মনের ডুবুরি – অর্পিতা সরকার

অর্পিতা সরকার

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তমালী রায়ের চেম্বারে স্থির হয়ে বসে আছে রিনি। ওর পাশে বসে অফিস কলিগ স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধাকে ঠিক অফিস কলিগ বলাটা অনুচিত হবে। কারণ এই মুহূর্তে প্রায় সমবয়সি হয়েও স্নিগ্ধা ওর অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছে। একই ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টে কাজ করছে দুজনে আজ বছর তিনেক হল। তাই স্বাভাবিকভাবেই বন্ধুত্বটা বেশ গাঢ়।

রিনি ফিসফিস করে বলল, ডক্টর তো এখনও এলেন না? স্নিগ্ধা রিনির দিকে তাকিয়ে বলল, তুই সবেতে এত অধৈর্য্য কেন রে! আর কয়েক মিনিট দেখ। শুনেছি উনি ভীষণ পাংচুয়াল। স্নিগ্ধা বলল, অভিষেকের যখন প্রবলেম হচ্ছিল ওকে নিয়ে এসেছিলাম। তমালী রায়ের ট্রিটমেন্ট পদ্ধতিই সম্পূর্ণ অন্যরকম। রিনি নিজের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলল, প্রথমত আমি মনে করি না আমার কোনো মানসিক সমস্যা হয়েছে। দ্বিতীয়ত আমি এখন অনেকটা ভালো আছি। বিশেষত অনির্বাণদের বাড়ি থেকে মুক্তি পেয়ে। বিশ্বাস কর, ওই জেলখানা থেকে বেরিয়ে এসে আমি হ্যাপি। শেষ দু-মাস আমাকে অনেকটা শান্ত দেখছিস কিনা বল? স্নিগ্ধা বলল, বুঝেছি। কিন্তু তোর যে সমস্যাটা হচ্ছে সেটা হয়তো তুই…

ওর কথা শেষ হবার আগেই একজন ভদ্রমহিলা রিনিকে জিজ্ঞেস করলেন, একা এসেছেন? আপনার হাজবেন্ড? কটা বাচ্চা আপনার?

রিনি মারাত্মক উত্তেজিত হয়ে প্রায় চিৎকার করে বলে উঠল, কেন তাতে আপনার কী? আমার বাচ্চা নেই। আমি বাঁজা। আপনার ছেলেকে কি বিয়ে করতে চেয়েছি আমি, যে আপনি আমার ঠিকুজি কুষ্ঠী জানতে চাইছেন? ভাগুন এখান থেকে।

রিনির চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। মারাত্মক উত্তেজিত হয়ে গেছে ও। স্নিগ্ধা ওর পিঠে হাত রেখে বলল, কুল ডাউন।

ডক্টর তমালী রায় স্নিগ্ধার দিকে ইশারা করে বললেন, ওনাকে আমার কেবিনে নিয়ে যান।

আরেকটি ছেলের পাশেও একইরকমভাবে দাঁড়িয়ে বললেন, তাহলে এখন কী করা হয়? চাকরি পাওনি এখনও? ইস তোমার বন্ধুরা তো সবাই জব পেয়ে গেল….

ছেলেটি তো তমালীর প্রায় গলা টিপে ধরেছিল। কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে ছেলেটির মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, ভিতরে নিয়ে আসবেন মিনিট কুড়ি পরে।

অ্যাপয়েন্টমেন্ট করার সময়েই স্নিগ্ধাকে ডক্টর তমালী জিজ্ঞাসা করেছিলেন, রিনির সমস্যাটা ঠিক কি?

স্নিগ্ধা বলেছিল, এমনিতে ভীষণ নরম্যাল। ব্যাঙ্কে কোনো প্রবলেম নেই। কাজেও নিখুঁত। শুধু কেউ যদি ওকে জিজ্ঞেস করে ফেলে বেবি আছে? তখনই ও ভায়োলেন্ট হয়ে যায়। স্নিগ্ধা জানিয়েছিল, আমিও ঠিক জানতাম না ম্যাডাম। আচমকাই শপিং মলে ঘটনাটা ঘটে গেল। আমি আর রিনি লেডিস সেকশন থেকে বেরোচ্ছিলাম। একজন অল্পবয়সী স্টাফ রিনির সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ম্যাম ওদিকে কিডস সেকশন। এখন ১৫ % ফ্ল্যাট ছাড় চলছে। ইচ্ছে হলে বেবির জন্য কিছু কিনতে পারেন। আচমকা রিনি ওই ছেলেটির কলার চেপে ধরে চিৎকার করতে শুরু করল। এত সাহস আপনাকে কে দিয়েছে? এসব বলার অধিকার কে দেয় আপনাদের? ছেলেটা কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আমিও বহুকষ্টে ওকে বাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। সেদিনই ফিরে আপনার সঙ্গে কন্ট্যাক্ট করি। রিনি প্রথমে রাজি হচ্ছিল না, পরে অনেক বোঝানোর পরে রাজি হয়েছে।

স্নিগ্ধা নিজেও একটু চমকে গেছে তমালী ম্যামের চিকিৎসা পদ্ধতি দেখে।

রিনিকে ফিসফিস করে বলল, ওটাই ডক্টর।

রিনি উত্তেজিত হয়ে বলল, আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকব না। চল বেরিয়ে যাই। যে ডক্টরের এমন রুচি তার কাছে নিজের ট্রিটমেণ্ট করানোর বিন্দুবিসর্গ ইচ্ছে আমার নেই। প্লিজ স্নিগ্ধা চল রুমে ফিরি। একটাই ছুটির দিন এই চেম্বারে কেন বসে আছি বলবি?

স্নিগ্ধা শান্ত গলায় বলল, গল্প করব বলে। দেখবি উনি ভীষণ সুন্দর গল্প করেন। চল আমাদের ডাকছেন। রিনি ঘাড় গোঁজ করে ঢুকল তমালী রায়ের চেম্বারে।

তমালী মিষ্টি করে হেসে বললেন, চেহারার যত্ন নেন না কেন? চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কেন? আর নেলপালিশ পরেন না আপনি? এমন সুন্দর আঙুল আপনার!

রিনি ধীরে ধীরে তাকালো তমালীর দিকে। আলতো করে বলল, একসময় খুব রূপচর্চা করতাম। রূপের অহংকার ছিল খুব। তমালী মুচকি হেসে বললেন, মাত্র ত্রিশেই সব অহংকার শেষ! রিনি আমি বোধহয় আপনার থেকে বড়ই হব। দেখে মনে হয় আমি এখন থার্টি নাইনে রান করছি?

রিনি পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল তমালীর দিকে।

চোখে নিখুঁত কাজলের রেখা, ভ্রু প্লাক করা। ঠোঁটে হালকা নরম লিপস্টিকের শেড। দুই ভ্রুর মাঝে একটা ছোট্ট কালো টিপ মাথা উঁচু করে নিজের স্পর্ধা জানান দিচ্ছে। কোনো এক সময় রিনিও এমন নিখুঁত করে সাজত। কলেজের বন্ধুরা বলত, বিউটি কুইন এলেন। ইদানীং ব্যাঙ্কে আসার আগে কোনওমতে নিজেকে একটু ভদ্রসভ্য করে নেয় মাত্র।

কিন্তু নিজেকে পরিপাটি করার ইচ্ছেটাই যেন চলে গেছে রিনির।

স্নিগ্ধাকে বাইরে ওয়েট করতে বলেই তমালী রায় শুরু করলেন রিনির অগ্রপশ্চাৎ জানতে।

বলুন, তারপর ডিভোর্সটা নিলেন কেন বলুন? আপনাদের পাড়ার মানুষ তো আপনার হাজবেন্ডকে দেবতার পরের আসনেই বসিয়ে রেখেছেন। আর আপনি সেই হাজবেন্ডের সঙ্গে সংসার করতে পারলেন না?

রিনি উত্তেজিত হবার আগেই তমালী স্বাভাবিক গলায় বললেন, এই প্রশ্নটাই দিনরাত কুরে কুরে খাচ্ছে না আপনাকে?

রিনি বলল, আপনি বিশ্বাস করুন অনির্বাণের আসল রোগটাই কেউ জানে না। মানে ও কাউকে জানতে দেয়নি আর কি। ও মারাত্মক মিথ্যুক। কথায় কথায় সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যে বলে।

তমালী অবজ্ঞার গলায় বললেন, আমি জানতে চাইছিও না উনি কেমন মানুষ। শুধু একটাই কথা বলব, হ্যাঁ আপনি অত্যন্ত খারাপ রিনি। তাই আপনি ওনার সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে পারেননি। এতে কি আপনার বেঁচে থাকা বা জীবনের খুব বেশি কিছু পালটে যাবে?

মানে আপনি আজকেও মেসে ফিরবেন। খাওয়া-দাওয়া করবেন। কালকে অফিসে বেরোবেন। হয়তো উইক এন্ডে একটা মুভি বা একটু আউটিং। তাই অনির্বাণ ভালো না খারাপ, দোষ কার ছিল এসব ভেবে বৃথা সময় কেন নষ্ট করছেন?

এক কাজ করুন রিনি। আজ থেকে কাউকে কোনো কৈফিয়ত দেবেন না। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, আপনি বলবেন, আপনি নিতান্ত সাধারণ দোষে গুনে মেশানো মানুষ, তাই অনির্বাণের সঙ্গে থাকতে পারলেন না। কদিন বলে বা ভেবে দেখুন তো, আপনার কোনো ক্ষতি হয় কিনা! রিনি মাথা নিচু করে বলল, চেষ্টা করব। তমালী বললেন, দিন সাতেক পর আসুন। মনে করে, নিয়ম করে এই সাতদিন নিজেকে দোষমুক্ত করার লোভে কারোর কাছে নিজের ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিতে যাবেন না প্লিজ!

রিনি ফিজটা বাইরে রিসেপশানে দিয়ে বেরিয়ে এল। স্নিগ্ধা উদবিগ্ন মুখে জিজ্ঞেস করল, কী রে কী বুঝলি?

রিনি বলল, ইনি সত্যিই ডক্টর? কীসব ভুলভাল পরামর্শ দিলেন জানিস। বললেন অনির্বাণ আমার ওপরে যেগুলো করেছে সেগুলো নিয়ে যেন কারোর কাছে জাস্টিফাই করতে না যাই! বরং নিজেকে খারাপ মেনে নিয়ে বিন্দাস থাকি! অদ্ভুত ডক্টর!

স্নিগ্ধা ইনি আমাকে সাতদিন এটা করতে বললেন, তারপর নাকি আমার মেন প্রবলেম শুনবেন! বোঝো, পুরো সমস্যা না শুনেই উনি প্রেসক্রিপশন করে দিলেন। তাতে না আছে ওষুধ, না আছে নিয়ম। স্নিগ্ধা একটু ভেবে বলল, উনি যেটা বললেন সেটাই করে দেখ।

রিনি সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল, আর ইউ ম্যাড? অনির্বাণের মাসির সঙ্গে আমার পরশুদিনই দেখা হবে। ভদ্রমহিলা ব্যাঙ্কে ঢুকেই আমার কাউন্টারে এসে ওর বোনপোর নামে গুণকীর্তন করতে শুরু করবে। সেটা আমায় সহ্য করতে হবে?

ওই মহিলা প্রতি মাসের কুড়ি তারিখ নাগাদ আসবে। আর বিপ্লবের সঙ্গে গল্প জুড়বে। ইচ্ছে করে আমায় শোনাবে বলে। আর নিতে পারি না।

স্নিগ্ধা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখে বলল, তমালী রায় তোকে যেটা বললেন, সেটাই কর।

রিনি মুচকি হেসে বলল, প্লিজ। তুই বলেছিলিস বলে এসেছিলাম। আর মানতে বলিস না।

স্নিগ্ধা আর ও মেসের রুমে ফিরে এল।

অভিষেকের বদলি হয়ে যাবার পরে রেন্টের ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দিয়েছে স্নিগ্ধা। এখন রিনির সঙ্গে একটা মেসে থাকে। ওই ফ্ল্যাটে একা থাকলেই মন খারাপ করছিল স্নিগ্ধার। অভিষেক নিজেই বলেছে, বছর খানেকের মধ্যেই ও ট্রান্সফার নিয়ে চলে আসবে কলকাতায়। তখন ওরা একটা ফ্ল্যাট কিনবে। রোজ রাতে অভিষেক কল করে। দীর্ঘক্ষণ ধরে স্নিগ্ধা আর অভিষেক গল্প করে। স্নিগ্ধা খেয়াল করেছে ওই সময়টা রিনি কানে হেডফোন দিয়ে গান শোনে। বেশ বোঝা যায় ওদের স্বামী-স্ত্রীর দৈনন্দিন গল্পগুলো রিনিকে ওর পুরোনো স্মৃতির রাজ্যে পৌঁছে দেয়, তাই ইচ্ছে করেই ও এই সময়টুকু গান শোনে।

এই তো বছর দুয়েক আগেই কত ধুমধাম করে বিয়ে হল রিনির। ব্যাঙ্কের সকলে গিয়েছিল ওর বিয়েতে। অভিষেক তখন কলকাতার অফিসে ছিল। ওরা দুজনে তো তিনদিন ধরে রিনির বিয়েতে এনজয় করেছিল। রিনির বাবা খুব খরচ করেছিলেন মেয়ের বিয়েতে। ওর দাদা-বউদি সকলেই অনির্বাণ সম্পর্কে খুব ভালো ভালো কথা বলেছিল। বছর দেড়েকের মাথায় কী যে হয়ে গেল!

পোশাক বদলাতে বদলাতে রিনি বলল, জানিস স্নিগ্ধা আমার না তমালী রায়কে বড্ড অদ্ভুত মহিলা মনে হয়েছে। ভদ্রমহিলার মধ্যে কিছু একটা আছে। সেটা ঠিক কি আমি জানি না।

স্নিগ্ধা বলল, আমাদের বিয়ের বছর খানেকের মাথায় অভিষেক জাস্ট ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিল জানিস তো। কর্পোরেট অফিসে চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করেও খুশি করতে পারছিল না বসকে। ও ধীরে ধীরে কেমন যেন মন খারাপের রাজ্যে বিচরণ করছিল। তুই তো জানিস অভিষেক কত জলি ছেলে। সেই ছেলে তখন কথায় কথায় বিরক্ত হচ্ছিল। আমি এক বান্ধবীর কাছে শুনে তমালী রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি।

উনি অভিষেককে বলেছিলেন, বস খুশি হলে কি আপনি খুশি হবেন?

অভিষেক বলেছিল, হ্যাঁ অবশ্যই।

তমালী বলেছিলেন, কতক্ষণ থাকবে সেই খুশি?

অভিষেক যখন ভাবছিল তখন তমালী হেসে বলেছিলেন, খুব সাময়িক। কারণ আপনার বস আবার পরের দিন অখুশি হয়ে যাবে। তাই অন্যকে বেশি খুশি করার চেষ্টা না করে নিজেকে খুশি রাখুন। দেখুন সবাইকে আপনি খুশি দেখবেন।

অভিষেক ওনার কথা মতো চলে মাত্র একমাস পরে বলেছিল, স্নিগ্ধা সি ইজ এ ম্যাজিশিয়ান।

তুইও দেখ, তোর প্রব্লেমগুলো কমে যাবে। রিনি কথা না বলে চায়ে চুমুক দিল।

স্নিগ্ধা খেয়াল করছিল তমালী রায়ের কাছ থেকে ফেরার পর রিনি যেন একটু বেশিই চুপচাপ হয়ে গেছে। কিছু যেন চিন্তা করছে গভীরভাবে।

অফিস থেকে বেরোনোর মুখেই ঘটল ঘটনাটা। রিনি ক্যান্টিন থেকে ফিরছিল। দুজন কাস্টমার আলোচনা করছিল, আসলে কী বলতো, মিত্রার কোনো ইস্যু নেই তো, তাই মায়ের মন বোঝে না। আমরা যে ওর মতো হুটহাট বেরোতে পারি না, সেটা বোঝে না।

কোথাও কিছু নেই, রিনি মারাত্মক রিয়াক্ট করে ফেলল। দুজন মহিলাকে আক্রমণ করে বলল, পিএনপিসি করতে আসেন এখানে? কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলছেন?

মহিলা দুজন একটু হকচকিয়ে গেল। তারপর সোজা ঢুকল ম্যানেজারের ঘরে। কাস্টমারদের সঙ্গে এমন ব্যবহার তারা কেন মেনে নেবে?

কিছুক্ষণের মধ্যেই ম্যানেজারের তলব। রিনি ওদেরকে সরি বলে ছাড়া পেল। কিন্তু মেসে ফিরেও একভাবে বলে যাচ্ছিল, মাতৃত্বই কি নারীত্বের প্রমাণ? মানে কেউ মা না হলে তার মধ্যে কোনো সফট মন থাকতে পারে না স্নিগ্ধা? এ কেমন যুক্তি রে !

স্নিগ্ধা একটু বিরক্তি উগলে দিয়েই বলল, সমাজ পালটাতে ছুটিস না। বরং নিজেকে একটু পালটে নে। সুবিধা হবে। রিনি আর কথা বাড়াল না।

দুদিন চুপচাপই কাটল রিনির। তারপরেই সেই বিশেষ তারিখে অনির্বাণের ছোট মাসি এলেন ব্যাঙ্কে। উনি এখন রিনির এক্স মাসিশাশুড়ি। কিন্তু মহিলা বোধহয় সেটা ভুলে যান। তাই ইচ্ছে করে রিনির পাশের টেবিলে বসে থাকা বিপ্লবকে এটা সেটা বলেন ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে। লকারে যাবেন মহিলা অথবা বই আপডেট করাবেন। ইচ্ছে করেই যেন বেশিক্ষণ কাটান ব্যাঙ্কে। বিপ্লব পাত্তা না দিলেও মহিলার ভ্রূক্ষেপ নেই।

রিনি ভীষণভাবে সতর্ক হয়ে আছে। আজকে কোনোভাবেই উত্তেজিত হয়ে পড়বে না ও। ম্যানেজারের কানে গেলে অকারণ অশান্তি। লাঞ্চের পরেই সেকেন্ড হাফে কাজের প্রেশার যখন একটু কম তখনই সুগন্ধা মাসি ঢুকলেন। রিনির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বিপ্লবকে বললেন, বুঝলে ভাই, আমি তো এটাই বুঝতে পারি না যারা নিজের সংসারের চারটে লোককে শান্তিতে রাখতে পারে না, তারা কি করে পাবলিক রিলেশন ঠিক রাখবে! বিপ্লব বলল, দিদি আপনার বইটা দিন আপডেট করে দিচ্ছি। মহিলা বললেন, সে দিচ্ছি। আসলে ভুলটা আমারই হয়েছিল। আমিই বড়দিকে বলেছিলাম পাত্রী আছে আমার হাতে। তখন তো বুঝিনি ব্যাঙ্কে চাকরি করা এতরকম মানুষকে সামলানো মেয়েরা আবার সংসার করতে পারে না!

রিনি দেখল ওর হাতটা মুঠো হয়ে যাচ্ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ভদ্রমহিলা একবারের জন্যও নিজের বোনপো বা দিদির দোষ বলেন না তো! অকারণে রিনিকেই দোষারোপ করে যান বাইরের লোকের কাছেও।

অসহ্য রাগে কপালের শিরা ফুলে উঠেছে রিনির।

আচমকাই তমালী রায়ের একটা কথা মনে পড়ে গেল। যদিও ডাক্তারকে খুব বেশি ভরসাযোগ্য মনে হয়নি ওর, তবুও একবার ট্রাই করে দেখল ওনার বলা কথাটা।

রিনি স্ট্রেট সুগন্ধা মাসির সামনে দাঁড়িয়ে খুবই নরম শান্ত গলায় বলল, ম্যাডাম, আসলে কি জানেন আমারও মনে হয় আপনি ভুল করেছিলেন। পাত্রী হিসাবে আমাকে নির্বাচন করে। অনির্বাণের মতো মহাপুরুষের সঙ্গে আমার মতো সামান্য মানবী কি অ্যাডজাস্ট করতে পারে! আমি সত্যি বড্ড স্বার্থপর, ভীষণ রকমের খারাপ। তাই পারলাম না অমন স্বর্গে বাস করতে। আক্ষেপ করে আর কি করবেন বলুন? আমি এতদিনে বুঝতে পেরেছি আমি ওদের যোগ্য ছিলাম না।

সুগন্ধা মাসির মুখে বিস্ময়। ছোট আকারের একটা হাঁ হয়ে গেছে কখন বুঝতেই পারেননি।

রিনির বুকের ভারী বাতাসটা আস্তে আস্তে নেমে গেল। সুগন্ধা মাসি বিজবিজ করে বললেন, যাক বুঝতে পেরেছ এই ঢের। দাও বিপ্লব, আমার বইটা আপডেট হয়েছে তো দাও…

আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন।

আগের যখন রিনি বারংবার নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল, অনির্বাণের দোষগুলো বলতে চেয়েছিল তখন মহিলা একটার পর একটা যুক্তি সাজিয়ে গেছেন। আজ হঠাৎ হল কী, এভাবে চলে গেলেন! তবে কি রিনি একপ্রকার জিতে গেল?

ভালো প্রমাণের লড়াই থেকে বিরত থেকেই কি লড়াইটা জিতে গেল?

বিপ্লব হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ফাটিয়ে দিয়েছ গুরু।

সাতদিন পরে নির্দিষ্ট দিনে স্নিগ্ধাকে ছাড়াই তমালী রায়ের চেম্বারে বসে আছে রিনি। আগের দিনের থেকে আজ পেশেন্টের ভিড় বেশি। এখনও তমালী রায় আসেননি সম্ভবত।

একটা বছর চারেকের বাচ্চা কেঁদেই চলেছে একনাগাড়ে। মেয়েটির বাবা বকে-ঝকে থামানোর চেষ্টা করছিল। মিনিট দশেক দেখে বিরক্ত হয়ে রিনি উঠে গেল বাচ্চাটার কাছে। ভদ্রলোককে বলল, সামলাতে পারেন না যখন তখন মাকে ছাড়া এসেছেন কেন?

ভদ্রলোক আরেকটু হলেই রিনিকে মেরে বসত বোধহয়। চিৎকার করে বলল, মেয়ে হলেই কেউ মা হয় না বুঝেছেন! আপনি কে আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলানোর?

রিনি নিজের ব্যাগ থেকে একটা চকলেট কেক বের করে বাচ্চাটার হাতে দিয়ে বলল, খিদে পেয়েছে তোমার না? বাবাটা খুব বোকা, কিছু বোঝে না। বাচ্চাটা কেকটা পেয়ে কান্না থামাল। রিনি দেখল, দুচোখে জল নিয়ে বাচ্চাটা কেকটা খাচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ খিদে পেয়েছে।

কানের কাছে ফিসফিস করে কেউ একজন বলে উঠলেন, আপনার স্ত্রী কোথায় মিস্টার দেবজিত?

বাচ্চাটাকে ছুটির দিনে ওনার কাছে রেখেই তো আসতে পারতেন?

দেবজিত নামক ব্যক্তিটি রিনির সামনেই সোজা উঠে তমালী রায়ের শার্টের কলার চেপে ধরে বললেন, তাতে আপনার কী?

তমালী রায় শান্ত স্বরে বললেন, ভিতরে আসুন। রিনির দিকে ভদ্রলোক তাকাতেই রিনি বলল, আমি ওকে দেখছি আপনি ঘুরে আসুন চেম্বার থেকে। বাচ্চাটা এখন রিনির হ্যান্ডব্যাগের ভিতরে থাকা ফোল্ডিং আয়নাটাতে নিজের মুখ দেখতে ব্যস্ত। রিনির সঙ্গে বেশ জমিয়ে গল্প করছে। নিজেই বলল, আমার নাম চিনি। আমি কিডজি স্কুলে যাই।

রিনির গালে এসে নিজের গালটা ঠেকিয়ে আদর করে দিল চিনি।

রিনির মনে পড়ে গেল একের পর এক পিরিয়ডের ডেট পিছিয়ে যাওয়া আর ইউরিন টেস্টের রিপোর্টের নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়ার দিনগুলো।

চিনি কানের কাছে এক নাগাড়ে নানারকম গল্প করে চলেছে। রিনি ফিরে গেছে অনির্বাণদের বাড়ির তিনতলার সাজানো বেডরুমে।

রিনিকে সকলে ঘিরে বসে আছে। বিয়ের বছর না ঘুরতেই বাচ্চার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে অনির্বাণের বাবা-মা। নির্লিপ্ত অনির্বাণ। ওর মুখে একটাই কথা, ছাড়ো না। যা বলছে বলতে দাও। রিনি বলত, আমারও তো অফিস থেকে ফিরে রোজই এক প্রসঙ্গ ভালো লাগে না অনি। প্লিজ তুমি একটু কিছু বলো। অনি নির্দ্বিধায় বলেছিল, বেশ আমি বলে দেব আমরা এখনই বাচ্চা নিতে চাই না।

নিশ্চিন্ত হয়েছিল রিনি।

দিন দুই পর থেকে অনির মা বলতে শুরু করেছিল, রিনি তুমি কেন এখন বাচ্চা নিতে চাও না? ঠিক কী সমস্যা হচ্ছে তোমার? অনি বলল, তুমিই নাকি চাইছ না।

চমকে উঠেছিল রিনি। এটা তো ওদের দুজনের সিদ্ধান্ত ছিল। তাহলে …

অনি বলেছিল, আহা রাগছ কেন? তুমিই তো চাও না, সেটাই তো বললাম। রিনি বুঝেছিল অনি সুচারুভাবে ইচ্ছেটা ওর কাঁধেই চাপিয়ে দিয়েছে। রিনি বলেছিল, বেশ আমি ইস্যু নিতে চাই। অনি দ্বন্দ্বে পড়ে বলেছিল, এখন থাক না। রিনি জেদ ধরেছিল তখন। কারণ এই এক প্রসঙ্গ টেনে বাড়ির আর সকলে ওকেই দোষ দিয়ে চলেছে। অনির দিকে কেউ আঙুল তোলে না।

পিরিয়ডের ডেট দিন দুই পিছিয়ে যেতেই ইউরিন টেস্ট করানো হয়েছিল রিনির। রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছিল। প্রতি মাসে টেস্ট হচ্ছিল, রেজাল্ট নেগেটিভ। রিনির জীবন যখন প্রায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল, তখন অনি রেগে গিয়ে বলেছিল, তোমার এই শারীরিক প্রবলেমের দায়টা নিশ্চয়ই আমার নয়!

অদ্ভুত রকমের জটিলতা তৈরি হয়েছিল জীবনে। বিয়ের মাত্র এক বছর পর থেকেই অনির্বাণদের সকলের ব্যবহার কেমন যেন বদলে যেতে শুরু করেছিল রিনির প্রতি। এমনকী অনির্বাণ পর্যন্ত যেন ওর কথায় বিরক্ত হচ্ছিল। রিনি বারবার ডক্টরের কাছে গেলেও অনি যেতে রাজি হয়নি, করাতে রাজি হয়নি কোনো টেস্ট।

দমবন্ধ হয়ে আসছিল রিনির। মাকে বললে, মা বলেছিল মানিয়ে নিতে। রিনি আর কিছু বলেনি কাউকেই। শুধু একটা জিনিস বেশ বুঝেছিল, ইউরিন টেস্টের রিপোর্ট যেদিন নেগেটিভ আসবে সেদিন সকলেই সন্দেহের চোখে তাকাবে ওর দিকে। অনির্বাণ পাশ ফিরে শোবে। ওদের বাড়ির পরিচালিকা সবিতা মাসি আর ডিনারে ডাকবে না রিনিকে।

রিনি তখন কাউকে বোঝাতে পারছিল না, ও সত্যিই মা হতে চায়। কারণ অনির্বাণ ততদিনে ভারী সুচারুভাবে সকলের মনে একটা কথা প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে, রিনি চায় না, তাই হচ্ছে না।

আর পারছিল না রিনি। বাধ্য হয়ে ডিভোর্স চেয়েছিল। রিনির পাশে তখন একটা মানুষ নেই। নেই ওর নিজের বাবা, মা, দাদা, বউদি। নেই কোনো বন্ধু। একমাত্র স্নিগ্ধা বলেছিল, আর কতদিন মনের সঙ্গে যুদ্ধ করবি? চলে আয়।

সবসময় ওই দোষারোপ করা আঙুলগুলোর সামনে থেকে ছুটে পালিয়ে এসেছিল রিনি।

আন্টি জল খাব….

চিনির ডাকে সম্বিৎ ফিরল। ব্যাগ থেকে জলের বোতলটা বের করে ওর মুখে ধরল। চিনি জল খেয়েই বাবার কাছে যাবে বলে বায়না জুড়ল। রিনি বাধ্য হয়ে বাচ্চাটাকে নিয়ে এগিয়ে গেল চেম্বারের দিকে। ভদ্রলোক তো অনেকক্ষণ ঢুকেছেন চেম্বারে। এবারে নিশ্চয়ই বেরোনোর সময় হয়ে গেছে।

একজন মহিলা এগিয়ে এসে রিনিকে বললেন, আপনার বাচ্চা? মুখের খুব মিল আছে তো।

রিনি চিৎকার করে বলতে যাচ্ছিল, না আমার বাচ্চা নয়। আমার নেগেটিভ রিপোর্ট আসে….

তমালী রায়ের টেকনিক অ্যাপ্লাই করে বলল, হ্যাঁ আমার বাচ্চা।

ভদ্রমহিলার কৌতূহল তাতেও কমার নয়। ফিসফিস করে বললেন, ভিতরে কি আপনার হাজবেন্ড?

রিনি হেসে বলল, হ্যাঁ। আপনি কেন এসেছেন, নিজের এই সব জানার আগ্রহ দমন করার জন্য?

ভদ্রমহিলা আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন।

বাহ, রিনি তো বেশ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে। চিৎকার করতে বা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছে না। চেম্বারের ভিতর থেকেই রিনি শুনতে পেল ভদ্রলোকের গলা, চিনির মা আমায় ছেড়ে চলে গেছে ওর যখন বছর দুয়েক বয়েস। মেয়ের কাস্টডি আমি দাবি করেছিলাম। ও করেনি, তাই আমার কাছেই চিনি রয়ে গেছে। এতদিন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু ইদানীং বিভিন্ন ক্ষেত্রে যখনই মেয়েরা অবহেলিত বা মেয়েরা নির্যাতিত এসব দেখি তখন মাথা গরম করে ফেলি। বা যখনই লোকজন এসে খুব করুণ গলায় আমায় বলে, আপনি সিঙ্গেল ফাদার? পারবেন একা একা মেয়ে মানুষ করতে? অথবা ওর মা আসেনি? এমন প্রশ্নে বড্ড উত্তেজিত হয়ে পড়ছি। কেন এরকম হচ্ছে ডক্টর?

কী করে বেরুবো এর থেকে!

মহিলাদের একেবারেই সহ্য হচ্ছে না। সকলকে দেখলেই মনে হচ্ছে, এদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে চিনির মা। তমালী রায় বলতে শুরু করার আগেই রিনি বলল, ম্যাম ওনার বাচ্চা কাঁদছে।

দেবজিত সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল, আপনি কি বাইরে দাঁড়িয়ে আমাদের আলোচনা শুনছিলেন নাকি? দেখেছেন ডক্টর আমি বলেছিলাম না, মহিলা মাত্রই…রিনি বিরক্ত হয়ে বলল, আপনার মেয়েকে আমি আধঘন্টা ধরে সামলাচ্ছি তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো দূরে থাক, আপনি অকারণে দোষারোপ করছেন আমায়?

এই জন্যই চিনির মা…

তমালী রায় কথাটা শেষ করতে না দিয়েই চিনির হাতে একটা চকলেট দিয়ে বললেন, তোমার নামটা তো তোমার মতোই মিষ্টি।

দেবজিত তখনও রুক্ষভাবে তাকিয়ে বলল, কী বলতে চাইছেন কী আপনি?

রিনি স্পষ্ট ভাষায় বলল, আপনাদের মতো মানুষদের জন্যই পুরুষদের ওপরে বিশ্বাস চলে যায়। কৃতজ্ঞতা শব্দটা বোধহয় ডিকশনারিতে নেই তাই না!

তমালী শান্ত গলায় বললেন, দেবজিত বিশ্বাস আপনাকে এক্ষুনি যেটা বললাম, একবার ট্রাই করে দেখুন প্লিজ।

দেবজিতের চোখ দুটো তখন রাগে লাল হয়ে গেছে।

গলার স্বরটা নামিয়ে বলল, চিনির মা আমায় ছেড়ে চলে যায়নি। আমরা দুজনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, একসঙ্গে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ডিভোর্স নিয়েছি। আপনার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে ম্যাম? মেয়ে আমার কাছেই থাকে। আপনি চাইলেও আপনাকে চিনির দেখাশোনার দায়িত্ব দেব না আমি। আর কিছু জানার আছে আপনার?

রিনি দাঁতে দাঁত চেপে বলল, না নেই।

বেরোনোর আগেই শুনল, তমালী বলছেন, কি মিস্টার দেবজিত ওষুধে কাজ হল তো?

রাগে গা রি রি করে উঠল রিনির।

তমালী ইচ্ছে করে দেবজিতকে দিয়ে ওকে অপমান করালেন।

রিনি চেম্বারের বাইরের লবিতে এসে বসল। দেবজিত যাওয়ার সময় চিনিকে বলল, ওই যে সেই সুইট আন্টিটা। ওনাকে বাই বলো বেটা…

চিনি হাত নেড়ে বাই বলল। দেবজিতের ঠোঁটে একটা ব্যঙ্গাত্মক হাসি, জয়ের হাসি। যেটা একেবারেই সহ্য হচ্ছিল না রিনির।

তমালী রায়ের চেম্বারে ঢুকেই রিনি বলে উঠল, এটা কি হল ম্যাম? আপনি ওনাকে দিয়ে আমায় অপমান করালেন কেন?

তমালী রাইটিং প্যাড থেকে চোখ তুলে বললেন, কারণ তুমি সেটাই করতে চাইছিলে যেটা তুমি সব থেকে বেশি অপছন্দ করো। তুমিও ওনার ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলাতে চাইছিলে… আর তাছাড়া দেবজিত ভীষণ রকমের প্রাইভেট পার্শন। সে আদৌ এটা অ্যাপ্লাই করতে পারে কিনা সেটা দেখার জন্যই ট্রাই করতে বললাম। দেখলাম, দেবজিত বেশ ভালো করেই তোমার মুখটা বন্ধ করে দিতে সক্ষম হল।

রিনি রেগে গিয়ে বলল, ভদ্রলোকের কৃতজ্ঞতাবোধ নেই।

তমালী বললেন, আসলে কি জানো রিনি, মানুষ যখন বারবার প্রবঞ্চিত হয় তখন সকলের দিকেই সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। তখন সে ভয়ে থাকে। এই বুঝি কেউ ঠকিয়ে দিল। তাই কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভয় পায়। দেবজিতের এখন সেই অবস্থা।

দেবজিতের স্ত্রী ওকে এমন বিশ্রী বদনাম দিয়ে চলে গেছে যে ও কাউকে বিশ্বাস করতেই পারছে না।

রিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, এনিওয়ে আমার আপনার টেকনিকে কাজ হয়েছে। তবে আমি এখনও মেনে নিতে পারছি না অনির্বাণদের বাড়ির দেওয়া মিথ্যে দোষারোপটা। কী করে এর থেকে মুক্তি পাই বলুন তো!

তমালী বললেন, রিনি তুমি চোখে কাজল পরেছ? ভারী মিষ্টি লাগছে তো! রিনি তোমার ফেভারিট সিঙ্গার কে?

রিনি লজ্জা পেয়ে বলল, কাজল পরতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। বহুদিন পরে আবার পরলাম। ফেভারিট সিঙ্গার অনেকে আছে জানেন তো।

বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পরে তমালী বললেন, রিনি তোমাকে যে আলোচনাগুলো ভালো রাখবে তুমি সেগুলোর সঙ্গে থাকো। যে বিষয়টা কষ্ট দেবে তাকে কেন বারবার আপন করার চেষ্টা করছো বলতো?

অনির্বাণ এখন কয়েকমাসের অতীত।

বরং তুমি সেগুলোকে আপন করে নাও যেগুলো তোমায় আনন্দ দেবে। এই যে ওই বাচ্চা মেয়েটার সঙ্গে তুমি এতক্ষণ কাটালে সেটা কি তোমায় আনন্দ দিল না? রিনি বলল, হ্যাঁ দিল। মেয়েটার ওই নরম গলার আধো আধো স্বর আমাকে সব কষ্ট ভুলিয়ে দিচ্ছিল।

তমালী বললেন, তাহলে তুমি কেন বারবার অতীতের দিকে তাকিয়ে আছো?

রিনি বলল, আমার আপনার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছে। আমি কি উইকএন্ডে আসতে পারি? অবশ্যই আপনার ফিজ দিয়ে। তমালী হেসে বললেন, অলওয়েজ ওয়েল কাম।

রিনি এখন অনেক স্থির। মাত্র একমাসেই রিনির মধ্যে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন খেয়াল করেছে স্নিগ্ধা। কথায় কথায় আর রেগে যায় না। বরং মজা করে বলে, জানিস স্নিগ্ধা মাইনে তো কম পাই না। এবার থেকে আমার নামে যারা সমালোচনা করবে তাদের আমি একটা করে মাইক গিফ করব। গুনগুন করে গান গায়। মুখে হালকা মেকআপ আর ছোট টিপে মেয়েটা যেন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। অনির্বাণ আর ওর ফ্যামিলি রিনির সঙ্গে কী কী অন্যায় করেছে সেসব আলোচনা ছেড়ে ও এখন অফিস থেকে ফিরে হয় বই পড়ছে নয় মুভি দেখছে। ইদানিং অভিষেক ফোন করলে বলছে, ওই যে রোমিওর কল এসে গেছে। আমি বরং ছাদে ঘুরে আসি।

রিনি এখন অনেক স্বাভাবিক।

তবে তমালী রায়ের চেম্বারে যাওয়ার দিন একটু যেন বেশিই পরিপাটি করে সাজল রিনি। স্নিগ্ধার দৃষ্টি এড়াল না ওর যত্ন সহকারে নিজেকে গোছানোটুকু।

রিনি ঘনঘন ঘড়ি দেখছে চেম্বারের লবিতে বসে। ঠিক কার প্রতীক্ষায় ও নিজেও জানে না। তবে গত তিনবার সিটিং-এ এসে দেবজিতের সঙ্গে চোখাচোখি হয়েছে। চিনির সঙ্গে কথা হলেও, ওর বাবার সঙ্গে কথা হয়নি। তবে দেবজিতের মুখের শিরা উপশিরায় সেই উগ্রতাটা আর নেই।

আজ একাই ঢুকল দেবজিত। সঙ্গে চিনি নেই। হন্তদন্ত হয়ে বলল, ম্যাম কি চলে এসেছেন?

রিনি অপ্রস্তুত গলায় বলল, না এখনও আসেননি। আজ চিনি আসেনি?

দেবজিত হেসে বলল, না। ওকে ওর পিসির কাছে রেখে এসেছি। বায়না করছিল, বলছিল রিনি আন্টির সঙ্গে গল্প করব…

রিনি আলগোছে বলল, যাক কেউ অন্তত আমাকে মনে রেখেছে। দেবজিত ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিমায় বলল, আমার প্রথম দিনের ব্যবহারের জন্য দুঃখিত।। ক্ষমা কি পাওয়া যাবে?

মানে চিনির বাবা হিসাবে যদি পাওয়া যায় আর কি।

রিনি আলতো হেসে বলল, ম্যাম দেখছি ম্যাজিক জানেন। একমাসেই মানুষ ক্ষমা চাইতে শিখে যান।

দেবজিত ধুপ করে রিনির পাশে বসে বলল, ম্যাম সত্যিই ম্যাজিক জানেন। কত মানুষ জানতেনই না, তাকে একটু সাজলে অসাধারণ লাগে।

রিনি লজ্জা পেয়ে গেল। ইস আজ কি সাজগোজ একটু বেশি হয়ে গেছে! ডক্টরের চেম্বারে এভাবে সেজে আসাটা বোধহয় ঠিক হয়নি।

রিনির অস্বস্তির দিকে তাকিয়ে দেবজিত বলল, জানেন আমি যেদিন প্রথম এখানে এলাম সেদিন আমার ধারণা ছিল মহিলা মানেই অনেক খোরপোষ নিয়ে, মেয়ের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে ডিভোর্স নেওয়া। আর বাইরে গিয়ে সকলের কাছে পুরুষটির বদনাম করা।

তমালী ম্যামকে দেখে বুঝলাম, মহিলা মানে সহ্য, মহিলা মানে স্নেহ। তমালী ম্যাম যে ভাবে আমাকে ওই গোলকধাঁধা থেকে বের করলেন, তাতে আবার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে সব মহিলা এক নয়। আর চিনির কাছে তার স্বল্প পরিচিত আন্টির গল্প শুনে বেশ বুঝতে পারছিলাম, গর্ভে ধারণ না করেও স্নেহময়ী মা হওয়া যায়।

রিনি নিজের ব্যাগ থেকে চকলেটটা বের করে বলল, এই যে এটা চিনির জন্য এনেছিলাম। ওকে দিয়ে দেবেন।

দেবজিত একটা ছোট্ট খেলনা রিনির হাতে দিয়ে বলল, এটা চিনি পাঠিয়েছে আপনাকে।

রিনি হেসে বলল, পাকা বুড়ি।

দেবজিত নিজের ফোন নম্বরটা দিয়ে বলল, সন্ধের পর কল করলে চিনির সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। আমি ফিরে যাই অফিস থেকে।

রিনি বলল, বিশ্বাস শব্দটা থেকেই যখন বিশ্বাস উঠে গিয়েছিল, তখন দেখলাম, পুরুষরাও মা হয়। আপনি যেভাবে একা হাতে সামলাচ্ছেন চিনিকে সেটা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।

হঠাৎ কানের কাছে কেউ একজন ফিসফিস করে বলে উঠল, ম্যাডাম আপনার কোনো বাচ্চা নেই? আপনি শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এসেছিলেন কেন? অ্যাডজাস্ট করতে পারলেন না?

রিনি উল্টো দিকে না তাকিয়েই দৃঢ় গলায় উত্তর দিল। আমি বড্ড খারাপ মানুষ জানেন। তাই সংসারটা গুছিয়ে করতে পারলাম না। বারবার নেগেটিভ রেজাল্ট এল প্রেগনেন্সি টেস্টের। হয়তো আমারই শারীরিক প্রবলেম। তাই এত এত দোষের বোঝা আর অন্য কাউকে চাপিয়ে দিলাম না। নিজেই নিয়ে নিলাম, তাই চলে এলাম।

দেবজিত কখন বেখেয়ালে রিনির হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, সরি। আমি জানতাম না আপনি এতটা কষ্ট সহ্য করেছেন। প্লিজ ক্ষমা করবেন।

রিনি জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলল, আমি পেরেছি জানেন। দোষের পিঠে কেবল দোষ না চাপিয়ে নিজেই নীলকণ্ঠ হয়ে অনেক বেশি তৃপ্তি পেয়েছি। এতে অন্যের কাছে নিজেকে ভালো প্রমাণের দায় থাকে না। থাকে না কোনো কৈফিয়ত দেবার তীব্র বাসনা। দেবজিত মুখটা নিচু করে বলল, একদম ঠিক। আমিও এটাই প্র্যাকটিস করলাম।

তমালী রায় বললেন, রিনি তুমি পাশ করে গেছ। আর অকারণে আমি ফিজ নেব না। নেক্সট উইক থেকে আর আসতে হবে না তোমায়।

ডক্টরের কাছে আসতে হবে না শুনলে যে কোনো পেশেন্ট খুশি হয়ে যায়। কিন্তু কেন কে জানে রিনির মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল।

দেবজিত ঢুকে গেল চেম্বারে।

বাইরে এমনিই কারণবিহীন ভাবে বসেছিল রিনি। দেবজিত ফিরে বলল, আমার এখনও ছুটি হয়নি বুঝলেন। রিনির চোখ দুটো কেমন ছলছল করছিল। সেদিকে তাকিয়ে দেবজিত বলল, এক কাপ কফি খাওয়া যেতেই পারে। যদি আপনার আপত্তি না থাকে।

রিনি আর দেবজিত বসে আছে কফি শপে।

রিনি বলল, জানেন অনেকদিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম, কোন লেখকের.. আজ আর মনে নেই নামটা। দুজন মানুষ সুইসাইড করতে গিয়েছিলেন। কারণটা একটাই। দুজনেরই কোনো সঙ্গী ছিল না। দিনের শেষে কেউ ছিল না তাদের জন্য অপেক্ষা করার। দুজন ভদ্রলোকেরই বয়েস প্রায় সত্তর মতো হবে। একজনের ছেলেমেয়েরা সব বাইরে থাকে। কোনো খোঁজই নেয় না। আরেকজনের ভরা সংসার কিন্তু দিনের শেষে কেউ নেই যে তাকে জিজ্ঞেস করবে, এত দেরি করলে কেন?

তাই দুজনেই আত্মহত্যা করতে এসেছিলেন।

দেবজিত কফিতে চুমুক দিতে ভুলে গিয়ে বলল, তারপর?

রিনি বলল, তারপর দুজনেই দুজনকে কথা দিয়েছিলেন, তারা ফোন করবেন। সেই ফোনটা কখন আসবে এই আশায় দুজনেই ফিরে গিয়েছিলেন বাড়ি।

জানেন দেবজিত, এই ডক্টর ম্যামের চেম্বারটাও আমার কাছে এমনই একটা জায়গা ছিল। সপ্তাহের শেষে আবার আসবার প্রস্তুতিতে কেটে যেত।

দেবজিত বিষণ্ণ স্বরে বলল, চিনি তো পরের বার এসে অপেক্ষা করবে আপনার জন্য, কী বলব ওকে। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেবজিত।

রিনি বলল, ওকে বলবেন আমি আসব। এই ক্যাফেতে ওকে নিয়ে খেলব আমি।

দেবজিত বলল, বেশ তাই বলে দেব।

দেবজিতের সঙ্গে রিনির বন্ধুত্বটা বেশ গাঢ় হয়েছে। এখন দুজনে দুজনের অনেক পাওয়া, না পাওয়ায় বঞ্চনার গল্প করে। আবার চিনির আধো আধো কথায় ভরে ওঠে রিনির বিষণ্ণ অপ্রাপ্তিতে পরিপূর্ণ মনটা। দেবজিত আরও মাসখানেক গেল তমালী ম্যামের কাছে।

দেবজিত বলে, ডক্টর যদি নিজে হ্যাপি না থাকে তাহলে পজেটিভ এনার্জি দেবে কী করে নিজেকে! ডক্টর তমালী রায় একজন ঝকঝকে পার্সোনালিটি। ঠিক যেন সকালের প্রথম সূর্য। যার মনের কোণে কোথাও কোনো কষ্ট নেই। রিনিও বিশ্বাস করে, তমালী রায় ম্যাজিশিয়ান।

চিনিকে আজও ওর পিসির কাছে রেখে এসেছে দেবজিত। তমালী রায়ের চেম্বার ঘুরে রিনির সঙ্গে একটা মুভি দেখে বাড়ি ফেরার প্ল্যান আছে।

চেম্বারে এসেই শুনল আজ ম্যাডাম আসবেন না।

রিনি আর দেবজিত হাঁটছিল পাশাপাশি।

দুজনের আঙুল ছুঁয়ে যাচ্ছিল দুজনকে। কড়ি আঙুলে সবসময় ঝগড়া হয় না, কখনো কখনো দুটো মনকে এক সূত্রে বেঁধেও দেয়।

রিনি আচমকা চেঁচিয়ে বলল, দেখো…ওই যে ওটা ডক্টর রায়ের বাড়ি। সামনে নেমপ্লেট। তমালী রায়ের বাড়ি…

দেবজিত বলল, ভিতরে ঢোকাটা কি ঠিক হবে রিনি?

রিনি নাছোড়বান্দা। চলো না। ওনার দৌলতেই তো আমরা বন্ধু হলাম। একবার গিয়ে দেখা করে আসি। দেবজিত ইতস্তত করেই ঢুকল বাড়িতে। গেটের সামনে একজন কেয়ারটেকার জানাল, দিদিমণি আজ কোনো রোগী দেখবেন না।

রিনি সপ্রতিভ হয়ে বলল, আমরা ওনার পরিচিত। ডাক্তার দেখাতে নয়। ওনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।

ড্রয়িংরুমে ঢুকে বসতেই দেবজিত লক্ষ্য করল, পর্দা টাঙানো একটা দেওয়াল। ওরা দুজনে এগিয়ে গিয়ে উঁকি দিল। গোটা দেওয়ালে একটা ছোট্ট মেয়ের ছবি। তার নিচে একটা করে প্রশ্ন লেখা…

তুই অনাথ? তোর বাপের ঠিক নেই?

তোর মা কোথায় রে?

এই মেয়েটা আমার সঙ্গে সেক্স করবি?

মেয়েটার ছবিগুলো রাউন্ড করে ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছেছে একজন বছর সাতাশের মেয়ের মুখে। যে মুখটা ডক্টর তমালী রায়ের। এখন যদি ওনার বয়েস বছর চল্লিশ হয় তো এটা সাতাশের ছবি। নীচে উত্তর লেখা…

আমি অনাথ আশ্রমে মানুষ হয়েছি। হ্যাঁ আমি আমার বংশ পরিচয় জানি না।

আমি অনেকের হাতে মলেস্ট হয়েছি। এমনকি আশ্রমে এসেও অনেকে মলেস্ট করেছে নানা ভাবে। কুপ্রস্তাব পেয়েছি আমি। আমিই ডক্টর তমালী রায়। জয়েন্টে তৃতীয় স্থান অধিকারিণী। আমিই সাইকিয়াট্রিস্ট তমালী রায়। মানুষের মনের গহনে ডুব দিয়ে খুঁজে নিয়ে আসি তার ব্যর্থতা বা যন্ত্রণার কারণগুলো।

বছর পঁয়ত্রিশের ছবির নীচে লেখা…

অভাগী, অপয়া…

হ্যাঁ, আমার হাজবেন্ড আর সন্তান দুজনেই কার অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে। ওটা একটা অ্যাকসিডেন্ট ছিল। তার জন্য আমি দায়ী নই।

বছর চল্লিশের তমালীর ছবির নীচে লেখা… এখনও অনেক কাজ বাকি।

দেবজিত বলল, রিনি শিগগির চলো এখান থেকে। রিনি তখনও ঘোরে আছে। বলল, এসব কি!

দেবজিত বলল, উনি সিঁড়ি দিয়ে নামছেন মনে হল… চলো শিগগির।

প্রায় দৌড়ে ওরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। হাঁপাতে হাঁপাতে রিনি জিজ্ঞেস করল, চলে এলাম কেন?

ওনার পাশে থাকা উচিত ছিল। ওনার জীবনে এত কষ্ট…

দেবজিত বলল, উনি কি সেটা চেয়েছেন রিনি? বরং উনি মারাত্মক হ্যাপি, সাকসেসফুল একজন মহিলা এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন বারবার। তাই আমি চাই না, ওনার এই সিক্রেটগুলো প্রকাশ পেয়ে যাক। এগুলো থাকুক ওনার কাছেই। আমাদের কাছে উনি ম্যাজিশিয়ান ডক্টর তমালী রায়। যিনি সকলের সমস্যা দূর করতে পারেন নিমেষেই।

রিনি শক্ত করে হাতটা ধরল দেবজিতের। ফিসফিস করে বলল, ভুল পথে হেঁটেছি জীবনের অনেকগুলো বছর। একা একা লড়েছি অনেক রাত। তুমি একটু চিনিকে জিজ্ঞেস করে দেখো তো, ও এই আন্টিটার সঙ্গে সময় কাটাতে চায় কিনা?

দেবজিত নরম গলায় বলল, চিনি তো চায়ই, চিনির বাবাও যে চায়। দিনশেষে একজন অন্তত বন্ধু থাক যে আমার জন্য অপেক্ষা করবে।

জানো রিনি, আজ একটা জিনিস উপলব্ধি করলাম, সকলের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য অন্যকে দোষারোপ করার প্রয়োজন নেই। শুধু নিজে শক্তভাবে দাঁড়ানোটা বড্ড জরুরি। তমালী রায় শিখিয়ে দিলেন, মেরুদণ্ড কার নাম। জীবন যুদ্ধ কাকে বলে!

রিনি ফিসফিস করে বলল, আমার কেমন ভয় করছে দেবজিত। আবার যদি সব হারিয়ে ফেলি?

দেবজিত বলল, হারিয়ে ফেলার ভয় পেতে নেই, বরং পাওয়াটুকুকে আঁকড়ে ধরতে হয়।

রিনির চোখের সামনে ভাসছে তমালী রায়ের ঝকঝকে মুখটা। মুখের কোনো রেখাতে কখনও হেরে যাবার বেদনা দেখেনি রিনি। তমালী বলেন, জিততে হবে রিনি। হারকে আমি ঘৃণা করি।

রিনি নিজের মনেই বলল, জিততে হবে রিনি।

সকল অধ্যায়

১. সুখের আড়ালে – অর্পিতা সরকার
২. সেদিন ভোরে – অর্পিতা সরকার
৩. নাম বিভ্রাট – অর্পিতা সরকার
৪. রেড স্কুটি এবং.. – অর্পিতা সরকার
৫. অগোছালো সংসার – অর্পিতা সরকার
৬. ভালোবাসার রামধনু – অর্পিতা সরকার
৭. ইছামতীর তীরে – অর্পিতা সরকার
৮. অলক্ষ্মী – অর্পিতা সরকার
৯. বিজয়িনী – অর্পিতা সরকার
১০. অবহেলা দ্য কিটু সাকসেস – অর্পিতা সরকার
১১. মনের ডুবুরি – অর্পিতা সরকার
১২. ভালোবাসা মিসিং – অর্পিতা সরকার
১৩. লোকে পাগল বলে ডাকে – অর্পিতা সরকার
১৪. নিলামে উঠেছি আমি – অর্পিতা সরকার
১৫. হঠাৎ বৃষ্টি – অর্পিতা সরকার
১৬. রুমমেট – অর্পিতা সরকার
১৭. এক টুকরো সুখ – অর্পিতা সরকার
১৮. দ্য মিস্ট্রি অফ ফ্রেন্ডশিপ – অর্পিতা সরকার
১৯. যদি কখনো অজান্তে – অর্পিতা সরকার
২০. আট নম্বর রুম – অর্পিতা সরকার
২১. ফর এভার – অর্পিতা সরকার
২২. নিশ্চুপ পিয়ানো – অর্পিতা সরকার
২৩. চলো বন্ধু হই – অর্পিতা সরকার
২৪. সূর্যমুখী – অর্পিতা সরকার
২৫. বাবা – অর্পিতা সরকার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন