পুরীর মন্দিরে দুর্ঘটনা – গোপালকৃষ্ণ রায়

গোপালকৃষ্ণ রায়

পৌরাণিক পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে চলেছে। ঘটনাটি ঘটবে আগামী ২৯ নভেম্বর। বেলা ১২-১২ মিনিট থেকে ৪-৩০ মিনিটের মধ্যে। আট-শো বছরের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম মন্দিরের রত্নবেদি থেকে ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রাকে কিছুদিনের জন্য স্থানান্তরিত করা হবে। নীলাচলের নীলমাধব ভাই ও বোনকে নিয়ে শ্রীক্ষেত্রে পরম পবিত্র দেউল থেকে মাস কয়েকের জন্য গর্ভগৃহের অনসর পিন্ডিতে সরে যাবেন। কারণ পুরীর পুরুষোত্তমের মন্দির কালের গ্রাসে জীর্ণ হয়ে গেছে। সংস্কারের জন্যেই পবিত্র রত্নবেদি থেকে তাঁদের সরিয়ে আনা হচ্ছে। এই অচিন্তনীয় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত একদিনে নেওয়া যায়নি। এই সিদ্ধান্ত নিতে সময় লেগেছে বাহাত্তর দিন। সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত হলেও—সম্ভবত সর্বগ্রাহ্য নয়। স্থানান্তরণের বিষয়ে মতান্তর রয়েছে। সংখ্যাধিক্যের মতের ভিত্তিতে রত্ন সিংহাসন থেকে বিগ্রহকে সাময়িকভাবে স্থানান্তরিত করা হবে।

স্থানান্তরণের প্রশ্নে অনেকবার মুখোমুখি বসেছেন পন্ডিত আর প্রত্নতাত্ত্বিক—শাসক আর সেবায়েত। অপরদিকে উৎকন্ঠা আর উদবেগ নিয়ে তাদের বক্তব্য শুনেছেন অসংখ্য ভক্ত আর আপামর জনসাধারণ।

শুধু পুরী বা ওড়িশার মধ্যেই এই উদবেগ সীমাবদ্ধ নেই। এই উদবেগ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তে। সর্বত্রই নেমে এসেছে এক দুশ্চিন্তার কালো ছায়া। তাদের ভাবনা, হয়তো কিছু অঘটন ঘটবে। কোনো দুর্দৈব? প্রাকৃতিক বিপর্যয়! ভয়ংকর ভূমিকম্প অথবা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস! রত্নবেদি থেকে জাগ্রত জগন্নাথ বিচ্যুত হলেই ধরণীতে ধস নামবে। নীরব আশঙ্কা—সবার আতঙ্কের রূপ পেতে বসেছে।

হয়তো এই উদবেগ অমূলক। এই উৎকন্ঠা মূল্যহীন। সংশয় আর সন্দেহ বিকল মনের বহি:প্রকাশ মাত্র। এর সঙ্গে বাস্তবের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা শুধু যুগসঞ্চিত সংস্কার। পৌরাণিক কিংবদন্তিকে কেন্দ্র করে যে সংস্কার তিলে তিলে গড়ে উঠেছে—তা আপামর জনসাধারণের বিশ্বাসের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে। আত্মস্থ সংস্কারের মধ্য থেকেই জন্ম নিয়েছে উদবেগ আর উৎকন্ঠা। ভীত ভক্তরা নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন—ভগবান জগন্নাথের ইচ্ছায় এটা ঘটতে চলেছে। ঈশ্বরে বিশ্বাসী মানুষ এই ধারণাকেই সমর্থন করছেন।

অনুপম মন্দির রক্ষার জন্য প্রত্নতাত্ত্বিকদের ব্যাখ্যায় পন্ডিতদের দ্বিমত নেই। সেবায়েত আর শাসকেরাও চান দ্বাদশ শতাব্দীর দেবসৌধের আয়ু বিংশ শতাব্দীর আধুনিকতম প্রযুক্তি দিয়ে অক্ষয় করে রাখা হোক। কিন্তু বিগ্রহ স্থানান্তর? এই জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য নানাস্তরে বাহাত্তর দিন ব্যাপী আলোচনা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব আর ধর্মীয় বিশ্বাসকে সমান গুরুত্ব দিয়ে রত্নবেদি থেকে বিগ্রহ স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৯ নভেম্বর ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র আর সুভদ্রার দারুময় মূর্তি সরানো হবে।

বর্ষীয়ান কেউ কেউ বলেন, বিগ্রহ স্থানান্তর প্রথম নয়। আগেও একবার বিগ্রহ সরানো হয়েছিল। কিন্তু কবে এবং কেন? এই প্রশ্নের কোনো লিখিত প্রমাণ নেই। প্রমাণের অভাবে ধরে নেওয়া হচ্ছে এটাই হবে মন্দিরের আট-শো বছর আয়ুষ্কালে প্রথম ঐতিহাসিক ঘটনা।

কালের নিয়মে মন্দির জীর্ণ হয়েছে, আট-শো বছরের অতুলনীয় দেবসৌধ প্রাকৃতিক কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত। খন্ডলাইট পাথরের নির্মিত এই মন্দির রন্ধ্রে রন্ধ্রে জীর্ণ। পুরোপুরি সংস্কার না করলে কালের নিয়মেই একদিন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যাবে। আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগে গজপতি বংশীয় অনঙ্গ ভীমাদেবের আমলের অবিস্মরণীয় কীর্তিকে রক্ষা করার এই প্রয়াস নি:সন্দেহে যথাযথ।

গজপতি অনঙ্গ ভীমাদেবের অধিকার কালে ১১১৯ শকাব্দে নীলাচলে এই মন্দির নির্মিত হয়। ইতিহাস বলে, দ্বাদশ শতাব্দীর এই দেবসৌধ নির্মাণ করতে সেই সময় চল্লিশ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছিল। অঙ্ক কষে বর্তমানে এর মূল্যমান নির্ধারণ করা যাবে না। সম্ভবও নয়। এই সৌধ বর্তমানে জাতীয় ঐতিহ্য আর সনাতন সংস্কৃতির অঙ্গ। পুণ্যার্থীরা আসেন পুণ্য সঞ্চয়ে, —প্রত্নতাত্ত্বিকেরা অবাক বিস্ময়ে দেখেন এর কারুকার্য আর নির্মাণশৈলী। পরিব্রাজক আর পর্যটকেরা আঢ-শো বছর পূর্বের স্থাপত্যবিদ্যার পরাকাষ্ঠা দেখে অভিভূত হন। ভক্তরা মুগ্ধ হন মন্দির মাহাত্ম্যে। বিশ্বাসের অন্তরে অঙ্কিত করেন জাগ্রত জগন্নাথের দারুময় মূর্তিকে।

অনেক কিংবদন্তি জড়িয়ে আছে এই মন্দিরের সঙ্গে। আগেই বলেছি, পৌরাণিক কিংবদন্তি মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িয়ে এক অপরিত্যাজ্য সংস্কারে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এই সংস্কার নিয়ে তর্ক চলে না। বিজ্ঞান দিয়েও এই সংস্কারকে খন্ডন করা যায় না। বিশ্বাস আর ভক্তির মধ্যেই এই সংস্কারের ব্যাখ্যা লুকিয়ে আছে।

দারুময় জগন্নাথের আকর্ষণে এই মন্দিরে এসেছেন আদি শঙ্করাচার্য, এসেছেন রামানুজ, সন্ত নানক আর ভক্তিরসে আপ্লুত হয়ে নবদ্বীপ থেকে ছুটে গেছেন শ্রীচৈতন্য। মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন প্রত্নতাত্ত্বিক—এসেছেন স্থপতি। কলিঙ্গ ঘরানার এই অনুপম স্থাপত্য স্থপতিদের কাছে এখনও পরমবিস্ময়।

কথিত আছে, মনের বিশ্বাস আর অন্তরের ভক্তি নিয়ে পাঞ্জাব কেশরী রণজিৎ সিং নীলাচলে এসেছিলেন। ভগবান জগন্নাথকে অর্ঘ্য দিয়েছিলেন বিখ্যাত কোহিনুর হীরক। পরবর্তীকালে ব্রিটিশেরা কোহিনুরটি এই মন্দির থেকে নিয়ে যায়।

পুরী থেকে ৩০ কিমি দূরে কোণারকের সূর্য মন্দিরের স্থাপত্য আজ আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য। ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নির্মিত অর্কক্ষেত্রে এই ‘ব্ল্যাক প্যাগোডা’-র সংস্কারের কাজ চলেছে। এবার সংস্কার করা হবে শ্রীক্ষেত্রের জগন্নাথ মন্দির। এখানে বলে রাখা ভালো, প্রাচীনকাল থেকেই উৎকলবাসীরা এই রাজ্যকে পাঁচটি প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে বিভক্ত করে রেখেছেন। ব্রাহ্মণ্য দেব-দেবীর নাম অনুসারে কেন্দ্রগুলির নামকরণ করা হয়েছে। কোণারকের নাম অর্কক্ষেত্র, পুরীর নাম শঙ্খ বা চক্রক্ষেত্র, ভুবনেশ্বরের নাম একারসা ক্ষেত্র, মহাবিনায়ক পাহাড়ের নাম বিনায়ক ক্ষেত্র, আর যাজপুর বা যজ্ঞপুরীর নাম বিরজাক্ষেত্র। শাস্ত্রকারেরা বলেন সতীর নাভি উৎকলে পতিত হয়েছিল। তাই এখানে বিমলাদেবী আর জগন্নাথ ভৈরব অবস্থান করেন।

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বর্ণনা দেবার আবশ্যক নেই। এই মন্দিরের সঙ্গে কম-বেশি সকলেই পরিচিত। হিন্দুদের ধর্মীয় জীবনে এই মন্দিরের প্রভাব অপরিসীম। আর যার জন্যে বিগ্রহ স্থানান্তরণে এত দ্বিধা, এত সংশয়, এত উদবেগ আর উৎকণ্ঠা।

একটি প্রশস্ত বেদির ওপর ৬৫ মিটার উচ্চ এই মন্দির। জগন্নাথ দেবের মূল মন্দির ব্যতীত ওই মন্দির চত্বরের মধ্যে রয়েছে বিমলা, লক্ষ্মী ও বিষ্ণুর মন্দির। আর রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো রন্ধনশালা—আনন্দ বাজার। মন্দিরের চারটি দ্বার। পূর্বে প্রধান বা সিংহদ্বার, পশ্চিমে যোজাদ্বার, দক্ষিণে অশ্বদ্বার আর উত্তরে হস্তীদ্বার।

মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে অবস্থিত ১৬ফুট দীর্ঘ ১৩ ফুট প্রস্থ ও চার ফুট উচ্চ কষ্টি পাথরে নির্মিত রত্নবেদি বা রত্ন সিংহাসন। এখানেই আট-শো বছর ধরে অবস্থান করছেন ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র আর সুভদ্রা। সেই সঙ্গে রয়েছে সুদর্শন চক্র ও সুবর্ণ নির্মিত ভূদেবী। মন্দির শিখর বিষ্ণুচক্র ও ধ্বজা দ্বারা শোভিত।

পৌরাণিক কাহিনি দিয়ে জড়ানো এই দেবসৌধের স্থায়িত্ব নিয়ে সারাদেশে উদবেগের ছায়া নেমে এসেছে। দ্বিধা, সংকোচ ও সংশয়কে দূরে রেখে অনতি বিলম্বে সংস্কার না করলে এই জাতীয় ঐতিহ্য যেকোনো দিন ধসে যেতে পারে।

অনেক বাধা, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ অতিক্রম করে মন্দিরের সংস্কারের কাজে সম্মতি মিলেছে। গত ১৩ আগস্ট যে অঘটন ঘটেছে তা দেখে ঐতিহ্য বিশ্বাসী কোনো মানুষ নির্বিকার থাকতে পারে না। ওড়িশা সরকার পারেনি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়ক একদিকে যেমন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন—অপরদিকে সেবায়েত আর দয়িতাপতিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কারো বিশ্বাসে আঘাত না দিয়ে বিগ্রহ স্থানান্তরণের একটি পথ আবিষ্কার করেছেন। সেবায়েত আর দয়িতাপতিরাও মন্দিরের স্থায়িত্বের কথা ভেবে বিগ্রহ স্থানান্তরণে রাজি হয়েছেন।

গত ১৩ আগস্ট গর্ভগৃহের অভ্যন্তরের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে। ভগ্নাংশ পাথরের ওজন প্রায় দু-টন। এর আগেও আরও কয়েকবার মন্দিরের কোনো কোনো স্থান থেকে চুন-সুরকি ও পাথর খসে পড়েছে। তখন কেউ এতটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু ১৩ আগস্টের দুর্ঘটনা প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাওকেও চিন্তিত করেছে। ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের মহানির্দেশককে সরেজমিনে তদন্ত করে মন্দির সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি আদেশ দিয়েছেন।

একটি সাত সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির তত্ত্বাবধানে আগামী রথযাত্রার আগেই গর্ভগৃহের সংস্কার সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

পুরোনো নথিপত্র থেকে প্রমাণ মেলে গত ১১৭ বছরে নয় বার মন্দিরের অন্তর ও বহির্ভাগের অংশ-বিশেষ ভেঙে পড়েছে। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে গর্ভগৃহের অভ্যন্তরে বৃহদাকারের পাথর খসে পড়েছিল। কিন্তু রত্নবেদির কোনো ক্ষতি হয়নি। ঘটনাটি ঘটেছিল জুলাই মাসের নয় তারিখ।

এই ঘটনার পর ৬৪বছর নির্বিবাদে কেটেছে। দ্বিতীয় ঘটনা ঘটেছিল ১৯৩৯খ্রিস্টাব্দে ১৪ডিসেম্বর। প্রায় সমপরিমাণ পাথরের চাঁই রত্নবেদির সামনে ভেঙে পড়েছিল। এবারও রত্নবেদি অক্ষত থাকে। এই ঘটনার পর সেবায়েতদের মনে উদবেগের সৃষ্টি হয়। আবার প্রাকৃতিক নিয়মে একসময় সেই উদবেগ মন থেকে মিলিয়ে যায়। পুণ্যার্থী আর দর্শনার্থীর ভিড়ে ভাটা পড়ে না। আগের দুটি ঘটনা ধীরে ধীরে মানুষের মন থেকে মুছে যায়।

তৃতীয় ঘটনা ঘটে ১৯৬১খ্রিস্টাব্দের প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন। প্রায় দশ কেজি ওজনের একটি পাথরের খন্ড মন্দিরের বাইরের দেয়াল থেকে খসে পড়ে। এর আট বছর পর ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ২২জানুয়ারি মন্দিরের বহির্ভাগের কিছু চুন ও সুরকি খসে পড়ে। এই ঘটনার পর মন্দির সংস্কারের চিন্তাভাবনা শুরু হয়। কিন্তু ‘করছি-করব’ মনোভাবের মধ্যেই পঞ্চম দুর্ঘটনা ঘটে যায়। ১৯৮৫খ্রিস্টাব্দের ১৬আগস্ট দক্ষিণ দ্বারের বিশাল প্লাস্টার ভেঙে পড়ে। প্লাস্টারগুলি সেখানেই যত্ন করে রাখা আছে। এই দুর্ঘটনার কিছুদিন আগে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ মন্দিরের বহির্ভাগের কিছু সংস্কার করেছিল।

১৯৮৮খ্রিস্টাব্দে ষষ্ঠ ঘটনা ঘটে। সেপ্টেম্বর মাসের ১৯তারিখ মন্দিরের দক্ষিণ দিকে জগমোহনের কাছে একখন্ড পাথর খুলে পড়ে। এর পরের ঘটনা ঘটে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুন। ১১৭ বছরের মধ্যে এই ঘটনাই বৃহত্তম। প্রায় পাঁচটন ওজনের বিশাল পাথর মন্দিরের অভ্যন্তরে খুলে পড়ে। দুর্ঘটনার সময় মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছিল।

শেষ ঘটনা ঘটে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ১৩আগস্ট। গর্ভগৃহের অভ্যন্তরে প্রায় দু-টন ওজনের একটি খন্ডলাইট পাথরের চাঙড় সশব্দে রত্নবেদির সামনে আছড়ে পড়ে। এই ঘটনাই মন্দিরের স্থায়িত্ব সম্পর্কে সব মহলকেই উদবিগ্ন করে তোলে। কলিঙ্গ স্থাপত্য শৈলীর অপূর্ব নিদর্শনটির কি সায়াহ্নকাল উপস্থিত? আজ এই ভাবনাই সকলের মনে কালো ছায়া ফেলেছে। সব মহলেই উদবেগ সব মহলেই উৎকন্ঠা। উপায় নিরূপণের শলা-পরামর্শ চলে। একদিকে মন্দিরের স্থায়িত্ব নিয়ে উদবেগ—অপরদিকে বিগ্রহ স্থানান্তরণের প্রশ্নে আতঙ্ক। আট-শো বছরের ইতিহাসে যা ঘটেনি—তা কী করে ঘটানো সম্ভব? এসব কীসের ইঙ্গিত? এ কি কোনো অমঙ্গলের ঘণ্টাধ্বনি? এই প্রশ্নে শাসক ও সেবায়েতের মধ্যে ৭২দিন ব্যাপী টানা পোড়েন চলে। অবশেষে মেনে নেওয়া হয় সবই জগন্নাথের ইচ্ছা। তাঁর ওপর বিশ্বাস রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ২৯নভেম্বর রত্নবেদি থেকে বিগ্রহ স্থানান্তরিত করা হবে মূল গর্ভগৃহের পাশেই চন্দন-অগলিতে। সেখানে নির্মাণ করা হবে একটি অস্থায়ী রত্নবেদি। বিগ্রহ থাকবে অনসর পিন্ডিতে। পূজা-পাঠও চলবে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী।

শাসক-সেবায়েত-দয়িতাপতি আর অসংখ্য ভক্তের আশা, মন্দিরের অধীশ্বর জগন্নাথ, বলভদ্র আর সুভদ্রা সংস্কৃত গর্ভগৃহের রত্নবেদিতে আগামী স্নানযাত্রার আগেই ফিরে আসবেন।

একনজরে দুর্ঘটনার সন ও তারিখ :

খ্রিস্টাব্দ তারিখ

১৮৭৫ ৯ জুলাই

১৯৩৯ ১৪ ডিসেম্বর

১৯৬১ ২৬ জানুয়ারি

১৯৬৯ ২২ জানুয়ারি

১৯৮৫ ১৬ আগস্ট

১৯৮৮ ১৯ সেপ্টেম্বর

১৯৯০ ১৬ জুন

১৯৯২ ১৩ আগস্ট

সকল অধ্যায়

১. শাম্বরিক খরোলিকা – গোপালকৃষ্ণ রায়
২. কাব্যে কেশ-ব্যবসায় চুল – গোপালকৃষ্ণ রায়
৩. মুড়িয়া শিল্পকলা – গোপালকৃষ্ণ রায়
৪. পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র – গোপালকৃষ্ণ রায়
৫. ড্রাগ : নেশার বিষাক্ত জগৎ – গোপালকৃষ্ণ রায়
৬. হাজারদুয়ারি থেকে পলাশি – গোপালকৃষ্ণ রায়
৭. কলকাতার মৃত্যু-জগৎ – গোপালকৃষ্ণ রায়
৮. রবীন্দ্রনাথ ও একটি রিয়া – গোপালকৃষ্ণ রায়
৯. পৃথিবীর প্রাচীনতম মৃৎপাত্র – গোপালকৃষ্ণ রায়
১০. পুরীর মন্দিরে দুর্ঘটনা – গোপালকৃষ্ণ রায়
১১. কোণারকের সূর্যমন্দির – গোপালকৃষ্ণ রায়
১২. কঙ্কাল কাহিনি – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৩. জগন্নাথদেবের শেষ দেবদাসী – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৪. মা জুঁইং বুঁইন – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৫. জ্ঞাননৌকা – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৬. পুরাকথায় অমরনাথ – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৭. কিংবদন্তির দ্বারকা – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৮. খর্বাকৃতি দম্পতি – গোপালকৃষ্ণ রায়
১৯. ঋষি অরবিন্দ – গোপালকৃষ্ণ রায়
২০. তীর্থক্ষেত্র গঙ্গাবাস – গোপালকৃষ্ণ রায়
২১. কলকাতায় আদিম অতিথি – গোপালকৃষ্ণ রায়
২২. নলরাজার গড় – গোপালকৃষ্ণ রায়
২৩. সেনালি ডিঙ্গো, কুমারীদের শয্যাধামে – গোপালকৃষ্ণ রায়
২৪. সুনাবেড়া বৃত্তান্ত – গোপালকৃষ্ণ রায়
২৫. ত্রিপুরার রাজবংশে সতীপ্রথা – গোপালকৃষ্ণ রায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন