শকওয়েভ – ২০

কাজী আনোয়ার হোসেন

বিশ

টেনে খোলার উপায় নেই। প্রায় নিরেট ধাতব রূপ নিয়েছে হুড়কোয় পড়া পুরু মরচে।

‘কিছু একটা দিয়ে বাড়ি মারতে হবে,’ বলল রানা বার কয়েক নিষ্ফল চেষ্টার পর।

ক’পা সরে, ব্রোঞ্জের একখানা তাগড়াই ক্যাণ্ডলস্টিক তুলে নিল সেলেনা। রানার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘এটা দিয়ে ট্রাই করে দেখতে পারো!’

মোমদানির ভারি তলাটা দিয়ে ঘা মারতে যাচ্ছে, এ সময় রানার নজর কাড়ল কিছু একটা।

ভালো করে দেখার জন্য আলো ফেলল ম্যাগলাইটের। বহু দিনের পুরানো, মরচে ধরা বোল্ট নবে ঘষটানোর তাজা চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। বেরিয়ে পড়েছে নিচের ধাতু।

‘আমাদের আগেই ঘুরে গেছে কেউ এখান থেকে,’ মন্তব্য করল রানা। ‘খুব বেশি দিন আগে নয় সেটা।’

ভারি ক্যাণ্ডলস্টিকের জোরালো চারটে আঘাতের কাছে হার মানতে হলো অনড় ছিটকিনিকে।

মস্ত দরজাটায় দুই হাতে ঠেলা দিল রানা। ‘কড়ুডু’ আওয়াজ তুলে কয়েক ইঞ্চি ফাঁক হলো কবাট।

ছ্যাৎ করে উঠেছে ওর বুকের ভিতরটা। কানের পাশে বোম ফুটেছে যেন, এমনই চড়া লেগেছে শব্দটা।

স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। ধুপ, ধাপ, ধুপ, ধাপ হার্টবিট চলছে পাগলা ছন্দে; কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না।

কালিগোলা অন্ধকার ভিতরে। ঠাণ্ডা একটা বিটকেল, বোটকা গন্ধ আসছে খোলা দরজা দিয়ে।

‘অশরীরীগুলোকে মুক্ত করে দিলে নাকি, রানা? সেলেনার কণ্ঠে অস্বস্তি।

আলো ফেলল রানা সমাধির ভিতরে।

আরও পাথরের সিঁড়ি চলে গেছে আরও নিচে। মাকড়সার পুরু জাল ছেঁড়ার চিহ্ন দরজার ভিতরদিকে। সম্প্রতি কেউ যে এসেছিল এখানে, ধারণাটা পোক্ত হলো আরও।

সিঁড়ির ধাপে ধুলোর উপর জুতোর যে-ছাপ পড়েছে, কোনও পুরুষের নয় ওগুলো। ক্যারেন ল্যানকাউমের ওয়ার্ডরোবে দেখা জুতোগুলোর কথা মনে পড়ল রানার।

নেমে এল ও সিঁড়িমুখে। আলো বোলাচ্ছে চতুর্দিকে।

মারবেলের ধুলো মাখা পেডেস্টালের উপর জলজ্যান্ত ক্রুশবিদ্ধ যিশুমূর্তি। কুঁকড়ে যাওয়া শুকনো ফুলে ভরা পেল্লায় ফ্লাওয়ারভাস ওটার দু’পাশে। উপরঅলাই বলতে পারবেন, কোন্ আমলে রাখা হয়েছিল ফুলগুলো!

যে-ই এসে থাকুক এখানে, বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্য ছিল না তার। তেমনটা হলে, অত পুরানো হতো না ফুলগুলো।

‘ঠিকই ধরেছ তুমি, রানা।’ পাতাল-কবরখানার পরিবেশের কারণে ফিসফিস করছে সেলেনা। ‘ক্যারেন মনে হচ্ছে এসেছিল এখানে।

তাপমাত্রা কম বলে নয়, চামড়ায় শিরশিরানি তোলা ঠাণ্ডাটা কেন যেন মনে হচ্ছে মৃত্যুর শীতল পরশ। সমাধিকক্ষের বহু পুরানো বাসিন্দা এই শীতলতা। তিন শতাব্দী আগে যখন মিশরের ফারাওদের মত পরিবারের মৃত সদস্যদের সমাধিস্থ করত এখানে ইলিয়েলরা, সেই তখন থেকে। দেয়ালের কুলুঙ্গির মধ্যে প্রমাণ আকারের পাথরের কফিনে শুইয়ে দেয়া হতো মরদেহগুলো। পরবর্তী সময়ে মর্মরফলকের ওপাশে সিল করা শুরু হয় কফিন। আর নয় তো নাম আর জন্ম-মৃত্যুর সাল-তারিখ খোদাই করে ক্রেম্যাটোরিয়ামে পোড়ানোর পর দেহাবশিষ্ট, মানে ছাইটুকু, রাখা হতো সুসজ্জিত শবাধারে।

পাওয়ার কমতে শুরু করেছে ম্যাগলাইটের ব্যাটারির। বৈদ্যুতিক বাতির কোনও ব্যবস্থা রয়েছে বলে মনে হয় না এখানে। হলদে আলোয় জুতোর ছাপগুলো কোন্ দিকে গেছে, খেয়াল করল রানা। মেঝের টালিপাথরের ধুলোয় কোথাও কোথাও পরস্পরকে ছেদ করেছে ছাপগুলো। কিছু যেন খুঁজছিল মেয়েটা—সে-ই যদি পায়ের মালিক হয়ে থাকে।

কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক দেখার পর দরজার আড়াআড়ি এগোল ওরা কুলুঙ্গির মধ্যে পাথরের একটা কফিনের দিকে। হাঁটু গেড়ে বসার চিহ্ন চোখে পড়ছে কফিনটার পাশে।

কমে আসা আলো ফেলল রানা ওটার উপর। পাথরের পুরু ঢাকনার চারপাশে দেখতে পেল আঁচড়ের দাগ। ক্রো- বার-জাতীয় চোখা কোনও যন্ত্রের সাহায্যে খোলার চেষ্টা করা হয়েছে ওটা।

‘তারিখটা দেখো!’ রানার প্রায় গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেলেনা। সম্ভবত ভয় পেয়েছে।

পড়ল রানা পাথর কুঁদে লেখা হরফগুলো:

লুই দে ইলিয়েল
জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৭৫৫ ॥ মৃত্যু: ৪ নভেম্বর, ১৭৯২

‘শতাব্দী বাদ দিয়ে সংখ্যায় পরিণত করো তারিখটাকে!’ আবারও উত্তেজিত হয়ে পড়েছে সেলেনা। ‘কী পাচ্ছ, রানা? এক-আট-দুই, পাঁচ-পাঁচ; অন্যটায় চার-এগারো, নয়-দুই। বলেছিলাম না? এই জায়গার কথাই বলা হয়েছে চিঠিতে!’

‘ঢাকনাটা খুলে বন্ধ করা হয়েছে আবার…’ একটু যেন অন্যমনস্ক রানা। খাপে খাপে বসেনি ওটা, তেরছা হয়ে রয়েছে খানিকটা।

‘ক্যারেন কি সরিয়েছিল এটা?’

‘সন্দেহ হচ্ছে। ভালো মানের কোনও ক্রো-বার এবং কায়দা-কসরত ছাড়া সম্ভব নয় সেটা। স্বাস্থ্য কেমন ছিল ক্যারেনের?’

‘আমার মতই।’

‘সেক্ষেত্রে, কয়েক ইঞ্চির বেশি ফাঁক করতে পারত না চাড় দিয়ে।’

‘এরকম কিছু হলে?’ উবু হলো সেলেনা। লোহার একখানা রেকিং বার তুলে নিল ছায়া থেকে। ফুট তিনেকের জিনিসটা কাঁটাচামচের আকার নিয়েছে এক প্রান্তে, অন্য প্রান্ত বাটালির মত। বারটা তুলে দিল ও রানার হাতে। ‘তাড়াহুড়োয় ফেলে গেছে মনে হয়।’

‘নাইস ফাইণ্ডিং,’ প্রশংসা করতে কার্পণ্য করল না রানা। ‘এখন জানতে হবে, দু’শ’ বছরের পুরানো শবাধার খোলার প্রয়োজন পড়ল কেন মেয়েটার। আর সেটা জানার একটাই মাত্র উপায়…’

‘বাস্তব এই চলচ্চিত্রে কর-লুটেরার পার্টে অভিনয় করা,’ শেষ করে দিল সেলেনা।

বলে সারতে পারল না, মলিন থেকে মলিনতর হতে হতে নিভে গেল ম্যাগলাইট।

সমস্যা যেখানে আছে, সেখানে সমাধানও রয়েছে। পকেটে হাত ঢুকিয়ে যিপো লাইটারটা বের করে আনল রানা। কমলা দীপ্তি সৃষ্টি করল ওটার মিটমিটে শিখা।

লণ্ডনের এক শুভাকাঙ্ক্ষীর উপহার জিনিসটা। এক সময় সিনিয়র সার্ভিস ফুঁকত রানা স্টাইল করে। এর পর বেশ কয়েক বারই বদলেছে ব্র্যাণ্ড। শেষমেশ বেশ অনেক দিন হলো, ছেড়ে দিয়েছে ধূমপান। উপহারদাতার অজানা ছিল সেটা।

রানা ভেবেছিল, এজেন্সির কাউকে দিয়ে দেবে লাইটারটা। কিন্তু ওর দেখাদেখি বিড়ি ত্যাগ করেছে প্রতিষ্ঠানের নিষ্ঠাবান ধোঁয়াখোরগুলোও। অন্তরে-বাইরে গুরু মানে ওরা রানাকে, আপাদমস্তক হতে চায় ওর মতন। অতএব, রানার কাছেই রয়ে গেছে উপহারটা। কবরের অন্ধকারে কাজে লাগছে এখন।

‘ধরো তো এটা!’ সেলেনার হাতে ধরিয়ে দিল ও যিপোটা। রেকিং বারের বাটালি-সদৃশ প্রান্তটা ঢাকনার কোনায় ঢুকিয়ে চাড় দিল।

বার কয়েক বল প্রয়োগ করার পর লোহার বার ঢোকানোর মত ফাঁক হলো ভারি ঢাকনা। একইভাবে এবার পাশে সরানো যাবে ওটা। কাজটায় সফল হতে ক্যারেনকে নির্ঘাত শরীরের পুরো ওজন ব্যবহার করতে হয়েছে।

পাথরের কফিনে ঘষটে ঘষটে ইঞ্চি ইঞ্চি করে সরতে লাগল আলগা ডালা। ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হতেই জোরালো আওয়াজে মেঝেতে পড়ে চৌচির হলো।

‘সরি, ইলিয়েল দাদু,’ ইলিয়েলদের পূর্বপুরুষের কাছে বিড়বিড় করে দুঃখপ্রকাশ করল রানা।

খোলা কফিনে লাইটার ধরল সেলেনা। অপর্যাপ্ত আলোয় চোখে পড়ল সাদাটে হাড়গোড় আর শতচ্ছিন্ন শবাচ্ছাদন। শূন্য অক্ষিকোটর নিয়ে ওদের দিকে চেয়ে দাঁত বের করে হাসছে যেন শতাব্দীপ্রাচীন মানবকঙ্কাল।

‘আরিব্বাপ, রে!’ কেঁপে উঠল মেয়েটা।

‘হাসালে দেখছি!’ সত্যি সত্যিই হাসছে রানা। ‘সামান্য একটা কঙ্কাল দেখে ভয় পেয়ে গেলে?’

‘সেটা নয়, রানা। খুলিটা মনে হচ্ছে… ধড় থেকে… আ- আলাদা!’

‘এর কারণ গিলোটিন।’ রেকিং বারটা নামিয়ে রাখল রানা। ‘ফরাসি অভিজাতদের জন্যে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল সময়টা। লুই দে ইলিয়েলই একমাত্র ব্যক্তি নয়, ফরাসি বিপ্লবের বলি হতে হয়েছে যাকে যুবক বয়সে।’ চোখ রাখল ও কফিনের সূচিভেদ্য অন্ধকারে। ‘আলোটা আরেকটু কাছে আনো তো!’

প্রাচীন কফিনের এবড়োখেবড়ো পাথুরে কিনারায় শরীর ঠেকিয়ে ভিতরটা হাতড়াতে আরম্ভ করল ও। মুণ্ডু কাটা কঙ্কালের তলায় ঢুকিয়ে দিল হাতটা। মসৃণ হাড় আর ফিনফিনে কাপড় ছাড়াও আরও কিছু একটার পরশ পেল আঙুলগুলো, যেটা সতেরো শ’ বিরানব্বই সালে পুরে দেয়া হয়নি কফিনে। নরম পলিথিন।

বের করে আনল রানা জিনিসটা। প্লাসটিকের অস্বচ্ছ ব্যাগটা টেপ দিয়ে সিল করা। খুলে ফেলল সিল।

ব্যাগের ভিতর থেকে বেরোনো কমপিউটার হার্ড ড্রাইভটা দেখাল ও সেলেনাকে। ‘ইলিয়েল দাদুর জিনিস বলে তো মনে হচ্ছে না!’

‘গ্রেট ফাইণ্ডিং!’ চঞ্চল হয়ে উঠেছে মেয়েটার চোখের তারা। ‘আর কিছু নেই, রানা?’

আছে। আট ইঞ্চির ধাতব জিনিসটা আয়তাকার। হাতুড়ির মত দেখতে ওটার একটা পাশ। অন্য প্রান্তে খুদে সব বাটন, সুইচ আর এলইডি-র গুচ্ছ।

‘কোনও ধরনের টুল বা মাপযন্ত্র বোধ হয়,’ অনুমান করল রানা।

‘দাও তো আমাকে!’

লাইটারটা রানার হাতে ধরিয়ে দিয়ে জিনিসটা উল্টেপাল্টে পরখ করতে লাগল সেলেনা।

স্পর্শ করেই অনুভব করল রানা, অস্বস্তিকর রকমের গরম হয়ে উঠেছে যিপোর স্টিলের কেস। আর কতক্ষণ আলো বিলাবে ওটা, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।

‘কী ওটা?’ জানতে চাইল অসহিষ্ণু সুরে।

‘এক্সপার্ট নই,’ স্বগতোক্তির সুরে বলল সেলেনা। ‘তবে যতটুকু বুঝতে পারছি… টেসলা অসিলেটরের আপডেটেড ভার্শন এটা।’

‘যে-যন্ত্রটার কথা বলেছিলে আমাকে?’ একটু অবাক হয়েছে রানা। ‘কোথায় পেল এ-জিনিস?’

‘গুড কোশ্চেন। আমার উত্তর হলো: নিজেই বানিয়ে নিয়েছে। এমন কিছু কঠিন নয় বানানো। বেসিক কিছু টেকনিকাল স্কিল থাকলেই যথেষ্ট। পার্থক্য শুধু, ক্যারেনের যন্ত্রটা ইলেকট্রো-মেকানিকাল, যেখানে অরিজিনাল টেসলা ডিভাইস ছিল বাষ্পচালিত। তবে আমি শিয়োর, ওই মেশিনেরই রেপ্লিকা এটা।’ হঠাৎ হতবিহ্বল হয়ে পড়ল মেয়েটা। ‘ওহ, রানা, যদি ভুল হতো আমার ধারণা! কিন্তু ঈশ্বর জানেন, ভুল করিনি আমি!’

‘কবরে নেমেছিল তোমার বান্ধবী, এতে কোনও সন্দেহ নেই। টাটকা ছাপগুলো থেকে অনুমান করা যায়, হপ্তা খানেকের বেশি আগে নয় সেটা। আর এসেছিল সম্ভবত একাই। এ-ও ধরে নিতে পারি, সেসময় বাড়ি ছিল না ওর প্রাক্তন সুইটহার্ট। যখন ওদের সদ্ভাব ছিল, নিশ্চয়ই পুরো প্রপার্টিটা ঘুরিয়ে দেখিয়ে থাকবে ওকে গ্যাসপার। যখন বুঝতে পারল, বিপদে রয়েছে ও, এমন জায়গায় লুকিয়ে ফেলল জিনিসটা, যেখানে খোঁজার কথা কল্পনাও করবে না কেউ। এর পর চিঠির মাধ্যমে কোডেড ইনফর্মেশন পাঠাল তোমাকে আর গুস্তাফ ভিকান্দারকে।’

‘সেফহাউসে ফিরে চেক করতে হবে হার্ড ড্রাইভটা। আমাকে দেখাতে চেয়েছিল এটা ক্যারেন। নইলে রাখত না এখানে।’

‘কপাল নেহায়েত খারাপ না হলে দারুণ কিছু তথ্য পেয়ে যাব আশা করছি এ থেকে।’ নিজের ব্যাগে ভরল রানা হার্ড ড্রাইভটা।

কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল মেয়েটা, অকস্মাৎ কানে তালা লাগানো আওয়াজে কেঁপে উঠল সমাধিপ্রকোষ্ঠের অভ্যন্তর।

চরকির মত ঘুরে দাঁড়াল ওরা। রীতিমত হকচকিয়ে গেছে।

আটকে গেছে লোহার প্রকাণ্ড দরজা!

মানুষই করেছে এ কাজ! ঝোড়ো হাওয়ার পক্ষে সম্ভব নয়, মস্ত ওই কবাট নাড়ায়।

বন্দি করা হয়েছে ওদের!

অন্ধকার ভেদ করে এন্ট্রান্সের দিকে ছুটে গেল রানা জ্বলন্ত লাইটার হাতে। ধুপধাপ কয়েক লাফে সিঁড়ি ডিঙিয়ে ঠেলা দিল পাল্লায়।

দেরি হয়ে গেছে অনেক। ঠন… ঠন… ঠন… ঠন—ঘা মেরে মেরে হুড়কো লাগানোর আওয়াজ শোনা গেল অন্য পাশে।

ঠাণ্ডা লোহায় কান চেপে ধরল রানা। পায়ের শব্দ সরে যাচ্ছে দূরে।

থাবা মারল ও দরজায়। আব্রাম্স্‌ মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্কের গায়ে পড়ল যেন চাপড়গুলো। বেরোনোর রাস্তা বন্ধ!

‘রানা!’ আঁধার চিরল সেলেনার সন্ত্রস্ত চিৎকার। দৌড়ে আবার নিচে নেমে আসতেই ওকে জাপটে ধরল সেলেনা। ‘কে ছিল, রানা? কে ছিল ওপরে?’

রানার চোয়ালে কাঠিন্য। ‘এমন কেউ, যে আমাদের অনাহারে মারতে চায় এখানে! …মাথা ঠাণ্ডা রাখো, সেলেনা। বেরিয়ে আমরা যাবই!’

তপ্ত ধাতু আঙুলে ছ্যাঁকা দিতেই কুঁচকে ফেলল মুখটা। ছোট হয়ে এসেছে লাইটারের শিখা। শিগগিরই জ্বালানি হারাচ্ছে আলোর একমাত্র উৎস।

‘গন্ধ পাচ্ছ, রানা?’ নাক টেনে টেনে বাতাস শুঁকছে মেয়েটা।

‘কীসের গন্ধ?’

‘পুড়ছে যেন কিছু!’

এবার রানাও পেল গন্ধটা।

না, চামড়াপোড়া গন্ধ নয় ওটা। গন্ধটা আসছে অন্য কোথাও থেকে!

বিড়বিড় করে অদৃষ্টকে একটা বাজে গাল দিয়েই ছুটল ও আবার সিঁড়ির দিকে। উপরে পৌঁছে উঁচু করে ধরল মৃতপ্রায় শিখাটা।

যা ভয় করছিল, তা-ই। চুইয়ে চুইয়ে ধোঁয়া ঢুকছে দরজার কিনারা আর নিচে দিয়ে! তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে অ্যাসিডের কুবাস ও চড়চড় আওয়াজ। কবাটের গায়ে হাত ছুঁইয়ে অনুভব করল রানা, উত্তপ্ত হয়ে উঠছে লোহার দরজা।

যে-লোক কয়েদ করেছে ওদের, শতাব্দী-পুরানো লাশগুলোর মাঝে না খাইয়ে মারার মতলব তার নয়!

আগুনে পুড়ছে ঈশ্বরের ঘর!

সকল অধ্যায়

১. শকওয়েভ – ১
২. শকওয়েভ – ২
৩. শকওয়েভ – ৩
৪. শকওয়েভ – ৪
৫. শকওয়েভ – ৫
৬. শকওয়েভ – ৬
৭. শকওয়েভ – ৭
৮. শকওয়েভ – ৮
৯. শকওয়েভ – ৯
১০. শকওয়েভ – ১০
১১. শকওয়েভ – ১১
১২. শকওয়েভ – ১২
১৩. শকওয়েভ – ১৩
১৪. শকওয়েভ – ১৪
১৫. শকওয়েভ – ১৫
১৬. শকওয়েভ – ১৬
১৭. শকওয়েভ – ১৭
১৮. শকওয়েভ – ১৮
১৯. শকওয়েভ – ১৯
২০. শকওয়েভ – ২০
২১. শকওয়েভ – ২১
২২. শকওয়েভ – ২২
২৩. শকওয়েভ – ২৩
২৪. শকওয়েভ – ২৪
২৫. শকওয়েভ – ২৫
২৬. শকওয়েভ – ২৬
২৭. শকওয়েভ – ২৭
২৮. শকওয়েভ – ২৮
২৯. শকওয়েভ – ২৯
৩০. শকওয়েভ – ৩০
৩১. শকওয়েভ – ৩১
৩২. শকওয়েভ – ৩২
৩৩. শকওয়েভ – ৩৩
৩৪. শকওয়েভ – ৩৪
৩৫. শকওয়েভ – ৩৫
৩৬. শকওয়েভ – ৩৬
৩৭. শকওয়েভ – ৩৭
৩৮. শকওয়েভ – ৩৮
৩৯. শকওয়েভ – ৩৯
৪০. শকওয়েভ – ৪০
৪১. শকওয়েভ – ৪১
৪২. শকওয়েভ – ৪২
৪৩. শকওয়েভ – ৪৩
৪৪. শকওয়েভ – ৪৪
৪৫. শকওয়েভ – ৪৫
৪৬. শকওয়েভ – ৪৬
৪৭. শকওয়েভ – ৪৭
৪৮. শকওয়েভ – ৪৮
৪৯. শকওয়েভ – ৪৯
৫০. শকওয়েভ – ৫০
৫১. শকওয়েভ – ৫১
৫২. শকওয়েভ – ৫২
৫৩. শকওয়েভ – ৫৩
৫৪. শকওয়েভ – ৫৪
৫৫. শকওয়েভ – ৫৫
৫৬. শকওয়েভ – ৫৬
৫৭. শকওয়েভ – ৫৭
৫৮. শকওয়েভ – ৫৮
৫৯. শকওয়েভ – ৫৯
৬০. শকওয়েভ – ৬০
৬১. শকওয়েভ – ৬১
৬২. শকওয়েভ – ৬২
৬৩. শকওয়েভ – ৬৩
৬৪. শকওয়েভ – ৬৪
৬৫. শকওয়েভ – ৬৫
৬৬. শকওয়েভ – ৬৬
৬৭. শকওয়েভ – ৬৭
৬৮. শকওয়েভ – ৬৮
৬৯. শকওয়েভ – ৬৯
৭০. শকওয়েভ – ৭০
৭১. শকওয়েভ – ৭১
৭২. শকওয়েভ – ৭২
৭৩. শকওয়েভ – ৭৩
৭৪. শকওয়েভ – ৭৪
৭৫. শকওয়েভ – ৭৫
৭৬. শকওয়েভ – ৭৬
৭৭. শকওয়েভ – ৭৭
৭৮. শকওয়েভ – ৭৮
৭৯. শকওয়েভ – ৭৯

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন