নাম বিভ্রাট – অর্পিতা সরকার

অর্পিতা সরকার

মাঝে মাঝে আমার নিজের ওপরে বড্ড রাগ হয়। কেন যে আমি ছোটবেলায় বাবার দাড়ি কাটার ব্লেড দিয়ে পাশের বাড়ির পুপুনের আঙুল কেটে আবার বাবার শেভিং বক্সের ফিটকারী দিয়ে রক্ত বন্ধ করতে গিয়েছিলাম, কে জানে! কেন যে সেই বিরক্তিকর ছোটবেলাতেই আরশোলা ধরে তার দুটো পা কেটে খণ্ড খণ্ড করে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, আরশোলা আসলে সন্ধিপদী প্রাণী, কে জানে! কেন যে আমি বড়মামার চরকের মেলা থেকে কিনে দেওয়া শলাকা আকারের চুম্বকটা দিয়ে খেলতে খেলতে ঠাম্মার গমের মধ্যে মিশে যাওয়া দুটো পেরেককে আবিষ্কার করে ফেলেছিলাম, কে জানে? অথবা শিলাবৃষ্টির সময়ে দুটো বরফের টুকরো নিয়ে এসে বাবার হাতে দিয়ে বলেছিলাম, এগুলো ফ্রিজে রাখলে এমনই থাকবে কিন্তু বাইরে রাখলে জল হয়ে যাবে। আমার এমন সব অত্যাশ্চর্য আবিষ্কারের কথা জানতে পেরেই বাড়ির সকলে বুঝে গিয়েছিল, আমি ডাক্তার না হয়ে যাই না।

আমার নাকি আইকিউ লেভেল সাধারণের থেকে অনেক বেশি সেটা অবিষ্কার করেছিল আমার বম্বে ফেরত ছোটমামা। দুঃখের মধ্যে আমার সারনেম রায় হওয়ায় বাবা সে সুযোগটুকুও ছাড়েনি। আমার নাম রেখেছে বিধান চন্দ্র রায়।

অপেক্ষায় আছে কবে আমি এই নামের আগে ডক্টর শব্দটি বসাতে পারব। বিড়ম্বনা আর বলতে?

স্কুলের ছেলেরা মুচকি মুচকি হাসে আমার এমন নাম শুনে। মর্ডান নামের ভিড়ে আমার নামটা বড়ই বেমানান। তারপরে আমাদের অঙ্কের শিক্ষক ক্লাসে ঢুকেই বলতেন, বাবা বিধান তোরাই হলি ভবিষ্যতের ধারক ও বাহক। তোরাই এগিয়ে নিয়ে যাবি যুব সমাজকে। অঙ্কের স্যার আবার স্বভাব কবি ছিলেন। কবিতার সঙ্গে যে অঙ্কের ভাব হতে পারে এ আমি কস্মিনকালেও ভাবতে পারিনি। কিন্তু আমাদের অঙ্কের রমেশ স্যারের লাঠির ভয়েই বোধহয় অঙ্ক আর কবিতা বাঘ আর গরুর মত একই ঘাটে জল খেতে বাধ্য হত। আমি এখন ক্লাস এইটের স্টুডেন্ট।

আমার কাঁধে অনেক ভার। একটা ইনভার্টার একসঙ্গে তিনটে ফ্যান টানতে পারে না, এইটুকু লোডও নিতে পারে না। এদিকে আমার ওপরে লোডটা একবার কল্পনা করুন আপনারা। ছোটবেলায় লোকের ছেলের আঙুল অপারেশনের দায় থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের রূপকার ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের নামের দায়িত্ব পর্যন্ত টেনে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছিল আমার কাঁধে। ওইজন্যই অঙ্কের স্যার কখনো ক্লাসে ঢুকে বলেন না, ওরে আবীর দেশের ভবিষ্যৎ তোর কাঁধে। অথবা ক্লাসের ফার্স্ট বয় অঙ্কুশকেও বলেন না। বলেন শুধু বিধানকে। এর একমাত্র কারণ এই নাম, বিধান চন্দ্র রায়। অদ্বিতীয় চিকিৎসক ও পশ্চিমবঙ্গের একজন সফল মুখ্যমন্ত্রী। সত্যি বলতে কী যে কোনো কুইজ প্রতিযোগিতায় বা জেনারেল নলেজের পরীক্ষায় নিজের নামখানা লিখতে মন্দ লাগত না। কিন্তু যখনই স্বভাব কবি অঙ্কের স্যার কাঁধের ওপরে হাত রেখে দুলকি চালে বলতেন, তোরাই তো স্কুলের নাম উজ্জ্বল করবি। এই বিবেকানন্দ বিদ্যালয়ের ছাত্রের নাম ছড়িয়ে পড়বে দেশে বিদেশে, তখন আমার হাতের তালু ঘামতে শুরু করত!

আমাদের অঙ্কের স্যার রমেশ গড়াই বরাবর বিশ্বাস করতেন, যারা অঙ্ক পারে না তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই এই একশো ত্রিশ কোটির দেশে। তার কুমেরুতে গিয়ে বরফে জমে মরে যাওয়া উচিত। কেউ কোনো অঙ্ক পারব না বললে স্যার তার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতেন, যেন আচমকাই ভিনগ্রহের বাসিন্দা নেমে এসেছে স্যারের সামনে। অথবা বিলুপ্তপ্রায় রয়াল বেঙ্গল টাইগার স্যারকে এক কামড়ে খেয়ে নিতে চেয়েছে।

অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে স্যার বলতেন, কী বললি? আরেকবার বল, অঙ্ক পারবি না?

ওরে তোকে যে নরকে পাঠাতেও ভয় রে। তুই যে সেখানে গিয়েও ছিঁচকে চোরদের হিসেবে গন্ডগোল করে দিবি? আয় আয় বাবা বোর্ডে আয়। আমার স্টুডেন্টকে আমি অঙ্ক শেখাতে পারিনি জানলে স্বয়ং ব্রহ্মা যে আমাকে স্বর্গের উদ্যানে প্রবেশ অবধি করতে দেবেন না।

আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকত না, স্যারের বাড়ির পাশেই রহিম চাচার অমন একখানা সুন্দর বাগান থাকতে কেন যে রমেশ স্যার ওই অজানা ব্রহ্মার বাগানে ঢুকতে চাইতেন কে জানে! অপরিচিতের বাগানে আম, জাম চুরি করতে গেলে শেষে স্যারকে এই বয়েসে যে লাঠির বারি খেতে হবে সেটা কী স্যার জানেন না নাকি! মনের মধ্যে অবশ্য সামান্য হলেও আনন্দের ঢেউ খেলে যেত। যাকগে, স্যারও তার মানে কারোর কাছে মার খেতে পারেন ভেবেই মনটা উৎফুল্ল হয়ে উঠত। এ হেন স্যারের পাল্লায় পড়ে আমাদের ক্লাসের সব ছেলেরাই মোটামুটি অঙ্কতে ভালোই নম্বর পেত।

এদিকে আমার বাবা শ্রী সৃষ্টিধর রায় বাড়িতে একজন ইংরেজির শিক্ষক নিয়োগ করেছিলেন। তিনি আবার শুধুই বড় বড় বাক্য ট্রান্সলেট করতে দিতেন। যেমন- ‘আমরা আট দশ মাসে এই মহাত্মার হস্ত হইতে মুক্তিলাভ করিয়া বিদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হইলাম।’ আমি মহাত্মা বলতে আমাদের গান্ধীজিকেই চিনতাম। সেই মতোই ট্রান্সলেট করলাম। স্যার বললেন, এখানে মহাত্মা অর্থে মহৎ আত্মা যাঁর। আমি ঠাম্মার কাছে শুনেছিলাম, তেনাদের নাম নাকি সন্ধেবেলা লোকে নেয় না। তাই হয়তো স্যারও সচেতনভাবে এড়িয়ে গেলেন তেনাদের নাম। অনেক বুদ্ধি করেই তাই আমি মহাত্মা বলতে ঘোস্ট লিখলাম। স্যার মাথায় দুটো রাম গাট্টা মেরেছিলেন। তিনদিন মাথা ফুলে আলু হয়েছিল।

ক্লাস নাইন থেকে আমি অঙ্ক করতে যেতাম রমেশ স্যারের বাড়িতে। আমাদের এই চত্বরে কথাই আছে.. জয়েন্টে যদি চান্স পেতে হয় তাহলে অবশ্যই রমেশ স্যারের কাছে অঙ্ক শিখতেই হবে। তাই আমি বিধান চন্দ্র রায়ও গুটিগুটি পায়ে ক্লাস নাইনে পৌঁছে গেলাম রমেশ স্যারের টিউশনে। স্কুলের ক্লাসে স্যার ছিলেন আমাদের স্বয়ং আতঙ্ক। সেই স্যারের টিউশনেই যে আমাকে যেতে হবে কস্মিনকালেও কল্পনা করিনি। আমার বাবা সৃষ্টিধর রায়ের কড়া নির্দেশ নাম আমি দিয়ে দিয়েছি, তার আগে ডক্টর বসানোর দায় একান্তভাবেই আমার।

একটা অদ্ভুত জিনিস খেয়াল করতাম, আমার থেকে আমার তিনবছরের ছোট বোনের ওপরে এমন কোনো চাপ তৈরি হত না বাড়িতে। বরং প্রীতিলতা নাম ছিল বলেই ওর দস্যিপনায় সকলে হেসে বলত, স্বাধীনচেতা মেয়ে হবে আমাদের প্রীতি। নামের একটা মাহাত্ম্য নেই?

বাহ রে, কী মজা। শুধু নামের কারণেই আমার ওপরে এমন লেখাপড়ার চাপ ছিল। আর প্রীতিলতার সারনেম না মিললেও ওর ওই দস্যি স্বভাবকে সবাই জাস্টিফাই করত স্বাধীনতা সংগ্রামীর সঙ্গে। মনে মনে বলতাম, বহুত না ইনসাফি হ্যায় রে! ওই মনে মনে বলাই সার। বাবার সামনে কখনো বলতে পারিনি এসব। ছোট থেকেই বাবার ওপরে মনে মনে একটা আক্রোশ তৈরি হয়েছিল। বাবাকে মনে হত জেলার আর আমি যেন জেলের কয়েদি। তাই এ আক্রোশের যথার্থ কারণ আছেই। জেলের কয়েদির জেলারের ওপরে আক্রোশের কারণ নিশ্চয়ই বিশ্লেষণ করতে হবে না।

যাইহোক, রমেশ স্যার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, অঙ্কে তোর মাথা খোলে ভালো। দিনরাত অঙ্ক করে যাবি বুঝলি। সংখ্যায় ক্লান্তির কোনো জায়গা নেই। কে জানে কী বিশেষ উপায়ে স্যার কয়েকমাসের মধ্যেই অঙ্ককে আমার প্রিয় সাবজেক্টে পরিণত করলেন।

বলতে নেই মাধ্যমিকে আমি বেশ ভালোই রেজাল্ট করলাম। কিন্তু বাবার মুখে হাসি নেই। জেলার সেরা হতে পারিনি বলে বাবার মুখ ভার। রমেশস্যার হেসে বললেন, তবে…একটা নম্বরও তো কোনো বাপের বেটা কাটতে পারেনি তোর। একেবারে একশো তে একশো। হ্যাঁ আমি মাধ্যমিকে অঙ্কে একশো পেয়েছিলাম। বিধান চন্দ্র রায় যে বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে এটা অত্যন্ত সাধারণ বিষয় ছিল আমার বাড়িতে। তাই ভর্তি হলাম সায়েন্স নিয়ে। আমাদের স্বভাব কবি রমেশ স্যারের প্রিয় ছাত্র আমি। তাই স্কুলে রমেশ স্যারের সঙ্গে সঙ্গে আমার নামেও ছড়া বাঁধা হল।

‘রমেশ গড়াই গড়িয়ে চলে, সঙ্গে চলে কে?

সঙ্গে আছে মেনি বিধান একশো পেয়েছে।’

আমার খুব রাগ হল এমন ছড়া শুনে। স্যারের টিউশনিতে গিয়ে স্যারকে নালিশ করলাম। স্যার হেসে বললেন, বটে এমন ছড়া কে বেঁধেছে রে?

অন্তে মিল নেই এমন পদ্য তো শুনতে বেমানান লাগে। দাঁড়া একটু ভাবতে দে।

‘তাই রে নাই রে নাই

গড়াই বাড়ি যাই

গড়াই বাড়ি ভারী মজা

অঙ্ক শিখে যাই।’

এটা বরং ভালো ছড়া বুঝলি।

আমি বুঝলাম, স্যারকে নালিশ করে লাভ নেই। স্যার তখন লাভক্ষতির অঙ্ক নিয়েই ব্যস্ত।

বেশ কাটছিল দিন পড়াশোনা করে। কিন্তু হুড়মুড়িয়ে সামনে এসে হাজির হল উচ্চমাধ্যমিক আর পিছনে পিছনে আমের সঙ্গে কাঁঠালের মতোই জয়েন্ট এন্ট্রান্স।

আমার বাড়ির অবস্থা তখন হিরোশিমা বা নাগাসাকির মতো। মৃত্যুকালীন স্তব্ধতা। সকলেই ফিসফিস করে কথা বলা অভ্যেস করে ফেলেছে কারণ বিধানের পড়াশোনায় যেন কোনোরকম বিঘ্ন না হয়। মনোসংযোগ বিঘ্নিত হলে সৃষ্টিধর রায় যে সমস্ত সৃষ্টিকে ধ্বংস করে দেবে এ আমাদের বাড়ির পরিচারিকাও বুঝতে পেরেছিল। তাই তো যে সন্ধ্যাপিসির গলার আওয়াজে এ পাড়ার কাক-চিলগুলো পার্মানেন্টলি অন্য পাড়ার বাসিন্দা হয়ে গিয়েছিল তারাও এখন ধীরে ধীরে ফিরে আসছে এ পাড়ায়। এদিকে আমি পড়েছি মহামুশকিলে। অঙ্ক, বায়োলজি আর ফিজিক্স আমার বরাবর বশে থাকলেও কেমিস্ট্রিটাকে কিছুতেই বশে করতে পারছি না। কেমিস্ট্রি স্যার অরুণাংশুবাবু হাল ছেড়ে দিয়ে বলেছেন- বাবা বিধান, ডাক্তার হওয়া বোধহয় তোমার আর হল না। আমিও বুঝেছিলাম, কী মারাত্মক ভুল করেছিলাম আমি পুপুনের আঙুল অপারেশন করে। কিন্তু সব ভুলের ক্ষমা হয় না বলেই বার দুয়েক জয়েন্টে বসে ডাক্তারিতে চান্স না পেয়ে পুপুনের ভেংচি শুনেছিলাম। মধ্যমায় প্রায় মিলিয়ে যাওয়া ব্লেডের কাটার দাগটা দেখিয়ে ও বলেছিল, তুই যদি ডাক্তার হতিস তাহলে আমি শচীন তেন্ডুলকর হতাম। কারণ আমিও পাড়ার মাঠে একবার ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলাম রে বিধান!

আমি বুঝি, আমি ডাক্তার হতে পারব না। অকারণে আমার দাড়ি গোঁফ গজিয়ে যাবে মেডিকেলে চান্স পেতে পেতে। তাই সেই প্রথম আমি বাবার কথার একপ্রকার বিরোধিতা করেই ম্যাথে অনার্স নিয়ে বিএসসি ভর্তি হলাম। অলরেডি দু-বছর নষ্ট হয়েছে। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের সঙ্গে গিয়েই কলেজে ক্লাস করতে হচ্ছিল। সে হোক, ছেলেপিলে দাদা বলে সম্ভ্রম করত। আমি রমেশ স্যারের স্টুডেন্ট, তাই অঙ্কে আমায় পায় কে?

আমার বাড়িতে অবশ্য এখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। আমার বাবার কপালে দুটো বলিরেখা চিরস্থায়ী জায়গা দখল করে নিয়েছে। মা বরাবরই একটু শান্ত স্বভাবের। তাই নরম গলায় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছে, বিধু মনখারাপ করিস না। ডাক্তার হতে পরিসনি তো কী হয়েছে? ভালো করে পড়।

আমার বোন প্রীতিলতা মুচকি হেসে বলেছে, দেখ দাদাভাই আমিও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার হবার চেষ্টা করিনি, রায় হয়েই সন্তুষ্ট হয়েছি। তুইও তোর নামের আগে ডক্টর বসানোর প্রতিযোগিতায় গোহারান হেরে গেছিস, তাই এবার থেকে বাড়ির সকলের কাছ থেকে অতিরিক্ত অ্যাটেনশন পাওয়ার আশাটা ত্যাগ করে ফেল। মনখারাপ আমারও যে কিছু কম হয়েছিল তা নয়। বাবার মুখের দিকে তাকালে কেমন একটা অপরাধবোধ কাজ করত। মনে হত মানুষটা তো এত পরিশ্রম করে আমাদের জন্য, তার একটা স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পারলাম না?

কী আর করব, আমি নিরুপায়। তবে মনপ্রাণ দিয়ে আমি বিএসসির অঙ্ক কষতে লাগলাম।

মাঝে মধ্যে যেতাম রমেশ স্যারের বাড়িতে। সেদিন চলতো স্যারের সঙ্গে অঙ্ক নিয়ে খেলা। স্যার যেহেতু হায়ার স্টাডির টিউশন দেন না তাই আমার অন্য টিচার ছিল। তবুও কী একটা অজানা টানেই মাঝেমধ্যে অবসরে যেতাম স্যারের বাড়ি।

তারপর আর কী? ইউনিভার্সিটি টপার হলাম বিএসসিতে। এমএসসিতেও তাই। রমেশ স্যার গর্ব করে সকলকে বলতেন, বিধান আমার নিজের হাতে গড়া ছাত্র। তাই কারোর সাহস হয় না ওর খাতায় কলম চালাতে।

স্যার তারপর?

সেমিনারের সামনের চেয়ারে বসে থাকা কৌতূহলী ছেলেমেয়েরা জিজ্ঞেস করে উঠল। সম্বিৎ ফিরল আমার। হলদে হয়ে যাওয়া স্মৃতির পাতায় বিচরণ করছিলাম এতক্ষণ। সেই ফেলে আসা ক্লাসরুম। সেই বাবার শাসন, আমার পড়ার জন্য বাড়িশুদ্ধু সকলের রাত জাগা, সেই মেডিকেলে চান্স না পাওয়ার দিনটা কখন যে জীবন্ত হয়ে গিয়েছিল আমার সামনে বুঝতেই পারিনি। স্মৃতির সরণি বেয়ে আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম রমেশ স্যারের টিউশন ব্যাচে।

স্টুডেন্টরা আবার বলল, বলুন না স্যার তারপর?

আমি বললাম, তারপর আর কী? বিধান চন্দ্র রায়ের নামের আগে একটা ডক্টরেট বসানোর অনুমতি পেলাম ইউনিভার্সিটি থেকে, পি এইচ ডি করার পর। আর এখন তোমাদের ”বঙ্গবন্ধু” কলেজের ম্যাথের প্রফেসর ডঃ বিধান চন্দ্র রায় তোমাদের সম্মুখে দণ্ডায়মান।

স্যার আপনার বাবা কী খুশি হয়েছিলেন এরপর?

আমি হেসে বললাম, হ্যাঁ যবে থেকে শ্রী সৃষ্টিধর রায় নিজের ছেলের পরিচয় দেবার সময় ডঃ বিধান চন্দ্র রায় বলতে শুরু করেছেন তবে থেকেই কপালের ওই চিরস্থায়ী বলিরেখাগুলো একটু একটু করে নরম হতে শুরু করেছে।

আজ আমি এই সেমিনারে তোমাদের কেন এই গল্প শোনালাম জানো? ধরে বেঁধে যেমন গোসাপকে কুমিরের পরিচয়ে পরিচিত করা যায় না, ঠিক তেমনই ভালোবেসে না পড়লে কোনো বিষয়েই সাফল্য পাওয়া যায় না। তাই যে সাবজেক্ট নিয়েই পড় না কেন, মন থেকে ভালোবাসতে হবে, তাহলে সাফল্য ধরা দিতে বাধ্য। আজ তোমাদের অত্যন্ত সফল প্রফেসর ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জীবনের ব্যর্থতার গল্পটা শোনালাম। প্রতিটা সাফল্যের পিছনে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে একরাশ ব্যর্থতা। সেই ব্যর্থতাগুলোকে পিছনে ফেলে লড়াই করতে পারলেই আসে সফলতার হাতছানি।

ইউনিভার্সিটির সেমিনার হলে হাততালিতে ফেটে পড়ছে। আমি বিয়াল্লিশ বছরের অধ্যাপক ডঃ বিধান চন্দ্র রায় মুচকি হেসে নেমে এলাম মঞ্চ থেকে।

সকল অধ্যায়

১. সুখের আড়ালে – অর্পিতা সরকার
২. সেদিন ভোরে – অর্পিতা সরকার
৩. নাম বিভ্রাট – অর্পিতা সরকার
৪. রেড স্কুটি এবং.. – অর্পিতা সরকার
৫. অগোছালো সংসার – অর্পিতা সরকার
৬. ভালোবাসার রামধনু – অর্পিতা সরকার
৭. ইছামতীর তীরে – অর্পিতা সরকার
৮. অলক্ষ্মী – অর্পিতা সরকার
৯. বিজয়িনী – অর্পিতা সরকার
১০. অবহেলা দ্য কিটু সাকসেস – অর্পিতা সরকার
১১. মনের ডুবুরি – অর্পিতা সরকার
১২. ভালোবাসা মিসিং – অর্পিতা সরকার
১৩. লোকে পাগল বলে ডাকে – অর্পিতা সরকার
১৪. নিলামে উঠেছি আমি – অর্পিতা সরকার
১৫. হঠাৎ বৃষ্টি – অর্পিতা সরকার
১৬. রুমমেট – অর্পিতা সরকার
১৭. এক টুকরো সুখ – অর্পিতা সরকার
১৮. দ্য মিস্ট্রি অফ ফ্রেন্ডশিপ – অর্পিতা সরকার
১৯. যদি কখনো অজান্তে – অর্পিতা সরকার
২০. আট নম্বর রুম – অর্পিতা সরকার
২১. ফর এভার – অর্পিতা সরকার
২২. নিশ্চুপ পিয়ানো – অর্পিতা সরকার
২৩. চলো বন্ধু হই – অর্পিতা সরকার
২৪. সূর্যমুখী – অর্পিতা সরকার
২৫. বাবা – অর্পিতা সরকার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন