মৃত্যু-দূত

বহুকাল আগে এক দৈত্য এক বড় রাস্তা দিয়ে চলেছিল, হঠাৎ তার সামনে লাফিয়ে উঠল একটি অচেনা লোক। লাফিয়ে উঠেই সে বললে—দাঁড়াও, আর এক পা-ও এগিও না।

দৈত্য বলল—কি রকম? তোমাকে তো আঙুলে টিপে মেরে ফেলতে পারি—কি সাহসে তুমি আমার চলার পথে বাধা দাও? কি সাহসে এমন স্পর্ধা দেখাও?

লোকটি বলল—আমি হচ্ছি মৃত্যু। আমাকে কেউ বাধা দিতে পারে না। অতএব আমার আদেশ তোমায় শুনতে হবে।

দৈত্য তার কথায় কর্ণপাত না করে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শুরু করে দিল। বহুক্ষণ ধরে লড়াই চললো—ভীষণ লড়াই। শেষে দেখা গেল দৈত্যই জিতছে। দৈত্য এক ঘুষি মেরে মৃত্যুকে শুইয়ে দিল। মৃত্যু নিজেই আধমরা হয়ে একটা পাথরের পাশে পড়ে রইল।

এত দূর্বল হয়ে পড়ল যে তার আর ওঠবার ক্ষমতা রইল না। মৃত্যু বললে—এই পাথরের কোণে যদি এখন আমি পড়ে থাকি তাহলে হবে কি? পৃথিবীতে কেউ আর মরবে না। এত লোক জন্মাবে যে শেষে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকবার জায়গা পর্যন্ত থাকবে না।

সে পড়ে আছে সেই সময় একটি যুবক সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। স্বাস্থ্যবান যুবকটি মনের আনন্দে চলেছে গান গাইতে গাইতে, এদিকে ওদিকে তাকাতে তাকাতে। আধমরা মানুষটার দিকে চোখ পড়তে তার দয়া হল। সে এগিয়ে গেল তার দিকে। তাকে ধরে তুলে তার নিজের বোতল থেকে এক ঢোঁক বলসঞ্চারক সরাব খাইয়ে দিল! একটু পরেই লোকটি বল ফিরে পেল।

উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে লোকটি বলল—জানো আমি কে? জানো কাকে তুমি সুস্থ করে তুলেছ?

যুবক জবাব দিলে—না, জানি না আপনি কে!

সে বলল—আমি মৃত্য। আমি কাউকে ছাড়ি না, তোমার বেলা যে এর কোনো ব্যতিক্রম করব তা-ও পারব না—তবে যেহেতু তুমি আমার উপকার করেছ সে জন্যে আমি কৃতজ্ঞ। আমি অঙ্গীকার করছি যে তোমার কাছে আমি হঠাৎ আসব না। প্রথমে তোমার কাছে আমি দূত পাঠাবো, তারপর তোমায় নিয়ে যাবো।

যুবক বললে—তা একরকম ভলো। অন্ততঃ জানতে পারবো কখন তুমি আসছ।

যুবক হালকা মনে চলে গেল। কোনো দুশ্চিন্তা না করে সে জীবনকে উপভোগ করল অনেকদিন। কিন্তু যৌবন আর স্বাস্থ্য চিরদিন থাকে না। রোগ এল, দুঃখ এল, দিনের বেলা এল যন্ত্রণা, রাত্রে বিশ্রামের অভাব।

সে বলল—মৃত্যু যখন তার দূত পাঠায়নি তাহলে আপাততঃ আমি মরছি না। কিন্তু যাই হোক, এই যন্ত্রণাকর রোগের দিনগুলো কেটে গেলে বাঁচা যায়।

একটু ভালো হতেই সে আবার ফূর্তির স্রোতে গা ভাসালো। তারপর একদিন কে পিছন থেকে তার কাঁধে আঙুল দিয়ে টোকা দিল। সে পিছন ফিরে দেখে তার পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মৃত্যু।

মৃত্যু বললেন—এসো আমার পিছু পিছু। এ পৃথিবী থেকে তোমার যাবার সময় হয়েছে।

লোকটি বলল—কি রকম? আপনার অঙ্গীকার কি আপনি ভাঙবেন? আপনি কি কথা দেন নি যে আপনি নিজে আসবার আগে আপনার দূতদের পাঠাবেন? আমি তো কোনো দূত দেখিনি।

মৃত্যু বললেন—চুপ করো! একটির পর একটি দূত আমি পাঠিয়েছি। জ্বর এসে কি তোমায় কাবু করেনি, কাঁপায়নি, বিছানায় শুইয়ে দেয়নি? মাথার মধ্যে কি তোমার কুরুনি এসে ঢোকেনি? বাত এসে কি তোমার গাঁটে গাঁটে ধরেনি? কানের মধ্যে কি তোমার ভোঁ ভোঁ করেনি? দাঁতের ব্যথায় কি তোমার চোয়াল কন্‌কনিয়ে ওঠেনি? চোখের সামনে কি অন্ধকার হয়ে আসেনি? তা ছাড়া প্রতিদিন রাত্রে আমার ভ্রাতা ঘুম কি তোমায় মনে করিয়ে দেয়নি আমার কথা?

লোকটি কোনো জবাব দিতে পারল না। ভাগ্যের কাছে হার মেনে মৃত্যুর সঙ্গে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল।

সকল অধ্যায়

১. তুষারিণী আর সাত বামনের গল্প
২. লাল-ঢাকা খুকি
৩. বারো ভাইয়ের গল্প
৪. চরকা-কাটা তিনি বুড়ি
৫. হাঁস-চরানি মেয়ে
৬. মুচি আর দুই পরী
৭. সোনার পাহাড়ের রাজা
৮. খুনীর সঙ্গে বিয়ে
৯. বুড়ো-আংলা টম
১০. ব্যাঙ ও রাজকন্যা
১১. ধড়ফড়ি মাছ
১২. বুনো গোলাপের বেড়া
১৩. রুমপেল্‌-স্টিল্‌ট্‌-স্খেন্‌
১৪. পাঁশমনি
১৫. কাঁপুনি শেখার গল্প
১৬. সুলতান কুকুরের গল্প
১৭. নেকড়ের বড়াই
১৮. শেয়াল আর বেড়ালের গল্প
১৯. ফুর্তিভায়ার অ্যাড্‌ভেঞ্চার
২০. এক-চোখো, দু-চোখো আর তিন-চোখো
২১. বুড়ো ঘোড়া
২২. নেকড়ে আর শেয়ালের গল্প
২৩. বনের বাড়ি
২৪. জীবন-বারি
২৫. জুনিপার গাছ
২৬. বুড়ো আর তার নাতি
২৭. দুই পথিকের গল্প
২৮. চোর-চূড়ামণি
২৯. ফ্রিয়েম মাস্টার
৩০. একটি পেরেক
৩১. নাচুনি রাজকন্যা
৩২. দোয়েল আর ভাল্লুক
৩৩. নেকড়ে বাঘ আর সাতটি ছাগলছানা
৩৪. রোলান্ডের গল্প
৩৫. নুটুরানী
৩৬. আশ্চর্য সালাদ
৩৭. হানস্‌ল্‌ ও গ্রেটল্‌
৩৮. গোলাপ-খুকি
৩৯. লোহার হান্স্‌
৪০. ব্রেমেন শহরের বাজিয়ের দল
৪১. ব্রেমেন শহরের বাজিয়ের দল
৪২. পাখিয়া
৪৩. কার্ল কাটৎস-এর ঘুম
৪৪. সাত-সাবাড়ে দর্জির গল্প
৪৫. রাখাল ছেলে
৪৬. হাঁদুরামের সোনার হাঁস
৪৭. বারোটি শিকারীর গল্প
৪৮. দাঁড়কাক
৪৯. সাদা সাপ
৫০. হাতকাটা মেয়ে
৫১. তিন রকমের ভাষা
৫২. ইচ্ছা-পূরণ
৫৩. ভালুচাম
৫৪. সিংহ রাজপুত্র
৫৫. চাষীর চালাক মেয়ে
৫৬. চাষী আর শয়তান
৫৭. চতুরা গ্রেট্‌ল্‌
৫৮. কে কত বোকা
৫৯. চাকিওলার চাকর আর তার বেড়াল
৬০. কাঁচের কাফিন
৬১. খরগোস আর সজারুর গল্প
৬২. পাতালরাজের মাথায় তিন সোনার চুল
৬৩. ভাই-বোন
৬৪. হুতুম-থুমো
৬৫. ইঁদুর, পাখি আর সসেজ
৬৬. বেড়াল আর ইঁদুরের সংসার
৬৭. সাতটি দাঁড়কাক
৬৮. ফ্রেডেরিক ও ক্যাথেরিন
৬৯. তিন টুকরো সাপ
৭০. হাড়ের গান
৭১. চতুরা এল্‌সি‌
৭২. সর্বনেশে অতিথি
৭৩. আশ্চর্য গেলাস
৭৪. শেয়াল আর হাঁসের দল
৭৫. ডাক্তার সবজান্তা
৭৬. ধনী কৃষকের গল্প
৭৭. তিনটি কঠিন কাজ
৭৮. কাঠুরের মেয়ে
৭৯. আশ্চর্য এক বাজনদার
৮০. স্বর্গে ঢুকে দর্জি কি করেছিল
৮১. ট্রুডে গিন্নী
৮২. যমরাজের ধর্মছেলে
৮৩. ছোট চাষী
৮৪. নেকড়ে-বৌ আর শেয়ালের গল্প
৮৫. শবাচ্ছাদনী
৮৬. সূর্যের আলোয় সব কিছু প্রকাশ হবে
৮৭. সুন্দর কনে আর কালো কনে
৮৮. গাধা
৮৯. অকৃতজ্ঞ পুত্র
৯০. আকাশ-ঝরা টাকা
৯১. চুরি-করা আধলা
৯২. কোন কন্যা সব চেয়ে ভালো
৯৩. শ্লাউরাফ্‌ফেন দেশের গল্প
৯৪. ডিট্‌মার্শের আশ্চর্য গল্প
৯৫. বিচক্ষণ চাকর
৯৬. স্বর্গের দ্বারে কৃষক
৯৭. জীবনের দৈর্ঘ্য
৯৮. মৃত্যু-দূত
৯৯. ঈভের নানান ছেলেমেয়ে
১০০. কবরের মধ্যে গরীব ছেলেটি
১০১. অলস বৌ
১০২. কুকুর আর চড়াইয়ের গল্প
১০৩. কুঁড়ে হরি
১০৪. য়োরিন্ডা আর য়োরিঙ্গেল
১০৫. বুড়ো বাপের তিন ছেলে
১০৬. বিশ্বাসী জন্‌
১০৭. গোলাপ কুমারী

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন