শকওয়েভ – ৬৪

কাজী আনোয়ার হোসেন

চৌষট্টি

চরম হতাশায় ঢাকনাটা আবার জায়গামত ফেলে দিল রানা। দুর্গন্ধে টেকা যাবে না নইলে। জোরালো ধাতব প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ল সারাটা দালান জুড়ে। ডিসম্যান্টল করা অস্ত্রটা সেলেনার হাতে গুঁজে দিয়ে ত্বরিত পা চালাল ও দরজার দিকে।

এগারো মিনিটেরও কম সময় রয়েছে ওদের হাতে!

মাথা ঠাণ্ডা রাখো… একদম ঠাণ্ডা! মনে মনে অটোসাজেশন দিচ্ছে রানা নিজেকে। অন্য কোনও পথ আছে নিশ্চয়ই! ছাতের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘নিচে নামতে না পারলেও, ওপরে উঠতে হয়তো পারব। স্রেফ ওই জানালা বাইতে হবে।’

‘তার পর বাইরে লাফিয়ে পড়ে পা-টা ভাঙি আর কী!’ বলল সেলেনা সন্দিহান সুরে।

‘দড়ির বাণ্ডিলটা দেখেছ?’ ইশারায় দেখাল রানা। ‘বাইরে নামার মত লম্বা হতে পারে ওটা।’

‘ধচাপচা না হলেই হয়,’ কোহেনের কণ্ঠেও সন্দেহ। ‘ঠিকই বলেছেন ভদ্রলোক,’ সাপোর্ট করল সেলেনা। ‘ছিঁড়ে-টিড়ে গেলে?’

‘পপাত ধরণীতল,’ ড্যামকেয়ারভাবে জবাব দিল রানা। ‘অন্তত সান্ত্বনা থাকবে, চেষ্টা তো করেছি!’

‘নাছোড়বান্দা লোক তুমি, রানা।’

‘মরার আগে মরতে কে চায়, বলো?’

‘কিন্তু উঠবে কী করে জানালায়?’

‘সেটাও ভেবেছি। পিস্তলটা দাও তো!’

দিল সেলেনা।

ফ্রেম আর স্লাইড আবার দ্রুত হাতে জুড়ে নিল রানা।

‘আবারও তো আগের মতন অকেজো অস্ত্র হলো ওটা। রানার মতিগতি অ্যানটেনায় ধরছে না সেলেনার।

‘তোমার কাছে যেটা অকেজো অস্ত্র, আমার কাছে সেটা কেজো হাতুড়ি।’ ব্যারেলের প্রান্তের দিকটা ধরে বাঁটটা দিয়ে বাড়ি দিল রানা প্লাস্টারের গায়ে, যদ্দূর হাত যায় উপরে।

পর পর তিন বার জোরালো ঘা মারার পরেও কিছুই হলো না দেয়ালের। উল্টো আঁচড় পড়ল পিস্তলের ফ্রেমে।

‘কী চাইছ তুমি, রানা? ধসাতে চাইছ দেয়ালটা?’ এমনভাবে তাকিয়ে আছে সেলেনা, যেন একটা রামছাগলকে দেখছে।

‘ভুল জায়গা,’ মন্তব্য করে, কয়েক ইঞ্চি বাঁয়ে সরে চেষ্টা করল রানা আবার।

প্লাস্টারের একটা চাঙড় ভেঙে এল আঘাতে। আঙুল আটকানোর মত খাঁজ তৈরি হয়েছে দেয়ালে।

আর আট মিনিট!

তবে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে পারলে আট মিনিটও দীর্ঘ সময়।

হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল রানা। বাড়ি মারতে আরম্ভ করল কোমর-সমান উচ্চতায়। কয়েক সেকেণ্ডেই প্লাস্টার খসিয়ে নিয়ে পৌঁছে গেল নিচের পাথুরে অংশে।

নিচের খাঁজে বাঁ পা রাখল ও। বাম হাতের আঙুলগুলো উপরের খাঁজে বাধিয়ে টেনে তুলল নিজেকে। তার পর আরও উপরে আঘাত করে করে আরেকটা খাঁজ বের করার চেষ্টায় রত হলো ধরে ওঠার জন্য। বাম হাত আর বাম পায়ের তলার প্লাস্টার ওজন রেখেছে ওর।

‘পারবে না, রানা!’ নিরুৎসাহিত করল সেলেনা।

ঘোঁত করে উঠল রানা উপরে উঠতে উঠতে। ‘আর তো কোনও উপায় দেখছি না আমি, তুমি দেখছ?’ ব্যথা অগ্রাহ্য করে আঁকড়ে ধরে রেখেছে প্লাস্টারের খাঁজ। পিস্তলটা এবার বাম হাতে নিয়ে যন্ত্রের মত নিজের কাজ করে চলল।

মিনিট দেড়েক পাগলের মত ‘হাতুড়ি’ চালিয়ে, বিপজ্জনক ভঙ্গিতে টাটিয়ে ওঠা আঙুল নিয়ে অর্ধেকটা পথ জানালার দিকে এগোতে পারল ও।

সীমাহীন উদ্বেগে রানার কাজ দেখছে কোহেন আর সেলেনা।

‘উপরে উঠতে পারলে নিচে ছুঁড়ে দেব দড়িটা,’ হেঁকে বলল রানা। ‘এক এক করে তুলে নেব তোমাদের।’

‘রানা!’ চিৎকার করল সেলেনা। ‘ছয় মিনিটেরও কম সময় রয়েছে!’

উফ! বহুত টাইম লেগে যাচ্ছে জানালা পর্যন্ত পৌঁছুতে! আতঙ্কের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে করতে কাজের গতি দ্বিগুণ করে দিল রানা। বৃষ্টির মত প্লাস্টারের চাঙড় ভেঙে চুরচুর হচ্ছে নিচে পড়ে।

বিরামহীন আঘাতের চোটে অসহ্য রকমের টনটন করছে ওর হাত দুটো। পায়ের আঙুলগুলোতে যেন সাড় নেই কোনও। দরদরিয়ে ঘাম ঝরছে গা থেকে।

তার পরেও মনের উপর জোর খাটিয়ে ঝুলে থাকতে হচ্ছে রানাকে। যতটা উঠেছে; হাতপা যদি ছুটে যায় একবার, পা তো ভাঙবেই, মেরুদণ্ডও কয়েক টুকরো হতে পারে।

‘পড়বি না… পড়বি না তুই!’ অটোসাজেশন নেয়া বন্ধ করেনি রানা। খেপার মত পিস্তলের ঘা মেরে মেরে দেয়াল বেয়ে চলল, যতক্ষণ না আঙুল বাধাতে পারল জানালার তাকে। কামড়ে ধরে রেখেছে টাল খাওয়া পিস্তলটা।

মুহূর্ত কয় পর, ঘর্মাক্ত রানা উঠে পড়তে পারল তাকের উপর। দৌড়ে আসা কুকুরের মত বেদম হাঁপাচ্ছে।

এখন বুঝতে পারছে, কতটা উঠেছে এই অল্প সময়ে। চল্লিশ ফুট নিচে ছোট্ট দেখাচ্ছে সেলেনা আর কোহেনকে।

নড়বড়ে তাকটায় দাঁড়িয়ে শরীরটা সাবধানে টান টান করল রানা। ব্যবধান বেশি নয় মাথা আর টিন প্লেটের সিলিঙের।

বাইরের দিকে পাঞ্জা বাড়িয়ে শূন্যে কাত হলো ও। হাতের প্রায় নাগালেই রয়েছে রুফ সাপোর্টের দড়ি-পেঁচানো অংশটা। আরেকটু কাত হতেই জং ধরা গার্ডারের অস্বস্তিকর খরখরে ছোঁয়া লাগল বাড়ানো আঙুলগুলোয়। তার পরই সহসা মুঠোবন্দি হলো মোটা রশিখানা।

এই বার!

উইণ্ডো লেজ থেকে রানা দোল খেয়ে সরে যেতেই ভেসে এল সেলেনার ভয়ার্ত চিৎকার। বিপজ্জনকভাবে ঝুলছে রানা দড়ি থেকে। ‘পটাস’ করে যদি ছিঁড়ে যায়, কিংবা প্যাঁচ খুলে যায় গার্ডার থেকে, কঠিন কংক্রিটে আছড়ে পড়া ঠেকাতে পারবে না কেউ।

‘চার মিনিটেরও কম সময়, রানা!’ সাবধান করল সেলেনা।

আঙুলের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পড়া বালির মত নিঃশেষ হতে চলেছে যেন মুহূর্তগুলো। তার পরও চেষ্টা বন্ধ করা

চলবে না রানার।

ঝুলন্ত অবস্থায় উপরদিকে ছুঁড়ল ও পা দুটো। পুরু রাস্ট পড়া গার্ডারের এইচ-সেকশন আউটলাইন পা দিয়ে জড়িয়ে ধরে উঠে বসল ওটার উপর। হাঁটু, গোড়ালি আর পায়ের গুলের সাহায্যে চেপে রেখেছে দুই পাশ।

চেষ্টা চালিয়ে গেল রানা লোহার কড়িবরগার সঙ্গে টাইট করে পেঁচিয়ে রাখা দড়ির প্যাচ আলগা করার জন্য।

কয়েক সেকেণ্ডেই সফল হলো কাজটায়। এর পর দড়ির পাক খুলে নিয়ে এক প্রান্ত বাঁধল গার্ডারের সঙ্গে। নিচে নামাতে শুরু করল অন্য প্রান্তটা। মেঝে পর্যন্ত পৌঁছুলেই হয় এখন!

হালকা স্বাস্থ্যের সেলেনাকে যে টেনে তুলতে পারবে, সে- ব্যাপারে সন্দেহ নেই ওর। ভারি গড়নের ফিল কোহেনকে নিয়েই যা দুশ্চিন্তা। যাক… যখনকারটা তখন।

উপরে ওঠার পর, একবারে একজন করে জানালার তাকে পৌঁছুতে পারবে ওরা দড়িতে দুলে। এর পর দড়িটা বাইরে নামিয়ে দিয়ে নেমে যেতে পারবে ওটা বেয়ে।

আপাতত এটুকুই পরিকল্পনা।

সেকেণ্ডের টিক-টিকগুলো যেন গুলি ফোটার আওয়াজ

তুলছে রানার মস্তিষ্কের মধ্যে।

মেঝের দেড় ফুট উপরে নেমে শেষ হয়ে গেল দড়ি। ‘কোমরে পেঁচিয়ে, ধরে রাখো শক্ত করে!’ সেলেনার উদ্দেশে বলল রানা চেঁচিয়ে।

ঝটপট তা-ই করল ও। দড়ির উপর নিজের ভর ছেড়ে দিয়ে দেখল, ওজন নিতে পারছে কি না।

ঘামে ভেজা হাত দুটো প্যান্টে মুছে নিল রানা। ‘ঠিক আছে, তুলছি এবার তোমাকে।’

গার্ডারের উপর জুত করে বসে শক্ত মুঠিতে ধরল ও দড়িটা। ওঠাতে আরম্ভ করল সেলেনাকে।

পাঁচ ফুট উঁচুতে ঝুলছে যখন সেলেনা, ঠিক সেসময় ঘটতে শুরু করল কিছু একটা।

প্রথমটায় মনে হলো রানার, এত জোরে ধকধক করছে হৃৎপিণ্ডটা যে, ওটারই স্পন্দন টের পাচ্ছে শরীরে। তার পর উপলব্ধি করল, কাঁপছে আসলে আয়ার্ন গার্ডার। প্রথমে গভীর একটা গুঞ্জনের সঙ্গে ছন্দবদ্ধ কম্পন– বোঝা যায় কি যায় না, তার পরই বাড়তে লাগল কাঁপুনির প্রাবল্য। গার্ডার নয় শুধু, গোটা দালানটাই ভরে উঠেছে ভাইব্রেশন আর গুঞ্জরনে। এমনকী বাতাসেরও যেন কাঁটা দিচ্ছে গায়ে।

পীড়াদায়কভাবে পরিচিত অনুভূতিটা। ইলিয়েলদের পারিবারিক সমাধিক্ষেত্রে এ অভিজ্ঞতার সঙ্গেই পরিচয় হয়েছিল ওদের, দুনিয়ার আরেক প্রান্তে।

সন্দেহাতীতভাবে ওটাই ঘটছে আবার। শিয়োর হওয়ার জন্য ঘড়ি দেখার প্রয়োজন বোধ করল না রানা।

‘সত্যি সত্যিই মহড়া শুরু করেছে জানোয়ারগুলো!’ ভাবল ও দাঁতে দাঁত ঘষে। অবিশ্বাস, আতঙ্ক আর রাগের মিশেলে অ্যাড্রেনালিন ছুটতে লাগল ধমনিতে। আরও দ্রুত দড়ি টানতে লাগল রানা।

কয়েক সেকেণ্ডের ব্যবধানেই ক্রমবর্ধমান নির্ঘোষে পরিণত হলো গুঞ্জনধ্বনি। অনেকটা মুহুর্মুহু বজ্রপাতের মত। কাঁপুনির প্রভাবে লাল ধুলোর আকারে মরচে ঝরে পড়ছে বরগা থেকে। ধাতব সঙ্গত ধরেছে উপরের টিন প্লেটগুলোও।

কোহেনের অবস্থা শোচনীয়। হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকতে গিয়ে। ধরার মত কোনও অবলম্বন নেই লোকটার।

‘টানতে থাকো, রানা!’ মেঝে থেকে আঠারো ফুট উপরে এখন সেলেনা, ঘুরছে বৃত্তাকারে। মাঝরাস্তায় কর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে রানা—খুবই বিপজ্জনক ব্যাপারটা।

‘ও কী! নামাচ্ছ কেন আবার?’ দড়ি ছাড়তে শুরু করতেই ভীত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল সেলেনা।

‘আগে মাথা বাঁচাও তোমরা!’ চেঁচাল রানা দু’জনের উদ্দেশে।

মাতালের মত টলায়মান অবস্থা কোহেনের। ভয়ঙ্কর- ভাবে কাঁপতে লেগেছে কংক্রিটের মেঝে। টলতে টলতে হুমড়ি খেয়ে পড়ল সে হামাগুড়ি দেয়ার ভঙ্গিতে। মেঝেতেই মুখ গুঁজল মাথার উপর হাত দুটো চাপা দিয়ে।

হ্যাঁচকা টান মেরে কোমর থেকে দড়ি ছুটিয়ে নিয়ে একই কাজ করল সেলেনাও। আর কোনও জায়গা নেই যাওয়ার।

একটা হাত ঢুকিয়ে দিল রানা এক প্যাঁচ দিয়ে বাঁধা দড়ির লুপে, বজ্র-আলিঙ্গনে ধরে রাখল গার্ডার।

নড়ছে দেয়ালগুলো, থরথরিয়ে কেঁপে চলেছে ভিত্তির উপর, ঝাঁকুনির চোটে আগুপিছু করছে। কিলবিল করা সাপের মত লম্বা ফাটল ছড়িয়ে পড়ল প্লাস্টার জুড়ে। খসে খসে পড়তে লাগল পলেস্তারা।

‘ফটাস’ করে চুরমার হলো অক্ষত একটা জানালার- শার্সি। অল্পের জন্য বেঁচে গেল সেলেনা কাঁচবৃষ্টি থেকে।

কম্পমান গার্ডারের কারণে সাংঘাতিক ঝাঁকি খাচ্ছে হাতপা। কাঁপুনি যত তীব্র হচ্ছে, ততই আঁটো হচ্ছে রানার আলিঙ্গন। কিন্তু ও জানে, বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারবে না এভাবে।

একটানা গর্জনে রূপ নিয়েছে এখন গুডুগুডু বজ্রনির্ঘোষ। আওয়াজ আর কম্পনের যে-প্রচণ্ডতা অনুভব করছে রানা, ইলিয়েল চ্যাপেলের অভিজ্ঞতাকে মনে হচ্ছে তুচ্ছ আর নগণ্য।

দিব্য চোখে পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ও, সেন্টার কলাম সহ ভিতরদিকে ধসে পড়ছে দেয়ালগুলো। গার্ডারগুলোর সঙ্গে নিজেও খসে পড়ে ধুড়ুম-ধাড়ুম আওয়াজে চাপা পড়ছে শত শত টিন শিটের নিচে, সেটাও দেখতে পেল কল্পনায়।

এটাই শেষ যাত্রা ওদের! নিখুঁত একটা মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করেছে জোসেফ নিকলসন।

কিন্তু হঠাৎ করেই কমতে শুরু করল কম্পন; যেখানে মনে হচ্ছিল, বাড়বে আরও। দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে কাঁপুনির তীব্রতা।

সাহস করে বজ্রকঠিন আঁটুনি ঢিলে করল রানা। তাকাল নিচে কুঁকড়ে-মুকড়ে থাকা দুই সঙ্গীর দিকে।

কয়েক মুহূর্ত পর একদম নেই হয়ে গেল ভাইব্রেশনটা।

বিশাল কারখানা-দালান খাড়া রয়েছে এখনও, যদিও অক্ষত নয়।

বেঁচে গেছে ওরা! কেউ এমনকী আহতও হয়নি বলতে গেলে!

‘জিতে গেছি!’ কষ্টেসৃষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বসিত চিৎকার ছাড়ল সেলেনা। ধুলো মাখা মুখটা ঝলমল করছে আনন্দে।

সিধে হলো কোহেনও। পরস্পরকে ঠাস ঠাস করে হাই- ফাইভ দিয়ে হাসতে লাগল ওরা অপ্রকৃতিস্থের মত।

ভেস্তে গেছে উন্মাদটার এক্সপেরিমেন্ট। সত্যিকারের কোনও ক্ষতিসাধনের আগেই স্তিমিত হতে হতে মরে গেছে কৃত্রিম ভূমিকম্প।

উত্তেজনা কেটে যাওয়ার পরবর্তী তিন-চার মিনিট এতটাই দুর্বল বোধ করতে লাগল, নড়াচড়ার সাধ্য রইল না কারও। আপনা-আপনি কাঁপতে শুরু করেছে রানার পেশিগুলো। হাসি-কান্না মেশানো অনুভূতি উথলে উঠতে চাইছে অন্তরাত্মা থেকে। ‘এটাই কি তোমার শ্রেষ্ঠ কাজ, নিকলসন?’ বলতে ইচ্ছা করছে চিৎকার করে।

গার্ডারের উপর এলিয়ে পড়ে থেকে শ্বাস নিতে লাগল ও গভীরভাবে। সময় দিচ্ছে হার্টবিট স্বাভাবিক হওয়ার।

মানসিক প্রেশারটা দূর হয়েছে বটে, কিন্তু স্রেফ অল্প সময়ের জন্য। এক্সারসাইজ ফেল মেরেছে, টের পেতে বেশিক্ষণ লাগবে না নিকলসন আর ওর চেলা-চামুণ্ডাদের। প্রথাগত পদ্ধতিতে কাজ শেষ করতে ফিরে আসবে তখন। মগজের মধ্যে বুলেট ঢুকিয়ে দিয়ে চরিতার্থ করবে প্রতিহিংসা

‘সেলেনা!’ ডাক দিল রানা। ‘বেরিয়ে যেতে হবে এখান থেকে। আগের মত করে কোমরে পেঁচাও দড়িটা।’

নড করল মেয়েটা। হাসছে এখনও। উবু হলো দড়ির মাথাটা তুলে নেয়ার জন্য। কোমরে জড়াচ্ছে ওটা, বাইরের সাগরে কী একটা যেন নজর কেড়ে নিল রানার। চাইল ও ক’ফুট দূরের কাঁচহীন জানালা দিয়ে।

সাগরচারী পাখিতে ভরে গেছে আকাশ। হাজারে হাজারে সামুদ্রিক পাখি বিরাট-বিশাল ঝাঁক বেঁধে সর্বোচ্চ গতিতে উড়ে আসছে তীরের দিকে। কোনও কিছুর তাড়া খেয়ে প্রাণ নিয়ে ছুটছে যেন।

পলক ফেলতেও ভুলে গেছে যেন রানা। হিচককের বার্ডস ছবিটার বাস্তব রূপ দেখতে পাচ্ছে যেন চোখের সামনে। এতটাই অবাক হয়েছে যে, দেরি হয়ে গেল প্রতিক্রিয়া হতে।

‘হায়, খোদা!’

নতুন একটা আওয়াজ শোনা গেল ওগুলোর কর্কশ, তীক্ষ্ণ সম্মিলিত চিৎকার ছাপিয়ে। গভীর একটা গুরুগম্ভীর ধ্বনি দ্রুত চড়া হচ্ছে আরও। তাণ্ডব চালানোর আগে জোর সঞ্চয় করছে যেন ঘূর্ণিঝড়।

যদিও আদতে কোনও ঝড় নয় ওটা।

চোখ মিটমিট করল রানা। কীসের থেকে পালাচ্ছে পাখিগুলো, স্বচক্ষে দেখতে পেয়ে বিস্ফারিত হলো চোখ দুটো। শিরশিরে একটা বিজাতীয় শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল শরীরের আনাচে-কানাচে।

সকল অধ্যায়

১. শকওয়েভ – ১
২. শকওয়েভ – ২
৩. শকওয়েভ – ৩
৪. শকওয়েভ – ৪
৫. শকওয়েভ – ৫
৬. শকওয়েভ – ৬
৭. শকওয়েভ – ৭
৮. শকওয়েভ – ৮
৯. শকওয়েভ – ৯
১০. শকওয়েভ – ১০
১১. শকওয়েভ – ১১
১২. শকওয়েভ – ১২
১৩. শকওয়েভ – ১৩
১৪. শকওয়েভ – ১৪
১৫. শকওয়েভ – ১৫
১৬. শকওয়েভ – ১৬
১৭. শকওয়েভ – ১৭
১৮. শকওয়েভ – ১৮
১৯. শকওয়েভ – ১৯
২০. শকওয়েভ – ২০
২১. শকওয়েভ – ২১
২২. শকওয়েভ – ২২
২৩. শকওয়েভ – ২৩
২৪. শকওয়েভ – ২৪
২৫. শকওয়েভ – ২৫
২৬. শকওয়েভ – ২৬
২৭. শকওয়েভ – ২৭
২৮. শকওয়েভ – ২৮
২৯. শকওয়েভ – ২৯
৩০. শকওয়েভ – ৩০
৩১. শকওয়েভ – ৩১
৩২. শকওয়েভ – ৩২
৩৩. শকওয়েভ – ৩৩
৩৪. শকওয়েভ – ৩৪
৩৫. শকওয়েভ – ৩৫
৩৬. শকওয়েভ – ৩৬
৩৭. শকওয়েভ – ৩৭
৩৮. শকওয়েভ – ৩৮
৩৯. শকওয়েভ – ৩৯
৪০. শকওয়েভ – ৪০
৪১. শকওয়েভ – ৪১
৪২. শকওয়েভ – ৪২
৪৩. শকওয়েভ – ৪৩
৪৪. শকওয়েভ – ৪৪
৪৫. শকওয়েভ – ৪৫
৪৬. শকওয়েভ – ৪৬
৪৭. শকওয়েভ – ৪৭
৪৮. শকওয়েভ – ৪৮
৪৯. শকওয়েভ – ৪৯
৫০. শকওয়েভ – ৫০
৫১. শকওয়েভ – ৫১
৫২. শকওয়েভ – ৫২
৫৩. শকওয়েভ – ৫৩
৫৪. শকওয়েভ – ৫৪
৫৫. শকওয়েভ – ৫৫
৫৬. শকওয়েভ – ৫৬
৫৭. শকওয়েভ – ৫৭
৫৮. শকওয়েভ – ৫৮
৫৯. শকওয়েভ – ৫৯
৬০. শকওয়েভ – ৬০
৬১. শকওয়েভ – ৬১
৬২. শকওয়েভ – ৬২
৬৩. শকওয়েভ – ৬৩
৬৪. শকওয়েভ – ৬৪
৬৫. শকওয়েভ – ৬৫
৬৬. শকওয়েভ – ৬৬
৬৭. শকওয়েভ – ৬৭
৬৮. শকওয়েভ – ৬৮
৬৯. শকওয়েভ – ৬৯
৭০. শকওয়েভ – ৭০
৭১. শকওয়েভ – ৭১
৭২. শকওয়েভ – ৭২
৭৩. শকওয়েভ – ৭৩
৭৪. শকওয়েভ – ৭৪
৭৫. শকওয়েভ – ৭৫
৭৬. শকওয়েভ – ৭৬
৭৭. শকওয়েভ – ৭৭
৭৮. শকওয়েভ – ৭৮
৭৯. শকওয়েভ – ৭৯

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন