শকওয়েভ – ১২

কাজী আনোয়ার হোসেন

বারো

নুড়িতে কর্কশ শব্দ তুলে গেট দিয়ে বেরিয়ে এল অত্যাধুনিক অডি।

জরুরি কাজের কথা বলে কিছু দিনের জন্য বিদায় নিতে হয়েছে ডায়ানার কাছ থেকে। গাড়িতে আসতে আসতে ওর ব্যাপারে সবই বলেছে রানা সেলেনাকে।

ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে একজন আসছে এখানে রানা এজেন্সির লণ্ডন শাখা থেকে। ল্যাণ্ডফোনে তাকে কিছু নির্দেশ দিয়ে রেখেছে রানা। ও না ফেরা পর্যন্ত সামলাবে সে এদিকটা।

যথাসম্ভব স্পিড তুলে ছুটছে রানা গাঁয়ের রাস্তায় ধুলোর মেঘ সৃষ্টি করে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বরফের শীতলতা। যেমনটা দেখেছিল সেলেনা বছর কয়েক আগে। এখন ওর মনে হচ্ছে, পুরানো মাসুদ রানাকে ফিরে পেয়েছে আবার।

কাপড়জামা পাল্টে নিয়েছে মেয়েটা। রক ব্যাণ্ডের টি-শার্ট আর কালো জিনস পরেছে এখন। তার উপর চাপিয়েছে বাদামি লেদার জ্যাকেট।

খুব তাড়াতাড়ি লিটল ডেণ্টন ছাড়িয়ে গেল ওরা। কিছুক্ষণ পর যেই না সেলেনা জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল গন্তব্যস্থল সম্বন্ধে, ঠিক তখনই দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল এনশাম লেখা রোডসাইনটা।

গাড়ির গতি কমাল রানা।

বড় নয় শহরটা।

পাথরের বাড়িঘর, ট্র্যাডিশনাল পানশালা আর ছোটখাটো দোকানপাট দেখা যাচ্ছে অপ্রশস্ত রাস্তাটার দু’পাশে।

একটা গির্জার অপরিসর চত্বরে ঢোকাল ও গাড়িটা, একটা ভ্যানের পাশে রেখে বন্ধ করল ইঞ্জিন।

চার্চহাউস দেখে জিজ্ঞাসাচিহ্ন দেখা দিয়েছিল সেলেনার দৃষ্টিতে, সংক্ষেপে বলল ওকে রানা, ‘বাস ধরব।’ ইঙ্গিতে দেখাল রাস্তার ওপারের স্টপটা। লোকজন লাইন দিয়েছে ওখানে, চোখে প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে আগুয়ান ডাবল-ডেকারের দিকে।

বেরিয়ে এল ওরা চোরাই গাড়ি থেকে।

পিছনের সিট থেকে সবুজ ক্যানভাসের পুরানো এক আর্মি ব্যাগ তুলে নিল রানা। ওটার মধ্যেই ঠাঁই পেয়েছে বেরেটা মেশিন কারবাইনটা। একটুও বোঝার উপায় নেই বাইরে থেকে। ট্র্যাভেল হোল্ডঅলটা বের না পর্যন্ত অপেক্ষা করল ও সেলেনার জন্য। তার পর ‘ব্লিপ’ আওয়াজে তালা আটকে দিয়ে ভ্যানের তলায় ছুঁড়ে মারল চাবিটা।

বাসে ওঠার পর একদম পিছনে চলে এল ও মেয়েটাকে নিয়ে। ধুলোমলিন হলেও রিয়ার উইণ্ডো দিয়ে পিছনের রাস্তায় নজর রাখায় সুবিধা। কেউ পিছু নিলে বুঝতে পারবে।

আপাতত ফেউ নেই ওদের পিছনে।

পাশে রাখল রানা আর্মি ব্যাগটা। ব্যাকরেস্টে মাথা রেখে ডুব দিল চিন্তার সাগরে।

চলল গাড়ি অক্সফোর্ডের উদ্দেশে।

পুরো বিশটা মিনিট নীরব রইল ও আঁকাবাঁকা গ্রামীণ রাস্তায়।

সেলেনাও চুপ হয়ে আছে। আজ এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত জানালা দিয়ে দেখছে ও ব্যস্ত শহরটা। ছোট হলেও সরব জায়গাটা।

ধোঁয়াচ্ছন্ন গ্লস্টার গ্রিন স্টেশন থেকে দ্বিতীয় বাস ধরল ওরা। চলল পশ্চিমে। গন্তব্য: জেরিকো। গুমোট গরম, উপচে পড়া ভিড় বাসের ভিতর। নানান মানুষের গায়ের গন্ধ মিলেমিশে একাকার।

ওয়ালটন স্ট্রিটের বাসস্টপে নেমে কিছুটা হাঁটতেই পাওয়া গেল হোটেল। ছোট্ট এক ফালি সযত্নে লালিত বাগান রয়েছে ভিকটোরিয়ান বারান্দাঅলা ছোটখাটো দালানটার সামনে।

‘খিদে পেয়েছে তোমার?’ কিছুক্ষণ পর ভাড়া করা হোটেল কামরায় ঢুকেই সেলেনাকে জিজ্ঞেস করল রানা।

‘তেমন নয়।’ মাথা নাড়ল মেয়েটা।

‘আমারও পায়নি। কিছুক্ষণ জিরিয়ে নাও তা হলে। শিগগিরই হোটেল ছাড়ছি আমরা।

‘প্যারিস চলেছি, তা-ই না?’ শিয়োর হতে চাইল সেলেনা।

‘সন্দেহ রয়েছে এখনও?’ পাল্টা বলল রানা। ‘বাস্তবের এই থ্রিলার কাহিনীর শুরুটা তো ওখানেই। ক্রসওঅর্ড পাজলের সূত্রগুলোর জন্যে ওই জায়গাতেই যেতে হবে।’

‘আমি ভাবছি অন্য কথা। লিটল ডেণ্টনের মত অজপাড়াগাঁয়েই যদি নির্ভুলভাবে আমাদের হদিস বের করে ফেলতে পারে হারামি লোকগুলো, প্যারিস তো কিছুই না ওদের কাছে। নিশ্চয়ই লক্ষ্য রেখেছে প্রতিটা ডেটাবেইসে। ঈশ্বরই জানেন, কী কী তথ্য জোগাড় করেছে ওরা আমাদের ব্যাপারে। আমার তো মনে হয়; চ্যানেলে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই ট্র্যাক করে ফেলবে আমাদের। ওদের নজর এড়ানোর কি কোনও উপায় নেই, রানা? আর…’ ক্যানভাস ব্যাগটার দিকে ইঙ্গিত করল মেয়েটা। ‘সিকিউরিটি ব্যারিয়ার পেরোবে কীভাবে ওটা নিয়ে?’

‘হাজারটা রাস্তা রয়েছে কাস্টমস অফিসারদের চোখ এড়ানোর।’ ওসব নিয়ে ভাবিত নয় রানা।

‘সাঁতরে চ্যানেল পাড়ি দেয়ার কথা ভাবছ না তো?’ সন্দিহান দেখাল সেলেনাকে। ‘আগেই বলে রাখছি, সাঁতার জানি না আমি। নাকি বোট-টোট চুরির প্ল্যান আঁটছ মনে মনে?’

‘উঁহুঁ, ও-দুটোর কোনটাই নয়। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।’ কী যেন চিন্তা করছে রানা। কবজি উল্টে চাইল ওমেগা ব্র্যাণ্ডের ডাইভার’স ওয়াচটার দিকে। তিনটা আঠারো নির্দেশ করছে কাঁটা দুটো।

নিজের নকিয়া সেলফোনটা বের করল পকেট থেকে। দ্রুত একটা নাম্বার চাপল কনট্যাক্ট লিস্ট থেকে।

তিনটে রিং বাজার পর ওপাশ থেকে তোলা হলো ফোন। ‘হ্যালো, কে বলছেন?’ রানার নতুন নাম্বারটা নেই ফ্রান্সের এই রানা এজেন্সি চিফের কাছে।

‘আমি।’ আর কিছু বলার দরকার হলো না।

মানসচক্ষে স্পষ্ট দেখতে পেল রানা টমাস হার্ডির নিঃশব্দ হাসি।

‘হাল্লো, মেট।’

রানার পুরানো দোস্ত প্রাক্তন এই এসবিএস কমাণ্ডো। বেশ কয়েকটা মিশনে একসঙ্গে কাজ করেছে ওরা। সময়ের আগেই চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ফ্রান্সে থিতু হয়েছে হার্ডি, মন দিয়েছিল লোহালক্কড়ের ব্যবসায়। ধরেবেঁধে নিয়ে এসে নরম্যাণ্ডির রানা এজেন্সির চিফ বানিয়ে দিয়েছে ওকে রানা।

‘হাই, টম,’ সংক্ষেপে কুশল সারল ও। ‘ভ্যালোনেসের পুরানো ল্যাণ্ডিং স্ট্রিপটা… কিছু দিনের মধ্যে যাওয়া হয়েছে ওদিকটায়?’

এজেন্সির জুনিয়র এজেন্টদের শুটিং প্র্যাকটিস ও নানান রকম ট্রেইনিঙের জন্য বেশি দিন হয়নি, কেনা হয়েছে পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ডটা। এখনও পুরোপুরি গুছিয়ে উঠতে পারেনি বলে আপাতত চালু করা যায়নি ওটার কাজ।

‘এই তো… গত বিষ্যুদবারই গেছি।’ রানার কণ্ঠের জরুরি ভাবটার সঙ্গে ভালো মতনই পরিচয় রয়েছে টম হার্ডির। ‘কেন, বলো তো!’

‘কী রকম দেখলে, জানাও। মানে, কেউ ঘাঁটি-টাটি গেড়েছে কি না। গুণ্ডা-বদমাশদের কথা বলছি।’

‘কী ব্যাপার, রানা? যেমন ছিল, তেমনই রয়েছে ওটা! কার বাপের সাধ্য আছে—’

‘আরেকটা জিনিস, টম। ক’টা দিনের জন্যে ধার দিতে পারবে শখের অ্যালপিনা-টা?’

‘সেটা কোনও সমস্যা নয়, বন্ধু। কিন্তু—’

‘ধন্যবাদ, টম। পরে শুনো,’ বলেই মুখের উপর কেটে দিল রানা কলটা।

‘অ্যালপিনা কী জিনিস, রানা?’ জিজ্ঞেস করল সেলেনা। ‘বিএমডাব্লিউ সেভেন সিরিজের হাই-পারফর্মেন্স গাড়ি, ‘ বুঝিয়ে দিল রানা।

‘এবার কাকে ফোন করছ?’ ওকে আবারও ফোনটা কানে ঠেকাতে দেখে জানতে চাইল মেয়েটা।

‘নানাশ্বশুর বলতে পারো।’

‘কী?’ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে সেলেনা।

পুরানো কথা মনে পড়ায় মুচকি হাসল রানা।

‘তুমি কিন্তু আমার প্রায় নাত-জামাই হয়ে গেছ!’ বলেছিলেন লুকা ব্রেযনেভ।

বিসিআই চিফের দূর সম্পর্কের বন্ধু তিনি। পশ্চিম ইয়োরোপের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রীয় শক্তি বলা হয় তাঁকে। জাতে রাশান। জন্মেছিলেন জার্মানির রটওয়েইল শহরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চলে আসেন ফ্রান্সে। নব্বইয়ের দশকে হয়ে ওঠেন পৃথিবীর সেরা দশ বড়লোকের একজন। লণ্ডনে রাহাত খানের দেয়া এক পার্টিতে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল রানার। কয়েক বছর পর ব্যবসায়িক এক প্রতিযোগী তাঁকে খুন করাতে চাইলে, লোকটাকে পুলিসে ধরিয়ে দেয়ার জন্য রানা এজেন্সির শরণাপন্ন হয়েছিলেন এই বিলিয়নেয়ার বৃদ্ধ।

তার পর আরও একবার রানার দ্বারস্থ হন অপহৃত নাতনীকে উদ্ধারের জন্য। [রানা ৪৬২, এক্স এজেন্ট দ্রষ্টব্য।]

‘রানা, মাই বয়!’. কলারের পরিচয় পেয়ে স্নেহ উপচে পড়ল বৃদ্ধের কণ্ঠে।

‘কেমন আছেন, মিস্টার ব্রেনেভ?’

‘দু’-দু’বার চিরকৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করলে আমাকে; এর পর ভালো না থেকে পারা যায়?’ পরিষ্কার আন্তরিকতা টের পাওয়া গেল লুকা ব্রেযনেভের কথায়। ‘তুমি কেমন আছ, রানা?’

‘আছি।’ কুশল বিনিময়ের পর আসল কথাটা কীভাবে পাড়বে, ভাবতে গিয়ে অস্বস্তি হচ্ছে রানার। ‘ইউনা আর ওর বাবা-মা…

‘ভালো আছে ওরাও। কথা বলবে ইউনার সাথে?’

‘আপাতত নয়। আ… একটা উপকার করতে পারবেন, মিস্টার ব্রেনেভ?’

‘কৃতার্থ হয়ে যাব!’ একটু অবাক হয়েছেন বিলিয়নেয়ার। ‘কোনও বারই তো সে-সুযোগ দাওনি তুমি আমাকে! একবার শুধু মুখ ফুটে বলো…’ এমনভাবে বলছেন বৃদ্ধ, আলাদিনের চেরাগের দৈত্য যেন তিনি; চাওয়া মাত্রই পূরণ হবে ইচ্ছা। খুব একটা ভুল নয় অবশ্য কথাটা।

‘ছোটখাটো একটা প্লেন ধার দিতে পারেন ক’দিনের জন্যে?’ খুব সঙ্কোচ নিয়ে চাহিদা জানাল রানা। ব্রেযনেভ করপোরেশনের সিইও হিসাবে সিইও হিসাবে ইয়োরোপের বৃহত্তম করপোরেট বিমানবহর থেকে যে-কোনও আকাশযান বেছে নেয়ার সামর্থ্য রাখেন লুকা ব্রেযনেভ।

‘আর কিছু?’

‘এটুকু করলেই ধন্য হয়ে যাব, মিস্টার ব্রেনেভ।’

‘কোথায় পাঠাতে হবে?’

জানাল রানা।

‘কোনও সমস্যা নেই। পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে প্লেন।’

সকল অধ্যায়

১. শকওয়েভ – ১
২. শকওয়েভ – ২
৩. শকওয়েভ – ৩
৪. শকওয়েভ – ৪
৫. শকওয়েভ – ৫
৬. শকওয়েভ – ৬
৭. শকওয়েভ – ৭
৮. শকওয়েভ – ৮
৯. শকওয়েভ – ৯
১০. শকওয়েভ – ১০
১১. শকওয়েভ – ১১
১২. শকওয়েভ – ১২
১৩. শকওয়েভ – ১৩
১৪. শকওয়েভ – ১৪
১৫. শকওয়েভ – ১৫
১৬. শকওয়েভ – ১৬
১৭. শকওয়েভ – ১৭
১৮. শকওয়েভ – ১৮
১৯. শকওয়েভ – ১৯
২০. শকওয়েভ – ২০
২১. শকওয়েভ – ২১
২২. শকওয়েভ – ২২
২৩. শকওয়েভ – ২৩
২৪. শকওয়েভ – ২৪
২৫. শকওয়েভ – ২৫
২৬. শকওয়েভ – ২৬
২৭. শকওয়েভ – ২৭
২৮. শকওয়েভ – ২৮
২৯. শকওয়েভ – ২৯
৩০. শকওয়েভ – ৩০
৩১. শকওয়েভ – ৩১
৩২. শকওয়েভ – ৩২
৩৩. শকওয়েভ – ৩৩
৩৪. শকওয়েভ – ৩৪
৩৫. শকওয়েভ – ৩৫
৩৬. শকওয়েভ – ৩৬
৩৭. শকওয়েভ – ৩৭
৩৮. শকওয়েভ – ৩৮
৩৯. শকওয়েভ – ৩৯
৪০. শকওয়েভ – ৪০
৪১. শকওয়েভ – ৪১
৪২. শকওয়েভ – ৪২
৪৩. শকওয়েভ – ৪৩
৪৪. শকওয়েভ – ৪৪
৪৫. শকওয়েভ – ৪৫
৪৬. শকওয়েভ – ৪৬
৪৭. শকওয়েভ – ৪৭
৪৮. শকওয়েভ – ৪৮
৪৯. শকওয়েভ – ৪৯
৫০. শকওয়েভ – ৫০
৫১. শকওয়েভ – ৫১
৫২. শকওয়েভ – ৫২
৫৩. শকওয়েভ – ৫৩
৫৪. শকওয়েভ – ৫৪
৫৫. শকওয়েভ – ৫৫
৫৬. শকওয়েভ – ৫৬
৫৭. শকওয়েভ – ৫৭
৫৮. শকওয়েভ – ৫৮
৫৯. শকওয়েভ – ৫৯
৬০. শকওয়েভ – ৬০
৬১. শকওয়েভ – ৬১
৬২. শকওয়েভ – ৬২
৬৩. শকওয়েভ – ৬৩
৬৪. শকওয়েভ – ৬৪
৬৫. শকওয়েভ – ৬৫
৬৬. শকওয়েভ – ৬৬
৬৭. শকওয়েভ – ৬৭
৬৮. শকওয়েভ – ৬৮
৬৯. শকওয়েভ – ৬৯
৭০. শকওয়েভ – ৭০
৭১. শকওয়েভ – ৭১
৭২. শকওয়েভ – ৭২
৭৩. শকওয়েভ – ৭৩
৭৪. শকওয়েভ – ৭৪
৭৫. শকওয়েভ – ৭৫
৭৬. শকওয়েভ – ৭৬
৭৭. শকওয়েভ – ৭৭
৭৮. শকওয়েভ – ৭৮
৭৯. শকওয়েভ – ৭৯

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন