ঘরন্তী – বিমল মিত্র

এ-গল্পটা হয়তো না-লিখতে হলেই আমি খুশি হতাম। কিন্তু লেখক জীবনের শুরু থেকেই ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধে নিয়ে ভাবা ছেড়ে দিয়েছি। তা ছাড়া নিজের সুখ-অসুখের প্রশ্ন তো এখানে ওঠেই না, কারণ মিসেস চৌধুরির বিশেষ অনুরোধেই এটা লেখা। তবু তিনি গল্পটা আমাকে যেভাবে শেষ করতে বলেছিলেন সেভাবে শেষ আমি করতে পারব না বলে দুঃখিত। তিনি যেখানেই থাকুন, এ গল্প যদি পড়েন, যেন আমায় ক্ষমা করেন। সত্যি সেদিনের সেই ঘটনার পর মিসেস চৌধুরি যে কোথায় চলে গেলেন, কেউ জানে না। জানি না, এই বই তাঁর হাতে পড়বে কিনা। তবু যদিই তাঁর নজরে পড়ে, তাঁর অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি—লাবণ্য ভালো আছে, লাবণ্যের একটি ছেলে হয়েছে, লাবণ্য ছেলের নাম রেখেছে…

কিন্তু সে কথা এখন থাক।

মিসেস চৌধুরির হয়তো মনে নেই সে-সব কথা। কিন্তু আমার আছে।

রাত তখন প্রায় বারোটা। লাবণ্যের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সিতে অনেকক্ষণ রাস্তায় ঘুরে শেষে আমার বাড়িতে এসে হাজির হয়েছিলেন। বৃদ্ধা না-হোন, মিসেস চৌধুরিকে যুবতী বলা চলে না। তবু ঘরে ঢোকবার সঙ্গে সঙ্গে উগ্র সেন্টের গন্ধে ঘর ভরে গিয়েছিল। রুজ মাখা গাল আর লিপস্টিক-মাখা ঠোঁটের ওপর যেন কে হঠাৎ কালি লেপে দিয়েছে।

বললেন—একটা ভীষণ বিপদে পড়ে তোমার কাছে এসেছি। তোমাকে একটা গল্প লিখতে হবে বিমল—

বললাম-ব্যাপার কী? কী হল?

তুমি কথা দাও লিখবে? তুমি অনেককে নিয়ে লিখেছ, এ-ও তোমারই সাবজেক্ট।

খুলে বলুন, কী ব্যাপার?

মিসেস চৌধুরি বললেন—লাবণ্যকে নিয়ে তোমায় একটা গল্প লিখতেই হবে।

লাবণ্য কে?

বলব তোমাকে সব, কিন্তু আগে কথা দাও-লিখবে?

অগত্যা কথা দিতেই হল।

মিসেস চৌধুরি বললেন—যত বদনাম শুধু আমাদেরই বেলায়, কিন্তু তবু তোমাকে বলি, আমাদের আর যা-ই দোষ থাক, আমরা চরিত্রহীনা নই। আমার বাড়িতে যারা আসে কিংবা আমি যাদের কাছে যাই—তারা কেউ আমাকে সতী-সাবিত্রী বলে না-জানুক, আমাকে শ্রদ্ধা করে সবাই। অন্তত সমাজকে আমি ঠকিয়েছি—এ কথা কেউ বলবে না। আমার কাছে সরল সোজা কথা। ফেলো কড়ি মাখো তেল। কেউ বলতে পারবে না আমার ঘরে এসে কাউকে পুলিশের হেফাজতে পড়তে হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কী কিছু জানে না? জানে বইকী। সব জানে। আমার কীসের কারবার, আমার পেট চলে কীসে, সবই জানে। কিন্তু তবু বলে না কেন? তুমি তো দেখেছ আমার বাড়ির পাশেই পুলিশের থানা। তাদের নাকের ওপরই তো আমার কারবার চলছে, তবু কিছু বলে না কেন?

এ প্রশ্নের উত্তর মিসেস চৌধুরি অবশ্য আশা করেন না। তাই আমিও চুপ করে রইলাম।

কথা বলতে বলতে মিসেস চৌধুরির আধপাকা চুলের খোঁপা খুলে পড়ল। দু-হাতে সেটাকে সামলে নিয়ে আবার বললেন—এই রাত্তিরবেলা তোমার ঘরে বসেই বলছি আমায় কেউ কুলত্যাগিনী বলে জানে, কেউবা বলে আমার স্বামী আমায় ত্যাগ করেছে। আমি সব জানি সব স্বীকার করি, তোমাদের কাছেও আমি নিজেকে সতী-সাবিত্রী বলে বড়াই করি না, আমি যা আমি তা-ই। আমার স্যুটকেসের-এর মধ্যে যেদিন মিস্টার চৌধুরি এক প্রেমপত্র আবিষ্কার করলেন, সেদিনও আমি মিথ্যা কথা বলে আত্মরক্ষা করবার চেষ্টা করিনি। তা ছাড়া তোমরা তো জানো, একগ্লাস বিয়ার খেলে কীরকম ভুল বকতে শুরু করি।

কথা বলতে বলতে যেন হাঁফাতে লাগলেন।

বললেন—তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না, বরাবর জানো নিশ্চয়ই সন্ধেবেলা তিন কাপ চা খেয়ে তবে আমার নেশা কাটে, আজ সত্যি বলছি তোমায়, এক কাপ চাও জোটেনি কপালে।

তারপর লজ্জা ত্যাগ করে বললেন—তোমার চাকরকে জাগাও, চা করুক।

সত্যি মনে হল মিসেস চৌধুরি এক নিদারুণ আঘাত পেয়েছেন যেন। সে আঘাতে নেশার খোরাক খেতেও ভুলে গেছেন তিনি—এমনি কঠোর তাঁর যন্ত্রণা। নইলে মিসেস চৌধুরির মতো মেয়েমানুষ এ রাত্রে নিজের ব্যবসা ছেড়ে আমার বাড়িতেই বা আসবেন কেন! অথচ সে-আঘাত প্রতিরোধ করবার ক্ষমতাও যেন তাঁর নেই। দুর্বল অক্ষম আক্রোশে তিনি যেন ক্ষতবিক্ষত হচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত উপায়ন্তর না দেখে আমার কাছে এসে হাজির হয়েছেন। আমি বুঝি এখন তাঁর একমাত্র অস্ত্র। গল্প লিখে যেন আমিই একমাত্র তার প্রতিকার করতে পারি।

জিজ্ঞেস করলাম—কিন্তু লাবণ্য কে আপনার?

চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়ে থেমে গেলেন মিসেস চৌধুরি। বললেন—আমার কেউ না!আসলে আমার নিজের বলতে কে আরও আছে বলো! আরও যেমন দশজন ছেলেমেয়ে আসে আমার বাড়িতে—লাবণ্য তেমনি। এদের সঙ্গে আমার কীসের সম্পর্ক! কত মারোয়াড়ি, ভাটিয়া, গুজরাটি, বাঙালি আসে—মেয়ে সঙ্গে করে নিয়ে আসে, কেউ এক ঘন্টা, কেউ দু ঘন্টা, কেউ তিন ঘন্টা, কেউবা সারারাত ঘর ভাড়া করে। তিনখানা ফারনিশড ঘর আমার ভাড়া নেয় আবার কাজ ফুরোলে চলে যায়। লাবণ্য ওদের মতো একজন, আমার সঙ্গে ওর সম্পর্ক কীসের?

লাবণ্যের সঙ্গে যদি কোনও সম্পর্ক নেই, তবে তাকে নিয়ে এত মাথাব্যথা, তাকে নিয়ে এই গল্প লেখানোর প্রচেষ্টা কেন, বোঝা গেল না।

মিসেস চৌধুরি বললেন, কিন্তু তা বলে কী তোমরা আমায় অর্থপিশাচ বলবে? এই যে তোমরা আমার ঘরে যাও, নিজের পয়সা খরচ করে খাও-দাও ফুর্তি করো, কখনও ঘর ভাড়া চেয়েছি? ছোটোবেলায় এককালে কবিতা লিখেছি, তাই তোমাদের সঙ্গে মিশি, কিন্তু এ লাইনে এসে আর ওসব হল না। না-হোক, সকলের সব জিনিস হয় না, ওই বাড়ি ভাড়া থেকে যে ক-টা টাকা আসে, তাইতেই আমার শেষজীবনটা একরকম করে কাটিয়ে দেব।

মিসেস চৌধুরিকে যারা জানে তারা বুঝতে পারবে এ তাঁর বিনয়ের কথা। যেমন-তেমন করে কাটিয়ে দেবার মতো জীবন তাঁর নয়। এই ক-বছরে অনেক টাকা তিনি কামিয়েছেন।

একটু থেমে বললেন—ফুলচাঁদকে তুমি দেখেছ?

বললাম, দেখেছি।

তার মতোন অত বড়োলোক, যে এককথায় দশ হাজার টাকা বার করে দিতে পারে, সেও যখন প্রথমে ওই লাবণ্যের জন্যে আটশো টাকা খরচ করবে বলেছিল, আমি রাজি হইনি। আমি যত বড়ো ব্যবসাদার মেয়েমানুষই হই-না কেন, এককালে তো আমিও ঘরের বউ ছিলাম, রোজ সকালে স্নান করে তুলসীতলায় জল দিয়ে আমিও তো প্রণাম করেছি—আমিও তো ছেলেমেয়ের মা ছিলাম। আজ না-হয় তোমরা আমায় দেখছ অন্যরকম, এখন পাকা চুলে কলপ মাখি, তোবড়ানো গালে রুজ মাখি।

হঠাৎ মিসেস চৌধুরির মুখে একথা শুনে কেমন যেন অবাক লাগল!

বললেন—যাক গে এ-সব কথা। আমার ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে, তুমি আমার ওখানে চলো—সব গল্পটা তোমায় বলব।

এখন? এত রাত্রে?

তাতে কী হয়েছে?

শেষপর্যন্ত সে-রাত্রে আমি অবশ্য মিসেস চৌধুরীর বাড়ি যাইনি। অনেক রাত পর্যন্ত মিসেস চৌধুরিই সমস্ত গল্পটা আমায় বলেছিলেন। গল্প যখন শেষ হল তখন রাত প্রায় তিনটে।

চলে যাবার সময় আমার হাত-দুটো ধরে বলেছিলেন—লক্ষ্মীটি, এটা তোমায় লিখতেই হবে। তবে, ওই শেষকালটা শুধু বদলে দিয়ো। যেমনভাবে বললাম, ওইভাবে শেষ কোরো—কেমন?

তারপর ট্যক্সিতে ওঠবার আগে বলেছিলেন—তা হলে কাল বিকেলবেলা আমার ওখানে যাচ্ছ তো?

পরের দিন ঠিক সময়ে গিয়েছিলুম মিসেস চৌধুরির বাড়ি। কিন্তু দেখা তাঁর পাইনি। দরজায় তালা-দেওয়া। শুনেছিলাম, মিসেস চৌধুরি বাড়ি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন কোথায়, কেউ জানে না।

তাঁর সঙ্গে সে-ই আমার শেষ দেখা।

শেষ দেখা বটে, কিন্তু সম্পর্ক সেখানেই শেষ হয়নি। অনেক গল্পের সূচনায় যখন কী নিয়ে লিখব ভেবেছি, তখন মিসেস চৌধুরির গল্পটার কথাও মনে হয়েছে বারবার। মনে হয়েছে নিরঞ্জন আর লাবণ্যর গল্পটা লিখেই ফেলি। যেমনভাবে শেষ করতে বলেছিলেন তেমনি করেই না-হয় শেষ করি। মিসেস চৌধুরি যেখানেই থাকুন, এ গল্প তাঁর হাতে পড়তেও পারে। একদিন আমাকে স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন—সে স্নেহ সে ভালোবাসায়—কিছুটা অন্তত তা হলে পরিশোধ হয়। কিন্তু মন সায় দেয়নি।

ট্রামে বাসে সিনেমায় সংসারে সর্বত্র লাবণ্যকে খুঁজে ফিরেছে আমার মন। সন্ধেবেলা চৌরঙ্গির ধারে গালে সস্তা পাউডার আর আলতা মাখা ঠোঁট দেখে অনেকবার চমকে উঠেছি। ভেবেছি এই-ই বোধহয় মিসেস চৌধুরির লাবণ্য! লাবণ্যর জীবন হয়তো এইখানে এসেই থেমেছে। আবার কখনও কোনও নতুন পরিচিত পরিবারের শান্ত সান্ধ্য পরিবেষ্টনীতে—পুত্র কন্যার আনন্দ পরিবেশে গৃহিণীর দিকে চেয়ে চোখ আমার অপলক হয়ে গেছে। এই-ই কি লাবণ্য? হয়তো নিরঞ্জনের উদার প্রেমের প্রাচুর্যে সে লাবণ্য এমন মহীয়সী হয়ে উঠেছে। কিন্তু তবু আমার অনুসন্ধিৎসু মনের ক্ষুধা মেটেনি কোথাও। মিসেস চৌধুরির কল্পিত পরিণতির সঙ্গে লাবণ্যের বাস্তব জীবনের পরিণতির যেন কোথাও অসংগতি ছিল। আমার উদভাবনী শক্তি দিয়ে কোনওদিন তার কোনও সমাধান খুঁজে পাইনি।

তা নিরঞ্জনের মতো পুরুষকে তো আজও দেখি সকালবেলা বাসে চড়ে অফিসে যেতে। টেনেটুনে একশো টাকাই না কী হয় মাইনে পাক। টুইলের শার্ট আর মিলের কাপড়। এককথায় মোটা ভাত আর মোটা কাপড়। একটা পেট একশো টাকায় একরকম চলে যায় বই কী! আর লাবণ্য!

মিসেস চৌধুরি বলেছিলেন—লাবণ্য ছিল ওই নিরঞ্জনের মতো সাধাসিধে পঞ্চান্ন টাকা মাইনে—আর পঞ্চাশ টাকা ডিয়ারনেস।

তা সত্যি। আমিও ভাবি, ও মাইনেতে ওর চেয়ে বিলাসিতা কী করে করা যায়। বিশেষ করে মেসের খরচ, বাস ভাড়া টিফিন। তার পর দু-একদিন সিনেমাতেও যেত না।

কেমন করে ওদের আলাপ হল কে জানে! গ্রহচক্রের কোনও ষড়যন্ত্রের ফলে কক্ষভ্রষ্ট হয়ে দুজনে মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছিল একদিন। তারপর ওদের আর ছাড়াছাড়ি হল না কেন, তাই বা কে জানে? ওদের নিয়ে একদিন গল্প হবে এ-ধারণা থাকলে মিসেস চৌধুরি সে-কথা নিশ্চয়ই জেনে রাখতেন। কিন্তু আর যা-ই হোক পছন্দের বাহবা দিতে হবে বটে নিরঞ্জনের।

মিসেস চৌধুরি বলেন—লাবণ্য রোগা হলে কী হবে—ওর গালের তিলটার জন্যে সকলেরই ওকে পছন্দ হত।

তা লাবণ্যকে আমিও কল্পনা করে নিতে পারি বইকী! মিসেস চৌধুরির বর্ণনার সঙ্গে অনেকসময় বাসের ট্রামের মেয়েদের মিলিয়েও নিই। যেন মনে হয়, এক লাবণ্য আজ একশো লাবণ্য হয়ে সারা কলকাতায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর লিন্ডস স্ট্রিটের মোড়ের ওপর একটি ছেলে আর একটি মেয়ে একসঙ্গে যেতে দেখলে কেমন যেন মনে হয় ওরা সেই নিরঞ্জন আব লাবণ্য। অফিসের ছুটির পর ওরা আজ চলেছে মিসেস চৌধুরির ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাড়িটার দিকে। মাসের প্রথম দিক। পাঁচ টাকা দিয়ে একঘন্টার জন্যে একটা ঘর ভাড়া করে ওরা পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে বসে ঘনিষ্ঠ হবে—একান্ত হবে।

এক এক দিন পেছন পেছন অনুসরণও করেছি ওদের। তবে কী মিসেস চৌধুরী আবার ব্যবসা শুরু করেছেন! সেই আগের মতন সাহেব, মেম, মোটর, দোকান-পত্তর পেরিয়ে সামনে নিরঞ্জন আর লাবণ্য পাশাপাশি চলেছে। গায়ে টুইলের শার্ট। পায়ে মোটা কাবুলি জুতো। পাশে গিয়ে দেখা যায়—নিখুঁত করে দাড়ি কামিয়েছে আজ। আর তারই পাশে লাবণ্য। নতুন কোনও স্কার্ট শাড়িটা পরেছে আজ। কানের একটা দুল কেনবার পয়সা নেই ওর। গলায় পরেছে ঝুটো মুক্তোর নেকলেস। একটু তাড়াতাড়ি সরে গিয়ে পাশ থেকে ভালো করে দেখতে লাগলাম। রাস্তায় জনস্রোতের মধ্যে আমাকে দেখতে পাবে না ওরা। ঘাড় ফিরিয়ে দেখলাম ওদের নিয়ে গল্প লিখতে হবে, ভালো করে দেখা চাই! মিসেস চৌধুরির বর্ণনার সঙ্গে আজও এদের কোনও অমিল নেই যেন। লাবণ্যের পায়ের চটিটাই পর্যন্ত যেন কোনও পরিবর্তন হয়নি। এত বছর পরেও কী সেই চটিটাই পরছে! নিরঞ্জন কি দশ বছর আগের সেই টুইলের শার্টটা বদলায়নি আজ পর্যন্ত। সেই বিকেলের আলো-ছায়ার মধ্যে জনবহুল রাস্তার স্রোতে মিসেস চৌধুরির কাছে শোনা নিরঞ্জন আর লাবণ্য যেন আবার রক্ত-মাংসের শরীর নিয়ে হাজির হল আমার সামনে।

নিরঞ্জন বলছে, এ শাড়িটা পরে তোমায় খুব ভালো দেখাচ্ছে কিন্তু—

কত দাম নিলে এর?

আরও পাশে গিয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে শুনতে লাগলাম ওদের কথা।

নিরঞ্জন বলছে—দাম এখনও দিইনি, চেনা-শোনা দোকান, মাসে মাসে দু-টাকা করে দিলেই চলবে।

লাবণ্য বললে, কিন্তু কেন কিনতে গেলে শাড়িটা, তোমার জুতোটা তো বহুদিন ধরে ছিঁড়ে গেছে, জুতো একজোড়া কিনলে হত তোমার।

নিরঞ্জন বলে, আসছে মাসে চাকরিটা পাকা হলে কিনব তার আগে নয়।

লাবণ্য বলে, কিন্তু এখন থেকে কিছু টাকা তো জমানোও আমাদের দরকার। তা না-হলে আর ক-দিন মিসেস চৌধুরির ঘর ভাড়া নিয়ে চলবে , গত মাসে দু-দিনের ভাড়া এখনও বাকি আছে যে!

নিরঞ্জনের মুখটা দেখতে পাই এবার ভালো করে। নিম্ল মধ্যবিত্ত জীবনের ভবিষ্যৎহীন দিন-যাপনের ক্লান্তির ফাঁকে ফাঁকে যেন কোথাও একটুকরো আশা উঁকি মারে। লাবণ্য আর সে বাড়ি ভাড়া করবে একটা। একটা স্বাধীন দু-ঘরওয়ালা ফ্ল্যাট। তিরিশ কিংবা চল্লিশ, এমনকী পঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দেবে। তার পর যদি ভবিষ্যতে কোনও দিন সুদিন আসে, সেদিন…

নিরঞ্জন চলতে চলতে হঠাৎ বললে—একটা ভালো বাড়ির সন্ধান পেয়েছি জানো?

লাবণ্য চমকে ওঠে—কত ভাড়া?

ভাড়া বেশি নয়, পঞ্চাশ, কিন্তু

সেলামি চায় বুঝি?

সেলামি ছাড়া বাড়ি ভাড়া পাওয়া কি সম্ভব নয়? চেষ্টা করলে কী না পাওয়া যায়! চেষ্টা কী আর নিরঞ্জন কম করেছে? আজ দু-বছর ধরে চেষ্টা তো করেই চলেছে।

অনেকদিন থেকেই চেষ্টা চলেছে। একটা বাড়ি পেলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তাহলে এমন করে আর মিসেস চৌধুরির ঘর ভাড়ার জন্য টাকা নষ্ট করতে হয় না। মাসে এখানে চারদিন এলেই তো চার-পাঁচে কুড়ি টাকা চলে গেল। এক-এক মাসে পাঁচদিন-ছ-দিন এসেছে! তবে মিসেস চৌধুরি লোক ভালো। ব্যবহার ভালো তাঁর। হাতে নগদ টাকা না-থাকলে বাকিতেও চলে। তা ছাড়া ক-ঘন্টাই বা থাকে তারা। বাস-ট্রাম বন্ধ হওয়ার আগেই বেরিয়ে আসতে হয়। তারপর আবার কতদিন পরে দেখা হবে! চলতে চলতে লাবণ্যের হাতটা ধরে নিরঞ্জন।

ওদের কথা শুনতে শুনতে আমিও যেন এগিয়ে চলি। হঠাৎ মানুষের ভিড় আর দোকানপত্রের সার পেরিয়ে কখন নিরঞ্জন আর লাবণ্য কোথায় হারিয়ে যায়। একলা মিসেস চৌধুরির ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াই। হঠাৎ যেন স্বপ্নও ভেঙে যায়! সেই পরিচিত বাড়িটায় সামনের ঘরে সাহেব-মেম সেজেগুজে বসে আছে, ভেতর থেকে পিয়ানোর শব্দ আসছে। মিসেস চৌধুরির বাড়ির সেই নেপালি দারোয়ানটা আর সেলাম করলে না আগেকার মতো!

মিসেস চৌধুরি বলতেন—টালিগঞ্জ থেকে বাসন্তী আসত, চেতলা থেকে আসত কল্যাণী, বেহালা থেকে আসত টগর। কিন্তু এক দিন এক-এক জনের সঙ্গে। চৌরঙ্গির রাস্তা থেকে যাকে পেত ধরে আনত। কিন্তু লাবণ্য? বরাবর নিরঞ্জনকে দেখেছি সঙ্গে। নিরঞ্জনের যখন চাকরি ছিল না, ওই লাবণ্যই তিন মাস মেসের খরচ জুগিয়েছে ওর।

ঘর-ভাড়া হয়তো শহরে আরো অনেক জায়গায় পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে এমন রুচি আর শালীনতা পাবে না। বাইরে থেকে বোঝবার কিছু উপায় নেই। সামনে অর্কিড আর মর্নিং গ্লোরি দিয়ে ঘেরা। পেছনের দরজা দিয়ে সোজা চলে যাও ভেতরে। কোণাকুণি তিনটে ঘর। পর্দা ঠেলে ঘরের ভিতর যেতে হবে। ঘরে একটা ইংলিশ খাট, একটা ড্রেসিং আয়না আর দুটো চেয়ার—আসবাব বলতে এই। ঘরের সঙ্গে লাগোয়া বাথরুম। ব্যবস্থা পুরোদস্তুর বিলিতি। এখানে টাকা খরচ করেও তো আরাম।

মনে আছে, মিসেস চৌধুরি তাস খেলতে খেলতে উঠে পড়লেন একদিন।

জর্জেটটা সামলে নিয়ে বললেন—দেখি ওদিকে গোলমাল কীসের—আমায় তাস দিয়ো না ভাই।

বাইরে থেকে খানিকটা বচসার শব্দ কানে এল।

তারপর প্রচণ্ড শব্দ করে ডেকে উঠল মিসেস চৌধুরির অ্যালসেসিয়ানটা।

খানিক পরে মিসেস চৌধুরি ঘরে ঢুকে পাখার রেগুলেটারটা বাড়িয়ে দিলেন।

বললাম, ব্যাপার কী?

আর বলো কেন, শেঠজি এসেছিল। ফুলচাঁদ শেঠ। মদে চুর একবারে—একদিন বারণ করে দিয়েছি, তবু—

নির্বিকারভাবে আবার তাস খেলতে লাগলেন।—নো বিড থ্রি ডায়মন্ডস—

সেদিন অনেকদিন পরে সেই ফুলচাঁদের সঙ্গে আবার দেখা হয়ে গেল, লম্বা চওড়া একটা গাড়ি হঠাৎ সামনে এসে ব্রেক কষে দাঁড়াল। দেখি ফুলচাঁদ। কে বলবে চল্লিশ বছর বয়েস। নিজেই ড্রাইভ করছে।

মুখ বাড়িয়ে হেসে বললে—কী খবর স্যার?

আমি আশা করছিলাম কিছু খবর পাব। কিন্তু ফুলচাঁদ প্রশ্ন করলে, মিসেস চৌধুরির খবর কিছু জানেন স্যার?

ফুলচাঁদ শেঠের ভাবনা নেই। হয় এ-পাড়ায়, নয় ও-পাড়ায়, যেখানে হোক আড্ডা ও খুঁজে নেবেই। মিসেস চৌধুরি না-থাক মিসেস সরকার আছে। নার্সিং হোম আছে। কত কী আছে কলকাতা শহরে। ছোকরা বয়স। দিন দিন যেন বয়স কমছে ফুলচাঁদের। তিনটে আসল আর দুটো ভেজাল ভেজিটেবল ঘিয়ের কারবার। গাড়িটা চলে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত সেদিকে চেয়ে রইলাম।

কিন্তু সেদিনই সত্যি সত্যি বসলাম কলমটা নিয়ে। এবার লিখতেই হবে। মিসেস চৌধুরি যেমনভাবে শেষ করতে বলেছিলেন সেইভাবেই শেষ করব না হয়।

প্রথমেই লিখলাম—নিরঞ্জন দাঁড়িয়ে আছে সাপ্লাই অফিসের একতলার সিঁড়ির সামনে। লাবণ্যের অফিসের ছুটি হয়ে গেছে। একে একে নামতে শুরু করেছে সবাই।

লাবণ্য চমকে উঠেছে কম নয়। বললে—একি তুমি!

নিরঞ্জন বললে, তোমার জন্যেই দাঁড়িয়ে আছি।

আজ তো কথা ছিল না তোমার আসবার।

তা হোক, তবু এলামই মিসেস চৌধুরির বাড়ি যাব, আজ বড়ো যেতে ইচ্ছে করছে—

কিন্তু টাকা? টাকা এনেছ? আমার তো হাত খালি, শুধু বাসভাড়াটা—

সে একরকম বলে কয়ে ব্যবস্থা করা যাবে, আজ যেতেই হবে তোমায়—জানো লাবণ্য, আমার চাকরিটা চলে গেছে—

সে কী!

মিসেস চৌধুরি শুনছেন সে-সব কথা। তিনি জানতেন লাবণ্যের সে-কৃচ্ছ্রসাধনের ইতিহাস। ধোপার বাড়ি কাপড় দেওয়া লাবণ্যের বন্ধ হল সেইদিন থেকে। শুরু হল সেকেন্ড ক্লাস ট্রামে চড়া। টিফিন বন্ধ। এক-এক দিন নিজের জলখাবারটা রুমালে করে বেঁধে নিয়ে ভাগ করে খেয়েছে মিসেস চৌধুরির ঘরে দরজা বন্ধ করে। চুলে তেল পড়তে লাগল একদিন অন্তর। স্নো ফুরিয়ে গেল, আর কেনা হল না।

মিসেস চৌধুরি বলেছিলেন—ওদের জন্যে দিলাম কনসেশন করে। আমার ঘরের ভাড়ার রেট পাঁচ টাকা বরাবর—ওদের জন্যে ঠিক হল তিন টাকা। তাও সবসময় নগদ দিতে পারত না, বাকি পড়ত।

কিন্তু ওদিকে টালিগঞ্জের বাসন্তীর গায়ে তখন ঢাকাই শাড়ি উঠেছে। চেতলার কল্যাণী নতুন একছড়া হার গড়াল। বেহালার টগরও ব্রোঞ্জের চুড়ি ভেঙে গিনিসোনার কঙ্কন গড়িয়েছে। বাজার গরম বেশ।

সে-বাজারে মিসেস চৌধুরিই বা ছাড়বেন কেন? ঘর-ভাড়া পাঁচ টাকা থেকে বেড়ে দশ টাকা হল। তাতেও খালি পড়ে থাকে না। খদ্দের এসে ফিরে যায় বাইরে থেকে। মিসেস চৌধুরির টেলিফোন সারা দিন-রাত এনগেজড থাকে!

মনে আছে একদিন খুব ভয় পেয়েছিলুম আমি।

দুপুরবেলা। খাওয়া-দাওয়া করে মিসেস চৌধুরির সঙ্গে আড্ডা দেবার উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম। ইচ্ছে নতুন বইটা ওকে এক কপি উপহার দেব। তার পর ওঁরই বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়ে শোনাব জায়গায় জায়গায়। মিসেস চৌধুরি সাহিত্যিক না-হোন, সাহিত্যরসিক। ওঁকে বই দিয়ে আমরা নিজেদের কৃতার্থ বোধ করতাম। কিন্তু দূর থেকে দেখি বাড়ির সামনে ভীষণ ভিড়। অনেকখানি জায়গা জুড়ে গোল হয়ে ফুটপাথের ওপর লোক জমা হয়েছে। কয়েকটা পুলিশও সেখানে দাঁড়িয়ে। মনে হল—নিশ্চয় কোনও গোলমাল, কোনও কেলেঙ্কারি বেধেছে। এবার মিসেস চৌধুরীর আর নিস্তার নেই। আমাদের আড্ডা ভাঙল বুঝি!

যাব কী যাব-না ভাবছি। শেষকালে আমরা কী জড়িয়ে পড়ব?

কথাটা ভাবতেই কেমন লজ্জা হল। ছি-ছি আমরা কী বিপদের দিনে ওঁকে এমনি করেই ফেলে পালাব! সেইদিন সত্যি প্রথম উপলব্ধি হল, মিসেস চৌধুরি কতখানি একলা। বুঝলাম পৃথিবীতে মেয়েমানুষ হয়ে জন্মাবার পর সারাজীবন একজন অভিভাবকের প্রয়োজন কেন এত অপরিহার্য হয়।

মিসেস চৌধুরি, আপনি যেখানেই থাকুন, আজ অকপটে স্বীকার করছি—সেদিন আপনার জন্যে আমার মায়া হয়েছিল সত্যি!

থাক-সে কথা। আপনার বাড়িতে গিয়েই আমি বলেছিলাম—আজ বড়ো ভয় পেয়েছিলাম।

আপনি তখন সালোয়ার পায়জামা পরে কৌচে ঠেস দিয়ে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। জিজ্ঞেস করেছিলেন—কেন?

কিন্ত উদবেগের লেশমাত্র ছায়াও আপনার মুখে ছিল না।

আমি বললাম—বাড়ির সামনে ভিড় দেখে ভাবলাম বুঝি পুলিশের হাঙ্গামা, কিন্তু পুলিশের নাম শুনে আপনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আবার কৌচে হেলান দিয়েছিলেন।

কিন্তু কী?

কিন্তু দেখলাম ফুটপাথের ওপর বাঁদর-নাচ হচ্ছে।

আপনি হেসে বলেছিলেন—না, সেসব ভয় নেই, পুলিশ আমার কিছু করবে না। তবে ভয় ফুলচাঁদকে নিয়ে।

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম—কেন, ফুলচাঁদ আপনার কী করতে পারে?

আপনি বলেছিলেন—না, আমার আর সে কী করবে? ফুলচাঁদ আমার চেয়ে বড়োলোক হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে তার টিকি বাঁধা! কিন্তু ভয় অন্য ব্যাপারে।

অন্য কী ব্যাপার?

ভয় লাবণ্যের জন্যে—বলে আপনি গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন।

তখন আমি জিজ্ঞেস করিনি—কে লাবণ্য! কী তার পরিচয়!

আপনার হয়তো মনে নেই আপনি নিজের মনেই যেন বলেছিলেন লাবণ্যকে ফুলচাঁদ বহুদিন থেকে চাইছে। দুশো পর্যন্ত খরচ করতে রাজি—আমিই রাজি হইনি—শেষে কোনও দিন না—

মনে আছে এবারে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম—লাবণ্য কে?

আপনি সে-প্রশ্নের জবাব দেননি। আপনি তেমনি কৌচে হেলান দিয়েই বলেছিলেন—ফুলচাঁদ যদি বাসন্তীকে চাইত আপত্তি করতাম না, কল্যাণীকে চাইলেও চলত, টগরের বেলাতেও কিছু বলবার ছিল না! আমি আধ ঘন্টার মধ্যে টেলিফোনে আনিয়ে নিতাম, কিন্তু তা বলে লাবণ্য?

ছি-ছি-

লাবণ্যকে আপনি কেন অতখানি সম্মান করতেন তা সেদিন কিছুটা যেন বুঝেছিলাম, আর কিছুটা যেন বুঝতে চেষ্টাই করিনি। সেদিন মিসেস চৌধুরিই কি জানতেন তাঁর সেই লাবণ্যকে নিয়ে গল্প লেখানোর জন্যে একদিন রাত বারোটার সময় আমার বাড়িতেই আসতে হবে!

হয়তো মিসেস চৌধুরি নিজের জীবনে যা হারিয়েছিলেন, তা ফিরে পেয়েছিলেন লাবণ্যের মধ্যে। হয়তো সেইজন্যই ফুলচাঁদের হাতে লাবণ্যকে তুলে দিয়ে নিজেকেই অপমান করতে চাননি!কে জানে?

তাই ফুলচাঁদের প্রস্তাবের উত্তরে মিসেস চৌধুরি বলেছিলেন—দুশো কেন, পাঁচশো টাকা দিলেও লাবণ্যকে পাবে না। ওর দিকে তুমি নজর দিয়ো না ফুলচাঁদ।

কিন্তু ফুলচাঁদকে আপনি চিনতে পারেননি। ফুলচাঁদ শেঠ জাত-ব্যবসাদার, সাতপুরুষের ব্যবসাদার। কখন কিনতে হবে, কখন বেচতে হবে, তা সে জানে। সেও তাই ধাপে ধাপে উঠেছে। পাঁচশোতে রাজি না-হয়, সাতশো। সাতশোতে রাজি না-হয়, আটশো—আটশোতে রাজি না-হয়…

আজও যেন চেষ্টা করলেও দেখতে পারি, তেতলার থেকে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসছে নিরঞ্জন—পাশে লাবণ্য!

লাবণ্য যেন খুশিতে উজ্জ্বল। বললে—দেখেছ, একটু মাটি নেই কোথাও বাড়িটাতে।

নিরঞ্জন বুঝতে পারল না। বললে—কেন, মাটি দিয়ে কী হবে?

একটা তুলসীগাছ পুঁততাম। হিন্দু গেরস্থের বাড়িতে তুলসীর গাছ রাখতে হবে যে—

নিরঞ্জন বললে—তা সে একটা টবে পুঁতলেই চলবে—এই রান্নাঘরের পাশে।

কিন্তু শোবার ঘর কোনটা করবে?

দক্ষিণের ঘরটাই তো ভালো সবচেয়ে, জানলা খুলে অবশ্য আকাশ দেখা যায়।

একটা খাট কিনতে হবে আমাদের—

নিরঞ্জন হেসে উঠল—সবুর করো, সবে তো চাকরি হল, আস্তে আস্তে হবে সব—আগে বাড়িটাই হোক।

বাড়ির মালিক বললেন, আমার এক কথা—ভাড়া চল্লিশ টাকা, যা সবাই দিচ্ছে আপনারাও তাই দেবেন। কিন্তু

কিন্তু কী?

মালিক এবার আসল কথাটা পাড়লেন। বললেন—ব্যবসায় আমার অনেক লোকসান গেছে এদানি, এখন ওই বাড়ি-ভাড়াতেই সংসার চলছে একরকম, তা সেলামি কিছু দিতে হবে আপনাদের।

নিরঞ্জন দমে গেল। লাবণ্যও ফিরে আসছিল। এমন ঘটনা প্রথম নয়। আগে জানতে পারলে—

তবু নিরঞ্জন জিজ্ঞেস করল—কত?

যেন কম-সম হলে তৈরি সে।

মালিক বললেন—বেশি না, আর সব টেনেন্ট যা দিয়েছেন, তা-ই দেবেন তার একপয়সা বেশি নেব না। আমার কাছে সবাই সমান।

সাম্যবাদীর মতন পরমনিস্পৃহ ভঙ্গি করলেন তিনি।

তবু কত?

পুরোপুরিই দেবেন ভাঙা-ভাঙতি ভালোবাসিনে আমি।

তবু তিনি দুর্বোধ্য হচ্ছেন দেখে দয়া করে খুলে বললেন—হাজারের কম আমি নিইনে।

ফুলচাঁদ সেদিন সেই কথাই বললে—আটশোতে রাজি না-হয়, হাজার

সংখ্যাটা পুরোপুরি হলে যেন অন্যরকম শোনায়। কিন্তু নিজের কানকে আপনি বোধ হয় বিশ্বাস করতে পেরেছিলেন মিসেস চৌধুরি। তাই হয়তো দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করেননি। তবু কিন্তু আপনাকে ব্যস্ত হতে দেখা গেল না। আপনি তেমনি নির্বিকারভাবেই টফি চুষতে লাগলেন।

কিন্তু ঘটনাচক্রে ঠিক তখনই কি লাবণ্য আর নিরঞ্জনকে সামনে দিয়ে যেতে হয়। রাত তখন সাড়ে নটা। চটি ফটাস-ফটাস করতে করতে চলেছে লাবণ্য। সারাদিন অফিসের খাটুনির পর বাড়ি ফিরতে পারলে সে বাঁচে। আপনার ভাষাতেই বলি—আপনার মনে হল—ও তো লাবণ্য নয়, ও যেন আপনার বিগত জীবন, আপনার পরিশুদ্ধ আত্মা আপনাকে ব্যঙ্গ করে আপনার দিকেই পেছন ফিরে চলে যাচ্ছে। আর ফিরে আসবনা কোনও দিন।

আপনি সেখানে বসেই নেপালি দারোয়ানকে ডাকলেন—জঙ্গি?

জঙ্গি তিন লাফে এসে অ্যাটেনশানের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে স্যালিউট করার পর আপনি বললেন। লাবণ্যকে ডেকে দে তো।

লাবণ্য এল।

আপনি আপনার আত্মার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালেন এবং সেই বোধ হয় প্রথম আর শেষবার।

তার পর তাকে আড়ালে নিয়ে এসে ফুলচাঁদের প্রস্তাবটা জানালেন। আপনার মনে হল, পৃথিবীর প্রচ্ছদপটে আজ পর্যন্ত যত মানুষের পদচ্ছায়া পড়েছে, সেই কোটি কোটি সংখ্যাহীন জনসমুদ্রের তরঙ্গ যদি আবার উদবেলিত হয় তো হোক। নক্ষত্র-নীল আকাশের সমস্ত জ্যোতিষ্ক আর কক্ষচ্যুত কেন্দ্রচ্যুত হয়ে যদি দিগভ্রান্ত হয় তো হোক। তবু আপনার আত্মা অচল অটল থাকবে! লাবণ্য কিন্তু সমস্ত শুনে মাথা নীচু করে রইল খানিকক্ষণ।

তারপর যেন দাঁতে দাঁত চেপে বললে—ওকে একবার জিজ্ঞেস করে আসি, মাসিমা!

মর্নিং গ্লোরির আড়ালে অন্ধকারে একলা অপেক্ষা করছিল নিরঞ্জন। লাবণ্য সেখানে গেল। তারপর অনেকক্ষণ ধরে কী যে পরামর্শ হল দুজনে। দূর থেকে কিছু শোনা গেল না। তবু আভাসে বোঝা গেল—একজন বুঝি কেবল বোঝাতে চাইছে, আর একজন যেন কিছুতেই বুঝতে চাইছে না।

এক সময়ে লাবণ্য এল। আপনার সামনে এসে মাথা নীচু করে বললে—আমি রাজি।

কথাটা বোধ হয় লাবণ্য একটু আস্তেই বলেছিল, কিন্তু আপনি দেখতে পেলেন—ঘরের ভেতর ফুলচাঁদ সে-কথা শুনে নতুন ধরানো সিগারেটটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠেছে। আর আপনি যে আপনি, আপনারও মনে হল বারান্দায় চেইনে-বাঁধা অ্যালসেসিয়ানটা যেন বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠল।

বললাম—তারপর?

মিসেস চৌধুরির পাকা চুলের খোঁপাটা আবার একবার খুলে গেল। এবার সেটাকে আর সামলাবার চেষ্টা করলেন না। বললেন—তারপর? তারপর সেই প্রথম আর সেই শেষ। আর আসেনি তারা আমার বাড়িতে। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের লোকেরা আর কোনওদিন সে রাস্তায় হাঁটতে দেখেনি নিরঞ্জন আর লাবণ্যকে।

আবার জিজ্ঞেস করলাম—তবে কোথায় গেল তারা?

মিসেস চৌধুরি বলেন, আমিও তাই ভাবতুম, কোথায় গেল তারা। মনে হত-সেও বোধ হয় অন্য মেয়েদের পর্যায়ে নেমে এসেছে। টালিগঞ্জের বাসন্তীকে জিজ্ঞেস করেছি, চেতলার কল্যাণীকে জিজ্ঞেস করেছি, বেহালার টগরকে জিজ্ঞেস করেছি—তারা এখনও আসে কিন্তু বলতে পারে না কোথায় গেল তারা—এমনকী ফুলচাঁদও না।

আবার জিজ্ঞেস করলাম—তবে হয়তো ওই ঘটনার পর নিরঞ্জন ত্যাগ করছে তাকে।

তাও ভেবেছি অনেকবার। হয়তো অবিশ্বাসে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে নিরঞ্জন। আর ওদিকে আত্মধিক্কারে হয়তো আত্মহত্যা করেছে লাবণ্য। নিজের আত্মাকে আমি নিজের হাতে টুটি টিপে মেরে ফেলতে পেরেছি জেনে মনে মনে খুব খুশিই হয়েছিলাম—সত্যি বলছি খুব খুশি হয়েছিলাম। মিস্টার চৌধুরি যেদিন বিয়ের পর আমার সুটকেসের মধ্যে একটা প্রেমপত্র আবিষ্কার করে আমায় ত্যাগ করেছিলেন, তারপর জীবনে এই প্রথম এমন খুশি হতে পারা সে যে কী আনন্দ! সে আনন্দে সেদিন বিকেলবেলা ঘুম থেকে উঠে তিন কাপের বদলে তিন-ত্রিককে ন-কাপ চা-ই খেয়ে ফেললাম।

মিসেস চৌধুরির মুখের দিকে চেয়ে দেখি তিনি কথা বলছেন আর চোখ বেয়ে জল পড়ে তাঁর গালের রুজ ঠোঁটের লিপস্টিক চোখের সুর্মা সব ধুয়ে মুছে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থা তাঁর আগে কখনও দেখিনি। কী যে করব বুঝতে পারলাম না।

তারপর মিসেস চৌধুরি হঠাৎ সপ্রতিভ হয়ে ব্যাগ খুলে একটা চিঠি বার করলেন।

আমার দিকে সে-খানা এগিয়ে দিয়ে বললেন—তারপর এতদিন পরে আজ সকালবেলা এই চিঠি, চিঠি পড়ে আমি তো অবাক।

দেখলাম নিরঞ্জন আর লাবণ্যের বিয়ের নিমন্ত্রণের চিঠি। পনেরোর সি কালী সরকার রোড, তেরো নম্বর স্যুট! আজকের তারিখ।

আমি মিসেস চৌধুরির দিকে নির্বাক দৃষ্টি দিয়ে চাইতেই তিনি বললেন—এখন সেখান থেকেই আসছি। বললাম—কি দেখলেন?

দেখলাম বিয়েতে যেমন হয় তেমনই লাবণ্য সিঁথিতে সিঁদুর পরেছে, চন্দনের ফোঁটা। নিরঞ্জনের গায়েও গরদের পাঞ্জাবি, মাথায় টোপর। হঠাৎ কোথা থেকে সব আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব এসে পড়েছে, এতদিন কোথায় ছিল তারা সব কে জানে। আজ হঠাৎ ওদের শুভাকাঙক্ষীর আর আশীর্বাদকের অভাব নেই। বাড়িটাও ভালো, রান্নাঘরের পাশে একটা টবে তুলসীগাছ প্রতিষ্ঠা করেছে, শোবার ঘরে একটা খাট, দক্ষিণ দিকের জানলা খুললে আকাশ দেখা যায়। আয়োজনও করেছে প্রচুর কিন্তু ভালো করে লক্ষ করে দেখলাম ফুলচাঁদের স্পর্শের কলঙ্ক কোথাও নেই এতটুকু—চন্দনের ফোঁটায় সব ঢেকে গেছে। কিন্তু আমার যেন কিছু ভালো লাগল না। আমি জলস্পর্শ না করে সোজা চলে এলাম বাইরে, তারপর একটা ট্যাক্সি ডেকে সমস্ত কলকাতাটা টো টো করে ঘুরে এখন এই রাত বারোটার সময় তোমার এখানে।

গল্প বলতে বলতে মিসেস চৌধুরি যেন স্তিমিত হয়ে এলেন। মনে হল, এখনি যেন তিনি নিভে যাবেন।

বললাম—তা হোক, তবু নিরঞ্জনের উদারতা আছে বলতে হবে।

মিসেস চৌধুরি দপ করে উঠলেন—তা থাকগে উদারতা, কিন্তু গল্পে তুমি ওদের বিয়ে দিতে পারবে না—শেষটুকু তোমায় বদলাতেই হবে।

কেন?

মিসেস চৌধুরি দম নিয়ে বলতে লাগলেন—হ্যাঁ, আগাগোড়া সব ঠিক রেখে শেষকালটাতে বদলে দেবে। বিয়ে ওদের কিছুতেই দিতে পারবে না তোমার গল্পে—ওর আত্মায় ঘুণ ধরেছে যে—আমি মিসেস চৌধুরি তার সাক্ষী।

বললাম—কিন্তু আত্মা তো মরে না।

নিশ্চয়ই মরে আলবাত মরে, আমার আত্মা মরেছে, লাবণ্যের মরেছে, বাসন্তী, কল্যাণী টগর সকলের মরেছে। আর তা ছাড়া যদি বিয়ে দিতেই হয় তো দু-দিন বাদেই ওদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিয়ো। তারপর ধাপে ধাপে লাবণ্যকে কল্যাণী, বাসন্তী আর টগরের পর্যায়ে আনবে, আর তারপর একদিন জীবনের শেষ অঙ্কে দেখবে লাবণ্য বাড়িভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে আমার মতোন…পারবে না করতে? লক্ষ্মীটি, শেষটুকু ট্র্যাজেডি করে দিয়ো।

আবার জিজ্ঞাসা করলাম—কিন্তু কেন?

ধরে নাও আমার শখ, আর কিছু নয়। একদিন আমাকে যদি তুমি ভালবেসে থাকো, আমিও যদি তোমার কোনওদিন কোনও উপকারে এসে থাকি তো আমার এ অনুরোধটা রেখো ভাই। আর তা ছাড়া ‘অতিঘরন্তী না-পায় ঘর’—এ কথাটা মানো তো?

অতীতের সব ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে লাভ নেই আজ। তবু বলতে পারি, দশ বছর ধরে এ গল্প লেখবার জন্যে আমার চেষ্টার আর অন্ত ছিল না। বন্ধুবান্ধবের কাছে কতবার গল্প করেছি—কেউ বিশ্বাস করেছে, কেউ করেনি, কিন্তু মানুষের সংসারে চোখের সামনে জীবন সম্বন্ধে মূল্যবোধের এত পরিবর্তন দেখেছি—এত অভাবনীয় বিস্ময়ের পরিবর্তন পরিসমাপ্তি ঘটেছে এত সহজ স্বাভাবিকভাবে যে, তা বলা যায় না। তবু সাহিত্যের কারবারে এসে দেখছি আজও জীবন সম্বন্ধে আমাদের যা ধারণাই থাক সাহিত্যে আমরা আজও তো ফরমুলা মেনে চলি। তাই সধবা কিরণময়ীকে শেষপর্যন্ত পাগল করতে হয়, বিধবা রমাকে কাশী পাঠাতে হয় আমাদের। তাই বিশ্বাস করুন মিসেস চৌধুরি—তাই আপনার অনুরোধ মতোই গল্পটা শেষ করব ভেবেছিলাম। লাবণ্যকে অধঃপতনের শেষ ধাপে নামিয়ে দিতে পারলে আমিও আপনার মতোই খুশি হতাম। তাতে গল্পটা ‘অতি-ঘরন্তী না পায় ঘর’ এই সাধারণ প্রবাদবাক্যটারও একটা উদাহরণস্থল হয়ে থাকত। জীবনে না-হোক, সাহিত্যে অনন্ত তাই-ই ঘটে!সেইজন্যই তো বলছিলাম যে এ গল্পটা না-লিখতে হলেই আমি খুশি হতাম।

কিন্তু আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন মিসেস চৌধুরি, আমি আপনার সম্পূর্ণ অনুরোধটা রাখতে পারলাম না।

কেন রাখতে পারলাম না, তার একটা কারণ আছে বইকী।

সেই কারণটা বলি। লজ্জায় ঘৃণায় ধিক্কারে আমার মাথা নীচু হয়ে এলেও আমাকে তা বলতেই হবে!

সেদিন কলকাতার বাইরে সি. পি.র একটা কোলিয়ারি অঞ্চলে যেতে হয়েছিল আমাকে। একটা লাইব্রেরির উদবোধনী উপলক্ষ্যে সভাপতি পদের ভার নিয়ে।

সভা হল।

সভার শেষ ভিড় পাতলা হবার পর জলযোগের ব্যবস্থা হয়েছিল ওয়েলফেয়ার অফিসার মিস্টার মজুমদারের বাড়ি।

স্বামী-স্ত্রী। দুজনেই ভারী অতিথিপরায়ণ। ছোট্ট বাংলো। চারিদিকে বাগান করেছেন। ঘরটাও বেশ সাজানো। বেশ বোঝা গেল, গৃহের সর্বত্র গৃহিণীর একটা সুনিপুণ কল্যাণ-হস্তের স্পর্শ লেগে আছে। চা পরিবেশন করতে লাগলেন মিসেস মজুমদার।

মিস্টার মজুমদার বললেন—মিসেস মজুমদার আপনার একজন ভক্ত, জানেন না বোধ হয়, ওই দেখুন আপনার সব-ক-টা বই-ই কিনেছেন।

মিস্টার মজুমদার সলজ্জভাবে হাসতে লাগলেন। সত্যিই পাশের আলমারিতে অন্যান্য বই-এর সঙ্গে আমার লেখা কটা বই রয়েছে দেখে নিয়েছি আগেই।

মিসেস মজুমদার আবার বললেন, এখানকার মহিলা-সমিতিটা ওঁরই তৈরি, আর আজকে যে লাইব্রেরির উদবোধন হল এ-ও ওঁরই চেষ্টায় বলতে পারেন—সভাপতি হিসেবে আপনার নাম তো উনিই প্রথম সাজেস্ট করেন।

নিজের প্রশংসায় মিসেস মজুমদার যেন বড়ো লজ্জিত হচ্ছেন বলে মনে হল।

হয়তো তিনি কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু বাধা পড়ল। হঠাৎ চাকরের সঙ্গে ঘরে ঢুকল একটি পাঁচ-ছ বছরের ছেলে। সুন্দর দেহশ্রী। ছেলেটিকে চিনতে পারলাম। সভায় এই ছেলেটিই আমার গলায় মালা পরিয়েছিল। ছেলেটি ঘরে ঢুকে মায়ের কোলের কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল। বললাম, এটি আপনার ছেলে বুঝি? কী নাম তোমায় খোকা?

কাছে ডাকলাম তাকে।

ছেলেটি বিশুদ্ধ বাংলায় বললে, নীলাব্জ মজুমদার।

নীলাব্জ! বড়ো সুন্দর নাম দিয়েছেন তো?

মিস্টার মজুমদার এবারও স্ত্রীর দিকে চেয়ে নিয়ে হেসে বললেন—এ নাম ওঁরই দেওয়া, ও নাম দেওয়ার মধ্যেও একটা উদ্দেশ্য আছে জানেন, আমাদের দুজনের নামের প্রথম দুটো অক্ষর নিয়ে ওর নাম হয়েছে নীলাব্জ।

ওঁদের দুজনের নাম জিজ্ঞাসা করা ভদ্রতাবিরুদ্ধ হবে কিনা ভাবছি—

মিস্টার মজুমদার নিজেই আমার কৌতূহল নিবৃত্তি করে দিলেন। হাসতে হাসতে বললেন আমার নাম নিরঞ্জন, আর ওঁর নাম লাবণ্য কিনা—তাই থেকে নীলাব্জ। কিন্তু আপনি আর একটা সিঙাড়া নিন—কী আর একটা সন্দেশ…

আমি কিন্তু ততক্ষণে নির্বাক হয়ে দেখছি। দেখছি মিসেস মজুমদারকে। এতক্ষণ তো নজরে পড়েনি। তাঁর চিবুকের ওপর ডান দিকে একটা কালো তিল জ্বল-জ্বল করছে।

সকল অধ্যায়

১. বিচারক – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. ডালিম – চিত্তরঞ্জন দাশ
৩. চন্দ্রমুখী – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
৪. ঠিকানায় ‘বুধবার’ – জগদীশ গুপ্ত
৫. কুসুম – হেমেন্দ্রকুমার রায়
৬. আদরিণী – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী
৭. সাকীর প্রথম রাত্রি – রমেশচন্দ্র সেন
৮. হিঙের কচুরি – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
৯. মেলা – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
১০. মন্দ লোক – শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
১১. দন্ত কৌমুদী – বনফুল
১২. গোষ্পদ – যুবনাশ্ব
১৩. ইতি – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
১৪. খট্টাঙ্গ পুরাণ – শিবরাম চক্রবর্তী
১৫. দুকানকাটা – অন্নদাশংকর রায়
১৬. চাচা কাহিনি – সৈয়দ মুজতবা আলী
১৭. বিকৃত ক্ষুধার ফাঁদ – প্রেমেন্দ্র মিত্র
১৮. অঙ্গার – প্রবোধকুমার সান্যাল
১৯. নমুনা – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
২০. চোর! চোর! – বুদ্ধদেব বসু
২১. বারবধূ – সুবোধ ঘোষ
২২. ট্যাক্সিওয়ালা – জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী
২৩. বাইজি – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
২৪. তিমিরাভিসার – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
২৫. জামাই – নরেন্দ্রনাথ মিত্র
২৬. তলানি – নবেন্দু ঘোষ
২৭. মাশুল – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
২৮. শনি – সন্তোষকুমার ঘোষ
২৯. আঙুরলতা – বিমল কর
৩০. সুর্মা – রমাপদ চৌধুরী
৩১. ঘরন্তী – বিমল মিত্র
৩২. প্রাণ-পিপাসা – সমরেশ বসু
৩৩. বাগাল – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
৩৪. ছদ্মবেশিনী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৩৫. নরক – প্রফুল্ল রায়
৩৬. পহেলি পেয়ার – বুদ্ধদেব গুহ
৩৭. নিরুদ্দেশ প্রাপ্তি হারানো – সমরেশ মজুমদার
৩৮. বেওয়ারিশ লাশ – জাহান আরা সিদ্দিকী
৩৯. ঝরা পাতা – তসলিমা নাসরিন
৪০. নিজের সঙ্গে দেখা – তৃণাঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন