রবীন্দ্রনাথ ও একটি রিয়া – গোপালকৃষ্ণ রায়

গোপালকৃষ্ণ রায়

রবীন্দ্রনাথ ও একটি রিয়া

রিয়া দিয়েই শুরু করা যাক। এমন মিষ্টি শব্দটি কোনো সুন্দরী মেয়ের নাম নয়। বরং সুন্দরীকে আরও সৌন্দর্যমন্ডিত করে তুলতে রিয়ার একটি বড়ো ভূমিকা আছে। রিয়া হল মেয়েদের ‘বক্ষবন্ধনী’। ত্রিপুরার একটি প্রাচীন শিল্প। পাহাড়ি ত্রিপুরীরা বলে ‘রিহা’। পাছড়া আর রিহা ত্রিপুর কন্যাদের নিজস্ব পোশাক। ধনী-নির্ধন, রাজা-প্রজা সর্বশ্রেণির জন্য একটি পোশাক। পাছড়া আর রিয়া। অর্থাৎ শুধু শিল্পের পারিপাট্যতায় আর আর্থিক মূল্যে। রাজকীয় রিয়া স্বর্ণ-রৌপ্য মণি-মুক্তায় খোচিত এক অনন্য শিল্প—অন্যদিকে সর্বজনীন রিয়া ত্রিপুর সুন্দরীদের সোহাগে তৈরি কারুময়তায় অতুলনীয়। রিয়া তৈরি ত্রিপুর কন্যাদের বাধ্যতামূলক। পাহাড়ি গ্রাম আমবাসার গোমন্ত্রীকে যেমন নিজের রিয়া নিজেকে তৈরি করতে হয়, তেমনি ত্রিপুরার মহাদেবী ও রাজকন্যাদেরও নিজস্ব ‘বক্ষবন্ধনী’ নিজেদেরই তৈরি করতে হত। অন্তত বিংশশতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত ত্রিপুরার মহারানি ও রাজনন্দিনীদেরও রিয়া তৈরি বাধ্যতামূলক ছিল। শুধু তাই নয়, রিয়াকে সুন্দর ও সুকুমার করে তোলার জন্য রানি ও রাজনন্দিনীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হত। সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রিয়া শিল্পী রাজকোষ থেকে পারিতোষিক পেতেন।

যে রিয়াকে মেয়েরা বক্ষবন্ধনী হিসেবে ব্যবহার করে, পুরুষের কাছে সেই রিয়া উষ্ণীশ ও কোমরবন্ধ। এই ট্র্যাডিশন বর্তমানে মুমূর্ষু হলেও মৃত নয়। প্রাক্তন রাজপরিবারের এখন আর তেমন উৎসাহের সঙ্গে কেউ রিয়া তৈরি করেন না। রিয়ার ব্যবহারও কমে এসেছে। বাড়িতে কেউ কেউ ব্যবহার করলেও, বাইরে রিয়ার ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে পাহাড়ে ও পাহাড়তলিতে পাছড়া ও রিয়ার মর্যাদা এখনও অটুট আছে। নাগরিক সভ্যতা যদি আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠে, তাহলে ত্রিপুরার এই প্রাচীন শিল্প যেকোনো সময়ে অচ্ছুত হয়ে যেতে পারে। এমনি একটি রাজকীয়া রিয়া দেখে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেই মুগ্ধতা এক সময় চাপল্যে পরিণত হয়েছিল। রিয়াটির স্রষ্টার নাম শুনে খুশিতে উদবেল হয়েছিলেন। রিয়াটির শিল্পীকে রবীন্দ্রনাথ কোনোদিন দেখেননি। না দেখলেও তাঁর সঙ্গে পরিচয় ছিল। পত্র বিনিময়ের মাধ্যমে সেই পরিচয় এক সময় গভীরতা পেয়েছিল। অদর্শনের মধ্যেও সেই শিল্পীর মনকে অনুভব করতেন তিনি। তাঁর সুখ-দুঃখ, শোক-তাপের অংশীদার হয়ে উঠেছিলেন। অন্তর্মুখী একটা সম্পর্ক পরস্পরের মধ্যে গড়ে উঠেছিল। শিল্প সৌকর্যে সমৃদ্ধ সেই রিয়ার শিল্পীর নাম অনঙ্গমোহিনী দেবী। ত্রিপুরার রাজনন্দিনী অনঙ্গমোহিনী। আধুনিক ত্রিপুরার জনক মহারাজা বীরচন্দ্রমাণিক্যের আত্মজা—প্রাণের খুকি। পিতার মতোই কবি ছিলেন অনঙ্গমোহিনী। বীরচন্দ্রের মতো বাংলায় কবিতা লিখতেন তিনি। তাঁর কাব্যপ্রতিভা ত্রিপুরার সীমা অতিক্রম করে বাংলার কবিমহলে আলোড়ন তুলেছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর সাতের দশক থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক পর্যন্ত অনঙ্গমোহিনী দেবী কাব্যলক্ষ্মীর আরাধনা করেছেন। মহিলা কবি হিসেবে বাংলার কাব্যজগতে তিনি স্থায়ী আসন লাভ করেছিলেন।

কবি অনঙ্গমোহিনী তৈরি করেছিলেন একটি রিয়া। আর সেই রাজকীয় রিয়াটি একজনের হাত ঘুরে পৌঁছে গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের কাছে। অদেখা রাজকুমারীর স্বহস্তে তৈরি রিয়াটিকে কখনো উষ্ণীষ, কখনো-বা কোমরবন্ধ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ব্যবহারের মধ্য দিয়েই রবীন্দ্রনাথের কবিমনের সঙ্গে অনঙ্গমোহিনীর কবিমন সাযুজ্য লাভ করেছিল।

কাহিনিকে ব্যঞ্জনাময় করে তোলার জন্য আমাদের ৯৭ বছর আগের একটি ঘটনায় ফিরে যেতে হয়।

১৩১৯ বঙ্গাব্দের কথা। রবীন্দ্রনাথের বন্ধু ত্রিপুরার কর্নেল মহিমচন্দ্র ঠাকুরের পুত্র সোমেন্দ্রচন্দ্র দেববর্মন ছিলেন রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। কর্নেল মহিমচন্দ্র তখন মহারাজা রাধাকিশোরের এ ডি সি। সোমেন্দ্রচন্দ্রের বুদ্ধি ও মেধা দেখে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাঠাতে চেয়েছিলেন। নিজেই উদ্যোগ নিয়ে মহারাজার অর্থানুকুল্যে সোমেন্দ্রকে আমেরিকায় পাঠিয়েছিলেন। আমেরিকায় যাবার আগে কবি অনঙ্গমোহিনী সোমেন্দ্রকে একটি রিয়া তৈরি করে দিয়েছিলেন। রিয়াটির অপূর্ব কারুকার্য দেখে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ ও বিস্মিত হয়েছিলেন। কর্নেল মহিমচন্দ্রের ভাষায় ‘রবীন্দ্রনাথ নিজেই জিনিসটি (রিয়া) কাড়িয়া লইলেন। বলিলেন, ইহা এক কবির প্রস্তুতি, অন্য কবির ব্যবহার্য্য, তোর গুরুদক্ষিণারূপে ইহা আমি লইলাম।’

রবীন্দ্রনাথ ওই রিয়াটি নিয়ে গোটা পৃথিবী ঘুরেছেন। ইংল্যাণ্ড, আমেরিকা, জাপান সর্বত্রই রিয়াটি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে থাকত। অনঙ্গমোহিনীর ‘স্পর্শকে’ একদিকে তিনি যেমন সর্বদা অনুভব করতেন, অন্যদিকে ত্রিপুরার একটি শিল্পকে বহির্বিশ্বে পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। আগরতলায় প্রাক্তন এক রাজকুমারীর কাছে শুনেছিলাম, বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র সংগ্রহশালায় রিয়াটি নাকি এখনও রক্ষিত আছে।

রিয়ার কথা যখন উঠলই, তখন তার সৌন্দর্য ও ঔজ্জ্বল্য সম্পর্কে আরও দু-চার কথা বললে নিশ্চয়ই অপ্রাসঙ্গিক হবে না।

অষ্টাবিংশ শতাব্দীর শেষপাদে ত্রিপুরা শাসন করতেন রানি জাহ্নবী। ত্রিপুরায় তদানীন্তন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট রালফ লিক সাহেবের বিদায় উপলক্ষ্যে রানি জাহ্নবী একটি রিয়া দিয়ে তাঁকে সম্মান জানিয়েছিলেন। রিয়ার শৈল্পিক ও ব্যবহারিক মূল্য বুঝেছিলেন রালফ সাহেব। রিয়ার সঙ্গে যে ত্রিপুর রমণীর অন্তর জড়িয়ে থাকে, সেকথাও অনুধাবন করেছিলেন রালফ সাহেব। সেই ‘অমূল্য’ রিয়াটি তিনি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের আর্ট কালেকশনে দিয়েছিলেন।

লেডি ডাফরিনও ত্রিপুরার রিয়া দেখে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলেন। ত্রিপুরার রাজমন্ত্রী ডা. শম্ভুচন্দ্র মুখার্জি তদানীন্তন সমাজে যথেষ্ট নামী ব্যক্তি ছিলেন। মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে এলেও এলিট সমাজে তাঁর খাতির ছিল। গভর্মেন্ট হাউসে সভাসমিতিতে তাঁর আমন্ত্রণ থাকতই। আর ডা. শম্ভুচন্দ্র মুখার্জি ত্রিপুরার রিয়া দিয়ে পাগড়ি বেঁধে সেই সভা-সমিতিতে যেতেন।

একদিন গভর্মেন্ট হাউসে এক সান্ধ্য সম্মেলনে লেডি ডাফরিন তাঁর মাথায় রিয়ার পাগড়ি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। পাগড়িটি হাতে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এই সুন্দর জিনিসটি কোথায় পাওয়া যায়?

ডা. শম্ভুচন্দ্র মুখার্জি ত্রিপুরার নাম করতেই লেডি ডাফরিন বললেন, ‘ত্রিপুরার প্রিন্স সমরেন্দ্রচন্দ্র দেববর্মনকে তিনি চেনেন। নিশ্চয়ই তিনি তাঁকে একটি রিয়া সংগ্রহ করে দিতে পারবেন।’

ডা. শম্ভুচন্দ্র মুখার্জিকে শিরোপা হিসেবে ওই রিয়াটি দিয়েছিলেন ত্রিপুরার কোনো এক মহারানি।

রিয়ার ঘটনাটি ঘটার অনেক আগে থেকেই কবি অনঙ্গমোহিনীর পরিচয় জানতেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর কবিতার সঙ্গেও পরিচিত ছিলেন। ১৩১৮ বঙ্গাব্দে অনঙ্গমোহিনীকে লেখা একটি চিঠি থেকেই তার প্রমাণ মেলে। কবি অনঙ্গমোহিনী তার ‘কণিকা’ ও ‘শোকগাঁথা’ দুইখানি কাব্যগ্রন্থ রবীন্দ্রনাথকে উপহার দিয়েছিলেন। প্রাপ্তিস্বীকার করে শান্তিনিকেতন থেকে রবীন্দ্রনাথ অনঙ্গমোহিনীকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন—

আপনার রচিত, ‘শোকগাঁথা’ ও ‘কণিকা’ উপহার পাইয়া আনন্দিত হইয়াছি। আপনার এই কবিতাগুলির মধ্যে কবিত্বের একটি স্বাভাবিক সৌরভ অনুভব করি। ইহাদের সৌন্দর্য বড়ো সরল এবং সুকুমার অথচ কলানৈপুণ্যও আপনার মধ্যে স্বভাবসিদ্ধ, এই নৈপুণ্য আপনার শেষ কাব্যগ্রন্থটিতে পরিষ্কার হইয়া উঠিয়াছে। … আপনার কবিত্ব শক্তির পূর্ণ বিকাশের মধ্যে আপনার জীবনের সমস্ত দুঃখ-বেদনা সার্থকতা লাভ করুক এই আমার কামনা।

রবীন্দ্রনাথ অনঙ্গমোহিনীকে এই চিঠিটি লিখেছিলেন ১৭শ্রাবণ, ১৩১৮ তে।

অনঙ্গমোহিনীর মোট তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম কাব্যগ্রন্থ কণিকা (১৩০৯), দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ শোকাগাঁথা (১৩১৩) ও তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ প্রীতি (১৩১৭)।

অনঙ্গমোহিনীকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠিটি প্রথম ও শেষ চিঠি বলে ধরে নেওয়া হয়তো ঠিক হবে না। চাক্ষুষ পরিচয় না ঘটলেও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অনঙ্গমোহিনীর পরিচয় তাঁর পিতৃদেব মহারাজা বীরচন্দ্রের আমল থেকেই। রবীন্দ্রনাথের ‘ভগ্নহৃদয়’, ‘রাজকুমারী’ যে ছোটো বয়েসেই পাঠ করেছিলেন তা তাঁর কবিতা থেকেই প্রমাণ মেলে। দুজনের মধ্যে বয়েসের ব্যবধান বেশি নয়। অনঙ্গমোহিনীর চেয়ে রবীন্দ্রনাথ মাত্র তিন বছরের বড়ো ছিলেন। রাজকুমারী অনঙ্গমোহিনীর জন্ম ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে।

মহারাজা রাধাকিশোরমাণিক্য বাহাদুরের সহোদরা দুজনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন বীরচন্দ্রের দ্বিতীয় ঈশ্বরী রাজ্যেশ্বরী দেবীর গর্ভে। অনঙ্গমোহিনী দেবী রবীন্দ্রনাথকে চাক্ষুস প্রত্যক্ষ করেন ১৩০৬ বঙ্গাব্দে। তখন তাঁর বয়স ৩৬ আর রবীন্দ্রনাথের ৩৯। মহারাজা রাধাকিশোরের আমন্ত্রণে ১৩০৬ বঙ্গাব্দে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার আগরতলায় গিয়েছিলেন। তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল কর্নেল মহিমচন্দ্রের বাড়িতে।

অনঙ্গমোহিনী দেবী তখন উজির গোপীকৃষ্ণ দেবের সহধর্মিনী। বিবাহিত জীবনের কুড়ি বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। সেই সময় রাজপরিবারের কোনো মেয়ের বাইরের লোকের সামনে বেরোনো ছিল প্রথাবিরুদ্ধ।

রাজমহিষী ও অন্যান্য রাজনন্দিনীদের সঙ্গে উজির বাড়ির বউ অনঙ্গমোহিনী দেবী চিকের অন্তরাল থেকে রবীন্দ্রনাথকে দেখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের দেখাশোনার ভার রাজপ্রতিনিধিদের ওপর ন্যস্ত থাকলেও, আপ্যায়নের দায়িত্বে ছিল অন্দরমহল।

১৩২০ বঙ্গাব্দে নোবেল পুরস্কার পেলেন রবীন্দ্রনাথ। রাজানুকুল্যে আগরতলাবাসীরা রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে এক আনন্দ উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। অনঙ্গমোহিনী দেবী সেই আনন্দানুষ্ঠানে অন্তরাল থেকে অংশ নিয়েছিলেন কি না, তার কোনো প্রমাণ নেই। তখন অনঙ্গমোহিনীর বয়স ৪৯। শোকে-তাপে তখন তিনি ভগ্নহৃদয়। সেই সময় রবীন্দ্রনাথও অনঙ্গমোহিনী সম্পর্কে নির্লিপ্ত হয়ে গিয়েছিলেন।

নি:সন্তান অনঙ্গমোহিনী দেবী সেই সময় নানা প্রতিকূল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। সিংহাসন নিয়ে ভ্রাতৃবিরোধে তিনি কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু কখনোই রাজপরিবারের প্রাসাদ-কলহের সঙ্গে নিজেকে জড়াননি। মহারাজা রাধাকিশোর বড়োঠাকুর সমরেন্দ্রকে রাজ্য থেকে নির্বাসিত করেছিলেন। সৎ দাদা হলেও সমরেন্দ্রকে ভালোবাসতেন অনঙ্গমোহিনী। নির্বাসিত রাজকুমারের জন্য মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন তিনি।

ভ্রাতৃবিরোধে মহারাজা রাধাকিশোরের পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষে ‘সিংহাসন’ সমস্যার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। পারিবারিক কলহে ‘বাইরের মানুষের নাক গলানো’ অন্যান্য রাজ-পুরুষদের মতো অনঙ্গমোহিনী দেবীও পছন্দ করেননি। ১৩১০ বঙ্গাব্দ বা ১৩১৩ বঙ্গাব্দ ত্রিপুরা থেকেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পত্রালাপ বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর প্রকাশিত শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘প্রীতি’ রবীন্দ্রনাথের কাছে আর পাঠাননি।

রবীন্দ্রনাথ মোট সাতবার আগরতলায় গিয়েছিলেন। সেখানে আয়োজিত সাহিত্যসভায় ভাষণ দিয়েছেন। মালঞ্চাবাসে বসে অনেক কবিতা লিখেছেন। মহারাজা বীরচন্দ্র থেকে বীরবিক্রমকিশোর মাণিক্য এই চার পুরুষের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গভীর সম্পর্ক ছিল।

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে কবি অনঙ্গমোহিনীর মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ বার কয়েক আগরতলায় গিয়েছিলেন। আগরতলাবাসীরা তাঁকে সাড়ম্বরে সংবর্ধনা জানিয়েছেন। সংবর্ধনার উত্তরে রবীন্দ্রনাথ রাজপরিবারের সঙ্গে তাঁর মধুর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। মহারাজা বীরচন্দ্রের সাহিত্যপ্রীতি, রাধাকিশোরের সাহিত্যানুরাগ, বীরেন্দ্রকিশোরের শিল্পচর্চা ও শেষবয়েসে বীরবিক্রম কিশোরের প্রশস্তি করেছেন। কিন্তু অনঙ্গমোহিনী সম্পর্কে তিনি ছিলেন নির্বাক। কবি অনঙ্গমোহিনীর মৃত্যুর পর কবি হিসেবেও তিনি কোনো শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন কি না, তার কোনো প্রমাণ নেই। এক কবির তৈরি রিয়া, অন্য কবির ব্যবহার্য বলে যিনি চঞ্চল হয়ে উঠেছিলেন, সেই রিয়ার শিল্পী কবি অনঙ্গমোহিনীর মৃত্যুতে তিনি নীরব থেকেছিলেন। কেন? এই প্রশ্নের জবাব আর কোনোদিনও পাওয়া যাবে না।

সকল অধ্যায়

১. শাম্বরিক খরোলিকা – গোপালকৃষ্ণ রায়
২. কাব্যে কেশ-ব্যবসায় চুল – গোপালকৃষ্ণ রায়
৩. মুড়িয়া শিল্পকলা – গোপালকৃষ্ণ রায়
৪. পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র – গোপালকৃষ্ণ রায়
৫. ড্রাগ : নেশার বিষাক্ত জগৎ – গোপালকৃষ্ণ রায়
৬. হাজারদুয়ারি থেকে পলাশি – গোপালকৃষ্ণ রায়
৭. কলকাতার মৃত্যু-জগৎ – গোপালকৃষ্ণ রায়
৮. রবীন্দ্রনাথ ও একটি রিয়া – গোপালকৃষ্ণ রায়
৯. পৃথিবীর প্রাচীনতম মৃৎপাত্র – গোপালকৃষ্ণ রায়
১০. পুরীর মন্দিরে দুর্ঘটনা – গোপালকৃষ্ণ রায়
১১. কোণারকের সূর্যমন্দির – গোপালকৃষ্ণ রায়
১২. কঙ্কাল কাহিনি – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৩. জগন্নাথদেবের শেষ দেবদাসী – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৪. মা জুঁইং বুঁইন – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৫. জ্ঞাননৌকা – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৬. পুরাকথায় অমরনাথ – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৭. কিংবদন্তির দ্বারকা – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৮. খর্বাকৃতি দম্পতি – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৯. ঋষি অরবিন্দ – গোপালকৃষ্ণ রায়
২০. তীর্থক্ষেত্র গঙ্গাবাস – গোপালকৃষ্ণ রায়
২১. কলকাতায় আদিম অতিথি – গোপালকৃষ্ণ রায়
২২. নলরাজার গড় – গোপালকৃষ্ণ রায়
২৩. সেনালি ডিঙ্গো, কুমারীদের শয্যাধামে – গোপালকৃষ্ণ রায়
২৪. সুনাবেড়া বৃত্তান্ত – গোপালকৃষ্ণ রায়
২৫. ত্রিপুরার রাজবংশে সতীপ্রথা – গোপালকৃষ্ণ রায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন