কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৬

বিমল মিত্র

কিন্তু প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের বাড়িতে গিয়ে নির্মল পালিত আবার আর এক মানুষ। আর এক চেহারা তার। মস্ত বাড়িটা যেন ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। সেই আগেকার মতন আর শৃঙ্খলা নেই যেন কোথাও। দারোয়ানটা গেটের পাশেই একটা খাটিয়া নিয়ে শুয়ে থাকে। আগে তার এমন সাহস হতো না। মা-মণি কোথায় তেতলার ঘরে চুপ করে বসে থাকে কেউ টের পায় না। আগেকার সেই ধমকানিও আর নেই। ঝি-চাকররা আগে উঠতে বসতে বকুনি খেত, গালাগালি খেত, এখন যার যা খুশি তাই করে। পাখীটা ছোলা খেতে পায় কি না, ঘর ঠিকমত ঝাঁট দেওয়া হলো কি না, বাগানে মালিটা কাজ করে কি না—কেউ দেখবার নেই।

সরকারবাবুরই জ্বালা। আস্তে আস্তে দরজার কাছে এসে বলে-মা-মণি—

—আবার কী সরকার বাবু?

—আজ্ঞে এসেছিলাম, ভাড়াটেদের কথা বলতে—

—ভাড়াটেদের কথা আবার বলতে এসেছো আমাকে? বলেছি না, ছাদ আমি সারাতে পারবো না, মামলা করুক আমার নামে—

—আজ্ঞে ছাদ নয়, ভাড়া দেয়নি দু’মাসের—

—দু’মাসের ভাড়া দেয়নি, তা তুমি কি অ্যাদ্দিন ঘুমোচ্ছিলে? তবে তোমাকে রাখা কেন? ভাড়া না পেলে তোমার মাইনে থেকে আমি কেটে নেব তা বলে রাখছি—যাও, এখন বিরক্ত করো না আমাকে!

সরকারবাবু খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। তারপর একটু থেমে বললে—আর একটা কথা—

—আবার কী কথা? আর কোনও কথা শুনতে চাই না আমি! আগে ভাড়া আদায় করে নিয়ে এসো, তবে কথা শুনবো, যাও এখন সামনে থেকে—এখন আমার কথা শোনবার সময় নেই—

সরকারবাবুর আর দাঁড়াবার সাহস হয় না। কোনও কাজকর্ম যদি হবার যো আছে। কী যে হয়েছে ঘোষ-বাড়িতে। আগে মা-মণি সব দেখতো, সব শুনতো, বকুনি দিত, গালাগালি দিত, সেও যেন ভাল ছিল এর চেয়ে। কাজ করে সুখ ছিল তখন!

ভাঁড়ার ঘরে ভূতির মা যা খুশি তাই করে। কেউ কিছু বলবার নেই। ঠাকুর যত ইচ্ছে তেল-ঘি খরচ করে, বাতাসীর মা ঘুমোয় বেলা পর্যন্ত। শম্ভু সেই আড্ডা দিতে বেরোয়, তার আর ফেরবার নাম নেই। সমস্ত বাড়িটা যেন ভূতের বাড়ি হয়ে গেছে এই ক’দিনের মধ্যেই।

সনাতনবাবু বিছানায় শুয়ে মাথার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ছটফট করেন। বলেন—মা, মাগো—

মা-মণির কানে মাঝে-মাঝে যায় কথাগুলো। তারপর শম্ভুকে দেখলেই বলেন— দরজাটা বন্ধ করে দে আমার–বন্ধ করে দে—

শম্ভু দরজা বন্ধ করে দেয়। দাদাবাবুর গলার শব্দটাও যেন বিষ লাগে মা-মণির কানে।

সনাতনবাবুর ঘরে গিয়ে শম্ভু বলেন—ডাক্তারবাবুকে ডাকবো একবার দাদাবাবু? শম্ভুর গলার শব্দ পেয়ে সনাতনবাবু চুপ করে যান। বলেন—এক গ্লাস জল দিতে পারো শম্ভু—

শম্ভু জল এনে দেয় তাড়াতাড়ি। বলে—জল তেষ্টা পেয়েছে, তা বলেননি কেন আমাকে দাদাবাবু, আমি তো এখানেই আছি।

তারপর শম্ভু আবার জিজ্ঞেস করে—ডাক্তারবাবুকে একবার খবর দেব?

সনাতনবাবু বুঝতে পারেন না তবু। বলেন—খবর দিবি?

—আপনি যদি বলেন তো খবর দিচ্ছি—

—না থাক—

সনাতনবাবুর কাছে তাঁর অসুখ হওয়াটাই যেন একটা অপরাধের সামিল মনে হয়। শম্ভু দাঁড়িয়ে থাকে খানিকক্ষণ। তারপর বলে—একটু মাথাটা টিপে দেব আপনার?

সনাতনবাবু বলেন-মাথা টিপলে কি সারবে?

—হ্যাঁ দাদাবাবু, দেখবেন আরাম হবে খুব—

মা-মণির ঘরের বন্ধ দরজার সামনে কৈলাস এসে ডাকে—মা-মণি—

—আবার কী? আবার বিরক্ত করতে এলি?

মা-মণির সব কথাতেই বিরক্তি। সব ব্যাপারেই রাগ। অথচ মা-মণি ছাড়া এ সংসারের কোন্ কাজটা কোনদিন হয়েছে তাও কেউ জানে না। তবু যতক্ষণ মা-মণি আছে, ততক্ষণ তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে, হুকুমও তামিল করতে হবে।

—উকীলবাবু এসেছেন নিচেয়, আপনাকে ডাকছেন!

মা-মণি বলেন—তা সেই কথাটা বলবি তো আমাকে!

বলে তাড়াতাড়ি নিচেয় আসেন। নির্মল পালিত বসে ছিল বৈঠকখানায়। মা-মণি ঢুকেই বললেন—কী হলো বাবা? সব তৈরি?

নির্মল পালিত বলেন—হ্যাঁ মা-মণি, সব তৈরি করে এনেছি—এখন আপনি সই করলেই হয়—

তারপর ব্যাগটা খুলে কাগজটা বার করতে করতে বললে—বুঝলেন মা-মণি, আপনি যা বলেছিলেন তাই ঠিক, —

—কীসের ঠিক?

—আপনার ডটার-ইন-ল’র কথা বলছি, আপনি যা করেছেন, ভালোই করেছেন, আমি ভেবেছিলুম আপনিই রং কিন্তু দেখলুম আপনার ডটার-ইন-লরই দোষ আসলে। আমায় টাকা দিতে এলো বুঝলেন! আমাকে বলে কি ছ’হাজার টাকা দেব, আপনি মামলা করবেন না—!

মা-মণি অবাক হয়ে গেলেন। বললেন—তুমি হতভাগীর কাছে গেছলে নাকি?

নির্মল পালিত বললে—গিয়েছিলুম বলেই তো বলছি। ভাবলুম আহা, তারই বা কী দোষ, যদি মিটিয়ে ফেরতে পারি ব্যাপারটা! কিন্তু দেখলুম এ মেটবার নয় মা-মণি! বললে কী জানেন?

—তুমি আর তার কথা আমায় বোল না বাবা, তার নাম শুনতেও আমার ঘেন্না হয়!

–আমারও ঘেন্না হলো মা-মণি তার কথা শুনে। দেখলুম-তোফা আরামে রয়েছেন তিনি, কোনও দুঃখ নেই। বললাম হাসব্যান্ডের অসুখ, তা ভ্রূক্ষেপই নেই। বড় হোপলেস হয়ে গেলাম সব দেখে শূনে। শেষে বললাম—মামলার কথা। শুনে কী করলে জানেন? আমার হাতে টাকা গুঁজে দিলে—ছ’ হাজার টাকা। বললে—মামলা করবেন না, তাতে তাঁর বদনাম হবে, স্ক্যান্ডাল হবে—

—তুমি টাকা নিলে?

—আজ্ঞে, কী যে বলেন আপনি! আমি কি সেই রকম লোক? আমি আপনারও ব্রীফ নেবো, তারও ব্রী নেবো? আসামী ফরিয়াদী দুপক্ষের টাকা খাবো? আমার বাবা আমাকে শিখিয়ে গেছেন—Make money your God, it will plague you like the devil. জানেন—

মা-মণি বললেন—ছাড়ো ওসব কথা বাবা। ও-কথা শুনলেও আমার গা ঘিন-ঘিন করে—

নির্মল পালিত বললে—তা তো করবেই—আমি বার-য়্যাট-ল, আমারই তাই গা ঘিন্-ঘিন্ করে তো আপনি —

মা-মণি বাধা দিয়ে বললেন—আমার আসল কাজের কী করলে বলো?

নির্মল কাগজগুলো সামনে এগিয়ে দিয়ে বললে—এই উইল তৈরি করেছি—আর এই হলো মামলার নথি—

—ও মতো হচ্ছে, কিন্তু বাড়ি বিক্রির কী করলে?

—সেও পার্টি ঠিক করে ফেলেছি। এই দেখুন ডীড—

মা-মণি বললে—ও ডীড-ফিড আমি কীই বা বুঝব—ইংরিজীর আমি কী বুঝি? মুখে বলো না কী করলে? কত দর পেলে?

নির্মল পালিত বললে—বেশ প্রফিটেবল দর পেয়েছি মা-মণি, দুটো বাড়ি কুড়ি হাজার—

—কুড়ি হাজার? কিন্তু আমার কেনা দর যে ষাট হাজারে বাবা? ষাট হাজার দিয়ে তোমার বাবাই আমাকে যে কিনিয়েছিলেন—তিনতলা বাড়ি, দু’খানা মিলিয়ে খান্ তিরিশেক ঘর—

নির্মল পালিত বললে—কিন্তু সময়টা কী-রকম সেটা ভাবুন, আপনি যখন কিনেছিলেন তখন বাড়ির দর ছিল, এখন কি কেউ কেনে? কেনবার টাইম কি এটা? এখন সব মাড়োয়ারীরা পর্যন্ত বাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছে, আপনি এখন তো তবু কুড়ি হাজার পাচ্ছেন, এর পর যে খদ্দেরই পাবেন না কেনবার! আর যুদ্ধের মধ্যে যদি একদিন কলকাতায় জাপানীদের বোমা পড়ে তো তখন আপনার বাড়ি কি থাকবে ভাবছেন? তখন তো আমাকেই দোষ দেবেন!

তারপর কাগজটা বাড়িয়ে দিয়ে বললে—নি, এই কাগজে তিনটে সই করে দিন— আমি আপনার সব কাজ হাসিল করে দিচ্ছি—দেখুন না—

মা-মণি কলমটা নিয়ে সই করলেন—নয়নরঞ্জিনী দাসী। একটা, দু’টো, তিনটে সই

আর হঠাৎ পাশের বারান্দার দিকে নজর পড়তেই ডাকলেন—কে? কে ওখানে? মা-মণির যেন মনে হলো বারান্দা দিয়ে কে যেন নিঃশব্দে ভেতরের দিকে চলে গেল।

—কে? কে ওদিকে গেল রে? কে?

নির্মল পালিত বললে—কই, কেউ তো যায়নি ওদিকে মা-মণি—

মা-মণি বললেন—মনে হলো কে যেন গেল ওদিকে—

তারপর ডাকলেন—শম্ভু, শম্ভু কোথায় গেলি? কৈলাস? কৈলাস কোথায়?

কৈলাস আসতেই মা-মণি বললেন—এখুনি কে গেল রে ওদিকে?

কৈলাস বললে–বৌদিমণি!

—বৌদিমণি! মা-মণি লাফিয়ে উঠলেন। বললেন–কোথায় গেল বৌদিমণি? কোন্ দিকে? ওপরে?

কৈলাস বললে—দাদাবাবুর ঘরে—

—দাদাবাবুর ঘরে! আমাকে না বলে ভেতরে চলে গেল? তোরা সব মরে গিছলি না কী? চল্, দেখি কোথায় গেল! বলা নেই কওয়া নেই, একেবারে হন্ হন্ করে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল?

কিন্তু ততক্ষণে সতী একেবারে সনাতনবাবুর ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। শম্ভু পাশে বসে সনাতনবাবুর মাথা টিপে দিচ্ছিল। সতী গিয়ে দাঁড়াতেই শম্ভু অবাক হয়ে চেয়ে রইল সতীর মুখের দিকে।

—কেমন আছো তুমি?

সনাতনবাবু এ-পাশ ফিরে চেয়ে দেখলেন। বললেন—ও, তুমি এসেছ?

সতী এগিয়ে গিয়ে মাথার কাছে বসলো। বললে—খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার? হঠাৎ অসুখ হলো যে!

সনাতনবাবু বললেন—মাথাটার বড্ড ব্যথা লাগছে—তুমি বোস, ভালো করে এখানে সরে বোস—

—তুমি এখান থেকে চলো, এখানে থাকলে তোমার অসুখ সারবে না—

—কোথায় যাবো?

সতী বললে—কেন, আমার কাছে, আমার কাছে যেতে তোমার আপত্তি আছে? হঠাৎ পেছনে পায়ের শব্দ হলো। শাশুড়ী এসে ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উঠলেন—এ-বাড়িতে আবার ঢুকলে কেন শুনি? কাকে বলে ভেতরে ঢুকেছ? কে তোমায় ঢুকতে দিয়েছে?

সতী পেছন ফিরে তাকালোও না, এ-কথার জবাবও দিলে না। তেমন ভাবেই সনাতনবাবুর মাথায় হাত বুলোতে লাগল। বললে—তুমি যদি যাও আমার সঙ্গে তো আমি তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারি—যাবে?

—বলি, কথার উত্তর দিচ্ছ না যে?

সতী এতক্ষণে মুখ ফেরালো। বললে—আমি আপনার কথার উত্তর দেব না, আপনি যা ইচ্ছে করুন গিয়ে—

শাশুড়ী এবার ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লেন। বললেন—বলি, এ কি তোমার নিজের বাপের বাড়ি পেয়েছ? ভেবেছ কী তুমি?

সতী বললে যা বলবার আপনি বাইরে গিয়ে বলুন, রুগীর ঘরে চেঁচাবেন না।

শাশুড়ী আর থাকতে পারলেন না। বললেন—রুগীর ওপর যে তোমার বড় টান দেখছি—এতদিন এ-টান কোথায় ছিল শুনি? তখন তো ঘরে হুড়কো এঁটে ভাতারকে বের করে দিতে! তখন তো এত আটা দেখিনি? এখন যে দেখছি আদরে একেবারে টইটুম্বুর—

সনাতনবাবুর মুখ দিয়ে একটা যন্ত্রণাকাতর শব্দ বেরোল–আঃ—মা গো—

সতী বললে-আপনি এখন যান এখান থেকে, আমাকে যা বলবেন, পরে বাইরে গিয়ে বলবেন—

শাশুড়ী হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। বললেন—তুমি কার সঙ্গে কথা বলছো জানো? জানো এখনি দারোয়ান ডেকে গলা ধাক্কা দিয়ে তোমাকে বের করে দিতে পারি?

—যদি বার করতে পারেন তো তাই করুন, বাজে বক্ বক্ করবেন না- সনাতনবাবু হঠাৎ বাধা দিলেন। বললেন—তুমি কেন গোলমাল করছো সতী, তুমি কেন এলে? তুমি চলে যাও না এখান থেকে

সতী হঠাৎ সনাতনবাবুর মুখ থেকে এই কথা শুনে থমকে গেল। বললে—তুমি বলছো কী?

—হ্যাঁ, তুমি চলে যাও, কেন তুমি এলে? আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে—

—তা শেষকালে তুমি আমাকে এই কথা বললে?

শাশুড়ী বললেন—তা বলবে না, গুণধরীর গুণের কথা জানতে তো আর কারো বাকি নেই! নিজের মুখ পুড়িয়ে আবার এখন সোয়ামীর মুখ পোড়াতে এসেছে—লজ্জাও করে না—

—তুমি চলে যাও সতী, আমি বলছি, তুমি আর এসো না, যাও এখান থেকে—

সতী যেন এতক্ষণে নিজের অবস্থাটা বুঝতে পারলে। বললে—আচ্ছা, আমি চলেই যাচ্ছি —

বলে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। তারপর পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে বললে—থাকতে আমি এখানে আসিনি, থাকতে চাইও না আমি তোমাদের বাড়িতে—তোমাদের এখানে থেকে আমার স্বর্গলাভও হবে না জানি। কিন্তু আজ একটা কথা বলে রাখছি, এতে কারোরই ভাল হবে না, তোমাদেরও না, আমারও না—তোমাদের আমি ভালোই চেয়েছিলাম, তোমাদের ভালোর জন্যেই আমি আমার ভালো চেয়েছিলুম—কিন্তু তোমাদের ভালো করা শিবেরও অসাধ্য—

শাশুড়ী বাধা দিয়ে বললেন—যাও যাও, ঢের হয়েছে—

সতী ততক্ষণে যেমন এসেছিল তেমনি চলে গেল। তারপর তর্ তর্ করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল নিচেয়। খবর পেয়ে বাতাসীর মা, ভূতির মা কৈলাস, ঠাকুর, ড্রাইভার, সবাই সিঁড়ির নিচে খিড়কীর দরজার আড়ালে দাঁড়িলে ছিল। সবাই দেখলে বৌদিমণি কোনও দিকে না চেয়ে একেবারে সোজা সদর-গেটের দিকে বেরিয়ে গেল।

নির্মল পালিত বৈঠকখানা ঘরে একলা চুপচাপ মা-মণির জন্যে অপেক্ষা করছিল। অপেক্ষা করবার কিছু অবশ্য ছিল না। দলিলগুলোতে সই-সাবুদ যা করবার তা করে নেওয়া হয়ে গিয়েছে। তবু যাবার আগে কথা বলে যেতে হবে। বউবাজারের দুটো বাড়ির ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। শ্যামবাজারেরটাও ব্যবস্থা করতে হবে এবার। তারপর কিছু শেয়ার। শেয়ারেই বেশ কিছু মোটা রকমের আশা আছে।

হঠাৎ মনে হলো মিসেস ঘোষ তর্ তর্ করে বারান্দা দিয়ে বাইরের দিকে চলে যাচ্ছে।

ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে ডাকলে—মিসেস ঘোষ —

সতী একবার নিজের নাম শুনে পেছন ফিরলে। তারপর আবার সোজা সদর গেটের দিকে যেমন যাচ্ছিল তেমনি এগিয়ে গেল।

বাইরে সদর গেটের সামনে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। সতী দরজা খুলে তার ভেতরে গিয়ে উঠলো। উঠতেই শম্ভু দৌড়তে দৌড়তে এল কাছে। বললে-বৌদিমণি তুমি কোথায় যাচ্ছো?

সতী কিছু উত্তর দিলে না।

শম্ভু বললে—সেই দাদাবাবু এসেছিল একদিন তোমাকে খুঁজতে বৌদিমণি—

— কে? দীপু?

শম্ভু বললে—হ্যাঁ, আমায় জিজ্ঞেস করলে বৌদিমণি কোথায়? আমি বললুম—তা জানি না!

সতী হঠাৎ একটা টাকা বার করে শম্ভুর হাতে দিলে। বললে—এইটে নে, আর তোর দাদাবাবুকে একটু দেখিস্, বুঝলি, দেখিস্ একটু—

তারপর গাড়িটা চলতে আরম্ভ করতেই শম্ভু মাথাটা নিচু করে, একেবারে মাটির কাছাকাছি নামিয়ে প্রণাম করলে। কিন্তু যখন মাথা তুললো তখন বৌদিমণি অনেক দূর চলে গেছে—

.

নির্মল পালিত নিজের বাড়ির চেম্বারে কাগজ-পত্র গুছিয়ে উঠলো। বললে—ঠিক আছে, ওই কথাই রইল—

দীপঙ্কর বললে—কিন্তু এ-রকম করে কতদিন চলবে?

নির্মল বললে—তা আমি কী বলবো বল্, আমি তো মিট্-মাট্ করতেই গিয়েছিলুম, আমাকে সিক্স থাউজ্যান্ড রুপীজ্ ঘুষও দিতে এল, কিন্তু আমি গাছেরও পাড়বো তলার ও কুড়োব, তেমন লোক নই ভাই, তেমন করতে পারলে আমি আজ কলকাতা শহরে অনেক প্রপার্টি করে ফেলতে পারতাম—তাহলে আমার প্রপার্টি আজ খায় কে?

দীপঙ্কর উঠলো।

নির্মল পালিত বললে—কিছু ভাবিসনি, যা হবার তা হবেই, একবার যখন বিষ ঢুকেছে তখন আর কেউ রোধ করতে পারবে না—মিসেস ঘোষ বলেছে ঠিক, ও শিবের ও অসাধ্য—দেখা যাক্ আমি কতদূর কী করতে পারি—

রাস্তায় এসেও দীপঙ্কর হাজরা রোডের মোড়ে খানিকক্ষণ উদ্দেশ্যহীনভাবে চুপ করে দঁড়িয়ে রইল। মনে হলো পৃথিবীটা যেন থেমে গেছে। এখন কোথায় যাবে সে? কার কাছে গেলে মনটা শান্ত হবে! এতখনি বোঝা দীপঙ্করের মাথার ওপর, কে তার বোঝা নামিয়ে নেবে!

প্রাণমথবাবুর কথা মনে পড়লো। এমন করে সর্বস্ব দিয়ে কে দেশকে ভালবাসতে পেরেছে, কে মানুষকে ভালবাসতে পেরেছে প্রাণমথবাবুর মত। যেমন প্রাণমথবাবু, তেমনি প্রাণমথবাবুর স্ত্রী। যখন বৈঠকখানা ঘরে সবাই এসে জোটে, প্রাণমথবাবুর পাশে মাসীমাও চুপ করে বসে থাকেন। প্রাণমথবাবুর মত তিনিও জেলে গেছেন সারাজীবন। কিরণের মা’কে মাসকাবারি টাকা দেবার পর, আর একদিন প্রাণমথবাবুর বাড়ি গিয়েছিল দীপঙ্কর। সেদিন বৈঠকখানায় কেউই ছিল না। একলা বসে ছিলেন। দীপঙ্কর গিয়ে প্ৰণাম করেছিল, তবু অন্য দিনের মত হাসিমুখে অভ্যর্থনা করেন নি প্রাণমথবাবু। কেমন আছে দীপঙ্কর, মা’র কী হয়েছিল শেষকালে, কত কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন। এক সময়ে বলেছিলেন—জানো বাবা, এ হলো বাঙলা দেশ, এ বেহার নয়, গুজরাট নয়, মাদ্রাজ ও নয়—এদেশে যে জন্মেছে তাকে লড়াই করে বাঁচতে হয়েছে—লোকে বলছে সুভাষ নাকি সাধু হয়ে গেছে—! কিন্তু তাকে তো আমি জানি, সে কি পালাবার ছেলে? সাধু হলে সে অনেক আগেই সাধু হয়ে যেত—

তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বলেছিলেন—দেখ বাবা দীপু, গাছপালা যত সহজে গাছপালা, মানুষ তত সহজে মানুষ নয়। এই মাদ্রাজ কি বেহারের কথাই ধরো না, রাজাগোপালাচারীরা মাদ্রাজে যত সহজে রাজা-গোপালাচারী হয়েছে, রাজেন্দ্র প্রসাদ বেহারে যত সহজে রাজেন্দ্র প্রসাদ হয়েছে, সুভাষ কি বাঙলা দেশে তত সহজে সুভাষ হতে পেরেছে? না দেশবন্ধু হতে পেরেছে?

যেন অনেক দুঃখ পেয়ে কথাগুলো বলেছিলেন প্রাণমথবাবু! প্রাণমথবাবুর শরীর আরো খারাপ হয়ে গিয়েছিল ইদানীং।

চলে আসবার সময় বলেছিলেন—তুমি মাঝে মাঝে চলে এসো বাবা, আমি বড় ব্যস্ত আছি ক’দিন—

—খুব কাজ পড়েছে বুঝি স্কুলে?

—ইস্কুলে নয় ইলেক্‌শন, আমাদের কংগ্রেসের ইলেক্‌শন নিয়ে খুব খাটছি। ক’দিন ধরে। দেশবন্ধুর নিজের হাতে গড়া কংগ্রেস, আমরা গোড়া থেকেই আছি, তাই যার তার ওপর ভার ছেড়ে দিতে ভয় করে বাবা—

দীপঙ্কর সামনে একটা ট্যাক্সি ডেকে নিয়ে উঠলো।

প্রাণমথবাবুকে এখন বিরক্ত করা উচিত নয়।

ট্যাক্সিওয়ালা জিজ্ঞেস করলে—কোথায় যেতে হবে হুজুর?

—ডালহৌসী স্কোয়ার।

হালহৌসী স্কোয়ারে বার্মা ইভাকুয়ীজ অফিস হয়েছে। সেখানে গেলে ভুবনেশ্বরবাবুর খবরটা হয়ত পাওয়া যেতে পারে। বিকেল হয়ে এসেছে। আর একটু পরেই হয়ত অফিস বন্ধ হয়ে যাবে। অফিসের সাইনবোর্ড ছিল, চাপরাসী ছিল সামনে দাঁড়িয়ে। অফিসের সামনেও খুব ভিড়। প্রচুর লোক বর্মার আত্মীয় স্বজনের খবর নেবার জন্যে ভিড় করেছে সামনে। দীপঙ্করও আর সকলের মত একটা ফর্ম চেয়ে নিলে। তারপর নাম-ঠিকানা ভর্তি করে এগিয়ে দিলে।

ভেতরের ক্লার্কটা ফর্ম নিয়ে একবার পড়ে দেখলে।

দীপঙ্কর জিজ্ঞেস করলে—কতদিন পরে খবর পাওয়া যাবে?

ক্লার্কটা বললে—আপনি এক সপ্তাহ পরে একবার আসবেন।

—অত দেরি হবে?

ক্লার্কটা বললে—এ কি আর একটা-দু’টো লোকের ব্যাপার স্যার, লক্ষ-লক্ষ লোক— সকলের ট্রেস করা কি অত সহজ—?

পেছনে অনেক লোক তখন দাঁড়িয়ে আছে। সকলকে কাটিয়ে দীপঙ্কর বাইরে বেরিয়ে এল। সমস্ত পৃথিবীর মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো যেন দীপঙ্কর। এত সকাল-সকাল বাড়ি গিয়ে কার সঙ্গে কথা বলবে? কে আছে? সেই সন্তোষ-কাকা আর সন্তোষ-কাকার মেয়ে।

সন্তোষ-কাকার মেয়ে সেদিনকার সেই ঘটনার পর যেন আরো জড়োসড়ো হয়ে গেছে।

সন্তোষ-কাকা মেয়েকে বলে—দরকার নেই তোর ক্ষিরি, তোর কিসের দায়, তোকে বিয়েও করবে না কিছু না, তুই কেন খাটতে যাবি গতর দিয়ে! গতর কি সস্তা?

তারপর রোয়াকের ওপর বসে মুড়ি চিবোতে চিবোতে বলে—আহা, কী যে দুর্মতি হয়েছিল আমার। কেন যে রসুলপুর থেকে এসেছিলাম সুখের দেশ ছেড়ে, ভীমরতি হয়েছিল রে ক্ষিরি, ভীমরতি হয়েছিল আমার —

তারপর আবার মুড়ি চিবোয় আপন মনে।

বলে—আর একটু গুড আছে রে ক্ষিরি-আর একটু গুড দিবি মা?

ক্ষিরি এক ডেলা গুড ফেলে দিয়ে যায় বাটিতে।

সন্তোষ-কাকা হাঁ হাঁ করে ওঠে। বললে—এ কী করলি? গুড চাইলুম বলে এতখানি গুড দিলি তাবলে? তাহলে দে, আর দু’টি মুড়ি দে, দেখিস্ আবার যেন বেশি দিয়ে ফেলিস নে, তাহলে আবার গুড দিতে হবে —

দীপঙ্কর যখন বাড়ি ফিরলো তখন বেশ অন্ধকার হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে পা দু’টোকে টেনে নিয়ে বাড়ির দরজার কাছে আসতেই পেছনে একটা ট্যাক্সির শব্দ হলো। ট্যাক্সিওয়ালা গাড়ি থেকে নেমে দীপঙ্করকে দেখে জিজ্ঞেস করলে, দীপঙ্করবাবুর বাড়ি কোন্‌টা।

দীপঙ্কর অবাক হয়ে গেল। ট্যাক্সি করে এত রাত্রে কে আসবে তার বাড়িতে! বললে—আমারই নাম দীপঙ্করবাবু—

গাড়ি থেকে ততক্ষণে একজন ইংরেজ ভদ্রলোক নেমে এসেছে। কোট, প্যান্ট, টাই—লম্বা চওড়া দশাসই চেহারা। দীপঙ্কর ভদ্রলোককে দেখেই এগিয়ে গেল। জিজ্ঞেস করলে—হুম্ ডু ইউ ওয়ান্ট প্লিজ?

—আই ওয়ান্ট মিস্টার ডীপঙ্কর সেন—

—ইয়েস্, হিয়ার আই য়্যাম!

—আর ইউ?

দীপঙ্কর তখনও অবাক হয়ে চেয়ে আছে। এত লোক থাকতে দীপঙ্করকে খুঁজতে কলকাতার এই প্রান্তে এসেছে কেন! কীসের দরকার? কী চায় তার কাছে? ভদ্রলোকের মুখে চুরোট, হাতে একটা পোর্টফোলিও ব্যাগ। ফরসা ধপ্ ধপ্ করছে মুখের রং।

সাহেবটা একেবারে দীপঙ্করের মুখের কাছে মুখ এনে চাপা গলায় বললে—আই য়্যাম্ কিরণ।

—কিরণ!!

একেবারে চিৎকার করে লাফিয়ে উঠতে যাচ্ছিল দীপঙ্কর।

কিন্তু কিরণ তার আগেই মুখে আঙুল চাপা দিয়ে দিয়েছে। —চুপ!

সকল অধ্যায়

১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১
২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২
৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩
৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪
৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫
৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬
৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭
৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮
৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯
১০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০
১১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১১
১২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১২
১৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৩
১৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৪
১৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৫
১৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৬
১৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৭
১৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৮
১৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৯
২০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২০
২১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২১
২২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২২
২৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৩
২৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৪
২৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৫
২৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৬
২৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৭
২৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৮
২৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৯
৩০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩০
৩১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩১
৩২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩২
৩৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৩
৩৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৪
৩৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৫
৩৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৬
৩৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৭
৩৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৮
৩৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৯
৪০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪০
৪১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪১
৪২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪২
৪৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৩
৪৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৪
৪৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৫
৪৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৬
৪৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৭
৪৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৮
৪৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৯
৫০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫০
৫১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫১
৫২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫২
৫৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৩
৫৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৪
৫৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৫
৫৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৬
৫৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৭
৫৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৮
৫৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৯
৬০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬০
৬১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬১
৬২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬২
৬৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৩
৬৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৪
৬৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৫
৬৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৬
৬৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৭
৬৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৮
৬৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৯
৭০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭০
৭১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭১
৭২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭২
৭৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৩
৭৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৪
৭৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৫
৭৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৬
৭৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৭
৭৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৮
৭৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৯
৮০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮০
৮১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮১
৮২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮২
৮৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৩
৮৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৪
৮৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৫
৮৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৬
৮৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৭
৮৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৮
৮৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৯
৯০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯০
৯১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯১
৯২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯২
৯৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৩
৯৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৪
৯৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৫ উপসংহার
৯৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৬
৯৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৭
৯৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৮
৯৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৯
১০০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০০
১০১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০১
১০২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০২
১০৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০৩
১০৪. নির্ঘণ্ট : কড়ি দিয়ে কিনলাম – ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন