শকওয়েভ – ৫০

কাজী আনোয়ার হোসেন

পঞ্চাশ

নিউ ইয়র্ক। ম্যানহ্যাটনের ফাইনানশাল ডিসট্রিক্ট।

ফুলটন স্ট্রিটের পশ্চিম প্রান্ত ধরে হাঁটতে হাঁটতে প্লেট গ্লাস উইণ্ডোতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পেল কোহেন। শুকনো, অস্থিচর্মসার ছায়াটাকে চিনতেই পারল না নিজের বলে। সিণ্ডির ফিউনেরালের পর, এক মাসেই বয়স যেন বেড়ে গেছে ওর কয়েক বছর।

পরিস্থিতি বিবেচনায় অবসর দেয়া হয়েছে ওকে কাজ থেকে। শেফার্ডসটাউনের বাইরে এক মোটেল কামরায় যাপন করছিল হতাশায় ভরা নিষ্ক্রিয় জীবন। কোথাও যেত না, কথা বলত না কারও সঙ্গে। বেশির ভাগ সময়ই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকত জিম বিমের গ্লাসের দিকে। একের পর এক বোতল থেকে সোনালি গরল ঢেলে যত বারই পূর্ণ করত ওটা, খালি হয়ে যেত নিমেষেই।

নিজের ক্যারিয়ারের আর পরোয়া করছে না কোহেন, তোয়াক্কা করছে না ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়িটা নিয়ে; কিছুতেই আর কিচ্ছু যায় আসে না যেন লোকটার। ভালোবাসার যে-মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছে চিরজীবনের জন্য, শুধু এই একটা ব্যাপার ছাড়া। এটুকু অন্তত বোঝা হয়ে গেছে কোহেনের, ওর কারণেই মরতে হয়েছে মেয়েটাকে।

দু’-দু’বার হাতে উঠে এসেছিল একান্ত প্রিয় পয়েন্ট ফোর ফাইভ কিম্বার-টা। মনস্থিরই করে ফেলেছিল, উড়িয়ে দেবে নিজের খুলি। প্রতি বারই ফিরে এসেছে খাদের একেবারে কিনারা থেকে, হ্যামার পড়ার ঠিক আগমুহূর্তে।

অসহনীয় যন্ত্রণাময় অনেকগুলো দিবস-রজনী পার করার পর, আবার একদিন নতুন করে প্রাণশক্তি বইতে শুরু করল যেন কোহেনের মধ্যে। প্রথমে ক্ষীণ ধারায়, ধীরে ধীরে রূপ নিল সেটা খরস্রোতে। অন্ধকার পেরিয়ে এসেছে ও। তীব্র যে- শোকে অথর্ব হয়ে পড়েছিল, লেযার রশ্মির মত কেন্দ্রীভূত হয়েছে তা একটি বিন্দুতে। অন্ধ ক্রোধ ছাড়া অন্য কোনও কিছুর অস্তিত্ব নেই এখন কোহেনের অনুভূতিতে।

গালিফিনাকিসের জন্য নিখুঁত হার্ট অ্যাটাকের ব্যবস্থা করল কীভাবে নরকের কীটগুলো, ধারণা নেই তার। এটা কেবল জানে, এ ধরনের গুপ্তহত্যায় বহু আগে থেকেই পদ্ধতিটা ব্যবহার করে আসছে এজেন্সিগুলো।

অন্তরের অন্তস্তল থেকে নিশ্চিত ও—একমাত্র জীবিত সাক্ষীকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে শেফার্ডসটাউনের বাড়িতে। ওরা ধরেই নিয়েছে, ওর কাছে সব কিছু ফাঁস করে দিয়েছে মোটকু লোকটা।

গালিফিনাকিসের যে-কথাগুলো অব্যক্ত রয়ে গেল, সমস্ত খুঁটিনাটি না জানা পর্যন্ত বিশ্রাম কিংবা সোয়াস্তি নেই কোহেনের। লোকটার বক্তব্য সত্যি হলে, মিলফোর্ডের মৃত্যুটাও স্বাভাবিক নয়, সাজানো হয়েছে একই ধাঁচে।

যত সময় লাগে—লাগুক; যত দূর যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে—পড়ুক, নেপথ্যের কলাকুশলীদের খুঁজে বের করে জীবনের তরে শিক্ষা না দেয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত দিচ্ছে না ও। এমনই নিষ্ঠুরভাবে, নির্দয় হাতে নির্মূল করতে হবে শত্রুপক্ষকে। ফিল কোহেনের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য এখন এটাই। শক্তিতে পরিণত করেছে ও শোককে।

তার পরও ঠাণ্ডা ঘামের মত সর্বক্ষণ যেন কেমন এক ভীতি নিঃসৃত হচ্ছে ওর শরীর থেকে। ভার্জিনিয়া থেকে নিউ ইয়র্ক শহরের সারাটা পথই ড্রাইভারের মিররে চোখ রেখেছে ক্ষণে ক্ষণে; অনুসরণ করছে কি না কেউ, বোঝার জন্য। গালিফিনাকিসের মানিব্যাগে পাওয়া বিজনেস কার্ডের ঠিকানার উদ্দেশে এই যে চলেছে পায়ে হেঁটে, অস্থিরতায় টান টান হয়ে আছে স্নায়ু। বার বার পিছনে তাকাচ্ছে কাঁধের উপর দিয়ে। জ্যাকেটের নিচে লুকানো হোলস্টারে রাখা বড়সড় আকারের কিম্বার অটোমেটিকটার নিরেট উপস্থিতিও ভরসা জোগাতে পারছে না ওকে।

যে-কুত্তাগুলো এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে ওকে, তাদের উপর ম্যাগাজিন খালি করা ছাড়া আর কোনও কিছুতেই সান্ত্বনা পাবে না কোহেন। যখনই চিন্তা করে এটা, নিশপিশ করে ওঠে হাত দুটো। মেরিন-জীবনের শিক্ষা তখন শাসন করে মনটাকে, উপদেশ দেয় সবুর করার। সবুরে মেওয়া ফলে।

হাঁটা থামিয়ে চাইল কোহেন গ্লাস টাওয়ারের উঁচুতে। এটাই সেই জায়গা!

পঁচিশতলা দালানের ছায়া পড়েছে রাস্তা জুড়ে। এন্ট্রান্সের উপর সাত ফুট উঁচু, আয়নার মত চকচকে হরফে লেখা ফ্যান্টম হোল্ডিংস, ইনকরপোরেশন।

কার্ডটা বের করে মিলিয়ে নিল কোহেন। ফ্যান্টম হোল্ডিংসের ব্যাপারে যা-কিছু পেয়েছে অনলাইনে, গত রাতের প্রায় পুরোটাই ঘাঁটাঘাঁটি করেছে সেসব নিয়ে।

বিচিত্র আর ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ওদের ব্যবসায়িক বিনিয়োগের পরিধি। দুনিয়া জুড়ে আবাসিক ও ইণ্ডাস্ট্রিয়াল রিয়েল এস্টেট থেকে শুরু করে টিন, দস্তা ও হীরার খনি; ইণ্টারন্যাশনাল কার্গো শিপিং এবং এয়ার ফ্রেইট; এনার্জি, কনস্ট্রাকশন—কীসে নেই ফ্যান্টম!

কার্ডটা উল্টে লক্ষ বারের মত আবারও ভাবল হিজিবিজি অক্ষরে লেখা শব্দটা নিয়ে।

‘পসাইডন,’ আওড়াল বিড়বিড় করে।

কী এই ছাতার-মাথা পসাইডন?

প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট কিংবা অন্য কোনও সোর্সেও উল্লেখ নেই এটার। তার পরও, স্পেশাল ইনভেস্টিগেটর হিসাবে এত বছরের অভিজ্ঞতা ওকে জানান দিচ্ছে, এই পসাইডনের ব্যাপারেই বলতে চেয়েছিল কিছু গালিফিনাকিস।

কার্ডটা পকেটে রেখে দিল কোহেন। শেষ একবার টাওয়ারের আগাগোড়া চোখ বুলিয়ে নিয়ে স্থির সঙ্কল্পে ঢুকে পড়ল প্রবেশপথ দিয়ে।

বাইরেটার মতই চোখ টেরিয়ে দেয় ট্রিলিয়ন ডলারের লবি। মার্বেলের মেঝে, পিলার; আধুনিক পেইন্টিং আর ভাস্কর্য সাজানো দেয়ালের পটভূমিতে। পিঁপড়ার মত পিলপিল করে ছুটছে ব্যস্তসমস্ত এগযেকিউটিভরা। স্বাভাবিক একটা কর্মচঞ্চল মৌচাকের গুঞ্জন যেন সমস্তটা জুড়ে।

এগিয়ে গেল কোহেন ডেস্কের দিকে।

নিখুঁত সুট আর কানে হেডসেট পরা অসম্ভব গর্জিয়াস রিসেপশনিস্ট বহু কাল আগে হারিয়ে যাওয়া প্রিয়তমার মত মধুর হাসি দিল ওর দিকে চেয়ে। মাপা প্রসাধন মুখে। চমৎকার একটা পারফিউমের মাদক সুবাস আসছে গা থেকে।

‘এক্সকিউজ মি। আমার নাম ফিল কোহেন। পসাইডনের অথোরিটিতে রয়েছেন, এমন কারও সঙ্গে কথা বলতে পারি?’ এটুকুতেই কাজ হয়ে যাবে, আশা করছে কোহেন।

‘আরেকটু স্পেসিফিকালি বললে ভালো হয়, স্যর,’ বলল যুবতী বিনয়ের সঙ্গে। ‘কোন্ ডিপার্টমেন্টের অংশ এটা, প্লিজ?’

‘জাস্ট পসাইডন পর্যন্তই জানি আমি। ম্যানেজমেন্টের কারও সঙ্গে কথা বলিয়ে দিন বরং।’

একবারে কাজ হলো না, বার দুয়েক আরও করতে হলো উপরোধ। মেকি হাসিটা মুছে গেছে ততক্ষণে মেয়েটার চেহারা থেকে। সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনও মানুষ বলে মনে হচ্ছে তাকে এ মুহূর্তে। এক ফোনের রিসিভার তুলে দীর্ঘ গোলাপি নখে চাপল এক্সটেনশন নাম্বার, তার পর কোহেনের উপর নজর সেঁটে রেখে ওপাশের কারও কাছে পৌঁছে দিল মেসেজ।

বেশ অনেকক্ষণ ওপ্রান্তের কথা শুনে ফোন রাখল রিসেপশনিস্ট। ঠাণ্ডা স্বরে লবির ওয়েটিং এরিয়ায় বসতে বলল কোহেনকে। শিগগিরই লোক আসছে, জানাল, ওর সঙ্গে কথা বলতে।

বসল কোহেন। খুবই অস্থির লাগছে তার। ইচ্ছা করছে, এক ছুটে বেরিয়ে যায় রাস্তায়। এই পুরো ব্যাপারটা—এতটা পথ পাড়ি দিয়ে নিউ ইয়র্ক চলে আসাটা হয়তো গাধামির চূড়ান্ত হলো। ট্রেইনিং পিরিয়ডের আগেকার আনাড়িপনার মত। সম্ভবত ভুগছে ও পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে…

‘মিস্টার কোহেন?’ কাঠ-কাঠ স্বরে জিজ্ঞেস করল কে-

একজন।

আরেকজন দাঁড়িয়ে বুকে হাত বেঁধে।

হ্যাঁ-বাচক জবাব দিল কোহেন। এমপ্লয়ি নাম্বার, স্টেটাস এবং সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স লেভেল উল্লিখিত সিআইএ আইডি দেখাল ওদেরকে।

একই রকম কেঠো সুরে জানতে চাইল লোকটা, এজেন্সির কোনও ব্যাপারে কি না।

না—জানাল কোহেন—ব্যাপারটা ব্যক্তিগত।

‘আমাদের সঙ্গে এলে ভালো হতো, স্যর।’

‘সানন্দে।’ আত্মবিশ্বাস জড়ো হচ্ছে কোহেনের মনে।

পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল দু’জনে।

আঁকাবাঁকা করিডোর ধরে এসে পৌঁছুল ওরা টাওয়ারের এক ডিপ সেকশনে। চাকচিক্য অনেক কম এখানটায়। একটা সিকিউরিটি দরজা পেরোনোর আগে স্ক্যানারের ভিতর দিয়ে যেতে হলো ওকে।

এ জিনিস কাম্য ছিল না কোহেনের। ‘বিপ’ করে সতর্ক- সঙ্কেত দিল স্ক্যানার।

অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল লোক দু’জন। অভিব্যক্তি দিয়ে জানতে চাইছে, অস্ত্র- জাতীয় কিছু বহন করছে কি না সিআইএ এজেণ্ট।

নিউ ইয়র্ক সিটিতে ফায়ার আর্ম ক্যারি করার পারমিট নেই কোহেনের। ভালো করেই জানে, সিআইএ অপারে- টরের পরিচয় অফিশিয়াল কারণ ছাড়া অস্ত্র বহনের অধিকার দেয় না ওকে। আর, অফিশিয়াল কোনও কাজে যে আসেনি, আগেই তো সেটা কনফার্ম করেছে। কাজেই, মুহূর্ত পরে সিকিউরিটির লোক এসে হাজির হলে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও দিয়ে দিতে হলো সাইড-আর্মটা।

দরজাটা পেরোনোর পর অশুভ ‘ক্লিক’ শব্দে বন্ধ হয়ে গেল পিছনে।

আবার শুরু হলো চলা। কোহেনের মনে হচ্ছে, সারা জীবন ধরে হাঁটছে ও।

‘দুর্গের মত সিকিউরিটি-সিস্টেম আপনাদের,’ ভিতরের অস্বস্তি প্রকাশ পেতে দিল না ও গলার স্বরে।

মন্তব্য এল না কোনও।

অবশেষে, নিয়ন-আলোকিত ছোট এক

ছোট এক চারকোনা কামরায় কোহেনকে পৌঁছে দিয়েই হাওয়া হয়ে গেল চাপা স্বভাবের হোস্ট দু’জন।

দুটো স্টিলের চেয়ার আর ডেস্ক রয়েছে কামরাটাতে। অফিসের চাইতে ইন্টারোগেশন রুম বলেই মনে হচ্ছে কোহেনের কাছে।

সুট পরিহিত তৃতীয় যে-লোকটা ওকে অভ্যর্থনা জানাল, প্রথম দু’জনের চাইতে গায়েগতরে লম্বাচওড়া। মনে রাখার মত নয় চেহারাটা। আবারও দেখতে চাইল আইডি। ভুরু কুঁচকে এত বেশি সময় ধরে ওটার দিকে তাকিয়ে রইল যে, ভয়ই হলো কোহেনের-রায় না দিয়ে দেয়, জিনিসটা নকল! ফ্যান্টম হোল্ডিংসে ওর আগমনের কারণ জানতে চাইল।

মনের মাঝে পীড়া অনুভব করল কোহেন। লবির মেয়েটাকে বলা কথাগুলোরই পুনরাবৃত্তি করল ও অনিশ্চিত স্বরে।

পসাইডনের কথা শুনে বিস্ময় ফুটল লম্বাচওড়া চেহারায়। ‘কী জিনিস এটা?’

‘আপনারাই বলবেন, আশা করেছিলাম।’

‘দুঃখিত, সাহায্য করতে পারছি না আপনাকে,’ বিনয়ের সঙ্গে মাথা নেড়ে বলল লোকটা।

কিন্তু এ কথা শোনার জন্য তো এত দূর পর্যন্ত আসেনি কোহেন! ভুলল না ও লোকটার জবাবে।

‘আর প্রজেক্ট ডুডে?’ ঢিল ছুঁড়ল সিআইএ এজেন্ট। ‘আলোকপাত করতে পারেন এই ব্যাপারে?’

জবাব পেল না।

সেলফোন বেজে উঠলে নীরবে রিসিভ করল ফ্যান্টম হোল্ডিংস স্টাফ। ভাবলেশহীনভাবে শুনে গেল ওপাশের কথা। শোনা শেষ হলে বলল কোহেনকে, ‘আপনার কৌতূহল মেটানো হবে, স্যর, একটু পরে। দয়া করে অপেক্ষা করুন এখানে।’

কামরা ত্যাগ করে দরজা লাগিয়ে দিল লোকটা। আবারও অমঙ্গলের ‘ক্লিক’ আওয়াজে লেগে গেল লক।

‘আরে!’ চেয়ার ছেড়ে খাড়া হলো কোহেন। ‘কী হচ্ছে এসব? দরজা লক করলেন কেন? বন্দি করছেন নাকি আমাকে?’

হ্যাঁ, তা-ই করেছে ওরা! অপেক্ষা ছাড়া কিছুই আর করণীয় নেই ওর। দেখা যাক, কী হয়!

দশ মিনিট গেল।

আরও পাঁচ।

আঙুল দিয়ে তবলা বাজাচ্ছে কোহেন ডেস্কের উপর। অস্বস্তিদায়ক চেয়ারে বসে উসখুস করছে রীতিমত। দেয়ালগুলো যেন চারপাশ থেকে চেপে আসছে ওর দিকে।

আচমকা নিভে গেল বাতি।

ঘুটঘুটে আঁধারে পাথরের মূর্তির মত স্থির হয়ে গেল কোহেন। কয়েকটা চুল খাড়া হয়ে গেছে ঘাড়ের কাছে। লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দরজায় গিয়ে থাবা মারতে লাগল কবাটের গায়ে। ‘এই যে! শুনতে পাচ্ছেন কেউ? দরজা খুলুন! এক্ষুণি বেরোতে দিন আমাকে এখান থেকে!’

ঝটকা দিয়ে ওর মুখের উপর খুলে গেল দরজা।

টলে উঠে পিছু হটল কোহেন।

বাইরের করিডোরও এখন কামরার মত অন্ধকার। শুধু দেখতে পেল, জ্বলজ্বলে এলইডিঅলা ইনফ্রারেড গগলস চোখে চারটে মূর্তি এগিয়ে আসছে লম্বা পদক্ষেপে।

শক্তিশালী হাতগুলো দু’দিক থেকে পাকড়াও করল ওকে। কামরার দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে ঠেসে ধরা হলো ডেস্কের উপর।

প্রাণপণ শক্তিতে নাগপাশের মধ্যে ঝটকাঝটকি করছে কোহেন। একটা হাত মুক্ত করতে পেরেই ধাম করে ঘুসি হাঁকিয়ে বসল। একজনের গগলসে লেগে রক্তাক্ত হলো আঙুলের গাঁট। যন্ত্রণার স্রোত উঠে এল কবজি বেয়ে।

‘কী হচ্ছে এসব! কারা আপনারা?’ চিল্লাতে লাগল ও সমানে।

হাতটা আবারও চেপে ধরা হলে শরীর নড়ানোর আর ক্ষমতা রইল না কোহেনের। সুইয়ের তীক্ষ্ণ খোঁচা অনুভব করল ও বাহুতে।

চট্ করেই বের করে নেয়া হলো সুইটা।

আত্মা শুকিয়ে পানি হয়ে গেছে কোহেনের। মরা কাঠের মত শুকিয়ে গেছে কণ্ঠতালু। কিছু ইনজেক্ট করা হয়েছে ওর শরীরে!

ছটফট করছে, আর উন্মত্তের মত চিৎকার করে চলেছে সিআইএ এজেন্ট। শরীরের ভিতর কীসের এক ক্রমবর্ধমান প্র াহ দখল করে নিচ্ছে ওকে দ্রুত। কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই থিতিয়ে এল কোহেনের প্রতিরোধ। কণ্ঠস্বর অস্পষ্ট হয়ে গেল, ভেজা টিসুপেপারের মত নেতিয়ে পড়তে শুরু করেছে শরীরের পেশিগুলো।

আরও কয়েক মুহূর্ত পর ছেড়ে দিল ওকে লোকগুলো। নিস্তেজ কোহেন পড়ে রইল ডেস্কের উপর। পুরোপুরি অচেতন হয়নি তখনও। আবছাভাবে বুঝতে পারল, ধরাধরি করে বের করা হলো ওকে কামরার বাইরে।

এবং তার পরই জ্ঞান হারাল কোহেন।

সকল অধ্যায়

১. শকওয়েভ – ১
২. শকওয়েভ – ২
৩. শকওয়েভ – ৩
৪. শকওয়েভ – ৪
৫. শকওয়েভ – ৫
৬. শকওয়েভ – ৬
৭. শকওয়েভ – ৭
৮. শকওয়েভ – ৮
৯. শকওয়েভ – ৯
১০. শকওয়েভ – ১০
১১. শকওয়েভ – ১১
১২. শকওয়েভ – ১২
১৩. শকওয়েভ – ১৩
১৪. শকওয়েভ – ১৪
১৫. শকওয়েভ – ১৫
১৬. শকওয়েভ – ১৬
১৭. শকওয়েভ – ১৭
১৮. শকওয়েভ – ১৮
১৯. শকওয়েভ – ১৯
২০. শকওয়েভ – ২০
২১. শকওয়েভ – ২১
২২. শকওয়েভ – ২২
২৩. শকওয়েভ – ২৩
২৪. শকওয়েভ – ২৪
২৫. শকওয়েভ – ২৫
২৬. শকওয়েভ – ২৬
২৭. শকওয়েভ – ২৭
২৮. শকওয়েভ – ২৮
২৯. শকওয়েভ – ২৯
৩০. শকওয়েভ – ৩০
৩১. শকওয়েভ – ৩১
৩২. শকওয়েভ – ৩২
৩৩. শকওয়েভ – ৩৩
৩৪. শকওয়েভ – ৩৪
৩৫. শকওয়েভ – ৩৫
৩৬. শকওয়েভ – ৩৬
৩৭. শকওয়েভ – ৩৭
৩৮. শকওয়েভ – ৩৮
৩৯. শকওয়েভ – ৩৯
৪০. শকওয়েভ – ৪০
৪১. শকওয়েভ – ৪১
৪২. শকওয়েভ – ৪২
৪৩. শকওয়েভ – ৪৩
৪৪. শকওয়েভ – ৪৪
৪৫. শকওয়েভ – ৪৫
৪৬. শকওয়েভ – ৪৬
৪৭. শকওয়েভ – ৪৭
৪৮. শকওয়েভ – ৪৮
৪৯. শকওয়েভ – ৪৯
৫০. শকওয়েভ – ৫০
৫১. শকওয়েভ – ৫১
৫২. শকওয়েভ – ৫২
৫৩. শকওয়েভ – ৫৩
৫৪. শকওয়েভ – ৫৪
৫৫. শকওয়েভ – ৫৫
৫৬. শকওয়েভ – ৫৬
৫৭. শকওয়েভ – ৫৭
৫৮. শকওয়েভ – ৫৮
৫৯. শকওয়েভ – ৫৯
৬০. শকওয়েভ – ৬০
৬১. শকওয়েভ – ৬১
৬২. শকওয়েভ – ৬২
৬৩. শকওয়েভ – ৬৩
৬৪. শকওয়েভ – ৬৪
৬৫. শকওয়েভ – ৬৫
৬৬. শকওয়েভ – ৬৬
৬৭. শকওয়েভ – ৬৭
৬৮. শকওয়েভ – ৬৮
৬৯. শকওয়েভ – ৬৯
৭০. শকওয়েভ – ৭০
৭১. শকওয়েভ – ৭১
৭২. শকওয়েভ – ৭২
৭৩. শকওয়েভ – ৭৩
৭৪. শকওয়েভ – ৭৪
৭৫. শকওয়েভ – ৭৫
৭৬. শকওয়েভ – ৭৬
৭৭. শকওয়েভ – ৭৭
৭৮. শকওয়েভ – ৭৮
৭৯. শকওয়েভ – ৭৯

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন