করুণাময়ী

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

করুণাময়ী

সাতখানা গ্রামের মধ্যে একমাত্র বিচক্ষণ ডাক্তার বিধুশেখরবাবু সন্ধ্যাবেলা তাঁহার ডাক্তারখানার পাকা বারান্দায় তাকিয়া ঠেস দিয়া বসিয়া বিমর্ষভাবে তামাক টানিতেছিলেন। তাঁহার ক্ষীণকায় কম্পাউন্ডারটি দোরগোড়ায় বসিয়াছিল।

ডাক্তারখানার ক্ষুদ্র ঘর ও তৎসংলগ্ন বারান্দাটি পাকা হইলেও ডাক্তারবাবুর বসতবাটী এখনও মাটকোঠা ও কুশের চালই রহিয়া গিয়াছিল। পঁচিশ বৎসর অপ্রতিদ্বন্দ্বিভাবে প্র্যাক্‌টিস্‌ করিয়াও তিনি এমন অর্থসঞ্চয় করিতে পারেন নাই, যাহার দ্বারা নিজের মাথার উপর খড়ের পরিবর্তে ইট-কাঠের ছাদ তুলিতে পারেন। শুধু ঔষধ-পত্র নষ্ট হইয়া যায় বলিয়া বহু কষ্টে ত্রিশ হাজার ইটের একখানা পাঁজা পুড়াইয়া এই ডাক্তারখানাটি পাকা করিয়া লইয়াছিলেন। ইহাতেও গাঁয়ের লোকের চোখ টাটাইয়াছিল এবং বিধু ডাক্তার যে কেবলমাত্র গরিব ঠকাইয়া নিজে দুটি কোঠা তুলিয়াছে, এই প্রসঙ্গটা সন্ধ্যাসমাগমে অনেক চণ্ডীমণ্ডপেই গ্রামের বয়োবৃদ্ধ ব্রাহ্মণ-কায়স্থদের মধ্যে আলোচিত হইত। বিধুবাবু সে সব ভ্রূক্ষেপ করিতেন না। আজীবন এখনও সংস্থানহীন ও ততোধিক কৃপণ চাষাভুষার নাড়ী টিপিয়াও তাঁহার প্রাণটা কাঁচাই রহিয়া গিয়াছিল; তাই পাকা বাড়িতে বাস করিবার সম্ভাবনাটাও তাঁহার দূর হইতে আরও সদূর হইয়া পড়িয়াছিল।

ততদূর বয়োবৃদ্ধ হইয়া উঠিতে পারি নাই বলিয়াই বোধ হয় আমি বিধুবাবুকে আন্তরিক শ্রদ্ধা করিতাম এবং প্রায়ই চাটুয্যে মহাশয়ের আসরে না গিয়া ডাক্তারবাবুর দাওয়ায় সন্ধ্যাটা কাটাইয়া আসিতাম। অনেক রকম আলোচনা হইত, তাহার মধ্যে গ্রামের ভদ্রলোকদের কৃতঘ্নতা ও ঈর্ষাপ্রবণতার কথা তুলিতেই তিনি জোর করিয়া চাপা দিয়া বলিতেন—‘ওটা পাড়াগাঁয়ের স্বভাব। ওরা নিজের ইষ্ট নিজে বোঝে না। সংশিক্ষা না থাকলে মানুষের ভাল প্রবৃত্তিগুলো পর্যন্ত বিকৃত হয়ে দাঁড়ায়। আমি তো জানি, কাউকে ঠকাচ্ছি নে, তা হলেই হল।’

সেদিন গিয়া মাদুরের উপর বসিয়াই বলিলাম—‘ছেলেটাকে বাঁচাতে পারলেন না, ডাক্তারবাবু?’

ডাক্তারবাবু ক্ষণেকের জন্য তামাক টানায় বিরাম দিয়া বলিলেন—‘না, বাঁচল না, পেল্লাদ হলে হয়তো বাঁচতে পারত।’

এই ছেলেটাকে বাঁচাইতে না পারার জন্য আমার মনের মধ্যেও যেন ডাক্তারের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ খাড়া হইয়াছিল। তাই আমি একটু ঘুরাইয়া বলিলাম—‘গাঁয়ের লোকে কত কথাই না বলছে।’

তামাক বন্ধ করিয়া বিধুবাবু বলিলেন—‘কি বলছে গাঁয়ের লোক?’

আমি হাসির মতো ভাব করিয়া বলিলাম—‘আরে মশায়, জানেন তো গাঁয়ের লোকের ব্যাপার, রোগ হলে আপনার কাছেই ছুটে আসবে, আবার আড়ালে আপনার কুচ্ছো করতেও ছাড়বে না।’

‘তবু কি বলছে, শুনি না।’

‘বল্‌বে আর কি; বলছে, আপনিই গোপালদীঘির ঘোষালগুষ্ঠীকে নির্বংশ করলেন!’

অন্ধকারে ডাক্তারবাবুর মুখখানা ভাল দেখা গেল না, কিন্তু তাঁহার কণ্ঠস্বর কড়া এবং রুক্ষ হইয়া উঠিল। বলিলেন—‘কে বল্‌ছে এ কথা শুনি।’

আমি হাত জোড় করিয়া বলিলাম—‘দোহাই ডাক্তারবাবু, ঐটি আপনার জেনে কাজ নেই। শেষে কি আমি মারা যাব? এমনিতেই তো গোয়েন্দা বলে আমার দুর্নাম আছে।’

বিধুবাবু কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ থাকিয়া বলিলেন—‘হুঁ, আজকাল হারু চাটুয্যের দাওয়ায় মজলিস বসছে—না?’

তাড়াতাড়ি বলিলাম—‘আমি জানিনে মশাই, কিন্তু নিস্তারিণী পিসির কি কপাল বলুন তো? বংশে বাতি দিতে কেউ রইল না? ঐ একটা ছ’ বছরের নাতি টিম্‌টিম্‌ করছিল তাও গেল! এই পথে আসতে দেখলুম, সদর-দোরে ঠেস দিয়ে বসে বসে কাঁদছে। দূর থেকেই পালিয়ে এলুম, বুড়ির কষ্ট আর চোখে দেখা যায় না। কত দিনে যে ভগবান ওকে টেনে নেবেন।’

ডাক্তারবাবু হঠাৎ একটা চাপা গর্জন করিয়া বলিলেন—‘নিস্তারিণী পিসি! ঐ বুড়িকে জ্যান্ত পোড়ালে তবে আমার রাগ যায়।’

অবাক হইয়া কহিলাম—‘কি বলছেন আপনি?’

বিধুবাবু বলিলেন—‘ঠিক বলছি। সেকালে বিলেতে বুড়িদের ডাইনী বলে পোড়াত শুনেছি,—আমাদের দেশেও তুষানলের ব্যবস্থা ছিল। তেমনই করে তোমার ঐ নিস্তারিণী পিসিকে দগ্ধে দগ্ধে মারা উচিত।’

সহসা বৃদ্ধা শোকাতুরা নিস্তারিণী পিসির উপর এতটা রাগের কি কারণ, কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। বিধুবাবু, পুনশ্চ কহিলেন—‘ঘোষালগুষ্ঠীকে নির্বংশ আমি করিনি হে, ঘোষালগুষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখা শিবের অসাধ্য হয়ে উঠেছিল। পঁচিশ বছর ধরে এই ব্যাপার দেখছি। যতদিন ঘোষালদের একটা বংশধরও বেঁচে ছিল, ততদিন যেন আমারও প্রাণে স্বস্তি ছিল না। আজ বিলকুল সাফ হয়ে গেছে, আমি নিশ্চিন্তি। আর তোমার নিস্তারিণী পিসির তো কথাই নেই, যাকে বলে একদম ঝাড়া হাত-পা—তাই।’

‘ব্যাপার কি, ডাক্তারবাবু?’

গড়গড়ার নলে দ্রুত কয়েকটা টান দিয়া তিনি বলিলেন—‘তবে তোমাকেই বলি শোন। অ্যাদ্দিন বলিনি, হাজার হোক্‌ একদিন নিবারণদা’ই আমাকে এখানে এনে বসিয়েছিলেন।’ তারপর তাঁহার অতি শীর্ণকায় কম্পাউন্ডারটিকে ডাকিয়া বলিলেন—‘গুপী যাও, একবার দেখে এস, নিমাই হাজরার মেয়েটা কেমন আছে। ক্ষেন্তীর মা যদি আসতে পারে, সঙ্গে করে নিয়ে এস, তার মুখে শুনে ওষুধ দেব। আর এক ছিলিম তামাক সেজে রেখে যেও।

পঁচিশ বছর আগে যখন আমি মেডিক্যাল কলেজ থেকে বেরিয়ে এই গোপালদীঘিতে প্র্যাক্‌টিস করতে বসলুম, তখন নিবারণ ঘোষাল মশায় এখানকার সবচেয়ে বড় জমিদার এবং গ্রামের মাথা ছিলেন। তাঁর পরিবারের মধ্যে ছিলেন তাঁর মা, দুই ছেলে আর তাঁর সহধর্মিণী—তোমাদের ঐ নিস্তারিণী পিসি। ওকে আমি গোড়া থেকেই বৌঠান বলে এসেছি।

শুনেছি, নিবারণদা’র মা বৌ-কাঁটকী ছিলেন। কথাটা খুব সত্যি বলেই আমি মনে করি, কারণ, তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন নিস্তার বৌঠান মাথা তুলতে পারেননি। আজকালকার নব্য বধূদের ভাল লাগবে কি না, বলতে পারি না, কিন্তু নিবারণদা’র মা দজ্জাল বৌ-কাঁটকী ছিলেন বলেই বোধ হয় ঘোষালবংশটা সে পর্যন্ত টিকে ছিল।

নিস্তার বৌঠান সেকেলে ধরনের বৌ ছিলেন। সধবাবস্থায় কোনদিন আমার সামনেও ঘোমটা না দিয়ে বার হননি। শিক্ষা-দীক্ষাও তাঁর সেকেলে ধরনের ছিল, লেখাপড়া জানতেন না। কিন্তু বধূ অবস্থাতেও তাঁর দয়া-দাক্ষিণ্যের সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। লোককে খাওয়াতে তিনি বড় ভালবাসতেন।

‘খাওয়াতে ভালবাসতেন’—কথাটা শুনতে কেমন লাগল? বেশ নয়? যেন সাক্ষাৎ ভগবতী—অন্নপূর্ণার প্রতিমূর্তি—কেমন? হুঁ—তাই বটে—

যাক। আমি প্র্যাকটিস আরম্ভ করবার বছরখানেক পরে নিবারণদা’র মা অসুখে পড়লেন। বয়স অনেক হয়েছিল, তার ওপর জ্বরাতিসার, খুব সাবধানে চিকিৎসা করতে লাগলুম। বলতে গেলে নিবারণদা’র মা’ই আমার প্রথম বড় কেস, নিজের সুনামের জন্যে প্রাণপণে তাঁকে বাঁচাবার চেষ্টা করতে লাগলুম। দু’বেলা দেখতে যেতুম,—ফি নিতুম না, ঘোষালবাড়ি থেকে আজ পর্যন্ত এক পয়সা ফি বা ওষুধের দাম নিইনি—রুগীর পথ্য সম্বন্ধে খুব কড়াকড়ি আরম্ভ করলুম, যে করে হোক বুড়িকে বাঁচাতেই হবে।

উৎপীড়িত বৌ অত্যাচারী শাশুড়ির কি অক্লান্ত সেবা করতে পারে, তা নিস্তার বৌঠানকে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। রুগী ক্রমশ অল্পে-অল্পে আরোগ্যের পথে এগুতে লাগলেন।

যম তখন তাঁর কালো মোষের ওপর বসে লাসো-(Lasso)টি বাগিয়ে নিয়ে মৃদু মৃদু হাসছিলেন।

যে দিন বেশ নিশ্চিন্তি হয়ে ভাবছি, আর কোনও ভয় নেই, সেইদিনই নিবারণদা’র একটা চাকর হাঁপাতে হাঁপাতে এসে খবর দিলে যে, গিন্নীমা যাব যাব করছেন, এতক্ষণ বোধ হয় শেষ হয়ে গেলেন, ডাক্তারবাবু, শিগ্‌গির চলুন।

শিগ্‌গিরই গেলুম। গিয়ে দেখি, ভয়ানক অবস্থা। হাতে পায়ে খিল ধরছে এবং আর আর কথা শুনে কাজ নেই। বুঝতে বাকী রইল না যে, এ যাত্রা ইনি সত্যিই চললেন।

জিজ্ঞেস করলুম—‘এঁকে কোনও কুপথ্য খাওয়ানো হয়েছিল?’

নিবারণদা ঘাড় নেড়ে বললেন—‘আমার জানতে নয়। ইনি যদি খাইয়ে থাকেন, বলতে পারি না।’

নিস্তার বৌঠান মুখে আঁচল দিয়ে বসে কাঁদছিলেন, ফ্যাঁস্‌ ফ্যাঁস্‌ করে বললেন—‘ওগো, কিছু খাওয়াই নি, তোমার পা ছুঁয়ে বলছি। বুড়ো মানুষ কিছু কি খেতে পারেন? কাল রাত্তিরে ওষুধ খাবার পর মুখ বদলাবার জন্যে একটু কাসুন্দি চাইলেন। কিচ্ছুটি খেতে পান না, তার ওপর ঐ তেতো ওষুধ, তাই—’

নিবারণদা বললেন—‘কাসুন্দি খাইয়েছ? ও! তবে আর কেন, বিধু, তুমি বাড়ি যাও। মিছে কতকগুলো ওষুধ আর পরিশ্রম তোমার অপব্যয় হল।’ বলে বাইরে গিয়ে বসলেন।

সেই রাত্রিতে পুরোনো কাসুন্দিকেই শেষ পাথেয় করে নিয়ে নিবারণদা’র মা পরলোকের দীর্ঘ পথে রওনা হয়ে পড়লেন।

তিনি যাবার পর নিস্তার বৌঠান বাড়ির গিন্নী হলেন। ব্যস, আর কি? যমের রাজ্যে দুন্দুভি বেজে উঠল।

এবার নিবারণদা’র পালা। মা মারা যাবার পর পুরো তিনটি বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। অসাধারণ তাঁর জীবনীশক্তি ছিল।

নিবারণদা’র কাল পূর্ণ হলে তাঁর ফিসচুলা হল—যাকে আমাদের শাস্ত্রে বলে Fistula in Ano। কলকাতা থেকে বড় ডাক্তার এসে ফিসচুলা অস্ত্র করলেন। তারপর নিবারণদাকে দুইপা জোড়া করে বেঁধে বিছানায় শুইয়ে রাখা হল। যতদিন না ঘা শুকোয়, ততদিন পা খোলা হবে না।

কলকাতার ডাক্তার অস্ত্র করেই ফিরে গিছলেন, রুগীর দেখাশোনা আমিই করতুম। এ রোগে খাওয়া-দাওয়া সম্বন্ধে ভারী সাবধান থাকতে হয়! এত অল্পপরিমাণে এমন জিনিস খেতে দিতে হয়—যাতে পুষ্টি হয় অথচ দেহের মধ্যে অনাবশ্যক আবর্জনা তৈরি হতে না পারে।

এমনিভাবে পা-বাঁধা অবস্থায় বিছানায় শুয়ে নিবারণদা’র যোল দিন কাটল। প্রত্যহ দু’ছটাক করে লেবুর রস কিংবা আঙ্গুরের রস খেয়ে যোল দিন কাটালে মানুষের মনের অবস্থা কি রকম হয়, বুঝতেই পারছ। নিবারণদা খাই-খাই করতে আরম্ভ করলেন। এটা খাব, ওটা খাব করে ফরমাস করতে লাগলেন। আমি বৌঠানকে গিয়ে খুব কড়াভাবে সতর্ক করে দিলুম, যেন কোনও রকম খাবার অত্যাচার না হয়। তিনিও ঘোমটার আড়াল থেকে ঘাড় নেড়ে সায় দিলেন।

কিন্তু মমতাময়ীর মমতাকে আটকে রাখবে কে? একুশ দিনের দিন একটা বিশ্রী ব্যাপার হয়ে গেল। তারপর কলকাতা থেকে ডাক্তার এলেন, অনেক চেষ্টাচরিত্র করা গেল, কিন্তু নিবারণদা’কে বাঁচানো গেল না।

যাক, নিবারণদা’তো গেলেন, তখন তাঁর বড় ছেলে বিনোদ কলেজ ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে এসে বসল।

অশৌচ উত্তীর্ণ হবার পর নিস্তার বৌঠান ছেলের বিয়ে দিলেন।

বিনোদের সবসুদ্ধ তিনটি ছেলে হয়েছিল; কিন্তু তিন বছরের বেশী কেউ বাঁচল না। এই অল্পকালের মধ্যে ঠাকুরমার অজস্র আদর এবং নানাবিধ কুখাদ্য পেটে পুরে নিয়ে পেটটিকে পিলে লিভারে বোঝাই করে তারা একে একে অমৃত-লোকে চলে গেল। এখনও বোধ হয় তারা অমৃত-সরোবরের তীরে বসে সেই অমৃতের সাহায্যে ঠাকুরমার দেওয়া অতি দুষ্পাচ্য সুরসাল খাদ্য হজম করছে।

তারপর বিনোদের বৌ। বেচারী কিছু দুর্বলপ্রকৃতির ছিল। সে প্রথমে গেল। কলেরা হয়েছিল,—এমন কিছু সাংঘাতিক নয়, সারিয়েও প্রায় তুলেছিলাম—কিন্তু কলেরার ওপর ফুটি-তরমুজ, বেচারী সহ্য করতে পারলে না।

বৌকে চিতেয় তুলে দিয়ে এসে বিনোদ পড়ল। প্রথমটা ঘুষঘুষে জ্বর, তারপর টাইফয়েড় দেখা দিলে। টাইফয়েড রোগে ওষুধ-বিষুধ বড় কিছু নেই—water in, water out সেই চিকিৎসাই হতে লাগল, খাবার ব্যবস্থা শুধু ছানার জল।

বিনোদ ভারী দুর্বল হয়ে পড়ল। মা’র প্রাণে এ দুঃখ কত দিন সয়? শরীরে বল না পেলে ছেলে রোগের সঙ্গে যুঝ্‌বে কি করে? সুতরাং আমাকে লুকিয়ে ছানার জলের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খাওয়ানো চলতে লাগল।

গল্পটা ক্রমেই একঘেয়ে হয়ে পড়ছে—না? আচ্ছা, সংক্ষেপে বলছি। বিনোদ যাবার পর তার ছোট ভাই বিভূতির পালা পড়ল। ইতিমধ্যে তার বিয়ে-থা হয়েছিল। ক্রমশ তারও ছেলেপুলে হতে লাগল—এবং যেতে লাগল। শেষে একটিমাত্র ছেলে, তারাও স্বামীস্ত্রীতে ভবসমুদ্রে পাড়ি দিলে।

রয়ে গেলেন শুধু তোমার নিস্তারিণী পিসি আর ঘোষালবংশের ঐ শেষ পিদ্দিমটি।

এ ছেলেটা একেবারে প্রহ্লাদ না হোক, দৈত্যকুলের সঙ্গে নিশ্চয় ওর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। নৈলে ছ’বছর বয়স পর্যন্ত সে বেঁচে রইল কি করে? কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যেতেই হল। আজ সকালবেলা ঘোষালবংশের এই পঁচিশ বছরব্যাপী ট্র্যাজেডির ওপর যবনিকা পড়ে গেছে।

শুনলে তো গল্প? এখন এর পরেও যদি বল, আমিই ঘোষালগুষ্ঠীকে নির্বংশ করেছি, তাহলে আমার আর কিছু বলবার নেই।’

রাত্রিতে বাড়ি ফিরিবার পথে ঘোষালদের বাড়ির পাশ দিয়া গেলাম। বাড়িখানা অন্ধকারে খাঁ খাঁ করিতেছে, এবং তাহারই ভিতর হইতে বিনাইয়া বিনাইয়া কান্নার শব্দ আসিতেছে। ওরে আমার আঁধার ঘরের মাণিক, শিবরাত্রির সলতে—এই কয়টা কথা কানে গেল।

আমি আর সেখানে দাঁড়াইলাম না। কিন্তু রাগ এবং অশ্রদ্ধা এই সর্বনাশিনী স্ত্রীলোকটার উপর যতই বাড়িতে থাকুক, এ কথাও কিছুতেই ভুলিতে পারিলাম না যে, নিজের কুশিক্ষা ও অসংযত স্নেহের জন্য কি নিদারুণ দণ্ডভোগই না সে করিয়াছে।

প্র. পৌষ ১৩৩৮

সকল অধ্যায়

১. প্রেতপুরী
২. বিজ্ঞাপন বিভ্ৰাট
৩. উড়ো মেঘ
৪. বেড়ালের ডাক
৫. প্লেগ
৬. রূপসী
৭. কবি-প্রিয়া
৮. রক্ত-খদ্যোত
৯. টিকটিকির ডিম
১০. দৈবাৎ
১১. অন্ধকারে
১২. বিজয়ী
১৩. করুণাময়ী
১৪. দুই দিক
১৫. শীলা-সোমেশ
১৬. কুলপ্রদীপ
১৭. মরণ-ভোমরা
১৮. ইতর-ভদ্র
১৯. রূপকথা
২০. কর্তার কীর্তি
২১. কালকূট
২২. অশরীরী
২৩. ব্রজলাট
২৪. সন্ধি-বিগ্রহ
২৫. উল্কার আলো
২৬. অরণ্যে
২৭. মেথুশীলা
২৮. মনে মনে
২৯. সবুজ চশমা
৩০. নারীর মূল্য
৩১. আলোর নেশা
৩২. বহুবিঘ্নানি
৩৩. ট্রেনে আধঘণ্টা
৩৪. গ্রন্থকার
৩৫. কুবের ও কন্দর্প
৩৬. মরণ দোল
৩৭. অমরবৃন্দ
৩৮. আঙটি
৩৯. তিমিঙ্গিল
৪০. ভেনডেটা
৪১. ভল্লু সর্দার
৪২. বিদ্রোহী
৪৩. স্বখাত সলিল
৪৪. অভিজ্ঞান
৪৫. জটিল ব্যাপার
৪৬. আদিম নৃত্য
৪৭. একূল ওকূল
৪৮. প্রতিদ্বন্দ্বী
৪৯. কেতুর পুচ্ছ
৫০. শালীবাহন
৫১. বরলাভ
৫২. প্রেমের কথা
৫৩. ভালবাসা লিমিটেড
৫৪. মায়ামৃগ
৫৫. সন্দেহজনক ব্যাপার
৫৬. তন্দ্রাহরণ
৫৭. বহুরূপী
৫৮. হাসি-কান্না
৫৯. প্রণয় কলহ
৬০. ধীরে রজনি!
৬১. ন্যুডিসম-এর গোড়ার কথা
৬২. শুক্লা একাদশী
৬৩. মন্দ লোক
৬৪. দন্তরুচি
৬৫. প্রেমিক
৬৬. স্বর্গের বিচার
৬৭. মায়া কানন
৬৮. প্রতিধ্বনি
৬৯. অযাত্রা
৭০. কুতুব-শীর্ষে
৭১. টুথব্রাশ
৭২. নাইট ক্লাব
৭৩. নিশীথে
৭৪. রোমান্স
৭৫. যস্মিন দেশে
৭৬. পিছু ডাক
৭৭. গোপন কথা
৭৮. অপরিচিতা
৭৯. ঘড়ি
৮০. গ্যাঁড়া
৮১. মাৎসন্যায়
৮২. লম্পট
৮৩. আরব সাগরের রসিকতা
৮৪. এপিঠ ওপিঠ
৮৫. ঝি
৮৬. অসমাপ্ত
৮৭. শাপে বর
৮৮. ইচ্ছাশক্তি
৮৯. পঞ্চভূত
৯০. ভাল বাসা
৯১. আধিদৈবিক
৯২. বাঘিনী
৯৩. ভূতোর চন্দ্রবিন্দু
৯৪. সেকালিনী
৯৫. দিগদর্শন
৯৬. মুখোস
৯৭. আণবিক বোমা
৯৮. স্মর-গরল
৯৯. ছুরি
১০০. আকাশবাণী
১০১. নিষ্পত্তি
১০২. শাদা পৃথিবী
১০৩. ভাগ্যবন্ত
১০৪. মেঘদূত
১০৫. পরীক্ষা
১০৬. বালখিল্য
১০৭. পূর্ণিমা
১০৮. নূতন মানুষ
১০৯. স্বাধীনতার রস
১১০. ও কুমারী
১১১. যুধিষ্ঠিরের স্বর্গ
১১২. ধীরেন ঘোষের বিবাহ
১১৩. দেহান্তর
১১৪. ভূত-ভবিষ্যৎ
১১৫. ভক্তিভাজন
১১৬. গ্রন্থি-রহস্য
১১৭. জোড় বিজোড়
১১৮. নিরুত্তর
১১৯. অলৌকিক
১২০. সন্ন্যাস
১২১. তা তা থৈ থৈ
১২২. আদায় কাঁচকলায়
১২৩. বনমানুষ
১২৪. বড় ঘরের কথা
১২৫. শ্রেষ্ঠ বিসর্জন
১২৬. অষ্টমে মঙ্গল
১২৭. কল্পনা
১২৮. তাই নে রে মন তাই নে
১২৯. কানু কহে রাই
১৩০. চরিত্র
১৩১. দেখা হবে
১৩২. গীতা
১৩৩. গুহা
১৩৪. শরণার্থী
১৩৫. শূন্য শুধু শূন্য নয়
১৩৬. মধু-মালতী
১৩৭. চিরঞ্জীব
১৩৮. মায়া কুরঙ্গী
১৩৯. ঘড়িদাসের গুপ্তকথা
১৪০. সতী
১৪১. অপদার্থ
১৪২. এমন দিনে
১৪৩. কালো মোরগ
১৪৪. নখদর্পণ
১৪৫. সাক্ষী
১৪৬. হেমনলিনী
১৪৭. পতিতার পত্র
১৪৮. সেই আমি
১৪৯. মানবী
১৫০. প্রিয় চরিত্র
১৫১. স্ত্রী-ভাগ্য
১৫২. সুত-মিত-রমণী
১৫৩. কা তব কান্তা
১৫৪. প্রত্নকেতকী
১৫৫. সুন্দরী ঝর্ণা
১৫৬. চিড়িকদাস
১৫৭. চিন্ময়ের চাকরি
১৫৮. মুষ্টিযোগ
১৫৯. ছোট কর্তা
১৬০. মালকোষ
১৬১. গোদাবরী
১৬২. ফকির-বাবা
১৬৩. অবিকল
১৬৪. কিসের লজ্জা
১৬৫. বোম্বাইকা ডাকু
১৬৬. চলচ্চিত্র প্রবেশিকা
১৬৭. আর একটু হলেই
১৬৮. কিষ্টোলাল
১৬৯. পিছু পিছু চলে
১৭০. কামিনী
১৭১. জননান্তর সৌহৃদানি
১৭২. হৃৎকম্প
১৭৩. পলাতক
১৭৪. ভাই ভাই
১৭৫. প্রেম
১৭৬. রমণীর মন
১৭৭. মটর মাস্টারের কৃতজ্ঞতা
১৭৮. বুড়ো বুড়ি দুজনাতে
১৭৯. কালস্রোত
১৮০. অমাবস্যা
১৮১. বক্কেশ্বরী
১৮২. নীলকর
১৮৩. ডিকটেটর
১৮৪. গল্প-পরিচয় – শোভন বসু

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন