কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৮

বিমল মিত্র

বিপ্লবই বটে। একে একে আমেদাবাদ আর বোম্বাই-এর কটন-মিলগুলো সব বন্ধ হয়ে গেল। কেউ আর কাজ করতে আসে না। টাটা আয়রন এন্ড্রু স্টীল কোম্পানীর কারখানা অচল। ব্ল্যাস্ট ফারনেসের আগুন নিভে গেল আস্তে আস্তে। বাজার বন্ধ। দোকানপাট চলে না।

দুনিকাকার মেজাজ তখন আগুন। বলে-লর্ড লিনলিথগো এবার ঠান্ডা করে দেবে বাছাধনদের—

দুনিকাকার আড্ডা সকালবেলা যা একটুখানি বসে। কিন্তু বিকেলবেলা সব নিঝঝুম। বিকেল থেকেই কালিঘাটের রাস্তাটা ফাঁকা হয়ে যায়। রাস্তার আলোগুলো কারা নিভিয়ে দেয়। সমস্ত পাড়া তখন থম্ থম্ করে। হঠাৎ কোথাও কিছু নেই, গোঁ গোঁ শব্দ করতে করতে একটা মিলিটারির গাড়ি ঢুকে পড়ে গলির মধ্যে। বেয়নেট উঁচিয়ে সোলজাররা বাইরের দিকে তাগ করে থাকে। অন্ধকার হলেই কালিঘাটের বস্তি থেকে কয়েকটা ছেলে রাসবিহারী এভিনিউ-এর মোড়ে গিয়ে ডাস্টবিনগুলো রাস্তার মাঝখানে নিয়ে গিয়ে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়ে আসে আর মিলিটারি লরীগুলো দৌড়তে দৌড়তে এসে হোঁচট খায়। তখন চারদিক থেকে ঢিল পড়ে তাদের গায়ে। তখন আর জ্ঞান থাকে না কারো। যেদিকে দুচোখ যায়, যাকে সামনে পায়, তার দিকেই গুলী ছোঁড়ে এলো-পাথাড়ি। ঠেলাগাড়ি, ডাস্টবিন, সব কিছু এসে জড়ো হয় রাস্তায়। বিকেল থেকেই ট্রাম বন্ধ হয়ে যায়। যে-যেদিকে থাকে, বাড়িতে এসে ঢোকে বিকেলের পরেই।

মা-মণি ডাকলেন শম্ভুকে। বললেন—কোথায় গিয়েছিলি তুই?

শম্ভু মুখ কাচুমাচু করে সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। বললে—আজ্ঞে, দাদাবাবুর কাছে—

–দাদাবাবুর কী হয়েছে?

শম্ভু বললে—কাল থেকে দাদাবাবুর ঘুম হচ্ছে না, আমি মাথাটা টিপে দিচ্ছিলুম—

ঘুম হচ্ছে না! আর বেশী কিছু বললেন না। শম্ভু চলে গেল। মা-মণি আস্তে আস্তে উঠলেন বিছানা থেকে। আজকাল বিছানাতেই বেশিক্ষণ বসে থাকেন মা-মণি। দিনরাত নিজের মধ্যেই তোলপাড় করেন। বুঝতে পারেন আর কিছু নেই। আর কেউ নেই। বুঝতে পারেন তিনি সব হারিয়েছেন। সম্পত্তি হারিয়েছেন, সন্তানও হারিয়েছেন। তবু সে-সব ভুলে থাকতেই চেষ্টা করেন। যখন সন্ধ্যেবেলা সমস্ত অন্ধকার হয়ে আসে, রাস্তার আলোগুলো পর্যন্ত নিভে যায়, মাঝে-মাঝে দুম্ দুম্ আওয়াজ হয় বোমা ফাটার, তখন খানিকক্ষণের জন্যে একটু ভুলে থাকেন। মনে হয় শুধু তাঁর সংসারেই নয়, সমস্ত পৃথিবীতেই বুঝি আকাল এসেছে। আকাল এসেছে, ভালোই হয়েছে। একলা তাঁর বাড়িতেই বা কেন, সমস্ত কলকাতায়, সকলের সংসারেই বিষ ছড়িছে যাক না। সকলের সংসারই ছারখার হয়ে যাক। এখনও ন’দিদির গাড়ি আছে, ছেলে আছে, ছেলের বউ আছে। এখনও চড়কডাঙার মিত্তির-গিন্নীর দেমাক আছে, চালপটির চাটুজ্জেদের কারবার আছে। সরকারবাবু যখন এসে বলে—জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, বাজারে মাল পাওয়া যাচ্ছে না, তখন মা-মণির মেজাজ গরম হয়ে ওঠে। রেগে গিয়ে বলেন—কেন? পাওয়া যাচ্ছে না কেন?

যেন শিরিষ ঘোষের পুত্রবধূর মেজাজের তোয়াক্কা করেই পৃথিবীর চলা উচিত!

কিন্তু না, তিনি সন্তুষ্ট হন মনে মনে। তিনি যেন খুশী হন। বাজার বন্ধ হয়ে যাক, সংসার ছারখার হয়ে যাক, কিছুই তাঁর এসে যায় না তাতে। আস্তে আস্তে অনেক দ্বিধা করেও তিনি হাঁটতে হাঁটতে বারান্দা পেরিয়ে সোনার ঘরের সামনে আসেন। তারপর বাইরে থেকে ডাকেন—খোকা

কোনও উত্তর আসে না ভেতর থেকে।

আবার ডাকেন—সোনা—

এবারও কোনও উত্তর নেই। মা-মণি আস্তে আস্তে দরজাটা ফাঁক করে ভেতরে চেয়ে দেখেন। খোকার বিছানা যেমন-তেমনভাবে অগোছালো হয়ে পড়ে আছে। ঘরটা ঝাঁটও দেওয়া হয় না হয়ত। কতদিন এ-ঘরে আসেন না তিনি। খোকার সেই বিয়ের পর থেকেই আসেন না। কিন্তু গেল কোথায় সোনা? মাথার যন্ত্রণা হচ্ছিল, এর মধ্যেই কি সেরে গেল। তারপর কৈলাসকে জিজ্ঞেস করলেন—কোথায় গেল রে তোর দাদাবাবু?

কৈলাস বললে—দাদাবাবু তো নিচেয় গেছেন—লাইব্রেরী ঘরে!

আবার লাইব্রেরী ঘরে! মা-মণি বলেন—ওপরে ডেকে নিয়ে আয় তো—বলগে আমি ডাকছি—

কিন্তু বলেই আবার কী মনে হলো। বললেন—না, থাক, আমিই নিচেয় যাচ্ছি—

হঠাৎ সিঁড়ির মুখেই দেখা। সনাতনবাবুর একেবারে মুখোমুখি পড়ে গেলেন। জামা- কাপড় বদলে নিয়েছে। জুতো পরেছে।

—আবার কোথায় যাচ্ছো?

সনাতনবাবু মুখ তুললেন। বললেন—কালকে বড় অসুস্থ দেখে এসেছিলাম তোমার বৌমাকে, তাই আর একবার যাচ্ছি—

মা-মণির চোখ দুটো বড় তীক্ষ্ণ হয়ে উঠলো আবার। জিজ্ঞেস করলেন—তাকে দেখতে যাচ্ছো, না আনতে যাচ্ছো?

সনাতনবাবু বললেন—আনতে—

মা-মণির মুখ দিয়ে হঠাৎ কোনও কথা বেরোল না। যেন কোনও রূঢ় কথা বলতে গিয়েও নিজেকে সংবরণ করে নিলেন তিনি। তারপর বললেন—এনে কি এ-বাড়িতেই তুলবে?

সনাতনবাবু বললেন-এ-বাড়ি ছাড়া আর কোনও জায়গা যে নেই তোমার বৌমার! –কেন? এত জায়গা থাকতে আবার জায়গা কেন নেই তার? এতদিন কোথায় ছিল?

সনাতনবাবু বললেন—এতদিন যেখানে ছিল সেখানে আর থাকা উচিত নয়— থাকলে তার পক্ষেও খারাপ, আমাদের পক্ষেও খারাপ!

—আমাদের কথাটাও কি তুমি ভাবো?

সনাতনবাবু বললেন—আমাদের কথা ভাবি বলেই তো আনতে যাচ্ছি। তোমার বৌমা আসতে রাজী হয়েছে এবার।

—তার রাজী হওয়াটাই বুঝি বড় কথা হলো—আর আমার রাজী হওয়া-না-হওয়াটা বুঝি কিছুই নয়?

—বাড়ির বউ বাড়িতে আনার ব্যাপারে তোমার রাজী হওয়াই তো উচিত!

মা-মণি বললেন—উচিত-অনুচিতের কথা তো হচ্ছে না, কোনটা উচিত, আর কোনটা অনুচিত, তা আমি ভালো করেই জানি, তোমাকে আর তা শেখাতে হবে না।

সনাতনবাবু বললেন—আমি তো তোমাকে শেখাচ্ছি না, আমি বলছি কাব্যের কথা। আমি করছি আমার কর্তব্য। তুমি তোমার কর্তব্য কোর—

মা-মণি আর থাকতে পারলেন না। বললেন—দেখ খোকা, আমি তোমাকে বার- বার করে আগেও বলেছি, এখনও আবার বলছি, এ আমার বাড়ি—

সনাতনবাবু বললেন—আমি তা জানি মা-মণি—

—ছাই জানো! তুমি কতটুকু জানো শুনি? তুমি জানলেই বা কখন, আর শিখলেই বা কী? কেবল তো বই মুখে দিয়ে থাকো! সংসার তুমি কবে করলে যে শিখবে? তুমি তোমার নিজের কর্তব্য করেছো? কর্তব্যের কথা তো বলছো খুব! বউ-এর ওপর তোমার কর্তব্যের জ্ঞান তো দেখছি খুব টনটনে! আমার ওপর তোমার কর্তব্য নেই কোন? আমি কেউ না?

সনাতনবাবু বললেন-তোমার ওপর জ্ঞানত কোনও অবহেলা আমি করেছি কোনও দিন?

মা-মণি বললেন—কবে অবহেলা করোনি তাই বলো তো আগে! আমার কোনও কথা তুমি কোনদিন শুনেছো? আমার কোন কথাটা তুমি রেখেছো? দিনের পর দিন বউ আমার অপমান করেছে তোমার সামনে, একটা কথা তুমি তখন শুনিয়েছ বউকে? ঝি- চাকরদের বেহদ্দ করেছে আমাকে, কই, তখন তুমি আমার দিকটা একবারও ভেবে দেখেছ? আমি ভাল করতে চেষ্টা করিনি তোমার বউকে? আমি তার ভাল চাইনি? না কি তুমি ভাবো আমি গাল-মন্দই করেছি কেবল দিনরাত! এই এত লোক তো সাক্ষী আছে, কই, কেউ বলুক দিকি আমি বউকে কখনও একটা কড়া কথা শুনিয়েছিলুম! ন’দিদি কত বলেছে, নয়ন, অত আবদার দিসনি বউকে, অত আদিখ্যেতা ভাল নয়, কিন্তু তবু ভেবেছি, আহা, দশটা নয় পাঁচটা নয়, ওই একটা বউ আমার, সাধ-আহ্লাদ তো আমারও আছে, আমারও তো ছেলের বউ নিয়ে পাঁচজনকে দেখিয়ে ঘর-কন্না করতে সাধ যায়! কিন্তু তোমার বউ আমার সে-সাধে বাদ সাধেনি? বুকে হাত দিয়ে বলো তুমি সোনা, বাদ সাধেনি?

একটু হাঁফ ছেড়ে আবার বলতে লাগলেন—আর, কার জন্যে আমার সংসার করা শুনি? ছেলে-বউ-এর জন্যেই তো! যার ছেলে পর হয়ে গেল, যার বউ মুখের ওপর কথায় কথায় ঝাঁটা মারে, তার সংসার কি সংসার? তাকে তুমি সংসার বলো সোনা? যার নিজের মায়ের পেটের বোনের স্বভাব-চরিত্রের ঠিক নেই, যার নিজের কোথায় রাত কাটে তার ঠিক নেই, তাকে আবার তুমি ঘরে আনতে চাও? তোমার বুদ্ধি-সুদ্ধি কি এমন করেই লোপ পেতে হয়? এমন করেও পুরুষ-মানুষ বউ-এর বশ হয়? ছি ছি ছি

সনাতনবাবু বললেন—আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, আমি আসি—

—তবু তুমি যাবে? এত কথার পরও আমার কথা রাখবে না?

সনাতনবাবু বললেন—আমি আমার জন্যে যাচ্ছি না, তোমার ভালোর জন্যেই যাচ্ছি—

—তার মানে?

সনাতনবাবু বললেন—তার মানে বিরোধ থেকেই যত অশান্তির উৎপত্তি মা-মণি, আর কাউকে ভালো না-বাসতে পারলেই যত বিরোধের সৃষ্টি! ভালবাসলেই দেখবে সকলের সঙ্গে সব বিরোধ শেষ হয়ে গেছে! তখন দেখবে সকলকে ক্ষমা করতে পারবে, অন্য লোকের দোষগুলো আর দোষ বলে মনে হবে না তখন।

—এসব বুঝি তোমার বইতে লেখা আছে? ওই বইগুলোই হয়েছে যত নষ্টের গোড়া, ওই বইগুলোই আমি একদিন উনুনে পুড়িয়ে ফেলবো তবে আমার নাম! তা বইতে বুঝি মাকে ভালবাসার কথা লেখা নেই? কেবল বউকে ভালবাসার কথা লেখা থাকে?

সনাতনবাবু বললেন—আর দেরি করবো না মা-মণি, দেরি হলে আর ট্যাক্সি পাওয়া যাবে না! খুব গোলমাল চলছে চারদিকে—

শম্ভু পাশে। দাঁড়িয়ে ছিল। সনাতনবাবু বললেন—চল্‌—

মা-মণি চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সোনাকে চলে যেতে দেখে শেষবারের মত বললেন—যাচ্ছো যাও, কিন্তু জেনে রেখো, সেবারে যে অপমান করেছি, তার দশগুণ অপমানের জন্যে যেন তৈরি হয়ে আসে সে—

এ-কথার কোনও উত্তর না দিয়ে সনাতনবাবু চলেই যাচ্ছিলেন, হঠাৎ বাইরের গেটে একটা ট্যাক্সি এসে থামলো। হর্ন শুনেই শম্ভু দৌড়ে গিয়েছিল। এসে বললে-আপনাকে ডাকছেন দাদাবাবু,

— কে?

ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে এসেছে মিস্টার ঘোষাল। বললে-কোথাও বেরুচ্ছিলেন নাকি?

—আপনি? মিস্টার ঘোষাল না?

—কালকেও একবার আপনার বাড়িতে এসেছিলাম। আপনি ছিলেন না তখন বাড়িতে।

সনাতনবাবু বললেন—এখন হসপিটালে যাচ্ছি, আমার স্ত্রীকে দেখতে। আজকে আমার স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসবো ঠিক করেছি। চারদিকে যে রকম গোলমাল চলেছে, তাই একটু আগে-আগেই যাচ্ছি—

সামনে সতীর শাশুড়ীকে দেখেই চিনতে পেরেছে মিস্টার ঘোষাল। বললে—আপনি বোধহয় মিস্টার ঘোষের মা? আপনি আমারও মা মিসেস ঘোষ—বলে মিস্টার ঘোষাল হাত-জোড় করে প্রণাম করলে।

—এ কে সোনা?

মিস্টার ঘোষাল নিজেই নিজের পরিচয় দিলে। বললে—কী পরিচয় দিলে আপনি আমাকে চিনবেন বুঝতে পারছি না মা। তবে আপনার পুত্রবধূ আমাকে চেনে। মানে সতী।

সনাতনবাবু বললেন—আমার একটু তাড়া আছে মিস্টার ঘোষাল, চলুন না, আপনিও যাবেন আমার সঙ্গে হসপিট্যালে

মিস্টার ঘোষাল বললে—সেই কথা বলতেই তো আপনার কাছে এসেছি মিস্টার ঘোষ—

মা-মণি বললেন—তুমি আমার বউমাকে কী করে চিনলে?

—আজ্ঞে, আমি চিনবো না আপনার পুত্রবধূকে? তিনি তো আমার বাড়ির পাশের ফ্ল্যাটটাই ভাড়া নিয়েছেন! শুনেছি নাকি শাশুড়ীর অত্যাচারেই তিনি শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন—

—কে বললে তোমাকে এ-কথা? বউমা?

মিস্টার ঘোষাল বললে—হ্যাঁ তিনি নিজেই বলেছিলেন আমাকে। তারপর যে-সব কান্ড তাঁর দেখলাম, তাতে আমার বড় ঘেন্না হলো মা। আমি কতবার তাঁকে বললাম এ- কাজ ভাল নয়। এ-সব কাজ কারা করবে? যারা ভদ্রঘরের মেয়ে নয়—তারা। আপনি কেন এভাবে লাইফ লীড করবেন? এটা কী ভালো? কত বুঝিয়ে বললাম তাঁকে।

মা-মণি হঠাৎ বাধা দিলেন। বললেন—সে কীভাবে জীবন কাটাতো সেখানে?

—সে মা, আপনাকে আমি বলতে পারবো না। সে আপনার সামনে আমার মুখে বলতেও লজ্জা করছে। আপনি আর আমার কাছে সে-সব শুনতেও চাইবেন না। কোনও গৃহস্থ বাড়ির বউ সেভাবে জীবন কাটায়নি!

—তারপর?

মিস্টার ঘোষাল বলতে লাগলো—তারপর কত চেষ্টা করলাম তাঁকে ফেরাবার জন্যে। তিনি বললেন, আপনাদের এই বাড়ির সামনেই তিনি একটা বাড়ি ভাড়া নেবেন, নিয়ে আপনাদের চোখের সামনেই তিনি কেলেঙ্কারি চালিয়ে যাবেন! তাতেও আমি বাধা দিলাম—

—তারপর?

—তিনি কিন্তু আমার কথা শুনলেন না। তিনি এই সামনেই মিস্টার মিত্র বলে একজন ভদ্রলোকের বাড়ির সামনের পোরশ্যান ভাড়া নিলেন।

—তারপর?

—তারপর যখন দেখলুম কিছুতেই আর তাঁকে বন্ধ করা যাবে না, তখন একটা চাকরি করে দিলাম আমাদের রেলওয়ের আপিসে। ভাবলাম হয়ত শোধরাবেন। হয়ত আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন! কিন্তু শেষকালে দেখলাম একবার স্বভাব যার বিগড়ে যায়, তাকে শোধরানো বড় শক্ত! শেষকালে শরীর আরো খারাপ হলো, হতে হতে একেবারে উইক হয়ে পড়লেন, তখনও একবার শেষ চেষ্টা করলাম। যদি ফেরেন! কিন্তু আর পারলাম না। তখন একদিন আপিসের ভেতরেই ফেন্ট হয়ে পড়লেন—

সনাতনবাবু এতক্ষণে কথা বললেন—আপনি যদি না যান, তাহলে আমি একলাই যাই মিস্টার ঘোষাল, আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে—

মা-মনি বললেন—নিজের কানে এত কথা শোনার পরও তোমার সেখানে যেতে প্রবৃত্তি হচ্ছে?

সনাতনবাবু বললেন—এত কথা শোনার পরেই তো বেশি করে যেতে ইচ্ছে করছে—

তোমার ঘেন্না হওয়া উচিত সোনা। এ জন্মেও তোমার আর আক্কেল হবে না দেখছি—

মিস্টার ঘোষাল বললে—কিন্তু যাচ্ছেনটা আপনি কোথায়?

—হপিট্যালে। আজকে আমি তাঁকে যেমন করে পারি বুঝিয়ে-সুজিয়ে নিয়ে আসবোই। এর পরে আর চুপ করে থাকা যায় না।

মিস্টার ঘোষাল হেসে উঠলো। বললে—কিন্তু তিনি তো আর হস্পিটালে নেই!

— নেই?

না, নেই।

সনাতনবাবু যেন আকাশ থেকে পড়লেন! বললেন—কেন, নেই তো, তাহলে কোথায় গেলেন তিনি?

মিস্টার ঘোষাল এবার খুব জোরে তার চুরোটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লে। বললে— মিস্টার সেন তাঁকে নিয়ে গেছে—

মা-মণি বললে—কে? কার কথা বললে?

মিস্টার ঘোষাল বললে—দীপঙ্কর সেন, আমারই য়্যাসিস্টেন্ট—

দীপু?

মিস্টার ঘোষাল বললে—হ্যাঁ, সেই তাকে হসপিট্যাল থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে—

সনাতনবাবু জিজ্ঞেস করলেন—কোথায় নিয়ে গেছে?

—সে কি আর কাউকে জানিয়ে নিয়ে গেছে ভেবেছেন?

সনাতনবাবু বললেন—তাহলে দীপুবাবুর বাড়িতেই আছে সতী। তাঁর বাড়িতেই যাবো-সেখানে গেলেই পাওয়া যাবে—

—না! মিস্টার সেন তেমন কাঁচা লোক নয়। বাড়িতেও সে নেই।

সনাতনবাবু তবু কিছু বুঝতে পারলেন না। বললেন—বাড়িতে নেই তো কোথায় আছেন?

—সেই কথা বলতেই তো এসেছি আজকে আপনার কাছে। তাকে পুলিসে ধরেছে। আজকে আপিসেও আসেনি সে। আপিসে আর আসবেও না সে। কনভিকশন্ হলে চাকরিও আর থাকবে না তার। তাকে আপিস থেকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে—

সনাতনবাবুর তখনও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না কথাগুলো। যেন সমস্ত গোলমাল হয়ে যাচ্ছিল। শম্ভুও চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষণ!

মা-মণি বললেন—তাহলে, কী ভাবছো, যাও, আনতে যাও বউকে—

মিস্টার ঘোষাল বললে—আমাকে আপনি চেনেন না মা, হয়ত ভাবছেন, এত কথা কেন আমি বলতে এলাম আপনাদের কাছে? ভাবছেন আমার কীসের স্বার্থ এতে! কিন্তু পৃথিবীতে স্বার্থটাই কি সব? একটা সংসার ভেঙে-চুরে যাক, সেটা কে চায়? কেউ চায় না, আমিও চাই না। আপনারা তাঁকে বাড়িতে নিয়ে এসে সুখে ঘর-করনা করুন, সেইটেই আমি চাই—

মা-মণি বললেন—আমার আর সুখ চাই না বাবা, সুখের ওপর ঘেন্না ধরে গেছে— সনাতনবাবু বললেন-এ আমি বিশ্বাস করি না মিস্টার ঘোষাল, দীপু-বাবুকে আমি চিনি, আর সতীকেও আমি চিনি—

—সে তো সুখের কথা মিস্টার ঘোষ। আপনি মিসেস ঘোষকে এ বাড়িতে নিয়ে আসুন, সেইটেই তো আমি চাই!

মা-মণি বললেন—না, অমন বউকে জেনে শুনে আমি আর ঘরে ঠাঁই দেব না—আমি বেঁচে থাকতে তো দেব না।

সনাতনবাবু এ-কথার কোনও জবাব দিলেন না। শম্ভু দাঁড়িয়ে ছিল। তাকে বললেন—চল্—

মা-মণি দেখছিলেন। বললেন—কোথায় যাচ্ছো আবার—

সনাতনবাবু বললেন—দীপঙ্করবাবুর বাড়িতে—কিম্বা তাঁর আপিসে—

–মিস্টার ঘোষাল বললেন—কিন্তু তিনি তো সাসপেন্ডেড হয়ে আছেন—

—তাহলে বাড়িতেই যাবো—

—কিন্তু বাড়িতেও তাকে পাবেন না।

—কেন?

মিস্টার ঘোষাল বললে—তাকে পুলিসে ধরে নিয়ে গেছে কাল রাত্রে,–

মা-মণি পর্যন্ত চমকে উঠলেন। বললেন— পুলিসে ধরেছে? কেন? চুরি করেছিল নাকি?

সনাতনবাবুও এতখানির জন্যে যেন ঠিক প্রস্তুত ছিলেন না। বললেন—সে কি? কেন?

মিস্টার ঘোষাল আবার চুরোটের ধোঁয়া ছাড়লে। বললে—আমার আবার একটা কাজ আছে এদিকে, অনেক কাজ ফেলে এদিকে এসেছিলাম শুধু আপনাদের খবরটা দিতে। জানি না, আপনাদের ভালো করলাম কি মন্দ করলাম। যদি অন্যায় কিছু করে থাকি তো আমাকে আপনারা ক্ষমা করবেন। কারণ এখন মনে হচ্ছে খবরটা না-বললেই হয়ত ভালো করতাম—

মা-মণি বললেন—না বাবা, তুমি আমাদের ভালই করলে, আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীর কাজই করলে। তুমি বাবা এখন চলে যেও না, একটু বোস, কথাগুলো আমার ছেলেকে আর একটু শোনাও, ওর একটু চৈতন্য হোক—

মিস্টার ঘোষাল বললে—এখন আমাকে মাপ করবেন মা, আপনি আমার মায়ের তুল্য, আপনার কথা অগ্রাহ্য করি এমন ক্ষমতা আমার নেই, কিন্তু মাথার ওপর আমার অনেক ঝঞ্ঝাট, অনেক ঝামেলা ঝুলছে। এখন তো আর জেন্টেলম্যানদের কলকাতায় বাস করা সম্ভব নয়, একটু ভালোমানুষি করেছেন কি সবাই আপনার মাথায় চাঁটি মেরে যাবে, সবাই আপনাকে বিপদে ফেলে দেবে—

মা-মণি বললেন—সে আর বোল না বাবা, আমি তা হাড়ে হাড়ে বুঝছি

মিস্টার ঘোষাল বললে—এখন আর কতটুকুই বা বুঝছেন, দিন কতক যাক, তখন আরো বুঝবেন, এই ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট আছে বলে তবু এখনও আমরা ন্যায়-বিচার পাচ্ছি, এর পরে যদি শ্যামাপ্রসাদের রাজত্ব হয় কি গান্ধীর রাজত্ব হয় তো প্রাণ বেরিয়ে যাবে—। আমরা গভর্নমেন্ট আপিসে চাকরি করি, আমরাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি, আপনি একজন সম্ভ্রান্ত মহিলা, আপনি আর কতটুকুই বা তার টের পাবেন?

—খুব পাচ্ছি বাবা, খুব পাচ্ছি। দেখ না, এখনই ভাড়াটেরা নিয়ম করে ভাড়া দেয় না, এর পরে কি আর বাড়িওয়ালাকে তারা মানবে? অত কথা কী, বিশ্বাস করে যার হাতে কাগজ-পত্র সব দিয়েছিলাম, সেই আমার ব্যারিস্টারই সব লুটে পুটে নিলে বাবা, দু’দিন বাদে আর খেতে পারো না, এমনি অবস্থা করে দিয়েছে—

মিস্টার ঘোষাল যেন আকাশ থেকে পড়লো। বললে—সে কি?

—হ্যাঁ বাবা, ওই আমার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করো না, আমি কি তোমার সঙ্গে মিছে কথা বলছি!

—আপনার ব্যারিস্টার আটনাকে ঠকিয়েছে? এ-রকম তো বড় হয় না।

—হয় বাবা, কলিযুগে সবই হয়। কলিযুগ না হলে হিন্দু বাড়ির বউই কি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া করে কলকাতা শহরের বুকে? কলিযুগ না হলে কি বাড়ির-বউ হয়ে রেলের আপিসে বসে মদ্দাদের সঙ্গে চাকরি করে? এমন কথা আগে কেউ কখনও শুনেছ? এ যে ঘোর কলিযুগ বাবা—

সনাতনবাবু নিজের মনে তখনও কী যেন ভাবছিলেন। বললেন—এ আমি বিশ্বাস করি না—

—কী বিশ্বাস করো না? মা-মণি সনাতনবাবুর দিকে চেয়ে প্রতিবাদ করে উঠলেন।

মিস্টার ঘোষাল বললে—কিন্তু আমি তো আপনাকে বিশ্বাস করতে বলছি না—

আমার কর্তব্য আমি করে গেলুম, এখন আপনাদের ভাল-মন্দ আপনারা বুঝবেন—

—কিন্তু দীপঙ্করবাবুকে কেন পুলিসে ধরেছে?

মা-মণি বললেন—তা চুরি-বাটপাড়ি করেছিল বোধহয়—আমি তখনই জানি স্বভাব- চরিত্র ওর ভাল নয়—

মিস্টার ঘোষাল বললে—না, চুরি-বাটপাড়ি করেনি মিস্টার সেন —

—তাহলে কীসের জন্যে ধরেছে?

মিস্টার ঘোষাল শেষবারের মত চুরোটটা টেনে ধোঁয়া ছেড়ে বললে-কীসের জন্যে তা এখনও বুঝতে পারছেন না? পরস্ত্রীকে নিয়ে ইলোপ করবার জন্যে-—

কথাটা বলেই মিস্টার ঘোষাল হাত-জোড় করে নমস্কার করে চলে গেল। বললে — আমি আসি মা, পরে আবার একদিন আসবো—

মা-মণি আর সনাতনবাবুর মুখের ওপরেই মুখ ঘুরিয়ে ট্যাক্সিতে গিয়ে উঠলো মিস্টার ঘোষাল।

সকল অধ্যায়

১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১
২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২
৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩
৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪
৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫
৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬
৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭
৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮
৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯
১০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০
১১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১১
১২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১২
১৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৩
১৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৪
১৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৫
১৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৬
১৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৭
১৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৮
১৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৯
২০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২০
২১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২১
২২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২২
২৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৩
২৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৪
২৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৫
২৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৬
২৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৭
২৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৮
২৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৯
৩০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩০
৩১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩১
৩২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩২
৩৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৩
৩৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৪
৩৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৫
৩৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৬
৩৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৭
৩৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৮
৩৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৯
৪০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪০
৪১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪১
৪২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪২
৪৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৩
৪৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৪
৪৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৫
৪৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৬
৪৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৭
৪৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৮
৪৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৯
৫০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫০
৫১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫১
৫২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫২
৫৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৩
৫৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৪
৫৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৫
৫৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৬
৫৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৭
৫৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৮
৫৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৯
৬০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬০
৬১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬১
৬২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬২
৬৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৩
৬৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৪
৬৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৫
৬৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৬
৬৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৭
৬৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৮
৬৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৯
৭০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭০
৭১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭১
৭২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭২
৭৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৩
৭৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৪
৭৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৫
৭৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৬
৭৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৭
৭৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৮
৭৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৯
৮০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮০
৮১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮১
৮২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮২
৮৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৩
৮৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৪
৮৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৫
৮৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৬
৮৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৭
৮৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৮
৮৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৯
৯০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯০
৯১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯১
৯২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯২
৯৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৩
৯৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৪
৯৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৫ উপসংহার
৯৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৬
৯৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৭
৯৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৮
৯৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৯
১০০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০০
১০১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০১
১০২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০২
১০৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০৩
১০৪. নির্ঘণ্ট : কড়ি দিয়ে কিনলাম – ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন