শকওয়েভ – ৪০

কাজী আনোয়ার হোসেন

চল্লিশ

রাতে গলা পর্যন্ত গেলা সত্ত্বেও পরদিন সকালে কথা রাখল লরি ড্রাইভার। সরাইয়ের সামনে লরি নিয়ে এসে হর্ন বাজিয়ে জানান দিল নিজের উপস্থিতির।

আগেই অবশ্য নিচে নেমে এসেছে রানা-সেলেনা। ব্ল্যাক কফি নামের জীবনীশক্তি পান করতে করতে অপেক্ষা করছিল রিকার্ডোর জন্য।

দেঁতো হাসি আর বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওদেরকে স্বাগত জানাল লোকটা। গমগম আওয়াজে চলতে আরম্ভ করল ডেলিভারি লরি।

দীর্ঘ পথ। বাঁক নিচ্ছে বার বার। মনোরম বার্চ বনের মাঝ দিয়ে উত্তরে চলেছে ওরা কুয়াশা ছাওয়া গিরিপথ ধরে।

ড্রাইভারকে গুস্তাফ ভিকান্দারের ঠিকানাটা দেখাল রানা। বলল, পুরানো এই বন্ধুর সঙ্গে দেখা নেই বহু বছর। সুযোগ যখন পাওয়া গেছে, হাতছাড়া করাটা বোকামি হবে।

‘কবুতরের খোপের মধ্যে থাকে নাকি আপনার দোস্তো?’ এক গাল হেসে জিজ্ঞেস করল ড্রাইভার।

রানা এর মানে জানতে চাইলে বলল, ঠিকানাটা আসলে স্থানীয় পোস্ট অফিসের। দ্বিতীয় লাইনের হ্যাণ্ড ওম কথাটা কেয়ার অফ বোঝাচ্ছে সুইডিশে। হের ভিকান্দারের হয় নিজের কোনও ঠিকানা নেই, নয় তো থাকলেও জানাতে অনিচ্ছুক।

‘সমস্যা নেই,’ হালকা কণ্ঠে বলল ফুর্তিবাজ রিকার্ডো। ‘জায়গামতই নামিয়ে দেব আপনাদের।’ আরও জানাল, পথেই পড়বে পোস্ট অফিসটা।

পিয়েলজেকেইস জাতীয় জঙ্গলের গভীরে জাকউইক গ্রামটা। ছোট্ট একটা দোকান, ছোট্ট এক ক্যাফে আর সুদৃশ্য একটা কাঠের তৈরি ডাকঘর নিয়ে গড়ে উঠেছে। এই পোস্ট অফিসের ঠিকানাতেই চিঠি দিয়েছিল ক্যারেন।

কোবল পাথরের চত্বরে নামিয়ে দিল ওদের লরি চালক। ওটাই গ্রামের কেন্দ্রস্থল। প্রসন্ন মেজাজে গাড়ির জানালা থেকে হাত নেড়ে বিদায় জানাল ‘স্বামী-স্ত্রী’-কে। গর্জন আর ডিজেলের ধোঁয়া ছেড়ে নিজের পথে রওনা হয়ে গেল ডেলিভারি ট্রাক।

দেয়ালে ঝোলানো বড়সড় এক কাঠের ঘড়ির টিক-টিক ছাড়া সম্পূর্ণ নীরব গ্রামীণ পোস্ট অফিস। মৌচাকের মোম আর পালিশের গন্ধ ভাসছে বাতাসে। শুকনোমত এক মাঝবয়সী মহিলাকে দেখা যাচ্ছে পুরানো ধাঁচের কাউন্টারে। ক্যানভাসের একটা ব্যাগ থেকে দক্ষ হাতে মেইল ও অন্যান্য ডকুমেণ্ট বাছাই করে ঢোকাচ্ছে যার যার পোস্টবক্সের খুপরিতে। গলার সঙ্গে ঝুলছে সরু চেইনে আটকানো চশমাটা। বালিরঙা চুলগুলো পিছনে আঁচড়ে খোঁপা করেছে বনরুটির মত।

এগোল ওরা কাউন্টারের দিকে।

চোখ তুলে চাইল ভদ্রমহিলা।

‘তুমিই সামলাও, রানা,’ বলল সেলেনা চাপা কণ্ঠে। ‘কীভাবে এগোব, সে-ব্যাপারে কোনও ধারণা নেই আমার।’

আলাপের শুরুতেই নিশ্চিত হয়ে নিল রানা, ইংরেজি বলতে পারে মহিলা — ভাষাটায় দখল রয়েছে বলে গর্বই প্রকাশ পেল তার কণ্ঠে। ড্রাইভারকে বলা কথাগুলোই বলল

গুস্তাফ ভিকান্দার নামে পুরানো এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। এখানেই থাকে সে। কিন্তু পোস্ট অফিসের ঠিকানাটা ছাড়া আর কিছুই জানা নেই ওদের।

এক্স-রে মেশিনের মত অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে দু’জনকে জরিপ করল পোস্টমিস্ট্রেস। মনখোলা, আন্তরিক চেহারা সুদর্শন যুবকের। কাউন্টারে ঝুঁকে দাঁড়ানো যুবতীর ঠোঁটেও ভারি মিষ্টি হাসি। দুই বিদেশিকে বিশ্বাস করা যায়, ধরে নিয়ে বলল, ‘হপ্তায় একবার করে পোস্ট অফিসে আসেন হের ভিকান্দার। যেখানটায় থাকেন উনি, চিঠিপত্র ডেলিভারি দেয়া খুব মুশকিল কিনা!’

‘লোকালয় থেকে অনেক দূরে নিশ্চয়ই?’ বলল রানা হাসিমুখে। ‘বরাবরই প্রাইভেসির ভক্ত ছিল গুস্তাফ। কাইগুলি বলতে পারেন, কীভাবে দেখা করতে পারি বন্ধুর সাথে?’

মাথা নাড়ল প্রৌঢ়া। ‘সরি। এ ব্যাপারে কিছুই জানা নেই আমার। তবে… এক মিনিট, প্লিজ।’

কিছু একটা খেয়াল হয়েছে যেন ভদ্রমহিলার। ঘুরে দাঁড়িয়ে আঙুল ঢুকিয়ে দিল পিতলের V সাঁটা খোপে। কয়েকটা খাম রয়েছে ওখানে। বের করে এনে পরীক্ষা করল একটা একটা করে। তার পর আবার রেখে দিল ওগুলো আগের জায়গায়। যা খুঁজছিল, পেয়ে গেছে।

চকিত পদক্ষেপে এগোল এবার আধখোলা একটা দরজার দিকে। চেহারায় ইতস্তত ভাব। দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে কাকে যেন কী বলল সুইডিশে।

পুরুষালি একটা গলা গমগম করে উঠল প্রত্যুত্তরে।

কাউন্টারে ফিরে এল প্রৌঢ় মহিলা। চেহারা থেকে দূর হয়েছে অনিশ্চয়তা।

‘কপাল ভালো আপনাদের,’ হেসে বলল রানাকে। ‘চিঠি আছে হের ভিকান্দারের। আমার হাসব্যাণ্ড বললেন, আজ বিকেলেই নাকি নিতে আসার কথা।’

‘ফুলচন্দন পড়ুক আপনার মুখে!’ খুশি খুশি গলায় বলল রানা। ‘বহুত দিন পর দেখা হচ্ছে তা হলে বেল্লিকটার সাথে! একই সাথে ভার্সিটিতে পড়তাম আমরা। বলুন তো, এখনও কি হিপ্পিদের মত চুল-দাড়ি রাখছে ব্যাটা! সবাই আমরা খেপাতাম ওকে এটা নিয়ে।’

থুতনিতে আঙুল চলে গেল মহিলার। গোল হয়ে গেছে ঠোঁট দুটো। ‘দাড়ি? চুল? আরে, না-না!’ হেসে ফেলল ফিক করে। ‘অনেক বদলে গেছেন তা হলে হের ভিকান্দার। উনি… উনি… কী বলে যেন!’ মাথায় আঙুল ঠেকাল ভদ্রমহিলা। ঠোঁটে আসছে না ইংরেজি শব্দটা।

‘বল্ড? টাকলু?’

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, এক্কেবারে! চুলও নেই, দাড়িও নেই। রোমহীন, পাথরের মত মসৃণ।’

‘বে-চা-রা!’ চুকচুক করল রানা। ‘কতই বা বয়স হবে ওর—পঁয়তিরিশ! খুব বেশি হলে চল্লিশই হবে! অথচ এই বয়সেই…’

‘এত কম?’ ধাক্কা খেয়েছে পোস্টমিস্ট্রেস। ‘আমার কাছে তো পঞ্চাশ-টঞ্চাশ লাগে! অবশ্য ল্যাপল্যাণ্ডের আবহাওয়া অকালে বুড়িয়ে দেয় মানুষকে।’

আরও কয়েকটা বাতচিতের পর মহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পোস্ট অফিস ছেড়ে বাইরের তাজা বাতাসে বেরিয়ে এল রানা-সেলেনা।

‘ভালো কাজ দেখিয়েছেন, মিস্টার শার্লক হোমস, অকুণ্ঠ প্রশংসা করল সেলেনা। ‘এবার?’

রাস্তার ওপারের ক্যাফেটা দেখাল রানা। ‘এবার গ্যাট হয়ে বসে টাকলু ভিকান্দারের অপেক্ষায় থাকা।’

ডাকঘরের মতই প্রায় নিঝঝুম কফিহাউসটা। জানালার কাছাকাছি টেবিল পেতে অসুবিধা হলো না। নজর রাখা যাবে উল্টো দিকের পোস্ট অফিসের উপর। সহজে টের পাবে না কেউ বাইরে থেকে।

‘চোখ-কান খোলা রেখো, বলল রানা সেলেনাকে। ‘বসন-ভূষণ সুবিধার হবে না লোকটার। অজপাড়াগাঁয়ে বাস করলে যেমনটা হয় আর কী। যে-কোনও রাস্তায় চলার উপযোগী গাড়ি থাকবে সাথে।’

সমঝদারের মত মাথা নাড়ল সেলেনা। ‘ধরো, এল লোকটা। কী করব আমরা? কলার চেপে ধরব?’

‘হ্যাঁ… ভয় পেয়ে ঝেড়ে দৌড় মারুক ব্যাটা! কে আবার খুঁজতে যাবে তখন?’ মাথা নাড়ল রানা। ‘আমার মনে হয়, টাকডুমটার বাড়ি পর্যন্ত যাওয়াটাই বেটার হবে। বেটার পোস্টমিস্ট্রেস মহিলার কথা শুনে মনে হলো, পড়শিবিহীন একাকী জীবন যাপন করছেন ভিকান্দার সাহেব।’

‘বললেই নিয়ে যাবে আমাদের?’

‘বাধ্য হবে নিতে,’ বলল রানা অর্থপূর্ণ কণ্ঠে।

কফির পট নিয়ে উপস্থিত হলো ওয়েইট্রেস। বাষ্প উঠছে পাত্র থেকে।

পাতলা কফিতে খানিকটা চুমুক দিয়েই মুখ বানাল সেলেনা। ‘ইশ্, রে! এটা কি কফি, নাকি কারবুরেটরে দেয়ার জিনিস!’

‘সব রকম অভিজ্ঞতাই থাকা ভালো না?’

‘রাখো তো! সবার সহ্যক্ষমতা তো আর তোমার মত নয়!’

সাড়ে দশটা নাগাদ পোস্ট অফিসের দরজা দিয়ে বেরোতে দেখা গেল কাউন্টারের মহিলাকে। অসীম ধৈর্যের সঙ্গে দ্বিতীয় পট কফির সদ্ব্যবহার করছে তখন সেলেনা আর রানা।

বাজারের ব্যাগ হাতে দ্রুত পায়ে রাস্তা পেরোল মহিলা। ছোট হয়ে আসছে অপসৃয়মাণ শরীরটা।

‘বুল’স আই,’ বলে উঠল রানা। ‘আশা করা যাক, শিগগিরই ফিরে আসছে না পোস্টমিস্ট্রেস।’

‘বুল’স আই হলো কীভাবে সেটা?’

‘এজন্যে যে—ভিকান্দার এলে বলতে পারছে না যে, ভার্সিটির এক পুরানো বন্ধু খুঁজতে এসেছে তাকে। আমার দুশ্চিন্তা ছিল ওটা নিয়েই।’

আরও কিছুক্ষণ কফি চালানোর পর, বেলা হয়ে এসেছে দেখে লাঞ্চের অর্ডার দিল রানা। গাহকো বলে পরিচিত পাতলা এক ধরনের রুটির সঙ্গে সাদামাটা ঝোল নিল ও। অন্য দিকে, অনেক ভেবেচিন্তে নেয়া সাঁতলানো হরিণের মাংস মুখে তুলেই পস্তাতে আরম্ভ করল সেলেনা।

‘কী খাচ্ছি আমি!’ কেঁদে ফেলবে যেন মেয়েটা।

‘বুঝলাম না।’

‘স্যান্টা ক্লজের হরিণ এটা!’

‘ওহ। দুঃখ কোরো না,’ সান্ত্বনা দিল রানা। ‘শিগগিরই আরেকটা হরিণ খুঁজে নেবে স্যান্টা।’

ডার্ক মিটটা শেষ করবে কি করবে না, সিদ্ধান্ত নেয়ার আর সুযোগ পেল না সেলেনা। তার আগেই দীর্ঘ হুইলবেইসের ভগ্নদশা একখানা ল্যাণ্ড রোভার পিকআপের গর্জন শোনা গেল বাইরের রাস্তায়। শুকনো কাদায় সয়লাব হয়ে আছে যে-কোনও রাস্তায় চলতে সক্ষম ওটার চাকা আর পাশগুলো। গাড়িটার হেডল্যাম্পে তারের জালের আবরণ দেয়া।

ওরা দেখল, পোস্ট অফিস এন্ট্রান্স থেকে গজ কয়েক দূরের সঙ্কীর্ণ রাস্তায় পার্ক করা হলো ল্যাণ্ড রোভারটাকে। ধুলোমলিন জানালা দিয়ে ভালো করে দেখার উপায় নেই ড্রাইভারকে।

‘কী মনে হয়, এটাই আমাদের কাঙ্ক্ষিতজন?’ বলল সেলেনা গলা খাদে নামিয়ে।

মন্তব্য করল না রানা। লক্ষ্য করছে তীক্ষ্ণ নজরে।

একাই এসেছে লোকটা। দরজা খুলে নেমে এল ক্যাব থেকে। অপ্রশস্ত পেভমেন্ট ধরে হেঁটে ঢুকে পড়ল গোস্ট অফিসে। পঞ্চাশের গোড়ার দিকে বয়স। নিরেট কাঠামো। লালচে মুখমণ্ডল। খাকি ট্রাউযার, বুট আর হালকা টাইপের হান্টার’স জ্যাকেট পরনে।

‘রোমহীন, পাথরের মত মসৃণ!’ পোস্টমিস্ট্রেস ভদ্র- মহিলার বলা উপমাটা আওড়াল সেলেনা।

সকল অধ্যায়

১. শকওয়েভ – ১
২. শকওয়েভ – ২
৩. শকওয়েভ – ৩
৪. শকওয়েভ – ৪
৫. শকওয়েভ – ৫
৬. শকওয়েভ – ৬
৭. শকওয়েভ – ৭
৮. শকওয়েভ – ৮
৯. শকওয়েভ – ৯
১০. শকওয়েভ – ১০
১১. শকওয়েভ – ১১
১২. শকওয়েভ – ১২
১৩. শকওয়েভ – ১৩
১৪. শকওয়েভ – ১৪
১৫. শকওয়েভ – ১৫
১৬. শকওয়েভ – ১৬
১৭. শকওয়েভ – ১৭
১৮. শকওয়েভ – ১৮
১৯. শকওয়েভ – ১৯
২০. শকওয়েভ – ২০
২১. শকওয়েভ – ২১
২২. শকওয়েভ – ২২
২৩. শকওয়েভ – ২৩
২৪. শকওয়েভ – ২৪
২৫. শকওয়েভ – ২৫
২৬. শকওয়েভ – ২৬
২৭. শকওয়েভ – ২৭
২৮. শকওয়েভ – ২৮
২৯. শকওয়েভ – ২৯
৩০. শকওয়েভ – ৩০
৩১. শকওয়েভ – ৩১
৩২. শকওয়েভ – ৩২
৩৩. শকওয়েভ – ৩৩
৩৪. শকওয়েভ – ৩৪
৩৫. শকওয়েভ – ৩৫
৩৬. শকওয়েভ – ৩৬
৩৭. শকওয়েভ – ৩৭
৩৮. শকওয়েভ – ৩৮
৩৯. শকওয়েভ – ৩৯
৪০. শকওয়েভ – ৪০
৪১. শকওয়েভ – ৪১
৪২. শকওয়েভ – ৪২
৪৩. শকওয়েভ – ৪৩
৪৪. শকওয়েভ – ৪৪
৪৫. শকওয়েভ – ৪৫
৪৬. শকওয়েভ – ৪৬
৪৭. শকওয়েভ – ৪৭
৪৮. শকওয়েভ – ৪৮
৪৯. শকওয়েভ – ৪৯
৫০. শকওয়েভ – ৫০
৫১. শকওয়েভ – ৫১
৫২. শকওয়েভ – ৫২
৫৩. শকওয়েভ – ৫৩
৫৪. শকওয়েভ – ৫৪
৫৫. শকওয়েভ – ৫৫
৫৬. শকওয়েভ – ৫৬
৫৭. শকওয়েভ – ৫৭
৫৮. শকওয়েভ – ৫৮
৫৯. শকওয়েভ – ৫৯
৬০. শকওয়েভ – ৬০
৬১. শকওয়েভ – ৬১
৬২. শকওয়েভ – ৬২
৬৩. শকওয়েভ – ৬৩
৬৪. শকওয়েভ – ৬৪
৬৫. শকওয়েভ – ৬৫
৬৬. শকওয়েভ – ৬৬
৬৭. শকওয়েভ – ৬৭
৬৮. শকওয়েভ – ৬৮
৬৯. শকওয়েভ – ৬৯
৭০. শকওয়েভ – ৭০
৭১. শকওয়েভ – ৭১
৭২. শকওয়েভ – ৭২
৭৩. শকওয়েভ – ৭৩
৭৪. শকওয়েভ – ৭৪
৭৫. শকওয়েভ – ৭৫
৭৬. শকওয়েভ – ৭৬
৭৭. শকওয়েভ – ৭৭
৭৮. শকওয়েভ – ৭৮
৭৯. শকওয়েভ – ৭৯

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন