শকওয়েভ – ৪৩

কাজী আনোয়ার হোসেন

তেতাল্লিশ

ভুতুড়ে নীরবতা নেমে এসেছে কামরায়। ঘাড় ঘুরিয়ে রানার দিকে চাইল সেলেনা, আবার তাকাল গুস্তাফের দিকে।

গম্ভীর চেহারায় নভ করল সাংবাদিক।

‘জেনে-বুঝেই করা হয়েছে কাজটা, টেসলার ডিজাইন মেনে নির্মিত অসিলেটর দিয়ে। তফাত শুধু: পরিমার্জিত, আধুনিক সংস্করণ ব্যবহার করা হয়েছে এখানে।’

‘শুনলে!’ বুনো উল্লাস নিয়ে রানার উদ্দেশে চেয়ে বলল সেলেনা। ‘বলেছিলাম না তোমাকে? আগাগোড়াই এর পিছনে ছিল পাজির পা-ঝাড়া আমেরিকান সরকার।

রানার কিছু বলার নেই।

দ্ব্যর্থবোধক ভঙ্গিতে হাত নাড়ল গুস্তাফ। ‘আপনাদের বোঝা উচিত; বিশেষ করে, যুগ যুগ ধরে চলে আসা জাতিগত প্রভেদের ধারণাটা আসলে জনসংযোগ কেলেঙ্কারি এবং সত্য থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন রাখার একটা প্রক্রিয়া ছাড়া আর কিছু নয়। ভুলে যান সরকারের কথা। টেলিভিশনে দেখতে পান যাদেরকে, সত্যিকার শাসক নয় তারা। আড়াল থেকে যারা কলকাঠি নাড়ছে, তারা হচ্ছে অন্য ভুবনের বাসিন্দা। জনগণের ভোটে নির্বাচিত, আঙুলের ইশারায় নাচা পুতুলগুলোর হাতে প্রকৃত ক্ষমতা নেই। সত্য প্রকাশ পেলে উল্টেপাল্টে যাবে আপনার চিন্তাচেতনা। কিন্তু নগ্ন বাস্তবতা এটাই। নেপথ্য এই শক্তির সঙ্গেই খেলতে নেমেছেন আপনারা! দুঃখের কথা হলো, কোনভাবেই এদের থামাতে পারবেন না। কোনভাবেই না!’

কমপিউটারের দিকে ফিরে তাকাল গুস্তাফ। ছবিটার উপর আঙুল তাক করে বলল, ‘মাত্র দুই দশমিক ছয় মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে ছোট দেশগুলোর অন্যতম রিপাবলিক অভ টারাকা। তবে তামা আর প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ ওরা। কয়েক দশক ধরে একদলীয় রাষ্ট্র হিসেবে দেশ শাসন করছিল জেনারেল আলবার্তো সুয়ারেজ। সামরিক একনায়ক যাকে বলে। রাশা, কিউবার সমর্থন ছিল তার পিছনে। অতি সম্প্রতি চীনাদেরও নজর পড়েছে টারাকার প্রাকৃতিক সম্পদের উপর। সমাজতন্ত্রের দাবিতে দেশবাসীর কণ্ঠস্বর যখন দিন দিন জোরালো হচ্ছে, তখনই ঘটল এই ভূমিকম্প, রিখটার ম্যাগনিচ্যুড স্কেলে মাত্রা যার আট দশমিক পাঁচ। উনিশ শ’ ছিয়ানব্বইয়ের দুর্যোগের চাইতে অনেক গুণ শক্তিশালী এটা। শহরের বেশির ভাগ অংশই পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। এমনকী রক্ষা পায়নি প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসও।

‘কোনও আভাসই পাওয়া যায়নি ভূমিকম্পের। এতই আচমকা আঘাত হেনেছে যে, জেনারেল বা তার পরিবারের কেউই সুযোগ পায়নি প্রাসাদ থেকে বেরোনোর। যাকে বলে, স্পটডেড। জনবহুল দরিদ্র এলাকাগুলোতেও একই অবস্থা। সর্বশেষ হিসেব বলছে, তিরিশ হাজারের উপর মারা গেছে ওই বিপর্যয়ে।’

‘হ্যাঁ, টিভিতে দেখেছিলাম।’ মাথা নাড়ল সেলেনা। ‘মারাত্মক ব্যাপার। ‘

‘আমাদের পশ্চিমা শাসকেরা আকস্মিক এ দুর্ঘটনায় স্বাভাবিক বিস্ময় আর ভিকটিমদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশে বিলম্ব করেনি মোটেই। ভূমিকম্পের আগে আগেই বিপর্যয়- পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে উপস্থিত ছিল ওখানে জাতিসংঘ! দ্রুত কিছু রুদ্ধদ্বার বৈঠক হলো, এবং বিপুল পরিমাণে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে গেল দুর্ঘটনাস্থলে। এরই মধ্যে দৃশ্যপট থেকে চুপচাপ হটিয়ে দেয়া হয়েছে চাইনিজদের। ওরা বিদায় নেয়ার দশ মিনিট পরই সিআইএ এবং অন্যান্য গ্লোবালিস্ট এজেন্সির মদতে সূচনা হলো নতুন গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের।

‘এখন আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে টারাকা। বোঝার কি বাকি আছে, তামা আর গ্যাস ইণ্ডাস্ট্রি এখন নিয়ন্ত্রণ করছে কারা?’ রাগ ঝলসে উঠল গুস্তাফের দু’চোখে। ‘এভাবেই কাজ করে পদ্ধতিটা। পুরানো, কিন্তু অব্যর্থ কৌশল। এক হাতে খাদে ফেলো, আরেক হাতে অতিসত্বর টেনে তোলো সেখান থেকে। বোধহীন মগজে মিডিয়ার ঢুকিয়ে দেয়া দুর্যোগ আর দাঙ্গাহাঙ্গামার চাঞ্চল্যকর চিত্রগুলোই দেখে কেবল জনগণ। কল্যাণকামী অভিভাবকেরা দুর্দিনে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে বলে যে বেঁচেবর্তে রয়েছি আমরা, সেই বার্তাটাও দেয়া হয় তাদের।

‘প্রতিটা গল্পেই একজন খলনায়ক আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে প্রকৃতিমাতার চাইতে উত্তম ভিলেন আর কে হতে পারে? নানা রকম খেলা চলে মিথ্যের প্রাচীরের অন্তরালে, সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয় আড়ালের প্রভুদের, শক্তির ভারসাম্য তাদের অনুকূলে আসে একটু একটু করে। সবটা মিলে দুনিয়ার ওপর আরও একটু শক্ত হয় মুঠো।’ একসাথে এত কথা বলে হাঁপিয়ে উঠেছে গুস্তাফ। থামতে হলো দম নেয়ার জন্য।

‘তা হলে, ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে,’ সুযোগ পেয়ে বলল রানা। ‘অস্থিতিশীল করে তোলার স্বার্থে নির্দিষ্ট কোনও জায়গার উপর টেসলা টেকনোলজি প্রয়োগ করছে গোপন সংস্থাগুলো! দালান ধ্বংস আর নগর-সভ্যতা ধ্বংসের মধ্যে ব্যবধানটা একটু বেশি হয়ে গেল না?’

,

‘যা বললাম, তা-ই,’ গোঁয়ারের মত গোঁ ধরল লোকটা। ‘বিশ্বাস করা, না-করা আপনার অভিরুচি। বছরের পর বছর লেগেছে টেকনোলজিটা ডেভেলপ করতে। সীমাহীন রাজনৈতিক সম্ভাবনার অস্ত্র এটা, যে-কেউ ব্যবহার করে দুনিয়া জুড়ে বিস্তার করতে পারে আধিপত্য। চাইলেই যে- কোনও দেশকে বাধ্য করতে পারে মাথা নোয়াতে। যুদ্ধের চাইতে সস্তা আর সূক্ষ্ম এক হাতিয়ার। পঁচিশ গুণ বেশি কর্মক্ষম। সাবেকি ধারার এসপিয়োনাজ এবং ধ্বংসযজ্ঞের চেয়ে অধিক কার্যকর। চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে অনেকটাই।’

‘চূড়ান্ত লক্ষ্য?’ ধরল সেলেনা।

‘সার্বজনীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, নিজেরাই যেখানে থাকবে পিরামিডের চূড়ায়।’

শেষ ভোদকাটুকু গিলে নিয়ে টেবিলের উপর ঝুঁকে পড়ল গুস্তাফ। বোতল থেকে আরও আধ গ্লাস ঢেলে গিলল ঢক ঢক করে।

‘এটাই চাইছে ওরা শুরু থেকে। কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নেয়ার সময় এসেছে এখন। চূড়ান্ত শক্তি যা-খুশি করার অধিকার দিচ্ছে ওদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপর দোষ চাপিয়ে বরাবর ফুলের মত নিষ্পাপ নিষ্কলঙ্ক থেকে যাবে নরাধমগুলো!’ শুয়োরের মত ঘোঁত করে উঠল রিপোর্টার। ‘কে-ই বা আসবে অভিযোগ করতে, করবে কেউ? টারাকার সুনাগরিকেরা তো নয়ই! পুনর্গঠিত স্যান ভিসেন্তের এক রাস্তা পর পর বড়সড় এক-একটা ম্যাকডোনাল্ডসের দোকান করে দেয়ার পর তো অভিযোগের প্রশ্নই ওঠে না! নিজের চোখে প্রমাণ দেখেছি আমি… ক্যারেন আর আমি যখন গেলাম ওখানে গত বছর। …নির্বোধের দল!’ গালি দিল গুস্তাফ ভিকান্দার।

বিশ্বাস করতে সায় দিচ্ছে না মন। কিন্তু এটাও মনে মনে স্বীকার না করে পারছে না রানা, গুস্তাফের কথাগুলো নিখুঁতভাবে খাপ খেয়ে যাচ্ছে পরিস্থিতির সঙ্গে। বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক খেলায় দ্বিতীয় কোনও চিন্তা ছাড়াই যেখানে হাজারো নিরীহ প্রাণ হরণ করা হচ্ছে নিছক কোলাটেরাল ড্যামেজ হিসাবে, ঝামেলাবাজ বিজ্ঞানী কিংবা সত্যান্বেষীকে নির্মূল করা তো কিছুই নয় এদের কাছে। গোটা একটা রাষ্ট্রকে পদানত করার রিসোর্স আর ক্ষমতা রাখে যারা, বিশেষ কোনও টার্গেটকে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ট্র্যাক করা তো ব্যাপারই নয় তাদের জন্য।

চিন্তাটা ভীতিকর।

‘ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিতে চাই না আপনার থিয়োরিতে, তা-ও বলল ও। ‘কিন্তু নতুন কোনও ঘটনা তো নয় ভূমিকম্প। এই গ্রহে মানুষের পদচারণা শুরু হওয়ার লক্ষ লক্ষ বছর আগে থেকেই হয়ে আসছে এটা, চলতে থাকবে মানব জাতির বিলুপ্তির পরেও। এরকম কোনও টেকনোলজির অস্তিত্ব যদি থাকেও, কোনটা আসল দুর্যোগ আর কোন্‌টা সুচিন্তিত হামলা, জানেন বলে দাবি করতে পারেন না আপনি।’

‘আর এটাই ওদের পরিকল্পনার সৌন্দর্য,’ রাগত কণ্ঠে জবাব দিল গুস্তাফ। ‘প্রাকৃতিক শক্তি’-র ছোবলে একটা দেশ অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছে….যাই, গিয়ে সাহায্য করি ওদের। তার পর চাইলেই পকেটে ঢোকানো যাবে দেশটাকে। বড্ড বাড় বেড়েছে চিনের? জাপানের? নো প্রবলেম। দাওয়াই রয়েছে হাতে। দর্পচূর্ণ করা যাবে সব ক’টার। কিচ্ছুটি সন্দেহ করবে না কেউ। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে তো আর ল্যাবোরেটরিতে তৈরি করা যায় না! যারা বলবে- যায়, আস্ত পাগল তারা। যে দাবি করবে—সম্ভব; সুচারুভাবে সম্মানহানি করা হবে তার। ঠিক যেভাবে নিজেদের পাছা বাঁচাতে তামাশায় পরিণত করেছিল তারা টেসলাকে। কিন্তু আমি বলছি আপনাকে…’ চোখ জোড়া চকচক করছে লোকটার। ‘কন্সপিরেসি থিয়োরিতে বিশ্বাসী কোনও মৌলবাদী ছিল না ক্যারেন… ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ত সে। সত্যিকারের বিজ্ঞানী ছিল মেয়েটা। প্রতিটা দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিবেচনা করে, উপাত্ত জোগাড়ের জন্যে ইনভেস্টিগেশন চালাত সবখানে। ওর মত বুদ্ধিমতীর পক্ষেই সম্ভব প্রাণীদের আচার-আচরণের সাহায্যে রহস্যোদ্ঘাটনের চেষ্টা চালানো।’

‘মিউল স্যাংচুয়ারির ভিডিয়োটা…’ বুঝতে পারার ভঙ্গিতে মাথা দোলাল সেলেনা। ‘আপনিই ক্যামেরায় ছিলেন, তা-ই না?’

মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলল গুস্তাফ। ‘ক্যারেন উপলব্ধি করেছিল, প্রাণীদের আচরণ বিশ্লেষণ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর মানবসৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে পার্থক্য বের করা সম্ভব হতে পারে। বারংবার প্রমাণ হয়েছে, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে জীবজন্তুর। প্রকৃতির সূক্ষ্ম তারতম্যগুলো ধরতে পারে তারা। অনেকটা সাইকিক পাওয়ারের মত ব্যাপারটা। নিশ্চিত ছিল মেয়েটা—দুর্যোগ যদি কৃত্রিম হয়, প্রাণীরা সেটার আভাস পাবে না। ঠিকই ধরেছিল ও। ছিয়ানব্বইয়ের আসল ভূমিকম্পের আলামত দেখতে পেয়েছিল যেসব প্রাণী, তারাও সে-কারণে হকচকিয়ে গেছে মানুষের মত; যদিও এবারের ধ্বংসযজ্ঞ বহু গুণে ছাড়িয়ে গেছে আগেরটাকে।

‘একটু চিন্তা করে দেখুন। সন্দেহজনক নয়? আচ্ছা, ঠিক আছে… মানলাম, নিরেট প্রমাণ নয় এটা। আমরাও তখন পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারিনি, যতক্ষণ না পরিচয় হলো মিস্টার নলের সঙ্গে।’

‘এই নলটা আবার কে?’ ভুরু কুঁচকে গেছে রানার।

‘জর্জ নল। আমেরিকান। সপ্তাহভর স্যান ভিসেন্তেতে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ যখন শেষ হলো আমাদের, যোগাযোগ করল সেসময়। হোটেল কামরায় সাক্ষাৎ করি আমরা। ভিডিয়ো কিংবা বক্তব্য রেকর্ডের অনুমতি দেয়নি মিস্টার নল। দেখলে বুঝতেন, কী রকম ছটফট করছিল কথা বলার জন্যে। টারাকার আমেরিকান এমব্যাসির জুনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার সে। প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেস থেকে কয়েক রাস্তা দূরেই দূতাবাস। লোকটার বক্তব্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের আগের দিন ফেমা-র এজেন্টরা এসেছিল ওদের অফিসে—ইউএস ফেডারেল এমার্জেন্সি এজেন্সি – ‘

‘ফেমা কী, জানি,’ বলল সেলেনা।

‘দূতাবাস ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয় ওকে আর ওর সহকর্মীদের… এমার্জেন্সি ড্রিল না কী হবে বলে। খুবই অস্পষ্ট ছিল ব্যাখ্যাটা, কিন্তু অত্যন্ত সিরিয়াস ছিল লোকগুলো। এমব্যাসির বাছা বাছা স্টাফদের জড়ো করে তোলা হলো কালো ভ্যানে, নিয়ে যাওয়া হলো শহরের বাইরে গোপন কোনও জায়গায়। এজেন্টদের নির্দেশ অনুযায়ী নল বা অন্য কর্মচারীরা পরদিন যোগ দেয়নি কাজে। দিলে কবর হয়ে যেত এমব্যাসি বিল্ডিঙের ধ্বংসস্তূপের নিচে। কিন্তু এই ওয়ার্নিং পায়নি স্যান ভিসেন্তের সাধারণ জনগণ।’

‘কুত্তার বাচ্চা!’ চাপা স্বরে গালি দিল সেলেনা।

জানালার কাছে চলে গেল রানা। দৃষ্টি রাখল শান্ত অরণ্যের দিকে। বোঝাপড়ার চেষ্টা করছে মনের সঙ্গে।

এক ঝাঁক পাখি ডানা ঝাপটে নেমে এল গাছ থেকে। ল্যাণ্ড রোভারের কয়েক কদম দূর থেকে খুঁটে তুলছে কিছু। প্রথমটায় মনে করল রানা, মরা কোনও পোকা-টোকা হবে। তার পর বুঝল, গুস্তাফের ফেলে দেয়া স্যাণ্ডউইচের অবশিষ্টাংশ।

পাখিদের ভোজসভা থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ফিরে এল ও কমপিউটারের কাছে। বন্ধ করে দিল দক্ষিণ আমেরিকান শহরের ছবিটা। বদলে খুলল মঙ্গোলিয়ার আলতাই পর্বতশ্রেণীতে ঘটা ব্যাখ্যাহীন ধ্বংসযজ্ঞের ডকুমেন্ট ফাইল।

‘একটা বিষয় ব্যাখ্যা করুন।’ আঙুল তাক করল স্ক্রিনে। ‘এতই দুর্গম যে জায়গাটা, মার্চের আগে জানতেই পারেনি কেউ এটা সম্বন্ধে। আপনার থিয়োরির সঙ্গে তো মিলছে না ঘটনাটা! মঙ্গোলিয়ার সমৃদ্ধশালী পর্যটন শিল্পকে পথে বসানোটাও কি পৃথিবীকে ঢেলে সাজানোর এজেণ্ডার অংশ?’

হতাশ চেহারায় দীর্ঘশ্বাস ফেলল গুস্তাফ। ‘এখনও বিশ্বাস করছেন না আপনি!

‘যুক্তিযুক্ত সব কিছু মানতে রাজি আছি; তবে উল্টো- পাল্টা কথা আমি বিশ্বাস করব কেন?’ জবাব দিল রানা।

‘তা হলে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করবেন আপনি কোন্ যুক্তিতে?’ বাঁকা সুরে জানতে চাইল গুস্তাফ।

হাসল রানা। ‘কোনও যুক্তিই দেব না। কারণ, বিশ্বাস ও যুক্তি—দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। কিছু বিশ্বাস করতে চাইলে যুক্তির প্রয়োজন পড়ে না, আর যুক্তি থাকলে বিশ্বাসের প্রয়োজন পড়ে না।’

থমকে গেল গুস্তাফ, এক মিনিট ভাবল চুপচাপ। তার পর বলল, ‘বেশ। আরেকভাবে ব্যাখ্যা করছি তা হলে।’ রানার বেল্টে গোঁজা পিস্তলটার দিকে তর্জনী তাক করল সে। ‘ভালোই চালাতে পারেন ওটা, তা-ই না?’

‘তা পারি।’

‘কিন্তু কী করে আয়ত্তে আনলেন? উত্তর হচ্ছে: অনুশীলনের মাধ্যমে। এখন এতে অভ্যস্ত হলেও এক সময় তো এ জিনিস নতুন ছিল আপনার কাছে। এই টেকনোলজিরও তেমনি শৈশব চলছে, অনেক কিছু জানার- বোঝার রয়েছে এর অপারেটরদের।’

‘বলতে চাইছেন, মঙ্গোলিয়ার ব্যাপারটা স্রেফ প্র্যাকটিস ছিল?’ হতভম্ব হয়ে গেছে রানা।

‘প্র্যাকটিস মেকস পারফেক্ট, কী বলেন?’ তাৎপর্যপূর্ণ চাউনি হানল গুস্তাফ। ‘বিশেষ করে, যখন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে আপনার।’

সকল অধ্যায়

১. শকওয়েভ – ১
২. শকওয়েভ – ২
৩. শকওয়েভ – ৩
৪. শকওয়েভ – ৪
৫. শকওয়েভ – ৫
৬. শকওয়েভ – ৬
৭. শকওয়েভ – ৭
৮. শকওয়েভ – ৮
৯. শকওয়েভ – ৯
১০. শকওয়েভ – ১০
১১. শকওয়েভ – ১১
১২. শকওয়েভ – ১২
১৩. শকওয়েভ – ১৩
১৪. শকওয়েভ – ১৪
১৫. শকওয়েভ – ১৫
১৬. শকওয়েভ – ১৬
১৭. শকওয়েভ – ১৭
১৮. শকওয়েভ – ১৮
১৯. শকওয়েভ – ১৯
২০. শকওয়েভ – ২০
২১. শকওয়েভ – ২১
২২. শকওয়েভ – ২২
২৩. শকওয়েভ – ২৩
২৪. শকওয়েভ – ২৪
২৫. শকওয়েভ – ২৫
২৬. শকওয়েভ – ২৬
২৭. শকওয়েভ – ২৭
২৮. শকওয়েভ – ২৮
২৯. শকওয়েভ – ২৯
৩০. শকওয়েভ – ৩০
৩১. শকওয়েভ – ৩১
৩২. শকওয়েভ – ৩২
৩৩. শকওয়েভ – ৩৩
৩৪. শকওয়েভ – ৩৪
৩৫. শকওয়েভ – ৩৫
৩৬. শকওয়েভ – ৩৬
৩৭. শকওয়েভ – ৩৭
৩৮. শকওয়েভ – ৩৮
৩৯. শকওয়েভ – ৩৯
৪০. শকওয়েভ – ৪০
৪১. শকওয়েভ – ৪১
৪২. শকওয়েভ – ৪২
৪৩. শকওয়েভ – ৪৩
৪৪. শকওয়েভ – ৪৪
৪৫. শকওয়েভ – ৪৫
৪৬. শকওয়েভ – ৪৬
৪৭. শকওয়েভ – ৪৭
৪৮. শকওয়েভ – ৪৮
৪৯. শকওয়েভ – ৪৯
৫০. শকওয়েভ – ৫০
৫১. শকওয়েভ – ৫১
৫২. শকওয়েভ – ৫২
৫৩. শকওয়েভ – ৫৩
৫৪. শকওয়েভ – ৫৪
৫৫. শকওয়েভ – ৫৫
৫৬. শকওয়েভ – ৫৬
৫৭. শকওয়েভ – ৫৭
৫৮. শকওয়েভ – ৫৮
৫৯. শকওয়েভ – ৫৯
৬০. শকওয়েভ – ৬০
৬১. শকওয়েভ – ৬১
৬২. শকওয়েভ – ৬২
৬৩. শকওয়েভ – ৬৩
৬৪. শকওয়েভ – ৬৪
৬৫. শকওয়েভ – ৬৫
৬৬. শকওয়েভ – ৬৬
৬৭. শকওয়েভ – ৬৭
৬৮. শকওয়েভ – ৬৮
৬৯. শকওয়েভ – ৬৯
৭০. শকওয়েভ – ৭০
৭১. শকওয়েভ – ৭১
৭২. শকওয়েভ – ৭২
৭৩. শকওয়েভ – ৭৩
৭৪. শকওয়েভ – ৭৪
৭৫. শকওয়েভ – ৭৫
৭৬. শকওয়েভ – ৭৬
৭৭. শকওয়েভ – ৭৭
৭৮. শকওয়েভ – ৭৮
৭৯. শকওয়েভ – ৭৯

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন