নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
আমার কাকার গোড়ালির ওপরে এবং কোমরের কষির চার পাশ জুড়ে বেশ অনেকটা চুলকানি ছিল। লোকজন কাছাকাছি না থাকলে এবং আপন অবসর বুঝে কাকা মাঝে মাঝে সেই চুলকুনির জায়গায় প্রসারিত অঙ্গুলি বিভঙ্গে চুলকোতেন এবং বোঝা যেত— চুলকে তিনি বিমলানন্দ লাভ করছেন। তাঁর দাঁত-মুখ-চোখের মধ্যে এইসব সময়ে একটা খিঁচুনি মিশ্রিত ‘রিলিফ’ দেখা যেত, যা চুলকুনি-হীন রুচিশীল মানুষ ঠিক অনুভব করতে পারবেন না। আমি এমনও দেখেছি যে, এইসব সময়ে কাকার কাছে উপস্থিত হলে তিনি তেমন করে সাড়া দিতে পারতেন না। কেমন যেন এক বৈমনস্যে এক দিকে তাকিয়ে থাকতেন এবং আপন গোড়ালি কোমরে চুলকেই যেতেন, চুলকেই যেতেন। আমার কাকীমা তাঁর স্বামীর এই চুলকুনি-ব্যসন বিনোদন সহ্য করতে পারতেন না এবং প্রায়ই বিভিন্ন প্রকারের মলম জাতীয় ওষুধ লাগানোর জন্য কাকাকে উপরোধ করতেন। এই উপরোধমূলক চেষ্টা অবশ্যই ব্যর্থ হত এবং এখানে আমার কাকার যুক্তিটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি বলতেন— তোমরা এরকম করো কেন, চুলকোতে আমার বেশ ভালো লাগে। এই মজাটা তোমরা বুঝবে না।
চুলকোতে চুলকোতে এক সময় চুলকোতে হয়তো ভালোই লাগে— কথাটা মিথ্যে বলেননি কাকা। আমাদের দোষ বা পরিশীলন এইটুকুই যে আমরা এই ব্যাধি সারিয়ে তোলার চেষ্টা করি। কিন্তু কাকা সেটা না করে ব্যাধিটাকে ‘এনজয়’ করতে আরম্ভ করলেন। এবং এখানেই একটা অসাধারণ নৈতিক তাত্ত্বিকতা কাজ করে। নৈতিক তাত্ত্বিকতারও এখানে দুটি প্রকার আছে— প্রথম প্রকারে ভালো, মানে চরম ভালো একটিই আছে, আর দ্বিতীয় প্রকারে মন্দ। মানে চরম মন্দ সবগুলিই। আমার পিতাঠাকুর বলেছিলেন— এখানে প্রকার দুটি নয়, একটিই। কেননা নৈতিকতার তত্ত্ব যেখানে, সেখানে কোনও প্রকার বিকল্প হয় না।
আমি বললুম, আপনি তো সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই গুলিয়ে দিলেন আরও। হচ্ছিল চুলকুনির কথা, তাতে আপনি চুলকানির দর্শন, চুলকুনির নৈতিক ভাবনা নিয়ে বিশাল বক্তব্য স্থাপন করছেন। এর কোনও মানে আছে? আমার পিতাঠাকুর বললেন— সব জিনিসকে হালকা করে দেখাটাই বড় সাধারণ স্বভাব। কিন্তু তলিয়ে দেখে ক্ষুদ্র পিপীলিকার জীবন নিয়েও যেহেতু ভারি ভারি বই লেখেন প্রাণিতত্ত্ববিদ পণ্ডিতেরা, তেমনই চুলকুনিরও কিছু দার্শনিক ভাবনা আছে। আমি কিছু বলতুম না, যদি না তোর কাকা ওই চুলকুনিটাকে ‘এনজয়’ করত, যদি না ওটাতে ও মজা পেত। আসলে কী জানিস, এ হল বেড়ে যাবার তত্ত্ব, পৃথিবীতে কতকগুলো জিনিস আছে, যেগুলোকে বাড়ালেই বাড়ে। এ-বিষয়ে নীতিশাস্ত্রকার যে শ্লোকটা লিখেছেন, তার প্রথমটা শুধু ভালো, আর সবগুলোই খারাপ। সেগুলো বাড়ালে এতটাই বাড়ে যে তা আর কোনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে না। শাস্ত্র বলছে— উদ্যোগ ব্যাপারটা এমন একটা বস্তু যা বাড়ালেই বাড়ে। উদ্যোগ কথাটার মধ্যেই সেই ভাবনাটা আছে। যোগ শব্দটা যদি কর্মের সঙ্গে শারীরিক চেষ্টার যোগ বোঝায়, তাহলে ‘উৎ’— উপসর্গটা সেই কর্মের মানসিক প্রবৃত্তির চরম সম্ভাবনা তৈরি করে। আমার নিজের কথাই বলি— আমি ছোটবেলা থেকে যৌবনসন্ধি পর্যন্ত বেশ অলস মানুষ ছিলাম। কিন্তু একটা সময় আমার মনে হল— এ কেমন জীবন বহন করে নিয়ে চলেছি আমি? সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারি না, রাত্রিও জাগতে পারি না ভালো করে। সারাদিন যে কর্ম করি তার মধ্যে কোনও ‘প্যাশন’ নেই, শুধু কর্তব্যের খাতিরে যা না হলে নয় তাই করছি।
এই কথাগুলো যে হঠাৎ এক সকালে দুয়ার ভেঙে কোনও জ্যোতির্ময় আমাকে বুঝিয়ে দিলেন, এমন সৌভাগ্য হয়নি আমার। তবে হ্যাঁ, এক মহাপুরুষ আমাকে বুঝিয়েছিলেন, তিনি তো জ্যোতির্ময়ই বটে। তিনি বলেছিলেন— এই যে সুন্দর মানুষজীবনটা পেয়েছিস, ব্যাটা! তো কতদিন বাঁচবি তুই? আমি বললুম— খ্রিস্টমতে Three scores and ten অর্থাৎ সত্তর বছর গড় আয়ু, তার বেশি আর কত? আর যদি বাপের পরমায়ু ধরি, তাহলে মেরে-কেটে আশি বছর। তিনি বললেন— বড় আশাবাদী বটে, আশি বছরই? তার চেয়ে মাঝামাঝি আয়, পঁচাত্তর ছিয়াত্তর ধরে কথা বলি। যদি পঁচাত্তর বছর বাঁচিস তাহলে ছোটবেলার চার/পাঁচ বছর বাদ দে। অর্থাৎ পাঁচ বছর তুই অজ্ঞানে ছিলি, তোর ভালো-মন্দ সুন্দর-অসুন্দরের কোনও বোধ ছিল না, বুড়ো বয়সটাও তেমনই যাবে। দেখবি, শেষ পাঁচ বছর ভালো-মন্দ সুন্দর অসুন্দরের চাইতেও নিজের দেহ নিয়ে বেশি বিব্রত থাকবি। ব্যস, জীবন থেকে দশ বছর বিয়োগ হয়ে গেল। থাকল কত?
ব্যাপারটা ঠিক কোন দিকে এগোচ্ছে ঠাহর করার আগেই উত্তর দিয়ে বললাম— পঁয়ষট্টি। তিনি বললেন— ঘুমোস কতক্ষণ? আমি বললাম— রাত্রে আট ঘণ্টা, রাত্রি এগারোটা থেকে সকাল সাতটা। আর দিনে? সব দিন ঘুমোই না, তবে সময় এলে মাঝে মাঝে ঘুমোই। মহাপুরুষ এবার হিসেবটা সোজা করে দিয়ে বললেন— পঁয়ষট্টি বছরের মধ্যে সাড়ে বত্রিশ বছর তোর অচৈতন্যে চলে গেল। যাই হোক, তুই দিনে যখন প্রতিদিন ঘুমোস না, তাহলে বলা যায়— তোর হাতে সময় আছে পঁয়ত্রিশ বছর। এবারে তোর ছোটবেলার খেলাধুলোর সময়, খাওয়া-দাওয়া, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, বিয়ে-সাদি, শরীরের নানা অসুখ, সন্তান পালন, দুশ্চিন্তা— সব কিছু মিলিয়ে আরও দশ থেকে পনেরো বছর নষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে হাতে থাকে মোট কুড়ি থেকে পঁচিশ বছর। এই সলিড কুড়ি-পঁচিশ বছর যদি ঠিকমতো উদ্যোগ নিয়ে ব্যবহার করতে না পারিস, তাহলে বুঝতে হবে সারা জীবন তুই অচৈতন্যে ঘুমিয়ে রইলি। তাহলে আর মানুষ হয়ে জন্মে কি লাভ হল, ছাগল হলেও কোনও অসুবিধে ছিল না।
মহাপুরুষ ভদ্রলোকের এই কথাগুলো আমার মনে দাগ কাটল। পরের দিন থেকে সারা দিনের মধ্যে যেখানে-যেখানে সময় বার করা যায় সেইগুলো চিহ্নিত করলাম এবং নিজের কাজ করতে লাগলাম। এটা জানিয়ে রাখা ভালো যে, নিজের কাজ এক-একজনের পক্ষে এক একরকম। যে ছাত্র তার পক্ষে বিদ্যা, যে ব্যবসায়ী তার কাছে ব্যবসার কাজ, যে শিক্ষক তাঁর পড়াশুনো ছাত্রের মধ্যে নিহিত করার কাজ, যে সার্কাস দেখায় তার অভ্যাস করার কাজ, মোট কথা যথোপযুক্ত উদ্যোগ নিতে পারলে উদ্যোগ থেকেই উদ্যোগ জন্মায়, উদ্যোগ বাড়তে থাকে। এ-কথা ধীরুভাই আম্বানি থেকে জি. আর. ডি. টাটা পর্যন্ত যেমন সত্য তেমনই পাড়ায়-পাড়ায় আরও অজস্র মানুষ আছেন, যাঁরা উদ্যোগের পর উদ্যোগ নিয়ে বৃহৎ স্থানে পৌঁছেছেন। এতটাই বৃহৎ স্থান যে, এখন তাঁদের ধারে-কাছে যাওয়া যায় না। সাধারণ কাজকর্ম, পড়াশুনো, ব্যবসা— সব জায়গাতেই উদ্যোগ থেকে উদ্যোগ নিতে নিতে মানুষ উদ্যোগ ব্যাপারটাকে ‘এনজয়’ করতে আরম্ভ করে। তখন দেখবেন তার ঘর-সংসার, স্ত্রী-পুত্র-আত্মীয়স্বজন সব গৌণ হয়ে যায় এবং ঠিক এইখানেই আমাদের পুরাতন শ্লোকটির তাৎপর্য তৈরি হয়।
আমাদের প্রাচীন নীতিশ্লোকটি কিন্তু উদ্যোগ আর চুলকুনিকে একই জায়গায় একই লাইনে বসিয়েছে। বলছে— সেবনাত্তু বিবর্ধতে। অর্থাৎ এগুলো যত করবি, তত বাড়বে। যত চুলকোবি, ততই চুলকোতে ইচ্ছে করবে। ওই যে মহাপুরুষ আমার কাছে সময়ের হিসেব চেয়ে আমাকে জীবনের বিচিত্র উদ্যোগে প্রেরণ করেছিলেন, পরবর্তী জীবনে তিনি কবি ভর্তৃহরির একটি বৈরাগ্য শ্লোক আমার কাছে বাংলা করে বলেছিলেন। ওই শ্লোকটির মধ্যে মনুষ্য-জীবনের সময় কষে কবি বলেছিলেন— চঞ্চল জীবনে এত কম সময়, সেই জীবনে সুখ কোথায়? এই শ্লোকের মধ্যে বৈরাগ্য ভাবনার একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত যেমন ছিল, তেমনই ওই শ্লোকের আলয় ছিল এই যে, আমাদের স্বল্প পরিসর জীবনে জোনাকির আলোর মতো জ্বলে ওঠা অজস্র অনিত্য সুখচিন্তা বাদ দিয়ে যেন সত্য-সুখের সন্ধানে ব্যাপৃত হই।
কিন্তু আমাকে যে তিনি এই শ্লোকের একাংশ মাত্র উচ্চারণ করে জীবনের ধর্মে, অনন্ত কর্মে প্রবৃত্ত করেছিলেন, তার একটা কারণ ছিল নিশ্চয়। কারণটা অবশ্য আমার আলস্য-ভাবনা, যেটাকে দার্শনিক পরিভাষায় তমোগুণ বলে। একটা মানুষকে তমোগুণের আলস্য ও অন্ধকার থেকে সত্ত্ব-বৈরাগ্যে উত্তীর্ণ করা যায় না বলেই তিনি আমাকে রজোগুণের চঞ্চলতায় প্রবৃত্ত করতে চেয়েছিলেন। বিবেকানন্দ বলেছিলেন— তোকে গীতাপাঠ করতে হবে না, তুই ফুটবল খেল। আমি যে চুলকুনির কথা বলেছিলাম, সেটা উদাহরণ বললে বলতে হবে— আলস্যের মধ্যেও এক ধরনের চুলকুনি থাকে। মজা হল সব চুলকুনিতেই তো চিড়বিড় করে না এবং দার্শনিক বোধ থাকলেই বুঝবেন যে, চুলকুনির দার্শনিক সঙ্কেত হল— বাড়ালেই বাড়ে। যেমনটি নীতিশ্লোকে বলেছে— আহারো মৈথুনং নিদ্রা সেবনাত্তু বিবর্ধতে— আহার, সঙ্গমাভ্যাস এবং ঘুম— বাড়ালেই বাড়ে। এ-ব্যাপারে আমি নিজেই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
আপনারা নিশ্চয় ভাবছেন— আহার-নিদ্রা ছেড়ে আমি মৈথুনের উদাহরণে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করব এবং আপনারা বিমলানন্দ লাভ করবেন। সেটি হচ্ছে না। বিশেষত আহার শব্দটা আমি বিশদার্থে বুঝি। আমি বুঝি— আমাদের প্রত্যেকটা ইন্দ্রিয়েরই আহার আছে, খাবার আছে— চোখের খাবার, কানের খাবার, নাকের খাবার— রূপ-রস-শব্দ-স্পর্শ-গন্ধ। এদের সবকটিই বাড়ালেই বাড়বে, কিন্তু এদের মধ্যে উদর এবং উপস্থের বেগ বড় সাংঘাতিক। আমার নিজের বাড়িতে আমার বড়োদাদা এবং অন্যান্য ভাইদের ক্ষেত্রে অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটেছিল। আমার বড়োদাদা সেই কালের দিনেও প্রচুর উপায় করতেন এবং সেই কালের এক তথাকথিত বড়লোকের বিটিকে বিয়ে করে ফেললেন। যার ফল হল অদ্ভুত।
আমরা তখন সকলে পূর্ব পাকিস্তানের গ্রাম থেকে কলকাতা শহরে এসেছি। পরিবারের প্রত্যেকেই প্রচণ্ড ভাত খাই। আমাদের রোজগেরে দাদা বহুকাল কলকাতায় আছেন বলে তাঁর খাবার চাহিদা আমাদের থেকে কম হলেও আমার বউদিদির চোখে সেটাও শহুরে রুচিসম্পন্ন ছিল না। তারপর কী যে হল, মাসখানেক যেতে না যেতেই বড়োদাদা মাকে বলতে আরম্ভ করলেন— আমাকে এত ভাত দিও না, অফিস করতে অসুবিধে হয়। আস্তে আস্তে এক বাটি ভাত খেতে আরম্ভ করলেন, এবং ‘আপনি ধর্ম আচরণ করে’ সোচ্চারে ঘোষণা করতে আরম্ভ করলেন—
এ-বাড়িতে সব রাক্ষসের মতো খায়, এত খেলে মাথায় মেদ জমবে এবং মাথা মোটা হয়ে যাবে। এর অবধারিত প্রতিক্রিয়া ছিল অভিমান এবং বাড়িতে অন্য দাদার রোজগার নিতান্তই কম বলে আমরা সকলেই খাওয়া কমিয়ে দিলাম। আমার অবস্থা এমনই ছিল যে, বাড়িতে কম খাওয়া এবং অন্য দাদার পকেট মেরে বাইরে অপ-খাবার খাওয়া। ফলে অম্বলের ব্যামো ধরে গেল। এরপর আমার বড়োদাদা অন্যত্র সংসার পাতলেন এবং কম খেয়ে এবং কম খাইয়ে জীবনকে আরও মর্যাদাসম্পন্ন করে তুললেন।
এদিকে আমাদের পৃথক সংসারে তখন মুক্তির আনন্দ চলে এল। অল্প খাবারেও স্বাস্থ্য ভালো হয়ে গেল। ইতোমধ্যে আমার বিবাহিতা এসে ফতোয়া দিলেন— এত কম খেলে কি পুরুষের চলে? খাওয়া বাড়াও। আমরা আবার খাওয়া বাড়াতে লাগলাম। বাড়াতে বাড়াতে এখন এমন হয়েছে যে দুপুরে আত্মীয় বাড়িতে গেলে আমাকে সামান্য ভণিতায় বলতে হয়— আমার জন্য একটু বেশি ভাত কোরো, ভায়া। ভাতটা আমি বেশি খাই। উপসংহারে বলতে পারি, মানুষের পেটও অনেকটা মুড়ির টিনের মতো, আহার বাড়ালে আহার বাড়বে এবং চুলকুনির সঙ্গে এইখানেই তার অন্ত মিল।
সমস্ত ইন্দ্রিয়ের আহার আছে এ কথা সার্বিকভাবে বললেও রসনার আহারের সঙ্গে উপস্থের বড়ো মিল। সকল দেশের মহাকবিরাও এ ব্যাপারে সচেতন। আমাদের চৈতন্য-পার্ষদ রূপ গোস্বামী না হয় বৈরাগী মানুষ, তিনি ইন্দ্রিয় দমনের শিক্ষায়— ‘বাক্য মনোবেগ’ কিংবা ‘ক্রোধ জিহ্বাবেগ’ ছাড়িয়ে উদর আর উপস্থকে একত্র-চিহ্নিত করেছেন— জিহ্বা বেগম উদরমুপন্ধবেগম— কিন্তু ওদেশের শেক্ষপীর! তিনি তো আর বৈষ্ণব বাবাজি নন। ওথেলো নাটকে পুরুষের কামনাকে উদরের সাজাত্যেই তো বর্ণনা করেছেন এমিলিয়া ডেসডিমনার কাছে—
’Tis not a year or two shows us a man
They are all but stomachs and we are but food!
কামনার মধ্যে যে এক অশান্ত অপূরণ ক্ষুধা আছে— এ-কথা নতুন কিছু নয়। উদর এবং উপস্থের মধ্যে এমন একটা সাজাত্য এবং সাধর্ম্য আছে তা প্রমাণ করতে ন্যুট হ্যামপসুন ‘হাঙ্গার’ বলে একটা বই লিখে ফেলেছিলেন, আর আমাদের মহারাজ যযাতি হাজার বছর ধরে দেবযানীর সঙ্গে যৌবন উপভোগ করার পর বলেছিলেন— উপভোগ করতে করতে কাম-ভাব-শান্ত হয়ে যাবে এমনটি মোটেই হবার নয়। এ হল আসলে এক আগুন, ঘি দাও আরও জ্বলবে— ভূয় এবং অভিবর্ধতে। আহার এবং মৈথুনের সহধর্মিতা এখানেই— বাড়ালেই বাড়বে— এবং হয়তো এইখানেই সেই মহাবিখ্যাত চুলকুনির সঙ্গেও সেই একই সহধর্মিতা— বাড়ালেই বাড়বে আহারো মৈথুনং নিদ্রা সেবনাত্তু বিবর্ধতে।
আমার পিতাঠাকুর পণ্ডিত মানুষ ছিলেন। তিনি ভাগবত পুরাণ বা ওইরকম কোনও নামী গ্রন্থ থেকে একটি শ্লোক উদ্ধার করে পরিষ্কার জানিয়েছিলেন যে, চুলকুনির সঙ্গে পৌরুষের কামনার একটা নান্দনিক যোগাযোগ আছে। আমার এমনই কপাল যে, শ্লোকটা খুঁজে বার করতে পারলাম না। কিন্তু মনে আছে, তিনি পরিষ্কার বলেছিলেন যে, পুরাণমতে যে লোক চুলকুনি সহ্য করে থাকতে পারে, অর্থাৎ না চুলকে চুলকুনি হজম করতে পারে, সে কামনার বেগও সহ্য করতে পারবে। কিন্তু তাতে এই কথাই তো আরও সপ্রমাণ হয় যে, চুলকুনির অন্তর্গত ধর্মের সঙ্গে কামনা-মৈথুন-চেষ্টার আন্তরিক মিল আছে আর এই কথাটা মহাকবি কালিদাসের শব্দ-ব্যবহার থেকে আরও বেশি মধুরভাবে প্রমাণিত হয়।
কালিদাসের এইসব শ্লোকে সুরসপ্তকের পঞ্চম লেগেছে, তিনি শিব-পার্বতীর প্রথম মিলনের কোমল পরিবেশে অকাল বসন্তের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। এমন দিনে তির্যক প্রাণীদের মধ্যেও কী অসম্ভব শৃঙ্গারের আবেশ আসে, সেটা বলার সময় কালিদাস কৃষ্ণসার হরিণ এবং হরিণীর প্রেমাবেশ বর্ণনা করেছিলেন। এইখানে ভ্রমর-ভ্রমরী একই ফুলের পাত্রে মধু খাচ্ছে, এই শৃঙ্গার ভাষা নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর কিন্তু কৃষ্ণসার মৃগের প্রেমচেষ্টা দেখা গেল এক মোহন এবং মহান চুলকুনির মধ্যে। কৃষ্ণসার মৃগের স্পর্শে মৃগীর চক্ষুদুটি যখন নির্মীলিত হয়ে আসছে, সেই অবস্থায় এই স্পর্শসুখ গাঢ়তর করে দিচ্ছে মৃগের শৃঙ্গ কণ্ডূয়ন— শৃঙ্গেন চ স্পর্শনির্মীলিতাক্ষীম/ মৃগীমকণ্ডূয়ত কৃষ্ণসারঃ।
আমি বলতে চাই— কালিদাসের শব্দভাণ্ডার অনন্ত অফুরান। তার মধ্যে অপশব্দ প্রয়োগে রস থেকে রসাভাস তৈরি হবারও ভয় থাকে। তবু এই অসাধারণ মুহূর্তে শৃঙ্গ এবং কণ্ডূয়ন শব্দ প্রয়োগে মহাকবি বুঝিয়ে দিয়েছেন— মৈথুন ভাবনার মধ্যেও এক ধরনের চুলকুনির তাৎপর্য নিহিত আছে। আরও লক্ষণীয় ব্যাপার হল— যাঁরা ভাষায় অঙ্গ-ভঙ্গ তথা অন্তরঙ্গ নিয়ে ভাবনা করেছেন, তাঁরা জানিয়েছেন যে পৃথিবীর সমস্ত ভাষার পুরুষ-চিহ্ন বা লিঙ্গের সমস্ত পর্যায় শব্দ এবং অপপর্যায়ও যত আছে, তার সবগুলিরই ঊর্ধ্বমুখ ছুঁচোলো অর্থাৎ সবগুলি দিয়েই খোঁচানো যায় বা চুলকানো যায়। শব্দগুলির যে বিশেষত্ব আছে, তাতে তার দৃঢ়তা, আক্রমণের ক্ষমতা অথবা কর্ষণের ক্ষমতাটা ইঙ্গিতে মেলে— যেমন, rod (লাঠি), shaft (বাণ), plough (লাঙল), club (মুষল) ইত্যাদি। আর কালিদাসের হরিণটি তার প্রেয়সীকে চুলকানোর জন্য যে মাধ্যমটি ব্যবহার করেছে, সেই ‘শৃঙ্গ’ শব্দটি থেকেই তো শৃঙ্গারের উৎপত্তি।
ভদ্রলোকের শাস্ত্রমতে— যেমন ভারতের নাট্যশাস্ত্র অথবা তার টীকাকার অভিনব গুপ্ত যা-ই বলুন— শৃঙ্গার হল উজ্জ্বল বেশ, উজ্জ্বল তার চেহারা, এমনকী রতি-র মতো সর্বজনমান্য স্থায়ীভাবও খুব ভালো কথা, কিন্তু মূলে ‘শৃঙ্গ’ শব্দটা যে কামনার প্রতীক অথবা যৌনতার প্রতীক সে কথাটা শৃঙ্গার রসের অন্তর বোঝাতে গিয়ে সবচেয়ে প্রকট করে বলে দিয়েছে রসশাস্ত্রের সবচেয়ে চর্চিত গ্রন্থ ‘সাহিত্য দর্পণ’। এখানে বলা হয়েছে— ‘শৃঙ্গ’ হল কামুকতার প্রথম উদ্ভেদ, রতিভাব প্রকট হয় এই রাস্তা ধরেই— শৃঙ্গং হি মন্মথোদ্ভেদ-স্তদাগমন হেতুকঃ। তাহলে এটা বুঝতে হবে যে, রসশাস্ত্রের সর্বোত্তম আস্বাদন অথবা কাব্য-মহাকাব্যের সর্বশ্রেষ্ঠ আধার যে শৃঙ্গার তার মূল যে ‘শৃঙ্গ’ শব্দ, সেটাকে আমরা নিতান্ত লোকায়ত জীবন থেকে গ্রহণ করেছি কোন কালে? খ্রিস্টপূর্ব শতাব্দী তো বটেই। নাট্যশাস্ত্র তো লেখা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে। ‘শৃঙ্গ’ শব্দের মধ্যে যে কাম-কণ্ডূয়নের তাৎপর্য নিহিত আছে, তা ইয়োরোপ-আমেরিকার লোকেরা বুঝেছে অনেক পরে। মোটামুটি অষ্টাদশ শতাব্দীতে পুরুষের ‘ইরেকশন’ ব্যাপারটাকে ওরা ‘হর্ন’ বলে চিহ্নিত করেছে কিন্তু সেটা নিতান্তই শৃঙ্গ সাদৃশ্যবশত। এমনকী জেমস জয়েস পর্যন্ত তাঁর বিখ্যাত ইউলিসিস গ্রন্থে ‘হর্ন’ শব্দটা ব্যবহার করেছেন উত্থিত পুরুষ-চিহ্নের সাদৃশ্যবাচকতায়। কিন্তু কণ্ডূয়নের ভাবনাটা আরও অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই পরবর্তীতে যাঁরা কামুকতার উদ্ভেদে ‘হর্নি’ শব্দটা ব্যবহার করেছেন, তাঁরা অনেক বেশি জীবনের কাছাকাছি এসেছেন। তবে আজকাল ইংরেজিতে যে গুচ্ছ গুচ্ছ ‘হর্নি পোয়েট্রি’ বেরিয়েছে, তার সবটাই চুলকুনি, শৃঙ্গার-রসের আনন্দ মহাত্ম্য সেখানে কিছুই নেই।
আমরা যে নীতিশ্লোক ধরে কথা আরম্ভ করেছিলাম, সেখানে আরও দু-চারটি শব্দ আছে যা চুলকুনির দর্শনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা উদ্যোগের কথা আগে বলেছি এবং বলেছি সব খারাপের মধ্যে এটাই একমাত্র ভালো। পরে ভেবে দেখেছি— উদ্যোগ ব্যাপারটা তো শুধুই শিল্পপতি আর বিদ্যার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, উদ্যোগের আরও অনন্ত ব্যবহার্য আধার আছে, যেখানে সেটা চুলকুনির তাৎপর্যেই সঠিক ধরা পড়ে। আর একটা কথা হল— যে-সব নীতিশাস্ত্রকারেরা এই সব শ্লোক বেঁধেছেন, তাঁরা অনেকগুলি খারাপের মধ্যে একটা ভালো বসিয়ে দেন না। এঁরা কেউ কম বুদ্ধিমান নন এবং জীবনকেও অনেক দেখেছেন। সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হল— ভালো ব্যাপারে উদ্যোগ অনেকটাই ধৈর্য এবং ধীরতার অপর পর্যায়, সেখানে চুলকুনির চেয়েও মহাদাশয়তা এবং মহচ্চেষ্টার আধিক্য বেশি। কিন্তু উল্টোদিকে, খারাপ যে কাজগুলো, যেমন ধরা যাক কলহ-বিবাদ অথবা ঈর্ষা, অসূয়া অথবা অকারণে দোষ আবিষ্কার করার চুলকুনিটাই কাজ করে বেশি। উদ্যোগ এখানেও কম লাগে না। কিন্তু এই উদ্যোগের মধ্যে মহাদাশয়তা থাকে না, কিন্তু খলতার দোষ থাকায় মানুষের গা চুলকোয়।
ট্রেনে দেখবেন, যাবার পথে ক্ষণিক অনীপ্সিত ত্রুটিতেই দুজনে ঝগড়া করতে থাকেন। বেশ তো ঝগড়া চলছে, চলুক। কিন্তু দেখবেন, আপাত দার্শনিক গোছের একজন তৃতীয় ব্যক্তির উদয় হবে। হবেই। তিনি ঝগড়া থামানোর অছিলায় কখনও একজনের পক্ষ নেবেন, কখনও বা মহান দার্শনিকতায় বলবেন— আরে। আর তো মাত্র দুটো স্টেশন, তারপরে কে কোথায় চলে যাবেন। থামুন না, দাদা। উদ্যত কলহের মধ্যে এই শাস্তির বাণী কিন্তু আসলে চুলকুনি, যা ঝগড়া থামায় না, বরং বাড়ায়। আবার কেউ দেখবেন ফুট কাটছেন ঋতুচক্রের ভাবনায়— অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত শীত বলে যদি কলহটাকে চিহ্নিত করা যায়, তো বুঝবেন চুলকুনি হচ্ছে। নিম্নজাতীয় বস্তি এবং বড়ো বড়ো ফ্ল্যাট-বাড়ির বস্তিতে যে ঝগড়াগুলি চলে, সেগুলোও এই ট্রেনে অভ্যস্ত চুলকুনির মধ্যেই পড়ে। তাঁরা জীবনে ট্রেনে না উঠলেও ঝগড়ার দার্শনিক সংস্কার এটাই যে সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি বা তৃতীয় পক্ষের চুলকুনির উদয় হয়। প্রথম ও দ্বিতীয়, বাদী এবং প্রতিবাদীর মধ্যে ঝগড়ার কারণ থাকে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তৃতীয়ের উদ্যোগ অবশ্যই কণ্ডূয়ন-প্রসূত এবং তা বাড়ালেই বাড়ে।
নীতিশাস্ত্র আরও তিনটি বিষয় লিস্টিতে এনেছে, যেগুলি চুলকুনির মতো— চুলকোলেই বাড়ে। সেগুলি হল— জুয়াখেলা, মদ্যপান এবং পরস্ত্রী। এই তিনটির ব্যাপারেই আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই, কিন্তু জগৎ এবং জীবনে যা দেখি, তাতে জুয়াখেলা এবং মদ্যপানের ক্ষেত্রে সংযম রাখা বড় দায়। এই দুটিই কিন্তু আমাদের প্রাত্যহিক কণ্ডূয়নের বিষয় এবং এই কণ্ডূয়ন আমাদের সভ্যতার সমবয়সি। সেই কোন কালে উচ্চারিত ঋগবেদের অক্ষসূক্তের মধ্যে সেই পাশাড়ে লোকটি বলেছিল— ছকের ওপর বড়ো বড়ো পাশার গুটিগুলো দেখলেই আমার বড় আনন্দ হয়— প্রবেপা মা বৃহতো মাদয়ন্তি। সোমরস পান করতে গেলে যেমনটি হয়, ঠিক তেমনই একটা উৎসাহ আসে পাশা-খেলার জন্য। বস্তুত জুয়াড়ি হোন অথবা মদ্যপায়ী, তাঁদের মধ্যে হৃদয় বলে যেটা থাকে, তাতে প্রত্যেক দিনই তাঁরা একবার ভাবেন যে, আর জুয়ো খেলব না, অথবা আর মদ্য স্পর্শ করব না। কিন্তু মদ্যপানীয় সূর্য যেই অস্ত যায়, অমনই শুরু হয় তাঁর কণ্ডূয়ন; আর বেদের সেই জুয়াড়ি তো পরিষ্কার বলেছিল— আমি যখন ভাবি, আমি আর পাশা খেলব না, তখন বন্ধুদের দেখলেও পালিয়ে পালিয়ে বেড়াই। কিন্তু ছকের ওপর যেই না পাশার পিলে পিলে গুটিগুলো দেখি, অমনই আর থাকতে পারি না। ভ্রষ্টা নারী যেমন নাগরের কাছে দৌড়োয়, তেমনই আমিও ছুটি জুয়াড়ি বন্ধুদের কাছে।
এই যে থাকতে না পারা— এইখানেই কণ্ডূয়ন বা চুলকুনির দার্শনিক তাৎপর্য নিহিত আছে অথবা একই মন্ত্রের মধ্যে যে ভ্রষ্টা রমণীর উপমাটি পাওয়া গেল, সেটা থেকেই উল্টো দিকে পরস্ত্রীর উন্মাদনা টের পাওয়া যায়। এ সব কিছু বাড়ালেই বাড়ে। তবে কিনা প্রাচীনেরা পরস্ত্রী নিয়ে বড়োই উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং হয়তো বা প্রাচীনকালে তার সামাজিক এবং অর্থনৈতিক যাথার্থও ছিল, কিন্তু শ্লোকে গণিত ‘লিস্টি’র মধ্যে ‘মৈথুন’ শব্দটি থাকা সত্ত্বেও যে আবার পরস্ত্রী-বিষয়ক আসক্তির কথা বলা হল, তার কারণ— মানুষ বোধহয় ‘নদীর ওপারেতে যত সুখে’র কল্পনাতেই তাড়িত হয় এবং সেখানে তৃষ্ণার শান্তি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটে না বলে এটাকে কণ্ডূয়ন ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়।
এ-কথা সলজ্জে এবং সযত্নে জানাই যে, মদ্যপান, জুয়োখেলা, অথবা পরস্ত্রী বিষয়ে আমি আরও খানিকটা দার্শনিক আলোকপাত করতে পারতাম। কারণ প্রথমত আমি দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ আর দ্বিতীয়ত এমন তথাকথিত দুষ্ট-বিষয়ে লেখনী সঞ্চালনা করার জন্য সমুদয় লেখককুলেরই লিখন-কণ্ডূয়ন থাকে। অতএব সেদিকে আর না গিয়ে আমি বসে বসে এটাই ভাবছিলাম যে, মনুষ্য জীবনে অনন্ত অপার ক্ষেত্রে চুলকুনির ভূমিকা যতই অস্বীকার করুন, কিন্তু চুলকুনির মনস্তত্ব যেখান থেকে গড়ে উঠেছে, তার এক প্রাচীন দার্শনিক স্বরূপ আছে। সেটা বুঝতে পারি যখন একজন সাতাত্তর বছরের বুড়োকে গা দেখানো পাঞ্জাবি এবং ময়ূরপুচ্ছ ধুতি পরতে দেখি। বিশেষত তাঁর গলায় যখন সোনার চেন উসকানো দেখলাম, তখন দূরবর্তী অতিবয়স্কা দু-একজন মহিলাকেও আমার অস্বাভাবিক লাগল। একজন বললেন— ওই যে দিদিমা গোছের মানুষটিকে দেখছেন— উনি এখনও ‘ফেসিয়াল’ করান এবং মুখে বেশ কিছু মেখে গাল রাঙিয়ে তোলেন। আমার মনে পড়ল, কবি ভর্তৃহরি লিখেছেন— মুখ তো আমার বলিরেখায় ভরে গেছে, মাথাটাও পুরো পাকা চুলে ভর্তি, সমস্ত শরীর-সন্ধি শিথিল থেকে শিথিলতর, কিন্তু একটা জিনিস শুধু দিন দিন তরুণ হয়ে ওঠে, সে হল আমার তৃষ্ণা। আমাদের মতে, এই তৃষ্ণাই চুলকুনির দার্শনিক পর্যায়বোধক শব্দ। এখনকার সমাজসেবী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, চিকিৎসক— সকলেই তাঁদের বাহ্য ব্যবহারে সমাজসেবা করছেন, রাজনীতি করছেন, অধ্যাপনা করছেন, চিকিৎসা করছেন, অথচ অন্তরঙ্গ কোথায় যেন ‘পুষ্পে কীট-সম তৃষ্ণা জেগে রয়’। ভালো হলে এই তৃষ্ণাই যেমন মনুষ্য জীবনের চালিকাশক্তি, তেমনই মন্দ হলে এই তৃষ্ণাই অ-ব্যাপারে ব্যাপার তৈরি করে, অকাণ্ডে কাণ্ড তৈরি করে। কিন্তু তবু অক্ষম উচ্চাভিলাষীরা এই তৃষ্ণার বশেই চলতে থাকে এবং সেটাই মনুষ্য জীবনের চুলকুনি।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন