৮. দীপাবলী বসে পড়ল

সমরেশ মজুমদার

দীপাবলী বসে পড়ল, ‘আপনি কী বলছেন?’ বড়বাবু চারপাশে তাকিয়ে গলা নামালেন, ‘আমি বলেছি এ-কথা সাহেবকে বলবেন না। আপনাদের এলাকায় উনি যা চাইবেন তাই হবে, যা চাইবেন না—।’ মাথা নেরে বুজিয়ে দিলেন ভদ্রলোক। দিপাবালী বিশ্বাস করতে পারছি না।

‘কী থেকে মনে হছে ওর জন্নে সব বানচাল হয়ে যাবে?’

‘আর আমাকে দিয়ে বলাবেন না। সাহেব জানলে চাকরি চলে যাবে।’

‘কিন্তু আমাকে একটা কিছুর আভাস দিন।’

‘গতকাল ভদ্রলোক এসে সাহেবের সঙ্গে কথা বলে যাওয়ার পর তিনি আমাকে বলেছেন নেখালির ফাইলটা কিছুদিন আটকে রাখতে। গরিব মানুষগুলোর উপকার করতে চেয়েছিলেন কিন্তু কী আর হবে। এদিকে পাবলিসিটি যা হবার হয়ে গিয়েছে।’

‘পাবলিসিটি?’ হাঁ হয়ে গেল দীপাবলী।

‘মন্ত্রী আপনার অনুরোধে সব কাজ ফেলে বহু দূর পথ পাড়ি দিয়ে নেখালি গ্রামে গিয়ে নিজের চোখে গরিব মানুষদের কষ্ট দেখে এসেছেন এ-খবর তো সব কাগজেই ছাপা হয়েছে?’

‘খবরের কাগজ জানল কী করে?’

‘তা আমি জানব কী করে বলুন?’

‘যাক, যত দিন যাচ্ছে তত অভিজ্ঞতা বাড়ছে আমার। আপনি একটু ডি এম-কে খবরটা দিন।’ বিরক্ত গলায় বলল দীপাবলী।

বড়বাবু উঠে ডি এম-এর ঘরে ঢুকে গেলেন। গরমে নয়, রাগে শরীর জ্বলছিল দীপাবলীর। মন্ত্রীমশাই নিজে তাকে যে-কথা দিয়ে গিয়েছেন তা উলটে যায় কী করে! বড়বাবু বেরিয়ে এলেন, ‘আর দু’মিনিট অপেক্ষা করতে বললেন উনি।’

‘এখনও কি মিটিং চলছে?’

‘হ্যাঁ।’

‘অর্জুন নায়েকের সামনেই?’

‘হ্যাঁ, উনি ডি এম-কে কথা দিয়েছেন ওঁর এলাকায় কোনও গোলমাল হবে না।’

‘ওঁর এলাকা মানে?’

‘আপনার অফিশিয়াল জুরিসডিকশনই ওঁর এলাকা।’

দীপাবলীর ইচ্ছে করছিল এখনই এই অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে। তারপরই মনে হল সেটা করে কোনও লাভ হবে না। রাইটার্স বিল্ডিংসের সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগ তাকে এই অফিসের মাধ্যমেই করতে হবে। ডি এম হলেন একটি জেলার ঈশ্বর। তাঁর সঙ্গে বিরোধ করে জেলায় বসে কাজ করা অসম্ভব। অতএব লোকটিকে বোঝাতে হবে।

এইসময় পিয়ন এসে দীপাবলীকে জানাল ডি এম তার সঙ্গে দেখা করতে চান। ওঠার সময় বড়বাবু আবার নিচু গলায় বললেন, এসব কথা সাহেবকে বলবেন না, অ্যাঁ?’

দীপাবলী কোনও কথা না বলে এগিয়ে গিয়ে ডি এম-এর ঘরে ঢুকল, ‘আসতে পারি?’ টেবিলের উলটোদিকে বসা অর্জুন নায়েককে কিছু বলতে বলতে পাইপ ধরাচ্ছিলেন ডি এম, চোখ ফিরিয়ে মাথা নাড়লেন। ধবানো হয়ে গেলে বললেন, ‘বসুন।’

পরপর চারটি চেয়ার। অর্জুনের সঙ্গে দুই চেয়ারের ব্যবধান রেখে দীপাবলী বসল। অর্জুন এমন ভঙ্গিতে ডি এম-এর মাথার পেছনে টাঙানো মহাত্মা গাঁধীর ছবির দিকে তাকিয়ে আছে যেন কস্মিন কালেও তার সঙ্গে পরিচয় ছিল না।

ডি এম ধোঁয়া ছেড়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী ব্যাপার? আপনি এখানে?’

একটু স্বস্তি পেল দীপাবলী। তা হলে কি অর্জুন শমিতের অসুস্থতার কথা ডি এম-কে বলেনি। বললে অনেক কথাই বলতে হত। সে বলল, ‘আমি একটা প্রপোজাল পাঠিয়েছিলাম থ্রু প্রপার চ্যানেল, যদি ওটা তাড়াতাড়ি রাইটার্সে পৌঁছায় তা হলে ভাল হয়।’

‘কোন প্রপোজালের কথা বলছেন বলুন তো?’ ডি এম-এর চোখ ছোট হল।

এগুলো ন্যাকামি। চটে গেল দীপাবলী। সে রোজ গাদা গাদা প্রপোজাল পাঠায় না। না জানার কোনও কারণ নেই ভদ্রলোকের। তবু গলার স্বর ভদ্রস্তরে রেখে সে জবাব দিল, ‘নেখালি এবং আশেপাশের গ্রামগুলোর জন্যে মিনিস্টার যেসব স্টেপ নিতে বলেছিলেন সেগুলোর কথা বলেছি।’

‘ও, তাই বলুন। ঠিক আছে, আপনি তো পাঠিয়েছেন, আমি দেখছি। কিন্তু এই কারণে এমন গরমে আপনার আসার দরকার ছিল না।’

দীপাবলী কী বলবে বুঝতে পারছিল না। এই ভদ্রলোক সেদিন মন্ত্রীর সামনে তার সঙ্গে একদম অন্যরকম ব্যবহার করেছিলেন। ইনি যদি এখন বলেন দেখছি, তা হলে তার আর কিছু করার থাকে না। এবার ডি এম অর্জুনের দিকে তাকালেন, ‘আপনি তো সেদিন বললেন নেখালিতে কুয়ো খুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। ওদের তো প্রবলেম জলের। সেটা মিটে গেলে তো অনেক সমস্যা সহজ হয়ে যাবে।’

অৰ্জুন বসে ছিল প্রায় শরীর এলিয়ে। সেই অবস্থায় বলল, ‘আজ বিকেলের মধ্যে কুয়ো খোঁড়া হয়ে যাবে। কথা দিয়ে না রাখার অভ্যেস তো আমার নেই। তারপর মিনিস্টার কথা আদায় করে গিয়েছেন।’

‘তা হলে তো চুকে গেল।’ ডি এম দীপাবলীর দিকে তাকালেন।

‘কী করে? শুধু একটা-দুটো কুয়ো খুঁড়লেই সমস্যার সমাধান হয় না। আপনি বোধহয় আমার পাঠানো কাগজপত্রে চোখ রাখার সময় পাননি।’

‘দেখুন মিসেস ব্যানার্জি, সরকার চালাই আমরা, মিনিস্টাররা নয়। তাঁরা এসে হুটহাট কত কী বলে যেতে পারেন, কাগজে ছাপা হলে পরের নির্বাচনে কাজে লাগে। কিন্তু আমরা সেটা করতে পারি না। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর জেলার সব ব্লক থেকে একসঙ্গে যেসব প্রপোজাল এসেছে তা আগামী দশ বছরেও মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। সবাই জল বিদ্যুৎ রাস্তা চাইছে। আপনি লাকি কারণ অর্জুনবাবুর মতো একজন ধনী সমাজসেবী আপনার ব্লকে থাকেন। উনি নিজে এগিয়ে এসে যা করছেন অন্য ব্লকে তার ওয়ান পার্সেন্টও হচ্ছে না। আপনি কি মনে করেন অভাবগুলো আপনার ব্লকেই আছে অন্য কোথাও নেই?’

‘আমি সে-কথা বলিনি।’

‘বেশ। কিন্তু এত প্রপোজাল রাইটার্সে পাঠালে মিনিস্টার আমাকে পাগল ভাববেন।’

‘কিন্তু মিনিস্টার নিজে আমাকে পাঠাতে বলেছিলেন।’

‘মিসেস ব্যানার্জি, জেলায় এসে বলা এক আর রাইটার্সে বসে বলা সম্পূর্ণ আলাদা। যাক, এ নিয়ে আর বেশি কথা না বলাই ভাল।’

‘আমারটা পাঠাতে আপনি আপত্তি করছেন কেন?’

‘কারণ কালই আমি সার্কুলার পেয়েছি নেক্সট বাজেটের আগে কোনও খাতে নতুন কোনও খরচ করা চলবে না।’ ডি এম আবার পাইপ ধরালেন, ‘আপনার সঙ্গে এসব কথা আমি নিশ্চয়ই বলতাম না। কিন্তু সেদিন মিনিস্টারের সামনে আপনি যে সাহস দেখিয়েছেন তারই অনারে বললাম।’

‘আমি যদি মিনিস্টারের সঙ্গে দেখা করি, অনুমতি দেবেন?’

‘রাইটার্সে গিয়ে?’ চমকে উঠলেন ডি এম।

মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল দীপাবলী।

‘আপনি খেপেছেন? না, এই অনুমতি আপনাকে দিতে পারি না।’

‘তা হলে আমি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা রাখা যাবে না?’

‘প্রতিশ্রুতি? কাকে?’

‘যাদের অবিলম্বে সাহায্য দরকার।’

ডি এম হাসলেন, ‘মিসেস ব্যানার্জি, আপনার বয়স কম, সবে চাকরিতে ঢুকেছেন। আপনার এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু দেখুন, আমাদের সবাইকে সীমাবদ্ধ ক্ষমতায় কাজ করতে হয়। যা চাই কখনও কি পাই? ঠিক আছে, এবার আপনি আসতে পারেন।’

দীপাবলী উঠে দাঁড়াল। এক মুহূর্ত। তাকে ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডি এম বললেন, ‘ঠিক আছে, আপনার কথা আমার মনে থাকবে। সুযোগ পেলেই যাতে একটা কিছু ব্যবস্থা করা যায় সেই চেষ্টা করব।’

দীপাবলী আর দাঁড়াল না। ঘরের বাইরে আসামাত্র বড়বাবু তাকে থামালেন, ‘স্যারকে কিছু বলেননি তো?’.

‘না। আপনি আমার প্রপোজালটা ফেরত দিন তো।’

মাথা নাড়লেন ভদ্রলোক, ‘তা কী করে হয়। এখন তো ওগুলো সরকারি কাগজ। সাহেবের অনুমতি না পেলে আমি ফেরত দিতে পারি না।’

দীপাবলী আর দাঁড়াল না। তার শরীর জ্বলছিল। মধ্যাহ্নের সূর্যতাপ এতটা জ্বলুনি ছড়ায়নি। শুধু সে বুঝতে পারছিল না তার কী করা উচিত।

হাসপাতালে পৌঁছে একটা ভাল খবর পাওয়া গেল। শমিতের চেতনা ফিরেছে। এ-যাত্রায় আর বিপদ নেই। সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে নার্স খবরটি দিয়ে বলল, ‘আচ্ছা দিদি, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?’

ঘাড় বেঁকিয়ে দীপাবলী বলল, ‘কী ব্যাপারে?’

‘আপনি একা মেয়ে, সরকারি অফিসারি করতে অসুবিধে হয় না?’

‘অসুবিধে! কেন?’

‘না, মানে, আমি তো সামান্য নার্সের চাকরি করি, তবু কতরকম ঝামেলায় পড়তে হয়। আমার বাড়িতে স্বামী-ছেলেমেয়ে আছে তবু পুরুষগুলো নাছোড়বান্দা। আপনি কেমন করে এত সাহস পান?’

‘আমার সম্পর্কে আপনি জানলেন কী করে?’

‘কাগজে পড়েছি। ওই মন্ত্রীর সঙ্গে ঘটনাটা। তারপর শহরে সবাই এ নিয়ে আলোচনা করেছে। আজ যখন আপনি পেশেন্টকে ভরতি করতে এলেন তখন তো জানাজানি হয়ে গেল। পেশেন্টই বলল আপনি একা থাকেন।’

বড় চোখে মহিলাটিকে দেখল দীপাবলী। আদৌ সুন্দরী নন। বয়স মধ্য তিরিশ। তবু চাকরি করতে এসে সেই চিরন্তন সমস্যায় পড়েছেন। সে বলল, ‘এসব সমস্যা তো একদিনে চলে যাবে না ভাই। তবে আপনি যদি পাত্তা না দেন তা হলে ওদের ধৈর্য একসময় ভেঙে যাবেই।’

নার্সটি আর কথা না বলে সরে দাঁড়াল। বোঝা গেল দীপাবলীর এই যুক্তি তার পছন্দ হচ্ছে না। দীপাবলী আর দাঁড়াল না।

শমিত চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। মুখের চেহারা সামান্য বদলালেও অসুস্থতা পুরোদমে রয়েছে। টুলটা টেনে নিয়ে পাশে বসতেই চোখ মেলে তাকাল। তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল।

দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, ‘কেমন লাগছে।’

‘ফাইন।’ গলার স্বর খুব দুর্বল।

‘এরকম কেন করলেন?’

‘ইচ্ছে হল, তাই।’

‘এটা তো আত্মহত্যা করার চেষ্টা।’

‘রোজ রোজ একই নিয়মে চলতে ভাল লাগছিল না।’

দীপাবলী কিছু বলল না। খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইল। শমিত বলল, ‘এখানে আমাকে আনতে খুব কষ্ট করতে হয়েছে?’

‘হয়েছে। কিন্তু এখান থেকে সুস্থ হয়ে আপনি কোথায় যাবেন?’

‘মানে বুঝলাম না।’ শমিতের চোখে বিস্ময়।

দীপাবলী মাথা নাড়ল, ‘আমার ওখানে আপনার নিশ্চয়ই অসুবিধে হচ্ছে। আর আপনি যে-জীবন চাইছেন তা মেনে নিতে আমি সক্ষম নই।’

শমিত বলল, ‘আমি কীরকম জীবনযাপন করলে তুমি খুশি হও?’

‘আমার খুশির জন্যে আপনাকে কিছু করতে হবে না।’

‘কিন্তু—।’ শব্দটা উচ্চারণ করেই থেমে গেল শমিত। তার চোখ বন্ধ হল। ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট হল মুখে। ফিসফিস করে বলল, ‘পরে কথা বলব।’

দীপাবলী চুপচাপ বসে রইল। তার মনে পড়ল এই মানুষটি কোনও একদিন মায়াকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল যাদবপুরে যখন সে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে একা পড়ে ছিল। না, শমিতের প্রতি সে কৃতজ্ঞ নানান কারণে। কিন্তু ভালবাসা কি কখনও কৃতজ্ঞতা থেকে জন্মায়। কৃতজ্ঞতা মানুষকে নম্র করে, হয়তো সেই নম্রতা সইতে শেখায়। সয়ে গেলে একসময় ভালবাসা তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু তার জীবনে তৈরি হবার মুখে যে-আঘাত এসেছিল তাতে কোনও কিছু স্থির হয়ে দাঁড়ায়নি। হ্যাঁ, এখনও সে কৃতজ্ঞ। কিন্তু একজীবনে এই কৃতজ্ঞতার দাম আর কত দিয়ে যেতে হবে?

অবশ্য এ-কথা ঠিক, আজ শমিতের শরীরের যা অবস্থা তাতে তার উচিত হয়নি এইসব কথা তোলা। প্রচণ্ড অসুস্থ মানুষ যত চেষ্টা করুক না কেন বেশিক্ষণ মস্তিষ্ক সাবলীল রাখতে পারে না। সে ঘড়ি দেখল। শমিত চোখ বন্ধ করে স্থির। একজন নতুন নার্স এল এইসময়। মেয়েটি দীপাবলীর দিকে একবার তাকিয়ে শমিতের পাল্স দেখল। তার কপালে রেখা ফুটল। তারপর দ্রুত চলে গেল অন্য ঘরে।

তবে কি শমিতের শরীর আবার খারাপ হল? হঠাৎ নিজেকে খুব অপরাধী বলে মনে হতে লাগল দীপাবলীর। এখন যদি ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে জানতে চান তার সঙ্গে শমিতের কী কথা হয়েছিল তা হলে সত্যি কথা বলতে পারবে সে? আচমকা যেন নিজেকে ভিলেন বলে মনে হচ্ছে। দীপাবলী উঠে দাঁড়াল। তারপর নিচু গলায় বলল, ‘আমি যাচ্ছি, আবার আসব।’

চোখ বন্ধ করেই শমিত মাথা নাড়ল। ভঙ্গিটার অর্থ স্পষ্ট হল না। দীপাবলী ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতেই বারান্দায় নার্সটিকে দেখতে পেল, ব্যস্ত পায়ে ফিরছে। সে বলল, ‘আচ্ছা, ওর কন্ডিশন কি ভাল নয়?’

‘আমি বলতে পারব না। ডাক্তারবাবুর সঙ্গে দেখা করুন।’ নার্সটি চলে গেল।

এক মুহূর্ত ভাবল দীপাবলী। যতই অন্যায় সে করে থাকুক শমিতের ব্যাপারটা সঠিক না জেনে ফিরে গেলে স্বস্তি পাবে না। সে খুঁজে খুঁজে ডাক্তারদের ঘরে পৌঁছাল। জিজ্ঞাসা করে নির্দিষ্ট ডাক্তারের সামনে দাঁড়িয়ে একই প্রশ্ন করল সে।

ডাক্তার বললেন, ‘একটু আগে তো খুব ভাল প্রগ্রেস করছিলেন। নার্স বলে গেল পাল্সবিট গোলমাল করছে। যাচ্ছি আমি একটু বাদে।’

‘এর জন্যে খুব খারাপ কিছু হতে পারে কি?’ কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করল দীপাবলী।

‘মনে হয় না।’

‘আসলে আমার মনে হয় উনি একটু এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলেন।’

‘কেন?’ ডাক্তার অবাক।

‘কথা বলতে বলতে।’

‘একটি অসুস্থ মানুষের সঙ্গে এমন কী কথা বললেন যাতে সে এক্সাইটেড হতে পারে?’

‘সরি ডাক্তার, ব্যাপারটা খুব সামান্য ভেবেছিলাম আমি।’

‘আপনার কি, আই মিন আপনি ওঁর আত্মীয়?’

‘না। আমরা বন্ধু। কলকাতায় একটা সম্পর্ক ছিল। এখানে হঠাৎ এসেছিলেন।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

‘আমি যাচ্ছি। আমার ঠিকানা এখানে দেওয়া আছে। যদি কিছু দরকার হয়—।’

নিশ্চয়ই। তবে তেমন কিছু না হলে খবর যাবে না। আর হ্যাঁ, আগামীকাল এলে যদি ওই বিষয় আপনাদের আলোচনা ওঠে তা হলে না এলেই ভাল।’

দীপাবলী মাথা নেড়ে বেরিয়ে এল। এখন বিকেল। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার পর মন সামান্য হালকা হয়েছে। কিন্তু এখনই বাস স্ট্যান্ডে না পৌঁছালে ফেরার বাস পাওয়া যাবে না। শেষ বাসের ছাড়ার সময় হয়ে গিয়েছে। এই শহরে একা রাত্রে থাকার জায়গা পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।

হাসপাতালের গেটের বাইরে আসতেই সে থমকে দাঁড়াল। জিপের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে অর্জুন হাসছে, ‘চলুন ম্যাডাম, রথ হাজির।’

‘আমি বাসে যাব।’

‘তা হলে চলুন বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে দিই।’

‘আমি রিকশা নেব।’

‘তা হলে বাস মিস করবেন।’

দীপাবলী কোনও জবাব না দিয়ে একটা রিকশাকে ডাকল। তাকে রিকশায় উঠতে দেখে অর্জুন বলল, ‘আমি আধ ঘণ্টা এখানে আছি। যদি বাস না পান তা হলে ফিরে আসতে পারেন। কোনও সংকোচ করবেন না।’

দীপাবলী রিকশাওয়ালাকে দ্রুত চালাতে বলল।

প্রায় ঝড়ের মতো উড়ে এসে দীপাবলী আবিষ্কার করল অর্জুনের কথাই ঠিক। শেষ বাস মিনিট পাঁচেক আগে বেরিয়ে গিয়েছে। কাল সকালে সেটি ফিরে এলে আবার দিনের প্রথম বাস হয়ে রওনা হবে। প্রচণ্ড ফাঁপরে পড়ল সে। নানান ভাবনা মাথায় আসছিল। তিরি না হয় সামলে নেবে একটা রাত। কিন্তু অনুমতি ছাড়া ব্লকের বাইরে রাত্রিবাস ঠিক নয়। সে অবশ্য ডি এম-কে সমস্যার কথা বলতে পারে। ভদ্রলোক ইচ্ছে করলে তাকে একটা গাড়ি দিতে পারেন নয়তো সার্কিট হাউসে রাতের থাকার ব্যবস্থা হতে পারে। কিন্তু আজ যে-ব্যবহার পেয়েছে সে তাতে এই কৃপাটুকু নিতে মন চাইল না। খুব ছোট হয়ে যাবে নিজের কাছে। সরকারি কাজে এলে অবশ্য এরকম মনে হত না। অথচ অর্জুন নায়েকের কাছে সাহায্য চাইতে খারাপ লাগছে। বরং একটা ট্যাক্সির চেষ্টা করলে কেমন হয়? অনেক টাকা খরচ হবে, তবু। দীপাবলী সেই চেষ্টাই করল। স্ট্যান্ডে একটি ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে ছিল। তার ড্রাইভার জুলজুল করে তাকে দেখল, ‘অদ্দুর একা যাবেন?’

‘হ্যাঁ।’

‘যেতে যেতে রাত হয়ে যাবে।’

‘আমি একজন সরকারি অফিসার।’

‘অ। তা হলে অন্য ট্যাক্সি দেখুন।’

‘মানে?’

‘অতটা পথ নির্জনে অন্ধকারে আপনার মতো একটা মেয়েছেলেকে একা পেলে কী করতে কী করে ফেলব, মানে মাথা তো ঠান্ডা থাকবে না, তারপর বিপদে পড়ে যাব। সরকারি অফিসার বলছেন যখন তখন তো ফাঁসিয়ে দেবেন?’ অত্যন্ত নির্লিপ্তভাবে কথাগুলো বলল লোকটা, বলে ফিরে গেল।

বজ্রপাত হলেও এর চেয়ে ভাল হত। দীপাবলী নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। লোকটা তার মুখের ওপর এমন কথা বলে যেতে পারল! পায়ে পায়ে সে চলে এল রিকশার কাছে। বলল, ‘হাসপাতালে চলো।’

চলন্ত রিকশায় বসে তার অন্য চিন্তা হল। এই ট্যাক্সি ড্রাইভার লোকটি মানুষ হিসেবে যত খারাপ হোক এর মধ্যে সততা আছে। অন্তত সত্যি কথা বলতে দ্বিধা করেনি। নিজের পাশব ছবিটাকে খুব ভাল করে দেখা এবং সে যে নিজেকে বিশ্বাস করে না তা অকপটে জানিয়েছে। এমনটা ক’জন মানুষ করে!

জিপের সামনে রিকশা থেকে নামতেই অর্জুন জিপে বসেই ডাকল, ‘চলে আসুন, আর দেরি করা যাবে না।’

খুব খারাপ লাগছিল। পেছনের সিটে বসার কোনও যুক্তি নেই। দীপাবলী জিপে উঠে মুখ ঘুরিয়ে নিল। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড স্পিড তুলল অর্জুন, ‘সাতটার আগে পৌঁছোতে পারি কিনা দেখি।’

দীপাবলী রড আঁকড়ে ধরল। শহরের মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে জিপ চালাচ্ছে অর্জুন। চালাতে চালাতে বলল, ‘শমিতবাবু দিন তিনেকের আগে ছাড়া পাবেন বলে মনে হয় না। ডাক্তারকে বলে এলাম যা খরচাপত্তর হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে করতে, পরে দাম চুকিয়ে দেওয়া যাবে।’

দীপাবলী নিশ্বাস বন্ধ করল এক মুহূর্ত, কিছু বলল না।

‘আপনি চলে আসার পর ওঁর কন্ডিশন খারাপ হয়েছিল। ডাক্তার বললেন, টেনশনে। এসব আবার আমি বুঝিটুঝি না। টেনশন আবার কী! যা হবার তা হবে, যা হবে না তা হবে না। এ নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কী লাভ।’

দীপাবলী কোনও কথা বলল না। তার মনে হল অর্জুন জেনেশুনে তাকে পরীক্ষা করতে চাইছে। তার যাওয়ার সঙ্গে শমিতের টেনশন জড়িয়ে আছে। এটা সে জানে এবং তাই জানাচ্ছে। এই লোকটাই ডি এম-এর ঘরে পাথরের মতো চুপ করে বসে ছিল। তার সঙ্গে যে একই জিপে শহরে এসেছে তা তখন বোঝার উপায় ছিল না। মানুষ কত অদ্ভুত চরিত্রের হয়।

শহর ছাড়িয়ে জিপ তখন ফাঁকা মাঠের ভেতর দিয়ে ছুটছে। আকাশ লালে লাল। সূর্য ডুবছে। ওদিকে তাকাবার অবকাশ নেই দীপাবলীর। সে কোনওমতে জিপের রড আঁকড়ে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু একসময় সে না বলে পারল না, ‘প্লিজ একটু আস্তে চালান।’

‘আস্তে চালালে আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হবে।’ গলা তুলে বলল অর্জুন, ‘নিশ্চয়ই আমার সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছেন, নিজের চোখে আর নাই বা দেখলেন!’

ধক করে উঠল হৃৎপিণ্ড। এই ফাঁকা রাস্তায় অর্জুন যদি তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে তা হলে সে কি কিছু করতে পারবে? অশিক্ষিত ট্যাক্সি ড্রাইভার যা বলতে পারল অর্জুন তো তাই করতে পারে। অন্তত তিরির কাছে অর্জুনের যে-গল্প শুনেছে তা তাই সমর্থন করে। এইসময় আকাশে ওঠার জন্যে পৃথিবীর বুক ফুঁড়ে অন্ধকার মাথা তুলল। জিপের হেডলাইট জ্বেলেছে অর্জুন। অন্ধকার চিরে আরও রহস্য বাড়িয়ে তুলেছে সে দুটো। রাস্তা ভাল নয়। দ্রুত গতির জন্যে আরও লাফাচ্ছিল জিপ। দীপাবলী আর পারল না, ‘প্লিজ একটু স্পিড কমান।’

স্পিড কমল। এখন তবু বসা যায়। দীপাবলীর মনে হচ্ছিল, এ যেন অনন্ত পথ। কিছুতেই ফুরোচ্ছে না। অন্ধকার পৃথিবীর চেহারা সর্বত্র একই রকম হয়ে যায়। কোনও চিহ্ন চোখে না-পড়ায় বোঝাই যায় না কতদূর বাকি আছে পথ শেষ হতে। অর্জুন কোনও কথা বলছে না। আড় চোখে সে দেখল ঘনঘন ঘড়ি দেখছে অর্জুন। হঠাৎ একসময় জিপ থামিয়ে ফেলল লোকটা, ‘নাঃ আর পারলাম না। সরি ম্যাডাম।’

‘মানে?’ আঁতকে উঠল দীপাবলী। জিপ থামাবার কোনও কারণ খুঁজে পেল না সে। অর্জুন তখন হাত বাড়িয়ে পেছন থেকে একটা ব্যাগ সামনে টেনে নিয়ে বলল, ‘সাতটা বাজলেই আমার শরীর বিদ্রোহ করে। তখন তাকে ঠান্ডা করতে পেটে কিছুটা জল ঢালতে হয়। রঙিন জল। ভেবেছিলাম সাতটার আগেই আপনাকে পৌঁছে দিতে পারব কিন্তু আপনি বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেরি করিয়ে দিলেন। অতএব এখন কোনও উপায় নেই, আপনি যা ভাববেন ভাবুন, কী করা যাবে।’

এই জিপের ভেতর কোনও আলো নেই। যেহেতু হেডলাইট জ্বেলে রেখেছে অর্জুন তারই চুয়ানো আলোয় অন্ধকার ফিনফিনে হয়ে গিয়েছিল। শক্ত মুখে বসে দীপাবলী দেখল অর্জুন একটা বোতল বের করে সরাসরি গলায় ঢালল। ভক করে নাকে এল গন্ধ। তীব্র গা গোলানো। মুখ ঘুরিয়ে নিতে নিতে কানে এল অর্জুনের সমস্ত শরীর মন্থন করে একটি শব্দ ছিটকে এল, ‘আঃ!’

সে কী করবে এখন। এই নির্জনে রাস্তায় ঘন অন্ধকারে জিপ থেকে নেমে কোথায় যাবে? একটা লম্পট মানুষ তার পাশে বসে মদ্যপান করছে। সম্ভবত সন্ধে সাতটা বেজে গেলেই ওর মদের প্রয়োজন। কিন্তু তাই কি! অর্জুনের সঙ্গে রাত্রেও সে কথা বলেছে এর আগে। কখনওই তাকে মাতাল বলে মনে হয়নি অথবা মদের গন্ধ পায়নি। অবশ্য মদ খাওয়ার পরেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রক্রিয়া যদি ওর জানা থাকে তো আলাদা কথা। কিন্তু সে স্বাভাবিক ছিল এটাই সত্যি। এখন একটা পরিবেশ তৈরি করার জন্যে ফাঁকা মাঠে হেডলাইট জ্বালিয়ে অর্জুন মদের বোতল খুলে বসেছে। লোকটা সবসময় সঙ্গে মদ রাখে? তিরির কথাই ঠিক।

শব্দ হল। দীপাবলী দেখল বোতল হাতে অর্জুন নেমে যাচ্ছে জিপ থেকে। কোথায় যাচ্ছে? কী মতলব? এইসময় সে পা সরাতেই কিছু একটা ঠেকল। মুখ নামিয়ে হ্যান্ডেলটাকে দেখতে পেল। লোহার। হঠাৎ একধরনের নিরাপত্তাবোধ ফিরে এল তার। অর্জুন যদি আক্রমণ করে তা হলে প্রতিরোধ করবে সে। ওই লোহার হ্যান্ডেলটাকে তুলে নিতে একটুও দেরি করবে না।

বোতল হাতে অর্জুন ততক্ষণে হেডলাইটের আলোয় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে অজস্র পোকা উঠে এসেছে মাঠ থেকে। আলোর বৃত্তে তারা পাক খাচ্ছে। হয়তো জীবনে এতক্ষণ স্থির হয়ে থাকা আলো তারা এর আগে কখনও দ্যাখেনি। অর্জুন হাত নেড়ে তাদের সরাবার চেষ্টা করে বোতলের মদ গলায় উপুড় করল। ঠোঁট কামড়াল দীপাবলী। এখনই মাতাল হয়ে যাবে লোকটা। মাতাল অবস্থায় যদি তাকে আক্রমণ না-ও করে তা হলে গাড়ি চালাবে্ কী করে। যে-কোনও মুহূর্তেই অ্যাকসিডেন্ট ঘটিয়ে ফেলতে পারে।

হঠাৎ একটা কাণ্ড করে ফেলল দীপাবলী। করার আগে বিন্দুমাত্র ভাবেনি। জিপ থেকে নেমে সটান সে চলে গেল আলোর বৃত্তে, অর্জুনের সামনে। গিয়ে গলা তুলে বলল, ‘অনেক হয়েছে, এবার থামুন।’

অর্জুন হাসল, ‘ভয় পাচ্ছেন, না, আমি মাতাল হব না।’

‘আমাদের ফিরে যেতে হবে।’

‘ফিরব। দশ মিনিট দেরি হবে।’

‘আপনি কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন।’

‘আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি ম্যাডাম। চা খেতেও তো জিপ থামাতে পারতাম। পারতাম না?’ ‘একজন ভদ্রমহিলাকে আপনি সম্মান জানাচ্ছেন না!’

‘দুর মশাই। সম্মান টম্মান সব নিজের তৈরি করা। ও নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। আমি অসুস্থ হচ্ছিলাম। মদ খেয়ে সুস্থ হলাম।’ বোতলটা খালি করে ছুড়ে ফেলে দিল সে অন্ধকার মাঠে। তারপর তরতাজা হাসল, ‘চলুন ম্যাডাম।’

বাকি পথটুকু চুপচাপ কেটে গেল। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে জিপ থামাল অর্জুন, ‘আমি এখান থেকেই ফিরব।’

দীপাবলী কোনও কথা না বলে নামতে যাচ্ছিল— অর্জুন সেই হাসিটা হাসল, ‘আপনাকে এখানেই নামিয়ে দিচ্ছি কেন জানতে চাইলেন না?’

‘আপনার নিশ্চয়ই অসুবিধে আছে।’

‘আমার নয়, আপনার। আমার সঙ্গে এক জিপে অন্ধকারে ফিরছেন দেখলে আপনার নামে গল্প তৈরি হবে। সম্মান বলে কী একটার কথা বলছিলেন না তখন, সেটাই বাঁচবে।’

মাটিতে নেমে দীপাবলী বলল, ‘আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।’

‘মাতলামি করিনি তো?’

‘এখনও পর্যন্ত না।’

‘তা হলে তো চুকে গেল। চলি ম্যাডাম। আমরা তো নষ্ট হয়ে গেছি, আপনার মতো ঠিক-থাকা কিছু মানুষের সঙ্গ পেলে তাই খারাপ লাগে না।’

‘আপনারা মানে?’

‘এই আমি, এস ডি ও, ডি এম, মন্ত্রী, যারা পরস্পরের কাঁধে ভর দিয়ে চলি।’ কথা শেষ করেই জিপ ঘুরিয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল অর্জুন।

কিছুক্ষণ সেই ছুটন্ত আলোর স্তূপ দেখল দীপাবলী। তারপর পা বাড়াল। বাড়ির সামনে পৌঁছে সে অবাক হল। অফিসঘরে আলো জ্বলছে। এখন ওখানে কারও থাকার কথা নয়।

সে অফিসের দরজায় শব্দ করল। তিনবারের বার দরজা খুলল। চমকে উঠল দীপাবলী। সতীশবাবু দাঁড়িয়ে আছেন, কুণ্ঠিত ভঙ্গি। আরও বৃদ্ধ দেখাচ্ছে।

সে জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনি?’

সতীশবাবু বললেন, ‘ক’দিনের কাজ জমে ছিল—’

‘কাজ জমে ছিল? তাই বলে আপনি এখন কাজ করবেন?’

সতীশবাবু চুপ করে রইলেন। দীপাবলী কূল পাচ্ছিল না। যাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছে গতকাল, দাহ করে যিনি ফিরেছেন আজ দুপুরের পর, তিনি এত রাত্রে সরকারি কাজ করতে ছুটে আসবেন ভাবা যায়? সে নিচু গলায় বলল, ‘সতীশবাবু আমি খুব ক্ষুধার্ত, একা খেতে ইচ্ছে করছে না, আমার সঙ্গে কিছু খাবেন?’

সকল অধ্যায়

১. ১. কাকভোর বলে কিছু নেই এখানে
২. ২. টেলিগ্রামটা ছিঁড়ল দীপাবলী
৩. ৩. এরকম একটা দিনের কথা
৪. ৪. অর্জুন নায়েক
৫. ৫. ঘুম এসেছিল অনেক রাত্রে
৬. ৬. এস ডি ওর অফিসে
৭. ৭. অবস্থা খুব গোলমেলে
৮. ৮. দীপাবলী বসে পড়ল
৯. ৯. সতীশবাবু
১০. ১০. দাদাবাবু
১১. ১১. বাঙালির চরিত্র
১২. ১২. শুতে বসতে অস্বস্তি
১৩. ১৩. ন্যাড়া গাছটা
১৪. ১৪. হাটতলা পেরিয়ে
১৫. ১৫. সকালে উঠেই তিরি চলে গিয়েছে
১৬. ১৬. দোতলা বাসের জানলা
১৭. ১৭. জীবন দাবা খেলার মত
১৮. ১৮. এ এক অপূর্ব আনন্দ
১৯. ১৯. দিল্লী শহরে
২০. ২০. ইন্টারভিউ কেমন হল
২১. ২১. খাম খুলে চিঠির ওপর নজর
২২. ২২. বুকের ভেতর জমে থাকা ছেলেবেলা
২৩. ২৩. ঘুম ভেঙ্গেছিল সাতসকালে
২৪. ২৪. কিছু জিনিসপত্র কেনার ছিল
২৫. ২৫. যাত্রাপথে
২৬. ২৬. কিছু ভাল ছেলেমেয়ে
২৭. ২৭. কর্মচারীদের আচরণবিধি
২৮. ২৮. শুভ্রাদের বাড়ির সামনে
২৯. ২৯. নতুন ফ্ল্যাটে
৩০. ৩০. দিল্লীতে দূরত্ব কোন সমস্যাই নয়
৩১. ৩১. সরকারি চাকরিতে
৩২. ৩২. চাকরির ক্ষেত্রে
৩৩. ৩৩. ঘরে বাইরে নিরন্তর যুদ্ধ
৩৪. ৩৪. প্রাথমিক পর্বে নির্লিপ্ততা
৩৫. ৩৫. এ এক অদ্ভুত সম্পর্ক
৩৬. ৩৬. দীপাবলী এবং অলোক
৩৭. ৩৭. হাওড়া স্টেশনে
৩৮. ৩৮. কলকাতা অফিসের এক নম্বর বস
৩৯. ৩৯. সুখের চেয়ে স্বস্তি ভাল
৪০. ৪০. মনোরমা কলকাতায়
৪১. ৪১. মনোরমার জ্বর
৪২. ৪২. মনোরমার বিদ্রোহ
৪৩. ৪৩. নিজের মনের অন্ধকার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন