কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯

বিমল মিত্র

দীপঙ্কর যখন ফিরলো, তখন বেশ বেলা পড়ে গেছে। সারা দিনটা বড় খাটুনি গেছে। মধু ঘরের সামনেই হা-পিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে ছিল। সেন-সাহেবকে দেখেই সুইং- ডোরটা ফাঁক করে খুলে ধরলে। ভেতরে ঢুকে পাখাটা চালিয়ে দিলে, টেবিল-ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিলে। সেন-সাহেবের কাছে কাজ করলে কলাটা মূলোটা কিছুই পাওয়া যায় না। সকাল থেকে একটা পয়সার মুখ পর্যন্ত দেখেনি মধু। আর চোখের সামনেই দ্বিজপদ সেলাম বাজিয়ে বাজিয়ে মাইনের হাজার ডবল কামিয়েছে।

ফাইলগুলো একে একে পাড়লো দীপঙ্কর। সব এসে জমেছে সকাল থেকে। একটার পর একটা জমেছে এসে তার কাছে। কেউ দেখবার নেই, কেউ ক্লিয়ার করবার নেই। কারো সঙ্গে একটু কথা বলবার মত লোকও নেই আপিসে। গাঙ্গুলীবাবু নেই, মিস্ মাইকেলও নেই। মিস্ মাইকেলের কথাটা মনে পড়তেই বুক থেকে একটা নিঃশব্দ আহা বেরিয়ে এল! কোথায় গেল সতী! সতীই বা কলকাতা শহরে কোথায় যেতে পারে। একটু পরেই সন্ধ্যে হবে, একটু পরেই কলকাতা শহর ঠুলি চোখে দিয়ে অন্ধকার হয়ে যাবে। তখন কোথায় আশ্রয় নেবে সতী? কে আশ্রয় দেবে?

—কী রে?

মধু ভেতরে ঢুকে সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।

—কিছু বলবি তুই?

মধু বললে—হুজুর, একজন মেয়েমানুষ আপনাকে খুঁজতে এসেছিল, আমি বলতে ভুলে গিয়েছিলাম—

দীপঙ্কর লাফিয়ে উঠেছে। মেয়েমানুষ! কখন এসেছিল? কী রকম চেহারা? বয়েস কত? একলা না আর কেউ ছিল সঙ্গে?

অনেকগুলো প্রশ্নের ঝড়ে মধু একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে গেল। বললে—একলা, সঙ্গে কেউ ছিল না—

—কোথায় গেল? ফিরে গেছে? বসতে বললি না কেন?

—হুজুর আমি বসতে বলেছিলুম, তিনি বসলেন না, ঘোষাল-সাহেবের ঘরটা দেখিয়ে দিতে বললেন, আমি-ঘোষাল-সাহেবের ঘর দেখিয়ে দিলুম।

দীপঙ্কর চিৎকার করে উঠলো। বললে—ঘোষাল-সাহেবের ঘরে?

যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না কথাটা তখনও। দীপঙ্কর ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা বাইরে গেল। তারপর এক লাফে মিস্টার ঘোষালের ঘরের সামনে যেতেই দ্বিজপদ সেলাম ঠুকলে। বললে—সাব নেই হুজুর—

—কেন? কোথায় গেছেন সাহেব?

দ্বিজপদ বললে—সাহেব চলে গেছেন হুজুর, কিছু বলে যান!

দীপঙ্কর কী করবে বুঝতে পারলে না। একবার দাঁড়াল খানিক। তারপর দাঁতে দাঁত চাপলে। তারপর আবার গট গট্ করতে করতে এসে নিজের ঘরে ঢুকলো। ডাকলে—মধু—

—হুজুর?

—কী রকম দেখতে তাকে?

—হুজুর খুব ফরসা চেহারা, কোঁকড়ানো মাথার চুল, মাথায় সিঁদুর আছে—

দীপঙ্কর বললে—তুই বাইরে যা–যা, বাইরে যা—

মধু বাইরে যেতেই আবার তখুনি ভেতর থেকে ডাক এল—মধু—

—হুজুর।

—কি রকম দেখতে তাকে?

—হুজুর খুব ফরসা চেহারা, কোঁকড়ানো মাথার চুল, মাথায় সিঁদুর আছে—

দীপঙ্কর বললে—তুই বাইরে যা–যা, বাইরে যা—

মধু বাইরে যেতেই আবার তখুনি ভেতর থেকে ডাক এল—মধু —হুজুর।

—দ্যাখ্ তো ক্রফোর্ড সাহেব ঘরে আছে কি না।

মধু বাইরে যাচ্ছিল। দ্বিজপদ বললে—কী রে তোর ছোট-সাহেব অত ক্ষেপে গেছে কেন? কী হলো?

মধু তাড়াতাড়ি ক্রফোর্ড সাহেবের ঘরটা দেখে ফিরে আসছে। দ্বিজপদ বললে— দেখলি তো, আজকে দিনটা কেমন নষ্ট হলো?

—কেন?

দ্বিজপদ বললে— সাহেব আর দিন পেলে না বাড়ি যাবার, এদিকে সব পার্টি এসে ফিরে যাচ্ছে, বড় বড় সব পার্টি, মারোয়াড়ী, ভাটিয়া, সিন্ধী, গুজরাটী—

মধু ভেতর ঢুকে খবর দিতেই দীপঙ্কর উঠলো। বললে—আছে ক্রফোর্ড সাহেব?

সোজা ক্রফোর্ড সাহেবের ঘরের দিকে যাচ্ছিল, হঠাৎ টেলিফোন্‌টা বেজে উঠলো। দীপঙ্কর রিসিভারটা তুলে নিয়ে বললে—ইয়েস স্পীকিং—

টেলিফোন এক্সচেঞ্জ থেকে বললে—স্যার আধ ঘন্টা আগে আপনার বাড়ি থেকে টেলিফোন এসেছিল আপনাকে খবর দিতে—

—আমার বাড়ি থেকে? আমার বাড়িতে তো টেলিফোন নেই!

—আপনার পাশের বাড়ি থেকে একটা মেসেজ্ দিতে বলেছেন আপনাকে, আপনার মাদারের খুব সীরিয়াস অসুখ—আপনাকে এখুনি বাড়িতে যেতে বলেছেন একবার!

—মা’র অসুখ!

—আমি তো দু ঘন্টা আগেও বাড়িতে ছিলাম। কতক্ষণ আগে টেলিফোন করেছিল?

–এই প্রায় আধ ঘন্টা আগে!

দীপঙ্কর রিসিভারটা রেখে দিলে। তার হাতটা যেন অবশ হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে।

সকল অধ্যায়

১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১
২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২
৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩
৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪
৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫
৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬
৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭
৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮
৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯
১০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০
১১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১১
১২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১২
১৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৩
১৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৪
১৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৫
১৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৬
১৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৭
১৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৮
১৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৯
২০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২০
২১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২১
২২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২২
২৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৩
২৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৪
২৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৫
২৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৬
২৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৭
২৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৮
২৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৯
৩০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩০
৩১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩১
৩২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩২
৩৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৩
৩৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৪
৩৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৫
৩৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৬
৩৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৭
৩৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৮
৩৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৯
৪০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪০
৪১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪১
৪২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪২
৪৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৩
৪৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৪
৪৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৫
৪৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৬
৪৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৭
৪৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৮
৪৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৯
৫০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫০
৫১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫১
৫২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫২
৫৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৩
৫৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৪
৫৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৫
৫৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৬
৫৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৭
৫৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৮
৫৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৯
৬০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬০
৬১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬১
৬২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬২
৬৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৩
৬৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৪
৬৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৫
৬৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৬
৬৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৭
৬৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৮
৬৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৯
৭০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭০
৭১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭১
৭২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭২
৭৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৩
৭৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৪
৭৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৫
৭৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৬
৭৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৭
৭৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৮
৭৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৯
৮০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮০
৮১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮১
৮২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮২
৮৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৩
৮৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৪
৮৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৫
৮৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৬
৮৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৭
৮৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৮
৮৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৯
৯০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯০
৯১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯১
৯২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯২
৯৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৩
৯৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৪
৯৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৫ উপসংহার
৯৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৬
৯৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৭
৯৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৮
৯৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৯
১০০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০০
১০১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০১
১০২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০২
১০৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০৩
১০৪. নির্ঘণ্ট : কড়ি দিয়ে কিনলাম – ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন