ডালিম – চিত্তরঞ্জন দাশ

শৈলেন্দ্র হালদার

তখন আমার চল্লিশ পার হইয়া গিয়াছিল, কিন্তু আমোদ-প্রমোদ ছাড়ি নাই। ছাড়িও নাই, ছাড়িতে চেষ্টাও করি নাই। আমি কোনো কালেই মানুষ বড় ভালো ছিলাম না। সংসারের আমোদ-আহ্লাদের সঙ্গে কেমন একটা প্রাণের যোগ ছিল , আমার মনে হইত, কখনও যোগভ্রষ্ট হইব না। সমস্ত যৌবনটা একরজনীর উৎসবের মত কাটাইয়া দিয়াছি। কখন আরম্ভ হইল, কখন শেষ হইল, বুঝিতেও পারিলাম না। কোনও সুখ হইতে আপনাকে কখনও বঞ্চিত করি নাই, আর তার জন্য কোনও আপশোষও হয় নাই। প্রাণের মাঝে যে একটা মুক্ত আকাশ, একটা গভীর পাতাল আছে, তাহা তখন বুঝিতাম না। জীবনটা সর্বদাই এক বিশাল সমতল ভূমির মত মনে হইত, জীবনের রাজপথে ফুল কুড়াইতে কুড়াইতে আর হাসি ছড়াইতে ছড়াইতে চলিয়া যাইতাম। কখনও পায়ে কাঁটার আঁচড় লাগে নাই। কখনও প্রাণে দাগ বসে নাই। সমস্ত আমোদ-প্রমোদের মধ্যে বিনা চেষ্টায় সহজেই প্রাণটাকে আস্ত রাখিয়াছিলাম। কিন্তু আজ প্রায় বুড়া হইতে চলিলাম, আজ তার জন্য ভাবিয়া জীবন অন্ধকার হইয়াছে। সে কতদিনকার কথা। তারপর কত বৎসর চলিয়া গিয়াছে, তাহাকে আর ভুলিতে পারিলাম না। কত খুঁজিয়াছি—কোথাও পাইলাম না। সে যে অদৃশ্যভাবে আমার আশে-পাশে ঘুরিয়া বেড়ায়—ধরা দেয় না। তাহার পদধবনি শুনিতে পাই, তাহাকে দেখিতে পাই না। চোখ বুজিলে তাহাকে বুকের ভিতর পাই, চোখ মেলিলে, কোথায় মিলাইয়া যায়। আজও তাহাকে খুঁজিতেছি, জীবনের অবশিষ্ট কাল বুঝি খুঁজিতে খুঁজিতেই কাটিয়া যাইবে। তাহাকে পাইব না? আমি যে তাহার জন্য অপেক্ষা করিয়া আছি।

তাহার নাম জানি না, সকলে তাহাকে ‘ডালিম’ বলিয়া ডাকিত। সে দেখিতে সুন্দর কি কুৎসিত আমি এখনও বলিতে পারি না। কিন্তু তার মুখখানি এখন পর্যন্ত আমার প্রাণে প্রদীপের মত জ্বলিতেছে। মাথায় অন্ধকারের মত এক রাশ চুল, মুখে একটা গভীর পাগল করা ভাব, আর তার চোখ দুটি?—চাহিবামাত্র আমার চোখ ছল ছল করিয়া উঠিয়াছিল। আজ পর্যন্ত অনেক রমণীর সঙ্গে মিশিয়াছি, আমোদ-প্রমোদ করিয়াছি, কিন্তু এমন বিষাদের প্রতিমূর্তি, চোখে এমন গদ গদ করুণভাব আর কখনও দেখি নাই। বোধ হয়, আর কখনও দেখিবও না।

সে দিন সন্ধ্যাকালে কয়জন বন্ধু লইয়া বাগানে আমোদ-প্রমোদ করিতে গিয়াছিলাম। পূর্ণবাবুর বাগান চাহিলেই পাওয়া যাইত, আমরা চাহিয়া লইয়াছিলাম। বাগানটি খুব বড়, ফটক হইতে সরু একটা রাস্তা ধরিয়া অনেক দূরে গেলে বাড়িটা পাওয়া যায়। বাড়ির সামনেই একটা ঘাট-বাঁধান পুকুর। ঘাটের ঠিক উপরেই শাণ-বাঁধান লতামণ্ডপ। সেই সরু রাস্তা ধরিয়া, সেই লতামণ্ডপের ভিতর দিয়া, বাড়ির ভিতরে যাইতে হয়। সে দিন বন্দোবস্তের কোন অভাব ছিল না। নানা রকমের প্রচুর সুরা, নানা রকমের খাবার, আলোয় আলোয় প্রমোদ-মন্দির দিনের মত জ্বলিতেছিল।

আমার পৌঁছিতে একটু দেরী হইয়াছিল। ফটকে নামিয়াই সেই সরু রাস্তা। চাঁদের আলো খুব ক্ষীণ হইয়া ছায়ার মত সব ঢাকিয়াছিল। নানা ফুলের গন্ধে, সেই ম্লানছায়ালোকে, লতাপল্লবের মর্মরধবনিতে সেই সরু রাস্তাটিকে যেন জীবন্ত করিয়া রাখিয়াছিল। আমার মনে কি হইতেছিল, আমি ঠিক বলিতে পারি না। কিন্তু প্রত্যেক পদধবনিতে কে যেন আমাকে সাবধান করিয়া দিতেছিল, সে রাস্তায় অনেকবার গিয়াছি, সেই বাগানে অনেক প্রমোদ-রাত্রি কাটিয়াছে, কিন্তু সর্বদাই হালকা মনে ফুর্তি করিতে গিয়াছি। সে দিন আমার প্রাণে কোথা হইতে একটা ভার চাপিয়াছিল। সে যে কেমন ভার, আমি কিছুতেই বুঝাইয়া বলিতে পারি না।

আমি আস্তে আস্তে সেই বাড়িতে ঢুকিলাম। সিঁড়ি দিয়া উঠিতে উঠিতে গান হইতেছে শুনিলাম। পরিচিত গায়িকা গাহিতেছে—’চমকি চমকি যাও।’ ঘুঙুরের শব্দ শুনিলাম। নৃত্যগীতে আমার মন নাচিয়া উঠিত। কিন্তু সেদিন কি জানি কিসের ভারে আমাকে চাপিয়া রাখিয়াছিল। আমি স্বপ্নাবিষ্টের মত আস্তে আস্তে উঠিয়া সেই ঘরে প্রবেশ করিলাম।

তখনও নাচ হইতেছে। সেই গায়িকা হাত ঘুরাইয়া নাচিয়া নাচিয়া গাহিতেছে—’চমকি চমকি যাও!’ আমাকে দেখিয়াই আমার বন্ধুরা সব চেঁচাইয়া উঠিল—’কেয়া বাৎ কেয়া বাৎ, দাদা আ-গিয়া।’ একজন বলিল ‘দাদা, এই লাও এক পাত্র চড়াও, আনন্দ কর।’ আর একজন গান ধরিল, ‘এত গুণের বঁধু হে।’ আমার এক বন্ধু উঠিয়া নাচিয়া গাহিতে লাগিল—’কাঁটা বনে তুলতে গিয়ে কলঙ্কেরি ফুল। ওগো সই কলঙ্কেরি ফুল।’ আর একজন উঠিয়া আমার মুখের কাছে হাত নাড়িয়া গাহিল, ‘দেখলে তারে আপনাহারা হই।’ আমার আর একজন বন্ধু একটা গেলাসে মদ ঢালিয়া আমার হাতে দিয়া গাহিলেন, ‘দাদা, হেসে নাও, দু’দিন বইত নয়, কি জানি কখন সন্ধ্যা হয়।’ সবার হাতে মদের গেলাস, মদের গন্ধ, ফুলের সৌরভ, সিগারেটের ধুঁয়া, গানের ধবনি, সারেঙ্গের সুর, ঘুঙুরের শব্দ, তবলার চাঁটি। কিন্তু আমি যেন একটা অপরিচিত লোকে আসিয়া পৌঁছিলাম। অনেকবার এই প্রমোদে মন ভাসাইয়া আনন্দ করিয়াছি। সেদিন কে যেন আমার মনের ভিতর থেকে আমায় ধরিয়া রাখিয়াছিল। মনে হইতেছিল, এ সবই আমার নূতন, অপরিচিত। আমাকে জোর করিয়া এই নূতন অপরিচিত লোকে টানিয়া আনিয়াছে। সেখানে আমার অনেক পরিচিত লোক ছিল—বিডন স্ট্রীটের সুশীলা, হাতিবাগানের নূরী, পুতুল কিরণ, বেড়াল হরি, এই রকম অনেক , কিন্তু সেদিন হঠাৎ মনে হইতে লাগিল, ইহাদের কাহাকেও আমি চিনি না।

ইহাদের একটু তফাতে, এক কোণে বসিয়াছিল ‘ডালিম’। একজন বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘ও মেয়েটিকে আগে কখনও দেখি নাই।’ সে বলিল, ‘বাস, ওকে জান না? ও যে ডালিম, শহর মাত করেছে, অনেক কাপ্তেন ভাসিয়েছে।’ আমি বলিলাম, ‘কাপ্তেন ভাসানোর মত চেহারা তো ওর নয়। ও যে এক কোণে স’রে ব’সে আছে।’ বন্ধু বলিল, ‘ওই ত ওর ঢং, ও অমনি করে লোক ধরে।’ আমার মন তাহা মানিতে চাহিল না। আমি কিছু না বলিয়া একদৃষ্টে চাহিয়া রহিলাম। সে-ও আমায় দেখিতেছিল। বহুবার চোখে চোখে মিলিয়া গেল। আমি কি দেখিলাম—তাহার চাহনিতে কি ছিল—আমি কেমন করিয়া বলিব—আমি যে নিজেই ভালো করিয়া বুঝিতে পারিতেছিলাম না। আমার মনে হইল, সেই আমোদ-প্রমোদের সঙ্গে তার প্রাণের যোগ নাই। তার চোখদুটি যেন আর কিসের খোঁজ করিতেছে। আমার প্রাণে কি হইতেছিল, তাহা ত বুঝাইয়া বলিতে পারি না। আমার ভিতর থেকে কে যেন কাঁদিয়া কাঁদিয়া উঠিতে লাগিল। ইচ্ছা হইল, উহাকে বুকের ভিতর টানিয়া লই।

এমন সময় কে বলিল, ‘ডালিম একটা গাও।’ আর একজন বলিল, ‘ডালিম ভালো গাইতে পারে না।’ আমি তাহার দিকে চাহিলাম। সে বুঝিল, বলিল—”আমি ভালো গাইতে পারি না।” আমি বলিলাম, ‘গাও না?’ সে একটু সরিয়া আমার সামনে আসিয়া গান ধরিল। আমি সে রকম গান কখনও শুনি নাই। সে গানের সুরের কেরামতি ছিল না, তালের বাহাদুরী ছিল না , কিন্তু সে গানে যাহা ছিল, তাহা আর কখনও কোন গানে পাই নাই। মনে হইল, ওই গানের জন্য আমার সমস্ত মনটা অপেক্ষা করিয়া ছিল। চোখের জলে ভেজা ভেজা সেই সুর, সুরের মধ্যে গানের কথাগুলি যেন নয়নপল্লবে অশ্রুবিন্দুর মত জ্বলিতেছিল। সেই সুরের প্রত্যেক স্বর, সেই গানের প্রত্যেক কথা আজও আমার প্রাণপল্লবে বিন্দু বিন্দু অশ্রুর মতই জ্বলিতেছে। ডালিম গাহিতেছিল :

কেমন ক’রে মনের কথা কইব কানে কানে।

প্রাণ যে আমার ছিঁড়ে গেছে কাহার কঠিন টানে।।

আজি আমি ঝরা ফুল, পড়ি তোমার পায়,

গন্ধুটুকু রেখো বঁধু হিয়ায় হিয়ায়।

প্রাণের পাতে ফুলের মত

রাখব তোমায় অবিরত

তফাৎ থেকে দেখব শুধু রাখব প্রাণে প্রাণে ,

প্রাণ যে আমার ছিঁড়ে গেছে কাহার কঠিন টানে।।

আমি জিজ্ঞাসা করিলাম ‘তুমি কখনও গান শিখেছিলে?’ সে বলিল, ‘না, ওস্তাদের কাছে কখনও শিখি নাই।’ আমি বলিলাম, ‘আমি এমন গান কখনও শুনি নাই। তুমি কোথায় থাক?’ সে কোন কথা বলিল না। আমি আবার জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘এই গানটি আমাকে একলা এক দিন শুনাইবে?’ সে কোন উত্তর দিল না। আমি বলিলাম, ‘এসব তোমার ভালো লাগে?’ তাহার চোখ ছল, ছল করিয়া উঠিল, কোন কথা বলিল না।

আমার বন্ধুদের তখন প্রায় সকলেরই মত্ত অবস্থা। একজন উঠিয়া টলিতে টলিতে ইলেকট্রিক বাতিগুলি সব নিবাইয়া দিল।

আমি সেই অন্ধকারে ডালিমকে বুকে টানিয়া লইলাম। সে কিছু বলিল না। তারপর, তার হাত ধরিয়া উঠাইলাম। আমিও দাঁড়াইলাম। তাহাকে আস্তে আস্তে বলিলাম, ‘আমার সঙ্গে চল।’ সে আমার হাত ধরিল, আমার সঙ্গে চলিল।

কোথায় যাইব, মনে মনে কিছুই ঠিক করি নাই। সিঁড়ি দিয়া নামিলাম। তার পর একটা ঘরের ভিতর দিয়া সেই লতা-মণ্ডপে গেলাম। তখন চাঁদের আলো আরও ম্লান মনে হইতেছিল। পুকুরের উপর একটু উজ্জ্বল ছায়ামাত্র পড়িয়াছে। বাতাস বন্ধ। ফুলের গন্ধ থামিয়া গিয়াছে। মনে হইল, আকাশে যেন একটু মেঘ উঠিয়াছে। সেই উজ্জ্বল অন্ধকারে একখানা বেঞ্চির উপর তাহাকে বসাইলাম। আমার সর্বশরীর তখন অবশ হইয়া আসিতেছিল। বুকের ভিতর ধপ ধপ করিতেছিল। আমিও তাহার পাশে বসিলাম। আমি তাহার হাত দুটি ধরিয়া বলিলাম, ‘ডালিম, আমার তোমাকে বড় ভালো লাগে। আমার ত এমন কখনও হয় নাই।’ সে বলিল, ‘ও কথা ত সবাই বলে, মনে করিয়াছিলাম, তুমি ও কথা বলিবে না।’ আমি বলিলাম, ‘তুমি ত আমাকে চেন না।’ তাহার একখানি হাত আমার বুকের উপর দিলাম। সে বলিল—’তোমার কি হইয়াছে?’ আমি বলিলাম, ‘জানি না। ইচ্ছা হয়, তোমাকে লইয়া কোথাও পলাইয়া যাই ! এত দিনের জীবনযাপন সবই মিথ্যা মনে হইতেছে।’ সে আরও একটু আমার কাছে সরিয়া আসিল। আমার বুকের উপর মাথা রাখিয়া কাঁদিল। অনেকক্ষণ কাঁদিল। আমারও চোখে জল আসিয়াছিল, কোন কথা বলিতে পারি নাই। সে যতই কাঁদিতে লাগিল, ততই তাহাকে বুকে চাপিতে লাগিলাম। মনে হইল, ইহাকে কোথায় রাখি, কেমন করিয়া শান্ত করি। এক নিমেষে আমার সংসারের সকল সম্বন্ধ ঘুচিয়া গেল। নিশীথের স্বপ্ন যেমন প্রভাতে এক নিমেষে মিলাইয়া যায়, আমার জীবনের সকল স্মৃতি, সংসারের সকল বন্ধন, সকল ঘটনা এক মুহূর্তে কোথায় মিলাইয়া গেল! এ কি সেই আমি? আমার মনে হইতে লাগিল, আমি যেন কোন অপরিচিত ব্যক্তি, এইমাত্র এক নূতন জগতে আসিয়া দাঁড়াইয়াছি। সে অবস্থা সুখের কি দুঃখের, আমি আজ পর্যন্ত বুঝিতে পারিতেছি না। তাহাকে কেবল বুকে চাপিতে লাগিলাম। কথা বলিবার শক্তি ছিল না। মনে মনে বলিতে লাগিলাম, ‘হে আমার ব্যথিত, পীড়িত। এস, তোমার চোখের জল মুছাইয়া দি, তোমাকে বুকের ভিতর রাখিয়া দি, তুমি আর বাহিরে থাকিও না—আমার বুকের ভিতর ফুটিয়া ওঠ। আমিও তোমাকে বুকে করিয়া জীবন সার্থক করি।’ কতক্ষণ পরে সে একটু শান্ত হইয়া উঠিয়া বসিল। বলিল, ‘আমি মনে করিয়াছিলাম তোমার সঙ্গে আসিব না। কে যেন আমার বুকের ভিতর থেকে বলিল, যাও, তাই আমি আসিলাম। তুমি আমার কথা শুনিতে চাও? আমি মনে করিয়াছিলাম বলিব না, কিন্তু কে যেন আমার প্রাণের ভিতর হইতে বলাইতেছে। শুনিবে?’ আমি বলিলাম, ‘শুনিব , শুনিবার জন্যই তোমাকে এখানে আড়াল করিয়া আনিয়াছি।’ সে তাহার জীবন-কাহিনী বলিতে লাগিল, আমি শুনিতে লাগিলাম। সেই কণ্ঠস্বর আজও আমার প্রাণে জাগিয়া আছে। তাহার প্রত্যেক কথা আমার প্রাণে ব্যথার মত বাজিতে লাগিল, আজও বাজিতেছে।

সে বলিল, ‘আমি শৈশবেই পিতৃমাতৃহীন। কুলীন ব্রাহ্মণের মেয়ে, মামার বাড়িতে প্রতিপালিত। মামা নেশা করিতেন। দিবানিশি সুরামত্ত, তাহার কাছে থেকে কখনও ভালো ব্যবহার পাই নাই। মামী আমাকে একটা বোঝা মনে করিত, তার মুখে কটুক্তি ছাড়া মিষ্টি কথা কখনও শুনি নাই। আমার মামার মামাত ভাই আমাকে ভালবাসিতেন। তাঁহার কাছে লেখাপড়া শিখিয়াছিলাম। কিন্তু আমার যখন বারো বৎসর বয়স, তখন তিনি মারা যান। তার পর চারি বৎসর পর্যন্ত সে বাড়িতে যে কি যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছি, তাহা তোমার না শুনাই ভালো। আমার ষোল বৎসর বয়সে বিবাহ হইল। আমার স্বামীর বয়স তখন পঞ্চাশ বৎসরের উপর। তার পর চা’র বৎসর শ্বশুরবাড়িতে ছিলাম। এই চা’র বৎসরের মধ্যে আমার স্বামীর সঙ্গে বোধ হয়, ছয় সাত দিনের বেশি দেখা হয় নাই। তিনি বিদেশে চাকুরী করিতেন। কখন কখন দু’এক দিনের জন্য বাড়ি আসিতেন। বাড়িতে আসিলেও বাহির-বাড়িতেই থাকিতেন। আমার সঙ্গে দুই-একবার দেখা হইয়াছিল, কখনও কথাবার্তা হয় নাই। তাঁহার আগে দুইবার বিবাহ হইয়াছিল, চার-পাঁচটি ছেলেমেয়ে ছিল। আমার শ্বাশুড়ী তাঁহার বিমাতা। আমার কথা কহিবার কেহ ছিল না। ছেলেপিলেগুলিকে দেখিতে হইত। কাঁদিলেই শ্বাশুড়ির কাছ থেকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি শুনিতাম। কখনও কখনও মারও খাইয়াছি। বাড়িতে ঝি ছিল না, সমস্ত কাজই আমাকে করিতে হইত। ঘরের মেঝে পরিষ্কার করা থেকে আরম্ভ করিয়া—রাঁধাবাড়া, ছেলেপিলেদের দেখা ও দুইবার খাওয়ার পর বাসনগুলি—বাড়ির কাছে নদী, সেই নদীতে মাজিয়া আনিতে হইত। আমার মনে হয় না যে, এই চা’র বৎসরের মধ্যে কখনও চোখের জল না ফেলিয়া ভাত খাইতে পারিয়াছি। যতই দিন যাইতে লাগিল, আমার যন্ত্রণা অসহ্য হইয়া উঠিল। আমি পাগলের মত হইয়া গেলাম: আমার কাছে কয়েকখানি বাংলা বই ছিল, মাঝে মাঝে রাত্রে সবাই ঘুমাইলে একটি প্রদীপ জ্বালিয়া পড়িতাম। আমার শ্বাশুড়ির তাহা সহিল না। একদিন সেই বইগুলি পোড়াইয়া ফেলিলেন। আমারও আর সহ্য হইল না। সেই দিন মনে স্থির করিলাম, এ বাড়িতে আর থাকিব না। পাড়ার একটি ছেলে—আমি যখন ঘাটে বাসন মাজিতাম, আমার কাছে দাঁড়াইয়া থাকিত, আর আমার দিকে এক দৃষ্টে চাহিয়া থাকিত, কিছু বলিত না, আমিও কিছু বলিতাম না। সেদিন সন্ধ্যার সময় বাসন মাজিতে ঘাটে গেলাম, চাঁদের আলো ছিল, বাতি লইয়া যাই নাই। দেখিলাম, সে ঠিক সেইখানে দাঁড়াইয়া আছে। তাহাকে দেখিয়াই বাসনগুলি নদীতে ফেলিয়া দিলাম। তাহাকে বলিলাম, ‘আমাকে মামার বাড়ি পৌঁছাইয়া দিতে পার?’ সে বলিল, ‘কত দূর?’ আমি গ্রামের নাম বলিলাম। সে বলিল, ‘নৌকায় যাইতে তিন-চার ঘন্টা লাগিবে।’ আমি বলিলাম, ‘যতক্ষণই লাগে, আমাকে লইয়া যাও। এই বলিয়া তাহার পায় আছড়াইয়া পড়িলাম।’ সে বলিল, ‘আচ্ছা, তুমি এইখানে বস, আমি নৌকা ঠিক করিয়া আসি।’ সে নৌকা লইয়া আসিল, আমি নৌকায় উঠিলাম। ভাবিলাম, এইবার যমের বাড়ি ছাড়িয়া মামার বাড়ি যাইতেছি। যতক্ষণ নৌকায় ছিলাম, সে ঠিক সেই রকম করিয়া আমার দিকে চাহিয়া ছিল, কোন কথা বলে নাই , শুধু চাহিয়া ছিল, আমার মনে হইতেছিল, তাহার চোখ দুটি যেন আমাকে গিলিয়া ফেলিবে। আমি ভয়ে ভয়ে চুপ করিয়া ছিলাম।

যখন মামার বাড়ি গিয়া পৌঁছিলাম, তখন বেশ রাত্রি, মামা অজ্ঞান হইয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, আর সকলেই শুইয়াছে। অনেক ডাকাডাকির পর মামী উঠিয়া দরজা খুলিয়া দিলেন। আমাকে দেখিয়া যেন একটু শিহরিয়া উঠিলেন। আমি তাঁহার পায়ে পড়িয়া কাঁদিতে লাগিলাম, বলিলাম, ‘আমি পলাইয়া আসিয়াছি আমি সেখানে আর যাব না। আমি তোমার দাসী হইয়া থাকিব, আমাকে রক্ষা কর, তোমার বাড়িতে একটু স্থান দাও।’ মামী কর্কশস্বরে বলিলেন, ‘পালিয়ে এসেছিস—কার সঙ্গে?’ আমি সে কথার অর্থ তখন ভালো করিয়া বুঝিতে পারি নাই। আমি সেই ছেলেটিকে দেখাইয়া বলিলাম, ‘এর সঙ্গে।’ মামী বলিলেন, —’এ কে?’ আমি বলিলাম, ‘জানি না।’ মামী বলিলেন, ‘আমার বাড়িতে তোমার স্থান হ’বে না।’ ‘আমি কোথায় যাব!’ মামী বলিলেন,’গোল্লায়,’ বলিয়াই দরজা বন্ধ করিয়া দিলেন। আমি পাগলের মত সেই দরজায় ধাক্কা মারিতে লাগিলাম। কেহ সাড়া দিল না। তখন সে আমার পিছনেই দাঁড়াইয়া ছিল, সরিয়া আসিয়া আমার হাত ধরিয়া আমাকে ফিরাইয়া লইয়া চলিল।

আমি চক্ষে অন্ধকার দেখিতেছিলাম। কোথা যাব? কোথা যাব? এই কথাই বারে বারে মনে উঠিতেছিল। কিন্তু এই প্রশ্নের কোন উত্তরই পাইলাম না। পুতুলের মত সে যে দিকে লইয়া গেল, সে দিকেই গেলাম।

আবার সেই নৌকা। আমি জিজ্ঞেস করিলাম, ‘কোথা যাইবে?’ সে বলিল, ‘কলকাতায়।’ তখন সেই কথার অর্থ বুঝিতে পারিলাম। বিদ্যুতের মত আমার মনে চমকাইয়া গেল। আমি চীৎকার করিয়া তাহার পায়ে পড়িলাম। কাঁদিয়া বলিলাম, ‘আমাকে রক্ষা কর , আবার আমাকে শ্বশুরবাড়ি লইয়া চল।’ সে কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিল, তার পর বলিল, ‘আচ্ছা।’ কিন্তু ফের সেই চাহনি, আমি ভয়ে, অপমানে, দুঃখে, লজ্জায় একেবারে মরিয়া গেলাম।

ভোর হইতে না হইতে নৌকা ঘাটে লাগিল। আমি দৌড়িয়া শ্বশুরবাড়ির দিকে চলিলাম। সে বাধা দিল না, কিন্তু আমার পিছনে পিছনে আসিল আমি কিছু না বলিয়া দরজায় আঘাত করিতে লাগিলাম। আমার শ্বাশুড়ি উঠিয়া আসিয়া দরজা খুলিল, আমাকে দেখিয়াই সজোরে দরজা বন্ধ করিয়া দিল। আমি চীৎকার করিয়া ‘মা, মা’ বলিয়া ডাকিলাম, আর কোন সাড়াশব্দ পাইলাম না।

তখন আর কাঁদিতে পারিলাম না, চোখে আর জল ছিল না। মামীর কথা মনে পড়িল, ‘গোল্লায় যাও।’ আমি ফিরিলাম, সে দাঁড়াইয়া আছে, আর ঠিক তেমনি করিয়া চাহিয়া আছে। আমি হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিলাম, বলিলাম, ‘আমি গোল্লায় যাব, যেখানে ইচ্ছা, লইয়া যাও।’

তখন নিশ্চয়ই সূর্য উঠিয়াছে, কিন্তু আমার চোখে ঘোর অন্ধকার—মনে হইল, যেন সেই ঘোর অন্ধকারে এক ভীষণাকৃতি কাপালিক আমার হাত ধরিয়া কোন অদৃশ্য বলিদান-মন্দিরের দিকে টানিয়া লইয়া যাইতেছে।

তারপর?

তারপর কলিকাতায় আসিলাম। ভাবিলাম, সে কোন জমিদারের ছেলে কর্ণওয়ালিশ স্ট্রীটে একটা বাড়ি ভাড়া করিয়া দু’জনে থাকিলাম। সাত দিন সে আমার গায় গায় লাগিয়া ছিল। তাহার সেই চাহনির অর্থ সেই কয়দিনে বেশ ভালো করিয়া বুঝিলাম। আট দিনের দিন আর তাহাকে দেখিতে পাইলাম না।

তারপর?

এখন আমি কলকাতার ডালিম! আমার সুখের শেষ নাই। শহরের বড়ো লোক আমার পায়ের তলায় গড়াগড়ি যায়। আমার বাড়িতে সাজসজ্জার অভাব নাই, সোনার খাট, হিরার গহনা। বাড়িতে ইলেকট্রিক বাতি, ইলেকট্রিক পাখা, দাস-দাসীর অন্ত নাই, আলমারিভরা কাপড়, বাক্সভরা টাকা।

আমি কলকাতার ডালিম, কিন্তু—কিন্তু বলিয়াই কিছুক্ষণ নীরব হইয়া রহিল। দু’হাত দিয়া বুক চাপিয়া ধরিল। তখন জ্যোৎস্নার লেশমাত্র নাই সেই লতামণ্ডপ গাঢ় অন্ধকারে ভরা। তাহার বুক ধড়াস ধড়াস করিতেছিল। আমি সেই অন্ধকারে তার শব্দ শুনিতে পাইতেছিলাম। আর আমার অন্তরে এক অসীম বেদনা অনুভব করিতেছিলাম। কিছুক্ষণ পরে সে বলিল, ‘কিন্তু আমি যেন অঙ্গারের মত জ্বলিতেছি, বুক যে জ্বলিয়া জ্বলিয়া পুড়িতেছে, তাহা কি কেহ দেখিতে পায়?’

আবার কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। বোধ হয় কাঁদিতেছিল। তারপর বলিল, ‘তোমার আমাকে ভালো লাগিয়াছে? তোমার মত আর কারও সঙ্গে আমার এ জীবনে কখনও দেখা হয় নাই। কেন তোমাকে আগে দেখিলাম না? আমি যখন নরক-যন্ত্রণা ভোগ করিতেছিলাম, তখন তুমি কোথায় ছিলে? এখন—এখন তোমাকে ত কিছু দিবার নাই।’

এই বলিয়া সে আমার বুকে ঢলিয়া পড়িল, শিশুর মত কাঁদিতে লাগিল, আমি বলিলাম, —’আমি আর কিছু চাই না, আমি তোমাকেই চাই।’ এই বলিয়া দুজনেই কাঁদিতে লাগিলাম। সেই অন্ধকারে তাহাকে বুকে আঁকড়াইয়া ধরিয়া কাঁদিতে লাগিলাম। পাগলের মত জ্ঞানহারা হইয়া কাঁদিতেছিলাম। কতক্ষণ কাঁদিয়াছিলাম, জানি না। আমি কি জাগিয়াছিলাম? মনে হইতেছিল, আমি ডালিমকে লইয়া এই সংসারের বাহিরে এক অপূর্ব নন্দন-কাননে বাস করিতেছি। আমি আর ডালিম, সে জগতে আর কেহ নাই। চিরদিন তাহাকেই বুকে করিয়া রাখিয়াছি। প্রতি প্রভাতে তাহাকে নব নব ফুলে সাজাইয়াছি, প্রতি নিশাশেষে তাহাকে নব নব চুম্বনে জাগাইয়া দিয়াছি। প্রাণের যে একটা মুক্ত আকাশ আছে, আর একটা অতি গভীর পাতাল আছে, সে দিন প্রথম অনুভব করিলাম। আমার হৃদয়ের সেই স্বর্গ ও সেই পাতাল পূর্ণ করিয়াছিল ডালিম—ডালিম!

এমন সময় উপরে কোলাহল শুনিলাম, চমকিয়া দেখিলাম, ডালিম আমার কাছে নাই! আমি অস্থির হইয়া গেলাম, পাগলের মত ছুটাছুটি করতে লাগিলাম। দৌড়িয়া উপরে গেলাম, দেখিলাম সেখানে ডালিম নাই। আমাকে দেখিয়া একজন বলিল, ‘কি বাবা, একেবারে উধাও।’ আমি তাহাকে গালি দিলাম। আবার ছুটিয়া নীচে আসিলাম। সেই বাগানে সকল স্থানে খুঁজিলাম। ডালিম ডালিম বলিয়া চীৎকার করিয়া ডাকিলাম। কোন সাড়া শব্দ পাইলাম না। ফটকে গেলাম, জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘কোই বিবি চলা গিয়া?’ একজন গাড়োয়ান বলিল, ‘হ্যাঁ বাবু, এক বিবি অভি চলা গিয়া।’ আবার দৌড়িয়া উপরে গেলাম। জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘ডালিম কোথায় থাকে?’ এবার আর কেহ রসিকতা করিল না। ঠিকানা জানিয়া লইয়া আবার ফটকে দৌড়িয়া আসিলাম। একখানা মোটর-কার করিয়া তাহার বাড়ি গেলাম। শুনিলাম, ডালিম আসে নাই। কতক্ষণ সেখানে ছিলাম, জানি না, ডালিমের দেখা পাইলাম না। আবার বাগানে গেলাম, আবার খুঁজিলাম, কিন্তু তাহাকে আর পাইলাম না।

সে রাত্রে ঘুমাই নাই। পাগলের মত ছোটাছুটি করিলাম। পরদিন প্রভাতে আবার ডালিমের বাড়ি গেলাম। ঝি বলিল, সে শেষ রাত্রে এসেছিল, আবার ভোর না হ’তে হ’তেই চলে গেছে। একখানা চিঠি রেখে গেছে, তাহাকে বলে গেছে—সকালে একজন বাবু খোঁজ করতে আসবে, তাকে এই চিঠিখানা দিস।

আমি সেই চিঠিখানি লইলাম। খুলিতে খুলিতে আমার হাত কাঁপিতে লাগিল, চিঠিখানি পড়িলাম :

তুমি আমাকে খুঁজতে আসিবে জানি, কিন্তু আমাকে আর খুঁজিও না। আমাকে আর কোথাও দেখিতে পাইবে না। মনে করিও, আমি মরিয়া গিয়াছি। আমি মরি নাই—মরিতে পারিব না। তুমি আমাকে যাহা দিয়াছ, আমি এ জীবনে কখনও পাই নাই। তাহারি গৌরব অক্ষুণ্ণ রাখিতে চাই। অনেক দুঃখ সহিয়াছি, সংসারে যাকে সুখ বলে, তাহাও পাইয়াছি, কিন্তু কাল রাত্রে যে সত্য প্রাণের পরশ পাইয়াছি, তাহা কখনও পাই নাই। তাহারি স্মৃতিটুকু প্রাণে প্রদীপের মত জ্বালাইয়া রাখিতে চাই। যাহা পাইয়াছি, তাহা আর হারাইতে চাই না।

তুমি আমাকে খুঁজিও না। প্রাণসর্বস্ব! আমি বড় দুঃখী, তুমি কাঁদিয়া আমার দুঃখ বাড়াইও না। এ জন্মে হইল না, জন্মান্তরে যেন তোমার দেখা পাই!

— ডালিম

সকল অধ্যায়

১. বিচারক – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. ডালিম – চিত্তরঞ্জন দাশ
৩. চন্দ্রমুখী – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
৪. ঠিকানায় ‘বুধবার’ – জগদীশ গুপ্ত
৫. কুসুম – হেমেন্দ্রকুমার রায়
৬. আদরিণী – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী
৭. সাকীর প্রথম রাত্রি – রমেশচন্দ্র সেন
৮. হিঙের কচুরি – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
৯. মেলা – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
১০. মন্দ লোক – শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
১১. দন্ত কৌমুদী – বনফুল
১২. গোষ্পদ – যুবনাশ্ব
১৩. ইতি – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
১৪. খট্টাঙ্গ পুরাণ – শিবরাম চক্রবর্তী
১৫. দুকানকাটা – অন্নদাশংকর রায়
১৬. চাচা কাহিনি – সৈয়দ মুজতবা আলী
১৭. বিকৃত ক্ষুধার ফাঁদ – প্রেমেন্দ্র মিত্র
১৮. অঙ্গার – প্রবোধকুমার সান্যাল
১৯. নমুনা – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
২০. চোর! চোর! – বুদ্ধদেব বসু
২১. বারবধূ – সুবোধ ঘোষ
২২. ট্যাক্সিওয়ালা – জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী
২৩. বাইজি – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
২৪. তিমিরাভিসার – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
২৫. জামাই – নরেন্দ্রনাথ মিত্র
২৬. তলানি – নবেন্দু ঘোষ
২৭. মাশুল – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
২৮. শনি – সন্তোষকুমার ঘোষ
২৯. আঙুরলতা – বিমল কর
৩০. সুর্মা – রমাপদ চৌধুরী
৩১. ঘরন্তী – বিমল মিত্র
৩২. প্রাণ-পিপাসা – সমরেশ বসু
৩৩. বাগাল – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
৩৪. ছদ্মবেশিনী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৩৫. নরক – প্রফুল্ল রায়
৩৬. পহেলি পেয়ার – বুদ্ধদেব গুহ
৩৭. নিরুদ্দেশ প্রাপ্তি হারানো – সমরেশ মজুমদার
৩৮. বেওয়ারিশ লাশ – জাহান আরা সিদ্দিকী
৩৯. ঝরা পাতা – তসলিমা নাসরিন
৪০. নিজের সঙ্গে দেখা – তৃণাঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন