে। এমনই হওয়া স্বাভাবিক। মেয়েটা খুব নরম মনের, চোখের সামনে একটি সুস্থ মানুষকে অসুস্থ হতে দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে চোখের জল ফেলেছে।

অথচ সারাটা দুপুর একমুহূর্ত মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় থাকল না। বিকেল হবার আগেই তৈরি হয়ে নিল সে। চা নিয়ে এল তিরি। দীপাবলী বলল, ‘কাল আমি দাদাবাবুর জিনিসপত্র নিয়ে শহরে যাব।’

‘কেন? দাদাবাবু তো এখানেই ফিরে আসবে।’

‘না। সে তার কাজে চলে যাবে।’

‘কিন্তু দাদাবাবু তো এখানে অনেকদিন থাকবে বলেছে।’

‘কখন বলল তোকে?’

‘সকালবেলায় তুমি যখন অফিসে ছিলে।’

‘আর কী কথা হয়েছে তোর সঙ্গে?’

তিরি মুখ নামাল। দীপাবলীর মনে হল মেয়েটা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছে। সে খুব সহজ গলায় বলল, ‘তিরি, তুই ঠিক করে বল সেদিন সকালে কী হয়েছিল?’

হঠাৎ দীপাবলীর পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল তিরি। সামলাতে না পেরে সরে যাওয়ার সময় কাপ থেকে চা চলকে পড়ল প্লেটে, প্লেট থেকে মাটিতে, তিরির চুলেও। রাগত গলায় দীপাবলী বলে উঠল, ‘কী করছিস তুই?’

হঠাৎ ফুঁপিয়ে উঠল তিরি, ‘আমার জন্যে, আমার জন্যে দাদাবাবুর এই অবস্থা হল। আমি না বলেছিলাম বলে মাতলি দাদাবাবুকে ঘরে নিয়ে যেতে পারল। তুমি আমার ওপর রাগ কোরো না দিদি, আমাকে তোমার কাছ থেকে তাড়িয়ে দিয়ো না। তা হলে আমি মরে যাব।’

ততক্ষণে দীপাবলী চায়ের কাপ নামিয়ে রেখেছে। নিজের দুটো কান কি তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল? সমস্ত শরীর গুলিয়ে উঠল তার। টলতে টলতে বাইরে ঘরের চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিল। শমিত! শমিত তার বাড়িতে এসে একটু সুযোগ পেয়েই একটি অশিক্ষিত কাজের মেয়েকে কামনা করেছিল। এত শরীরসর্বস্ব মানুষ! কত বড় বড় কথা, জীবন সম্পর্কে গম্ভীর আলোচনা, সব মেকি! একই লোক নির্জন দুপুরে তাকে কামনা করেছে আবার তিরির মতো রক্তমাংসের তালকে আকাঙক্ষা করতে একটুও পিছপা হয়নি। দীপাবলীর মনে হল মেয়েটাকে এই মুহূর্তে তাড়িয়ে দেয়। সে উঠল। দরজায় দাঁড়িয়ে দেখল মেয়েটা তেমনি মেঝেতে পড়ে কাঁদছে। হঠাৎ মনে হল শমিতের সঙ্গে ওর ঠিক কী কথা হয়েছিল তা জিজ্ঞাসা করা হয়নি। শমিতের কোন চাহিদায় ও না বলেছিল তা অনুমানে স্পষ্ট কিন্তু উচ্চারণে নয়। আর এই প্রশ্ন সে বেঁচে থেকে তিরিকে করতে পারবে না। কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটা আপত্তি করেছিল। এখন যদিও ও সেই কারণে আফশোস করছে কিন্তু আপত্তি করাটাই ওর এ-বাড়িতে থাকার পক্ষে যোগ্যতা বাড়িয়েছে। এইসময় বাইরের দরজায় কড়া নড়ল। সে তিরিকে বলল, ‘আমরা বেরুচ্ছি, দরজা বন্ধ করে দে। আমি না এলে কখনও খুলবি না।’

সতীশবাবু ছাতি মাথায় বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দীপাবলীকে বেরিয়ে আসতে দেখে যেন চমকে উঠলেন, ‘আপনার কিছু হয়েছে?’

সামলে নিতে চাইল দীপাবলী, ‘না, না তো৷’ সতীশবাবু কিছু বললেন না। দীপাবলী নিজের ছাতা খুলল। রোদের তেজ এখনও মরেনি। অথচ রোদ মরতে আর এক ঘণ্টাও দেরি নেই। চুপচাপ ওরা মেঠো পথ দিয়ে হাঁটতে লাগল। বুকের মধ্যে একটা গরম বাতাস কেবলই পাক খাচ্ছে। নিজেকে প্রচণ্ড প্রতারিত বলে মনে হচ্ছে এখন। হঠাৎ একটা কাঁপুনি এল। জন্মাবার পর থেকেই ঈশ্বর নামক ব্যক্তিটি তাকে নিয়ে অদ্ভুত খেলা খেলছেন। প্রতিটি স্তরে তাকে আঘাত দিয়েও সেই ভদ্রলোকের উৎসাহ কমছে না। দেখা যাক আর কী অপেক্ষা করে আছে বাকি জীবনে।

দূরের রাস্তায় ধুলোর ঝড় উঠেছে। সতীশবাবু সেদিকে তাকিয়ে বললেন, ‘একটু দাঁড়ান। মনে হচ্ছে আমাদের জন্যেই দারোগাবাবুর জিপ আসছে।’

‘দারোগাবাবুর জিপ বুঝলেন কী করে?’

‘এখানে জিপ আছে তাঁর আর অর্জুনবাবুর। তিনি এত আস্তে চালান না।’

জিপটা সামনে এসে দাঁড়াতেই দারোগাবাবু নেমে এলেন, ‘নমস্কার ম্যাডাম, আপনি কি নেখালিতে যাচ্ছেন?’

‘হ্যাঁ।’ দীপাবলী মাথা নাড়ল।

‘তা হলে চলুন, আমিও ওখানে যাচ্ছি।’

‘ভালই হল, চলুন। আসুন সতীশবাবু।’ দীপাবলী এগিয়ে গেল।

জিপ চালু হলে দারোগা বললেন, ‘মানুষগুলো খুব নিরীহ ছিল বুঝলেন, কিন্তু পরশু আপনার আত্মীয় এসে, কিছু মনে করবেন না, মাথা খারাপ করে দিয়ে গেল ওদের।’

‘আপনার কাছে কোনও প্রমাণ আছে?’

‘প্রমাণ মানে মানুষের কথাবার্তা। আজ মাতলি বলে নেখালির একটা মেয়ে যে-স্টেটমেন্ট দিয়েছে তা থেকেই ব্যাপারটা স্পষ্ট।’

হঠাৎ দীপাবলী বলল, ‘তা হলে লোকটাকে অ্যারেস্ট করছেন না কেন?’

‘না, মানে, উনি তো আপনার কাছে ছিলেন—।’

‘তাতে কিছু এসে যায় না। ভদ্রলোক অসুস্থ অবস্থায় সদর হাসপাতালে আছেন। স্পেসিফিক অভিযোগ থাকলে আপনি অ্যাকশন নিন।’

‘কিন্তু উনি আপনার আত্মীয়—!’

‘দেখুন, অন্যায় করে আমার আত্মীয় বলে কেউ পার পেতে পারে না।’

দারোগা নড়েচড়ে বসলেন, ‘থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাডাম।’

দূর থেকে জিপ দেখতে পেয়েই বোধহয় নেখালির লোকজন জড়ো হতে আরম্ভ করেছিল। জিপ থেকে নামমাত্র প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেল, সম্ভবত দারোগা সঙ্গে আছেন বলে। কিন্তু তারপরই একটা লোক যেই চেঁচানো শুরু করল অমনি সবাই গলা মেলাল। পরিষ্কার গালাগালি দিতে শুরু করল ওরা। যা সহজ করে বললে দাঁড়ায়, আমরা কি রাস্তার কুকুর যে খাবারের লোভ দেখিয়ে কেড়ে নেবে? মন্ত্রীকে নিয়ে এসে বড় বড় কথা বলা হচ্ছিল। মেয়েছেলে মাথার ওপর উঠলে বোঝা যায় সে কাছা দেয়নি। তিন দিনের মধ্যে সব কুয়ো খুঁড়ে দিতে হবে, সাত দিনের মধ্যে টিউবওয়েল বসাতে হবে, নইলে আমরা ব্লক অফিস ঘেরাও করব। ইত্যাদি ইত্যাদি।

দীপাবলী সতীশবাবুকে বলল, ‘চলুন তো, কতখানি কুয়ো খোঁড়া হয়েছে দেখে আসি।’

সতীশবাবু মাথা নেড়ে এগিয়ে যেতেই সেই লোকটা কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে পথ আটকাল, ‘এই মেয়েছেলের চাকর, আগে কথা দিতে বলো তোমার মেমসাহেবকে তারপর এই গ্রামে হাঁটবে।’

সতীশবাবু জবাব দেবার আগেই দীপাবলী জানতে চাইল ‘কী বলতে চাও?’

‘কী বলব জানেন না? কেন ওই কুয়োগুলো খোঁড়া বন্ধ করলেন?’

‘বন্ধ আমি করিনি, অর্জুনবাবু করেছেন।’

‘হ্যাঁ। কিন্তু আপনি বাধা দিয়েছেন বলে উনি বন্ধ করেছেন। আপনি বলেছেন সরকারি টাকায় কুয়ো নলকূপ হবে। সেজন্যে কুয়ো খোঁড়া হল না আমরা জলও পেলাম না। কবে সরকার পয়সা দেবে?’

দীপাবলী জবাব দিতে গিয়ে থেমে গেল। সরকার এখনই পয়সা দেবে না এ-কথা এদের বলা অসম্ভব। কিন্তু অর্জুন নায়েক কী চাল চালল? সে নিচু গলায় বলতে পারল, ‘একটু সময় লাগবে।’

‘মিথ্যে কথা। নেখালিতে কোনওদিন কিছু করেনি সরকার, কোনওদিন করবে না।’

‘কিন্তু আমি তো কিছু করতেই চেয়েছি।’

‘না। আপনি ফালতু নাম কিনতে চেয়েছেন। মন্ত্রীকে এনে আমাদের দেখিয়ে প্রমোশন পেতে চেয়েছেন। চলে যান এখান থেকে!’

‘তোমার নাম মিঠাই?’ আচমকা প্রশ্ন করল দীপাবলী।

লোকটা হকচকিয়ে গেল, ‘হ্যাঁ।’

‘পরশুদিন শহরের বাবুর সঙ্গে সারাদিন এখানে মদ খেয়েছ?’

‘কে বলল?’

‘সেই বাবু তোমাদের এসব কথা শিখিয়েছে?’

‘এটাই তো ঠিক কথা।’

‘অর্জুন নায়েকের লোক তুমি। তুমি জানো না অর্জুনবাবু কেন কুয়ো খোঁড়া বন্ধ করেছে? কেন এদের ক্ষতি করছ তুমি?’

লোকটা মিইয়ে যাচ্ছিল। তার সমস্ত শক্তি সে ইতিমধ্যে খরচ করে ফেলেছে। হঠাৎ দারোগা বললেন, ‘ম্যাডাম, সরকার কি এদের জন্যে এখনই ওসব জিনিসের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন?’

দীপাবলী মাথা নাড়ল, ‘না।’

সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল। দারোগা ব্যস্ত হলেন, ‘চলুন ম্যাডাম, এখানে থাকা আর ঠিক হবে না।’

এমনকী সতীশবাবুও বললেন, ‘এদের উত্তেজনা না কমা পর্যন্ত কথা বলা যাবে না।’

পুরোটা পথ নির্বাক ফিরে এল দীপাবলী। নামিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় দারোগা বললেন, ‘তা হলে আমি এস পি-কে জানাই ব্যাপারটা?’

‘জানান।’ দীপাবলী দরজায় ধাক্কা মারতেই তিরি সেটা খুলল। সতীশবাবু তখনও দাঁড়িয়ে। তাঁর দিকে তাকিয়ে দীপাবলী বলল, ‘আমার পক্ষে আর এই চাকরি করা সম্ভব নয় সতীশবাবু, আমি রেজিগনেশন দেব।’

‘মেমসাহেব, চাকরিতে এমন হয়।’

‘হয় হোক! ভাল করতে গিয়ে বদনাম নিতে রাজি নই। অনেক হয়েছে। আপনি এখন বাড়ি যান।’ ভেতরে চলে গেল সে। তারপর কাগজ কলম বের করে নিজের পদত্যাগপত্র লিখল গুছিয়ে। এই দেশের প্রশাসনব্যবস্থাকে তীব্র আক্রমণ করল সে। হ্যারিকেনের আলোয় নিজের নাম সই করে চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিতেই তিরি এসে দাঁড়াল সামনে, ‘দরজা কি খুলব?’

‘কেন? কে এসেছে?’ বিরক্ত গলায় জিজ্ঞেস করল দীপাবলী।

নিচু স্বরে তিরি জবাব দিল, ‘দাদাবাবু!’

সকল অধ্যায়

১. ১. কাকভোর বলে কিছু নেই এখানে
২. ২. টেলিগ্রামটা ছিঁড়ল দীপাবলী
৩. ৩. এরকম একটা দিনের কথা
৪. ৪. অর্জুন নায়েক
৫. ৫. ঘুম এসেছিল অনেক রাত্রে
৬. ৬. এস ডি ওর অফিসে
৭. ৭. অবস্থা খুব গোলমেলে
৮. ৮. দীপাবলী বসে পড়ল
৯. ৯. সতীশবাবু
১০. ১০. দাদাবাবু
১১. ১১. বাঙালির চরিত্র
১২. ১২. শুতে বসতে অস্বস্তি
১৩. ১৩. ন্যাড়া গাছটা
১৪. ১৪. হাটতলা পেরিয়ে
১৫. ১৫. সকালে উঠেই তিরি চলে গিয়েছে
১৬. ১৬. দোতলা বাসের জানলা
১৭. ১৭. জীবন দাবা খেলার মত
১৮. ১৮. এ এক অপূর্ব আনন্দ
১৯. ১৯. দিল্লী শহরে
২০. ২০. ইন্টারভিউ কেমন হল
২১. ২১. খাম খুলে চিঠির ওপর নজর
২২. ২২. বুকের ভেতর জমে থাকা ছেলেবেলা
২৩. ২৩. ঘুম ভেঙ্গেছিল সাতসকালে
২৪. ২৪. কিছু জিনিসপত্র কেনার ছিল
২৫. ২৫. যাত্রাপথে
২৬. ২৬. কিছু ভাল ছেলেমেয়ে
২৭. ২৭. কর্মচারীদের আচরণবিধি
২৮. ২৮. শুভ্রাদের বাড়ির সামনে
২৯. ২৯. নতুন ফ্ল্যাটে
৩০. ৩০. দিল্লীতে দূরত্ব কোন সমস্যাই নয়
৩১. ৩১. সরকারি চাকরিতে
৩২. ৩২. চাকরির ক্ষেত্রে
৩৩. ৩৩. ঘরে বাইরে নিরন্তর যুদ্ধ
৩৪. ৩৪. প্রাথমিক পর্বে নির্লিপ্ততা
৩৫. ৩৫. এ এক অদ্ভুত সম্পর্ক
৩৬. ৩৬. দীপাবলী এবং অলোক
৩৭. ৩৭. হাওড়া স্টেশনে
৩৮. ৩৮. কলকাতা অফিসের এক নম্বর বস
৩৯. ৩৯. সুখের চেয়ে স্বস্তি ভাল
৪০. ৪০. মনোরমা কলকাতায়
৪১. ৪১. মনোরমার জ্বর
৪২. ৪২. মনোরমার বিদ্রোহ
৪৩. ৪৩. নিজের মনের অন্ধকার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন