বিনয় ঘোষ
সমালোচ্য বই দুখানি এমন একটি বিষয় (অর্থবিদ্যা) নিয়ে লেখা যা ক্রমেই অত্যন্ত জটিল প্রয়োগিক এবং অনেকটা অবিমিশ্র গাণিতিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। দুখানি বই—ই অবশ্য অর্থবিদ্যার তত্ত্বকথা নয়। মেন্ডেস—ফ্রাঁস চিন্তাশীল অর্থবিদ বলে পাশ্চাত্য বিদ্বৎসমাজে স্বীকৃত। রাষ্ট্র—পরিচালনার কাজেও তাঁর অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে মূল্যবান, কারণ অর্থবিদ্যার যে সাম্প্রতিক রূপতত্ত্বের তিনি বিচার—বিশ্লেষণ করেছেন, তা সে তত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগজ্ঞান ভিন্ন যথাযথভাবে করা সম্ভব নয়। অর্থবিদ্যা প্রধানত সমাজবিজ্ঞান, অথবা মানববিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। তার যাবতীয় তত্ত্বকথার সার্থকতা তখনই যখন সেগুলি বাস্তব জীবনের ধোপে টিকে যায়। তা না টিকলে, কোনও বিদ্যার কোনও বুলিরই অর্থ হয় না, অর্থবিদ্যারও না। ক্লাসিক্যাল অর্থবিদদের এরকম অনেক বুলি শেষ পর্যন্ত সামাজিক ঘটনার ঘাতপ্রতিঘাতে ধোপে টেকেনি বলেই কিনস, কাহন প্রমুখ সজাগ অর্থবিদদের অনুসন্ধানী মন আবার নতুন করে সব সূত্রগুলির বিচার—বিশ্লেষণ করেছেন এবং তার ফলেই নতুন অর্থবিদ্যার বিকাশ হয়েছে। আধুনিক অর্থবিদ্যার উৎপত্তিই হয়েছে ধনিকতন্ত্রের আবির্ভাব, বিকাশ ও বৃদ্ধির যুগে। তার সাম্প্রতিক সংস্কার ও নবকলেবরধারণ প্রয়োজন হয়েছে, ধনিকতন্ত্রের গভীর সংকটের যুগে (দুই মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তীকালের)। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির বাইরে প্রায় প্রত্যেক দেশে এই নতুন কিনসীয় ও উত্তর—কিনসীয় অর্থবিদ্যার প্রয়োগ—পরীক্ষা চলছে। রাষ্ট্রনায়করা মনে করছেন যে বহুদিন পরে তাঁরা বার্ধক্য—জীর্ণ ধনিকতন্ত্রের পুনর্জীবনের জন্য কায়কল্প চিকিৎসার অভিনব পন্থা খুঁজে পেয়েছেন কিনসের নয়াসূত্রের মধ্যে। আমাদের ভারতবর্ষেও কিনসীয় অর্থবিদ্যার নয়াসূত্রগুলি অর্থসচিব ও প্ল্যানিং—বিশেষজ্ঞরা একান্ত অনুরাগীর মতো কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করবার চেষ্টা করছেন। ‘ইনভেস্টমেন্টে’—এর বা অর্থনিয়োগের যে জাদুকরি শক্তি কিনস—কাহন আবিষ্কার করছেন ‘মালটিপ্লায়ার’—এর ক্রিয়ায়, ভোগবৃত্তির প্রবণতার (propensity to consume) সজাগতা ও ক্রমবৃদ্ধির জন্য তাঁরা ট্যাক্সের জাদুদণ্ডের সাহায্যে যে অর্থসাম্য ও আয়সাম্য মোটামুটি বজায় রাখার সুপারিশ করেছেন, অর্থসচিবরা আজ তা—ই অন্ধের মতো অনুসরণ করে চলেছেন বলা চলে। ধনিকতন্ত্রের বাইরের এই সমাজতান্ত্রিক পোশাকের একটা চাকচিক্য আছে, সাধারণের কাছে আকর্ষণও আছে। তাই রাষ্ট্রের কর্ণধাররা আজ সামাজিক প্রগতি ও নিরাপত্তা সম্বন্ধে আশান্বিত হয়েই নতুন অর্থবিদ্যার সূত্রগুলি কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে তৎপর হয়েছেন। তৎপরতা ও উদ্দেশ্যের সাধুতা সত্ত্বেও যদি দেখা যায় যে ‘পূর্ণ কর্মসংস্থান’ ও জাতীয় ধনবৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে না, ভোগ (consumption) ও মূলধন নিয়োগের সম্মিলিত চাহিদার ঘাটতি পড়ছে, সুখ—দুঃখের নিয়তিচক্রের মতো তেজি—মন্দার আবির্ভাব হচ্ছে, তাহলে আবার কিনসের নয়াসূত্রের পুনর্বিচার করার প্রয়োজন হবে। সমাজবিজ্ঞানীর বিজ্ঞানাগার হল সমাজও মানুষ। সেই বিজ্ঞনাগারের পরীক্ষায় যদি কিনসীয় অর্থবিদ্যার নয়াসূত্র উত্তীর্ণ না হতে পারে, তাহলে তার সমস্ত গাণিতিক বিশ্লেষণের কসরত কেবল ভোজবাজি ও মিথ্যা বুদ্ধির সাফাই বলে গণ্য হবে এবং সূত্রাদিও বাতিল হয়ে যাবে।
‘ইকনমিক্স অ্যান্ড অ্যাকশন’ দুইয়ের মধ্যে কিনসের এই নয়াসূত্রগুলির ব্যাখ্যা করে, তার প্রয়োগ পরীক্ষার একটি বিবরণ দেওয়া হয়েছে। বইখানি দুই অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশ তত্ত্বপ্রধান, দ্বিতীয় অংশ তথ্যপ্রধান। তত্ত্বপ্রধান অংশটিতে, যত দূর সম্ভব সরল ভাষায়, মার্কান্টাইল ও ক্লাসিক্যাল অর্থবিদদের প্রতিপাদ্যের বিচার করে, কিনসের নয়াসূত্রগুলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে দেখানো হয়েছে, কীভাবে এই নতুন আর্থিক সূত্রগুলি বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ করা হচ্ছে। প্রয়োগের ফলফল কী, ভবিষ্যৎই বা কী? কেবল অর্থবিদ্যার ছাত্রদের কাছে নয়, ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রদের কাছেও বইখানির প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত হবে, আশা করা যায়। তার কারণ লেখকরা তাঁদের বক্তব্যকে বেশ সচেতনভাবেই ‘নন টেকনিক্যাল’ ভাষার মাধ্যমে যথাসম্ভব সহজবোধ্য করবার চেষ্টা করেছেন। তার ফলে খানিকটা অতিসরলীকরণের দোষ ঘটেছে বটে, কিন্তু তাতে তাঁদের আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়নি।
দ্বিতীয় বইখানি হল, জন মেইনার্ড কিনসের জীবনচরিত। বছর চারেক আগেকার বই হলেও বইখানি এই প্রসঙ্গে বিশেষ উল্লেখযোগ্য বলে আলোচ্য মনে করি। লিখেছেন এমন একজন অর্থবিদ (আর. এফ. হ্যারড), যিনি কেবল কিনসের সান্নিধ্য ও সাহচর্যলাভে যে উপকৃত হয়েছেন তা নয়, তাঁর নতুন চিন্তাধারার বিকাশেও সচেষ্ট সাহায্য করেছেন। কাহন, হিক্স, জোন রবিনসন প্রমুখ দুচারজন যাঁরা সাম্প্রতিক অর্থবিদ্যার ক্ষেত্রে স্বকীয়তায় ও স্বাতন্ত্র্যে সমুজ্জ্বল, হ্যারড তাঁদের মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম। কিনসের জীবনের পটভূমিকায় তিনি আধুনিক অর্থবিদ্যার ক্রমবিকাশের ইতিহাস রচনা করেছেন বলা চলে। কাহিনি ও ঘটনার সংমিশ্রণে নীরস তত্ত্বকথাও তাই সরস হয়ে উঠেছে। অ্যালফ্রেড মার্শালের আমল থেকে কিনসের আমল পর্যন্ত কিভাবে, কী কারণে, অর্থবিদ্যার অনুশীলনের ধারা বদলে গেল, তার একটা ক্রমিক ইতিবৃত্ত হ্যারড রচনা করেছেনপ্রধানত কিনসের জীবনধারা অবলম্বন করে। যাঁরা কিনসীয় অর্থসূত্রের উৎস ও বিকাশের ধারা সম্বন্ধে কৌতূহলী, তাঁরা হ্যারডের বইখানি অবশ্যই পাঠ করবেন। তাতেও যাঁরা সন্তুষ্ট হবেন না, তাঁদের জন্য সুম্পেটার তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ History of Economic Analysis লিখে গিয়েছেন। তার মধ্যে সাম্প্রতিক অর্থবিদ্যার প্রত্যেকটি ‘tool’ ও ‘concept’—এর ক্রমবিবর্তনের ধারাবাহিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সুম্পেটারের বই অবশ্য কেবল অর্থবিদ্যার ক্রনিকল বা ইতিবৃত্ত বলতে অন্যায় করা হবে। অথবিদ্যা প্রসঙ্গে সুম্পেটার আধুনিক যুগের মানববিজ্ঞানের প্রত্যেকটি বিদ্যার ক্রমবিকাশের ইতিহাস রচনা করেছেন। কেবল ‘ইকনমিক অ্যানালিসিস’ নয়, ‘ইন্টেলেকচুয়াল অ্যানালিসিস’—এর ইতিহাস বলা চলে তাঁর বইখানিকে। তার মধ্যে ইকনমিক্স হল মধ্যবিন্দু। সুম্পেটারের সঙ্গে কারও কোনও তুলনা করা চলে না। যাঁদের অবসর কম, কৌতূহলের সীমানাও সীমাবদ্ধ, তাঁরা হ্যারডের লেখা জীবনচরিতেই পরিতৃপ্ত হবেন মনে হয়। তৃপ্তির প্রশ্ন বাদ দিয়েও বলা যায় যে সাম্প্রতিক কিনসীয় অর্থসূত্রের তাৎপর্য ভালো করে বুঝতে হলে, তার ঐতিহাসিক ও মানসিক পশ্চাদভূমি সম্বন্ধে অবহিত হওয়া প্রয়োজন। এই প্রয়োজন হ্যারড অনেকখানি মিটিয়েছেন। ‘ইকনমিক্স অ্যান্ড অ্যাকশন’ বইয়ের মধ্যেও পরিবর্তনের পটভূমি সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে, কিন্তু এত সংক্ষেপে করা হয়েছে সকলে তাতে খুশি হবেন না। হ্যারড পড়লে তাঁরা অনেকটা খুশি হবেন।
এবারে কিনসের মূল বক্তব্যে আসা যাক। দেখা যাক, ক্লাসিক্যাল অর্থবিদদের সঙ্গে তাঁর বক্তব্যের পার্থক্য কোথায়, কতখানি, তার নূতনত্বই বা কোথায়? ১৯৩৬ সালে কিনসের The General Theory of Employment, Interest and Money বইখানি প্রকাশিত হবার পর থেকে এদিকে সকলের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। রাতারাতি কোনও তত্ত্বকথাই অবশ্য কারও মগজে গজিয়ে ওঠে না। আগে থেকে সেদিকে সমভাবাপন্ন ব্যক্তিদের চিন্তাধারার একটা ঝোঁক দেখা যায়, সাধারণভাবে সমাজের মধ্যে এমন সব সমস্যার সৃষ্টি হয়, যা সেই চিন্তাধারার গভীর অনুশীলনের প্রেরণা সঞ্চার করে, তবেই নতুন সমাধানের পন্থা বা তত্ত্বকথার উদ্ভব হয়। কিনসের ‘জেনারেল থিয়োরি’ প্রকাশিত হবার আগেও একটা দীর্ঘ প্রস্তুতির ইতিহাস আছে। ‘ট্রিটিজ অন মানি’ বইয়ে কিনস তাঁর ‘ফান্ডামেন্টাল ইকুয়েশন’—এর মাধ্যমে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে ধনসঞ্চয়ের চেয়ে ধননিয়োগ যদি বেশি হয় তাহলে জিনিসপত্তরের অর্থমূল্য বাড়ে, এবং তার ফলে উৎপাদনবৃদ্ধি সম্ভব হয়। এর বিপরীত হলে ঠিক উলটো ব্যাপার হয়। কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে বর্ধিত ধননিয়োগ কেন প্রত্যক্ষভাবে উৎপাদন (output) বাড়াব না? আগে মূল্যবৃদ্ধি হবে, তবে উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত হবে উৎপাদকরা, এমন ব্যাপার তো না—ও ঘটতে পারে? উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে পরেও তো মূল্যবৃদ্ধি হতে পারে? সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ফলে উৎপাদনের পরিবর্তন ঘটে, এ কথা কিনস ‘ট্রিটিজ’—এ বলেছিলেন। কিন্তু উৎপাদনের পরিবর্তন যে আবার ওই সঞ্চয়—নিয়োগের অসামঞ্জস্যের উপর কীভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, সে কথা তিনি বলেননি। ট্রিটিজের চিন্তাধারায় এদিক থেকে একটা বড় ফাঁক থেকে গিয়েছিল। শূন্যতা পূরণ করার জন্য অবশ্য চিন্তার বিরাম ছিল না।
এই প্রশ্ন নিয়ে যখন অনেকেই মাথা ঘামাচ্ছিলেন, তখন কাহন ‘ইকনমিক জার্নাল’ (জুন ১৯৩১) একটি প্রবন্ধ লিখলেন—‘Home Investment and Unemployment—এই নামে। এই প্রবন্ধে কাহন দেখালেন, উৎপাদনের ক্ষেত্রে মূলধন নিয়োগবৃদ্ধির প্রত্যক্ষ ফলাফল কীভাবে হতে পারে। যে উপায়ে বা পদ্ধতিতে হতে পারে, তার নামকরণ করলেন তিনি ‘মাল্টিপ্লায়ার’। সাম্প্রতিক অর্থবিদ্যার ইতিহাসে কাহনের এই রচনাটিকে যুগান্তকারী বললেও অত্যুক্তি হয় না। হ্যারড তাই কিনসের জীবনচরিতের মধ্যে এক জায়গায় বলেছেন, ‘The ideas in the article had a crucial influence on keynes’ subsquent thinking.’ (p. 434)। মাল্টিপ্লায়ার সম্বন্ধে কিনস তাঁর ‘জেনারেল থিয়োরি’ বইয়ের মধ্যে বলেছেন:
‘Unless the psychological propensities of the public are different from what we are supposing, we have here established the law that increased employment for investment must necessarily stimulate the industries for consumption and thus lead to a total increase of employment which is a ‘multiple’ of the primary employment required by the investment itself.’ (Chapter 13 p. 118)
সহজ কথায় মাল্টিপ্লায়ারের তাৎপর্য এইভাবে ব্যাখ্যা করা যায় : প্রাথমিক ধননিয়োগের ফলে একদল লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। তার ফলে ব্যবহার্য পণ্যোৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদ বাড়ে, কারণ নতুন কর্মনিযুক্ত লোকসমষ্টি তাদের উপার্জিত আয়ের অনেকটা অংশ এই খাতে ব্যয় করতে চায়। তার ফলে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনের কারখানা গড়ে ওঠে, খানিকটা মূলধন এই ক্ষেত্রে নিয়োগ করা হয়, এবং আরও একদল লোকের বেকারত্ব ঘুচে যায়। তাহলে এ কথা বলা চলে না যে প্রাথমিক ধননিয়োগের প্রভাব কেবল সেই প্রাথমিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। তার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সমাজের বহু দূর স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং তা—ই হওয়াই স্বাভাবিক। কর্মসংস্থানও শেষ পর্যন্ত কয়েকগুণ বেড়ে যেতে বাধ্য। এই মাল্টিপ্লায়ারের কার্যকারিতা অবশ্য অনেকটা নির্ভর করে ভোগপ্রবণতার উপর। কারণ আয়বৃদ্ধির সঙ্গে যদি মানুষের ভোগবৃত্তি বা আকাঙ্ক্ষা না বাড়ে, অথবা খুব সামান্য বাড়ে (‘not much above zero’), তাহলে মূলধন—নিয়োগের প্রতিক্রিয়াও তেমন আশানুরূপ হবে না এবং হয়তো ‘পূর্ণ কর্মসংস্থান’—এর জন্য খুব বেশি পরিমাণে ইনভেস্টমেন্টের প্রয়োজন হবে। কিন্তু যে সমাজে মানুষের ভোগাকাঙ্ক্ষা বেশি, সেখানে আয়বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়বৃদ্ধিও হবে যথেষ্ট এবং তার ফলে ভোগ্যদ্রব্যের চাহিদা বাড়বে। চাহিদা বাড়লে তার উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত হবে মূলধনের মালিকরা। সেইসব ক্ষেত্রে ইনভেস্টমেন্টের বাড়বে, লোকের কর্মসংস্থানও বাড়বে এবং সর্বসাকুল্যে মোট কর্মসংস্থানও বহুগুণ বাড়বে (প্রাথমিক সংখ্যার তুলনায়)। এই অবস্থায়, অর্থাৎ ভোগপ্রবণতা আয়বৃদ্ধির প্রায় সমান হারে বাড়লে (‘not far short of unity’), হয়তো সামান্য মূলধন—নিয়োগের ফলেই Full employment—এর স্তরে পৌঁছানো যায়। কিন্তু ভোগপ্রবণতা যাচাই করা, অথবা কমানো—বাড়ানোর সমস্যা নানা ব্যাপারের সঙ্গে জড়িত বলে কঠিন। সে কথা পরে আমরা আলোচনা করব। আপাতত দেখা যাক, কিনসের এই মূল প্রতিপাদ্যের সঙ্গে ক্লাসিক্যাল অর্থবিদদের বক্তব্যের পার্থক্য কোথায়? মৌলিক পার্থক্য কোথায়? মৌলিক পার্থক্য কিছু আছে কি না?
‘ইকনমিক্স অ্যান্ড অ্যাকশন’ বইয়ে এই পার্থক্য সম্বন্ধে লেখকরা যত দূর সম্ভব প্রাঞ্জল ভাষায় আলোচনা করেছেন। কিনসের জীবনচরিতের মধ্যেও হ্যারড ‘জেনারেল থিয়োরি’ বেশ চমৎকার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন এবং প্রসঙ্গত ক্লাসিক্যাল অর্থবিদদের সঙ্গে কিনসের বক্তব্যের পার্থক্য কোথায়, তা—ও উল্লেখ করেছেন (৪৫৩—৪৬১ পৃষ্ঠা) কিনসের প্রধান লক্ষ্য, এককথায় বলা যায়, ধনতান্ত্রিক সমাজে বেকার সমস্যার কারণ অনুসন্ধান করা। ক্লাসিক্যাল অর্থবিদরা বেকার সমস্যাকে ধনতান্ত্রিক পদ্ধতির অন্তর্নিহিত সমস্যা বলেই মনে করতেন না। তাঁরা কেবল ‘ফ্রিকশনাল’ বা ‘ট্রানজিশনাল’ বেকারত্বে (কর্মান্তরের জন্য এক কাজ থেকে অন্য কাজে যোগ দেবার মধ্যবর্তীকালের জন্য) বিশ্বাস করতেন। তাঁরা বলতেন যে লেবারের মূল্য (অর্থাৎ মজুরি) এমন এক স্তরে স্থিতিশীল হতে চায়, যেখানে তার কাজের অভাব হবার কথা নয়। কাজের অভাব হলে, অর্থাৎ বেকার থাকলে ভাবতে হবে যে তারা এমন মূল্য বা মজুরি চাইছে, যে মূল্য দিয়ে তাদের কাজে নিয়োগ করা মালিকদের পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং বেকার সমস্যার সহজ সমাধান হল, কর্মপ্রার্থীদের মজুরি কমিয়ে দেওয়া এবং অল্প মজুরিতে তাদের কাজ করতে জুলুম করা। কিনস এ যুক্তি বর্জন করে বললেন যে, মজুরির হারবৃদ্ধির ফলে বেকার সমস্যা দেখা দেয়, এ কথা ঠিক নয়। মজুরি কমিয়ে এ সমস্যার বা সংকটের সমাধানও করা যায় না। সমাধানের পথ অন্য। ‘জেনারেল থিয়োরি’তে তিনি বললেন যে ভোগপ্রবণতা এবং মূলধন—নিয়োগের প্রবণতার সম্মিলিত তাগিদই হল আসল কথা এবং তার দ্বারাই কর্মসংস্থানের সমস্যা দূর করা সম্ভব। হয় মূলধন—নিয়োগ বাড়িয়ে, না হয় ভোগাকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে, কর্মসংস্থানের স্তর বিস্তৃত করতে হবে।
কী করে তা করা হবে? এখানেও ক্লাসিক্যাল স্কুলের সঙ্গে বিরোধ বাধল। ক্লাসিক্যাল অর্থবিদদের কাছে ‘সুদের হার’ (Rate of Interest) ছিল বড় কথা। সুদ কমিয়ে—বাড়িয়ে স্থিতাবস্থায় পৌঁছোনো যায়। সঞ্চয় যদি বাড়ে, তাহলে সুদের হার কমবে। সুদের হার কমলে মূলধন—নিয়োগ বাড়বে, ওদিকে সঞ্চয়ের স্পৃহা কমবে এবং এইভাবে আবার ‘সেভিং’ ও ‘ইনভেস্টমেন্ট’—এর সামঞ্জস্য স্থাপিত হবে। কিনস বললেন যে সুদের হার দিয়ে এরকম ম্যাজিক দেখানো সম্ভব নয়। হ্যারডের ভাষায়: ‘It as Keynes’ central contention that the rate of interest does not do this trick.’ (p. 457)। কিনস এখানে একটি নতুন ভাবের (concept) আমদানি করলেন—‘Liquidity preference’—এর। কাঁচা টাকা হাতে রাখার ইচ্ছাকে ‘লিকুইডিটি প্রেফারেন্স’ বলা যায়। সঞ্চয় বা সেভিং নির্ভর করে, লোকের এই কাঁচা টাকা হাতে রাখার ইচ্ছার উপর। নানা কারণে এই ইচ্ছা কমতে—বাড়তে পারে। কমতে পারে নিশ্চিত একমাত্র টাকার সংখ্যা বাড়লে। সুদের হার নির্ভর করবে, যে লোকের কাঁচা টাকা রাখবার ইচ্ছা সবচেয়ে প্রবল যে সুদ পেলে টাকা হাতছাড়া করবে তার উপর। ব্যাঙ্ক এখানে টাকার সংখ্যা বাড়িয়ে এই ইচ্ছা অনেকটা পূরণ করতে পারে। সুতরাং ‘সেভিং’ ও ‘ইনভেস্টমেন্ট’—এর ব্যালান্সের উপর সুদের হার নির্ভরশীল নয়। মানুষের টাকা রাখার ইচ্ছা—অনিচ্ছার প্রবলতার উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।
এখন প্রশ্ন হল, সঞ্চয় ও মূলধন নিয়োগের মধ্যে ব্যালান্স তাহলে কী উপায়ে রক্ষা করা সম্ভব হবে? কিনস বললেন, ব্যালান্স রক্ষার উপায় ‘সুদের হার’ নামে জাদুদণ্ড নয়, কর্মসংস্থানের স্তর (Level of Employment)। টাকা হাতে রাখার ইচ্ছার প্রভাবে যদি দেখা যায় যে সুদের হার এমন দাঁড়াচ্ছে যে পূর্ণ কর্মসংস্থানের স্তরে লোকের সঞ্চয়াকাঙ্ক্ষা বেড়ে যাচ্ছে মূলধন—নিয়োগের (ক্যাপিটালিস্টদের) ইচ্ছার তুলনায় তাহলে জিনিসের বাড়তি স্টক হবে, মুনাফা কমবে এবং চাহিদা হ্রাসের ফলে কর্মসংস্থানের স্তর নেমে যাবে (অর্থাৎ বেকারত্ব বাড়বে) এবং তার ফলে সমাজের সামগ্রিক সঞ্চয়শক্তি কমবে, আবার সেভিং ও ইনভেস্টমেন্টের ব্যালান্স ফিরে আসবে। অর্থনীতিক ক্রিয়া—প্রতিক্রিয়া এইভাবে ঘটতে দেখা যায়। কিনসের এ উক্তি ও বিশ্লেষণ একেবারে নতুন। হ্যারড বলেছেন :
This is the central doctrine of employment. I cannot a all agree with those who suggest that it is the old storey with minor modifications. To may judgement it is quite a new story. (P. 459)
হ্যারড কিনসের একজন অন্ধ অনুরাগী নন। নানা বিষয়ে, ‘জেনারেল থিয়োরি’ লেখার সময় থেকে, তিনি কিনসের কঠোর সমালোচনা করেছেন। প্রাচীনদের সঙ্গে কিনসের মূলগত মিল কোথায়, তা—ও তিনি তাঁর একাধিক রচনায় দেখিয়েছেন। সুতরাং গরমিলের কথা বা কিনসের বৈশিষ্ট্যের কথা তিনি যা বলেছেন, তা প্রণিধেয়।
‘ইকনমিক্স অ্যান্ড অ্যাকশন’ বইয়ের মধ্যে কিনসের অর্থতত্ত্বের আলোচনা প্রসঙ্গে লেখকরা মার্কস ও মার্কসবাদীদের কথা উল্লেখ করেছেন। সোশ্যালিজমের কথাও স্বভাবতই উঠেছে। কিন্তু আলোচনা আদৌ সন্তাোষজনক নয়। দু—চার কথায় মার্কস প্রসঙ্গ শেষ করে, লেখকরা কিনসের তত্ত্বব্যাখ্যায় মনোনিবেশ করেছেন। কিনসের নতুন তত্ত্ব প্রসঙ্গে মার্কসের কথা অনেকরই মনে হবে, সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য দুয়েরই জন্য। মার্কসের সঙ্গে কিনসকে এবং কিনসের সঙ্গে মার্কসেকে জড়িয়ে ও মিলিয়ে—মিশিয়ে ফেলার একটা ঝোঁকও তরুণ অর্থবিদদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। সেইজন্য সুম্পেটার তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইকনমিক অ্যানালিসিস’—এর মধ্যে বলেছেন :
…there are the attempts to Keynesify Marx or to Marxify Keynes. These attempts are very revelatory of prevailing ideologies but also indicate awareness of a purely analytic task. It is in fact possible to enrich the meanings of both these authors by points called from the other, though they are at opposite poles in matters that are of decisive importance analytically. But these attempts have never, so far as I am aware, gone to the length of trying to revive Marx’s theoretical apparatus; (Schumpeter : History of Economic analysis, p. 885)
মার্কসের সঙ্গে কিনসের সাদৃশ্য যে একেবারে নেই তা নয়। মার্কসের বিখ্যাত ‘রিপ্রোডাকশন’ স্কিমের কথা কীস প্রসঙ্গে বিশেষভাবে মনে পড়ে। মার্কস ও অর্থনীতিক্ষেত্রের দুটি প্রধান বিভাগ স্বীকার করতেন, একটি ভোগ্যদ্রব্যের উৎপাদন—বিভাগ এবং একটি উৎপাদক—দ্রব্যের উৎপাদন—বিভাগ। ‘কনজিউমারস গুডস’ ও ‘প্রোডিউসারস গুডসের’ উৎপাদনের সম্পর্কের উপরই সবকিছু নির্ভরশীল। মার্কস এ কথাও কিনসের মতো স্বীকার করেছেন যে মূলধন নিয়োগের অসমতা বা কম বেশির জন্যই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের তেজি—মন্দা ও চক্রাকারে উত্থান—পতন, সমৃদ্ধি ও সংকট দেখা দেয়; কিনসের এই ধরনের উক্তি—‘Each time we secure today’s equilibrium by increased investment we are aggravating the difficulty of securing equilibrium tomorrow’—নিশ্চয়ই মার্কস অনেকটা সমর্থনযোগ্য মনে করতেন। কিন্তু মার্কস ও কিনসের মূলগত পার্থক্য হল, দু—জনের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে। কিনস ধনতান্ত্রিক উৎপাদন—পদ্ধতির কাঠামোকে অক্ষুণ্ণ রেখে, তার মধ্যে যত দূর সম্ভব তার ক্রমাগত সংকটের আবর্তনকে প্রতিরোধ করতে চেয়েছেন, এবং তার অন্তর্নিহিত বিরোধকে মসৃণ করতে চেষ্টা করেছেন। মার্কস ধনতান্ত্রিক উৎপাদন—পদ্ধতির মধ্যে যে অন্তর্নিহিত বিরোধ রয়েছে, তার স্বরূপ ও মূল কারণটিকে তুলে ধরবার চেষ্টা করেছেন; কিনস তাই স্বল্পকালস্থায়ী সমাধানের পথ বাতলে দিয়ে বলেছেন যে দীর্ঘকালের ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কোনও লাভ নেই, কারণ ‘in the long run we are all dead’। মার্কস এই স্বল্পকাল ও দীর্ঘকালের বিচার—স্বাতন্ত্র্য বা পার্থক্য মেনে নেননি। ধনতান্ত্রিক সমাজে উৎপাদনের মূল প্রেরণা হল ক্যাপিটালিস্টদের মুনাফার হার। এই মুনাফার হার ক্রমে ক্রমে আসতে থাকে, যত দিন যায়। ক্যাপিটালিস্টদের কাছে ভোগ্যপণ্যের উৎপাদনবৃদ্ধি কাম্য নয়। তাদের কাম্য হল মূলধনের ‘ভ্যালু’ রক্ষা করা এবং চূড়ান্তভাবে তার সদব্যবহার করা। তার জন্য তারা সঞ্চয় ও উৎপাদিকাশক্তি দুইই বাড়াবার চেষ্টা করে, যাতে তাদের মুনাফা বাড়ে এবং মূলধনের দাম বাড়ে। কিন্তু প্রয়োগিক পরিবর্তনের ফলে মূলধনের গড়ন বদলে যায় এবং তার ফলাফল সহজে এড়ানো সম্ভব হয় না বলে, শেষ পর্যন্ত মুনাফার হার কমতে থাকে। এদিকে ‘অ্যাকুমুলেশন’ বা সংরক্ষণ চলতেই থাকে, ‘ক্যাপিটাল গুডস’ বাড়তে থাকে এবং আগেকার মূলধনের দাম কমতে থাকে। অথচ মুনাফার হাত ঠিক রাখতে হবে। সুতরাং উভয়সংকটে পড়ে তাদের পক্ষে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ কমাতে হয়, মানুষের ভোগপ্রবণতাকে দমন করতে হয়। কিনস যে ভোগাকাঙ্ক্ষার (propensity to consume) কথা বলেছেন, তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি সব সময় উৎপাদনবৃদ্ধি বা আয়বৃদ্ধির সমানুপাতে হওয়া সম্ভব নয়। এককথায় বলা যায়, কিনসের মূল সামগ্রিক চাহিদার (effective demand) যে দুটি স্তম্ভ—ভোগের চাহিদা এবং মূলধন নিয়োগের চাহিদা—তার কোনওটাই ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ‘স্বাভাবিক’ বা নর্মাল হতে পারে না। শ্রেণিগত শোষণের ফলে অধিকাংশ মানুষের ভোগবৃত্তি অবদমিত হয়ে এমন এক সারল্যের নিম্নস্তরে থিতিয়ে যায় যে তাদের কোনও কারণে আয় বাড়লেও ভোগাকাঙ্ক্ষা বাড়ে না বা তার চিরাভ্যস্ত স্তর (traditional consumption-pattern) উন্নীত হয় না। সুতরাং ভোগপ্রবণতার স্তম্ভটি আদৌ মজবুত নয়, অত্যন্ত নড়বড়ে। দ্বিতীয় স্তম্ভ, মূলধন নিয়োগাকাঙ্ক্ষার কথা তো আগেই বলেছি, মুনাফার হারের উপর নির্ভরশীল। ধনতান্ত্রিক উৎপাদন—পদ্ধতির অনিবার্য নিয়মেই সেই হার কমবে এবং নিয়োগাকাঙ্ক্ষাও কমবে। সংকট অনিবার্য নিয়মে চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে আসবে।
‘ইকনমিক্স অ্যান্ড অ্যাকশন’ বইয়ের দ্বিতীয় অংশে কিনসীয় অর্থতত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগ—অভিজ্ঞতার ও ফলাফলের যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যেফাঁক ও ত্রুটি আছে অনেক। ‘ডেফিসিট স্পেন্ডিং’ বা ‘পাবলিক ইনভেস্টন্ট’—এর নীতির সাহায্যে সব ব্যাধির চিকিৎসা হয়ে যাবে এবং রুগণ ও জীর্ণ ধনতান্ত্রিক সমাজ পুনর্জীবন লাভ করতে পারবে, মেন্ডেস—ফ্রাঁসের বই পড়লে এইরকম একটা ধারণা হয়। বোঝা যায়, কেন সব ধনতান্ত্রিক দেশে আজ ন্যাশনালাইজেশন ও সোশ্যালাইজেশনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, কিনসের ভাষাতেই বলা যায়, মূলধন—নিয়োগ বাড়িয়ে আমরা যখন আজকের স্থিতাবস্থা সৃষ্টি করছি, তখন কালকের স্থিতাবস্থা সৃষ্টির সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছি। কিনসীয় অর্থনীতি ক্যাপিটালিজম ও সোশ্যালিজমের মধ্যে একটা বিসদৃশ মিলন ঘটাবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সে চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হতে কেন বাধ্য, তার আভাস কিনস নিজেই দিয়ে গিয়েছেন। তাঁর ভাষ্যকাররা যদি এইদিকটা সম্বন্ধে ভবিষ্যতে আরও ভালো করে আলোচনা করেন তাহলে ধনতান্ত্রিক উৎপাদন—প্রকৃতি তাঁদের কাছে আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। মার্কসিয় অর্থবিদদেরও একটা বড় কর্তব্য আছে। আজকের দিনে, বিশেষ করে, মার্কসিয় অর্থনীতির তত্ত্বগত দিকটাকে এবং তার মূলসূত্রগুলিকে পরিষ্কার করে অর্থবিদদের কাছে তাঁদের তুলে ধরা উচিত। এ কাজ মরিস ডব ও পল সুইজির মতো দু—চারজন অর্থবিদ খানিকটা করেছেন, কিন্তু মার্কসের যে ‘থিয়োরেটিক্যাল অ্যাপারেটাস’ পুনরুদ্ধার করার কথা সুম্পেটার বলেছেন, তা বোধহয় আজও কেউ করেননি।
১৩৬৩
………………………………………………..
Economics and Action by Pierre Mendes-France and Gabriel Ardant.
William Heinemann, London (UNESCO)
The Life of John Maynard Keynes by R.F. Harrod, Macmillan London
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন