কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩০

বিমল মিত্র

রেলের হসপিট্যাল। দীপঙ্কর আগে নিজে নেমে বললে—আসুন —

সনাতনবাবু নেমে দাঁড়িয়ে বললেন—আমি বড় চঞ্চল হয়ে উঠেছি দীপঙ্কর-বাবু—

–কেন? চঞ্চল হচ্ছেন কেন? এমন কিছু তো হয়নি সতীর, এমনি আনকসাস হয়ে পড়েছে।

সনাতনবাবু বললেন—না সেবার ডাক্তার বলেছিলেন কিনা, নার্ভটা তাঁর খুব শ্যাটার্ড হয়ে গেছে। কখনও শান্তি তো পাননি —

দীপঙ্কর বললে—সুখ দেওয়া যখন আপনার ক্ষমতার বাইরে, তখন শান্তি তো আপনি একটা দিতে পারেন সতীকে—

সনাতনবাবু বললেন—হ্যাঁ, আমি শান্তি তো দিতেই পারি, আমার সাধ্যে যেটুকু কুলোয়, সেটুকু শান্তি তো আমি দিতেই পারি-সেটাও তো আমার কর্তব্য!

তারপর খুঁজে খুঁজে কেবিন নম্বর বার করে দীপঙ্কর বললে—এই কেবিনেই আছে সতী—

সনাতনবাবু বললেন—চলুন, আপনিও চলুন ভেতরে—

দুজনে একসঙ্গেই কেবিনে ঢুকলো। দীপঙ্কর দেখলে। সনাতনবাবু ও দেখলেন। মিস্টার ঘোষাল সতীর মাথার কাছে বসে তার মাথার কোঁকড়ানো চুলগুলোর ওপর হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর সতী চেয়ে আছে তার মুখের দিকে।

মনে আছে সেদিন সমস্ত দিনটা দীপঙ্করের কেটেছিল একটা অভূতপূর্ব মগ্ন- চৈতন্যের মধ্যে দিয়ে। জীবনের কি এইটেই চরম অর্থ? এই ভেতর থেকে বাইরে আসা? না কি বাইরে থেকে ভেতরে আসাটাই আসল! জীবন থেকে যত বিচ্ছিন্ন হতে চেয়েছিল দীপঙ্কর, ততই যেন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছিল সে।

পরে সনাতনবাবু বলেছিলেন—যত পুষ্টি হবে ফলের, ততই সে আলগা হবে বোঁটায়—

কিন্তু তাই-ই যদি হবে, তাহলে কেন মানুষ সমাজে আধিপত্য করতে চায়? কেন লক্ষ্মীকে সিন্দুকে পুরে মানুষ সৌভাগ্যকে চিরস্থায়ী করতে চায়? কেন শত্রু জয় করে অমিতবীর্য হতে চায় মানুষ? কেন মানুষ পদ আর পদবী পেতে চায় সব আত্ম-সম্মান বিসর্জন দিয়ে?

সনাতনবাবু বলেছিলেন-যারা তা চায়, তারা নগদ-বিদায়টাকে যে বড় করে দেখে দীপঙ্করবাবু, কিন্তু যা হাতের মুঠোয় পাওয়া গেল তাতে তো তাদের সুখ নেই—তখন বলে আরো চাই—

—তাহলে কীসে সুখ?

হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় সনাতনবাবু বলেছিলেন—আগে বলুন কোন সুখটা চান? দেহের, না মনের, না আত্মার?

কোথা থেকে কোথায় কথা গড়িয়ে গেল, দীপঙ্কর বুঝতে পারলে না। এতদিন এত মানুষের মুখোমুখি হয়েছে দীপঙ্কর, কিন্তু এমন অদ্ভুত মানুষের সংস্রবে কখনও আসেনি। সেই আশুতোষ কলেজের অমলবাবু, সেই প্রাণমথবাবু, কেউই এমন করে এই দিক থেকে জীবনকে দেখেননি। সনাতনবাবু দীপঙ্করের কাছে শুধু যেন ব্যক্তিই নয়, যেন একটা তত্ত্ব।

সেই সেদিনকার হাসপাতালের ঘটনাতেই সনাতনবাবু যেন আরো রহস্যময় হয়ে উঠলেন। এমন হবে তা তো ভাবতে পারেনি দীপঙ্কর।

দীপঙ্কর ভেতরে ঢুকতেই মিস্টার ঘোষাল একটু ফণা তুলে উঠেছিল। হয়ত কিছু কটু কথা শোনাতো দীপঙ্করকে। কিন্তু সনাতনবাবুকে দেখে যেন একটু সঙ্কুচিত হয়ে উঠেছিল। হয়ত সন্দেহও করেছিল।

পরিচয়টা দীপঙ্করই করিয়ে দিলে। বললে—ইনিই মিস্টার ঘোষ, মিসেস ঘোষের হাজব্যান্ড—মিসেস ঘোষের অসুখের খবর শুনে দেখতে এসেছেন—

তাড়াতাড়ি মিস্টার ঘোষাল সনাতনবাবুর একটা হাত নিজের হাতে টেনে নিলেন। বললেন—ভারি খুশি হলাম আপনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে মিস্টার ঘোষ, এই দেখুন না, মিসেস ঘোষের অসুখে আমিও আপিস থেকে আজ বাড়ি যেতে পারিনি—আপনি এলেন, আমি একটু নিশ্চিন্ত হলুম—এখন আপনি দেখুন আমি যাই—

সতী এতক্ষণ কথাগুলো শুনছিল। বললে—না—তুমি যেও না—

মিস্টার ঘোষাল, দীপঙ্কর, এমন কি সনাতনবাবু পর্যন্ত সতীর এই এতটুকু কথাতে যেন স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। কিন্তু সে এক মুহূর্তের জন্যে। তারপরই সনাতনবাবু সতীর দিকে এগিয়ে গেলেন। বললেন—কেমন আছো সতী, তুমি? তোমার কী হয়েছে? হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলেই বা কেন? তুমি তো জানো তোমার শরীর দুর্বল, আপিসের পরিশ্রম তোমার সহ্য হবে না—

সতী চুপ করে চেয়ে রইল সনাতনবাবুর দিকে। কিছু কথা বেরোল না তার মুখ দিয়ে।

সতীর মাথার চুলের ওপর হাত বোলাতে লাগলেন সনাতনবাবু। তারপর নিচু হয়ে বসলেন মাথার কাছে। বললেন—নিজের ওপর আর কত অত্যাচার করবে তুমি বলো তো?

সনাতনবাবু যেন ভুলে গেছেন, ঘরে আরো অনেক লোক আছে। সারাদিন মানুষটার খাওয়া হয়নি, বিশ্রাম হয়নি। যে মানুষ সব সহ্য করেন মুখ বুজে, সেই মানুষটা বুঝি আজ আরো অনেক সহ্য করবার জন্যেই এখানে এসেছেন। মনে হলো যেন আরো অনেক ব্যথার আঘাত সইবার পণ নিয়েই তিনি আজ তৈরি করেছেন নিজেকে।

—অনেক তুমি সহ্য করেছ সতী, অনেক তুমি আঘাতও করেছ। যত আঘাত তুমি নিজে পেয়েছ, তার অনেক বেশী আঘাত তুমি দিতে চেয়েছ। কিন্তু এখন তুমি তো বুঝলে আঘাত করতে চাইলেই আঘাত করা যায় না—

সতী তবু কিছু কথা বললে না। একদৃষ্টে সনাতনবাবুর দিকে চেয়ে রইল।

সনাতনবাবু বলতে লাগলেন—তুমি আমার স্ত্রী, আবার আমাদের বাড়ির বউও বটে, তোমার লজ্জা যে আমারও লজ্জা, আমাদের বাড়িরও লজ্জা। তোমার অপমান যে আমারও অপমান, আমাদের বাড়িরও অপমান সতী? তোমাকে বাদ দিয়ে তো আমার নিজের আলাদা অস্তিত্বের কোনও মূল্য নেই!

এতক্ষণে সতী কথা বললে—আর তোমার মা?

সনাতনবাবু বললেন-মা-মণির কথা বলছো? তুমি যেমন আমার স্ত্রী, মা-মণি তেমনি যে আমার মা। মা যদি তোমার মত বাড়ি ত্যাগ করে চলে যেতো তো, মা’কেও আমি এমনি করেই বলতাম! সংসারে বাস করতে গেলে কাউকেই যে ছাড়া যায় না! তুমি আমাকে ভুল বুঝো না সতী!

সতী বললে—তুমি কি এই কথা বলতেই এখানে এসেছ?

সনাতনবাবু বললেন—তোমার অসুখের কথা শুনেই এসেছি, কোনও বিশেষ কথা বলতে আসিনি! আর তোমার বিপদের দিনে যদি না আসি তো আর কখন আসবো, বলো?

সতী বললে—আমাকে দেখতেই যদি এসে থাকো তো আমাকে দেখা তো হলো, এবার যাও—

সনাতনবাবু বললেন—কিন্তু তোমাকে শুধু তো দেখতে আসিনি, তোমা েনিয়ে যাবো বলেই যে এসেছিলাম—

—কোথায় নিয়ে যাবে?

মিস্টার ঘোষাল এতক্ষণে কথা কইলে। বললে-এর পরও আপনি আপনার বাড়িতে নিয়ে যাবার কথা বলতে পারছেন মিস্টার ঘোষ? এত ঘটনার পরেও মিসেস ঘোষ আপনাদের বাড়িতে যেতে রাজী হবেন?

দীপঙ্কর হঠাৎ বাধা দিলে। বললে—মিস্টার ঘোষাল, চলুন, আমরা দুজনে বাইরে যাই—মনে হয় এখন এখানে আমাদের আর থাকা উচিত নয়—

—হোয়াই? এখানে আমাদের থাকতে দোষ কী?

সনাতনবাবু কিন্তু সে-সব কথায় কান না দিয়ে তেমনি করেই বলতে লাগলেন— তোমার চোখে হয়ত আমি অন্যায় করেছি সতী, তোমার চোখে আমি হয়ত দোষীই, কিন্তু সুস্থ মন নিয়ে কখনও যদি ভেবে দেখো তো দেখবে আমার কোনও অন্যায়ই হয়নি, আমি কোনও দোষই করিনি—আমি নিরুপায়—

একটু থেমে সতীর মুখের কাছে মুখ এনে আবার বলতে লাগলেন—মানুষকে জীবনে একাধারে অনেকগুলো কর্তব্য পালন করতে হয়? কখনও সে ছেলে, কখনও সে স্বামী, আবার কখনও সে গৃহকর্তা, আবার কখনও সামাজিক মানুষ। এক সঙ্গে এতগুলো কর্তব্য পালন করতে গিয়ে সকলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে তার ভুলও হয় আবার কখনও ভ্রান্তিও হয়, কিন্তু তার জন্যে কি এতখানি শাস্তি দিতে হয় তাকে?

—শাস্তি?

সতী যেন নিজের মনেই নীরবে নিজের প্রতিবাদ করে উঠলো। বললে—শাস্তি আবার আমি তোমাদের কখন দিলাম? সব শাস্তি তো তোমরাই আমার মাথায় তুলে দিলে!

সনাতনবাবু বললেন—আর সেই জন্যেই কি এতখানি শাস্তি নিজের মাথায় তুলে নিতে হয়?

সতী বললে—আমি যদি এ-শাস্তি নিজের মাথায় তুলে নিয়েই থাকি, তাতে তোমাদের রাতের ঘুমের তো কিছু ব্যাঘাত হয়নি, তাতে তোমাদের বাড়ির দেয়াল থেকে আধখানা ইঁটও তো কই খসে পড়েনি—তা যদি পড়তো তো আজ আমার এই দুর্দশা হয়! তোমরা যদি আমার কষ্টের কথা এতটুকু ভাবতে তো আমিই কি আজ তোমাকে ছেড়ে এই রসাতলে এসে নামি? তুমি যদি আমার কথা একটু বুঝতে তো আমি এমন করে এই নরকে এসে ডুবি?

সনাতনবাবু সতীর মাথায় আরো জোরে জোরে হাত বুলোতে লাগলেন। দীপঙ্করের মনে হলো সনাতনবাবু যেন পারলে সতীর মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিতেন। একদৃষ্টে তিনি চেয়ে আছেন সতীর মুখের দিকে। আশ্চর্য এমন স্বামীকেও সতী ভুল বুঝতে পারলো! এমন স্বামীকে ছেড়েও কোনও স্ত্রী বাড়ি থেকে চলে আসতে পারে? মিস্টার ঘোষালের মুখের দিকেও চেয়ে দেখলে দীপঙ্কর। মিস্টার ঘোষালও একদৃষ্টে চেয়ে আছে সতীর দিকে। স্বামীর সঙ্গে সতী কথা বলছে, আর মিস্টার ঘোষাল কান পেতে প্রত্যেকটি কথা শুনছে, প্রত্যেকটি ভাবভঙ্গী গিলছে।

দীপঙ্কর মিস্টার ঘোষালের দিকে ইঙ্গিত করে চুপি চুপি বললে—চলুন, মিস্টার ঘোষাল, আমরা বাইরে গিয়ে দাঁড়াই—

—কেন?

—ওদের প্রাইভেট কথা আমরা নাই বা শুনলাম, ও শোনা কি ভালো?

সতী আবার বলতে লাগল,—অথচ তোমরা জানো না, ছোটবেলা থেকে আমি কতদিন শিবপূজো করেছি, কতদিন কালীঘাটের মন্দিরে গিয়ে মনের মত স্বামী-সৌভাগ্য কামনা করেছি। তোমরা জানো না, কিন্তু ওই দীপু দাঁড়িয়ে আছে, ও জানে। সোনার কার্তিকের ঘাটে গিয়ে পুরো বোশেখ মাসটা গঙ্গায় স্নান করেছি। কেন জানো? তোমার মত স্বামী পাবার জন্যে। বিশ্বাস করো, শুধু তোমার মত স্বামী পাবার জন্যেই! সেদিন আমি তোমার মত স্বামীই চেয়েছিলাম ঠাকুরের কাছে—তা তুমি জানো?

বলতে বলতে সতীর দুচোখ দিয়ে ঝর ঝর করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। মিস্টার ঘোষাল তাড়াতাড়ি পকেট থেকে রুমাল বার করে সতীর চোখ দুটো মুছিয়ে দিলে।

—কিন্তু তার বদলে আমি কী পেলুম? কী পেলুম আমি বলো তো? তোমরা আমায় তার বদলে কী দিলে? কী দিলে তার বদলে? আমি চেয়েছিলুম স্বামী, তোমরা দিলে অপমান, সকলের সামনে আমাকে তোমরা রেপ করলে—। তোমাদের বাড়ির বউ-এর আউটরেজ তোমাদের বাড়ির ঝি-চাকর সবাই মিলে চোখ মেলে দেখলে, এর চেয়ে আর বড় কিছু অপমান আমার আগে আর কোনও হিন্দু ঘরের বৌ ভাবতে পেরেছে? কল্পনাও করতে পেরেছে?

তারপর একটু থেমে আবার বলতে লাগলো—এত অপমানও আমি মুখ বুজে সইতে পারতুম, যদি তুমি একটু মুখ তুলে চাইতে, যদি তুমি একটু আদর করতে, যদি তুমি আমার কথা একটু বুঝতে—!

সনাতনবাবু বললেন—তোমার যা বলবার আছে, আজ বলো তুমি, আমি শুনি—

—তোমরা বললে আমার বাবার এত টাকা আছে জানলে, আরো টাকা চাইতে। অর্থাৎ বাবা আরো টাকা দিতে পারতেন মেয়ের বিয়েতে! তারপার তোমরা বললে আমার দিদি যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল, তা আগে জানলে আমাকে বাড়ির বউ করতে না। তারপর….

বলতে বলতে সতী আরো যেন মুষড়ে পড়লো। কিন্তু তখনি নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলতে লাগলো—নিজে মা হয়েও মা হতে পারলাম না, এর চেয়ে বড় দুঃখ মেয়েমানুষের জীবনে আর কী আছে বলো তো? তবু সেই জন্যেও আবার তোমরা আমকেই খোঁটা দিলে—যেন মা হয়ে আমিই আমার নিজের ছেলেকে মেরে ফেলেছি—!

এবার সতী নিজেই নিজের মুখটা আঁচল দিয়ে ঢাকলে। তারপর হঠাৎ আবার মুখ তুলে বললে—কিন্তু আমি কী দোষ করেছিলুম বলো তো তোমাদের, যে তোমরা এমন করে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলে? আমি তোমাদের কী ক্ষতিটা করেছিলুম যে তোমরা সবাই মিলে আমায় এমন শাস্তি দিলে? তোমরা আমার কাছে কী চেয়েছিলে, সত্যি বলো তো? আজ তো তুমি আমার সামনে একলা বসে আছো, আজ তো তোমার বলতে আর কোনও বাধা নেই। বলো তুমি, আমি তোমাদের কী ক্ষতিটা করেছিলুম, সত্যি সত্যি?

সনাতনবাবু তবু কিছু বললেন না।

সতী বললে—জানি এসব কথার উত্তর তুমি কখনও দাওনি, আজো দেবে না। উত্তরই যদি তুমি দিতে পারবে তো আমার এ অধঃপতন হবে কেন? কেন তোমাদের বাড়ির বউ হয়ে আমাকে আজ রাস্তার ফুটপাথে নামতে হবে? কিম্বা ফুটপাতও হয়ত এর চেয়ে ঢের ভালো ছিল। এবার হয়ত সেখানেই নামবো। একদিন হয়ত সেই ফুটপাথেই আমাকে শেষ পর্যন্ত নামতে হবে! এও হয়ত আমার কপালে আছে—

মিস্টার ঘোষাল অনেকক্ষণ চুপ করে ছিল। এবার বললে—মিস্টার ঘোষ, কাইন্ডলি আপনি একটু চুপ করুন, মিসেস ঘোষ এখন অসুস্থ, আপনার সঙ্গে কথা বললে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বেন—

সনাতনবাবু মাথা তুললেন। এতক্ষণে যেন খেয়াল হলো ঘরে অন্য লোকও আছে। বললেন—কী বললেন? আমি বাইরে যাবো!

—হ্যাঁ, দেখছেন না কত ইমোশন্যাল হয়ে উঠছেন মিসেস ঘোষ?

সতী হঠাৎ বললে—না, তোমাকে বাইরে যেতে হবে না—

তারপর বললে—কত দিন পরে তোমাকে আমার কাছে পেয়েছি, সব তোমাকে শোনাবো আজকে, আর যদি কখনও এ-সুযোগ না পাই?

দীপঙ্কর মিস্টার ঘোষালের দিকে ফিরে বললে—মিস্টার ঘোষাল আসুন আমরাই বাইরে গিয়ে দাঁড়াই, ওঁদের হাজব্যান্ড-ওয়াইফের একটু বোঝাপড়া হতে দিন—আসুন —

–কেন? কেন বাইরে যাবো? আমরা কি ওঁদের কোনও বাধা দিচ্ছি?

দীপঙ্কর বললে—বাধা দেবার কথা হচ্ছে না, ওঁদের মধ্যে একটা মিটমাট হয়ে গেলেই তো ভালো!

মিস্টার ঘোষাল যেন বিরক্ত হলো। বললে—দরকার থাকে তুমি যাও সেন, আমি কেন যাবো?

—কিন্তু আপনার সামনে কি ওঁরা ফ্রী-লি কথা বলতে পারবেন?

সতী বলতে লাগলো—ওগো, প্রথম-প্রথম নিজেকে আমি বড় অপরাধী মনে করতাম, জানো! এক-একবার মনে হতো, আমারই দোষে হয়ত এমন হলো! হয়ত আমিই একলা এর জন্যে দায়ী! এত মেয়েই তো শ্বশুর-বাড়ির সংসার করছে, শাশুড়ী স্বামীর লাথি ঝাঁটা খাচ্ছে, কিন্তু আর কোনও বউ তো এমন করে আমার মত বাইরে বেরিয়ে আসে না, বাইরে বেরিয়ে এসে ঘর ভাড়া করে পরের আশ্রয়ে থাকে না! আর কোনও বউ তো আমার মত নিজের বাবার অগাধ টাকা থাকা সত্ত্বেও এমন করে পুরুষদের আপিসে চাকরি করে না! কিন্তু তখনি আবার মনে হতো আর কোনও বউ তো স্বামীর কাছে এমন ব্যবহারও পায় না। এক-একবার ভাবতাম তুমি যদি অমানুষ হতে মাতাল হতে তাও বুঝি এর চেয়ে ঢের ভালো হতো। তুমি যদি গরীব-কেরানী হতে, আর টাকার অভাবে কাবলীওয়ালার কাছে টাকা ধার করতে, তাও বুঝি এর চেয়ে শতগুণে ভাল ছিল। কিন্তু তুমি কেন অন্য রকম হলে? কেন তুমি শিক্ষিত স্বাস্থ্যবান ভদ্রলোক হলে? কেন তুমি ছোটলোকদের মত আমাকে মারো না, তাতেও বুঝি আমি তৃপ্তি পেতাম। কিন্তু এও হয়ত আমার কপাল—এও আমার কপালের ফের ছাড়া আর কী বলবো, বলো?

সনাতনবাবু চুপ করেই সব শুনছিলেন। হঠাৎ বললেন—এখন তুমি যেতে পারবে?

—কোথায়?

—আমার সঙ্গে?

—তোমাদের বাড়িতে?

সনাতনবাবু বললেন—হ্যাঁ, তোমাকে নিয়ে যাবো বলেই এসেছিলাম। সকাল থেকে আজ আমার খাওয়া-দাওয়াই হয়নি।

—কেন? খাওনি কেন? আমার জন্যে?

সনাতনবাবু বললেন—সকাল থেকে অনেক কান্ড ঘটে গেছে বাড়িতে। পুলিস এসেছিল, ব্যাঙ্ক থেকে লোক এসেছিল—সেই তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই দেরি হয়ে গেল, তারপর দীপঙ্করবাবু টেলিফোনে তোমার অসুখের খবর জানালেন। তুমি চলো সতী, তুমি নিজে যে শাস্তি পাচ্ছ, তার চেয়ে অনেক বেশী শাস্তি পাচ্ছি আমরা—

সতী যেন আরো করুণ হয়ে উঠলো। বললে—ওগো, তুমি সত্যি বলছো? আমার যে বিশ্বাস হচ্ছে না —

মিস্টার ঘোষাল হঠাৎ বাধা দিয়ে বললে—কিন্তু মিস্টার ঘোষ, আপনি যে মিসেস ঘোষকে বাড়িতে যেতে বলছেন, তারপর যদি আবার সেই অত্যাচার হয়, আবার যদি রিপীট হয় সমস্ত?

দীপঙ্কর বললে—মিস্টার ঘোষাল আপনি চুপ করুন, আপনি কেন ওঁদের কথার মধ্যে কথা বলছেন?

মিস্টার ঘোষাল রেগে গেল, বললে—হোয়াই? আমার এভরি রাইট আছে জানার, আমি মিসেস ঘোষেল ওয়েল-উইশার! মিসেস ঘোষ, আপনি শ্বশুর-বাড়িতে যাবার আগে ভাল করে ভেবে নেবেন, এবারে যেন আর সেই সেম মিস্টেক করবেন না!

তারপর সনাতনবাবুর দিকে ফিরে বললেন—আপনি আপনার মা’র পারমিশন নিয়েছেন?

সনাতনবাবু বললেন—মা’কে বলে এসেছি সতীকে নিয়ে যাবো!

—তিনি মত দিয়েছেন?

—না!

মিস্টার ঘোষাল বললেন—তাহলে? আপনি কি চান মিসেস ঘোষ আবার ইন্‌সাল্টেড হোন? আপনি কি মিসেস ঘোষের লাইফ আবার মিজারেবল করে তুলতে চান? তাহলে কেন আপনি নিয়ে যেতে চাচ্ছেন সেখানে এসব জেনেও?

সনাতনবাবু বললেন-সতী আমার স্ত্রী, আমি তার ভালোমন্দ বুঝতে পারি বলেই নিয়ে যাচ্ছি!

—কিন্তু আপনিই কি হাজব্যান্ডের ডিউটি এতদিন প্রপারলি করতে পেরেছেন? এবার দীপঙ্কর এগিয়ে গেল। বললে—মিস্টার ঘোষাল, আপনি চুপ করুন, আপনি আর কথা বলবেন না দয়া করে—

—হোয়াট?

মিস্টার ঘোষালের চোখে যেন আগুন জ্বলে উঠলো। বললে—কী বললে? আর একবার বলো?

দীপঙ্কর ধীর-স্থিরভাবে বললে—যা কিছু বলবার থাকে, আপনি বাইরে গিয়ে বলুন। এখানে চেঁচাবেন না আপনি!

মিস্টার ঘোষাল রাগে ফুলতে লাগলো। অভ্যাস মত একবার পকেটে হাত দিলে। কিন্তু যা খুঁজছিল তা না পেয়ে ক্ষেপে উঠলো যেন। বললে—আটার ইট সেকেন্ড টাইম? আর একবার বলো কথাটা, আই শ্যাল সী—

দীপঙ্কর আবার স্পষ্ট ভাষায় বললে—এখানে গোলমাল করবেন না, আপনি বাইরে যান—

—আই—উইল—নট!

—ইউ মাস্ট!

হঠাৎ যেন দীপঙ্করেরও কেমন রোখ চেপে গেল। বললে—আপনাকে বাইরে যেতেই হবে—

—তুমি ভেবেছ কী সেন? তুমি ভেবেছ আমি য়্যারেস্টেড হয়েছি বলে ভয় পাবো তোমার কথায়? তুমি ভুলে গেছ কে তোমার ক্লার্ক থেকে প্রমোশন দিয়ে অফিসার করেছে? তুমি জানো গভর্নর স্যার জন হার্বাট আমার ফ্রেন্ড? ফজলুল হককে আমি এখীন রিং করে তোমায় শিক্ষা দিতে পারি? ইউ নো, হোয়াট আই য়্যাম?

দীপঙ্কর বললে—আপনি আর একটা কথাও বলবেন না, ইউ ডু গেট আউট প্লিজ—

হঠাৎ ঘোষালের মূর্তি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠলো যেন। নিজের ফ্ল্যাটে হলে এতক্ষণ হয়ত অন্য কান্ড করে বসতো। রাগে ফুলতো ফুলতে বললে—তুমি জানো তুমি ক্লাস- ওয়ান গভর্নমেন্ট অফিসারের সঙ্গে কথা বলছো!

দীপঙ্কর বললে—জানি আমি কথা বলছি একজন মিথ্যেবাদীর সঙ্গে—

—আর তুমি কী, আমি জানি না ভেবেছ? আমি জানি না ভেবেছ মিস্ মাইকেলের সঙ্গে তোমার কীসের সম্পর্ক ছিল? কেন আটার অফিস-আওয়ার্স তুমি সেখানে যেতে?

দীপঙ্কর হুঙ্কার দিয়ে উঠলো—স্টপ দ্যাট—

—কেন থামবো? ডু ইউ নো, আমি সব জানি। আমি জানি তোমার সঙ্গে মিসেস ঘোষের কীসের সম্পর্ক! মিসেস ঘোষের সামনেই বলছি, মিসেস ঘোষের জন্যে তোমার এত ইনটারেস্ট কেন, বলবো?

হঠাৎ দীপঙ্কর আর সামলাতে পারলে না। সেইখানে, সেই হাসপাতালের কেবিনের ভেতরে সতী আর সনাতনবাবুর সামনেই প্রচন্ড একটা ঘুষি বসিয়ে দিলে মিস্টার ঘোষালের চোয়ালের উপর। স্ক্রাউড্রেল, বীস্ট, এই সব জঘন্য লোকের সামনে মায়া দয়া অহিংসার কোনও দাম নেই। এরা মানুষ পদবাচ্যও নয়, জন্তু পদবাচ্যও নয়। এই এদের জন্যেই রেলওয়ের এত বদনাম। এই এদের জন্যেই ইন্ডিয়ানদের এত কলঙ্ক। এই এদের জন্যেই বাঙালীর এত নিন্দে। এরা থাকলেই বা কী, আর মরলেই বা কী। দরকার বুঝে এরা একবার বাঙালী সাজে আবার কখনও সাউথ-ইন্ডিয়ানও সাজে। এরা পেস্টস্ অব দি সোসাইটি।

মিস্টার ঘোষাল কিন্তু তখন হঠাৎ আচমকা একটা আঘাত পেয়ে মেঝের ওপর লুটিয়ে পড়েছে। দীপঙ্করের ঘুষির আঘাত খেয়ে চোখ দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েছে। পাশেই ছিল একটা চেয়ার। সেই চেয়ারের কোণটা মাথায় লেগে দিগ্‌ভ্রম হয়ে গেছে একেবারে। দীপঙ্কর তখনও চিৎকার করছে—স্কাউড্রেল, বীস্ট…..

এক মুহূর্তের মধ্যে কী একটা কান্ড ঘটে গেল। সনাতনবাবু সমস্ত দেখেশুনে হতবুদ্ধি হয়ে গেছেন। আর সতী! সতীও প্রথমটায় হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিল। তারপর মিস্টার ঘোষালকে মাটিতে পড়ে গিয়ে ছটফট্ করতে দেখেই চীৎকার করে উঠেছে—এ কী করলে তুমি? এ কী করলে তুমি দীপু—

দীপঙ্কর বললে—শয়তানের একটা শিক্ষা পাওয়া দরকার ছিল সতী—ও বুঝুক, ভদ্রলোকের সঙ্গে কী ভাষায় কথা বলতে হয়—

—তা হলে তুমি ওকে মারবে? তা বলে ওকে মেরে ফেলবে তুমি?

দীপঙ্কর বললে—না, তোমার ভয় নেই সতী, অত সহজে ওরা মরে না—কিন্তু ওকে মেরে ফেললেই হয়ত ভালো হতো—

সতী নিজেই অসুস্থ শরীর নিয়ে উঠে ধরতে যাচ্ছিল, সনাতনবাবু ধরে শুইয়ে দিলেন। সতী বললে—ছাড়ো, ছাড়ো তুমি আমাকে, আমার চোখের সামনে তোমরা ওকে মারবে! তোমরা এত নীচ, এত হীন!……

মিস্টার ঘোষাল কিন্তু ততক্ষণে প্রথম চোটটা সামলে নিয়েছে। মাটি আঁকড়ে ধরে ওঠবার চেষ্টা করলে। তারপর দীপঙ্করের দিকে চাইতেই দীপঙ্কর আবার শাসালে—আর এগিয়ে এলে আবার মারবো তোমায়, এবার খুন করে ফেলবো—

সতী চিৎকার করে উঠলো—দীপু, তুমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও—

ভেতরের এই গোলমালের শব্দে তখন বাইরে থেকে ডাক্তার, নার্স সবাই ঢুকে পড়েছে। দীপঙ্কর তাদের দেখে বললে—এখান থেকে মিস্টার ঘোষালকে বাইরে নিয়ে যান, তা আপনারা—দরকার হলে ফাস্ট এইড্‌ দিনগে—

কী হয়েছে স্যার?

দীপঙ্কর বললে—দিস ইজ মিস্টার ঘোষাল, জামিনে ছাড়া পাওয়া আসামী, এক্স- ডি-টি-এস—ইউ নো এভরিথিং য়্যাবাউট হিম—

মিস্টার ঘোষাল আর কথা বললে না। একটা ক্রুদ্ধ ক্ষুব্ধ দৃষ্টি দিয়ে দীপঙ্করের দিকে চেয়ে দেখতে দেখতে নিজেই টলতে টলতে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। আর ফিরলো না।

সনাতনবাবু তখনও হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। দীপঙ্কর সতীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললে-সতী, কিছু মনে কোর না—

কিন্তু সতী বোমার মত হঠাৎ ফেটে উঠলো। বললে—তোমরা ভেবেছ কী? তোমরা ভেবেছ আমার সামনে অপমান করবে ওকে? বেরিয়ে যাও, তোমরা সবাই বেরিয়ে যাও। কে আসতে বলেছিল তোমাদের এখানে? কেন এসেছিলে তোমরা? আমাকে এত অপমান করেও তোমাদের আশ মেটেনি? আরো অপমান করতে চাও? আরও অত্যাচার করতে চাও? কী ভেবেছ তোমরা?

দীপঙ্কর আরো সামনে এগিয়ে গেল। বললে—সতী, শোন, শোন—

সতী তবু শুনবে না। বললে—না, না আমি কিছু শুনতে চাই না, আমি তোমাদের কোনও কথা শুনতে চাই না, তোমরা আমার সামনে থেকে বেরিয়ে যাও—বেরিয়ে যাও বলছি—

সতীর মুখের চেহারা দেখে ভয় পেয়ে গেলেন সনাতনবাবু। বললেন—চলুন, দীপঙ্করবাবু, আমরা চলে যাই—

দীপঙ্কর অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সতীর মুখের দিকে চেয়ে। কিন্তু তখন সতী চাদর দিয়ে নিজের মুখখানা ঢেকে ফেলেছে। কোনও ‘অনুনয়-বিনয়েই আর কাজ হবে না বোঝা গেল। দীপঙ্কর শেষবারের মত ডাকলে—সতী, একটা কথা শোন আমার—

না না, তোমরা দূর হয়ে যাও ঘর থেকে—চলে যাও, তোমাদের মুখ দেখতে চাই না আমি—যাও—

দীপঙ্কর বাইরে বেরিয়ে এল। সনাতনবাবুও বেরিয়ে এলেন। শম্ভু হাসপাতালের দরজার সামনে দাদাবাবুর জন্যে দাঁড়িয়ে ছিল। কোথা দিয়ে কী ঘটে গেল, যেন কিছুই কিনারা করা গেল না।

দীপঙ্কর বললে—শুধু শুধু আপনাকে কষ্ট দিলাম সনাতনবাবু—

—কষ্ট? আমার কষ্ট কীসের?

—আপনি মা’কে বলে এসেছিলেন আজকে বাড়ি নিয়ে যাবেন সতীকে। সতী হয়ত যেত, কিন্তু আমার জন্যেই সব গোলমাল হয়ে গেল।

সনাতনবাবু হাসলেন। বললেন—আমি কিন্তু হতাশ হইনি দীপঙ্করবাবু, আমি এত সহজে হতাশ হই না।

দীপঙ্কর বললে—অথচ কেন যে আমি অমন করে ধৈর্য হারালুম, কে জানে! মানুষের অন্যায়, মানুষের নীচতা আমাকে বড় সহজে পীড়া দেয়, তাই হয়ত আমি ধৈর্য হারিয়ে ফেলি অত সহজে। আমি বুঝতে পারি না কেন মানুষ সহজ ভদ্রতাটুকু ভুলে যায়, কেন মানুষ এমন নীচ এমন হীন হতে পারে—

—কিন্তু আমি ওতে বিচলিত হই না দীপঙ্করবাবু, বিচলিত হলে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না।

সত্যিই সেদিন সমস্ত দিনটা একটা অভূতপূর্ব মগ্ন-চৈতন্যের মধ্যে দিয়ে কেটেছিল দীপঙ্করের। জীবনের কি এইটেই চরম অর্থ? এই ভেতর থেকে বাইরে আসা? না কি বাইরে থেকে ভেতরে আসাটাই আসল? জীবন থেকে যত বিচ্ছিন্ন হতে চেয়েছিল দীপঙ্কর, ততই যেন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছিল সে!

সনাতনবাবু বলেছিলেন—যত পুষ্টি হবে ফলের, ততই সে আল্গা হবে বোঁটায়— কিন্তু তাই-ই যদি হবে, তবে কেন সমস্ত মানুষ সমাজে আধিপত্য চায়? কেন লক্ষ্মীকে সিন্দুকে পুরে সৌভাগ্যকে চিরস্থায়ী করতে চায়? কেন শত্রু জয় করে অমিতবীর্য হতে চায় মানুষ? কেন মানুষ পদ আর পদবী পেতে চায় সব আত্মসম্মানের বিনিময়ে?

সনাতনবাবু বলেছিলেন—যারা তা চায়, তারা যে নগদ-বিদায়টাকেই বড় করে দেখে দীপঙ্করবাবু। কিন্তু তারা জানে না যে যা হাতের মুঠোয় পাওয়া গেল তাতে তাদের সুখ নেই—তখন বলে আরো চাই—

—তাহলে কীসে সুখ?

সনাতনবাবু বলেছিলেন—আগে বলুন কোন্ সুখটা চান? দেহের, না মনের, না আত্মার?

কিন্তু অত দূর তখনও পৌঁছোতে পারেনি দীপঙ্কর। সারাদিন সনাতনবাবুর খাওয়া- দাওয়া হয়নি। দীপঙ্করেরও তখন অত আলোচনা করবার সময় নেই। আপিসেও অনেক কাজ পড়ে রয়েছে। দীপঙ্কর বললে—আপনি কিছু ভাববেন না সনাতনবাবু, আমি কালকে আবার আসবো সতীর কাছে। আপনাকে খবর দেব সতী কেমন থাকে—

সকল অধ্যায়

১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১
২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২
৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩
৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪
৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫
৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬
৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭
৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮
৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯
১০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০
১১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১১
১২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১২
১৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৩
১৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৪
১৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৫
১৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৬
১৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৭
১৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৮
১৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৯
২০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২০
২১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২১
২২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২২
২৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৩
২৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৪
২৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৫
২৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৬
২৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৭
২৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৮
২৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৯
৩০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩০
৩১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩১
৩২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩২
৩৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৩
৩৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৪
৩৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৫
৩৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৬
৩৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৭
৩৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৮
৩৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৯
৪০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪০
৪১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪১
৪২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪২
৪৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৩
৪৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৪
৪৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৫
৪৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৬
৪৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৭
৪৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৮
৪৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৯
৫০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫০
৫১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫১
৫২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫২
৫৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৩
৫৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৪
৫৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৫
৫৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৬
৫৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৭
৫৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৮
৫৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৯
৬০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬০
৬১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬১
৬২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬২
৬৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৩
৬৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৪
৬৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৫
৬৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৬
৬৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৭
৬৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৮
৬৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৯
৭০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭০
৭১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭১
৭২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭২
৭৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৩
৭৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৪
৭৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৫
৭৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৬
৭৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৭
৭৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৮
৭৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৯
৮০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮০
৮১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮১
৮২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮২
৮৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৩
৮৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৪
৮৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৫
৮৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৬
৮৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৭
৮৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৮
৮৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৯
৯০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯০
৯১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯১
৯২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯২
৯৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৩
৯৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৪
৯৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৫ উপসংহার
৯৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৬
৯৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৭
৯৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৮
৯৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৯
১০০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০০
১০১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০১
১০২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০২
১০৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০৩
১০৪. নির্ঘণ্ট : কড়ি দিয়ে কিনলাম – ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন