সুন্দরী ঝর্ণা

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

সুন্দরী ঝর্ণা

ঝর্ণা নামে একটি মেয়েকে আমি চিনি এবং সে সুন্দরীও বটে। কিন্তু আজ তার কথা নয়। যদি দিন পাই আর একদিন বলব। —

সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই একটা কবিতার কলি মাথার মধ্যে ঢুকে পড়ল—ঝর্ণা ঝর্ণা সুন্দরী ঝর্ণা—

এমন আমার মাঝে মাঝে হয়। সকালবেলা কবিতার কলি মাথায় আসে, তারপর বন্দী ভোমরার মতো সারাদিন মাথার মধ্যে গুঞ্জন করতে থাকে।

পুণায় আজ এগারো দিন ধরে বৃষ্টি চলেছে, বিরাম বিশ্রাম নেই। মন নিরানন্দ। চায়ে চুমুক দিতে দিতে খবরের কাগজ পড়লাম। আনন্দদায়ক কোনও সংবাদ নেই। চীনের ড্রাগন জিভ বার করে হিমালয় পর্বতটিকে চেটে নেবার চেষ্টা করছে। কালিদাসের হিমালয়, দেবতাত্মা হিমালয়। যাক—

ঝর্ণা ঝর্ণা সুন্দরী ঝর্ণা

ভারতের দুই প্রান্তে দ্বিখণ্ডিত রাহু কেতু উচ্চকণ্ঠে ভারতের নিন্দাবাদ ও নিজেদের জিন্দাবাদ করছে। দু’দিকেই মোরগ ডাকছে—কু-ক্রুর-কু। কিন্তু সকাল হচ্ছে না।

কাগজে পূণার খবরও আছে। খড়গবৎসলার ড্যাম টৈটুম্বুর, বাঁধ ছাপিয়ে জল বইতে আরম্ভ করেছে। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই, মিলিটারি ইঞ্জিনীয়ারের দল এসে পাহারা দিচ্ছেন।

বিশেষ চিন্তিত হলাম না। প্রতি বছরই খড়্‌গবৎসলার বাঁধ কানায় কানায় ভরে ওঠে, স্লুইস্‌ খুলে জল বার করে দেওয়া হয়। জল নিকাশের প্রধান রাস্তা মুথা নদী। মুথা নদীর খাত পুণা শহরের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে। সারা বছর মুথার খাতে শীর্ণ জলধারা প্রবাহিত হয়, কিন্তু বর্ষাকালে খাত ভরে ওঠে; তার ওপর যখন খড়্‌গবৎসলা বাঁধের জল খুলে দেওয়া হয়, তখন মুথা নদীর চেহারা বদলে যায়, রণরঙ্গিণী মূর্তিতে উত্তাল তরঙ্গ তুলে সে ছুটতে থাকে। বাড়তি জল বার করে দেয়। পুণা শহরে মুথা নদীর ওপর তিনটি বড় বড় পুল আছে। যতই জল বাড়ক, শহরের কোনও ক্ষতি হয় না।

এগারো দিন সূর্যের মুখ দেখিনি কিন্তু আজ আকাশ যেন একটু হালকা হয়েছে। আমার বাড়ির সামনে সিকি মাইল দূরে পাহাড়ের টিলার ওপর পার্বতী মন্দির, ঝির ঝির বৃষ্টির ফাঁকে পার্বতী মন্দিরের চূড়া দেখা যাচ্ছে। হয়তো বিকেলবেলা সূর্যের মুখ দেখতে পাব।

ঝর্ণা! ঝর্ণা! তরলিত চন্দ্রিকা চন্দনবর্ণা—

ছাতা মাথায় দিয়ে মারাঠী বন্ধু এলেন। পণ্ডিত ব্যক্তি, মাঝে মাঝে আসেন, গল্পসল্প করেন, তারপর এক পেয়ালা কফি খেয়ে চলে যান। তিনি আজ পদার্পণ করতেই আমার কুকুর কালীচরণ ঘেউ ঘেউ করে তাঁকে তেড়ে গেল। কালীচরণ শান্ত প্রকৃতির কুকুর, মারাঠী পণ্ডিত তার অপরিচিত নয়। কিন্তু ক’দিন থেকে তার মেজাজ খারাপ। আমি তাকে ধমক দিলাম, ‘কেলো!’ কেলো ঘাড় গুঁজে বারান্দার কোণে গিয়ে বসল।

বন্ধুকে বললাম, ‘কেলোর দোষ নেবেন না। বৃষ্টির জন্যে বেরুতে পাচ্ছে না, তাই ওর মন খারাপ।’

বন্ধু একটু হাসলেন, ‘আমাদের সকলেরই মন খারাপ। শহরে জনরব শুনছি খড়্‌গবাস্‌লার বাঁধের অবস্থা ভাল নয়।’

বললাম, ‘সে তো ফি বারেই শোনা যায়।’

তিনি বললেন, ‘এবার একটু বিশেষত্ব আছে। খড়্‌গবাস্‌লার বাঁধ থেকে কয়েক মাইল দূরে আর একটা কাঁচা বাঁধ কিছুদিন আগে তৈরি হয়েছে, উদ্দেশ্য গ্রীষ্মকালে খড়্‌গবাস্‌লার জলে টান পড়লে ওখান থেকে জল আনা চলবে। নতুন বাঁধের নাম—পানশেট্। এই পানশেট্ ড্যাম যদি ভাঙে তার সমস্ত জল এসে খড়্‌গবাস্‌লার ড্যামে ঠেলা মারবে।’

যদি ঠেলা মারেই আমরা কি করতে পারি। মানুষ নিজের সুখ-সুবিধার জন্যে নগর গড়ে তোলে, প্রকৃতি তিন মিনিটের ভূমিকম্পে ধূলিসাৎ করে দেয়। কেউ কিছু করতে পারে কি?

মারাঠী বন্ধু কফি খেয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে চলে গেলেন।

ঝর্ণা ঝর্ণা সুন্দরী ঝর্ণা—

বেলা এগারোটার সময় তিনটে জেট্ প্লেন মাথার ওপর তিন-চারবার চক্কর দিয়ে চলে গেল। পুণা পশ্চিম ভারতের সামরিক কেন্দ্র; প্রায় রোজই জেট্ প্লেন উড়তে দেখি; কিন্তু আজ যেন ওদের ওড়ার একটা উদ্দেশ্য আছে।

জেট্ প্লেনের কর্ণবিদারী মেঘনাদ মিলিয়ে যাবার পর একটি অটো-রিক্‌শ এসে বাড়ির সামনে থামল। আমার বারো বছরের নাতি লাফিয়ে রিক্‌শ থেকে নামল—‘দাদা!’ তার মুখে উগ্র উত্তেজনা।

আমিও উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়ালাম, ‘কিরে! এত শিগ্‌গির ফিরে এলি যে!’ সে স্কুলে গিয়েছিল। তার স্কুল মুথা নদীর ওপারে।

নাতি এক নিশ্বাসে বলল, ‘বাঁধ ভেঙে জল আসছে—স্কুলে ছুটি দিয়ে দিলে বাস চলছে না—ভাগ্যিস একটা অটো-রিক্‌শ পেয়ে গেলুম, নইলে আসতে পারতুম না—ডেক্যান্ জিমখানায় জল এসে গেছে—লক্‌ড়ী পুলের ওপর দিয়ে জল বেয়ে যাচ্ছে—’

হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল, আবার বসে পড়লাম।

ঝর্ণা ঝর্ণা সুন্দরী ঝর্ণা—

কিছুক্ষণ পরে চারিদিক থেকে সমবেত মনুষ্য কণ্ঠের কলরব আসতে লাগল। তারপর দেখলাম পালে পালে মানুষ ছুটে আসছে। নদীর ধারে যাদের বাড়ি তারা পালাচ্ছে, তাদের ঘর বাড়ি ভেসে গেছে। শহরের মধ্যে পার্বতী মন্দির সবচেয়ে উঁচু জায়গা, তাই গৃহহারারা এই দিকেই ছুটে আসছে। দেখতে দেখতে পার্বতী পাহাড়ের ঢালু অঙ্গ মানুষে ভরে গেল।

দুঃসহ উদ্বেগে দুপুর কাটল। বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে, দু’-একজন চেনা পরিচিত লোক মাঝে মাঝে খবর দিয়ে যাচ্ছে—লক্‌ড়ী পুল ডুবে গেছে…সাহিত্য পরিষৎ পর্যন্ত জল এসেছে…নদীর দু’ধারে কত বাড়ি ছিল, সব ভেসে গেছে…মানুষ গরু মোষ বানের জলে ভেসে যাচ্ছে…

একটা আধপাগলা লোক চিৎকার করছে—আসছে! মহাপ্রলয় আসছে; কেউ বাঁচবে না।—

ঝর্ণা ঝর্ণা—

বেলা চারটে থেকে জল নামতে শুরু করল। নিজের নিরাপত্তার জন্যে ভগবানকে ধন্যবাদ দিতে দিতে ভাবতে লাগলাম—আমার বাড়ি যদি নদীর ধারে হত, নাতিও যদি ঠিক সময়ে ফিরে না আসত…

সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আলো নেই, অন্ধকার শহর। কালীচরণ রাস্তায় বেরোয়নি, বারান্দার কোণে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে। তার মনেও বোধ হয় মহা দুযোর্গের ছোঁয়াচ লেগেছে।

এই সময় একটি ব্যাপার দেখে চমৎকৃত হয়ে গেলাম। দেখি ছোট্ট একটি কাঠবেরালি সিঁড়ি দিয়ে বারান্দায় উঠছে। মনে হল, বাচ্চা কাঠবেরালি, সবাঙ্গ ভিজে, থুর থুর করে কাঁপছে। হয়তো নদীর ধারে কোনও গাছে তার বাসা ছিল, বানের জলে গাছ ভেসে গেছে, কাঠবেরালি কোনও রকমে ডাঙ্গায় উঠেছে, তারপর আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসে হাজির হয়েছে।

কেলো ঘাড় তুলে একবার দেখল তারপর আবার থাবার ওপর মুখ রেখে মিটি মিটি চোখে কাঠবেরালিকে নিরীক্ষণ করতে লাগল। কাঠবেরালি এদিক-ওদিক ঘুরে শেষ পর্যন্ত কেলোর পাশে গিয়ে বসল। অন্য সময় হলে কেলো তাকে দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলত। কিন্তু আজ কেলো নির্বিকার। ওরা বোধহয় জানে, মহা দুর্যোগের সময় হিংসা করতে নেই।

গৃহিণী কাঠবেরালিকে একটু দুধ দিলেন, সে চেটেপুটে খেয়ে ফেলল।

আজকের একটা দিনে কত কি দেখলাম, কত কি অনুভব করলাম। কিন্তু মাথার মধ্যে ভোমরার নেপথ্য সঙ্গীত থামেনি। রাত্রে ক্লান্ত দেহ এবং অবসন্ন মন নিয়ে যখন শুতে গেলাম তখনও মাথার মধ্যে বন্দী ভোমরাটা গুঞ্জন করে চলছে—ঝর্ণা ঝর্ণা সুন্দরী ঝর্ণা।

৫ মাঘ ১৩৬৮

সকল অধ্যায়

১. প্রেতপুরী
২. বিজ্ঞাপন বিভ্ৰাট
৩. উড়ো মেঘ
৪. বেড়ালের ডাক
৫. প্লেগ
৬. রূপসী
৭. কবি-প্রিয়া
৮. রক্ত-খদ্যোত
৯. টিকটিকির ডিম
১০. দৈবাৎ
১১. অন্ধকারে
১২. বিজয়ী
১৩. করুণাময়ী
১৪. দুই দিক
১৫. শীলা-সোমেশ
১৬. কুলপ্রদীপ
১৭. মরণ-ভোমরা
১৮. ইতর-ভদ্র
১৯. রূপকথা
২০. কর্তার কীর্তি
২১. কালকূট
২২. অশরীরী
২৩. ব্রজলাট
২৪. সন্ধি-বিগ্রহ
২৫. উল্কার আলো
২৬. অরণ্যে
২৭. মেথুশীলা
২৮. মনে মনে
২৯. সবুজ চশমা
৩০. নারীর মূল্য
৩১. আলোর নেশা
৩২. বহুবিঘ্নানি
৩৩. ট্রেনে আধঘণ্টা
৩৪. গ্রন্থকার
৩৫. কুবের ও কন্দর্প
৩৬. মরণ দোল
৩৭. অমরবৃন্দ
৩৮. আঙটি
৩৯. তিমিঙ্গিল
৪০. ভেনডেটা
৪১. ভল্লু সর্দার
৪২. বিদ্রোহী
৪৩. স্বখাত সলিল
৪৪. অভিজ্ঞান
৪৫. জটিল ব্যাপার
৪৬. আদিম নৃত্য
৪৭. একূল ওকূল
৪৮. প্রতিদ্বন্দ্বী
৪৯. কেতুর পুচ্ছ
৫০. শালীবাহন
৫১. বরলাভ
৫২. প্রেমের কথা
৫৩. ভালবাসা লিমিটেড
৫৪. মায়ামৃগ
৫৫. সন্দেহজনক ব্যাপার
৫৬. তন্দ্রাহরণ
৫৭. বহুরূপী
৫৮. হাসি-কান্না
৫৯. প্রণয় কলহ
৬০. ধীরে রজনি!
৬১. ন্যুডিসম-এর গোড়ার কথা
৬২. শুক্লা একাদশী
৬৩. মন্দ লোক
৬৪. দন্তরুচি
৬৫. প্রেমিক
৬৬. স্বর্গের বিচার
৬৭. মায়া কানন
৬৮. প্রতিধ্বনি
৬৯. অযাত্রা
৭০. কুতুব-শীর্ষে
৭১. টুথব্রাশ
৭২. নাইট ক্লাব
৭৩. নিশীথে
৭৪. রোমান্স
৭৫. যস্মিন দেশে
৭৬. পিছু ডাক
৭৭. গোপন কথা
৭৮. অপরিচিতা
৭৯. ঘড়ি
৮০. গ্যাঁড়া
৮১. মাৎসন্যায়
৮২. লম্পট
৮৩. আরব সাগরের রসিকতা
৮৪. এপিঠ ওপিঠ
৮৫. ঝি
৮৬. অসমাপ্ত
৮৭. শাপে বর
৮৮. ইচ্ছাশক্তি
৮৯. পঞ্চভূত
৯০. ভাল বাসা
৯১. আধিদৈবিক
৯২. বাঘিনী
৯৩. ভূতোর চন্দ্রবিন্দু
৯৪. সেকালিনী
৯৫. দিগদর্শন
৯৬. মুখোস
৯৭. আণবিক বোমা
৯৮. স্মর-গরল
৯৯. ছুরি
১০০. আকাশবাণী
১০১. নিষ্পত্তি
১০২. শাদা পৃথিবী
১০৩. ভাগ্যবন্ত
১০৪. মেঘদূত
১০৫. পরীক্ষা
১০৬. বালখিল্য
১০৭. পূর্ণিমা
১০৮. নূতন মানুষ
১০৯. স্বাধীনতার রস
১১০. ও কুমারী
১১১. যুধিষ্ঠিরের স্বর্গ
১১২. ধীরেন ঘোষের বিবাহ
১১৩. দেহান্তর
১১৪. ভূত-ভবিষ্যৎ
১১৫. ভক্তিভাজন
১১৬. গ্রন্থি-রহস্য
১১৭. জোড় বিজোড়
১১৮. নিরুত্তর
১১৯. অলৌকিক
১২০. সন্ন্যাস
১২১. তা তা থৈ থৈ
১২২. আদায় কাঁচকলায়
১২৩. বনমানুষ
১২৪. বড় ঘরের কথা
১২৫. শ্রেষ্ঠ বিসর্জন
১২৬. অষ্টমে মঙ্গল
১২৭. কল্পনা
১২৮. তাই নে রে মন তাই নে
১২৯. কানু কহে রাই
১৩০. চরিত্র
১৩১. দেখা হবে
১৩২. গীতা
১৩৩. গুহা
১৩৪. শরণার্থী
১৩৫. শূন্য শুধু শূন্য নয়
১৩৬. মধু-মালতী
১৩৭. চিরঞ্জীব
১৩৮. মায়া কুরঙ্গী
১৩৯. ঘড়িদাসের গুপ্তকথা
১৪০. সতী
১৪১. অপদার্থ
১৪২. এমন দিনে
১৪৩. কালো মোরগ
১৪৪. নখদর্পণ
১৪৫. সাক্ষী
১৪৬. হেমনলিনী
১৪৭. পতিতার পত্র
১৪৮. সেই আমি
১৪৯. মানবী
১৫০. প্রিয় চরিত্র
১৫১. স্ত্রী-ভাগ্য
১৫২. সুত-মিত-রমণী
১৫৩. কা তব কান্তা
১৫৪. প্রত্নকেতকী
১৫৫. সুন্দরী ঝর্ণা
১৫৬. চিড়িকদাস
১৫৭. চিন্ময়ের চাকরি
১৫৮. মুষ্টিযোগ
১৫৯. ছোট কর্তা
১৬০. মালকোষ
১৬১. গোদাবরী
১৬২. ফকির-বাবা
১৬৩. অবিকল
১৬৪. কিসের লজ্জা
১৬৫. বোম্বাইকা ডাকু
১৬৬. চলচ্চিত্র প্রবেশিকা
১৬৭. আর একটু হলেই
১৬৮. কিষ্টোলাল
১৬৯. পিছু পিছু চলে
১৭০. কামিনী
১৭১. জননান্তর সৌহৃদানি
১৭২. হৃৎকম্প
১৭৩. পলাতক
১৭৪. ভাই ভাই
১৭৫. প্রেম
১৭৬. রমণীর মন
১৭৭. মটর মাস্টারের কৃতজ্ঞতা
১৭৮. বুড়ো বুড়ি দুজনাতে
১৭৯. কালস্রোত
১৮০. অমাবস্যা
১৮১. বক্কেশ্বরী
১৮২. নীলকর
১৮৩. ডিকটেটর
১৮৪. গল্প-পরিচয় – শোভন বসু

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন