কুন্তীকুমারী

নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

কুমারী-মায়ের ‘কনসেপট’-টা কিন্তু কোনওভাবেই সোনার পাথরবাটির মতো বিপ্রতীপ অলীকতায় তৈরি নয়। বরঞ্চ এটা এমনই এক সমানাধিকরণ, যেখানে মাতৃত্বের সঙ্গে মাতৃত্বের সংঘাত বাধে— তথাকথিত বৈধ মাতৃত্বের সঙ্গে তথাকথিত অবৈধ মাতৃত্বের সংঘাত— যেখানে বিবাহ নামক সামাজিক প্রথাটি একটা ভয়ংকর নির্ণায়ক হয়ে ওঠে। তবে তার চেয়েও বেশি ভয়ংকর বোধ হয় সেই ঐশ্বরিক শারীর সংস্থান যা গর্ভের আকারে একমাত্র নারীদেহেই স্থাপিত। অথচ কৈশোরগন্ধী সেই সন্ধিসময়ের বয়সটা, সে তো আবেগের দিক থেকে, আকৃতির দিক থেকে এবং সংবেদনশীলতার দিক থেকে নারী-পুরুষের সমান, সমান্তরাল এবং সাধারণ যৌবনবতী এক রমণীকে দেখে একটি পুরুষের যে মানসিক বিভ্রম হয়, তার বহিঃপ্রকাশ হয়তো বেশ একটু স্পষ্টই বোধগম্য হয়; কিন্তু এক রমণীর ক্ষেত্রে অভীষ্ট পুরুষের জন্য সেই চিত্ত-বিভ্রম অনেকটাই একই রকম হলেও তার বহিঃপ্রকাশ এতই বেশি সূক্ষ্ম এবং এতই সেটা পরিশীলিত যে কবির মতো সংবেদনশীলতা দিয়ে বুঝতে হয়। কবি বলেছিলেন— একেবারে যে ঘরের মধ্যেই এসে ঢুকল সে, তা নয় কিন্তু, আবার পছন্দের মানুষটার ওপর যে একেবারে বিমুখ তাও নয়। কোনওরকম খারাপ বা কর্কশ কথাও একটা বলেনি। শুধু দেখলাম— সরল দীঘল আঁখিপাতে অন্য সবার দিকে যেমন করে তাকাল, ঠিক সেইরকমই অবিশেষ দৃষ্টিতে অভিমত পুরুষটির দিকেও সে একবার তাকাল— সা কেবলং সরল-পক্ষ্মভিরক্ষিপাতৈঃ/ কান্তং বিলোকিতবতী জন-নির্বিশেম।

সমস্যাটা কিন্তু অন্য জায়গায়। এই দুই তরুণ তরুণী ঘনায়মান ভালোবাসায় আক্রান্ত হয়ে একবার যদি শারীরিক মিলনকে প্রশ্রয় দেয়, তাহলে প্রেমী পুরুষের মোক্ষলাভ তো হয়েই গেল, কিন্তু সেই রমণীর শরীরে ভালোবাসার বীজটুকু যে উপ্ত হয়ে গেল, সেই বীজের আধার গর্ভটুকু নিয়েই যত দুশ্চিন্তা। মহাভারতের অন্যতমা নায়িকা, যাঁকে আমি অনেকাংশে দ্রৌপদীর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, সেই কুন্তী কিন্তু এই দুশ্চিন্তাতেই কথা আরম্ভ করেছিলেন সূর্যের সঙ্গে। নইলে নিজে কুন্তী যথেষ্টই সপ্রতিভ। দুর্বাসার কাছে যথেপ্সিত দেবসঙ্গমের বর পাবার পরেই সেই বর-মন্ত্রে অবিবাহিত অবস্থায় এক দেব-পুরুষকে আহ্বান করার কৌতূহল তো তিনি দেখিয়েছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন সেই সাহসও যা একটি অত্যাধুনিক রমণীও কুণ্ঠিত হবেন দেখাতে।

আধুনিক পণ্ডিত সজ্জনেরা অবশ্য বলছেন যে সকল তরুণীরাই যে, পূর্বোক্ত প্রকারে ওই একইরকম নিভৃতে নিবিড়া হবেন তা নয়, অনেকের মধ্যেই এখন সেই উর্বরতা কাজ করে যাতে বিনা কোনও পুরুষের অপেক্ষাতেও তাঁরা আপন যৌবনোদ্ভেদগুলি প্রকাশ করে ফেলেন যথাসম্ভব। এটা কুন্তী করে ফেলেছিলেন কোনও আত্মপ্রদর্শনের মাধ্যমে নয়, কিন্তু অতিকৌতূহল ভরে কুন্তী আহ্বান করে বসেছিলেন এক দেবপুরুষকে। তিনি সূর্য। দীপ্তিমান সূর্য মূর্তিমান হয়ে কুন্তীর সামনে এসে দাঁড়ালেন পুবের আকাশ ভেঙে। এইবার কুন্তী ভয় পেলেন এবং শারীরিক সংশ্লেষ এড়ানোর জন্য যতটা অনুনয়-বিনয় করার প্রয়োজন তার অতিরিক্ত করলেন। কিন্তু দেবপুরুষ তা মানবেন কেন? তিনি বরং রমণীয় এই কন্যাবয়সে কুন্তীর এই পুরুষ-বিষয়ক কৌতূহল অতি স্বাভাবিক— এমন একটা রসিক সিদ্ধান্ত দিয়ে নতুন করে মিলনে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। কিন্তু মানুষী কুন্তী জানেন যে, শারীরিক সঙ্গমের ক্ষেত্রে সকল পুরুষই প্রায় দেবতার মতো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন, মিলনোত্তর কালে নতুন প্রাণের যে সূচনা হবে, সেখানে দায় বহন করতে হবে শুধু এক রমণীকেই— সমাজের দায়, মর্যাদার দায়, আপন গর্ভ এবং গর্ভজাত পুত্রের দায়।

সূর্যদেবতার সত্যাগ্রহের মুখে কুন্তী প্রায় নাচার হয়ে সূর্যকে বললেন— আপনার আগ্রহ যদি আমাকে মানতেই হয়, তাহলে শুধু এইটুকু হতেই হবে যে, আমার শরীর দিয়েও আমি কিন্তু সতী থাকতে চাই— আত্মপ্রদানং দুর্ধর্ষতব কৃত্বা সতী ত্বহম। রমণীয় যৌবনের শতমুখী চঞ্চলতার মধ্যেও সমাজ-বিধির বাইরে এই যে মিলন, তার মধ্যেও এই সাংস্কারিক হাহাকারের বিষয়টাই কিন্তু সবচেয়ে বড়ো এক জিজ্ঞাসা— তবু যেন সতী থাকতে পারি আমি, যেন আমার কুমারীত্ব আহত না হয়। সূর্য দেবতা হলেও এই সংস্কার, এই ব্যথাটুকু বোঝেন। তিনি বললেন— আমাদের এই সাগ্রহ মিলনের পর তুমি আবারও তোমার কুমারীত্ব ফিরে পাবে এবং এই মিলনের ফলে যে পুত্রলাভ করবে তুমি, সে হবে অনন্ত খ্যাতির আধার এক মহাবীর— সা ময়া সহ সঙ্গম্য পুনঃ কন্যা ভবিষ্যসি।

সত্যি কথা বলতে কী, এইরকম একটা সাহসিক মিলনের পরেও একটা কন্যাভাব কিংবা কুমারীত্বের মুখস্থিতি তাঁর ভবিষ্যৎ বৈবাহিক জীবনের সুস্থিতি রচনা করে বটে, কিন্তু একবার যে কুমারীত্ব লঙ্ঘিত হল, তার যন্ত্রণা কিন্তু সারাজীবন ধরে বইতে হয়েছে কুন্তীকে— এক কুমারী মাতার সার্বিক কষ্ট কিন্তু সেখানেই। সাধারণ জনের ক্ষেত্রে এই কষ্ট দুর্বার এক মৃত্যুর মতো—এখনও, এমনকি উদগ্র আধুনিক এক সমাজেও। এই আধুনিক সমাজে দেবতার কোনও আশীর্বাদ থাকে না। থাকে না কুন্তিভোজ রাজার রাজবাড়ির মতো বিরাট এক রাজবাড়ি যার কন্যান্তঃপুরে কী ঘটে চলেছে, তার খবর রাখে না কেউ। নইলে গর্ভবতী অবস্থায় কুন্তীর দশ মাস কেটে গেল, অথচ টের পেল না কেউ। একে তো অন্তঃপুর, তাতে কুমারী-মা হতে চলেছেন বলেই গর্ভের আকার নিপুণ ভাবে লুকিয়ে রাখার কৌশল শিখে নিয়েছিলেন কুন্তী— সা চ গর্ভং নিগৃহতী— শিখে নিয়েছিলেন তো কুমারী-মাতৃত্বের কলঙ্ক থেকে বাঁচতেই! আর এ-ব্যাপারে সবচেয়ে যিনি সাহায্য করেছিলেন, তিনি অন্তঃপুরের এক ধাত্রীকন্যা— হয়তো গর্ভমুক্তির সময়ে তাঁর সাহায্যই সবচেয়ে বেশি দরকার এই ভবিষ্য-জননীর।

যথাসময়ে কুন্তীর পুত্র জন্মাল। গায়ে সোনার বর্ম, কানে সোনার কুণ্ডল, ঠিক সূর্যের মতো দীপ্তিমান এই পুত্র। কুন্তীর প্রথমজ পুত্রের জন্য কোনও উৎসব হল না বাড়িতে, জাতকর্ম করার জন্য এলেন না ব্রাহ্মণ-পুরোহিত। মঙ্গল-শঙ্খ বাজল না, রাজসভার ঘোষক একবারও কুন্তিভোজের নগরীতে ঘোষণা করল না তাঁর মেয়ের ঘরের নাতির জন্ম-কথা। কুন্তী শুধু কুমারীত্বের গর্ভপঙ্ক গায়ে মেখে ধাত্রীকন্যার সঙ্গে পরামর্শ করলেন— কীভাবে পুত্রটিকে ত্যাগ করেও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। অবশেষে সদ্যোজাত পুত্রকে পেটিকার মধ্যে রেখে রাজধানীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা অশ্ব-নদীর জলে ভাসিয়ে দিলেন কুন্তী। আগেও অনেক কাঁদলেন, পরেও অনেক কাঁদলেন, আকাশে বাতাসে ভেসে এল কুমারী জননীর আকূল প্রার্থনা— ভূলোক, দ্যুলোক, আকাশ, বাতাস,জল— সকলে যাতে বাঁচিয়ে রাখেন তাঁর শিশুপুত্রটিকে। শেষ প্রার্থনা ছিল সেই পিতা সূর্যদেবের কাছেই— পিতা ত্বাং পাতু সর্বত্র তপনস্তপতাং বরঃ। কুন্তী বলেছেন— ধন্য তোমার পিতা যিনি সহস্র-কিরণ-চক্ষুতে নদীতে ভাসমান তোমাকে দেখতে পাবেন। আর ধন্য সেই মা যিনি পুত্র-কল্পনায় তোমাকে কোলে তুলে নেবেন, তোমার মুখে দেবেন স্নেহস্রুত স্তন্যপান। বিদেশ-বিভূমিতে যেখানেই থাকো তুমি— তোমার এই সহজাত বর্ম দেখে, তোমায় আমি ঠিক চিনে নেবো, বাছা!

কুন্তী অনেক কাঁদলেন, তাঁর কানীন পুত্রের জন্যে। অশ্বনদীর জলে ভাসমান পেটিকাটিকে ডুবতে দিল না তাঁর অপার স্নেহ এবং তাঁর কৌমারহর দেবতার সতর্ক কিরণচক্ষুর দৃষ্টিপাত। কিন্তু কন্যাপুত্রের এই বেঁচে থাকার পুণ্যটুকু কুন্তীকে তাঁর স্নেহযুক্তির মধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি কোনওদিন। স্বয়ং কর্ণের কাছে এই অভিমান স্বাভাবিক ছিল; স্বাভাবিক ছিল এই তিরস্কার— যে ফিরালো মাতৃস্নেহ পাশ। তাহারে দিতেছ মাতঃ, রাজ্যের আশ্বাস। বস্তুত এই তিরস্কার শুধু তাঁর পুত্রের নয়, এখানে শামিল আছেন সবাই— একালের আধুনিকতম সমালোচক থেকে আধুনিকা রমণীরাও কর্ণের দুঃখে আকুল হন, কিন্তু কুন্তীর গায়ে মাখিয়ে দেন নির্মমতার কলঙ্কপঙ্ক। লক্ষণীয়, জননী হিসেবে কুন্তী কিন্তু কোনওদিন কর্ণকে বিস্মৃত হননি। সেই অস্ত্রপরীক্ষার দিনেই যে শুধু তিনি তাঁকে চিনে ফেলবেন, এটা মহাকাব্যিক সংবাদ নয়, বরঞ্চ মহাকাব্যের কূটসংবাদ এটাই যে কর্ণ অশ্বনদীর জল থেকে যমুনা থেকে গঙ্গায় ভেসে গিয়ে শেষে যে সূত অধিরথের ঘরে রাধা-মায়ের কোলে গিয়ে উঠলেন, সে খবরটা কিন্তু কুন্তী রেখেছেন রীতিমতো গুপ্তচরদের মাধ্যমে— চারেণ বিদিতশ্চাসীৎ পৃথয়া দিব্যবর্মভৃৎ।

এক কুমারী জননী হিসেবে কুন্তীর এই অন্বেষণ চলেছে প্রিয় পুত্রের মৃত্যু পর্যন্ত। সেই অন্বেষণের প্রকৃতি অবশ্যই নিগূঢ়া, কেননা কোনও দিন কুন্তী এ-ব্যাপারে কাউকে কিছু বলেননি, উদঘাটন করেননি তাঁর কন্যাকালের এই চরম সত্য। অথচ আমি অন্তত ভাবি যে, কুন্তীর পক্ষে তাঁর জীবনের এই কানীন সত্য গোপন করাটা মহাকাব্যিক সময়ের এক উত্তরণ এবং সেই অর্থে তা খুব আধুনিকভাবেই সংবেদনশীল। মহাকাব্যের সময়ে এটাই বরং অনেক সহজ ছিল যে, কুন্তী তাঁর এই কানীন মাতৃত্বের কথা নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারতেন তাঁর স্বামী পাণ্ডুর কাছে। পাণ্ডু যখন পুত্রলাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন, তখন তিনি নিজেই কুন্তীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন এই কানীন পুত্রের সম্ভাবনার কথা, কুন্তী সেদিন মুখ ফুটে স্বামীকে যদি জানাতেন সূর্যসম্ভব সেই পরিত্যক্ত পুত্রের পূর্ব ইতিহাস, তাহলে পাণ্ডু সেই পুত্রকে আপন ক্ষেত্রজ পুত্রের মর্যাদা দিতেন বলেই আমরা বিশ্বাস করি। কেননা কুন্তীর সমসময়ে সমাজ ছিল অনেক উদার এবং অন্তত বারো রকমের সমাজ-স্বীকৃত পুত্রের কথা পাণ্ডু নিজেই কুন্তীকে বলেছেন, যাদের একটি প্রকার-মাত্র পাণ্ডুকে সপুত্রক পিতা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারতেন।

কিন্তু কুন্তী বলতে পারেননি, না পারার কারণ অবশ্যই তাঁর হৃদয়ের সংবেদনশীল অনন্ত জটিলতা, যা একজন সাধারণ কুমারী-পুত্র কর্ণ যেমন শিশুকালই বিসর্জিত, তেমনই একেবারে সদ্যোজাত না হলেও কুন্তীকে কিন্তু তাঁর শৈশবকালেই যখন তিনি কন্দুক ক্রীড়া করেন, যখন তাঁর কিছু বুদ্ধি হয়েছে সেই অবস্থায় তাঁকে কুন্তিভোজের কাছে দত্তক দিয়ে দেন তাঁর পিতা। কর্ণ অজ্ঞান শিশু অবস্থায় রাধা-অধিরথের ঘরে বেড়ে উঠেছেন, কিন্তু এক সজ্ঞান দত্তক সন্তানের হৃদয় কত কঠিন জটিলতায় ভারাক্রান্ত হতে পারে, তা মনোবিদ মাত্রেই ব্যাখ্যা করবেন। তার মধ্যে কুন্তী এক রমণী এবং তাঁর কন্যাভাবেই তাঁর গর্ভে এক সন্তান। তাঁকে জলে ভাসিয়ে দিয়েও তাঁর স্নেহের অবশেষ ঘটছে না এবং সেই অবস্থায় পাণ্ডুর সঙ্গে তাঁর বিবাহ। যে স্বামীকে তিনি জীবন দিয়ে ভালবেসেছিলেন, যাঁর পুত্রের জন্ম দিয়ে তিনি পুত্রবতী হতে চেয়েছিলেন, তিনি সন্তানের জন্ম দিতেই অক্ষম। স্বামীর সেই অব্যক্ত যন্ত্রণার মধ্যে তিনি তাঁকে বলতে পারেননি যে, এ-ব্যাপারে তাঁর বিলক্ষণ এক দৈবী ক্ষমতা আছে, এমনকি একটি কানীন পুত্রও আছে তাঁর। এই যে কুন্তী বলতে পারলেন না, তাই বলাটা আর হলোই না।

এক কুমারী-জননী হিসেবে যদি কুন্তীকে বুঝতেই হয়, তবে শৈশবকালে তাঁর নিজেরই দত্তক হয়ে ওঠার অনুভূতিটুকুও বুঝতে হবে। তাঁর নিজের পিতা-মাতার স্নেহ-বঞ্চনা, দত্তক পিতার বাড়িতে অভিমান এবং সংকোচ নিয়ে বেড়ে ওঠা এবং অবশেষে কুমারী অবস্থাতেই এক অনীপ্সিত কৌতুক সঙ্গম— এত সব জটিলতা কুন্তীর জীবনকে এমন এক আধুনিক মনস্তত্বের আধার করে তুলেছিল, যার প্রাচীন সমাধানও ছিল অতিশয় আধুনিক— তিনি কাউকে কিছুই বলতে পারেননি। অথচ বলতে কী হত, তা তিনি প্রথম এবং শেষবার টের পেয়েছিলেন আপন প্রথমজ সন্তান কর্ণের কাছে বলেই। সেই যে প্রথম উচ্চারণেই কর্ণ তাঁর পরিচয়-বচন দিয়ে বসলেন— রাধেয়োহম অধিরথিঃ— অধিরথ-সূতপুত্র রাধাগর্ভজাত— তাঁর মাতৃত্বের এই চরম প্রত্যাখ্যান তাঁকে কোন গহন গভীরে টেনে নিয়ে গিয়েছিল যাতে করে তিনি এক অসামান্যা শক্তিমতী রমণী হয়ে উঠেছিলেন। অর্থাৎ কুমারী মায়ের জটিলতা তাঁকে ভেঙে ন্যুব্জ করে দেয়নি। সমস্ত জীবন ধরে তিনি শুধু লড়াই করে গেছেন— সে লড়াই বাপের বাড়ির সঙ্গে, শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে, এমনকি প্রিয় পুত্রদের সঙ্গেও, নিজের সঙ্গে তো বটেই। এই লড়াইটা তিনি এমনভাবেই জিতেছেন, যেখানে অবসন্না কুন্তীর শেষ কথাটা আমরা শুনতে পাই— আমার যেন আরও আরও অনেক বিপদ হয়, যাতে করে তোমার কথা মনে পড়ে, প্রভু!  

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন