বিবেকানন্দ-চিন্তা – বিনয় ঘোষ

বিনয় ঘোষ

বিবেকানন্দ-চিন্তা – বিনয় ঘোষ

সমগ্র ঊনবিংশ শতক ধরে বাংলা দেশে নানা রকমের ধর্মসংস্কার ও সমাজসংস্কার আন্দোলনের ঘাতপ্রতিঘাত চলছিল। মোটামুটি পর্বভাগ করলে বিগত শতকের এই আন্দোলনের ধারাকে চার ভাগে ভাগ করা যায় :

১. রামমোহনের যুগ

২. ইয়ং বেঙ্গলের যুগ

৩. বিদ্যাসাগর ও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের যুগ

৪. রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দর যুগ

পঁচিশ—তিরিশ বছর ধরে এক—একটা পর্বকে ভাগ করলে এইসব আন্দোলনের ঐতিহাসিক কালক্রমেরও বিশেষ অদলবদল করার দরকার করে না। সংস্কার আন্দোলনের এই পর্বান্তরের ধারা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় স্বামী বিবেকানন্দর কর্মজীবন চতুর্থ বা শেষ পর্বে পরিব্যাপ্ত।

উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের ইতিহাসে এই চতুর্থ পর্বটির বিশেষ গুরুত্ব আছে একাধিক কারণে। প্রথম কারণ হল, উনিশ শতকের প্রথম থেকে আন্দোলনের এই ধারাগুলিকে যদি নদীর ধারার সঙ্গে তুলনা করা যায়, তাহলে মনে হয় যেন চতুর্থ পর্বে সেগুলি বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়ে এসে একত্রে মিলিত হয়েছে এবং প্রচণ্ড আবর্তের সৃষ্টি করেছে। কেবল বাইরের সমাজে যে আবর্ত সৃষ্টি হয়েছে তা নয়, ব্যক্তিমানসেও আবর্ত রচিত হয়েছে এবং তার ফলে দ্বন্দ্ব ও সংশয় জেগেছে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের মনে। দ্বিতীয় কারণ ধর্ম বা সমাজসংস্কারের কোনও আন্দোলন যখন আরম্ভ হয় তখন তার ফলাফল বা ক্রিয়া—প্রতিক্রিয়ার স্বরূপ ঠিক বোঝা যায় না। যে—কোনও দেশের জনসমাজের স্তর বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত, আমাদের দেশের তো বটেই। ব্যাপকতা ও গভীরতার দিকে থেকে বিচার করলে জনসমাজকে কতকটা সমুদ্রের সঙ্গে তুলনা করা যায়। মনে হয় যেন অতলস্পর্শ। মানুষের চিন্তা ও মনোভাবের কোনও থইখুঁজে পাওয়া যায় না। ১৯৬২ সালেও এ দেশের সংবাদপত্রে ‘সতীদাহ’র খবর প্রকাশিত হয়েছে, অথচ ১৮২৯ সালে রামমোহন রায় ও অন্যান্য সংস্কারপন্থীদের আন্দোলনের ফলে বেন্টিঙ্ক আইন পাশ করে সতীদাহপ্রথা বন্ধ করেছিলেন। আজও ভারতবর্ষে এক হাজার বিবাহযোগ্য বিধবার মধ্যে একজনেরও পুনর্বিবাহ হয় কি না সন্দেহ, অথচ বিদ্যাসাগরের আন্দোলনের ফলে ১৮৫৬ সালে বিধবাবিবাহ আইন বিধিবদ্ধ হওয়ার পর তা আজকে অন্তত স্বাভাবিকভাবে হতে কোনও বাধা নেই। পৌত্তলিকতা বর্জন করে এক অদ্বিতীয় ব্রহ্মের উপাসনা প্রবর্তনের জন্য রামমোহন রায় ও ব্রাহ্মধর্মপন্থীরা যথেষ্ট আন্দোলন করেছিলেন। তাঁরা যখন আন্দোলন করেছিলেন তখন এই ব্রহ্মোপসনার তাৎপর্য বোঝার মতো উপযুক্ত শিক্ষিত লোকের সংখ্যাও খুব অল্প ছিল। সুতরাং তখন নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা সমাজে গৃহীত না—হওয়ার কারণ বোঝা যায়। কিন্তু শতাধিক বছর পরে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা যখন শতগুণ বেড়েছে এবং বিজ্ঞান ও অন্যান্য দিকে মানুষের যখন আশ্চর্য উন্নতি হয়েছে, তখন এ দেশে পৌত্তলিকতা আবার কেন শতগুণ বেগে ফিরে আসছে? কেবল ফিরে আসছে না, তার আধিপত্যও মনে হয় আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন?

উনিশ শতকের এইসব সংস্কারের কথা ছেড়ে দিয়ে যদি আরও অনেক পশ্চাতে ফিরে চাওয়া যায় তাহলে বর্তমান সমাজের দৃশ্য অনুরূপ কারণে আরও বেশি ভয়াবহ মনে হবে। তুকতাক ঝাড়ফুঁক ভূত—প্রেত—ওঝা—তাবিজ—কবচ—মাদুলি—এসব প্রাগৈতিহাসিক বর্বর যুগের কথা, অথচ আধুনিক সমাজে এগুলিরও আধিপত্য যে কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত তা খোঁজ করলে রীতিমতো অবাক হয়ে যেতে হয়। কতশত আন্দোলন, কত শিক্ষা, কত প্রগতিশীল ভাবধারা এগুলির অলীকতা ও অযৌক্তিকতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেও যে ব্যর্থ হয়েছে তা কল্পনা করা যায় না। আমাদের সমাজে বিশেষ করে, ঠিক পৌত্তলিকতার মতো এইসব আদিম লোকাচারের পুনরাধিপত্যের প্রবল ঝোঁক দেখা যায়। এরই বা কারণ কী? এরকম আরও অনেক দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়, কিন্তু আমাদের মূল প্রতিপাদ্যের জন্য এইটুকুই যথেষ্ট।

আমাদের প্রতিপাদ্য ছিল—বাংলা দেশে উনিশ শতকের ধর্মসংস্কার ও সমাজসংস্কার আন্দোলনের ফলাফল। এই ফলাফল না জানলে, স্বামী বিবেকানন্দর ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। উনিশ শতকী সংস্কার আন্দোলনের ঢেউ সমাজের সর্বজনস্তরে পৌঁছোয়নি। সর্বস্তর তো দূরের কথা, উপরের স্তরেও ব্যক্তিমানসের গভীরে বেশি দূর পর্যন্ত প্রবেশ করেছিল কি না সন্দেহ। জনসীমা তো দূরের কথা, এইসব আন্দোলনের ভৌগোলিক সীমাও আদৌ বিস্তৃত ছিল না। কলকাতা শহর, শহরতলি অঞ্চল এবং বর্ধমান কৃষ্ণনগর ঢাকা প্রভৃতি কয়েকটি বড় বড় মফঃসসল শহরই ছিল আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র। উনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত প্রকৃত জনশিক্ষার প্রসার বিশেষ কিছু হয়নি বললেও ভুল হয় না। অতএব সমাজের গভীরে তো বটেই, উপরের দিকেও মানুষের মনে সংস্কার—আন্দোলন প্রত্যাশিত প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। মানুষের মানসিক পরিবর্তন, চিন্তাধারা আচার—ব্যবহারের পরিবর্তন, ধর্মবিশ্বাস ও ধ্যানধারণার পরিবর্তন, সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতির পরিবর্তন যে কত কঠিন ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং বাইরের পরিবর্তনের অন্তরালে যে কত স্থিতিশীলতার চোরাবালিস্তর লুকিয়ে থাকে, তা আগেকার দৃষ্টান্তগুলি থেকে পরিষ্কার বুঝতে পারা যায়। উনিশ শতকের গোড়ার ৩০/৪০ বছরের আন্দোলন শেষ পর্বের দিকে যখন থিতিয়ে এল, তখন দেখা গেল তার ফলাফল আশাপ্রদ তো হয়ইনি, বরং উন্নতিকামী সংস্কারপন্থীদের একদেশদর্শিতা এবং অনেক ক্ষেত্রে অবিমৃশ্যকারিতার ফলে জনচিত্তে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। বাংলার সমাজজীবনে এক নতুন সংকটের কালো মেঘ জমা হচ্ছে। উনিশ শতকের তিরিশে যেমন উন্নতিকামীরা পাশ্চাত্যভাবোন্মত্ত হয়ে প্রগতির পথে অনেকটা উন্মার্গ হয়েছিলেন, শেষ পর্বেও তেমনি জাতীয় ঐতিহ্য রক্ষার অত্যুৎসাহে রক্ষণশীলেরা অত্যধিক কূপমণ্ডূকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। পশ্চিম থেকে পুবে এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে সমস্ত চিন্তাস্রোতকে শশধর তর্কচূড়ামণিরা একেবারে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিছুটা ঘুরিয়ে দিয়েছিলেনও। এমন সময় এই সংকটকালে রামকৃষ্ণ পরমহংস ধর্মসমন্বয়ের নতুন আদর্শ স্থাপন করান এবং সেই আদর্শ প্রচারে সর্বশক্তি প্রয়োগের সকল্প নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালেন স্বামী বিবেকানন্দ। উন্মার্গ প্রগতিশীল এবং নিষ্ফল আক্রোশে অন্ধ সংরক্ষণশীল উভয় দলের আতিশয্যের কঠোর সমালোচনা করে বিবেকানন্দ সকলের সামনে এক নতুন আদর্শ তুলে ধরলেন। দেশের চিন্তাসংকটের এই সন্ধিক্ষণে স্বামী বিবেকানন্দর আবির্ভাব। সমগ্র উনিশ শতকের ধর্মসংস্কার, শিক্ষাসংস্কার ও সমাজসংস্কার আন্দোলনের পশ্চাদভূমিতেই কেবল এই চিন্তাসংকটের স্বরূপ এবং বিবেকানন্দর আবির্ভাবের গুরুত্ব উপলব্ধি করা সম্ভব।

তখন কেশবচন্দ্রর যুগ। বিবেকান্দর জন্মের বছর দুই আগে থেকে (১৮৬১) কেশবচন্দ্র ব্রাহ্মধর্ম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেছেন, ‘ইন্ডিয়ান মিরর’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। বাংলার তরুণসমাজের উপর কেশবচন্দ্রর অপরিসীম প্রভাব, তাঁর বাগ্মিতা, যুক্তিবাদিতা, তেজস্বিতা ও প্রতিভার দীপ্তিতে সকলে মুগ্ধ। সমাজে তখন চারিদিক থেকে নাস্তিকতা, বিশৃঙ্খলা, অনিশ্চয়তা ও অবিশ্বাসের মনোভাব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। একটা নৈরাশ্যের দীর্ঘ ছায়া শিক্ষিত বাঙালির মনে সঞ্চারিত হচ্ছে এবং অন্ধ আক্রোশে তা বাইরে বিস্ফোরিত হতে চাইছে। এই ঐতিহাসিক সুবর্ণক্ষণে গোঁড়া হিন্দু সনাতনবাদীরা নিজেদের পুরাতন তূণীর থেকে শাস্ত্রীয় শাস্ত্র উদ্যত করে প্রগতিশীল শিবিরে প্রচণ্ড প্রতি—আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন এবং আক্রমণ আরম্ভও করেছিলেন। এইসব বিবেকানন্দর পক্ষে কেশবচন্দ্রর প্রতি এবং তাঁর ভিতর দিয়ে ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া স্বাভাবিক এবং তিনি তা—ই হয়েছিলেনও। তরুণদের নিয়ে কেশবচন্দ্র ‘ব্যান্ড অফ হোপ’ নামে (Band of Hope) একটি দল গঠন করেছিলেন এবং বিবেকানন্দ এই দলে নাম লিখিয়েছিলেন। নাম লেখানো তাঁর সার্থক হয়েছিল, কারণ এই আশাবাদীদের দলের ভিতর ধীরে ধীরে পরবর্তী জীবনে বিবেকানন্দ নতুন আশার প্রভাতসূর্যের মতো বাংলার সমাজ—গগনে উদিত হয়েছিলেন।

যদি ব্রাহ্ম আন্দোলনের সংহতিতে সেই সময় ফাটল না ধরত, রাজনারায়ণ বসুর মতো প্রবীণ ব্রাহ্ম নেতারা ‘হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠতা’ প্রতিপাদনে উদযোগী না হতেন, ব্রাহ্মধর্মের ভিতরে হিন্দুধর্মের ও খ্রিস্টধর্মের জোয়ার ভিন্নমুখী খাতে বইতে আরম্ভ না করত, কেশবচন্দ্রর মতো প্রতিভাশালী নেতারা পরস্পর—বিরোধী ভাবাবর্তের ঘাতপ্রতিঘাতে নোঙরহীন নৌকার মতো দিগভ্রান্ত না হতেন, এবং সবার উপরে যদি সমাজের শিক্ষিত উন্নতিশীল সংস্কারপন্থীরা অতিরিক্ত বিদেশি আদর্শপন্থী, স্বদেশি ঐতিহ্যবিচ্ছিন্ন নিরবলম্ব পরগাছা শ্রেণিতে পরিণত না হতেন, তাহলে বিবেকানন্দর মানসিক বিকাশ কোন পথে পরিচালিত হত এবং সমাজে কোন ভূমিকায় তিনি অবতীর্ণ হতেন তা বলা যায় না। মনে হয় তিনি এ দেশের প্রথম প্রকৃত বিপ্লবী দেশপ্রেমিক ও রাষ্ট্রনায়ক হতেন। অবশ্য এতগুলি ‘যদি’র মুখাপেক্ষী হয়ে বিবেকানন্দর কল্পিত মূর্তি ধ্যান করে কোনও লাভ নেই। সমাজজীবনের বাস্তব ধারায় তাঁর ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভার যে বিকাশ হয়েছে, তা—ই আমাদের অনুধাবন করা কর্তব্য।

উনিশ শতকের সংস্কার আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিবেকানন্দ বহু উক্তি করেছেন। তাঁর নিজের সংস্কারকর্মের তাৎপর্য ও প্রেরণার উৎস কোথায় জানতে হলে তাঁর এই বক্তব্যগুলি আমাদের লক্ষ করতে হবে। একটি বক্তৃতায় তিনি বলেছেন : ‘প্রায় শতবর্ষ ধরে আমাদের দেশে যে সমাজসংস্কার আন্দোলন হয়েছে তার ফলে সমাজের কোনও স্থায়ী মঙ্গল হয়নি কেন? মঞ্চ থেকে হাজার হাজার বক্তৃতা দেওয়া হয়েছে, পাশ্চাত্য বিদ্যা—বিশারদরা হিন্দু সভ্যতার মাথায় অজস্র ধারায় নিন্দাবাদ ও অভিসম্পাত বর্ষণ করেছেন, কিন্তু কোনও কিছুতেই সমাজের কোনও উপকার হয়নি। কেন হয়নি? এই নিন্দা, গালাগালি ও অভিসম্পাতের জন্য। তা ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষিত সংস্কারপন্থী পাশ্চাত্য ভাবধারার নির্বিচার অনুকরণের পক্ষপাতী এবং জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিধারা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন। অন্যান্য বিদেশি জাতির কাছ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয় যে কিছু নেই, এমন কথা আমি বলি না, কিন্তু তা—ই বলে স্বদেশের সর্বস্ব খুইয়ে বিদেশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে, এ—ও এক সৃষ্টিছাড়া ধারণা। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে হাজার ”উন্নতি” ”উন্নতি” বলে চিৎকার করলেও দেশে একতিলও উন্নতি হয় না, হতে পারে না। স্বদেশের সমাজ ও জনসাধারণকে কটূক্তি করে আর গালাগালি দিয়ে কখনো কোনও হিতসাধন করা যায় না।’

আর—একটি বক্তৃতায় তিনি বলেছেন : ‘ভারতবর্ষের নানা স্থানে গত দশ বছর ধরে ভ্রমণ করে দেখেছি, সমাজসংস্কারসভায় দেশ পরিপূর্ণ। কিন্তু যাদের রক্ত শোষণ করে ”ভদ্রলোক” নামে ব্যক্তিরা ”ভদ্রলোক” হয়েছেন এবং ভদ্রলোকত্ব বজায় রেখে চলেছেন, তাদের জন্য কোথাও একটি সভাও দেখলাম না।’ এই প্রসঙ্গেই আর—একটি বক্তৃতায় তিনি বলেন : ‘আমরা সংস্কারের কথা, উন্নতির কথা বলছি বটে, কিন্তু যাদের জন্য সংস্কার, যাদের জন্য উন্নতি, তারা কোথায়? মুষ্টিমেয় একদল লোক নড়েচড়ে বেড়াচ্ছেন, বড় বড় কথা বলছেন, কিন্তু সমগ্র জাতি নড়েচড়ে না কেন? বর্তমান যুগ রাজশক্তির যুগ নয়, জনশক্তির যুগ। কিন্তু কোথায় সেই জনশক্তি—তাকে সংগঠিত ও উদবুদ্ধ করার চেষ্টা কোথায়? প্রকৃত স্বদেশপ্রীতির ও স্বজনপ্রীতির অভাবে এতদিন আমাদের দেশের শিক্ষিত ভদ্রলোকরা এই চেষ্টা করেননি, এবং তা করেননি বলেই উনিশ শতকের সমস্ত সংস্কার আন্দোলন একটা উপরের পোশাকি আন্দোলন হয়েছে, সাধারণ জনচিত্তকে স্পর্শ করতে পারিনি।’

এই ধরনের বহু বক্তৃতা, চিঠিপত্র ও রচনার ভিতর দিয়ে স্বামী বিবেকানন্দর আবির্ভাবের ঐতিহাসিক যৌক্তিকতা প্রকাশ পেয়েছে। মনে হয় তিনি নিজেই যেন তাঁর সামাজিক—ঐতিহাসিক ভূমিকার পশ্চাদভূমি ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। কিন্তু এরপরেও একটি বড় প্রশ্ন থেকে যায়—প্রত্যক্ষভাবে সমাজসংস্কারের পথে না অগ্রসর হয়ে, বিবেকানন্দ ধর্মসংস্কার ও ধর্মপ্রচারের পথে কেন অগ্রসর হয়েছিলেন? এর বিস্তারিত উত্তর স্বভাবতই দীর্ঘ হবে। সংক্ষেপে এই প্রশ্নের উত্তর এই হতে পারে :

প্রথম কারণ—’ধর্ম’ হল যা ধারণ করে। ধর্ম মানে জপতপমন্ত্র আচার—অনুষ্ঠান নয়। কতকগুলি প্রত্যয়, বিশ্বাস, ধ্যানধারণা, ন্যায়—অন্যায় ও নীতিবোধ ইত্যাদি যা মূলত কোনও জাতির সত্তাকে যুগ যুগ ধরে ধারণ করে থাকে, সমস্ত বিপর্যয়ের মধ্যেও সেই জাতির প্রাণস্পন্দন রক্ষা করে চলে, সেইটাই হল সেই জাতির ধর্ম। বিবেকানন্দর ধর্মমত ও ধর্মসংস্কারের আসল তাৎপর্য বুঝতে হলে ধর্মকে এই অর্থে গ্রহণ ও বিচার করতে হবে। তা করলে সহজেই বোঝা যাবে বিবেকানন্দ কেন ধর্মের পথে, এবং প্রধানত হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠতা ও মহত্ত্ব ব্যাখ্যা করার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। সমগ্র জাতির মানস—সত্তার মূলভিত্তিটিকে তিনি সবার আগে সুদৃঢ় করে গড়তে চেয়েছিলেন। দেশের যে অবস্থা তখন, তাতে আগে এইভাবে হাল চষে ক্ষেত্র প্রস্তুত করার প্রয়োজন ছিল। ক্ষেত্র প্রস্তুত না হলে বীজ কোথায় ছড়ানো হবে? এবং ছড়ানো হলেই বা তাতে ফসল ফলবে কেন?

দ্বিতীয় কারণ হল—হিন্দুধর্মই তখন সব দিক থেকে বিপন্ন হয়ে উঠেছিল। দেশি ও বিদেশি খ্রিস্টান পাদ্রিরা যত্রতত্র হিন্দুধর্মের কুসংস্কারের কুৎসা রটনা করে খ্রিস্টধর্মের মাহাত্ম্য প্রচারে মত্ত হয়ে উঠেছিলেন। নব্যশিক্ষিত বাঙালিদের একটা বড় অংশ হিন্দুধর্ম ও হিন্দুসমাজের প্রতি কটূক্তি করাকেই তাঁদের জীবনের শ্রেষ্ঠ ব্রত বলে গ্রহণ করেছিলেন। যে যত হিন্দু—বিরোধী সে তত প্রগতিশীল—এইরকম একটা মনোভাব শিক্ষিতদের মধ্যে তখন বেশ প্রকট হয়ে উঠেছিল। একটা গোলামসুলভ সাহেবিয়ানা ছিল প্রগতির বড় লক্ষণ। সুতরাং ভারতের বৃহত্তর হিন্দুসমাজের কল্যাণের জন্য কিছু করতে হলে সর্বাগ্রে হিন্দুধর্মকে অপবাদ ও কুসংস্কারের পঙ্ককুণ্ড থেকে উদ্ধার করা প্রয়োজন। বিবেকানন্দ এই ঐতিহাসিক প্রয়োজন উপলব্ধি করেই হিন্দুধর্মের অন্তর্নিহিত মহত্ত্ব উদ্ধারে ব্রতী হয়েছিলেন।

তৃতীয় কারণ হল—এই কাজ তখনকার শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে যাঁরা করতে পারতেন ব্রাহ্মণধর্মপন্থীরা—তাঁরা নিজেদের কর্মপ্রণালীর দোষে সাধারণ হিন্দুসমাজের কাছে বিশ্বাসভাজন ছিলেন না। আরও লক্ষণীয় বিষয় হল—রাজনারায়ণ বসু, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ ব্রাহ্মধর্মের প্রবীণ নেতারা অনেকেই তখন ব্রাহ্মধর্মের স্বার্থেই ‘হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠতা’ প্রতিপাদনে অগ্রণী হয়েছিলেন। কেশবচন্দ্র সেন যদিও এর ব্যতিক্রম ছিলেন, তাহলেও তাঁর খ্রিস্টভক্তির আতিশয্য ও অবতারবাদের মোহ সুস্থ—সবল ধর্মসংস্কারের ধারাকে যে অনেকখানি পঙ্কিল ও দুর্বল করে দিয়েছিল তা অস্বীকার করা যায় না। তা ছাড়া ব্রাহ্মধর্মপন্থীদের সংস্কার—প্রচেষ্টা প্রধানত সমাজে উচ্চবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত স্তরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তঁদের আবেদন—নিবেদন কোনওদিন সাধারণ জনস্তর পর্যন্ত পৌঁছোয়নি, এবং তাঁদের ঔপনিবেশিক জটিল তত্ত্বপ্রধান ধর্মব্যাখ্যা সাধারণের কাছে দুর্বোধ্য ও অনাকর্ষণীয় ছিল। কাজেই তাঁদের ধর্মসংস্কারের কোনও প্রত্যক্ষ ফল কিছু জনমানসে প্রতিফলিত হল না। তাই ধর্মান্দোলনের এই সংকটকালে স্বামী বিবেকান্দর আবির্ভাব ঐতিহাসিক কারণেই অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠল।

চতুর্থ কারণ হল—প্রতিক্রিয়াশীল সনাতনধর্মী হিন্দুরা এইসময় সুযোগ বুঝে প্রচণ্ড হুংকারে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের রঘুনন্দনি রক্তচক্ষুতে হিন্দুধর্মের ও হিন্দুসমাজের ক্ষতি ছাড়া যে লাভ হবে না, তা—ও ধর্মসমন্বয়পন্থী বিবেকানন্দ উপলব্ধি করেছিলেন। এ কথা বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার যে ধর্মের ক্ষেত্রে রামকৃষ্ণ পরমহংস অথবা বিবেকানন্দ কখনোই সংকীর্ণ সনাতনপন্থী ছিলেন না, সর্বদাই উদার মানবপন্থী ও সমন্বয়পন্থী ছিলেন।

সামাজিক অবস্থার বিস্তারিত বিশ্লেষণ করলে আরও অনেক কারণ উপস্থিত করা যেতে পারে। এই সামান্য প্রস্তাবনায় তার সুযোগ নেই। মোটামুটি এই কারণগুলি থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, আমাদের দেশের এক কঠিন সংকটকালে স্বামী বিবেকানন্দর আবির্ভাব হয়েছিল এবং সেই সংকট থেকে স্বদেশের লোকচিত্তকে মুক্ত করার জন্যই তিনি হিন্দুধর্মের প্রকৃত মর্ম প্রচারে অগ্রসর হয়েছিলেন। কিন্তু ধর্ম তাঁর প্রধান বক্তব্য হলেও, তাঁর সমাজবোধ ও মানবতাবোধ এত প্রখর ও গভীর ছিল যে সমস্ত ধর্মকথার মধ্যে ধর্মতত্ত্ব অপেক্ষা বোধহয় তিনি ধর্মের মাধ্যমে সমাজতত্ত্ব ও মানবতত্ত্বের কথাই অধিক বলেছেন। এই প্রসঙ্গে আরও একটি কথা আমাদের স্মরণ করা কর্তব্য বলে মনে হয়। আজকের স্বাধীন ভারত রাষ্ট্র তার সংবিধানে ‘সোশ্যালিজম’ বা সমাজতন্ত্রের আদর্শকে রাষ্ট্রীয় আদর্শরূপে গ্রহণ করেছে। এই সমাজতন্ত্রের আদর্শ বোধহয় সর্বপ্রথম স্বামী বিবেকানন্দই সুস্পষ্ট ভাষায় এ দেশে জনসমাজে প্রচার করেছেন। সে কথা ভুলে গিয়ে যদি আজ তাঁকে শুধু একজন ধর্মসংস্কারক বা ধর্মপ্রচারক বলে বিচার করা হয়, তাহলে তাঁর প্রতি সুবিচার করা হবে না, বরং তাঁর আদর্শকে এবং জীবনের ব্রতকে খণ্ডিত ও বিকৃত করা হবে।

কথাটা সামান্য একটু বিস্তার করে বলা আবশ্যক। আমাদের দেশে যদি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা (political thought) ও সমাজচিন্তার (social thought) ইতিহাস কোনওদিন লেখা হয়—তাহলে স্বামী বিবেকানন্দ যে সেখানে কেবল স্বাদেশিকতা ও স্বাজাত্যবোধের অন্যতম উদবোধক বলে স্থান পাবেন তা নয়, তার সঙ্গে সমানাধিকার ও সমাজতন্ত্রের আদর্শের প্রথম বক্তার কৃতিত্বও তিনি দাবি করবেন এবং সে দাবি ঐতিহাসিক বা সমাজবিজ্ঞানীর পক্ষে অস্বীকার করাও সম্ভব হবে না। তাঁর কালে এই আদর্শের কথা নির্ভীক কণ্ঠে প্রচার করতে যে কী প্রচণ্ড পৌরুষের প্রয়োজন হয়েছিল তা আজ আমরা কল্পনাও করতে পারব না। কল্পনা করুন, আজ থেকে ৭০/৮০ বছর আগে—বিদেশি ব্রিটিশ রাজের একচ্ছত্র রাজত্বের যুগে—কেবল স্বদেশপ্রেমের কথা নয়—তিনি দেশের উচ্চশ্রেণির উচ্চসমাজের মুখের উপর বলেছেন :

However much you may be strutting in the pride of your birth, you—the upper classed of India—do you think you are alive? You are but mummies…it is you who are the real ‘walking corpses.’ You, the upper classed of India—you are the void, the unsubstantial nonentities of the future…why do you not quickly reduce yourselves into dust and disappear in the air? (Collected Works, vol. 7—pp. 308-9).

এটি তাঁর বিখ্যাত বাংলা রচনার রূপান্তর, যা বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে রয়েছে। স্বামীজির বাংলা রচনা অবশ্য ইংরেজির তুলনায় অনেক কম—কারণ তাঁকে বাংলার বাইরে বেশি করে তাঁর ধর্ম ও সমাজের আদর্শ প্রচার করতে হয়েছে। ধর্ম প্রসঙ্গে তিনি ভারতের ঐতিহাসিক ও সামাজিক ক্রমবিকাশের যে বিশ্লেষণ করেছেন তার অধিকাংশই আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ও যুক্তিবাদী, কোথাও তার মধ্যে আধ্যাত্মিকতার ধোঁয়া নেই, দুর্বোধ্য তত্ত্বকথা নেই। ভারতে ঐতিহাসিক ধারা বিশ্লেষণ করে তিনি একাধিকবার বলেছেন যে প্রথমে পুরোহিতশ্রেণি অর্থাৎ ব্রাহ্মণরা, তারপর যোদ্ধাশ্রেণি অর্থাৎ ক্ষত্রিয়রা, তারপর বৈশ্যশ্রেণি অর্থাৎ বণিক ও ধনিকরা দেশে রাজত্ব করেছে ও করছে। কিন্তু ভবিষ্যতের ভারতে শ্রমজীবী শূদ্রশ্রেণি রাজত্ব করবে। তাতে যে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং দেশে শান্তি ও সাম্য স্থাপিত হবে এবং আমরা রামরাজ্যে বাস করব তা নয়—আবার নতুন সমস্যা, নতুন অশান্তি, নতুন শক্তি ও দম্ভের দেখা দেবে। কিন্তু তাহলেও এই পরিবর্তনের হাত থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় নেই। তিনি বলেছেন : ‘I am a Socialist not because I think it is a perfect system, but half a loaf is better than no bread…A redistribution of pain and pleasure is better than always the same persons having pain and pleasure.’ ইতিহাসের বিবর্তনধারা এবং সমাজ বিকাশের ধারা সম্বন্ধে তাঁর মন যে কতখানি সজাগ ও বাস্তবধর্মী ছিল তা এই উক্তি থেকেই বোঝা যায়। এরপরেও কেউ যদি প্রচলিত অর্থে তাঁকে ধর্মপ্রচারক ও সন্ন্যাসী বলে অভিহিত করেন, তাহলে তিনি স্বামীজির ব্যক্তিত্বের শাঁসটুকু বাদ দিয়ে খোলসটিকে বিচার করছেন বলতে হবে। মহাত্মা গান্ধী আজানুলম্বিত কাপড় পরতেন—ভারতের সাধারণ মানুষের বাস্তব অবস্থার প্রতীকরূপে। স্বামী বিবেকানন্দর সন্ন্যাস ও গেরুয়া বসনও ছিল সেইরকম—ভারতের জনমানসের প্রতীক। লোভ—হিংসা—বিদ্বেষহীন সরলতা, শান্তি ও মৈত্রীর পরিধান—ভারতীয় ঐতিহ্যমণ্ডিত। এই বেশ ধারণ করে ভারতের সর্বনিম্নস্তরের মানুষটির কাছেও প্রাণের অভিনন্দন পাওয়া যায়—এ তিনি জানতেন। কিন্তু বৈরাগ্যের বাণী বা ধর্মতত্ত্বের কথা তিনি সেই মানুষের কাছে প্রচার করেননি। প্রচার করেছেন দেশীয় ঐতিহ্যের কথা, দেশাত্মবোধের কথা এবং জাতিভেদহীন শ্রেণিভেদহীন সমাজগঠনের কথা। আজ স্বামী বিবেকানন্দর জন্মশতবর্ষে যদি আমরা তাঁর সেই আদর্শটিকে স্মরণ করি এবং নিজেদের জীবন ও আচরণে তা যথাসম্ভব প্রয়োগ করতে সচেষ্ট হই—তাহলেই এই জাতীয় উৎসব করার সার্থকতা আছে—তা না হলে এ—ও এক ধরনের পৌত্তলিকতা ছাড়া কিছু নয়। আজকের জাতীয় সংকটের দিনে বিশেষ করে স্বামী বিবেকানন্দর দেশাত্মবোধ ও দেশীয় ঐতিহ্যবোধের আদর্শ এবং তাঁর ভেদবৈষম্যহীন ভারতীয় সমাজগঠনের আদর্শ থেকে আমরা খানিকটা প্রেরণা পেতে পারি, যদি ধর্মের গণ্ডির মধ্যে তাঁকে টেনে না নিয়ে যাই।

১৩৬৯—৭০/১৯৬২

সকল অধ্যায়

১. বাঙালি সদাগরশ্রেণি – বিনয় ঘোষ
২. মার্কসবাদ ও মর্গানবাদ – বিনয় ঘোষ
৩. বাঙালির রাষ্ট্রচিন্তা – বিনয় ঘোষ
৪. গান্ধীবাদের কালোপযোগিতা – বিনয় ঘোষ
৫. মধ্যবিত্তশ্রেণি ও মাধ্যমিক সংঘ – বিনয় ঘোষ
৬. শিবনাথ শাস্ত্রী – বিনয় ঘোষ
৭. সমাজপতি মহারাজা নবকৃষ্ণ – বিনয় ঘোষ
৮. ঠাকুর পরিবারের আদিপর্ব ও সেকালের সমাজ – বিনয় ঘোষ
৯. বিদ্যাসাগর-চিন্তা – বিনয় ঘোষ
১০. রবীন্দ্র-চিন্তা – বিনয় ঘোষ
১১. বিবেকানন্দ-চিন্তা – বিনয় ঘোষ
১২. জয়নারায়ণ ঘোষাল – বিনয় ঘোষ
১৩. অটোমেটিক জীবন ও সমাজ – বিনয় ঘোষ
১৪. সমাজবিজ্ঞানীর এ কোন শোচনীয় পরিণতি! – বিনয় ঘোষ
১৫. মেহনত ও প্রতিভা – বিনয় ঘোষ
১৬. দীবনন্ধু মিত্র বাংলা রঙ্গমঞ্চ ও বাঙালি সমাজ – বিনয় ঘোষ
১৭. বাংলা গদ্যসাহিত্যের আদিপর্ব – বিনয় ঘোষ
১৮. তারাশঙ্করের সাহিত্য ও সামাজিক প্রতিবেশ – বিনয় ঘোষ
১৯. সাহিত্যে অশ্লীলতা – বিনয় ঘোষ
২০. ‘গেট টু-গ্যাদার’ – বিনয় ঘোষ
২১. অর্থনীতির ভোজবাজি – বিনয় ঘোষ
২২. গৃহভৃত্যদের সামাজিক ভূমিকা – বিনয় ঘোষ
২৩. স্বদেশি আন্দোলন ও ব্রাহ্মবান্ধব উপাধ্যায় – বিনয় ঘোষ
২৪. রামমোহন রায়ের জীবনচরিত – বিনয় ঘোষ
২৫. এক পুরুষের দুস্তর ব্যবধান – বিনয় ঘোষ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন