কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৬

বিমল মিত্র

মানুষের জীবনের একপ্রান্তে আছে অস্তি, আর একপ্রান্তে নাস্তি। এই ‘হাঁ’ আর ‘না’র মধ্যে দিয়ে জীবনের গতি মহাজীবনের দিকে এগিয়ে চলেছে। ঠিক ঘড়ির দোলকের মত। একবার সে বাইরে আসে, আবার ভেতরে। একবার বলে আমি সংসারের মধ্যে বাঁচবো, আর একবার বলে সংসারের বাইরে।

সেদিন মিস্টার ঘোষাল চলে যাবার পর অনেকক্ষণ সতী চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল দরজায় খিল লাগিয়ে দিয়ে। পেছনে রঘু এসে ডাকতেই যেন সংবিত ফিরে এসেছিল।

—রান্না হয়ে গেছে দিদিমণি।

এর মধ্যেই রান্না হয়ে গেছে। এখন ক’টা বাজলো! এতক্ষণ কাটিয়ে দিয়েছে মিস্টার ঘোষালের সঙ্গে। কিছুই খেয়াল ছিল না তো তার। আশ্চর্য! আবার নিজের ঘরে ঢুকে আয়নাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল সতী! আবার নিজের মুখখানার দিকেই দেখতে লাগলো তেমনি করে। দীপঙ্কর আসবে না। মিস্টার ঘোষালের কথায় এতক্ষণে যেন দীপুর না-আসার কারণটা বোঝা গেল। এত ভয়! এত সঙ্কোচ! এত ঘৃণা!

সমস্ত মুখখানা আস্তে আস্তে কঠিন হয়ে উঠলো। মনে হলো দরকার নেই। দীপু, না আসুক, তাতে তার কিছুই ক্ষতি নেই। একলাই সে ‘এগিয়ে যাবে সামনে। যার কেউ নেই, তাকে কে সাহায্য করে সংসারে? কারো সাহায্যের প্রত্যাশায় তো সে জন্মায়নি এ- পৃথিবীতে। তার জন্মের পর যেমন মা’র মৃত্যু হয়েছে, তেমনি বাবারও মৃত্যু হতে পারতো। ধরে নেওয়া যাক, সংসারে সে নিরাশ্রয়, নিরবলম্ব। প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের সঙ্গে একটা ক্ষীণ সম্পর্ক শুধু আছে। সে-সম্পর্কটা না-থাকারই মত। আজ থেকে তার কথাও ভাববে না। এখানেই তার পূর্ণচ্ছেদ হোক। এই মুহূর্তে।

রঘু খাবার এনে দিলে। কী খেলে সতী কে জানে। নিজেও বুঝতে পারলে না কী সে খাচ্ছে।

—আপনি তো কিছুই খেলেন না দিদিমণি!

সত্যি, কিছুই খাওয়া গেল না। চাকরটা প্রাণপণে চেষ্টা করছে ভাল রাঁধতে। সতী বললে—রান্না তোমার খুব ভাল হয়েছে রঘু, আমি কিন্তু এত খাই না, তুমি কিছু মনে কোর না—

তারপর খাওয়া ছেড়ে উঠে গিয়ে নিজের ঘরে বিছানায় বসে পড়লো। সেই সকালে ঘুম থেকে ওঠা, আর রাত্রে ঘুমোতে যাওয়া। এই-ই তো জীবন। আস্তে আস্তে শুয়ে পড়লো বিছানার ওপর। এমনি করে আজকের দিনটাও চলবে। সন্ধ্যেবেলা সূর্য ডুবে যাবে। আবার কাল সকালে সূর্য উঠবে আকাশে। আবার রান্না করবে রঘু। আবার খেতে হবে। তারপর সন্ধ্যেবেলা আবার সূর্য অস্ত যাবে। এমনি করেই অনাদিকাল ধরে পৃথিবী চলছে, চলবে। কিন্তু একদিন সতী আর কিছু দেখতে পাবে না। বাইরে রঘু কাজ করছে। হয়ত বাসন মাজছে। খুট্-খাট্ শব্দ হচ্ছে মাঝে মাঝে। গড়িয়াহাট লেভেল ক্রসিং-এর পাড়ায় তখন খানিকক্ষণের জন্যে ক্লান্তি নেমে এল। আর ক্লান্তি নেমে এল সতীর মনের পরিধিতে। কালও রঘু এসে বাজারের টাকা নেবে। তার পরদিনও নেবে তার পরদিনও কিন্তু তারপর আর টাকা থাকবে না। লক্ষ্মীদির দেওয়া টাকাগুলো একদিন-না-একদিন ফুরিয়েই যাবে। তখনও দীপু আসবে না।

হঠাৎ কী যে হলো। বোধ হয় তন্দ্র এসেছিল। সতী উঠে বসলো বিছানায়। বেলা যেন পড়ে এসেছে। বাইরে এসে সতী ডাকলে—রঘু—

রঘু ঘুমোচ্ছিল বারান্দার ফালিটার ওপর। অঘোর ঘুম।

—রঘু, রঘু—

রঘু ধড়ফড় করে উঠে বসলো। সতী বললে—তুমি চলো রঘু আমার সঙ্গে, একবার যেতে হবে তোমাকে—

—কোথায়?

—ভবানীপুরে। তুমি একটা গাড়ি ডেকে নিয়ে এসো, আমি তোমায় বাড়িটা দেখিয়ে দেব। তুমি শুধু খবরটা নিয়ে আসবে বাড়ির ভেতর থেকে—

হঠাৎ বেশ ছিল। মনটা যেন কেমন টনটন করে উঠলো। মনে হলো, সব সূত্র যখন ছিড়ে-খুঁড়ে ছত্রখান হয়ে গেছে, তখনও যেন একটা মানুষের জন্যে কেমন আকর্ষণ অনুভব করছে। এও হয়ত সেই ঘড়ির পেন্ডলাম। দীপঙ্করই পেগুলামের কথাটা বলেছিল। একবার মন বলে—নেই। আর একবার বলে—আছে। এও যেন সেই নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দ। নিমেষ-উন্মেষের দ্বন্দ্ব। তা না হলে এমন কেন হয়! যাকে প্রাণপণে অস্বীকার করি আজ, কাল তার জন্যেই আবার কেন হাহাকার করে ওঠে অন্তরটা! একবার ভেতরে এসে কেন ভাবি বেশ আছি, আবার কেন বাইরের জন্যে মনটা ছট্‌ফট্ করে। তবে কি এরই নাম এগিয়ে যাওয়া!

কোথা থেকে একটা গাড়ি এনেছিল রঘু। সতী সেই গাড়িতেই উঠে বসলো। রঘু বসলো ড্রাইভারের পাশে।

তারপর লেভেল ক্রসিংটা পেরিয়ে গাড়ি একেবারে কলকাতার হৃৎপিন্ডের ওপর গিয়ে পড়লো।

—এবার কোন্ দিকে দিদিমণি?

শেষ পর্যন্ত হাজরা রোডের মোড় পেরিয়ে বাঁ দিকে প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের কাছে গিয়েই সতী বললে—এখানে থামাও—

গাড়িটা রাস্তার ফুটপাথ ঘেঁষে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। সতী বললে—ওই যে লাল তেতলা বাড়িটা দেখছো রঘু, ওর সামনে সদর-গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে যাবে তুমি, সোজা ভেতরে—

রঘু বললে—যদি কেউ কিছু জিজ্ঞেস করে?

সতী বললে—বলবে……

বলতে গিয়েও সতী থেমে গেল। সত্যিই তো, কেনই বা সে এল এখানে? কীসের আশায়? ভেতরে কার খবর সে নিতে এসেছে? কেন এত এতগুলো টাকা খরচ করে? মিছিমিছি শুধু কষ্ট। যদি খবর নেবার আগ্রহই থাকে তার সে তো সাহস করে নিজেই যেতে পারে।

সতী বললে—না, থাক, তোমার যাবার দরকার নেই, ফিরে চলো—গাড়িতে উঠে পড়ো তুমি—

রঘু আবার গাড়িতে উঠলো। ড্রাইভার গাড়িতে স্টার্ট দিলে। তারপর গাড়িটা ঘুরিয়ে হাজরা রোডের দিকে মুখ করতেই সতী আবার বলে উঠলো—না না, গাড়ি আবার ঘোরাও—

—কেন দিদিমণি?

সতী বললে—এত দূর যখন এসেছি, তখন ফিরে গিয়ে লাভ কী? তুমি বাড়ির ভেতরে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে বাড়ির চাকর-বাকর যাকে সামনে পাবে—

—কী জিজ্ঞেস করবো?

সতী বললে—জিজ্ঞেস করবে দাদাবাবু কেমন আছেন? শুধু এই, আর কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে না—এ খবরটা নিয়েই চলে আসবে। আমি এইখানে গাড়িতে বসে রইলুম—

গাড়িটা আবার রাস্তার ফুটপাত ঘেঁষে দাঁড়াল। রঘু দরজা খুলে বাইরে নামলে। তারপর সতী লক্ষ্য করলে রঘু ঠিক লাল রং-এর তেতলা বাড়িটার সদর গেটটার সামনে দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। আর দেখা গেল না তাকে। গাড়ির ভেতরে একলা-একলা বসেও সতী যেন ঘামতে লাগলো গরমে।

.

কতক্ষণ অপেক্ষা করেছিল সতী, সে-খেয়াল ছিল না সেদিন। দুপুর বেলা হাজরা রোডের মোড়ে তখন ভিড় নেই। হঠাৎ রঘু এল গাড়ির কাছে। পেছনে—পেছনে শম্ভু। বৌদিমণিকে দেখেই গাড়ির পা-দানিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলে।

—কী শম্ভু, কেমন আছো তুমি?

শম্ভু বললে—আজ্ঞে, বৌদিমণি, আপনি বাড়ির বাইরে গাড়িতে বসে আছেন, একবার ভেতরে আসবেন না?

সতী বললে—আমি আর ভেতরে যাবো না এখন, এমনি তোমাদের খবর নিতে এসেছিলুম। তোমার দাদাবাবু কেমন আছেন?

শম্ভু বললে—কিন্তু আপনি ভেতরে না-এলে দাদাবাবু আমার ওপর রাগ করবেন— সতী বললে—তুমি তাঁকে বোল না যে আমি এসেছিলাম এখানে। তোমরা সব ভাল আছো তো?

—না বৌদিমণি, ভালো নেই আমরা, আপনার পায়ে পড়ি, আপনি আসুন একবার ভেতরে, বাড়ির অবস্থাটা একবার দেখে যান—কী যে হাল হয়েছে আমাদের, আপনি নিজের চোখে দেখে যান, দাদাবাবু যেন কেমন হয়ে গেছেন আজকাল!

—কেন? কী হলো তাঁর?

—আজকাল আর কারোর সঙ্গে কথাও বলেন না। তাঁকে দেখবারও কেউ নেই, কেউ দেখেও না, তিনি খেলেন কি খেলেন না।

সতী বলে—তা তোমরা দেখতে পারো না? তুমি তো এতদিন ধরে আছো এ- বাড়িতে, তুমি তো পুরোনো লোক—

—দাদাবাবুর যত্ন করলে মা-মণি যে রাগ করেন বৌদিমণি।

—কেন?

শম্ভু বললে—মা-মণিকে তো আপনি চেনেন বৌদিমণি, বড় যে রাগী মানুষ! কারো ভালো দেখতে পারেন না যে।

সতী বললে—আচ্ছা, তুমি এখন যাও শম্ভু, তোমার মা-মণি আবার জানতে পারলে বকবে—

—না, মা-মণি তো বাড়িতে নেই।

—নেই? কোথায় গেছেন?

শম্ভু বললেন’মাসীমার সঙ্গে কোথায় বেরিয়েছেন দুপুরবেলা–আপনি আসুন, না, বাড়িতে দাদাবাবু ছাড়া আর কেউ নেই—

হঠাৎ সতী যেন নিজের মনেই একবার ভাবলে। কেউ নেই বাড়িতে! একলা আছেন। এতদিন পরে, এই দুর্ঘটনার পরে, আবার ঢুকবে এ-বাড়িতে? এই বাড়িরই ইঁটগুলোর মধ্যে কত বিনিদ্র রাত কেটেছে তার, কত অশান্তির প্রহর অতিক্রান্ত হয়েছে। সমস্ত কলকাতাটা যেন আবার চোখের সামনে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সেই দুপুরবেলা সতীর মনে হলো আবার যেন ভাল লাগছে তার। আবার যেন স্ত্রী হয়ে সংসার করতে ইচ্ছে হলো। ড্রাইভারটা এতক্ষণ চুপচাপ বসে ছিল। শিখ ড্রাইভার। কথাগুলোর কিছুই হয়ত বুঝছে না। এমন কত ঘটনার সঙ্গে তাকে মুখোমুখি হতে হয় প্রতিদিন। কলকাতা শহরে এসেছে সে কতদিন। এমন কত হাসি, কত কান্নার মধ্যেই তো, তাকে পেট চালাতে হয়েছে। সে জানে, এ-সব কিছুই নয়। এমন হয়েই থাকে হামেশা। এদিকে চোখ-কান দিতে নেই। মাথায় গোল ঝুঁটি নিয়ে সে সামনের দিকে চেয়ে ঝিমোচ্ছিল।

সতী বললে—কিন্তু গাড়িটা কি ছেড়ে দেব?

শম্ভু বললে—ছেড়ে দিন না, আমি আবার ট্যাক্সি ডেকে দেব আপনাকে—

ভাড়াটা মিটিয়ে দিলে সতী। তারপর বাড়ির দিকে যেতে-যেতে বললে—কখন ফিরবে তোমার মা-মণি?

—তা বলে যায়নি, ন’মাসীমার গাড়িতে যখন বেেিয়ছেন, তখন ফিরতে বেলা হবে—

রঘুও সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল। সতী বললে—তুমি নিচেয় থেক রঘু, আমি একটু পরেই ভেতর থেকে আসছি—

বাড়ির ভেতরেও সবাই বোধহয় খবরটা পেয়েছিল। বাতাসীর-মা দৌড়তে দৌড়তে এসেছে। গেটের গোড়ায় এসে হাঁ করে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিল। পেছনে ভূতির মা। কৈলাসও দৌড়তে দৌড়তে এসে দাঁড়িয়েছে। এতদিন পরে বৌদিমণি এসেছে। সবাই যে-যেমন অবস্থায় ছিল, তেমনি অবস্থায় এসে হাজির হয়েছে।

সতী কাছে আসতেই বাতাসীর-মা সামনে এগিয়ে এল। বললে-এ কী চেহারা হয়েছে তোমার বৌদিমণি?

সতী বললে—তোমরা সব ভালো আছো তো বাতাসীর-মা?

—আর ভালো! ভালো থাকবার আর কি যো আছে বৌদিমণি যে ভালো থাকবো!

কৈলাস হঠাৎ বলা-কওয়া নেই একেবারে সতীর পায়ে ধুলো নিয়ে মাথায় ঠেকালে। সতী এক-পা পেছিয়ে গেল। বললে—একি করছো কৈলাস! আমি কি হঠাৎ পর হয়ে গেলাম নাকি তোমাদের কাছে?

বাতাসীর-মা বললে—তুমি ছিলে না, বাড়ি একেবারে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল বৌদিমণি, একেবারে অন্ধকার—!

আজ নতুন করে সতীর চোখে যেন আবার জল এসে পড়লো। এরা সবাই এত ভাল! এত ভাল সবাই। আজ যেন সবাইকে আবার বড় আপনার মনে হলো। এই গেট্। এই গেটের ওপরেই দরোয়ান বসে থাকতো আগে।

—এখানে দরোয়ান কোথায় গেল?

—আহা, তার চাকরি গেছে বৌদিমণি! এবার আমাদেরও চাকরি চলে যাবে।

ভূতির মা বললে—তা এবার তুমি এখানে থাকবে তো গা? দেখ দিকিনি, তুমি ছিলে না, সমস্ত বাড়িটা কীরকম হাঁ-হাঁ করছিল—

সতী চারদিকে চেয়ে দেখছিল। বললে—ফুলের গাছগুলো বুঝি কেউ আর দেখে না? মালি নেই বুঝি?

সেই বিয়ের প্রথম দিনে এসে এই বাগানের দিকে চেয়েই অবাক হয়ে গিয়েছিল সতী। ঈশ্বর গাঙ্গুলী লেন থেকে হঠাৎ একেবারে প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের বাড়িতে— তখন এ যেন কল্পনার বাইরে ছিল। সেই সিঁড়ির দু’পাশে মোরাদাবাদী ভাসের ওপর ক্যাকটাস্। মেঝেগুলোও আর তেমন পরিষ্কার নয়।

—পরিষ্কার কে করবে বৌদিমণি, আমরা আজ মাইনে পাইনি কতদিন।

সতীও অবাক হয়ে গেল।

—মাইনে পাওনি?

—না, বৌদিমণি! সরকারবাবুও তো দেশে গেছে কাল। তার তো ছেলেমেয়ে আছে দেশে। তার কী করে চলে!

কেন এমন হলো এ-বাড়ির? কার পাপে এমন হলো? সিঁড়ির কাছে এসেও সতী খানিকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। মনে হলো যেন বাড়িটার অন্তরাত্মা সেই দুপুরবেলা বড় ক্ষীণ সুরে কাঁদছে। চমকে উঠলো সতী। সে কি! এই তো পাশেই শম্ভু রয়েছে, বাতাসীর-মা রয়েছে, ভূতির মা রয়েছে। এ তো পড়ো- বাড়ির নয়, তবে এ-কান্না কিসের। তবে কি ভুল করেছে সে! এদিক-ওদিক চাইতে লাগলো সতী

—ও কিচ্ছু না বৌদিমণি, ও পায়রা!

পায়রা! পায়রা তো ছিল না অ্যাতো! পায়রা কোথা থেকে এল। সতী কড়িকাঠের দিকে মুখ তুলে দেখলে।

বাতাসীর-মা বললে—ক’দিন হলো দেখছি, মুখপোড়া পায়রা ক’টা ওইখেনে এসে জুটেছে। দিনরাত কেবল কোঁ-কোঁ করে—

সতী লাইব্রেরী ঘরের দিকে যাচ্ছিল। শম্ভু বললে—ওদিকে নয় বৌদিমণি, দাদাবাবু ওপরে নিজের ঘরে—

–কেন, নিজের ঘরে কেন? শরীর খারাপ নাকি!

শম্ভু বললে—না, এই তো এতক্ষণ পড়ছিলেন, এই একটু আগে দেখলাম ওপরে গেলেন—

সতী সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে লাগলো। শম্ভুও চলতে লাগলো পেছন-পেছন। বাতাসীর-মা, ভূতির-মা, কৈলাস তারা আর এগোল না। সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে রইল। ভূতির-মা বললে—বৌদিমণি কি এ-বাড়িতে থাকতে এল নাকি বাতাসীর-মা? হঠাৎ এল কেন বলো তো?

—তুই থাম্ তো ভূতির-মা, নিজের সোয়ামীর কাছে না-এসে কোথায় যাবে শুনি?

ভূতির-মা বললে—কে জানে মা, আমরাও তো মেয়েমানুষ, এমন কান্ড ভূ-ভারতে দেখিনি

তেতলার সিঁড়ির মাথায় উঠে সতী একবার দাঁড়াল। বারান্দার শেষে শাশুড়ীর ঘরের দরজায় তালা ঝুলছে। তারই বাঁদিকে সতীর নিজের ঘর। নিজের ঘরের দিকে যেতেও সতীর পায়ে যেন বাধতে লাগলো।

শম্ভু বললে—যান না বৌদিমণি, যান, দাদাবাবু ঘরের ভেতরে আছে—

তবু যেন সতীর বাধো বাধো ঠেকতে লাগলো। এ যেন চুরি করে পরের ঘরে ঢোকা! শম্ভু আর এগোল না। সতী পায়ে-পায়ে নিজের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। দরজা ভেজানো ছিল। একবার কী রকম একটা সংকোচ হলো মনে। তারপর দরজটা ঠেলতেই ভেতর থেকে সনাতনবাবুর গলার আওয়াজ এলো—কে? মা-মণি?

তারপর সামনে সতীকে দেখে কেমন যেন অবাক হয়ে গেলেন। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন- তুমি?

সতী সোজা ভেতরে ঢুকে গেল। সনাতনবাবুও ততক্ষণে এগিয়ে এসেছেন। সতীর হাতটা ধরলেন। বললেন—তুমি? তুমি কোথা থেকে হঠাৎ?

সতী যেন আর দাঁড়াতে পারলে না। পায়ের কাছে বসে টলে পড়লো।

বললে—তুমি আমাকে ক্ষমা করো গো, ওগো, তুমি ক্ষমা করো আমাকে—

বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লো সতী। যেন চরম নির্ভরতার আশ্রয়ে এসে সতীর অন্তরাত্মার ভেতর থেকে আনন্দের একটা আর্তনাদ বেরিয়ে এল।

সনাতনবাবু বড় বিব্রত হয়ে পড়লেন। কী করবেন যেন বুঝতে পারলেন না। তাড়াতাড়ি সতীর কাঁধ দুটো ধরে তুলতে চেষ্টা করলেন। বললেন—ছি-ছি, করো কী, করো কী! তুমি দেখছি…..

সকল অধ্যায়

১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১
২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২
৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩
৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪
৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫
৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬
৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭
৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮
৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯
১০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০
১১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১১
১২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১২
১৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৩
১৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৪
১৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৫
১৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৬
১৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৭
১৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৮
১৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৯
২০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২০
২১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২১
২২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২২
২৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৩
২৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৪
২৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৫
২৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৬
২৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৭
২৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৮
২৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৯
৩০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩০
৩১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩১
৩২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩২
৩৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৩
৩৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৪
৩৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৫
৩৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৬
৩৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৭
৩৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৮
৩৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৯
৪০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪০
৪১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪১
৪২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪২
৪৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৩
৪৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৪
৪৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৫
৪৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৬
৪৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৭
৪৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৮
৪৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৯
৫০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫০
৫১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫১
৫২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫২
৫৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৩
৫৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৪
৫৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৫
৫৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৬
৫৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৭
৫৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৮
৫৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৯
৬০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬০
৬১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬১
৬২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬২
৬৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৩
৬৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৪
৬৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৫
৬৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৬
৬৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৭
৬৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৮
৬৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৯
৭০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭০
৭১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭১
৭২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭২
৭৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৩
৭৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৪
৭৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৫
৭৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৬
৭৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৭
৭৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৮
৭৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৯
৮০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮০
৮১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮১
৮২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮২
৮৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৩
৮৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৪
৮৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৫
৮৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৬
৮৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৭
৮৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৮
৮৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৯
৯০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯০
৯১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯১
৯২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯২
৯৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৩
৯৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৪
৯৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৫ উপসংহার
৯৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৬
৯৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৭
৯৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৮
৯৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৯
১০০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০০
১০১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০১
১০২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০২
১০৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০৩
১০৪. নির্ঘণ্ট : কড়ি দিয়ে কিনলাম – ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন