অর্পিতা সরকার
কফিশপে একটু দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখ নিয়ে বসে আছে। ঘনঘন ঘড়ি দেখা দেখেই লগ্নজিতা বুঝেছে কৌশিক খুব চিন্তায় আছে। কৌশিকের ভাষায় লগ্নজিতা ওকে একেবারেই বোঝার চেষ্টা করে না। ভালোবাসা তো কয়েক যোজন দূরে আছে ওদের সম্পর্কের থেকে। কৌশিক বলে, ওদের সম্পর্কটা নাকি মনে মনে বন্ধুত্বের গন্ডি পেরিয়ে গেছে। কিন্তু প্রকাশ্যে ভালোবাসি বলতে দ্বিধা করছে এমনি এক পরিস্থিতিতে অযথা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করছে। সে কৌশিক যাই বলুক, লগ্নজিতা এটুকু বোঝে কৌশিককে যে দুশ্চিন্তা করলে সেকেন্ডে তিনবার ঘড়ি দেখে কৌশিক। চন্দ্রজা আজ একটা সুন্দর কথা বলল, ভালোবাসা মানে একটা নরম বিকেলের অনুভূতি। কৌশিককে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারাদিন হাসপাতালে ডিউটির পরে চেম্বার করে বেশ বিধ্বস্ত। লগ্নজিতাও সারাদিনের কাজের চাপে ক্লান্তিতে অবসন্ন। তবুও এই হালকা আলোয় কৌশিককে দেখে আচমকাই মনে হল, ভালোবাসা মানে ভীষণ ঠান্ডায় একটা মিঠে কড়া রোদ্দুর। অথবা তীব্র গরমে একপশলা বৃষ্টি।
‘বসিয়ে রাখলাম বেশিক্ষণ?’
কৌশিক ওকে দেখে বসার ইঙ্গিত করে বলল, ‘এতে তো আমি অভ্যস্ত ম্যাডাম। জিতা, তোমার জন্য দুশ্চিন্তা করাটা থেকে তো আর তুমি আমায় রেহাই দিতে পারবে না, তাই এসব ভেবে লাভ নেই।’
লগ্নজিতা বলল, ‘মানুষের মন সর্বদা পরিবর্তনশীল তাই না কৌশিক? একদিন তুমি আমার এই সর্বদা উত্তেজনাময় জীবনটাকেই ভালোবেসেছিলে, এই জীবন নিয়ে খেলা করা লগ্নজিতাকেই পছন্দ করতে। আজ তোমার এই চ্যালেঞ্জগুলোকে বিরক্ত লাগছে তাই না?’
কৌশিক কফির অর্ডার দিয়ে বলল, ‘সঙ্গে আরেকটা কথা যোগ করলে আমার ভাবনার প্রতি আরেকটু জাস্টিফাই করা হত। আগের লগ্নজিতার কাজটাকে শুধু সম্মান করত কৌশিক। এখনকার কৌশিক লগ্নজিতার চ্যালেঞ্জিং কাজটাকে সম্মান করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষটাকেও ভুল করে ভালোবেসে ফেলেছে, তাই মাঝে মাঝে একটু দুশ্চিন্তা এসে যায়। জানি অফিসার লগ্নজিতার চোখে এমন দুশ্চিন্তা গর্হিত অপরাধ। কিন্তু মনের ওপরে তো কারোর শাসন চলে না, মনকে এনকাউন্টার করে দিলেও মন তার গতিতেই চলবে। সুতরাং এ অপরাধের শাস্তি মাথা পেতে নিলাম।’
লগ্নজিতা মাঝে মাঝে বুঝতে পারে না এমন পরিস্থিতিতে ঠিক কী বলা উচিত। এই সময়গুলোতে ও কৌশিকের চোখের দিকে কিছুতেই তাকায় না, ধরা পড়ে যাবার ভয় নয়, নিজেকে ধরে রাখার তাগিদে। কারণ কৌশিককে এই সময়গুলোতে বড্ড ভালো লাগে ওর।
লগ্নজিতা কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, ‘তোমায় এখানে ডেকেছি কেন সেটা নিশ্চয়ই মনে নেই তোমার?’
কৌশিক স্বাভাবিক গলায় বলল, ‘নিশ্চয়ই মনে আছে। সারাদিন খুন খারাপি নিয়ে আছো বলেই ভাবলাম দুমিনিট পরেই বলি। মাসিমণির ওই বন্ধু সরলাদেবীর রিসেন্ট ছবি তো তুমি পাঠিয়েছিলে, তাই ভদ্রমহিলাকে আমার মনে ছিল। হঠাৎই দেখলাম, ভদ্রমহিলা চেম্বারে ঢুকলেন। একটা অল্পবয়সী মেয়েকে প্রায় জোর করে ধরে নিয়ে এসেছেন। মেয়েটার চোখেমুখে ভয়ের চিহ্ন স্পষ্ট। নাম লেখালো মীনাক্ষী অধিকারী। বয়েস উনত্রিশ।
সরলাদেবী পরিষ্কার বললেন—ডক্টর, একটু চেক করে দেখুন তো ও প্রেগন্যান্ট কিনা। প্রেগন্যান্ট কিট ইউজ করে দেখা গেল নেগেটিভ। কিন্তু তবুও আপনি দেখুন। মেয়েটার ইউরিন প্রেগনেন্সি রিপোর্ট অবধি নিয়ে এসেছে ভদ্রমহিলা। সেখানেও নেগেটিভ। আমি দেখে বললাম, না ও তো প্রেগন্যান্ট নয়। সরলাদেবী বললেন, দুদিন ধরেই বমি করছিল। একটু ফিসফিস করে বললেন, আমার স্বামীর তো চরিত্র ভালো ছিল না। বাড়িতে এমন কচি মেয়ে আছে দেখে সুযোগ ছেড়েছে বলে মনে হয় না।
জিতা, আমি ওনাকে ইচ্ছে করেই জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার স্বামী এখন কোথায়?
সরলাদেবী অবলীলায় বলে দিলেন, সে মারা গেছে। কেউ বলছে সুইসাইড, কেউ বলছে খুন। আপনি ভালো করে দেখলেন তো, প্রেগন্যান্ট নয় তো?
আমি দেখলাম ওই মেয়েটির মুখে চূড়ান্ত অস্বস্তি। আমি বললাম, ওর বদহজম হচ্ছে। আমি ওষুধ দিচ্ছি। টানা সাতদিন খেলেই কমে যাবে। যদি না কমে তাহলে নিয়ে আসবেন। একটা ইউ এস জি করিয়ে নেব। মহিলার সেসব দিকে তো মন নেই। আচমকা বললেন, আপনাকে যদি আমি বেশি টাকা দিই আপনি প্রেসক্রিপশনে লিখে দেবেন ও প্রেগন্যান্ট? তাহলে আমার খুব উপকার হত। এক রাক্ষসীকে আমার ছেলের ঘাড় থেকে নামাতে পারতাম। আমি স্ট্রেইট না বলায়, মেয়েটাকে টেনে নিয়ে চলে গেল। শোনো জিতা, এ মহিলা কিন্তু শুধু মানসিক অসুস্থ নয়, সঙ্গে অসম্ভব বদমাইশি বুদ্ধি ধরে। ওর ছেলের নাম যেন কী?’
লগ্নজিতা বলল, ‘রাহুল চক্রবর্তী। ওর সঙ্গে মৃন্ময়বাবুর মেয়ে চন্দ্রজার সম্পর্ক আছে। ভদ্রমহিলা এই বিয়েতে রাজি নয়। তাই মীনাক্ষীকে স্বল্প সময়ের জন্য রাহুল দ্বারা প্রেগন্যান্ট প্রমাণ করতে পারলে চন্দ্রজা সরে যাবে এটাই ওনার লাভ।’
কৌশিক অবাক গলায় বলল, ‘জিতা এরাও মা? নিজের ছেলের নামে এত বড় বদনাম ছড়াতে পিছপা হচ্ছেন না ভদ্রমহিলা। তার আগে মৃত স্বামীর নামেও নোংরা কথা বললেন মীনাক্ষীর প্রেগন্যান্সি প্রসঙ্গে। অদ্ভুত রকমের কিন্তু।’
লগ্নজিতা বলল, ‘তোমার ব্যাগ গোছানো কমপ্লিট? শান্তিনিকেতন যাবে পাঞ্জাবি নিয়েছো?’
কৌশিক হেসে বলল, ‘আর পাঞ্জাবি নিয়ে হবেটা কী? আমায় কে আর দেখবে? তাছাড়া লগ্নজিতা ভট্টাচার্যর সঙ্গে যখন যাচ্ছি, তখন বেড়াতে যাচ্ছি এমন দুরাশা মাথায় আসাও অপরাধ।’
লগ্নজিতা ফিক করে হেসে বলল, ‘যাই বলো কৌশিক, ডাক্তার হিসাবে তুমি আগে থেকেই সৎ আর ভালো ছিলে কিন্তু তোমার আরেকটা গুণ রিসেন্ট ডেভলপ করেছে মানতেই হবে।’
কৌশিক কৌতূহলী স্বরে বলল, ‘জানতে পারি কি সেটা কী?’
লগ্নজিতা বলল, ‘বাস্তব সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়েছে। এই যে আমরা বেড়াতে যাচ্ছি না, একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছি—তাই পাঞ্জাবি নেওয়ার দরকার নেই, এটা তুমি সুন্দর বুঝে গেছো। দ্যাটস গুড। আই অ্যাম ইম্প্রেসড।’
কৌশিক রাগী চোখে তাকিয়ে বলল, ‘শুধু এখনও তোমার কথার টোনটা ধরতে পারলাম না। বোঝা উচিত ছিল তুমি আমার গুণ নিয়ে ওপেনলি প্রশংসা করতেই পারো না।’
লগ্নজিতা হেসে বলল, ‘এখন চলো। কালকে আমি তোমায় তুলে নিচ্ছি তোমার বাড়ি থেকে। রেডি থাকবে।’
কৌশিক হেসে বলল, ‘তুমি এখনই তুলে নিতে পারো আমায়। আমি রেডি।’
লগ্নজিতা বাড়ি ফিরে এসে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় ছড়িয়ে দিল। সরলাদেবীর চরিত্রের যা বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে তাতে ব্রজমোহনকে খুন করা কোনো বড় ব্যাপারই নয় ওর কাছে। মহিলা সর্বদা কিছু না কিছু ঘটাতেই থাকেন। চূড়ান্ত অস্থিরতা কাজ করে ওর মধ্যে। মৃন্ময়বাবুর ওপরে রাগ থেকে চন্দ্রজার ওপরে আক্রোশ। সেই কারণেই বিয়েটা হতে দেবেন না। ঠিক যেভাবে নিজে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন একইভাবে রাহুলকে দিয়ে আঘাত দিতে চান চন্দ্রজা বা মৃন্ময়কে। ব্রজমোহন আর মৃন্ময় খুব ভালো বন্ধু ছিল। মৃন্ময় কি কখনও বলেনি সরলাদেবীর পাস্ট? নাকি বন্ধুর সংসার বাঁচাতে চেপে গিয়েছিলেন?
প্রায় এগারোটা বাজে। ডিনার শেষ করতে হবে। ফোনটা বাজছে। মুখে হাসি ফুটলো লগ্নজিতার। বিমানমামার ফোন। রিসিভ করতেই বিমানমামা বেশ গম্ভীর স্বরে বলল, ‘আমি কি ইন্সপেক্টর লগ্নজিতা ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলছি?’
লগ্নজিতা বলল, ‘হ্যাঁ বলছেন। আমিই আপনাকে কল করতাম।’
বিমানমামা হেসে বলল, ‘এমন সৌভাগ্য আমার হত বলে বিশ্বাস করি না। শোন, আমি প্রান্তিকের বাংলোর কেয়ারটেকার কাম রাঁধুনিকে বলে দিয়েছি, আমার অফিসার ভাগ্নি যাচ্ছে; দেশি মুরগির ঝোল করে দিতে কালকে। এরপর থেকে তুই কী খাবি, তুই শুধু ওকে বলে দিবি। মহাদেবের এক বোন এসে বাসনপত্র মেজে দেবে। ওকে একটু বখশিশ দিয়ে দিবি।’
লগ্নজিতা বলল, ‘তুমি ব্যস্ত কম হও তো এসব নিয়ে। শোনো, আমায় একটা ইনফর্মেশন দাও। মেঘবালা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় ছিল তোমার?’
বিমানমামা হেসে বললেন, ‘শোন, তোর মামী যতদিন বেঁচে ছিল, ততদিন পর্যন্ত কোনো মেয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগই দেয়নি আমায়। আর এই বয়েসে এসে নতুন করে এসব কি শোভা পায়?’
লগ্নজিতা বলল,’ ইয়ার্কি ছাড়ো। বলো না—চেনো?’
বিমানমামা বলল, ‘ব্রজমোহনের প্রেমিকা কিনা জানি না। তবে খুব ভালো সাইকিয়াট্রিস্ট এটুকু জানি। ‘সোনার তরী’—তে নিজের বাংলোর নীচে চেম্বার আছে। আমার কখনও মাথা খারাপ হলে যাব ভেবেছিলাম। মহিলা বেশ সুন্দরী। ভোরে উঠে হাঁটতে বের হতেন কোপাইয়ের ধারে। বিয়ে থা করেননি। একলাই থাকতেন। ব্রজমোহন হঠাৎ কেন ওকে বই উৎসর্গ করেছিল সেটা অবশ্য আমার অজানা। তবে একবার তোর মামী আর আমি ভোরে খেজুররস খাবার লোভে বেরিয়েছিলাম। তখনই মেঘবালা আর ব্রজমোহনকে দেখেছিলাম হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের দিকে যাচ্ছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা রোগীর মন ভালো করতে রাস্তায় হাঁটতে নিয়ে গেলে সেটা নিশ্চয়ই তোর চোখে অপরাধ নয়। আর যদি পরকীয়া ধরে নিয়ে এগোতে চাস, তাহলেও এগোতে পারিস। কারণ আমার মনে হয় না সরলাদেবীর সঙ্গে কোনো পুরুষ মানুষ একটা গোটা দিন স্পেন্ড করতে পারবে। সেক্ষেত্রে ব্রজমোহনবাবুর অসীম ক্ষমতা। কারণ উনি এতগুলো দুঃসহ বছর কাটালেন। ভদ্রমহিলাকে আমি দেখেছি হয়তো হাতে গুণে দুবার। তাতেই বুঝে গেছি উনি শুধু পাগল নন, অন্যকে পাগল করে দেবার ক্ষমতা রাখেন। ওই জন্যই তোরা এটাকে খুন বললেও আমি আত্মহত্যাতেই স্থির হয়ে আছি। শেষ বয়সে এসে হয়তো ব্রজমোহনের মনে হয়েছিল—আর কেন? শক্ত থাকতে থাকতেই ওপারে পাড়ি জমাই। অসমর্থ হয়ে গেলে ওই স্ত্রী যে কী করবে তার কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। ব্রজধামের দেওয়ালে কান পাতলেও ব্রজমোহনের যন্ত্রণার আওয়াজ পাবি তুই।’
লগ্নজিতা বলল, ‘মামা, আমায় আরেকটা ইনফর্মেশন দাও। ব্রজমোহনবাবুর কোনো ডায়েরির বা বইয়ের খবর তুমি জানো যেটাতে গুপ্তধনের সন্ধান আছে?’
বিমানমামা হেসে বলল, ‘ব্রজমোহন নানা ভাষা নিয়ে চর্চা করত জানি। ওটা ওর নেশা ছিল। এমনকি সিন্ধু থেকে ইনকা সভ্যতার সময়ের লিপি নিয়েও পড়াশোনা করত। আমি লাইব্রেরিতে থাকাকালীন ওইসব বই পড়তেও দেখেছি। তবে ব্রজমোহনের সঙ্গে আমার বহুযুগ আর কথা হয় না বা দেখা হয় না। বলতে গেলে প্রায় বছর সাতেক-আটেক আগে একবার শেষ যোগাযোগ হয়েছিল। রিসেন্ট কোনো গুপ্তধনের সন্ধান পেয়ে থাকলে সেটা আমার অজানা। ওর প্রাতঃভ্রমণের বন্ধুরা কী বলছে?’
লগ্নজিতা বলল, ‘তারা বলছে ব্রজমোহন নাকি রিসেন্ট ওর কোনো এক পূর্বপুরুষের ডায়েরি পেয়েছিল। এবং সেটা মিশরীয় ভাষায় লেখা ছিল। মানে হায়েরোগ্লিফ। সেটা বোধহয় উনি সমাধান করতে পেরেছিলেন এতদিনে। বাসুদেববাবু অন্তত এমনই বললেন। কিন্তু মামা গুগলের যুগে হায়েরোগ্লিফ সমাধান করতে এত সময় তো লাগার কথা নয়। শুনলাম উনি নাকি স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিছুই ব্যবহার করতেন না। বইপত্র পড়েই এসবের সমাধান করতে চেয়েছিলেন।’
বিমানমামা উৎসাহের সঙ্গে বললেন, ‘সে ডায়েরি কি তোর কাছে? একবার দেখাতে পারিস? শুনে খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে।’
লগ্নজিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘কোথায় আর? ওনার ঘর তো তন্নতন্ন করে খুঁজে ফেললাম, সে ডায়েরি নেই। সেই ডায়েরিটা কেমন দেখতে ছিল, সেটা শুনলাম রাহুলের মুখ থেকে। জিনিসটা হাতে পেলে হয়ত খুনের সমাধান করা সহজ হত।’
মামা বলল, ‘খুনি আছে ব্রজধামের ভিতরেই। অবশ্য যদি এটাকে খুন বলা হয় তাহলে।’
লগ্নজিতা বলল, ‘মামা তুমি ওদের বাড়ির মন্টুকে চিনতে?’
বিমান মামা একটু সময় নিয়ে বলল, ‘ব্রজমোহনের বাড়িতে থাকতো কি ছেলেটা? ওর ফাইফরমাইস খাটত কি? দেখেছি মনে হচ্ছে বার দুয়েক।’
লগ্নজিতা বলল, ‘ছেলেটা গত পরশু খুন হয়েছে। কেউ বা কারা খুন করে ব্রজধামের সামনে ঠান্ডা বডিটা ফেলে রেখে গিয়েছিল।’
চমকে উঠল বিমানমামা। ফোনের অন্যপ্রান্তেও সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারল লগ্নজিতা।
মামা বলল, ‘জিতা, এসব ঝামেলায় না জড়ালেই কি নয়? তোর মা এমনিতেই তোকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে। গত পরশুই দিদি এসেছিল আমার বাড়িতে। তখনও তোকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলল। এসব বেশি রিস্কি কাজে না গিয়েও প্রশাসনিক চাকরি করা যায় কিন্তু।’
লগ্নজিতা বুঝতে পারছিল, মায়ের মতো মামার মাথাতেও ওকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ঢুকে যাচ্ছে। তাই কথা ঘোরাবার জন্য বলল, ‘তা তোমার এই মহাদেব গাঁজা টানে না তো? সঠিক সময়ে খেতে পাবো তো?’
বিমানমামা বলল, ‘নিতান্ত ভদ্র ছেলে মহাদেব। ওকে যা বলবি ও হাজির করে দেবে। ব্রজমোহন খুনের চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে দুদিন সোনাঝুরি ঘুরেও আসিস। মেঘবালা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও শান্তিনিকেতনে অনেক কিছু দেখার আছে কিন্তু। কোনো প্রয়োজন হলে আমায় কল করবি।’
মামার ফোনটা রেখে লগ্নজিতা ভাবনার দুনিয়ায় তলিয়ে গেল। মোটামুটি এই কেসের সঙ্গে যারা যুক্ত সবাই মিথ্যে বলছে। রাহুল, চন্দ্রজা, মৃন্ময়, অমিত, বাসুদেব, সরলাদেবী মোটামুটি—সকলেই কিছু একটা লুকাতে গিয়ে মিথ্যে বলছে। এই জন্যই কেসটা এতটা জটিল আকার নিচ্ছে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন