কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৫

বিমল মিত্র

গড়িয়াহাট লেভেল ক্রসিং-এর সামনে অনেকক্ষণ আটকে ছিল মিস্টার ঘোষালের গাড়ি—

ভূষণ মালী গেটটা খুলে দিতেই হুড় হুড় করে গাড়ির দল ছাড়া পেয়ে গেল। এতক্ষণ যেন দম আটকে আসছিল মিস্টার ঘোষালের। অল্ র। এই রেলওয়ে, এই গভর্নমেন্ট্, এই কংগ্রেস, এই মুসলিম লীগ, এই হিন্দু মহাসভা, এই গান্ধী, নেহরু, শ্যামাপ্রসাদ, জিন্না, সমস্ত। এভরিথিং! রন! রটন টু দি কোর!

জগন্নাথ বললে—আর একটুখানি স্যার—

মিস্টার ঘোষাল বললে—কোন্ বাড়িটা?

—ওই যে গোলাপী রং-এর দোতলা বাড়িটা—

লাইন পেরিয়ে গাড়িটা ওপারে যেতেই জগন্নাথ বললে—আমি এখানে নেমে যাই স্যার, আমায় আবার চিনে ফেলবে—

গাড়িটা থামলো। দরজা খুলে জগন্নাথ রাস্তায় নেমে বললে—বাইরে কলিং-বেল আছে, আপনি টিপ্‌লেই চাকরে দরজা খুলে দেবে—

মিস্টার ঘোষাল বললে—তুমি ঠিক জানো তো বাড়িতে কেউ নেই?

—আজ্ঞে না স্যার, আমি কি আপনাকে জেনে-শুনে বিপদে ফেলবো বলতে চান্? আমার নিজের একটা ভয় নেই?

জগন্নাথ চলে গেল। বললে—আমি ওই লেভেল-ক্রসিং-এর কাছে দাঁড়িয়ে থাকবো স্যার—

—ঠিক আছে, আমি একটু পরেই ফিরবো।

গোলাপী রং-এর দোতলা বাড়িটার সামনে গিয়ে মিস্টার ঘোষাল একবার আপাদ- মস্তক চেয়ে দেখে নিলে। তারপর পকেট থেকে কেস্ বার করে চুরোট ধরালে একটা টাকা। তারপর গট্ গট্ করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে বেল্টা টিপে ধরলে।

—কে?

অল্ রট্। এই গভর্নমেন্ট, এই রেলওয়ে, এই কংগ্রেস, এই মুসলিম্‌ লীগ, এই হিন্দু মহাসভা, এই গান্ধী, নেহরু, শ্যামাপ্রসাদ, জিন্না—এভরিথিং। এভরিথিং রন টু দি কোর্।

চাকরটা দরজা খুলেই একজন নতুন চেহারার কোট-প্যান্ট পরা সাহেব দেখে অবাক হয়ে গেছে।

—মিসেস ঘোষ আছে?

—দিদিমণি তো নেই হুজুর, দিল্লি চলে গেছে।

—অন্য দিদিমণি? দি আদার…..

বলেই মিস্টার ঘোষালের খেয়াল হলো ইংরেজী বুঝবে না চাকরটা। বললে আর কে আছে?

চাকরটা বললে—হুজুর, ছোটদিদিমণি আছে—

—আচ্ছা তাঁকে ডেকে দাও—

রঘু তাড়াতাড়ি দৌড়ল। সতী তখনও আয়নার সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে দিয়েছে। সমস্ত আয়নাট ঝাপসা হয়ে গেছে সতীর নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে। হঠাৎ বইরে রঘুর গলা শুনতে পেয়েই বললে—কি রে রঘু?

—আপনাকে একজন ডাকছেন। —কে রে? দীপঙ্করবাবু?

রঘু বললে—আজ্ঞে না ইনি অন্য একজন

—তা আমাকে কেন? বল্ না লক্ষ্মীদি দিল্লি চলে গেছে—

রঘু বললে—বলেছি, তিনি বলছেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান্

—এ তো ভারি মুশকিল হলো দেখছি।

তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বাইরের ঘরে আসতেই মিস্টার ঘোষালকে দেখে হতবাক হলে গেল সতী! মিস্টার ঘোষাল! এখানে! এই সময়ে!

কিন্তু তখনি নিজেকে সামলে নিয়ে হাসিমুখে বললে—এ কি? আপনি?

মিস্টার ঘোষালকে বসতে বলতে হলো না। নিজেই ততক্ষণে বসে পড়েছে একটা চেয়ারের ওপর। চুরোটটা একটু আগেই ধরিয়েছিল, কিন্তু তখন সেটা নিবে গেছে। নিজের মনেই পকেট থেকে দেশলাইটা বার করে দেখলে মিস্টার ঘোষাল। একটাও কাঠি নেই। সামনে সতীর দিকে মুখ তুলে চেয়ে বললে—একটা দেশলাই দিতে পারবে সতী?

সতী চুপ করে দেখছিল। হঠাৎ আবার মিস্টার ঘোষাল এসে পৌঁছুল কেন? এ ঠিকানাই বা পেলে কেমন করে? সতী তাড়াতাড়ি একটা দেশলাই এনে দিলে। দেশলাই দিয়ে চুরুটটা অনেকক্ষণ ধরে মন দিয়ে ধরিয়ে কাঠিটা জানালার বাইরে ছুঁড়ে ফেললে। বেশ গনগনে আগুন ধরে উঠলো চুরোটটার মুখময়। মিস্টার ঘোষালের মুখখানা ধোঁয়ার আড়ালে এক মুহূর্তের জন্যে ঝাপসা কদর্য হয়ে উঠলো।

—দাঁড়িয়ে আছো কেন, বোস?

মিস্টার ঘোষাল বললে—ইউ লুক ভেরি বিউটিফুল—খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তোমাকে—আগের চেয়েও সুন্দর। কিন্তু তুমি তো অবাক হলে না, কেমন করে আমি তোমার অ্যাড্রেস পেলুম?

আবার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল মুখটা। ঝাপ্‌সা, কদর্য।

—দেখ, লাইফ নিয়ে আমি জুয়া খেলতে ভালবাসি নিশ্চয়ই। কিন্তু এক-একজন আছে যারা ডেথ্ নিয়েও জুয়া খেলে, সত্যি কি না বলো?

সতী উত্তর দিলে না।

মিস্টার ঘোষাল বলতে লাগলো দেখ-যখন লন্ডনে ছিলাম তখন কয়েকটা কথা শিখেছিলুম। সেই সময়ে কোন্ একটা বইতে পড়েছিলুম, If Socrates died like a philosopher, Jesus Christ died like a God. তা আমি তো ফিলজফার ও নই, গড় তো নই-ই। আমি একজন ম্যান্ অব দি ওয়ার্লড্, ম্যাটার অব্ ফ্যাক্ট, ম্যান্ আমার সবই চাই, পৃথিবীতে বাঁচতে গেলে আমার অঢেল টাকা চাই, একটা-দুটো নয়, অঢেল। টাকার জন্যে আমি মিথ্যে কথা বলাকেও পাপ বলে মনে করি না। আর শুধু আমি কেন, এ-যুগের কেউ-ই তা মনে করে না।

তারপর একটু থেমে বললে—এই দেখো না, টাকার জন্যেই এত বড় যুদ্ধটা হচ্ছে, আর যুদ্ধ হচ্ছে বলেই লোকের হাতে গাদা-গাদা টাকা আসছে। আর টাকা এলেই টাকা বাড়ে। আর টাকা না হলে পৃথিবীর কিছু উন্নতিও হয় না। টাকা মানে ওয়েলথ্। সেই ওয়েলথ্ বাড়াবার জন্যেই টাকার দরকার! টাকা দিয়ে পৃথিবীর সব ওয়েলথ্ কেনা যায়— হঠাৎ কথা বলতে বলতে মিস্টার ঘোষালের খেয়াল হলো যেন। বললে—এ কি, তুমি বোসছো না! বোস—

সতী তবু বসলো না।

সেদিকে মিস্টার ঘোষাল নজর দিলে না। বলতে লাগলো—এত টাকার কথা বলছি শুনে তুমি হয়ত অবাক হয়ে যাচ্ছো সতী, কিন্তু তার কারণ আছে। তুমি তো একদিন আমাকে দেখেছো, এক-বাড়িতে আমার সঙ্গে থেকেছ। কোথায় ছিলে তুমি আর কোথায় ছিলুম আমি, অথচ একদিন তোমাতে আমাতে দেখা হয়ে গেল। কী কারণে দেখা হয়ে গেল বলো তো?

প্রশ্নটা করলো সতীকে। কিন্তু উত্তর মিস্টার ঘোষালই দিলে। বললে—সেও টাকা। টাকার জন্যে তোমার শাশুড়ী তোমার ওপর অত্যাচার আরম্ভ করলে, তখন তুমি আমার কাছে আশ্রয় চাইলে —

এতক্ষণে সতী প্রতিবাদ করে উঠলো। এই প্রথম। বললে—না, আপনার ভুল কথা—

—ভুল?

সতী বললে—হ্যাঁ ভুল। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইতে যাইনি, আপনিই আমাকে ভুল বুঝিয়ে আপনার প্যালেস-কোর্টে নিয়ে তুলেছিলেন—কিন্তু তার জন্যে আমি আপনার কাছে গ্রেটফুল—

মিস্টার ঘোষাল বললে—গ্রেটফুলনেসের কথাটা থাক্, এখনও যদি তুমি এখানে না উঠে আমার কাছে গিয়ে উঠো তো আমিও গ্রেটফুল হবো। আমি সেই কথাই তো বলতে এসেছি। প্যালেস-কোর্ট থাকতে তুমি এখানে উঠলে কেন? এই ডার্টি ডাস্টবিনের মধ্যে? আমি তো ভাবতেই পারিনি তুমি এখানে আছো। এখানে কি তোমার মত মেয়ে থাকতে পারে?

সতীর মুখের দিকে চেয়ে আবার মিস্টার ঘোষাল বলতে লাগলো—তুমি ভাবছো আমি তোমার ঠিকানা পেলাম কি করে? আসলে সেনই আমাকে তোমার খবরটা দিলে—

—দীপু? দীপঙ্কর দিয়েছে?

—হ্যাঁ, তোমার সামনেই তো সেদিন সেই হপিট্যালে আমাকে চরম ইনসাল্ট, করলে সেন! ভাবলাম সেখানে আর ও নিয়ে কথা-কাটাকাটি করবো না। পরের দিন ডাইরেক্ট আপিসে গেলাম। গিয়ে বললাম- মিসেস ঘোষ কোথায়? আমার কথাতে ভয় পেয়ে গেল ছোক্রা। জানে আমার চারিদিকে কত ইনফ্লুয়েন্স, সঙ্গে সঙ্গে তোমার ঠিকানাটা বলে দিলে—আসলে তো কাউয়ার্ড—

—দীপু বলে দিলে?

মিস্টার ঘোষাল বললে — হ্যাঁ—

—দীপু কোথায়?

মিস্টার ঘোষাল বললে—তার পর এখানে আর তার আসবার সাহসই নেই –হয়ত আর আসবেও না!

সতী অবাক হয়ে গেল। বললে—সত্যি বলছেন আপনি?

—সত্যি না হয় তো আপিসে টেলিফোন করে দেখো। আমি মিথ্যে কথা বলি বটে, কিন্তু তোমার সঙ্গে তো আমার সে সম্পর্ক নয় সতী!

সতী বললে—এ-বাড়িতে টেলিফোন নেই, লক্ষ্মীদি যাবার আগে লাইন ডিস্কানেক্ট করে দিয়ে গেছে—পাশাপাশি পাড়াতেও কারো সঙ্গে আমার পরিচয় নেই—

—যদি আমার কথায় বিশ্বাস হয় তোমার, তাহলে বলি তোমাকে যে, সে আর আসবে না। হি ইজ্‌জ্ অ্যাফ্রেন্ড্ অব মি! আমার পা ধরে সে ক্ষমা চেয়েছে। কাউয়ার্ড তো! বলেছে আর কখনও সে তোমার সঙ্গে দেখা করবে না। আমি জানি তোমার আমার দু’জনের মধ্যে সে ছিল একটা হিচ্—

—কিন্তু ….

—কিন্তু কিছুই নয়। সে মনে করেছিল আমি অ্যারেস্টেড হয়ে গেছি, এবার আমার কভিশন্ হয়ে যাবে। তখন সে তোমাকে নিয়ে এখানে থাকবে। এই ছিল তার প্ল্যান্। বাট্ ম্যান্ প্রোপোজেস্ এন্ড ঘোষাল ডিসপোজেস—! আমার ফ্রেন্ডশিপ আছে পুলিস কমিশনারের সঙ্গে, স্যার জন্ হারবার্টের সঙ্গে, চীফ মিনিস্টার ফজ্জুল হকের সঙ্গে— আমার কভিশন্ অত সহজ নয়—! আমাকে কেউ কনভিক্ট করতে পারবে না। সেই কথাটাই সেনকে আমি বুঝিয়ে দিলাম—

—কিন্তু তাহলে দীপু আর আসবে না?

—তুমিই বলো না, এখানে সে এ ক’দিন এসেছে?

সতী বললে—আমি তো দীপুর জন্যই বসে আছি। অনেক কাজ আছে তার সঙ্গে আমার—

—কী কাজ?

সতী বললে—আমার এখানে থাকা-খাওয়ার একটা খরচ তো লাগবে। আমার বাবার সাকসেসন সার্টিফিকেট নিতে হবে। বাবার ব্যাঙ্কে যে টাকা আছে তাও তুলতে হবে। আমার বাবা তো মারা গেছেন—

মিস্টার ঘোষাল মুখে একটু সহানুভূতি জানালে। তারপর বললে—কিন্তু তোমার টাকার দরকার, তা আমাকে বলোনি কেন?

বলেই পকেট থেকে এক তাড়া নোট বার করে এগিয়ে দিলে। বললে—এইগুলো রাখো তুমি তোমার কাছে, কী ইট্‌—

সতী হাত বাড়াল না। বললে—থাক্—

—না না, থাকবে কেন? কীপ্ ইট্‌ উইথ্ ইউ,—আমার কাছে তোমার লজ্জা করবার দরকার নেই। যখনি তোমার টাকার দরকার হবে আমার কাছে বলতে লজ্জা কোর না। আর তা ছাড়া, তোমার ফ্ল্যাটা তো এখনও রেখেছি আমি। তুমি সেখানেই চলো না। চাকরি করতে না-চাও কোর না, দ্যাট্স ওয়েল এন্ড গুড, তোমার চাকরি করার দরকারও হবে না। অন্তত যদ্দিন আমি আছি—

সতী বললে—চাকরি আমি আর কোরবো না—

—ভালোই তো, চাকরি করার দরকার কী তোমার। আমি তো আছি! আসলে আমার তো চাকরি রইলই। যারা ভাবছে আমার জেল হয়ে যাবে, আমাকে যারা ভিলিফাই করে বেড়াচ্ছে, তারা যা-ই ভাবুক, আমি তো জানি আমার গ্রাউন্ড খুব সিকিওর! চলো, তুমি আমার কাছে চলো—

—কিন্তু আপনি জানেন ঠিক যে দীপঙ্কর আর আসবে না?

–ডেড সিওর। এর পরে আর তোমার কাছে আসতে তার সাহস হবে না।

—কিন্তু দীপু না এলে যে আমার খুব ক্ষতি হবে!

মিস্টার ঘোষাল বললে—কিন্তু আমি থাকলে তোমার কীসের ক্ষতি! তোমার সাক্সেস সার্টিফিকেট্ আমি জোগাড় করে দেব—আর টাকার জন্যে আমি তো আছিই! আমার কেসটা মিটে গেলেই আমি আবার ওই ডি-টি-এসের চেয়ারে গিয়ে বসবো। তখন আমি সেনকে দেখে নেব। আই শ্যাল ট্র্যান্স্টার হিম্। মৈমনসিং-এ ট্র্যান্সফার করে দেব—তুমি দেখে নিও

সতী তখনও নিজের মনে ভাবছিল। কিছুতেই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। দীপঙ্কর তার ঠিকানা জানিয়েছে! এই জন্যেই সে এল না। অথচ তার ভরসাতেই তো এখানে এসেছে সে। এই ক’দিনের প্রতীক্ষার পর এই কথা শুনতে হলো শেষ পর্যন্ত! এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেন ক্লান্তি এসেছিল তার। এবারে বসে পড়লো একটা চেয়ারে।

মিস্টার ঘোষাল চেয়ারটা এবার আরো সামনের দিকে টেনে নিলে। বললে—তুমি ভাবছো আমি মিথ্যে কথা বলছি?

সতী বললে—না না, তা নয়—

—তা হলে?

সতী বললে—এমন হবে আমি জানতুম না—

মিস্টার ঘোষাল বললে—দি ওয়ার্লড্ ইজ্ এ কুইয়ার প্লেস্ সতী। আগে থেকে কিছুই ভাবা যায় না। এই দেখ না, আমাকেও লোকে ভাবছে আমি ঘুষ খাই, আমি মিস্ মাইকেলকে…..

বলতে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেল মিস্টার ঘোষাল।

তারপর হঠাৎ সতীর হাতটা ধরে ফেললে। বললে—সতী—

সতী হাতটা টেনে নিচ্ছিল। মিস্টার ঘোষাল চেপে ধরলে জোরে। বললে—প্লিজ্, প্লিজ্‌ ডোন্ট্—

—ছাড়ুন—

মিস্টার ঘোষাল তবু জোরে চেপে ধরে রাখলে। বললে—তুমি সেখানে না যাও, আমি আসবো তোমার এখানে, প্লিজ্, আপত্তি কোর না—

—আপনি হাত ছাড়ুন, নইলে চেঁচিয়ে উঠবো আমি—

মিস্টার ঘোষাল বললে—সবটা না-শুনেই তুমি আমার ওপর রাগ করছো, আগে শোন আমি কী জন্যে এসেছি—

—বলুন, কী জন্যে?

মিস্টার ঘোষাল এতক্ষণে হাত ছেড়ে দিলে। তারপর চুরোটের ধোঁয়া ছেড়ে বললে—তোমার এখানে কোনও লোক নেই, চা করে দিত? আই ফীল ফর্ টী—

সতী বললে—একটা চাকর আছে, সে-ই রান্না করে, কিন্তু তার এখন চা করবার সময় নেই—

—দ্যা অল্ রাইট্, কথাটা আমি তোমাকে বলতেই এসেছি, তুমি জানো আমার অনেক এনিমি, অনেক শত্রু আমার। আমার জীবনে এইটেই এক ট্র্যাজিডি। আমি তোমার মত প্রচুর ফ্রন্ড ও পেয়েছি, আবার সেন-এর মত প্রচুর এনিমিও পেয়েছি। আমি জীবন আরম্ভ করেছি খুব পুওরভাবে। কিন্তু এখন আমি একজন রীচ ম্যান্। মোর রীচ্ দ্যান্ ইউ ক্যান্ বিলিভ। আমি মাস্টার অব ল্যাপ্স্। কিন্তু বিলিভ্ মি, আমার পভার্টিরও তুলনা নেই, নো এন্ড অব্ ইট্‌—

—কেন?

মিস্টার ঘোষাল আবার সতীর হাতটা ধরতে এল। সতী তাড়াতাড়ি হাতটা সরিয়ে নিলে।

মিস্টার ঘোষাল কাঁদো কাঁদো হয়ে বললে—আমি এখন একজন পুওরেস্ট্ বেগার, বেগারেরও অধম এখন—

—সে কী?

—তোমাকে বলেই বলছি। পৃথিবীর কেউ-ই জানে না। আমার ফ্রেন্ড্ ফজলুল হক্- সাহেবও জানে না। তাদের কাছে একদিন বড় হয়ে মিশেছি, এখন এই ছোট অবস্থায় আর তাদের কাছে যেতেও ইচ্ছে হয় না। তুমি সেই মিস্ মাইকেলের মার্ডারের কেটা শুনেছিলে? এতদিন কেউ জানতো না। কিন্তু নতুন করে আবার কেসটা রিভাইভ্ড্ হয়েছে—

সতীরও কেমন করুণা হতে লাগলো মিস্টার ঘোষালের মুখের চেহারা দেখে। লোকটা যেন সত্যিই বড় বিপদে পড়েছে।

—তুমি বুঝতে পারছো, যদি আমার এগেস্টে চার্জেস্ প্রমাণ হয়, তো আমার কী হবে?

সতী বললে—কী হবে?

—ফাঁসি!

সতীর বুকটা ধড়াস করে উঠলো কথাটা শুনে! ফাঁসি!

—হ্যাঁ, হিওর ডেথ্ বাই হ্যাঙ্গিং—

—তাহলে কী ব্যবস্থা করেছেন আপনি?

মিস্টার ঘোষালের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। বললে—আমি তো বললাম, বাইরে থেকে লোকে যা-ই বলুক, আমি আজ পুওরেস্ট্ অব্ দি পুওর! আমার টোটাল ব্যাঙ্ক-ব্যালান্স্ ছিল সেভেন ল্যা–আজ আমার ফর্টি থাউজেন্ড্ লোন হয়ে গেছে। কেন শুনবে?

—কেন?

মিস্টার ঘোষাল বললে—যে ইন্‌ভেস্টিগেটিং পুলিশ অফিসার একোয়ারী করছিল তাকে ঘুষ দিতে হয়েছে। শুধু তাকে নয়, তার দলের সকলকে। মায় ডেপুটি সুপারকে পর্যন্ত। আমার কাছে ব্যাঙ্ক-ব্যালান্স্ এখন নীল। ব্যাঙ্কে আমার কোনও অ্যাকাউন্টস্ই নেই। প্রভিডেন্ট ফড্ থেকে সিক্সটি সিক্স থাউজেন্ড রূপীজ লোন্ নিয়েছি—এখন আমি পপার! তোমার অন্ততঃ শুনলে দুঃখ হবে নিশ্চয়ই, আমি এখন একজন বেগার, আই অ্যাম্ মোর রেচেড় দ্যান এ বেগার—

সতীরও সমবেদনা হতে লাগলো মিস্টর ঘোষালের অবস্থার কথা শুনে!

—আমি জানি না, আমি তোমার কোনওদিন কোনও উপকার করেছি কি না। কিন্তু থিক্ অব্ দোজ্‌ ডেজ—তোমারও একদিন ঠিক আমার মত বিপদ ছিল, সেদিন যদি আমি তোমার কোনও উপকারে এসে থাকি তো আমার আজকের বিপদটা তুমি ফীল করতে পারবে—

সতী সহানুভূতি দেখিয়ে বললে—। আমি বুঝতে পারছি মিস্টার ঘোষাল, খুব বুঝতে পারছি—

মিস্টার ঘোষালের গলাটা আরো করুণ হয়ে এল। বললে-তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে সতী, ক্রিমিন্যাল কেস্ কী ডেঞ্জারাস জিনিস। আমার ফাঁসি হওয়া মানে আমার এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া। চিরকালের মত চলে যাওয়া, আর কোনও দিন তোমাকে দেখতে পাবো না, তোমার কাছে আসতে পারবো না! আমি মরে গেলে কোনও লোকসান নেই, কিন্তু তোমার সঙ্গে জীবনে দেখা হবে না, এর চেয়ে বড় লস্ আর আমার কিছু নেই—

সতী বললে—সে কথা এখন থাক। কিন্তু ওরা কী বলছে?

—কারা?

—ওই ইনভেস্টিগেটিং অফিসার?

—ওরা আর কী বলবে! ওরা তো এক নম্বরের চী। একটা মার্ডার কেস্ পেলে ওরা তো লাল হয়ে যায়। ওই তো ওরা চায়। আমার সাত লাখ টাকা, আমার লাইফ- লং জমানো টাকাগুলো ওদের দিতে হলো ক্যাশে, ভাবতে পারো। হাউ পপার আই অ্যাম্‌

সতী বললে—টাকা তো নিলে, কিন্তু যদি কাজ না হয়?—

—কাজ না-ও হতে পারে। তাই তো আমি তোমার কাছে এসেছি। এই বিপদের দিনে তোমার কাছে ছাড়া আর কার কাছে যাবো? হু এলস্ আই হ্যাভ্ গট্?

বলে মিস্টার ঘোষাল খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইল। চুরোট টানতেও যেন ভুলে গেল মিস্টার ঘোষাল।

সতী হঠাৎ বললে-আমি আর আপনার কী সাহায্য করতে পারি, বুঝতে পারছি না। আচ্ছা, আপনি একদিন জড়োয়ার হার একটা দিয়েছিলেন আমাকে, দশ হাজার টাকার, সেটা আমার প্যালেস-কোর্টের ফ্ল্যাটেই রয়েছে—সেই বেচে বরং কিছু ক্যাশ্ করে নিন—

—না না না, বাই নো মীন্‌স্‌, সে কিছুতেই হতে পারে না—

বলে অস্বীকারের ভঙ্গীতে মিস্টার ঘোষাল হাত নাড়তে লাগলো। বললে—তুমি জানো না সতী, তুমি জানলে আর এ-কথা বলতে পারতে না। আমার কাছে তুমি টাকার চেয়েও বড়, আমার কাছে তুমি আমার নিজের লাইফের চেয়েও বড়, তুমি জানো না, আমি আমার লাইফ দিয়ে তোমাকে প্লীজ করতে যদি না পারি, আমার ডেথ্ দিয়েও প্লীজ্‌ করতে প্রস্তুত—

—ও-সব কথা থাক্, এখন করবেন কী, তাই বলুন?

মিস্টার ঘোষাল আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে বসলো এবার। গলাটা আরো নিচু করলে। বললে—একমাত্র তুমিই আমাকে বাঁচাতে পারো এই কেসে—

সতীও অবাক হয়ে গেল। বললে—আমি? আমি বাঁচাতে পারি? কী ভাবে?

—হ্যা শোন তবে, আমার এগেস্টে দুটো কেস্। একটা ঘুষ নেওয়ার জন্যে, আর একটা মার্ডার চার্জে। তোমাকে স্পেশাল-ট্রাইবুনালে সাক্ষী দিতে হবে আমার ফেবারে—

—কী বলতে হবে বলুন? আমি তো জীবনে কখনও সাক্ষী দিইনি—

—সে আমি আর আমার ল’ইয়ার সব তোমায় শিখিয়ে দেবে। তুমি বলবে যে আমাকে তুমি কখনও ঘুষ নিতে দেখনি। আর মার্ডার চার্জের কেসেই তুমি আমাকে বেশি সাহায্য করতে পারো। তোমার হাতেই আমার লাইফ্ নির্ভর করছে—

—কেমন করে?

মিস্টার ঘোষাল বললে—একটা চিঠি লিখে দিয়ে। আমার নামে একটা চিঠি লিখে দিয়ে—

— চিঠি?

—হ্যাঁ, একটা চিঠি তুমি আমার নামে ব্যাক্ ডেট্‌ দিয়ে লিখে দেবে।

বলে পকেট থেকে একটা কাগজ বার করলে মিস্টার ঘোষাল। একটা ভাঁজ-করা কাগজ। কাগজের ভাঁজ খুলে সামনে এগিয়ে ধরলে। বললে—এইখানে একটু তুমি নিজের হাতে লিখে দাও—

—কী লিখবো?

মিস্টার ঘোষাল বললে-লিখে দাও, যেন তুমি আমাকে চিঠি লিখছো, তুমি আজ আপিস থেকে সকাল-সকাল বেরিয়ে সোজা আমাদের প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের বাড়িতে চলে আসবে। আজ এখানেই চা খাবে। তারপর রাত্রের খাওয়াও এখানে সারবে। আর তারপর সারারাত এখানেই থাকবে—। আবার ভোর হবার আগেই তোমাকে ছেড়ে দেব—এইটুকু কথা দয়া করে লিখে দাও সতী—

বলে মিস্টার ঘোষাল কাগজটা আবার সতীর সামনে বাড়িয়ে ধরলে।

বললে—প্লীজ সতী, আমার লাইফের জন্যে অন্তত এইটুকু করতে তুমি হেজিটেট্ করবে না আশা করি—

—কিন্তু ও-কথা লিখলে আপনার কী সুবিধে হবে বুঝতে পারছি না।

মিস্টার ঘোষাল বললে—সুবিধে হবে এই যে, যে-রাত্রে মিস্ মাইকেল খুন হয়, সে- রাত্রে আমি আপিসের পর তোমার সঙ্গে কাটিয়েছিলাম, সমস্ত রাত, এইটেই প্রমাণ হবে। আমার এগেস্টে সমস্ত চার্জ নালিফায়েড হয়ে যাবে। আমি বেনিফিট-অব্-ডাউট্ পাবো—

সতী বললে—কিন্তু আসলে তো তা মিথ্যে কথা—

—তা হলেই বা মিথ্যে, আমার লাইফের চেয়ে তোমার ট্রটাই বড় হলো! আর আমি তো এ-চিঠি কোথাও প্রোডিউস করবো না, এক কোর্ট ছাড়া। কোর্টে গিয়ে এ-চিঠি তোমাকে দেখানো হলে তুমি বলবে, এ তোমারই হাতের লেখা—। আমার অ্যাডভোকেটও বলবে যে মার্ডারের দিন আমি তোমার সঙ্গে ছিলুম–কেস্ তখুনি ফেঁসে যাবে। আমাকে আমার অ্যাডভোকেট্ এই পরামর্শই দিয়েছে—

সতীর কেমন ভয় করতে লাগলো! একজনের জীবন। সেই জীবনের চেয়ে কী তার সত্যটাই বড় হলো! তার জীবনে আর আছে কী? কার কাছেই বা আশা করবার কী আছে? এ-জীবনের মত সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা তো তার শেষ হয়ে গেছে। এইটুকু উপকার সে করতে পারবে না একটা মানুষের! প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের জীবন তার শেষ হয়ে গেছে। সে তার জীবনের এক বিগত পরিচ্ছেদ। বাবাও আর এ-পৃথিবীতে নেই। দীপঙ্করও আর আসবে না। তবে, এ-উপকারটুকু করতে কেন সে দ্বিধা করছে? কেন তার এত সঙ্কোচ?

মিস্টার ঘোষালের চোখ দু’টো বড় মিনতি-করুণ! একদিন এই লোকটার কাছে সে তো একটা উপকার পেয়েছিল। তারও তো একটা প্রতিদান আছে। যত ঘৃণাই থাক, তার জীবন আজ বিপন্ন। তার চাকরি গেছে, সম্মান গেছে, সম্ভ্রম গেছে, অর্থ গেছে। জীবনটুকুই শুধু বাকি আছে এখনও। সেইটুকুও আজ যাবার দাখিল।

সতী মিস্টার ঘোষালের মুখের দিকে আবার চেয়ে দেখলে।

মিস্টার ঘোষাল বললে—লিখবে?

—কিন্তু আমার কোনও ক্ষতি হবে না তো এতে?

—তোমার ক্ষতি হবে কেন সতী? তোমার ক্ষতি হবে মনে করলে কি তোমাকে আমি এ-কাজ করতে বলতুম? আফ্‌টার অল্, আমি তোমার একজন আর্ডেন্ট ওয়েল-উইশার। তোমার ক্ষতি আমারই ক্ষতি! তোমার রেপুটেশনে স্পট্ লাগলে তো আমারও রেপুটেশনে স্পট্ লাগবে! তুমি এতদিনেও বোঝনি? তুমি বুঝতে পারছো না কতখানি বিপদে পড়ে আমি তোমার কাছে এসেছি?

সতী সোজা হয়ে বসলো এবার। বললে—দিন, কী লিখতে হবে বলুন—

মিস্টার ঘোষাল নিজের কলমটা এগিয়ে দিলে। বললে—লেখ—

সতী মিস্টার ঘোষালের মুখের দিকে চাইলে। বললে—কী লিখতে হবে বলুন, আমি লিখে দিচ্ছি—

মিস্টার ঘোষাল বললে—লেখ—কাল তুমি অনেক দেরি করে ফেলেছিলে, আজ আপিস থেকে সকাল-সকাল বেরিয়ে সোজা আমাদের প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের বাড়িতে চলে আসবে। এখানেই চা খাবে। তোমাকে কেউ দেখতে পাবে না এখানে। তারপর রাত্রের খাওয়াও সারবে। আর তারপর সারারাত এখানেই থাকবে। প্যালেস-কোর্টে ফিরে যেতে পারবে না। আবার ভোর হবার আগেই তোমাকে ছেড়ে দেব—

মিস্টার ঘোষাল একটু-একটু করে বলে যেতে লাগলো আর সতী লিখতে লাগলো।

সতী বললে—তারপর?

তারপর নিচেয় তোমার নাম আর প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের ঠিকানা বসিয়ে দাও–

—কোন্ তারিখ বসাবো?

মিস্টার ঘোষাল বললে—আচ্ছা, তারিখটা আমিই বসিয়ে দেব। যে-তারিখে মিস্ মাইকেল খুন হয়েছিল, সেই তারিখটা নির্ভুল করে বসিয়ে দেব—তার জন্যে কিছু ভেবো না—

সতী নিজের নাম লিখলে, ঠিকানা দিলে প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের। তারপর মিস্টার ঘোষালের দিকে এগিয়ে দিলে। চিঠিখানা নিয়ে একবার পড়ে দেখে তারপর ভাঁজ করে পকেটে রেখে দিলে। বললে—তোমাকে আমি কী করে যে আমার গ্রেটফুলনেস্ জানাবো আমি বুঝতে পারছি না সতী। আমি আজীবন তোমার কেনা হয়ে রইলুম—

বলে পকেটে হাত দিয়ে ভাল করে দেখলে ঠিক আছে কি না। তারপর বললে—আর ওই স্পেশ্যাল ট্রাইব্যুনালের কেসটার জন্যে আমি ভাবি না, টাকাটা তো আমার হাতে পায়নি। ম্যাজিস্ট্রেট ঘরে ঢোকবার আগেই আমি টাকাটা ছুঁড়ে ফ্লোরের ওপর ফেলে দিয়েছিলুম। যদি দরকার হয়, তোমাকে বড়জোর একদিন হয়ত সাক্ষী দিতে হবে—তা দিতে পারবে না?

সতী বললে—দেব—

—তাহলে আমি এখন আসি। আমাকে আবার এখুনি অ্যাডভোকেটের কাছে যেতে হবে। আজকাল এইসব নিয়েই খুব ঘোরাঘুরি করতে হচ্ছে। ফ্রাইটফুলি বিজি—

সতীও দাঁড়িয়ে উঠলো। মিস্টার ঘোষাল চলে যাবার উপক্রম করতেই সতী বললে—আমার কোনও ক্ষতি হবে না তো মিস্টার ঘোষাল?

—না-না, এ তুমি ভাবতে পারলে কেমন করে? আমি তোমার ক্ষতি করতে পারি? তোমার সঙ্গে কি আমার সেই সম্পর্ক? বলে মিস্টার ঘোষাল আর দাঁড়াল না। বাইরে ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়ে ছিল, তাইতেই গিয়ে উঠলো।

সকল অধ্যায়

১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১
২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২
৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩
৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪
৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫
৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬
৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭
৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮
৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯
১০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০
১১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১১
১২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১২
১৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৩
১৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৪
১৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৫
১৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৬
১৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৭
১৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৮
১৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৯
২০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২০
২১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২১
২২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২২
২৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৩
২৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৪
২৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৫
২৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৬
২৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৭
২৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৮
২৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৯
৩০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩০
৩১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩১
৩২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩২
৩৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৩
৩৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৪
৩৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৫
৩৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৬
৩৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৭
৩৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৮
৩৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৯
৪০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪০
৪১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪১
৪২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪২
৪৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৩
৪৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৪
৪৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৫
৪৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৬
৪৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৭
৪৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৮
৪৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৯
৫০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫০
৫১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫১
৫২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫২
৫৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৩
৫৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৪
৫৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৫
৫৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৬
৫৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৭
৫৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৮
৫৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৯
৬০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬০
৬১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬১
৬২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬২
৬৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৩
৬৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৪
৬৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৫
৬৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৬
৬৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৭
৬৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৮
৬৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৯
৭০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭০
৭১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭১
৭২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭২
৭৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৩
৭৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৪
৭৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৫
৭৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৬
৭৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৭
৭৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৮
৭৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৯
৮০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮০
৮১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮১
৮২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮২
৮৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৩
৮৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৪
৮৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৫
৮৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৬
৮৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৭
৮৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৮
৮৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৯
৯০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯০
৯১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯১
৯২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯২
৯৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৩
৯৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৪
৯৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৫ উপসংহার
৯৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৬
৯৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৭
৯৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৮
৯৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৯
১০০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০০
১০১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০১
১০২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০২
১০৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০৩
১০৪. নির্ঘণ্ট : কড়ি দিয়ে কিনলাম – ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন