কোণারকের সূর্যমন্দির – গোপালকৃষ্ণ রায়

গোপালকৃষ্ণ রায়

এশিয়াটিক সোসাইটি যদি যথা সময়ে হস্তক্ষেপ না করত, তাহলে ওড়িশার নির্জন বেলাভূমিতে মধ্যযুগের স্থাপত্য শিল্পের অনুপম নিদর্শন কোণারকের সূর্যমন্দির আমাদের দেখার সৌভাগ্য হত না। আকাশচুম্বী নারকেলবীথি ও ক্যাসুরিনার সবুজ বনানী ঘেরা ত্রয়োদশ শতাব্দীর স্থাপত্যশিল্পের বা’য় গৌরব সূর্য মন্দিরের অস্তিত্বই সম্ভবত লোপ পেয়ে যেত। কালের গ্রাসেই কি ধ্বংস হয়ে যেত? না। যদিও মন্দিরের মূল অংশ প্রায় শ-চারেক বছর পূর্বেই ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছিল—বাকি যে অংশ এখনও স্থপতিদের বিস্ময়ের সৃষ্টি করে তাও মানুষের শাবল আর গাঁইতির আঘাতে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছিল।

কথাটি অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও নির্ভেজাল সত্য। ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের শেষপাদে মন্দিরটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরুও করা হয়েছিল। সে এক অবিশ্বাস্য কালাপাহাড়ি ঘটনা! সেই কালাপাহাড়ের ভূমিকায় নেমেছিলেন খুর্দার তদানীন্তন রাজা। কোনো ভুল বোঝাবুঝির জন্যেই এই ভয়ানক ঘটনা ঘটেছিল কি না—তার সত্যতা যাচাই করার মতো কোনো দলিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লেখ্যাগারে রক্ষিত দলিল থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান, একটি আদেশনামার বলে খুর্দার রাজা মন্দিরটি ভাঙতে শুরু করেছিলেন। শাবল-গাঁইতি আর দুরমুশ দিয়ে কয়েক-শো লোক পাথরে খোদিত জীবনকাব্যকে গুঁড়িয়ে দিতে শুরু করেছিল।

ঘটনাটি মন্দিরটি পুনরাবিষ্কৃত হবার একশতাব্দীর মধ্যেই। পুনরাবিষ্কারের পূর্বে প্রায় তিন শত বছর মন্দিরটির অস্তিত্ব মানুষের অজ্ঞাত ছিল। ওড়িশার বেলাভূমিতে এমন একটি বিস্ময়কর স্থাপত্যশিল্প লতা-গুল্ম, ক্যাসুরিনা আর বালির স্তূপের গর্ভে ঢাকা পড়ে থাকতে পারে, পুনরাবিষ্কারের পূর্বে তা ছিল মানুষের কাছে অজানা।

১৭৩৭খ্রিস্টাব্দের কথা। পুরীতে তখন রাজত্ব করতেন মহারাজা বীরকিশোর। জনৈক বাবা ব্রহ্মচারী সমুদ্রের উপকূলে সূর্যমন্দির নতুন করে আবিষ্কার করেছিলেন। বাবা ব্রহ্মচারী যদি সূর্যমন্দির নতুন করে আবিষ্কার না করতেন—তাহলে মন্দিরের যে অংশ আজও মানুষকে বিস্ময়-মুগ্ধ করে তা আমরা দেখতে পেতাম না। বালি, জঙ্গল আর ক্যাসুরিনার আড়ালে হয়তো ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যেত।

বাবা ব্রহ্মচারী ছিলেন সূর্যের একনিষ্ঠ উপাসক। উনি শুনতে পেয়েছিলেন যে, সমুদ্রোপকূলে এক অনুপম সূর্যমন্দির রয়েছে। মন্দিরটি দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন ব্রহ্মচারী। দু-শো স্বর্ণমুদ্রা এবং বিশ্বাসী শিষ্য নীলাম্বর পট্টনায়ককে সঙ্গে নিয়ে মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। পুরী থেকে কোণারক। বর্তমানে পাকা সড়ক। মাত্র ৩৩কিমি পথ। কিন্তু সেই সময় রাস্তা ছিল না। ক্যাসুরিনার অরণ্যে ঢাকা সমগ্র এলাকা তখন ছিল জনবসতিহীন। দুটি হাতি নিয়ে গভীর অরণ্যের মধ্য দিয়ে তিনি মন্দির আবিষ্কারে বেরিয়ে পড়লেন।

বাবা ব্রহ্মচারী সদলে সমুদ্রের তীরে তীরে চললেন। দুটি নদী অতিক্রম করতে হল তাঁদের। দীর্ঘ পথ অতিক্রমণের সময় একটি জনপদও তাঁদের চোখে পড়ল না। একটি মানুষের সঙ্গেও তাঁদের দেখা হল না। এমন এক নির্জন বেলাভূমিতে সূর্যমন্দির কেন তৈরি করা হয়েছিল, বুঝে উঠতে পারছিলেন না বাবা ব্রহ্মচারী। একসময় মন্দিরের অস্তিত্ব সম্পর্কে তাঁর মনে সংশয় জাগে। সত্যি কি মন্দির আছে? তাঁকে কি মিথ্যা সংবাদ দেওয়া হয়েছে? তবুও ক্যাসুরিনার গহন বন ভেঙে এগিয়ে চলেন তিনি। হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ে এক ঢিবি। প্রায় দু-মাইল দূর থেকেই তা দৃশ্যমান হয়।

বাবা ব্রহ্মচারী প্রাচীন মাহাত্ম্য ও পদ্মপুরাণে এই সূর্যমন্দিরের কথা পড়েছিলেন। জঙ্গলের আড়ালে লুকোনো মন্দিরের বিশালত্ব দেখে অবাক হয়ে যান ব্রহ্মচারী। কিন্তু মন্দিরের ভগ্নস্তূপ দেখে ব্যথিত হন। চারদিকে ইতঃস্তত ছড়ানো শিল্পকলা খোদিত প্রস্তরস্তূপ। এখনও জীবন্ত। মনে হয় কোনো এক অদৃশ্য শিল্পী যেন এই মাত্র পাথরের গায়ে মূর্তিগুলি খোদাই করে রেখে গেছেন।

প্রথমে পাহাড় বলে ভ্রম হয়েছিল। কাছে যেতেই হৃদয় বেদনায় মুচড়ে উঠল। অনন্য এই শিল্পসৌকর্য এতদিন কেন এমন অবহেলিত হয়েছে!

ব্রহ্মচারী গোলারা ও কনিয়া গ্রাম থেকে শতাধিক লোক সংগ্রহ করে জঙ্গল ও বালির বন্ধন থেকে মন্দিরটিকে উদ্ধার করলেন। কী উদ্ধার করলেন ব্রহ্মচারী? অজানা শিল্পীর মনের মাধুরী মেশানো অনবদ্য শিল্পকলার ভগ্নস্তূপ! পাথরে খোদিত নয়নাভিরাম অসংখ্য মূর্তি।

বাবাজি দেখলেন, ঠাকুরানি মন্দিরে দেবীমূর্তি নেই। অনুসন্ধান করে জানতে পারলেন দূরান্তের গ্রামের মানুষেরা পূজার্চনার জন্য মূর্তিটি সরিয়ে নিয়ে গেছে।

বাবাজি ভেবেছিলেন, মহারাষ্ট্রের ভোঁসলেদের সাহায্য নিয়ে মন্দিরটি সংস্কার করবেন। কিন্তু সে-কাজ তাঁর পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। আর হয়নি বলেই চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিছু মূর্তি, প্যানেল ও পিলার অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে এলেন। বাবা ব্রহ্মচারী ১৮টি মূর্তি, প্যানেল ও পিলার পুরীতে পাঠিয়ে দিলেন। এর মধ্যে মন্দিরের নির্মাতা রাজা নরসিংহ দেবের মূর্তিও ছিল। মূর্তিগুলি আজও সেখানে রয়েছে।

ব্রহ্মচারীর কোণারক মন্দির পুনরাবিষ্কারের ৫৬বছর পর দিব্যসিংহদেব মন্দিরটি খননের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি প্রায় তিনমাস চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি ভগ্নস্তূপ থেকে প্রায় তিন ফুট উঁচু দুটি নারী মূর্তি একটি সাধুর মূর্তি এবং একটি গায়ক মূর্তি মুখ্যশালা থেকে সরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। দেশে তখন রাজনৈতিক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। ইংরেজরা ১৭৫৭খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে জয়লাভ করে তাদের শক্তি অন্যান্য রাজ্যেও বিস্তার করতে শুরু করেছে। দিব্যসিংহদেবকে ফিরিঙ্গিরা বন্দি করায় মন্দির উদ্ধারের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অবহেলায় পড়ে থাকে স্থাপত্যশিল্পের অনবদ্য নিদর্শন। দিব্যসিংহদেব বন্দি হবার ৪৫বছর পর আর একটি অবিশ্বাস্য বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার কথায় পরে আসছি। আগে কোণারকের সূর্যমন্দির সম্পর্কে সাম্প্রতিক আলোচিত কিছু নতুন তথ্যের উল্লেখ করা যেতে পারে।

ওড়িশার রাজা দ্বিতীয় অনঙ্গভীমের পুত্র প্রথম নরসিংহ দেব নির্জন বেলাভূমিতে স্থাপত্যশিল্পের অনুপম নিদর্শন সূর্যমন্দির নির্মাণ করেছিলেন। অবিশ্বাস্য কম সময়ের মধ্যে এই রথসদৃশ্য মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ করেছিলেন তিনি। ১২৪৩ খ্রিস্টাব্দে শুরু করে ১২৫৫খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সম্পন্ন করেছিলেন। ১২০০শিল্পী ১২বছরে এই স্থাপত্য স্মারক নির্মাণ করে উত্তরসূরিদের মনে বিস্ময়ের এক ধূম্রজাল সৃষ্টি করে গেছেন। মহান শিল্পীদের মহত্তর অবদান আজ আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত।

কোণা (Corner) আর অর্ক শব্দের সমন্বয়ে কোণারকের সৃষ্টি। কোণারক তাই অর্কক্ষেত্র নামেও পরিচিত। কোণারককে কেউ কেউ আবার পদ্মক্ষেত্রও বলেন। মাতৃ আদেশে নরসিংহ দেব এই পদ্মক্ষেত্রে দাক্ষিণাত্য যুদ্ধের জয়টিকার স্মারক নির্মাণ করেছিলেন।

আঠারো বছর বয়েসে পিতার প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব নিয়ে দক্ষিণে তিন বছর যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন নরসিংহ দেব। বিজয়ধ্বজা উড়িয়ে অনেক ধনদৌলত নিয়ে ওড়িশায় ফিরে এসেছিলেন তিনি। পুরীর মালাদি-পুঞ্জিতে উল্লেখিত আছে যে, নরসিংহ দেবের মাতৃদেবী বিপুল ধনরাশি দিয়ে সূর্যদেবের ‘পরম দেউল’ নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। চক্রক্ষেত্রে (ভুবনেশ্বর) লিঙ্গরাজ মন্দির শঙ্খক্ষেত্রে জগন্নাথের মন্দির আর গদাক্ষেত্রে আছে বিরজা মন্দির। শুধু পদ্মক্ষেত্রে কোনো মন্দির নেই। সুতরাং এখানেই মন্দির গড়ে তোলো। ১২০০ শিল্পী ১২বছর দিনরাত কাজ করে পাথরের বুকে মানুষের জীবনের কাব্য গড়ে তুলল।

কোণারকের সূর্যমন্দির মানুষের জীবনকাব্য। ১২ জোড়া চক্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি বিশালাকার রথ। দেখে মনে হয়, তেজী বেগবান সপ্তঅশ্ব রথটিকে স্বর্গের পথে দ্রুত টেনে নিয়ে চলেছে। ভাগবত গীতায় এই সাতটি অশ্বের নামকরণ করা হয়েছে : (১) গায়েত্রী, (২) উস্নিকা, (৩) অনুষ্টুভ, (৪) বৃহত্তী, (৫) পঙতি, (৬) তৃ-স্তূপ এবং (৭) জাগতি। সূর্যমন্দিরের এই চক্র মানুষের জীবনের প্রতিমুহূর্তের প্রতীক। এই চক্রে খোদিত আছে জন্মের বিবর্তন, সংরক্ষণ এবং মোক্ষ।

সূর্যমন্দিরের অপর নাম পদ্মকেশর দেউল। ইংরেজরা নাম দিয়েছিল ব্ল্যাক প্যাগোডা। এই দেউল নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। অনেক পুথি-পাঁজি ঘেঁটে বহু বিশেষজ্ঞ এই মন্দির সম্পর্কে নতুন তথ্য আবিষ্কার করেছেন। তথ্য আবিষ্কারের চেষ্টা এখনও শেষ হয়নি। এখনও এই মন্দির সম্পর্কে অনেক কিছু জানবার আছে। গর্বের কথা, এই পদ্মকেশর দেউল আজ আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত।

গোড়াতেই বলেছি, যদি এশিয়াটিক সোসাইটি ত্বরিৎ হস্তক্ষেপ না করতেন, তাহলে স্থাপত্যকলার এই অনুপম নিদর্শন আমাদের দেখার সৌভাগ্য হত না।

১৮৩৮খ্রিস্টাব্দের কথা। অর্থাৎ বাবা ব্রহ্মচারীর মন্দিরটি পুনরাবিষ্কারের ঠিক এক-শো বছর পর খুর্দার রাজা মন্দিরটি ভাঙতে শুরু করেছিলেন। তখন এশিয়াটিক সোসাইটির সম্পাদক ছিলেন জেমস প্রিন্সেপ। এই ইংরেজ রাজপুরুষের অনেক গুণের কথা কলকাতার মানুষের কাছে অপরিচিত নয়। তদানীন্তন বিচার বিভাগের অস্থায়ী সচিব মি. টি ম্যাডক-এর কাছে লেখা প্রিন্সেপের চিঠি থেকে এই অবিশ্বাস্য খবর মেলে। ১৮আগস্ট, ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রিন্সেপ চিঠিটি লিখেছিলেন। তাঁর সেই চিঠির সারমর্ম হল, সোসাইটির গত সভায় জনৈক সদস্য একটি চিঠি পাঠ করেন। সেই চিঠিতে খুর্দার রাজা কতৃক কোণারকের মন্দির বা ব্ল্যাক প্যাগোডার গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করার বিবরণ রয়েছে। কটকের পূর্বতন কমিশনার উইলকিন্সনের কাছ থেকে প্রাপ্ত একটি অনুমতির বলে রাজা এই মর্মান্তিক কাজ শুরু করেন। চিঠিতে দেখা যাচ্ছে উইলকিন্সন রাজাকে মন্দিরের ভগ্নস্তূপ থেকে ইমারতী পাথর তাঁকে সরবরাহ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, খুর্দার রাজা অনুমতিপত্রটিকে সম্ভবত ভুল ব্যাখ্যা করে মহান দেউলটি ভাঙতে শুরু করেছেন। মন্দিরের মূল মূর্তিটি নিজের প্রাসাদে পাঠিয়ে দিয়ে অন্যান্য অংশ ফেলে দিয়েছেন। কারণ বৃহদাকার প্রস্তরখন্ডগুলি অন্যত্র নেবার উপায় ও কৌশল তাঁর আয়ত্তের মধ্যে ছিল না।

প্রিন্সেপের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, যদি রাজাকে একইভাবে এই কাজ করতে আরও উৎসাহ দেওয়া হয়—তাহলে সমুদ্রোপকূলের প্রাচীন স্মারকটি ধ্বংস হয়ে যাবে।

এমতাবস্থায় বিষয়টি সরকারের গোচরে আনা সোসাইটি উপযুক্ত বলে মনে করে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে আশা করে, মাননীয় প্রেসিডেন্ট কাউন্সিল এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে মন্দির ধ্বংস থেকে রাজাকে নিরস্ত করবেন। এই মর্মে স্থানীয় কতৃপক্ষকে অনতিবিলম্বে একটি আদেশনামা পাঠাবেন।

সোসাইটির চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বড়ো বড়ো ভগ্ন প্রস্তরখন্ডগুলি মন্দিরে পুনঃস্থাপন করা সম্ভব কি না সেবিষয়েও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বিশেষ করে খোদিত অনবদ্য প্রস্তর নির্মিত প্রবেশদ্বারটি। ভগ্ন কিছু নমুনা একটি জলযানে আনবার জন্যেও সোসাইটি অনুমতি প্রার্থনা করছে। তবে সোসাইটির ঐকান্তিক ইচ্ছা, আর ক্ষতিসাধন না করে মন্দিরটিকে এক্ষুনি রক্ষা করুন।

সোসাইটির চিঠি পেয়ে প্রেসিডেন্ট কাউন্সিল উদবিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন। সোসাইটির ১৮আগস্টের চিঠির জবাবে ২০আগস্ট, ১৮৩৮ তদানীন্তন ভারত সরকারের অস্থায়ী সচিব বঙ্গ সরকারের সচিব টি আই হ্যালিডের কাছে সোসাইটির চিঠিটি পাঠিয়ে এই বিষয়ে ডেপুটি গভর্নরের উপযুক্ত আদেশ জারি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

চিঠি পাবার পরই হ্যালিডে ২৮আগস্ট কটকের কমিশনার হেনরি রিকেটের কাছে অপর একটি পত্রে ডেপুটি গভর্নরের আদেশ জানিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু মন্দির ভাঙা থেকে রাজাকে বিরত করার আদেশ দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি—কমিশনারকে কৈফিয়ৎ দিতে বলেছিলেন, খুর্দার রাজা কী কারণে ব্ল্যাক প্যাগোডা ভাঙার অনুমতি পেয়েছিল? এই চিঠিটিও লেখ্যাগারে রক্ষিত আছে।

এই অমার্জনীয় অপরাধের জন্য পরবর্তীকালে কটকের কমিশনার ও খুর্দার রাজার কোনো শাস্তি হয়েছিল কি না তার কোনো দলিল লেখ্যাগারে নেই। কোণারকের সূর্য মন্দিরকে ধ্বংসের হাতে থেকে বাঁচিয়ে এশিয়াটিক সোসাইটি সমগ্র জাতির কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছে।

এই ঘটনার দেড়-শো বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। ভারতের সূর্যমন্দির আর ইংরেজদের ব্ল্যাক প্যাগোডা অনেক অবক্ষয় সয়ে সয়ে এখনও বেলাভূমিতে মানুষের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে আছে। সমুদ্র-বাহিত লবণাক্ত বাতাস মন্দিরের ক্ষয়কে কিছুটা তরান্বিত করছে। পাথরে খোদিত মূর্তিগুলি নোনা-হাওয়ায় ম্লান হতে শুরু করেছে। মন্দিরের বহু জায়গায় ফাটল ধরেছে। একই সঙ্গে এই ঐতিহ্যকে রক্ষা করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক কতৃপক্ষ সর্বক্ষণ মন্দিরের বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা বজায় রেখে মেরামতির কাজ শুরু করেছেন। কারিগরিবিদ্যায় চরম উৎকর্ষ লাভ করা সত্ত্বেও ভেজাল ঢাকা যাচ্ছে না।

সকল অধ্যায়

১. শাম্বরিক খরোলিকা – গোপালকৃষ্ণ রায়
২. কাব্যে কেশ-ব্যবসায় চুল – গোপালকৃষ্ণ রায়
৩. মুড়িয়া শিল্পকলা – গোপালকৃষ্ণ রায়
৪. পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র – গোপালকৃষ্ণ রায়
৫. ড্রাগ : নেশার বিষাক্ত জগৎ – গোপালকৃষ্ণ রায়
৬. হাজারদুয়ারি থেকে পলাশি – গোপালকৃষ্ণ রায়
৭. কলকাতার মৃত্যু-জগৎ – গোপালকৃষ্ণ রায়
৮. রবীন্দ্রনাথ ও একটি রিয়া – গোপালকৃষ্ণ রায়
৯. পৃথিবীর প্রাচীনতম মৃৎপাত্র – গোপালকৃষ্ণ রায়
১০. পুরীর মন্দিরে দুর্ঘটনা – গোপালকৃষ্ণ রায়
১১. কোণারকের সূর্যমন্দির – গোপালকৃষ্ণ রায়
১২. কঙ্কাল কাহিনি – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৩. জগন্নাথদেবের শেষ দেবদাসী – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৪. মা জুঁইং বুঁইন – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৫. জ্ঞাননৌকা – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৬. পুরাকথায় অমরনাথ – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৭. কিংবদন্তির দ্বারকা – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৮. খর্বাকৃতি দম্পতি – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৯. ঋষি অরবিন্দ – গোপালকৃষ্ণ রায়
২০. তীর্থক্ষেত্র গঙ্গাবাস – গোপালকৃষ্ণ রায়
২১. কলকাতায় আদিম অতিথি – গোপালকৃষ্ণ রায়
২২. নলরাজার গড় – গোপালকৃষ্ণ রায়
২৩. সেনালি ডিঙ্গো, কুমারীদের শয্যাধামে – গোপালকৃষ্ণ রায়
২৪. সুনাবেড়া বৃত্তান্ত – গোপালকৃষ্ণ রায়
২৫. ত্রিপুরার রাজবংশে সতীপ্রথা – গোপালকৃষ্ণ রায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন