কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৪

বিমল মিত্র

কে?

সকাল বেলাই দীপঙ্কর লক্ষ্মীদির বাড়িতে এসে হাজির হয়েছে। দাতারবাবু সকাল বেলাই উঠে পড়ে। বললে—তুমি অনেকদিন পরে যে এবার?

দীপঙ্কর জিজ্ঞেস করলে—আপিস যাবার পথে একটা কথা বলতে এসেছিলাম, লক্ষ্মীদি কোথায়?

—তিনি তো এখনও ঘুমোচ্ছেন!

—সে কি? এখন তো সাড়ে ন’টা বাজছে—

দাতারবাবু বললে—কাল ফিরতে অনেক রাত হয়েছে কি না, একটু বোস না, এই দশটার সময়ই উঠে পড়বেন—

পাশেই ছোট ছেলে একটি দাঁড়িয়ে ছিল। কী চমৎকার চেহারা। বছর চোদ্দ-পনেরো বয়েস হবে। এই চেহারাটাকেই যেন বহু দিন আগে ফ্রেমে আঁটা দেয়ালের ছবিতে ঝুলতে দেখেছিল। বললে—এই বুঝি আপনার ছেলে দাতারবাবু?

—হ্যাঁ, মানস!

এর চোখই সেদিন কথা বলেছিল মনে আছে। এই ছেলের জন্যেই লক্ষ্মীদি অপারগ হয়ে একদিন চৌরঙ্গীর রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষ ডেকে এনেছে নিজের বাড়িতে। এই ছেলের জন্যেই একদিন অনন্ত রাও ভাবের মাতলামি সহ্য করেছে। এই ছেলের জন্যেই আজ লক্ষ্মীদির বাড়িতে সুধাংশুর এত প্রতিপত্তি। এই ছেলের জন্যেই সুধাংশু আজ এ- বাড়িতে তার আনাগোনার অবাধ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এই ছেলের জন্যেই আজ লক্ষ্মীদির এমন অবস্থা যে এখন সুধাংশুকে তাড়িয়ে দিলেও যাবে না। সে ছেলে এই! দীপঙ্কর একদৃষ্টে দেখতে লাগলো মানসের দিকে চেয়ে। মনে হলো সেই লক্ষ্মীদির প্রথম যৌবনের সমস্ত সৌরভটুকু নিংড়ে নিয়ে যেন মানস-কমল হয়ে ফুটে উঠেছে মানস।

দীপঙ্কর জিজ্ঞেস করলে—তোমার পরীক্ষা হয়ে গেছে? কী পরীক্ষা দিলে তুমি?

মানস মাথা নাড়লে। বললে—সিনীয়র কেম্ব্রিজ—

লজ্জা নেই, জড়তা নেই, সহজ সরলভাবে মুখের দিকে মুখ রেখে উত্তর দিলে মানস। লক্ষ্মীদির কলঙ্কের ওপর সমস্ত পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত একটা স্বপ্ন। লক্ষ্মীদির স্বপ্ন, দাতারবাবুর স্বপ্ন। দীপঙ্কর বললে—চমৎকার ছেলে আপনার দাতারবাবু, লক্ষ্মীদির মুখে নাম শুনেছিলাম, এখন দেখলাম—

তারপর একটু থেমে বললে-আপনি কেমন আছেন আজকাল?

দাতারবাবু বললে—তুমি কেমন দেখছ আমাকে?

—খাব ভালো।

দাতারবাবু বললে—তা হবে, হয়ত এত ভালো থাকাও ভালো নয় দীপুবাবু! –কেন, একথা বলছেন কেন দাতারবাবু?

দাতারবাবু বললে—তুমি তো জান একদিন অনেক অভাব ছিল আমার, টাকার অভাবের জন্যে জেলে যেতে যেতে বেঁচে গিয়েছি। আজ আবার অনেক টাকার মুখ দেখেছি দীপুবাবু, এখন অনেক টাকা আমাদের। এই বাড়ি ঘর গাড়ি, সবইতো দেখতে পাচ্ছ! কিন্তু মনে হচ্ছে এত ভালো থাকাও হয়ত ভাল নয়—

কী কথা বলতে গিয়ে কী কথা বেরিয়ে গেল দাতারবাবুর মুখ দিয়ে, তা নিজেও হয়ত বুঝতে পারেনি। কিন্তু দীপঙ্করই সামলে নিয়েছিল সেদিন। সেদিন আর বেশীক্ষণ অপেক্ষা করবার প্রবৃত্তি হয়নি সেখানে। সেই ঐশ্বর্য যেন দীপঙ্করকে পীড়া দিচ্ছিল। সেই সাজানো-গোছানো বাড়ি, সেই শৌখিন ফার্নিচার, সেই বাবুর্চি, খানসামা, প্রত্যেকটা মানুষ, প্রত্যেকটা জিনিস যেন দীপঙ্কররের চোখে আঙুল দিয়ে বলছিল—কড়ি দিয়ে সব কেনা যায়, সব কেনা যায় কড়ি দিয়ে—

দাতারবাবু বলেছিল—সে কি, উঠছ কেন তুমি? তোমার লক্ষ্মীদির সঙ্গে দেখা করবে না?

দাতারবাবু বলেছিল—না দাতারবাবু, আমি আর থাকতে পারব না, আমাকে এখনি আপিসে যেতে হবে—। আমি আবার শীঘ্রি বদলি হয়ে যাচ্ছি কলকাতা থেকে

—কোথায়?

দীপঙ্কর বললে—ময়মনসিংহ।

—কেন? হঠাৎ বদলি হবার কথা উঠলো কেন?

দীপঙ্কর বললে—ওই যে আপনি যা বললেন, আমারও তাই—এত বেশি ভালো হয়ত ভালো লাগছে না—

—তাহলে, তুমি কলকাতা ছেড়ে চলে যাবে?

দীপঙ্কর বললে—কলকাতা শহরকে ভালোবাসি বলেই কলকাতা ছেড়ে চলে যাব। কলকাতার সবটাই যেন বেশি-বেশি। এখানকার ভালোটাও বেশি, এখানকার খারাপটাও বেশি। এখানে পুণ্যও বেশি পাপও বেশি, এখানে টাকাটাও বেশি, টাকার অভাবটাও বেশি—এত বেশি-বেশিটা হয়ত ভালো লাগছে না—চেষ্টা করলে হয়ত ট্র্যান্সফারটা ঠেকিয়ে রাখা যেত। কিন্তু ভেবেছি সে-চেষ্টাও করবো না আমি!

দাতারবাবু বললে—বোধহয় আমরাও কলকাতা ছেড়ে চলে যাবো দীপুবাবু। তোমার লক্ষ্মীদি বলছিল—

—আপনারাও যাবেন? কেন? হঠাৎ?

দাতারবাবু বললে—সুধাংশুবাবু ট্র্যান্সফার নিয়ে চলে যাচ্ছেন দিল্লিতে, তাই আমরাও যাচ্ছি, দিল্লীতে আরও বেশি কন্‌ট্র্যাক্ট আরও বেশি পারমিট পাওয়া যায়—আর সুধাংশুবাবুই যে সাপ্লাই ডিপার্টমেন্টের সিনীয়র সেক্রেটারী, ওঁর হাতেই তো সব। ওঁকে বাদ দিয়ে ওয়ার-মিনিস্ট্রিই অচল হয়ে পড়বে যে! ওঁর কাছাকাছি থাকাই তো ব্যবসার পক্ষে ভাল!

দীপঙ্কর বললে—আচ্ছা তাহলে এখন চলি, আর দেরি করলে আপিসের দেরি হয়ে যাবে আবার—একটা কথা শুধু বলে দেবেন লক্ষ্মীদিকে—লক্ষ্মীদির বাবা মারা গেছেন—

—সে কি? ভুবনেশ্বরবাবু? কবে? কে বললে তোমাকে?

দীপঙ্কর বললে—কেউ বলেনি, আমি বার্মা ইভাকুয়ীজ্‌ আপিস থেকে খবর পেয়েছি। হয়ত লক্ষ্মীদির এ-খবর শুনে কিছু মনে হবে না, কিন্তু তবু খবরটা দেওয়া কর্তব্য মনে করে দিয়ে গেলাম। খবরটা শুনে যার সবচেয়ে কষ্ট হবে সেই সতীই খবরটা এখনও জানে না—তাকেও খবরটা দিতে হবে! আমি চললুম, আপনি বলবেন, আমি এসেছিলুম—

আর কিছুক্ষণ থাকলেই হয়ত সেদিন লক্ষ্মীদিকে খবরটা মুখোমুখি দেওয়া যেত, কিন্তু দীপঙ্করের যেন মনে হয়েছিল সত্যিই এ-সব ভাল নয়। লক্ষ্মীদি সুখী হয়েছে হোক, কিন্তু কোন্ মূল্যে? সততার মূল্য, আন্তরিকতার মূল্য, সত্যের মূল্য দিয়ে যা পাওয়া নয়, তাকে দীপঙ্করের বড় ভয়। সে-পাওয়া তো ক্ষণিক পাওয়া। সে-পাওয়া তো পাওয়ার প্রবঞ্চনা। তার চেয়ে সতীই ভালো। সতী পায়নি, কিন্তু না-পাওয়ার পরিতৃপ্তি দিয়ে নিজেকে তো প্রবঞ্চনা করেনি লক্ষ্মীদির মত!

সেদিন আপিসে যাবার আগেই মনে মনে অনেক পরিকল্পনা করে গিয়েছিল দীপঙ্কর। অনেকগুলি কাজ ছিল মাথায়। প্রত্যেক দিন ফাইলের স্তূপের মধ্যে সে- কাজগুলো হারিয়ে যেত। লক্ষ্মীদির বাড়ি থেকে বেরিয়ে মনে মনে সঙ্কল্প স্থির করে নিলে। প্রথমেই লক্ষ্মণ সরকারের খবর নিতে হবে। গাঙ্গুলীবাবুর লিঙ্-ভেকেন্সিতে লক্ষ্মণ সরকার ঢুকেছে আপিসে সেই গাঙ্গুলীবাবুরই বা কী খবর। এতদিন কাশ্মীরে গেছে। একটা খবরও দেয়নি। টাকার দরকার হলেও লিখে জানাবার কথা ছিল। হাওড়া স্টেশনের প্লাটফরমের ওপর দাঁড়িয়ে দীপঙ্কর ভাল করে বলে দিয়েছিল—টাকার দরকার হলেই আমাকে জানাবেন চিঠি দিয়ে, লজ্জা করবেন না যেন—

দীপঙ্কর আরো বলেছিল—আপনার স্ত্রী যা খুশি কিনতে চাইলে টাকার জন্যে যেন বারণ করবেন না—

গাঙ্গুলীবাবুর সেই মুখখানার কথাও বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠতো। কার কথাই বা ভেসে উঠতো না দীপঙ্করের মনে! শুধু কি লক্ষ্মণ সরকার? শুধু কী গাঙ্গুলীবাবু? আরো কত লোক আছে দীপঙ্করের চারপাশে! ক্ষীরোদা। ক্ষীরোদার শান্ত নির্বাক মূর্তিটা বাড়িতে থাকলেই চোখে পড়তো। আগে যাও বা একটু কথা বলতো, সন্তোষ-কাকার মৃত্যুর পর তাও বলতো না। মৃন্ময়ী যেন একেবারে পাথরে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।

কাশী এসে সেদিন জিজ্ঞেস করেছিল-দাদাবাবু?

দীপঙ্কর মুখ তুলে বললে—কিছু বলবি?

—আমরা কলকাতা ছেড়ে বদলি হয়ে যাচ্ছি নাকি? কবে যাবো?

—তোকে কে বললে?

—আপনিই তো বলছিলেন সেদিন। আমি দিদিমণিকে তাই বলছিলাম। শুনে দিদিমণি খুব ভয় পেয়ে গেল!

দীপঙ্কর জিজ্ঞেস করলে—কেন ভয় পেয়ে গেল কেন দিদিমণি?

কাশী বললে-তা জানি না—

তারপর একটু থেমে কাশী আবার বললে—দিদিমণির বিয়ে হবে না দাদাবাবু?

বিয়ে! দীপঙ্কর চমকে উঠলো। বললে–দিদিমণির বিয়ের কথা তোকে কে জিজ্ঞেস করলে? দিদিমণি নিজে?

কাশী তখন ভয় পেয়ে গেছে। বললে—না, দিদিমণি কিছু বলেনি, আমি নিজের থেকেই বলছি—

কাশী আর এ সম্বন্ধে কথা বাড়ালে না। আস্তে আস্তে ঘরের বাইরে চলে গেল। দীপঙ্কর আর কিছু বলেনি সেদিন। এ সম্বন্ধে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি কোনওদিন। কিন্তু কাশীর কথাতেই যেন খোঁচাটা আবার নতুন করে বুকে গিয়ে ঠেকলো। একটা হাহাকার বেরিয়ে এল দীর্ঘশ্বাস হয়ে। যেন একটা মহা অপরাধ দীপঙ্করের কাঁধের ওপর চাপিয়ে গেছে সন্তোষ-কাকা। সন্তোষ-কাকা তার কেউই নয়—কিন্তু কেউ না হয়েও সন্তোষ- কাকা যেন অনেকখানি জায়গা জুড়ে বসে আছে দিনরাত। দয়া যেন দায়িত্বে রূপান্তরিত হয়ে উঠেছে আজ!

আরো মনে আছে সেদিন রাত্রেই সদর দরজার কড়া নাড়ানাড়িতে দীপঙ্কর সচকিত হয়ে উঠেছিল। কে? এত রাত্রে কে কড়া নাড়ে?

কাশী দৌড়তে দৌড়তে ওপরে উঠে এসেছিল। হাঁফাচ্ছিল তখনও। বললে— দাদাবাবু, গোরা পুলিস এসেছে—

—গোরা পুলিস?

দীপঙ্কর তাড়াতাড়ি নিচেয় গিয়ে দেখেছিল দু’জন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সার্জেন্ট সাদা পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে বাইরে। এ রকম পুলিসের মুখোমুখি হবার অভিজ্ঞতা আছে দীপঙ্করের। রায় বাহাদুর মজুমদারের বীভৎস মূর্তিটাও মনে আছে। কিন্তু তখন যুদ্ধের সময় নয়। তখন ডিফেন্স-অব-ইন্ডিয়া অ্যাক্ট হয়নি। আজ নতুন করে দীপঙ্করের সমস্ত মুখে ভয়ের ছায়া ফুটে উঠলো। ভয় নিজের জন্যে নয়, যতটা আর একজনের জন্যে!

দীপঙ্কর বললে—আমিই দীপঙ্কর সেন —

—কিরণ চ্যাটার্জিকে আপনি চেনেন?

দীপঙ্কর বললে—হ্যাঁ—আমি চিনি, তার মা’কেও আমি চিনি। আমরা ক্লাসফ্রেন্ড—। ছোটবেলার বন্ধু আমার কিরণ।

—তার বাড়ি আপনি চেনেন?

—চিনি। প্রত্যেক মাসে আমি তার মার সঙ্গে দু’একবার দেখা করে আসি—

—হোয়াই?

দীপঙ্কর বললে—তার মাদার খুব গরীব। তার মা’কে আমি মাসে মাসে কুড়ি টাকা করে চ্যারিটি করি।

—কিরণ লাস্ট ওয়ান-ইয়ারের মধ্যে আপনার এ-বাড়িতে কখনও এসেছিল?

দীপঙ্কর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে পুলিস দু’জনের দিকে চেয়ে রইল। যেন তারা তার মুখের দিকে চেয়ে তার সততার পরীক্ষা করছে। যেন দীপঙ্করের সততার ওপর কিরণের নিরাপত্তা নির্ভর করছে। দীপঙ্করের একটা উত্তরের ওপর কিরণের জীবন-মরণ নির্ভর করছে। হঠাৎ দীপঙ্করের চোখের সামনে কিরণের নির্ভীক চেহারাটা ভেসে উঠলো। কিরণ যেন বললে—সত্যি কথা বল, সত্যি কথা বল্ তুই দীপু, প্রাণমথবাবুকে মনে করে দেখ, কখনও মিথ্যে কথা বলবি না প্রতিজ্ঞা করেছিল। তাতে আমার যা হয় হোক—

পুলিস আবার প্রশ্ন করলে—বলুন, বলুন, কখনও এসেছিল কিনা কিরণ চ্যাটার্জি?

দীপঙ্কর জীবনে বহুবার নিজের আত্মার মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু তখনও পর্যন্ত এমন করে এমন অকরুণভাবে কখনও মুখোমুখি হতে হয়নি। তখন যুদ্ধের এক কঠোর পরিচ্ছেদ চলেছে পৃথিবীতে। এক দিকে মানুষের দম্ভ আর এক দিকে নিরীহ অস্তিত্বের প্রশ্ন। দম্ভে দম্ভে সমস্ত পৃথিবীর স্থল জল অন্তরীক্ষ পরিব্যাপ্ত। সাধারণ নিরীহ অস্তিত্ব- সন্ধানী মানুষ সে-দম্ভের তলায় একেবারে নিষ্পেষিত হয়ে আর্তনাদ করছে। আকাশে শূন্যচারী হিংসা, বাতাসে বারুদের গন্ধ। মানুষ কেবল মানুষকে হত্যা করবার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে পেরু থেকে ফিলিপাইনস পর্যন্ত সমস্ত ভূখণ্ডে। পৃথিবী দুভাগ হয়ে গেছে দু’দলের ক্ষোভের আর অত্যাচারের ভয়ে। দীপঙ্কর একলা তার কতটুকু হিসেব করতে পারে? এত ক্ষমতা সে কোথায় পাবে? দু’টি মানুষকে আজ পর্যন্ত মিলিয়ে দিতে পারলো না সে একটি সুষ্ঠু গ্রন্থি দিয়ে, একটি মানুষকেও সান্ত্বনার শান্তি দিয়ে সজীব করে তুলতে পারলো না। তাহলে সে কতটুকু ক্ষমতার অধিকারী। অন্যের যন্ত্রণায় কাতর হওয়াটাই কি বড় কথা! আর অন্যের ক্ষতি? ক্ষতিই বা সে কেমন করে করবে? কিরণ তো দূরের কথা, কারো ক্ষতিও তো জ্ঞানত করতে পারবে না সে। ক্ষতি করতেও তো ক্ষমতার দরকার হয়!

কিন্তু সত্য যে আরো বড়। জীবনের চেয়েও বড়, মৃত্যুর চেয়েও বড়। পাপ, পুণ্য, ধর্ম, ইহলোক, পরলোক সব কিছুর চেয়েও যে সত্য বড়। সেই সত্যকেই সে পরিত্যাগ করবে!

দীপঙ্কর সোজাসুজি চাইলে দুজনের মুখের দিকে। সত্যিই যেন দুটো বুলডগ্‌। রক্তপান করবার জন্যে উদ্‌গ্রীব হয়ে আছে। যে কোনও প্রকার রক্ত চাই। হয় কিরণের না-হয় দীপঙ্করের, না-হয় আর কারো। কোনও ইন্ডিয়ানকে আর বিশ্বাস নেই। সব ইন্ডিয়ান কংগ্রেসের লোক। আর কংগ্রেসের লোক মানেই প্রো-হিটলার। ইন্ডিয়ানরা সবাই চায় ব্রিটিশ এ-যুদ্ধে হেরে যাক, ইন্ডিয়ানরা সবাই চায় হিটলার এ-যুদ্ধে জিতুক। বুলডগরা চিনে নিয়েছে ইন্ডিয়ানদের। এরা সবাই এক-একটা আস্ত সুভাষ বোস।

হঠাৎ কিরণের মুখটা আবার ভেসে উঠলো চোখের সামনে। কিরণ আবার বলতে লাগলো—বল্ দীপু, তুই সত্যি কথাই বল—তুই সত্যবাদী, তুই ভালো ছেলে, তুই সংসারী মানুষ, আমি মরবো তাতে কারু কোনও ক্ষতি হবে না, তুই সত্যি কথা বল্। তোকে বাঁচতে হবে, তোকে আরো টাকা উপায় করতে হবে, তোকে বিয়ে করে ছেলে- মেয়ের বাবা হতে হবে, তুই এত সহ্য করতে পারবি না—বল্—

সেদিন মনে আছে সেই সার্জেন্ট দুটোর সামনে এক মুহূর্ত দ্বিধা করতে গিয়ে দীপঙ্কর সত্যি-সত্যিই কিরণকে বিপদে ফেলেছিল।

তারা আবার জিজ্ঞেস করলে—ইয়েস অর নো?

দীপঙ্কর সামনের দিকে মুখ তুললে। বললে—ইয়েস!

—কবে এসেছিল?

দীপঙ্কর তারিখটাও বললে। যেমন অবস্থায়, যে-সময়ে এসেছিল, তাও বললে। বুলডগ্ দুজন নিমেষের মধ্যে কী যেন পরামর্শ করলে। কী যেন দুর্বোধ্য ইঙ্গিতে আলোচনাও করলে। তারপর বললে—অলরাইট্,

তাদের ভঙ্গিতে মনে হলো, তারা যেন রক্তের গন্ধে আরো উন্মত্ত হায়ে উঠলো। হিটলারকে সামনে না পাক, কিরণকে পেলেও তাদের কাজ চলবে। মোটর-বাইক হাঁকিয়ে পাড়া কাঁপিয়ে সেদিন তারা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।

সকল অধ্যায়

১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১
২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২
৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩
৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪
৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫
৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬
৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭
৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮
৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯
১০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০
১১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১১
১২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১২
১৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৩
১৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৪
১৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৫
১৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৬
১৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৭
১৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৮
১৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৯
২০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২০
২১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২১
২২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২২
২৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৩
২৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৪
২৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৫
২৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৬
২৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৭
২৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৮
২৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৯
৩০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩০
৩১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩১
৩২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩২
৩৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৩
৩৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৪
৩৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৫
৩৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৬
৩৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৭
৩৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৮
৩৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৯
৪০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪০
৪১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪১
৪২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪২
৪৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৩
৪৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৪
৪৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৫
৪৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৬
৪৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৭
৪৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৮
৪৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৯
৫০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫০
৫১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫১
৫২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫২
৫৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৩
৫৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৪
৫৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৫
৫৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৬
৫৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৭
৫৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৮
৫৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৯
৬০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬০
৬১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬১
৬২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬২
৬৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৩
৬৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৪
৬৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৫
৬৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৬
৬৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৭
৬৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৮
৬৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৯
৭০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭০
৭১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭১
৭২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭২
৭৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৩
৭৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৪
৭৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৫
৭৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৬
৭৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৭
৭৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৮
৭৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৯
৮০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮০
৮১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮১
৮২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮২
৮৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৩
৮৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৪
৮৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৫
৮৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৬
৮৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৭
৮৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৮
৮৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৯
৯০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯০
৯১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯১
৯২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯২
৯৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৩
৯৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৪
৯৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৫ উপসংহার
৯৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৬
৯৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৭
৯৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৮
৯৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৯
১০০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০০
১০১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০১
১০২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০২
১০৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০৩
১০৪. নির্ঘণ্ট : কড়ি দিয়ে কিনলাম – ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন