শকওয়েভ – ৪

কাজী আনোয়ার হোসেন

চার

চোখের পলক পড়ছে না রানার। সামান্য ফাঁক হয়ে রয়েছে ঠোঁট দুটো। স্তম্ভিত নীরবতা অটুট রইবে যেন অনন্ত কাল।

‘চমকে গেছ, তা-ই না?’ মেয়েটার ইংরেজি উচ্চারণে ক্যানাডিয়ান টান স্পষ্ট।

আরও কয়েকটা সেকেণ্ড পেরিয়ে গেল। মুখে যেন রা সরছে না রানার।

‘কী হলো, ভেতরে আসতে বলবে না?’

এবারে যেন সংবিৎ ফিরে পেল মাসুদ রানা। কিঞ্চিৎ লজ্জিত হলো ও।

লিভিং রুমে নিয়ে এল ডক্টর সেলেনা বার্নহার্টকে।

ক্যানাডিয়ান বায়োলজিস্ট সেলেনা। মেক-আপ ছাড়াই আকর্ষণীয়। চোখ পড়লেই হীরার মত ঝিক করে উঠবে, এমন সৌন্দর্যের অধিকারিণী না হলেও, প্রাণবন্ত চেহারায় রয়েছে অদ্ভুত একটা জ্যোতি। ক্ষুরধার বুদ্ধি মাথায়। হাজার বছরের পুরানো যেন চোখ দুটো। অদ্ভুত সহানুভূতিশীল, স্নিগ্ধ, কমনীয় ভাব মুখে। দোষের মধ্যে—কোনও কিছু নিজের মনমত না হলে, ব্যোম হয়ে যায় খেপে; নিজের আগুনে-লাল চুলগুলোর মত। অনেকটা রানার বান্ধবী-সহকর্মী সোহানার মত। একবার মন স্থির হয়ে গেলে আর তার নড়চড় নেই। এই সেলেনার সঙ্গে ফ্রান্সে এক মিশনে জড়িয়ে গিয়েছিল রানা। আজও স্পষ্ট মনে আছে ওর: প্ৰথম পরিচয়ের দিনই সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছিল ওকে মেয়েটি। তুমুল বেগে ছুটে আসছিল ট্রেন, আর সেই রেললাইনের ওপর আটকে রাখা হয়েছিল রানাকে একটা গাড়ির ভিতর। [রানা ৪৫৭, গুপ্তবিদ্যা দ্রষ্টব্য।]

বেশ কিছু দিন আগের কথা ওসব। শেষ দেখা হয় ওদের ক্যানাডার অটোয়ায়। লিটল ডেণ্টনের মত প্রত্যন্ত এক গাঁয়ে আবারও দেখা হয়ে যাবে ওদের, এটা অন্তত আশা করেনি রানা।

‘কেমন আছ, রানা?’ জানতে চাইল সেলেনা। সোফায় বসেছে ওরা, মুখোমুখি।

‘তুমি এখানে!’ জবাবের ধার দিয়েও গেল না রানা।

‘কেন, আসতে পারি না?’ বলল সেলেনা চোখ নাচিয়ে। ‘তোমার খোঁজেই আসা।’

খেয়াল করল রানা, ঠোঁটে এক টুকরো হাসি টেনে আনলেও অত্যন্ত বিচলিত মনে হচ্ছে সেলেনাকে। বিষণ্ন- কঠিন চেহারায় জানালা দিয়ে চাইছে বার বার নুড়ি বিছানো ড্রাইভওয়ে আর ওপারের রাস্তাটার দিকে।

ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে ফটকের বাইরে পার্ক করা একখানা হলুদ ভক্সল দেখতে পেল রানা।

‘ফ্রান্সে যোগাযোগ করেছিলাম আমি,’ ব্যাখ্যা করল সেলেনা। ‘ওই যে… একটা নাম্বার দিয়েছিলে? বলেছিলে, বিপদে পড়লে যেন যোগাযোগ করি?’

নম্বরটা রানা এজেন্সির প্যারিস শাখাপ্রধানের। দুনিয়ার অনেকগুলো বড় বড় শহরে ব্রাঞ্চ রয়েছে মাসুদ রানার বহু কষ্টে গড়ে তোলা গোয়েন্দা সংস্থাটির। ‘অর্জন ফরহাদ নামে একজন জানাল, কোথায় পাওয়া যেতে পারে তোমাকে। এ-ও বলল, ছুটিতে রয়েছ তুমি। কখন কোন্ দিকে চলে যাবে ঠিক নেই।’

‘ব্যস, ছুটে এসে ধরে ফেলেছ।’ এতক্ষণে যেন থই পেয়েছে রানা। ‘কিন্তু হঠাৎ এই তত্ত্ব-তালাশ কীসের জন্যে? আবার কোনও বিপদ-টিপদ…..

আরেক বার জানালা দিয়ে বাইরেটা দেখে নিয়ে রানার মুখোমুখি হলো সেলেনা।

‘ইচ্ছে করে জড়াইনি, রানা। তবে হ্যাঁ, বড় একটা বিপদেই পড়েছি মনে হচ্ছে। এত দূর থেকে ছুটে এসেছি…’

আচমকা বৈঠকখানার দরজা খুলে যেতেই আঁতকে উঠে এক লাফে দাঁড়িয়ে পড়ল মেয়েটা।

ওর বর্তমান মানসিক অবস্থার একটা আঁচ পেল রানা প্রতিক্রিয়ার ধরন থেকে। ঘন ঘন কলিং বেল চাপছিল কেন, সেটাও বোঝা গেল এখন।

ড্রইং রুমে ঢুকল ডায়ানা। এক অপরিচিতা যুবতীকে দেখে অবাক হয়ে গেছে সে-ও।

‘এই যে, ডায়ানা…’ বলতে বলতে সোফা ছেড়ে উঠল রানা। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। ‘এসো, পরিচয় করিয়ে দিই।’ তাকাল সেলেনার দিকে। ‘ডক্টর সেলেনা বার্নহার্ট, আমার বিশেষ বন্ধু। .আর, সেলেনা, এ হচ্ছে আমার ছোটবেলার বন্ধু। একসঙ্গে পড়তাম আমরা।’

‘ওহ… হাই।’ ভদ্রতাসূচক হাসি ফুটল সেলেনার মুখে। হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে ব্ৰিত।

‘নাইস টু মিট ইউ,’ স্মিত চেহারায় মাথা নাড়ল ডায়ানা। রানার দিকে চেয়ে যোগ করল, ‘কফি চলবে তোমাদের?’ চাইল মেহমানের দিকে।

‘চলবে মানে? দৌড়ে চলবে,’ বলল রানা।

‘নো, থ্যাঙ্কস,’ সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করল সেলেনা।

‘কী বলছ!’ বাস্তবিকই বিস্মিত রানা। ‘রাতদিন পানির মতন কফি গিলত যে, সে বলছে এ কথা!

‘আসলে… কিছু খাওয়ার মুডই নেই এখন!’ বিপন্ন ভাবটা ফিরে এল আবার সেলেনার চেহারায়। আন্তরিক দুঃখভাব নিয়ে চাইল সে ডায়ানার দিকে।

‘ঠিক আছে তা হলে…’ সৌজন্যমূলক হাসি হাসল ডায়ানা। ‘কথা বলো তোমরা। আমি ওপরে যাচ্ছি।’ রানার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কিছু দরকার হলে ডেকো আমাকে।’

‘বিপদ বলতে?’ ডায়ানা বিদায় নেয়ার পর জানতে চাইল রানা।

‘ছায়ার মত অনুসরণ করা হচ্ছে আমাকে!’ বলল সেলেনা সিরিয়াস কণ্ঠে। চকিতে ভয় খেলে গেল দু’চোখে।

‘কে অনুসরণ করছে?’ জিজ্ঞেস করল রানা শান্ত কণ্ঠে।

‘বলতে পারব না। আমি যেটা জানি… লোকগুলো পিছে লেগেছে আমার। সেজন্যেই এসেছি তোমার কাছে। সত্যি বলছি, রানা, ভয় পাচ্ছি রীতিমত।’

দীর্ঘশ্বাস ফেলল রানা। আবারও!?

বিজ্ঞানের বিতর্কিত শাখাপ্রশাখায় গবেষণার ঝোঁক রয়েছে মেয়েটার, যে-কারণে এর আগেও ভুল আর বিপজ্জনক লোকের মনোযোগ টেনে এনেছে নিজের দিকে।

গত বার কী যে কঠিন এক গেরোর মধ্যে পড়েছিল ও আর সেলেনা, ভাবলেই শিউরে ওঠে গা। রাঙার মার দেয়া কাঁঠাল বিচি সাইজের তাবিজের কল্যাণেই বোধ হয় পৈতৃক প্রাণটা রক্ষা হয়েছিল সেবার। মীরপুরের মাজার ঘুরে নিয়ে এসেছিল ওটা রানার রান্নাবান্নার একমাত্র অভিভাবকটি। কোমরে না পরলে নাকি কাজ করে না জিনিসটা, বলেছিল কাঁচুমাচু হয়ে।

সাধে কি বুড়িকে রানার মা বলে খেপায় মোখলেস!

প্রমাদ গুনল রানা। ‘এবারও কি অ্যালকেমি নিয়ে?’

‘না, রানা, অ্যালকেমি নয়।’

‘তা হলে কি খাপছাড়া অন্য কিছু?’

‘খাপছাড়া মানে?’ চোখ গরম করে, নিজের পুরানো রূপটা দেখিয়ে দিল সেলেনা।

‘ওই আর কী! ওটার কারণেই তো গোলমাল পাকিয়েছ, তা-ই না?’

‘আমি কোনও গোলমাল পাকাইনি, রানা!’ তেজ কমল না দৃষ্টির।

‘আচ্ছা, আচ্ছা… ঠিক আছে! খুলে বলো তা হলে, এবারের সমস্যাটা কী নিয়ে।’

‘সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার।’ একটু ঠাণ্ডা হলো সেলেনা। ‘এমনকী আমার সাবজেক্টের মধ্যেও পড়ে না।

‘বলতে চাইছ, নিজের বিষয়ের বাইরেও উঁকিঝুঁকি মারা হচ্ছে আজকাল?’

ও জবাব দেয়ার আগেই ল্যাণ্ডফোন বেজে উঠল উপরতলায়।

অস্পষ্টভাবে শুনতে পেল রানা, রিসিভার তুলে কার সঙ্গে যেন কথা বলছে ডায়ানা।

খুক করে কেশে গলাটা পরিষ্কার করে নিল সেলেনা। বলতে শুরু করল হড়বড় করে।

‘বিষয়টা আমার এক বান্ধবীকে নিয়ে। ক্যারেন ল্যানকাউমে নাম ওর। ফ্রেঞ্চ। মারা গেছে মেয়েটা। খুন করা হয়েছে ওকে প্যারিসে ওরই অ্যাপার্টমেন্টে! পুলিস বলছে, কোনও ধরনের ম্যানিয়াকের কাজ ওটা। ‘লে ব্রিকোল্যুয়ার’ নাম দিয়েছে ওরা ম্যানিয়াকটার।’

‘রিপেয়ারম্যান?’ অনুবাদ করল রানা।

হুম। সিরিয়াল কিলার,’ বলল সেলেনা বিরক্ত স্বরে। ‘প্যারিসের নানান জায়গায় আরও পাঁচজনকে নাকি খুন করেছে বলে খবর। পুলিসের ভাষ্য: ক্যারেন ওর ছয় নম্বর শিকার। চুপিসারে একাকী মহিলাদের বাড়িতে ঢুকে খুনখারাবি চালায় নাকি অমানুষটা।’

‘আস্তে… আস্তে।’ নিজেই এবার বিচলিত হয়ে উঠল রানা। সবটা ব্যাপার ভালো করে বুঝে নিতে চায় ও। ‘রিপেয়ারম্যান বলা হচ্ছে কেন লোকটাকে?’

নিম পাতা চিবানো চেহারা হলো সেলেনার। ‘খুনের ধরনটার জন্যে। …শুনতে চাও? নেইল গান। পাওয়ার টুলস। ছেনি আর হাতুড়ি।’

‘বুঝতে পেরেছি।’ গম্ভীর হলো রানা। ‘যা বলছিলে, বলে যাও…’ ভাবছে, এবার কি তা হলে সাইকোপ্যাথের বিরুদ্ধে টক্কর দিতে হবে ওকে?

‘ক্যারেনকে পাওয়া গেছে… ওহ, গড! ভয়ানক ব্যাপার!’ এক সেকেণ্ডের জন্য চোখ বুজে ফেলল সেলেনা। ‘এক ধরনের জমাট ফেনায় ভর্তি ছিল ওর ফুসফুস… দেয়ালের ফাঁকফোকর বোজাতে রাজমিস্ত্রিরা ব্যবহার করে যেগুলো। শ্বাস বন্ধ হয়ে ভয়ানক কষ্ট পেয়ে মারা গেছে বেচারি!’

অসংখ্য প্রিয় মানুষের হৃদয়বিদারক মৃত্যু দেখতে হয়েছে রানাকে। প্রায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে দেখতে দেখতে। তা-ও সেলেনার বান্ধবীর মৃত্যুদৃশ্যটা কল্পনা করতে গিয়ে শিউরে উঠল ওর বুকের ভিতরটা।

‘চার দিন আগের ঘটনা এটা,’ জানাল সেলেনা। ‘তবে আমি জেনেছি আজকে। ক্যারেনের চিঠি পেয়ে গত রাতে অটোয়া থেকে উড়ে প্যারিসে গিয়েছিলাম ওর সঙ্গে দেখা করতে। গিয়ে শুনি…’ ক্ষোভে, দুঃখে ঝাপসা হয়ে এল দৃষ্টি। থামল আঙুলের পিঠে চোখের কোনা মুছে নিতে।

‘সত্যিই… খারাপ লাগছে শুনে,’ আন্তরিক সমবেদনা জানাল রানা। ‘আশা করি, ধরা পড়বে খুনিটা। আমার যদি কিছু করার থাকে এখানে…’ এ-ও ভাবছে, আসলেই কি কিছু করার রয়েছে ওর?

জোরে জোরে মাথা নাড়ল সেলেনা। ‘কী বলতে চাইছি, ধরতে পারোনি তুমি, রানা! আরও অনেক ব্যাপার আছে এখানে… আরও অনেক কিছু। পুরোটা বললে বুঝবে হয়তো।’

‘সেক্ষেত্রে, চলো, বাইরে কোথাও সারা যাক বাকি আলাপ,’ প্রস্তাব করল রানা। ডায়ানাকে এসব থেকে দূরে রাখতে চাইছে। ‘কোনও পার্ক-টার্ক হলে কেমন হয়?’

‘কোথায় ওটা?’

‘বেশি দূরে না।

রাজি সেলেনা।

ডায়ানাকে বলে এল রানা, বেরোচ্ছে ওরা।

বাইরে এসে, পা চালাল দু’জনে হলুদ ভক্সলের দিকে।

‘তোমাকেই চালাতে হবে, রানা,’ বলল সেলেনা হাঁটতে হাঁটতে। ‘ঘাড় ব্যথা হয়ে গেছে আমার ড্রাইভ করে!’

‘অ্যাট ইয়োর সার্ভিস, ম্যা’ম।’ বলতে বলতে গাড়ির দরজা খুলে ধরল রানা।

সকল অধ্যায়

১. শকওয়েভ – ১
২. শকওয়েভ – ২
৩. শকওয়েভ – ৩
৪. শকওয়েভ – ৪
৫. শকওয়েভ – ৫
৬. শকওয়েভ – ৬
৭. শকওয়েভ – ৭
৮. শকওয়েভ – ৮
৯. শকওয়েভ – ৯
১০. শকওয়েভ – ১০
১১. শকওয়েভ – ১১
১২. শকওয়েভ – ১২
১৩. শকওয়েভ – ১৩
১৪. শকওয়েভ – ১৪
১৫. শকওয়েভ – ১৫
১৬. শকওয়েভ – ১৬
১৭. শকওয়েভ – ১৭
১৮. শকওয়েভ – ১৮
১৯. শকওয়েভ – ১৯
২০. শকওয়েভ – ২০
২১. শকওয়েভ – ২১
২২. শকওয়েভ – ২২
২৩. শকওয়েভ – ২৩
২৪. শকওয়েভ – ২৪
২৫. শকওয়েভ – ২৫
২৬. শকওয়েভ – ২৬
২৭. শকওয়েভ – ২৭
২৮. শকওয়েভ – ২৮
২৯. শকওয়েভ – ২৯
৩০. শকওয়েভ – ৩০
৩১. শকওয়েভ – ৩১
৩২. শকওয়েভ – ৩২
৩৩. শকওয়েভ – ৩৩
৩৪. শকওয়েভ – ৩৪
৩৫. শকওয়েভ – ৩৫
৩৬. শকওয়েভ – ৩৬
৩৭. শকওয়েভ – ৩৭
৩৮. শকওয়েভ – ৩৮
৩৯. শকওয়েভ – ৩৯
৪০. শকওয়েভ – ৪০
৪১. শকওয়েভ – ৪১
৪২. শকওয়েভ – ৪২
৪৩. শকওয়েভ – ৪৩
৪৪. শকওয়েভ – ৪৪
৪৫. শকওয়েভ – ৪৫
৪৬. শকওয়েভ – ৪৬
৪৭. শকওয়েভ – ৪৭
৪৮. শকওয়েভ – ৪৮
৪৯. শকওয়েভ – ৪৯
৫০. শকওয়েভ – ৫০
৫১. শকওয়েভ – ৫১
৫২. শকওয়েভ – ৫২
৫৩. শকওয়েভ – ৫৩
৫৪. শকওয়েভ – ৫৪
৫৫. শকওয়েভ – ৫৫
৫৬. শকওয়েভ – ৫৬
৫৭. শকওয়েভ – ৫৭
৫৮. শকওয়েভ – ৫৮
৫৯. শকওয়েভ – ৫৯
৬০. শকওয়েভ – ৬০
৬১. শকওয়েভ – ৬১
৬২. শকওয়েভ – ৬২
৬৩. শকওয়েভ – ৬৩
৬৪. শকওয়েভ – ৬৪
৬৫. শকওয়েভ – ৬৫
৬৬. শকওয়েভ – ৬৬
৬৭. শকওয়েভ – ৬৭
৬৮. শকওয়েভ – ৬৮
৬৯. শকওয়েভ – ৬৯
৭০. শকওয়েভ – ৭০
৭১. শকওয়েভ – ৭১
৭২. শকওয়েভ – ৭২
৭৩. শকওয়েভ – ৭৩
৭৪. শকওয়েভ – ৭৪
৭৫. শকওয়েভ – ৭৫
৭৬. শকওয়েভ – ৭৬
৭৭. শকওয়েভ – ৭৭
৭৮. শকওয়েভ – ৭৮
৭৯. শকওয়েভ – ৭৯

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন