মেহনত ও প্রতিভা – বিনয় ঘোষ

বিনয় ঘোষ

মেহনত ও প্রতিভা – বিনয় ঘোষ

ইতিহাসের অগ্রগতির রেখা সরল নয়, আঁকাবাঁকা, গতির ছন্দও নির্দিষ্ট মাত্রাবৃত্ত নয়, ছন্দবৈচিত্র্যই গতির বৈশিষ্ট্য। অক্ষর বা মাত্রাগুণে ইতিহাসের যতি পড়ে না। বিরাম বা বিচ্ছেদের কোন যান্ত্রিক অনুবর্তিতা নেই। পরিবর্তন বিবর্তন বিপ্লব অভিযোজন—এই হল অ্যামিবা থেকে জীবশ্রেষ্ঠ মানুষ পর্যন্ত জৈবিক ক্রমবিকাশের ছন্দ। এই ছন্দের স্রষ্টা হল জীবের ‘মেহনত’ ও ‘প্রকৃতি’ দুইই—শুধু ‘মেহনত’ নয় প্রকৃতিও নয়, মেহনত আর প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেষ্টনকে জয় করে অগ্রসর হতে চেয়েছে জীব ও জীবন, ফলে পরিবেষ্টনের যেমন পরিবর্তন হয়েছে, জীব ও জীবনও তেমনি পরিবর্তিত হয়েছে। শুধু পরিবর্তিত নয়, বিবর্তিত ও রূপান্তরিত হয়েছে। মন—বুদ্ধি—হাত—পা—নাক—কান—চোখ—মাথাযুক্ত যারা আজ পৃথিবীতে আমাদের মতো বুদ্ধিমান ‘মানুষ’, তাদের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পর্যন্ত মেহনত ও প্রকৃতির ঘাতপ্রতিঘাতের সৃষ্টি, ঐশ্বরিক অবদান নয়। তার প্রমাণ, আমার আশি বছরের বৃদ্ধা পিতামহীর মতো যদি আরও আশিজন পিতামহীকে পূর্বপুরুষদের ধাপে—ধাপে বসিয়ে দেওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে প্রথম ধাপের প্রথম পিতামহী যিনি তিনি কিশোরী বয়সে শিশুসভ্যতাকে লালনপালন করেছেন। এই তো হল মানবসভ্যতার বয়স। মানুষের বয়স তার চেয়ে আর কতই বা বেশি হবে, বড়জোর তার আগে আরও সত্তরজন পিতামহী পর্যন্ত। তারপরই নিয়ানদার্থাল মানুষ ও শিম্পাঞ্জি। তাহলে কি আমরা বুদ্ধি, বিবেচনা, বিচারশক্তি, চিন্তা ও কল্পনাশক্তি, মেধা, কর্মশক্তি, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুভূতিশক্তি নিয়ে হঠাৎ একদিন আধুনিক ছত্রিবাহিনীর মতো আকাশ থেকে মাটিতে পড়েছি? তা নিশ্চয়ই পড়িনি। যুগে যুগে আমরাই গঠন করেছি, পরিবর্তন করেছি, উন্নীত করেছি, ধ্বংস করেছি, সৃষ্টি করেছি। বাইরের জগৎ ও প্রকৃতির ঘাতপ্রতিঘাতে, একা নয়। তবেই আমরা মানবেতর জীব থেকে হয়েছি জীবশ্রেষ্ঠ মানব, বোধশক্তি ও চিন্তাশক্তিসম্পন্ন মানব।

মেহনত ও প্রকৃতিই আমাদের হাতকে মুক্তি দিয়েছে বাদ্যযন্ত্রের সূক্ষ্ম তন্ত্রীর উপর সুরতরঙ্গ সৃষ্টির জন্য; আমাদের ল্যারিংক্স বা বাগযন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করেছে বিচিত্র ভাবভঙ্গির প্রকাশ ও আদানপ্রদানের জন্য; আমাদের মস্তিষ্ক বৃদ্ধির ও বিকাশের পথ সুগম করেছে অতিসূক্ষ্ম চিন্তা, ভাবনা—কল্পনা—ক্রিয়ার উপর কর্তৃত্ব করার জন্য। তবেই তো আমরা শিল্পকলা সৃষ্টি করেছি, প্রথমে অঙ্গভঙ্গিতে ও সুরে, তারপর ভাষায়। এই শিল্পকলাসৃষ্টি কোনওদিন আমাদের সকলের শ্রমার্জিত ও শ্রমাবিষ্কৃত জীবিকার হাতিয়ারকে অস্বীকার করেনি। জীবিকার্জনের রীতি, জীবনধারণের পদ্ধতি ও পন্থা, অস্ত্রশস্ত্র, আমাদের বিচিত্র রকমের শিল্পকলায় রূপায়িত হয়ে আরও উন্নততর রীতি—পদ্ধতি ও হাতিয়ার আয়ত্তে আনার প্রেরণা দিয়েছে। জীবনকে ছেড়ে তাই শিল্পকলা অথবা কলাকার কেউ পিছিয়ে থাকেনি অথবা এগিয়ে গিয়েও জীবন—বিচ্ছিন্ন হয়ে দিগন্তলীন হয়নি। গুহাগাত্রের খোদিত মূর্তিচিত্রে, লোকগাথা, উপকথা, অতিকথা ও রূপকথায় তার অজস্র দৃষ্টান্ত আজও পৃথিবীব্যাপী সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে।

জীবিকা অর্জনের এই রীতি ও হাতিয়ারই সভ্যতার মূল। পুরাতত্ত্ববিদরা তাই প্রাচীন মানবসভ্যতাকে প্রস্তরযুগ ব্রোঞ্জযুগ লৌহযুগ এইভাবে ভাগ করেছেন। সংঘবদ্ধভাবে শ্রমকে নবনব সৃষ্টির পথে অনুপ্রাণিত ও পরিচালিত করার পরিবর্তে যখন শ্রেণীবদ্ধভাবে শ্রমলব্ধ ফলাফল শোষণের কাল এল তখন থেকে আমরা শ্রেণির নামে যুগসংস্কৃতির নামকরণ করেছি। যেমন ফিউডাল—সংস্কৃতি বুর্জোয়া—সংস্কৃতি ইত্যাদি। শ্রেণি—সংস্কৃতি এই দীর্ঘ ছয়—সাত হাজার বছরের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় যে মানুষের জীবিকায়ুধের ক্রমোন্নতির ফলে বিবিধ শিল্পকলার প্রকাশরীতির ও শৈলীর উন্নতি হয়েছে অনেক, কিন্তু প্রকাশরীতির এই প্রসার ও প্রগতির সঙ্গে সমান তালে পা ফেলে কলাবস্তু সমৃদ্ধ হয়নি। রীতির (form) অনেক পিছনে পড়ে রয়েছে বস্তু (content) বা উপাদান। কারণ উন্নত জীবিকাযুদ্ধের (instrument of production) সংঘবদ্ধ ও স্বাধীন প্রয়োগের ফলে সমাজে মানুষের জীবনে যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তৃত হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। জীবিকার্জনের রীতির উন্নতির সমস্তরে বৃহত্তম মানবজীবন উন্নীত হয়নি। সভ্যতা অগ্রসর হয়েছে যুগসঞ্চিত অভিজ্ঞতার উত্তরাধিকার লাভ করে এবং সেই অভিজ্ঞতার ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করে। এমনি করে একসময় এসেছে যখন বনেদি সভ্যতা (traditional civilisation) জীবনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেনি এবং না—পারার ফলে তারা ধংস হয়েছে। যেমন রোমক সভ্যতা। বর্তমান সভ্যতার সঙ্গে পূর্বেকার সভ্যতার কোন বাহ্য সাদৃশ্য না থাকলেও এবং অনেক বিষয়ে তার চেয়ে উন্নততর হলেও, পরস্পরের মধ্যে মূলগত পার্থক্য বিশেষ কিছু নেই। মানববিজ্ঞানী ব্রিফল্ট বলেছেন :

Modern western civilistion is the last of a long succession of similar organisation which, however much they may have differed from it in their setting and external vesture, were identical with it is the basic principles of their framework. Each has been established with a view to affording profit to privileged classed through power over men and through property-owning and has been chiefly concerned with the maintenance of that structure. Everyone of those traditional civilisations has failed, Each has ended alter a shorter or longer career in collapse and complete disintegration. (Breakdown—The Collapse of Traditional Civilisation : Robert Briffault.)

বিষয়টা আরও একটু সরল করে বলা যাক। যুগে—যুগে মানুষের উৎপাদন—রীতি ও পদ্ধতি বদলেছে, উন্নীত হয়েছে, জীবিকাস্ত্র শাণিত হয়েছে। বিজ্ঞানবলে, কিন্তু অস্ত্র ও রীতির প্রয়োগ ব্যাপকভাবে সমাজজীবনকে স্পর্শ করেনি। উভয়ের মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই বেড়েছে এবং বাড়তেবাড়তে আজ এমন এক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে যখন শ্রেণিস্বার্থ বিসর্জন না দিয়ে রীতির বা টেকনিকেরও আর উন্নতি সম্ভব নয়। তাই এখন বিজ্ঞানের উন্নত রীতি ও অস্ত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে ধ্বংসকার্যে। শ্রেণিসভ্যতার বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে পরিবর্তনবিমুখতা। পরিবর্তন ও প্রতিযোজন ভিন্ন প্রগতি অসম্ভব। জীববিজ্ঞানের এই মূলমন্ত্রটিকে সমাজ ও সভ্যতার অস্বীকার করার উপায় নেই। যে সমাজ বা যে সভ্যতা এই পরিবর্তন, বিবর্তন ও অভিযোজন এড়িয়ে চলবে তার ধ্বংস সুনিশ্চিত। বর্তমান শ্রেণি—সভ্যতা তাই অন্তঃসারশূন্য ও রীতিসর্বস্ব। তাই এর ধ্বংসও অনিবার্য। শ্রেণিহীন সভ্যতাই এর অবশ্যম্ভাবী ঐতিহাসিক মুক্তি।

To devote every effort to maintaining a cultural and social structure unchanged is the very way to destroy it. In capacity to change, to adapt themselves to altered conditions is, in fact, the usual manner in which organisms and races perish. It is the usual process by which failures are eliminated. Progress may be an abstract ideal, but the need for adjustment to everchanging conditions is not. It is an imperative vital necessity. The organism, the race, the culture which is incapable or carrying out that necessary requirement perishes. Yet to resist adaptation, to maintain the status quo, is the supreme concern of any civilisation founded upon the traditional privileges of a class. (Briftault)

অন্তঃসারশূন্য বলেই বর্তমান সভ্যতা—সংস্কৃতির রীতিজৌলুস দৃষ্টিকটু এবং প্রগতি বিরোধী। বস্তুহীন রীতিচর্চা ক্রমে রীতিরতিতে (skill-fetish) পরিণত হয়। অনেক স্থিরবুদ্ধি সমালোচকের মতে বর্তমান সংস্কৃতির সর্বক্ষেত্রে, কী সাহিত্যে, কী ললিতকলায়, এই হল আসল সমস্যা এবং সংকটও এইখানে। কথাটা সম্পূর্ণ সত্য নয়। কারণ রীতিসাধনা বা আঙ্গিক সৌষ্ঠববৃদ্ধি কখনো বস্তুনিরপেক্ষভাবে সম্ভব নয়। সুতরাং সংকট দু—দিকেই। বস্তুদৈন্য এবং রীতি—স্বেচ্ছাচারিতা দুইই। একে নিছক রীতিসাধনা বা রীতিসর্বস্বতা কোনওমতেই বলা যায় না।

রীতিসর্বস্ব বা প্রসাধনপটু বলে আধুনিক সাহিত্য ও ললিতকলার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়ে থাকে—সে অভিযোগ যতই সামাজিক বা সাংস্কৃতিক শুভবুদ্ধিপ্রণোদিত হোক—না কেন, বাস্তবিকই যদি প্রসাধনপটুতা বর্তমানে সাহিত্যকলার থাকত তাহলে সেটা তার দোষ না হয়ে গুণই হত। কারণ ‘টেকনিক’ বা রীতি বর্তমানে সংস্কৃতির একটা বিরাট দিক, যেদিকটা কোন আধুনিক মনই অবজ্ঞা করতে পারে না, অস্বীকারও করতে পারে না। সাহিত্যে চারুকলায় স্থাপত্যে ভাস্কর্যে নৃত্যে যেসব প্রতিভাবান শিল্পী শুধু ‘আঙ্গিক’ বা রীতিরই আরাধনা করে গিয়েছেন সারাজীবন তাঁরাও শেষ পর্যন্ত যুগোপযোগী কোনও নিটোল রীতি বা আঙ্গিকের মূর্তি গড়ে তুলেতে পারেননি, ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যক্তিগত খামখেয়াল, রুচিবিকৃতি, আবেশ তাঁদের সেই একনিষ্ঠ রীতিসাধনাকে রীতিচাতুর্য ও রীতিনৈরাজ্যে পরিণত করেছে। বস্তুবর্জিত আঙ্গিকের সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশলাভ কখনোই সম্ভব নয়। সুন্দর দেহে যদি প্রাণই না রইল তার সৌন্দর্যই বা থাকে কোথায়, আর প্রসাধনেই বা তার লাবণ্যবৃদ্ধি কেমন করে সম্ভব? রুগণ, ব্যাধিজর্জর অঙ্গে প্রসাধনের মূল্য নেই।

সমস্যা তাহলে সামান্য নয়। শুধু বস্তুদৈন্যই সমস্যা নয়। রীতিদৈন্যও বিরাট সমস্যা। সাহিত্যে এই সমস্যা কোনও অংশেই কম প্রকট নয়। নবযুগের সাহিত্য বা ‘নতুন সাহিত্য’ তার যুগোপযোগী প্রকাশরীতিরই সন্ধান পায়নি আজও। শুধু এই কথাটাই যদি জোর করে বলা যায় তাহলেও বোধহয় অর্ধেকের বেশি বলা হল। কারণ বস্তুরও যাঁরা সন্ধান পেয়েছেন তাঁদেরও দেখি প্রকাশের ভাষা নেই, শক্তি নেই, দক্ষতা নেই, কারিগরি নেই। নিরেট বস্তু মুঠোর মধ্যে পেয়েও, স্বর্ণকান্তি ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেও তাঁরা লেখনী চর্বণ করেন, প্রকাশের ভাষা হাতড়ে পান না। সুতরাং অভাবটা কীসের? বস্তুর, না প্রকাশভঙ্গির? দুয়েরই। তার চাইতেও বড় অভাব শিল্পী। শক্তিমান, সুশিক্ষিত শিল্পীর নিদারুণ অভাব। তাই মনে হয় সংকট কীসের? সাহিত্যের? শিল্পের? না—সাহিত্যিক—সংকট, শিল্পী—সংকট? সংকট কঠিন।

নতুন সাহিত্যের দাবি অসামান্য। নতুন যুগমানস অভিব্যক্ত ও প্রতিফলিত হবে যার মধ্যে তার দাবি অসামান্যই বা হবে কেমন করে? আর আজকের যুগমানসের জটিলতা, বিশালতা ও বৈচিত্র্য কি উপলব্ধি করা সহজ? বস্তুজগতের ও বাস্তজীবনের বিদ্যুৎ—গতি প্রগতির দিকনির্ণয় করতেই এযুগে সে কোন মানুষের পরমায়ু শেষ হয়ে যেতে পারে। বস্তুসম্ভার ও শখসম্ভার দিন দিন কী হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তারই হিসাব বা আর ক—জন রাখি, ক—জনের পক্ষে রাখা সম্ভব। এই বিরাট দায়িত্ব ও কর্তব্য এড়িয়ে নতুন সাহিত্য সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। সৃষ্টির দুঃস্বপ্ন দেখাই সম্ভব।

পুরাতত্ত্ববিদরা জীবিকায়ুধের নামে পুরাতন যুগসংস্কৃতির নামকরণ করেছেন—প্রস্তরযুগ ব্রোঞ্জযুগ লৌহযুগ ইত্যাদি। এ যুগের নামকরণ যদি এইভাবে করতে হয় তাহলে বলতে হয় ‘সংকরধাতুযুগ’ (Alloy Age)*। সংকরধাতু অবশ্য এ যুগের আবিষ্কার নয়, বহু যুগ আগেকার আবিষ্কার। মানুষ যখন প্রথম আগুন জ্বালাতে শিখল, তার চুল্লি তৈরি করতে তার খুব বেশি দেরি হল না। চুল্লি তৈরি করে তাতে ধাতু গলিয়ে, সেই গলা—ধাতু পাথরের ছাঁচে ঢেলে ফেলে সে তার ইচ্ছামতো রূপ দিতে লাগল। মানুষের প্রথম আবিষ্কৃত সংকরধাতু বোধহয় ব্রোঞ্জ, তামা ও টিনের সংমিশ্রণ। তারপর সভ্যতার প্রগতি এই ধাতুর আবিষ্কার ও সম্ভারবৃদ্ধির জন্যই সম্ভব হয়েছে বলা চলে। একদিন যা ছিল আমাদের পূর্বপুরুষের কাছে ধাতুকলা (Art of Metal Working) তা—ই আজ বহু যুগ পরে, বহু মানবের শ্রম ধৈর্য গবেষণা কর্মদক্ষতার ফলে সহস্রগুণ উন্নত বৈজ্ঞানিক রীতির সাহায্যে ধাতুবিজ্ঞানে (Science of Metallugry) পরিণত হয়েছে। বিশিষ্ট ভূ—বৈজ্ঞানিকরা বলেন যে বর্তমান শতাব্দীতে গত চল্লিশ বছরে যত রকমের ধাতু ও সংকরধাতু আবিষ্কৃত হয়েছে তা নাকি মানুষের সভ্যতার প্রথম যুগ থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত আবিষ্কারের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা ক—জনই বা জানি যে আমাদের এই বিরাট সভ্যতা, আমাদের এই জীবনের যাবতীয় সুখস্বাচ্ছন্দ্য, আশা—আকাঙ্ক্ষা, অনুভূতি পর্যন্ত নির্ভর করছে ধাতুবিজ্ঞানীর সফল গবেষণার উপর, পদার্থবিজ্ঞানীর ও রাসায়নিকের আবিষ্কারের উপর এবং লক্ষ লক্ষ সুদক্ষ শ্রমিকের শ্রমকুশলতার উপর? জানি না, জানার কৌতূহলও নেই, কারণ আমরা সাহিত্যের ব্যাপারী, ধাতুবিদ্যা আর মানিকবিদ্যার খবর রেখে আমরা কী করব? অথচ নতুন সাহিত্য সৃষ্টি করতে হবে, সে—সাহিত্য আধুনিক পাঠকমনকে স্পর্শ করবে গভীরভাবে; এবং তা প্রগতিরসাহিত্যও হবে। দুঃখের বিষয়, এত সামান্য মূলধন নিয়ে সাহিত্যের মতো স্বাধীন ব্যবসায়ের তীব্র প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হওয়া এ রকম অসম্ভব বলা চলে। যে প্রতিভা নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছি সেই প্রতিভা চড়া মূল্যে বেচে যাব এ দুরাশা এ যুগের কোন সাহিত্যিক বা শিল্পীর থাকা উচিত নয়। ধাতব সভ্যতার যুগে, বিজ্ঞানের যুগে, শ্রমনিষ্ঠা, দক্ষতা ও বৈজ্ঞানিক কারিগরির দ্রুত প্রগতির যুগে, মাতৃগর্ভলব্ধ কারয়িত্রী প্রতিভাবলে (creative genius) নবযুগের নতুন সাহিত্য সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। তার জন্য রীতিমত শ্রম ও সুশিক্ষার প্রয়োজন। শ্রম ও শিক্ষা, শিক্ষা ও শ্রম—বিশ্রাম নয়, বিলাস নয়।

I think that the blame for the decay of certain arts rests primarily on the defective education of the artists. (Daedalus or Science and the Future : J.B.S. Haldane.)

আধুনিক শিল্পীর এই শিক্ষার অভাব সম্বন্ধে আমি এখানে দু—জন বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিকের অভিমত উদ্ধৃত করছি। একজন জে.বি.এস. হ্যালডেন, আর—একজন এইচ. জে. ম্যুলর। হ্যালডেন বলেন যে, বৈজ্ঞানিক প্রগতির প্রভাব সাহিত্যে ও শিল্পের ক্ষেত্রে তেমনভাবে পরিলক্ষিত হয় না। একদিকে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর প্রগতি, আর—একদিকে সাহিত্য ও শিল্পকলার অবনতির করুণ বিলাপ, এর কারণ কী? এর কারণ শিল্পীদের সুশিক্ষার অভাব। যে উপকরণ নিয়ে শিল্পী কাজ করবেন, সে উপকরণ তাঁর অপরিচিত। হ্যালডেন বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ক্লাসিকসের চাইতেও বিজ্ঞান আজ অনেক বেশি কল্পনার খোরাক জোগাতে পারে। ম্যুলর বলেন যে, নতুন বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রভাব সাহিত্যক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে দেখা যায়, বিষয়বস্তুর পরিবর্তনের মধ্যে তার কোনও সুস্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ প্রভাব তেমন দেখা যায় না। কিন্তু এমন দিন আসছে যখন সত্যিকার সাহিত্যিক কখনো তাঁর যুগের চিন্তাধারা ও জ্ঞানধারা থেকে দূরে থাকতে পারবেন না, যদি থাকেন তাহলে তিনি বাস্তব জগতের সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারবেন না, যে জগতে আধুনিক মানুষ চিন্তা করে, বাস করে এবং সংগ্রাম করে। ক্রমে ক্রমে তিনি একজন ভেলকিবাজের স্তরে নেমে আসতে বাধ্য হবেন, তাঁর সাহিত্যের কারদানি দেখে মূর্খদের মন আহ্লাদের ভরে যাবে, কিন্তু চিন্তাশীল ব্যক্তি কেউ তাঁর সাহিত্যের দিকে নজর নেবে না। আজকের মানুষের, নাগরিকের সাহিত্যের চাহিদা যা তা কখনো অস্ট্রেলিয়ান অসভ্যদের ভূতুড়ে কাহিনিতে মিটতে পারে না, কারণ সেকাহিনির আকর্ষণ তার উদ্ভটত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আজকের দিনে সাধারণ সাহিত্যিকদের ধারণাশক্তির ও বোধশক্তির শোচনীয় অভাব এবং পরিপার্শ্ব ও বহির্জগৎ সম্বন্ধে পরিপূর্ণ অজ্ঞতা তাঁদের উপযুক্ত শিক্ষার অভাবেরই কুফল বলতে হবে। আরও সবিস্তারে বলতে হলে বলা উচিত কুশিক্ষার ফল। ম্যুলর বলেছেন :

The effect of the newer knowledge on it has as yet consisted chiefly in an indirect reflection upon its moods…rather than in a change in detailed intellectual content; but the time is coming when the true literary man cannot afford to remain aloof from the thought and knowledge of his age, else he will be unable to write of the real world in which men of modern outlook think, dwell and have their being. He well degenerate into an acrobat amusing the ignorant, and his works will no more be heeded by thinking people, or able to satisfy their mre extensive literary requirements, than the rambling tales of an Australian savage could meet the literary needs of the average city-dweller of the present-day after their tang of novelty had once worn off. The appalling paucity of concepts on thne part of the average literary man of today, his blindness to the actual universe around him, is but one expression of the lack of education—or more properly, of the miseducation…

Out of the Night : Prof. H.J.Muller

নতুন সাহিত্যিকরা এই শ্রম ও সুশিক্ষা সম্বন্ধে নিশ্চয়ই সজাগ থাকবেন। মাতৃগর্ভলব্ধ প্রতিভাবলে উচ্চাঙ্গের সাহিত্য সৃষ্টি করা যায় এমন ভৌতিক বিশ্বাস তাঁদের বৈজ্ঞানিক মনকে নিশ্চয়ই স্পর্শ করবে না। খনিজ ধাতু মানুষের কোন কাজেই লাগত না যদি—না তাকে পুড়িয়ে, ঘষে—মেজে, ঢালাই মিশ্রণ করা হত। সুতরাং প্রয়োজন হলে তাঁরা পাঠ্যপুস্তক লিখে ভাষায় সংযম ও সারল্য শিক্ষা করবেন, তারপর রচনা, নিবন্ধ প্রবন্ধ আলোচনা—সমালোচনা লিখে ভাষাকে শাণিত, গতিশীল ও সমৃদ্ধশালী করবেন। বিবিধ বিষয়ে কৌতূহলী হবেন, নানা বিষয় শিখবেন, জানবেন। বৈজ্ঞানিক মনোভাব তাঁর সমগ্র সত্তার সঙ্গে জড়িয়ে এক হয়ে থাকবে। তারপর লিখবেন গল্প উপন্যাস মহাকাব্য—যা খুশি। নতুন সাহিত্যের যুগোপযোগী বিষয়বস্তুর ও প্রকাশভঙ্গির সমন্বয় ঘটাতে হলে বিরামহীন শ্রম অধ্যবসায় সুশিক্ষা ও কঠোর সাধনার প্রয়োজন। যুগোপযোগী বিষয়বস্তু, তা যতই প্রগতিশীল ও বিপ্লবী হোক—না কেন, অপাঠ্য ভাষায় ও ভঙ্গিতে প্রকাশ করলে তা সাহিত্যের কোঠাতেই উঠতে পারে না। এখানে বলতে হবে লেখকের বিষয়বস্তুরই উপলব্ধি হয়নি, তাই ভাষা ও ভঙ্গিও তাঁর অক্ষম। ভাষা, ভঙ্গি ও বস্তু পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

মানস—প্রকৃতি কী? মানস আর বিশ্বজগৎ নিয়ে এত দ্বন্দ্ব। কে কার আশ্রিত? মানস বিশ্বজগতের, না বিশ্বজগৎ মানসের? কে কার উৎস? এই নিয়ে দার্শনিকদের মধ্যে যুগে যুগে বাগযুদ্ধ, ভাববাদী ও বস্তুবাদী দর্শনের পরস্পর—বিরোধিতা। সাহিত্য ও শিল্পকলার স্বধর্মও এর উপর নির্ভরশীল। আমাদের কথা হল, মানস—জগৎ নিরপেক্ষ নয়, নিরালম্বও নয়। জীবের শ্রম ও বিশ্বপ্রকৃতির ঘাতপ্রতিঘাতে মানসের উদ্ভব বা বিকাশ সম্ভব হয়েছে। আগে মানস, তারপর জগৎ, এই মত বা যুক্তি ভাববাদী ও ভাবসর্বস্ব দার্শনিকদের কাছে অতিপ্রিয় হলেও বিজ্ঞান এই মতের বিরোধী। জীববিজ্ঞান ও শারীরবিজ্ঞান, এমনকি মনোবিজ্ঞান এই ভাববাদী স্বয়ম্ভু—মানসের শাব্দিক যুক্তিবিন্যাস সমর্থন করে না। বস্তুজগতের রহস্যদ্বার একটির পর একটি উদঘাটন করে আধুনিক পদার্থবিদ্যা আজ যত দূর পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে সেখানেও এই বস্তুনিরপেক্ষ মনোজগৎ কাল্পনিক রূপকথা ভিন্ন কিছুই নয়। আগেই বলেছি, জৈবিক ক্রমবিকাশের মূলে জীবের শ্রম ও প্রকৃতি। প্রকৃতির দ্বন্দ্ব, বিরোধ ও সংঘাতের ফলেই জীবের মানবত্বলাভ এবং মানবের মানসলাভ। তারপর যুগে যুগে শ্রম ও প্রকৃতির বিচিত্র সংস্পর্শ ও সংঘাতের ফলে মানসের আধিপত্য ও স্বাধীন কর্মশক্তির বিকাশ এবং মানস ও বহিঃপ্রকৃতির মধ্যে যান্ত্রিক সম্বন্ধকে জয় করেই মানুষের শ্রেষ্ঠতা প্রতিষ্ঠিত।

এই মানসই আজ মানুষের সমস্ত শক্তির উৎস, সংস্কৃতি ও সভ্যতার গিরিনির্ঝর। জীবনের এক মুহূর্তও আমাদের মন নিষ্ক্রিয় থাকে না। বৈদিক যুগের ঋষিরাও দেখি তাই মানস ও মেধার জন্য দেবতাদের কাছে প্রার্থনা করছেন।

অনেকে হয়তো ভাবছেন যে নতুন সাহিত্যের আলোচনা প্রসঙ্গে এই ‘শিবের গীত’ গাইবার কী প্রয়োজন ছিল। কিন্তু শিবের গীত আমি গাইনি, নতুন সাহিত্যেরই মূলকথা আলোচনা করেছি। ভাববাদী ও বস্তুবাদী সাহিত্যের আদর্শ নিয়ে অনাদিকাল থেকে যে বিতর্ক ও বাগযুদ্ধ চলে আসছে, আধুনিক যুগে তা অচল ও অর্থহীন। বিজ্ঞানের প্রগতিকে যদি আমরা স্বীকার করি এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যদি আমাদের বিতর্কের উৎসকে বিচার করি তাহলে ভাববাদী, মানসসর্বস্ব সাহিত্যাদর্শ আমাদের কাছে অর্থহীন মনে হবে। মানস—উৎস থেকে বিশ্বজগতের উৎপত্তি, না ভূগর্ভ থেকে মানসের উৎপত্তি, এ তর্কের আজ আর প্রয়োজন নেই। তর্কের খাতিরেই শুধু তর্ক করা চলে। আমরা দেখেছি মন স্বয়ম্ভু নয়, স্বর্গ থেক মন মাটিতে পড়েনি, মাটি ফুঁড়েই মন ফুটে উঠেছে, এবং আরও ফুটতে থাকবে। বিজ্ঞানের এই পরীক্ষিত সত্যের উপর নির্ভর করেই মার্কসবাদীরা ত্রিশঙ্কু সাহিত্যাদর্শের শূন্যগর্ভতা প্রমাণ করেন। অসত্য ও নিছক কথা সত্যকে খণ্ডন করার একমাত্র অস্ত্রই ছিল, অন্তত মার্কসবাদীর কাছে, বিজ্ঞান। তাই মিথ্যা তর্কের আশ্রয় না নিয়ে আমরা বিজ্ঞানের পরীক্ষা উত্তীর্ণ পথধরে যাত্রারম্ভ করাই শ্রেয় মনে করি। ‘শিবের গীত—এর এতক্ষণ প্রয়োজন ছিল এইজন্য।

কথা উঠতে পারে, বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের এই কল্পনাতীত প্রগতির যুগেও কেন এই পরস্পর—বিরোধী সাহিত্যাদর্শ নিয়ে বিতর্ক হয়? এর উত্তর হল, যে সামাজিক ও মানসিক কারণে বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর বৈপ্লবিক অগ্রগতির দিনেও, হস্তরেখাবিচার, কোষ্ঠীর ফলাফল, দৈববাণী ও প্ল্যানচেট—মাহাত্ম্য নিয়ে হই হল্লা চলতে পারে, ঠিক সেই কারণে বিজ্ঞানকে তুড়ি মেরে অস্বীকার করে অথবা বিকৃত করে, জীবনাদর্শ ও সাহিত্যাদর্শ নিয়ে এই শ্রেণির অর্থহীন যুক্তির অবতারণা করা সম্ভব হতে পারে। বিজ্ঞানের পরিপূর্ণ প্রয়োগ যতদিন না সামাজিক ক্ষেত্রে সম্ভব হবে, ততদিন বিজ্ঞানের সমাজবিচ্ছিন্ন প্রগতি বা আবিষ্কারের ফলে, তা যতই যুগান্তকারী হোক—না কেন, সর্বসাধারণের মধ্যে ব্যাপক বৈজ্ঞানিক মনোভাব গঠন করা সম্ভব হবে না। এই বৈজ্ঞানিক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি যতদিন না জনসাধারণের মধ্যে গড়ে উঠবে ততদিন প্রাচীন, জরাজীর্ণ ভাবসর্বস্ব আদর্শের ধ্বংসাবশেষ এখানে—ওখানে, জীবনের সর্বক্ষেত্রেই দেখা যাবে। বিজ্ঞানের এই অপ্রতিহত অভিযানের দিনেও যদি বিজ্ঞানীরাই বিজ্ঞানের আদর্শকে বিশ্ব ও সমাজনিরপেক্ষ ভাবাদর্শ বলে জাহির করতে সচেষ্ট হন, তাহলে সাহিত্যিক ও শিল্পীরা যে আজও কেউ কেউ ভাববিলাসী আদর্শকে আঁকড়ে থাকবেন তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই।

নতুন সাহিত্য ও নতুন সাহিত্যিকের যাত্রা শুরু হবে অবৈজ্ঞানিক ও অসামাজিক আদর্শের মূলে কুঠারাঘাত করে। সে কুঠার হল বিজ্ঞানের শানিত কুঠার। কল্পনা, ভাবধারা ও চিন্তাধারার উৎস যে মানস, তার অভিব্যক্তির ইতিহাস সুদীর্ঘ এবং তার স্বরূপও বেশ জটিল। এরপর সমাজ, পরিপার্শ্ব ও বহির্জগৎকে সাহিত্য ও শিল্পকলার উৎস বলে অস্বীকার করার আর কোনও পথই খোলা থাকে না। অনর্থক বাক্যবিন্যাস বা যুক্তিজাল—বিস্তারেরও প্রয়োজন হয় না এই স্বীকৃতির ফলে মনের সর্বব্যপিতা ও স্বাধীনতাকেও আমরা খর্ব করছি না। মনের নিজস্ব শক্তি ও স্বভাবের স্বাধীনতা মানুষই অর্জন করেছে এবং সেই শক্তি ও স্বাধীনতা সুদীর্ঘ দিনের সংঘাত ও সংগ্রামের ফলে আজ এত দূর বৃদ্ধি পেয়েছে যে, আজ আর মনকে সংকীর্ণ অর্থে বা প্রত্যক্ষভাবে বস্তুজগৎবন্দি বলা যায় না। বাইরের পৃথিবী মনের অনিরুদ্ধ গতির উৎস ঠিকই, এবং সমস্ত আঘাত ও আবেদন পরিদৃশ্যমান জগৎ থেকেই জটিল মানসযন্ত্রকে গতিশীল করে। কিন্তু এই গতিশীলতার বাধাবন্ধহীন রূপ মনের স্বোপার্জিত স্বাধীন শক্তি। নিজের মুক্ত ডানায় ভর দিয়ে বন্ধনহীন বিহঙ্গের মতো মনের যে বিচিত্র গতি, ভাব থেকে ভাবান্তরে যাত্রা, তা ও মনের নিজস্ব ধর্ম, এবং সে ধর্ম, আমরা পূর্বেই বলেছি, যান্ত্রিক নয়, একটানা একঘেয়ে প্রবাহ নয়, দ্বান্দ্বিক ও বৈপ্লবিক। সুতরাং মানুষের মানস—সুন্দরী কবিতা কল্পনা—লতা, সাহিত্য ও শিল্পকলার সম্পর্ক বস্তুজগতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ নয়, যান্ত্রিক নয়। সমাজের বা পরিপার্শ্বের নির্ভুল প্রতিচ্ছবির একটানা বর্ণহীন বৈচিত্র্যহীন প্রবাহও নয় সাহিত্য। সমাজ এবং সমাজের অভ্যন্তরের আদর্শসংঘাত ও ভাবপ্রবাহ হল ভিত্তি, কিন্তু স্থপতি সেই ভিত্তির উপর তালার পর তালা গঠন করে যে প্রাসাদ নির্মাণ করবেন, সেই নির্মিত প্রাসাদ হল সাহিত্য। মজবুত ভিত্তিই যেমন সম্পূর্ণ প্রাসাদ নয়, একনিষ্ঠ সমাজনির্ভরতাই তেমনি সাহিত্যের উৎকর্ষ বিচারের একমাত্র মাপকাঠি বা কষ্টিপাথর নয়। সুদক্ষ স্থপতি যেমন মজবুত ভিত্তির উপর তালার পর তালা গঠন করেন, স্থাপত্যবিজ্ঞানের নির্দেশানুসারে তার মধ্যে কুটশালা মহাশালা ক্ষুদ্রশালা অনুশালা অলিন্দ কর্ণ—হর্ম্য অন্তরাল গর্ভ—গেহ নির্গম স্তূপিকা প্রভৃতি সযত্নে তৈরি করে সুন্দর প্রাসাদ নির্মাণ করেন, সক্ষম সাহিত্যিকও তেমনি শব্দবিন্যাস শব্দপ্রয়োগ শব্দগঠন বাক্যরীতি ও নানাবিধ কৌশলের দ্বারা তাঁর সাহিত্যের প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এই নির্মাণকৌশল ও ভাবপ্রকাশরীতি সাহিত্যের একটি প্রধান দিক। সাহিত্য হল সৃষ্টির ব্যাপার এবং গর্ভলব্ধ সৃষ্টিশক্তি মাত্রই ঐন্দ্রজালিক, এই মারাত্মক প্রতিক্রিয়াশীল ধারণা আধুনিক সাহিত্যিকের সর্বাগ্রে বর্জন করা উচিত। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকরা সুদক্ষ স্থপতির মতো নির্মাণকুশলী, নির্গুণ ব্রহ্মার মতো সৃষ্টি—পারদর্শী নন। কল্পনাশক্তি যদি স্থপতির না থাকে তাহলে ‘মানসার’ গলাধঃকরণ করেও তিনি যেমন প্রাসাদ ও নগর—নির্মাণে ব্যর্থ হবেন তেমনি অলংকারশাস্ত্র বা শব্দশাস্ত্র আত্মসাৎ করেও সাহিত্যিক খাঁটি সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারবেন না, যদি তা কল্পনার রসে সঞ্জীবিত ও ভাবানুভাবের বিচিত্র রঙে রঞ্জিত না হয়। এ কথা স্বতঃসিদ্ধ, এ বিষয়ে তর্কের অবসর নেই। কিন্তু এই সৃষ্টির কল্পনার চাইতে কর্মকার ও কারিগরের নির্মাণকৌশলই সাহিত্যিকের প্রধান সমস্যা। সাহিত্যের উৎকর্ষও এর উপর নির্ভরশীল। কল্পনাপ্রবণ ও ভাবপ্রবণ ব্যক্তির অভাব নেই পৃথিবীতে, কণ্ঠের স্বাভাবিক সুমিষ্টতাও পথেঘাটে অনেকের দেখা যায়। কিন্তু তা—ই বলেই তাঁরা সুরশিল্পী বা কথাশিল্পী নন। কারণ বিচিত্র ভাবপ্রকাশের বিচিত্র জটিল রীতি ও কলাকৌশল এবং সুরবৈচিত্র্য প্রকাশের বিচিত্র ভঙ্গিমা তাঁরা আয়ত্তে আনতে পারেননি। এই কৌশল যিনি যত বেশি আয়ত্তে আনতে পারেন, যিনি যত বেশি রীতিদক্ষ, তিনি তত বেশি ভাবদক্ষ ও কল্পনাবিত্তশালী। কারণ ভাব ও রীতি, আঙ্গিকও অন্তর্নিহিত কল্পনা এত ঘনিষ্ঠভাবে পরস্পর—মুখাপেক্ষী যে একটির দৈন্য অন্যটির মালিন্য ও অন্তঃসারশূন্যতার মধ্যে প্রতিফলিত হবেই।

নবযুগের সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ পরীক্ষা হল এইখানে এবং সাহিত্য ও শিল্পকলার যে সংকটের কথা আমরা বলে থাকি তার মূলও এইখানে। ভাবদৈন্য ও ভাব—বিশৃঙ্খলা বর্তমান শতাব্দীর সাহিত্যের একটি প্রধান উপসর্গ বলেই তার রীতি ও আঙ্গিকও অনেকাংশে দুর্বোধ্য ও অর্থহীন। অন্তঃসারহীন রীতিসর্বস্বতারও কারণ এই ভাবদৈন্য। নবযুগের সাহিত্যিক ও শিল্পীরা যুগোপযোগী প্রকাশকৌশল আজও আবিষ্কার করতে পারেননি বা আয়ত্তে আনতে পারননি, কারণ যুগ—প্রগতির সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা নেই। বিজ্ঞানের বৈপ্লবিক প্রগতি জীবনের ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে যে গভীর রূপান্তরের সম্ভাবনা এনেছে, তার সঙ্গে কজন শিল্পী ও সাহিত্যিকের পরিচয় আছে, এবং পরিচয় করার জন্যই বা কজন উৎসুক? আধুনিক ভাবপ্রকাশের কোথায় সেই শব্দসম্ভার, কোথায় সেই বিজ্ঞানসম্মত কালোপযোগী প্রকাশদক্ষতা? আর সেই দক্ষতা ও কৌশল ভিন্ন যুগোপযোগী ভাবপ্রকাশের অক্ষম প্রচেষ্টাও ‘প্রগতি সাহিত্য’ নয়। আধুনিক বিজ্ঞানের প্রগতি, আধুনিক জীবিকা উৎপাদনের অস্ত্রের সর্বাঙ্গীণ উন্নতিকে যদি আমরা পরিপূর্ণভাবে আমাদের কলাসৃষ্টির কৌশল ও রীতির উৎকর্ষের জন্য প্রয়োগ করতে না পারি তাহলে নতুন সাহিত্য সৃষ্টির আশাও অবান্তর কল্পনা মাত্র। মাতৃগর্ভলব্ধ কারয়িত্রী প্রতিভাবলে নবযুগের সাহিত্য সৃষ্টি সম্ভব নয়, কারণ সে প্রতিভার ঐন্দ্রজালিক শক্তি প্রকাণ্ড চালাকি ছাড়া আর কিছু নয়। রীতিমতো শ্রম করে, ধৈর্য ধরে, সুদক্ষ কারিগরের মতো আধুনিক বিজ্ঞানের উৎপাদনকৌশল আমাদের শিক্ষা করতে হবে, তার বৈপ্লবিক সম্ভাবনাকে সমগ্র অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে, তারপর তাকে কলাসৃষ্টির কৌশলে রূপান্তরিত করতে হবে। এ ভিন্ন যা আমরা সৃষ্টি করব তা কোনও অংশেই অস্ট্রেলিয়ার বা আফ্রিকার, অথবা আমাদের ভারতবর্ষেরই আদিম অধিবাসীদের কলাসৃষ্টির চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে না। আর আদি বর্বর মানবজাতির জীবনাদর্শ যতই মানবিক হোক এবং তার শিল্পকলা, অতিকথা, ছড়া ও কাহিনির অন্তর্নিহিত ভাব যতই মহৎ ও জীবন্ত হোক, আধুনিক যুগমানস নিশ্চয় তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে সন্তুষ্ট হবে না। সে চাইবে তার শিল্পকলায় ও সাহিত্যে আধুনিক বৈজ্ঞানিক জগৎজোড়া বিস্তার, আধুনিক বৈজ্ঞানিক কৌশলের ও রীতিসম্ভারের পরিপূর্ণ প্রয়োগ এবং বৈজ্ঞানিক ভাব আদর্শোপলব্ধির সর্বাঙ্গীণ প্রতিফলন।

যদি বলি সভ্যতার প্রায় সবটুকুই কারিগরি তাহলে বোধহয় খুব মারাত্মক ভুল করা হয় না। কারিগরিই যদি না হবে তাহলে মানুষ তার বিচিত্র কল্পনা ও ভাবানুভূতির যে—কোনও একটা বিশেষ রূপায়িত মূর্তিতেই তো সন্তুষ্ট থাকতে পারত। কল্পনা ও অনুভূতি প্রকাশের কেন এত বিচিত্র ভঙ্গি? ছন্দে বর্ণে স্থাপত্যে ভাস্কর্যে নৃত্যে অভিনয়ে কারুকলায় সঙ্গিতে—কেন একই কল্পনার বিচিত্র প্রকাশ? পাথর কেটে—কুঁদে যাকে রূপ দেওয়া হল তাকেই ছন্দের মঞ্জীর বেঁধে প্রকাশ করা হল কাব্যে। তাতেও যখন মন উঠল না, তখন অঙ্গভঙ্গিতে, দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার আসবাবপত্রে ও সুরে তাকে রূপ দেওয়া হল। এই কলাবৈচিত্র্যের মধ্যে কারিগর মানুষটিকেই তো বেশি চেনা যায়, মানুষ যেখানে বিশ্বকর্মা, অক্লান্ত কর্মকার। তারপর তার জীবনাদর্শ ও কল্পনার রামধনু—রঙে রঞ্জিত হয়েই সেই কারিগরি হয় সৃষ্টি। কর্মকার কলাকার হয় স্রষ্টা। কিন্তু এই সৃষ্টি আর কারিগরির মধ্যে দুর্ভেদ্য প্রাচীর কোথায়?

মানববিজ্ঞানী মর্গান বলেছেন : ‘Man is a worker and an engineer, a tireless maker of tools, instruments and machines.’ (Jacques De Morgan-এর Prehistoric Man গ্রন্থের ভূমিকায় উদ্ধৃত।) সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে এইটাই বড় সত্য। যুগে যুগে জীবিকা—উৎপাদনের অস্ত্র বদলেছে, পদ্ধতি ও রীতি উন্নত হয়েছে, জীবনধারণের প্রণালী বদলেছে, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু জীবনের আদর্শ সেই অনুপাতে বদলায়নি। ফলে মানুষের সভ্যতার ও সংস্কৃতির উপাদান বেড়েছে, শিল্পকলার ও সাহিত্যের আঙ্গিকের প্রয়োজনে অন্তর্নিহিত ভাব বা জীবনাদর্শের উন্নতি হয়নি। তা দেখি, শ্রেণিসংস্কৃতি ও ঐতিহ্যাশ্রয়ী সভ্যতার ইতিহাসে প্রগতি সর্বাঙ্গীণ বা দীর্ঘস্থায়ী নয়, এবং তার অবনতি ও ধ্বংস অনিবার্য। শুধু বহিরঙ্গ ও বিস্তীর্ণ উপাদান উত্তরাধিকারসূত্রে যুগে যুগে আমরা পেয়েছি। যুগশ্রেষ্ঠ শিল্পকলা ও সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, তার মধ্যে ঐতিহ্যাশ্রিত এই অন্তর্নিহিত ট্র্যাজেডি অনুরণিত হয়েছে এবং ব্যাপক ও গতিশীল জীবনাদর্শের ইঙ্গিতেরও তার মধ্যে অভাব ঘটেনি। জীবনপ্রণালীর প্রগতি অনুযায়ী যে জীবনাদর্শের রূপান্তর ঘটেনি তার শ্রেষ্ঠ প্রমান হল বিংশ শতাব্দীর এই বৈপ্লবিক প্রগতির দিনেও ফ্যাসিস্ট আদর্শ ও সংস্কৃতি। সংস্কৃতির ইতিহাসেও দেখা গিয়েছে যে, আদিম মানবগোষ্ঠীর অনুন্নত ও অমার্জিত টেকনিকের সাহায্যেও যে কলাসৃষ্টি সম্ভব হয়েছে, উন্নত মানবগোষ্ঠীর উন্নত টেকনিকের সাহায্যে তা হয়নি। সুতরাং টেকনিক অন্যতম হলেও টেকনিকই সর্বস্ব নয়। উন্নত টেকনিক, প্রতীক রীতি—পদ্ধতি প্রভৃতি যদি সামাজিক সম্পর্ক ও বৃহত্তম মানবগোষ্ঠীর জীবনাদর্শের সঙ্গে ঠিকভাবে প্রতিযোজিত না হয় তাহলেই সংকট, বিকৃতি ও অবনতি চারিদিকে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। শিল্পকলাও অব্যাহতি পায় না। মর্গান বলেন :

We must note the facts at this point that certain peoples who had but the most primitive technical process at their disposal nevertheless left highly remarkable works of art denothing wonderful purity of taste and close observation of nature, whereas others who had every advantage in technical means never rose above mediocrity in their aesthetic inspiration. Thus, even though technique counted for much, its influence on the development of the arts was not decisive. It was the individual aptitude of a given human group that created this or that promising artistic school.

—J. De Morgan; Prehistoric Man.

তাহলে নতুন সাহিত্যের সমস্যা কী, সম্ভাবনা কোথায় এবং আদর্শই বা কী? জীবিকা—উৎপাদনের ও জীবনধারণের প্রণালী বৈপ্লবিক প্রগতি সামাজিক আদর্শ ও বৃহত্তম মানবগোষ্ঠীর জীবনাদর্শের বৈপ্লবিক রূপান্তরের যে সম্ভাবনা এনেছে এবং যে সম্ভাবনাকে ধ্বংস করাই শ্রেণিস্বার্থান্ধ মুষ্টিমেয় মানবগোষ্ঠীর উদ্দশ্যে, সেই সম্ভাবনা বাস্তব জীবনে রূপায়িত করাই নতুন সাহিত্যের সমস্যা। জৈবিক ক্রমবিকাশে যেমন সামাজিক প্রগতিতেও তেমনি প্রতিযোজন ও সর্বাঙ্গীণ পরিবর্তন একান্ত আবশ্যক। বৈজ্ঞানিক প্রগতি বা টেকনিকের উন্নতিকে প্রতিরোধ করা নয়, তাকে সামাজিক প্রগতি ও উন্নত জীবনাদর্শের সঙ্গে প্রতিযোজিত করাই হল সমস্যা। এই প্রতিযোজনের পথে আধুনিক শতাব্দীর উৎপাদন—পদ্ধতি, নির্মাণকৌশল, গঠনরীতি ও বিচিত্র বৈজ্ঞানিক কারিগরিকে অস্বীকার করে বা এড়িয়ে চলে নতুন সাহিত্য বা নতুন কলাসৃষ্টি অসম্ভব। কারিগরির সুযোগ নতুন সাহিত্যিক ও কলাকারের অপূর্ব ও বিরাট। প্রতিভাবান সাহিত্যিক ও শিল্পীদের প্রকাশরীতির, রচনাভঙ্গির, অঙ্কনরীতির এবং ভাবপ্রকাশের বিচিত্র কারিগরির প্রতি অনুদার কটাক্ষ বা কটূক্তি করা তাই যুক্তিসংগত না—ও হতে পারে, বরং অবিমৃশ্যকারিতা বলেই ভবিষ্যতে প্রমাণিত হওয়া সম্ভব।

বৈজ্ঞানিক যুগসংগত আঙ্গিক কারিগরিকে, বিচিত্র সুবিস্তীর্ণ জ্ঞানসম্ভার ও শব্দসম্ভারকে, প্রয়োগকৌশলকে নতুন সাহিত্য ও সাহিত্যিক আত্মসাৎ করে তার যুগোপযোগী ভাবাদর্শের সঙ্গে সমন্বিত করবে, মিলন ঘটাবে, একসূত্রে অবিচ্ছেদ্যভাবে গেঁথে দেবে। এই যুগোপযোগী ভাববস্তু বা ভাবাদর্শ হল শ্রেণিস্বার্থশূন্য ও কুসংস্কারমুক্ত সামাজিক আদর্শ, মানবতার আদর্শ, ‘বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদ’ যার নাম। এ ভিন্ন যুগপরিবর্তন অনুযায়ী জীবনের ও সমাজের প্রতিযোজন ও সমন্বয় সম্ভব নয় এবং বহিরাঙ্গিক পরিবর্তনানুযায়ী জীবনের পরিপূর্ণ প্রতিযোজন ও সার্থক সমন্বয় ব্যতিরেকে সামাজিক প্রগতি জীবন ও সভ্যতার ক্রমোন্নতি অসম্ভব। কিন্তু শিল্পকলায় ও সাহিত্যে এই আদর্শ ও আঙ্গিকের অন্তরঙ্গ মিলন সময়সাপেক্ষ। সমাজের অভ্যন্তরীণ বিরোধের ক্রমাপসারণের সঙ্গে সঙ্গে এই উচ্চতর সমন্বয় ও উন্নততর মিলনের পথে মানবসংস্কৃতি ধীরে—ধীরে এগিয়ে যাবে। তারপর একদিন শ্রেণীশূন্য মানবসংস্কৃতি তার অফুরন্ত বৈজ্ঞানিক সম্ভারে ও অলংকারে সমৃদ্ধ হয়ে বিচিত্র রীতি ও ভঙ্গিতে প্রকাশিত হবে।

১৯৪৪

……

* বর্তমানে ইলেকট্রনিকের যুগ বলা যায় (১৯৭৮)

সকল অধ্যায়

১. বাঙালি সদাগরশ্রেণি – বিনয় ঘোষ
২. মার্কসবাদ ও মর্গানবাদ – বিনয় ঘোষ
৩. বাঙালির রাষ্ট্রচিন্তা – বিনয় ঘোষ
৪. গান্ধীবাদের কালোপযোগিতা – বিনয় ঘোষ
৫. মধ্যবিত্তশ্রেণি ও মাধ্যমিক সংঘ – বিনয় ঘোষ
৬. শিবনাথ শাস্ত্রী – বিনয় ঘোষ
৭. সমাজপতি মহারাজা নবকৃষ্ণ – বিনয় ঘোষ
৮. ঠাকুর পরিবারের আদিপর্ব ও সেকালের সমাজ – বিনয় ঘোষ
৯. বিদ্যাসাগর-চিন্তা – বিনয় ঘোষ
১০. রবীন্দ্র-চিন্তা – বিনয় ঘোষ
১১. বিবেকানন্দ-চিন্তা – বিনয় ঘোষ
১২. জয়নারায়ণ ঘোষাল – বিনয় ঘোষ
১৩. অটোমেটিক জীবন ও সমাজ – বিনয় ঘোষ
১৪. সমাজবিজ্ঞানীর এ কোন শোচনীয় পরিণতি! – বিনয় ঘোষ
১৫. মেহনত ও প্রতিভা – বিনয় ঘোষ
১৬. দীবনন্ধু মিত্র বাংলা রঙ্গমঞ্চ ও বাঙালি সমাজ – বিনয় ঘোষ
১৭. বাংলা গদ্যসাহিত্যের আদিপর্ব – বিনয় ঘোষ
১৮. তারাশঙ্করের সাহিত্য ও সামাজিক প্রতিবেশ – বিনয় ঘোষ
১৯. সাহিত্যে অশ্লীলতা – বিনয় ঘোষ
২০. ‘গেট টু-গ্যাদার’ – বিনয় ঘোষ
২১. অর্থনীতির ভোজবাজি – বিনয় ঘোষ
২২. গৃহভৃত্যদের সামাজিক ভূমিকা – বিনয় ঘোষ
২৩. স্বদেশি আন্দোলন ও ব্রাহ্মবান্ধব উপাধ্যায় – বিনয় ঘোষ
২৪. রামমোহন রায়ের জীবনচরিত – বিনয় ঘোষ
২৫. এক পুরুষের দুস্তর ব্যবধান – বিনয় ঘোষ

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন