কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৮

বিমল মিত্র

সনাতনবাবু বললেন—আমি তোমার অনেক দেরি করে দিলাম—

সতী বললে—এমনি করে তুমি যদি আগে দেরি করিয়ে দিতে তাহলে আমার কপালে এত কষ্ট আর হতো না—

সনাতনবাবু বললেন—তাহলে তুমি চলো—আর দেরি করছো কেন?

সতী হঠাৎ বললে—তার চেয়ে তুমিই এখানে থাকো না—

— আমি?

—কেন, আমার কাছে থাকতে তোমার আপত্তি আছে? তুমি তো বলেছ আমি যা বলবো তুমি তাই-ই শুনবে! এবার থেকে তুমি তো আমার!

সনাতনবাবু বললেন—ক’দিন সারা রাত ঘুমই হচ্ছে না কি না! চারিদিকে যা গোলমাল চলছে!

—তা আমার এখানেই ঘুমোও না। আমার এখানে কি ঘুমোবার বিছানা নেই ভাবো? আমি কি ঘুমোই না মনে করেছ? তুমি আমার বিছানতেই শোবে চলো না। তুমি শুয়ে থাকবে আর আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেব—

—কিন্তু বাড়িতে মা জানে না যে আমি এখানে আসবো। তারা হয়ত ভাববে!

সতী বললে—তাহলে তুমি চলে যেতে চাও?

সনাতনবাবু বললেন—না না তা কেন, আমি এখানে থাকলে তোমাদের অসুবিধে হবে হয়ত—

সতী বললে—আমাদের যতই অসুবিধে হোক, তোমাকে আমি এ-সময়ে কোথাও যেতে দেব না—

—কিন্তু খবর দিয়ে আসিনি যে আমি!

—সে তারা ভাবুক, কিন্তু এখন এই অবস্থায় আমি তোমাকে কী করে একলা ছেড়ে দিই বলো? তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আমি যে কিছুতেই মনে শান্তি পাবো না। তাহলে তুমি এলে কেন? না এলেই তো পারতে!

—তাহলে থাকি!

সতী বললে—হ্যাঁ থাকো তুমি। অনেক দিন পরে তুমি আমি এক সঙ্গে থাকবো, চলো ওপরের ঘরে চলো—আমাদের এ-বাড়িতে কেউ নেই, আমার দিদি আছে, তার ঘরের দরজায় শেকল লাগিয়ে দেবখন। আর আমি রঘুকে বলছি তোমাদের বাড়িতে গিয়ে খবর দিয়ে আসবে।

—তাহলে চলো!

রঘুকে বলতেই রঘু রাজী। বললে—কেন যাবো না দিদিমণি, আমি তো সে-বাড়ি চিনি—

—সামনে যাকে পাবি তাকেই বলে দিবি যে দাদাবাবু এখানে আমাদের বাড়িতে আজ রাত্রে থাকবে। পারবি তো?

রঘু চলে যেতেই সতী দরজায় খিল লাগিয়ে দিলে। তারপর তাড়াতাড়ি তর-তর করে সিঁড়ি বেয়ে আবার ওপরের ঘরে গিয়ে ঢুকলো। সনাতনবাবু তখনও বিছনার ওপর আড়ষ্ট হয়ে বসে আছেন। সতী পাশে বসলো গিয়ে। বললে—জানো, কাল রাত্রির বেলা তোমাকে স্বপ্ন দেখেছিলুম—স্বপ্ন দেখলুম যেন তুমি আমার পাশেই শুয়ে রয়েছ—

সনাতনবাবু বলেন—আমিও তো সারারাত তোমার কথাই ভেবেছি

—তুমি ভালো করে আরাম করে বোস না, অমন আড়ষ্ট হয়ে আছো কেন?

সনাতনবাবু পা তুলে বসলেন। বললেন—আজ ক’দিন ধরে কলকাতায় খুব মারামারি হচ্ছে, খবরের কাগজে পড়ছিলুম, তখন থেকেই কেবল তোমার কথা ভাবছি, ভাবছিলাম তুমি একলা-একলা কেমন করে এ-বাড়িতে আছো—

সতী আরো কাছে সরে এল। বললে—এবার থেকে আমি তোমাকে ছেড়ে আর কোত্থাও যাবো না—তুমি তাড়িয়ে দিলেও যাবো না, তুমি চলে যেতে বললেও আমি তোমার কাছে থাকবো—

সনাতনবাবু বালিশের গায়ে হেলান দিলেন। সতী বললে—তুমি ভালো করে শোও না, ক’দিন ধরে তুমি রাত্রে ঘুমোও নি বলছিলে?

—না না, শোব না এখন তোমার সঙ্গে গল্প করবো!

—তা শুয়ে-শুয়েই গল্প করো না। তুমি শোও, আর আমি তোমার পাশে বসে গল্প করি—

বলে সতী সনাতনবাবুর পিঠ থেকে বালিশটা সরিয়ে দিলে। সনাতনবাবু বালিশে মাথা দিয়ে চিৎ হয়ে শুলেন। বললেন—বাইরে বোধহয় বৃষ্টি পড়ছে—না?

সতী বললে—বৃষ্টি হলে খুব ভালো হয়, বৃষ্টি হলে বেশ তাড়াতাড়ি রাত্রির হবে। কিন্তু তুমি ঘুমিয়ে পড়বে না তো? আজ কিন্তু সারারাত তোমায় জাগতে হবে তা বলে রাখছি—

সনাতনবাবু বললেন—আজকে আর আমার ঘুম পাবে না মোটে, দেখে নিও…….

সতী কী যেন বলতে যাচ্ছিল। হঠাৎ মনে হলো বাইরের সদর দরজায় কে যেন কড়া নাড়ছে। বোধহয় রঘু এসেছে। বললে—তুমি একটু শোও লক্ষ্মীটি, আমি আসছি—

তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে আবার নেমে এসেই দরজাটা খুলে দিয়েছে। কিন্তু খুলে দিতেই হঠাৎ যেন ভূত দেখে দশ পা পেছিয়ে এল সতী। বাইরে এরই মধ্যে অন্ধকার হয়ে এসেছে। টিপ্ টিপ্ করে বৃষ্টি পড়ছে। আর অন্ধকারের মতই বীভৎস মুখে জ্বলন্ত চুরোট নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে মিস্টার ঘোষাল। মিস্টার ঘোষালের বিরাট গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। অন্ধকারে ভালো করে দেখা গেল না। কিন্তু সতীর মনে হলো গাড়ির ভেতরেও যেন আরো দু’একজন লোক ঘাপটি মেরে বসে আছে।

মিস্টার ঘোষাল ঘরের ভেতরে ঢুকে নিজেই সদর দরজাটা হাত দিয়ে বন্ধ করে দিলে। তারপর আস্তে আস্তে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো। সতী তখনও দাঁড়িয়ে আছে। মিস্টার ঘোষাল সতীর দিকে মুখ তুলে বললে—দাঁড়িয়ে রইলে কেন, বোস। তোমার সঙ্গে কয়েকটা কথা আছে—

সতী বসলো না। তেমনি পাথরের মূর্তির মতই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।

মিস্টার ঘোষাল বললে—কী হলো, বসবে না?

সতীর মুখে এতক্ষণে যেন একটু কথা বেরোল। বললে-আপনি কবে ছাড়া পেলেন?

মিস্টার ঘোষাল বললে—একদিন আগেও না, একদিন পরেও না—

আর কোনও প্রশ্ন সতীর মুখ দিয়ে বেরোল না। একটা অজ্ঞাত আতঙ্কে যেন সমস্ত শরীর থরথর করে কেঁপে উঠলো তার সেই রয়্যাল এক্সচেঞ্জ প্লেসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মিস্টার ঘোষালের চোখে মুখে যে তীক্ষ্ণতা ফুটে উঠতে দেখেছিল, আজ জেল থেকে ছাড়া পাবার পর যেন আবার সেই বিষাক্ত দৃষ্টি তার চোখে। কিন্তু তবু যেন সন্দেহ হলো। ছাড়া পাবার পর আবার কী উদ্দেশ্যে এলো এখানে। কী চায় মিস্টার ঘোষাল আজ তার কাছে? মিস্টার ঘোষালের মুখের দিকে চেয়ে সেইটেই ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করলে সতী। মিস্টার ঘোষাল তখন আরাম করে বসে পড়েছে। চুরোটটা নিবে গিয়েছিল। আবার দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে নিলে মুখে। পোড়া কাঠিটা বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললে—কিন্তু আবার এলুম কেন, এই কথাটা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

সতী বোবার মত তখনও দাঁড়িয়ে আছে।

মিস্টার ঘোষাল বললে—আমি বেশী কথার লোক নই, আর আমারও সময়ের দাম আছে, গোড়াতেই তোমাকে জানিয়ে রাখা ভালো, তুমি যে আমার এগেস্টে সাক্ষী দিয়েছিলে তার জন্যে তোমাকে ধন্যবাদ—

—ধন্যবাদ? কেন?

—আমার কনভিকশন না হলে রেলের চাকরি আমার ছাড়া হতো না। ওই হাজার টাকার স্যালারিতে আমার আর কুলোচ্ছিলও না। তা ভালোই হয়েছে, আমি এখন তিন হাজার টাকা স্যালারি পাচ্ছি এক মার্কেনটাইল ফার্মে! খবরটা শুনে তুমি খুশী তো? কী? কথা বলছো না যে? কথা বলো! যাকে তুমি চিরকালের মত ক্রাস করতে চেয়েছিলে, এখন দেখ তার কী অবস্থা হলো? তুমি খুশী হলে কি কষ্ট পেলে সেটা খুলে বলো?

সতী আর পারছিল না। বললে—আপনি আর কিছু বলবেন?

—বলবো না মানে? আমারই তো এখন বলবার দিন এসেছে। তোমরা তো সবাই ভেবেছিলে ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট চলে যাচ্ছে, এবার আমাদের দশা কী হবে। আমরা বুঝি সবাই উপোস করবো! এখন উপোস করবার নমুনটা দেখলে তো? না কি বিশ্বাস হচ্ছে না? বিশ্বাস যদি না হয় তো আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার সঙ্গে করে এনেছি। তাও দেখতে চাও?

মিস্টার ঘোষাল পকেট থেকে একখানা কাগজ বার করলে। কাগজখানার ভাঁজ খুলে সামনে এগিয়ে দিয়ে বললে—দেখ, মুখের কথায় বিশ্বাস না হয়, পড়ে দেখ ভালো করে—

সতী বললে—আমি বিশ্বাস করেছি, আপনার মুখের কথাই আমি বিশ্বাস করেছি, আপনার আর কিছু বলবার আছে?

মিস্টার ঘোষাল বললে—কেন, তুমি কি আমাকে তাড়িয়ে দিতে চাও?

—না, তা নয়, আমার এখন একটু কাজ আছে!

—কিন্তু কাজ থাকলে তো শুনবো না। যেদিন আমার অনেক কাজ ছিল সেদিন তো তোমার কথা আমি শুনেছি।

—সেজন্যে আমি আপনার কাছে গ্রেটফুল। কিন্তু এখন সত্যিই আমি একটু ব্যস্ত, আপনি পরে একদিন আসবেন।

মিস্টার ঘোষাল বললে—পরে তো আমার নিজের সময় হবে না। যা কিছু করবার আজকেই করতে হবে।

—আর একদিনও দেরি করতে পারেন না?

—না।

—কিন্তু এখন যে আমি বড় ব্যস্ত। আমার যে মোটে সময় নেই।

—তা সময় না থাক্। আমার তাতে কিছু এসে যায় না। আমি অনেক দিন ওয়েট করেছি, এতদিন রিভলবারটার লাইসেন্স পাইনি। আমার কনভিকশনের সময় ওটা ওরা ক্যানসেল করে দিয়েছিল, এবার পেয়েছি—বলে মিস্টার ঘোষাল পকেট থেকে রিভলবারটা বার করে টেবিলের ওপর শুইয়ে রেখে দিলে।

তারপর সতীর দিকে চেয়ে আবার বলতে লাগলো-তোমার সময় আজ থাক আর না থাক, আমার কথা তোমাকে এখানে দাঁড়িয়ে এখন শুনতেই হবে, আর আমি যা জিজ্ঞেস করবো তার উত্তর দিতে হবে —

সতী রিভলবারটার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে দেখতে লাগলো। মিস্টার ঘোষাল বললে-মনে রেখো আমি আজ একলা আসিনি, গাড়িতে আরো লোক আছে আমার। দেখেছ নিশ্চয়ই! এখন আমার প্রথম প্রশ্ন হলো তুমি এবার আমার প্যালেস-কোর্টে যাবে কি না!

সতী চমকে উঠলো। বললে-প্যালেস-কোর্টে? আমি?

—কেন? তুমি প্যালেস-কোর্ট চেনো না? নতুন করে তোমাকে চিনিয়ে দিতে হবে?

সতী আড়ষ্ট হয়ে উঠলো—তা চিনি! কিন্তু আবার?

—হ্যাঁ, আবার। এ আমার রিকোয়েস্ট নয়, আমার অর্ডার। তোমার সাক্ষীতেই আমি জেল খেটেছি। তোমার সাক্ষীতেই আমার কনভিকশন্ হয়েছে, তাই তার কমপেনসেশন আমি চাই, খেসারত চাই—আজই—

সতী মুখ তুলে চাইলে মিস্টার ঘোষালের দিকে। আবার সেই তীক্ষ্ণ চাউনি, আবার সেই বিষাক্ত দৃষ্টি। মিস্টার ঘোষাল বললে—এ খেসারত না দিলে আমি তোমায় ছাড়বো না আজ। আজ এখনই। হোল ক্যালক্যাটায় আজ আগুন জ্বলছে, কোনও ল’ নেই, কোনও অর্ডার নেই, আসবার সময়ই রাস্তায় প্রোসেসান দেখে এসেছি, এসপ্ল্যানেডের কাচের শো-কেসগুলো সব ভেঙে দিয়েছে মব, ক্যালকাটা আজ আউটরেজড, আজ আমিও তোমায় আউটরেজ করবো—

.

—বেরিয়ে যান এখান থেকে বেরিয়ে যান আপনি! আপনি আজ মদ খেয়েছেন খুব আপনার সঙ্গে আমি আর কোনও কথা বলতে চাই না।

মিস্টার ঘোষালের মুখে হাসি ফুটে উঠলো রিভলবারটা তুলে নিয়ে আবার টেবিলের ওপর রেখে দিলে।

—আপনি বেরিয়ে যান বলছি। বেরিয়ে যান এখুনি!

মিস্টার ঘোষাল গম্ভীর গলায় বললে—চেঁচিও না, তাতে তোমার খারাপ হবে। আমি একলা নই, আমার সঙ্গে আরো লোক আছে—

—কিন্তু আমি আপনার আর কোনও কথা শুনতে চাই না, আপনি এ-বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।

—তা হলে চেঁচাও, পরে রিপেন্ট করতে হবে তোমাকে, অনুতাপ করতে হবে!

—কিন্তু আপনি ভদ্রভাবে কথা বলতে পারেন না?

মিস্টার ঘোষাল বললে—না।

—আপনি ভদ্রভাবে কথা বলুন, আমিও চেঁচাবো না।

—ভদ্রতা সেকেলে জিনিস। ওটা কাওয়ার্ডিস। আজকের দিনে যারা দুর্বল তারা ভদ্রভাবে কথা বলবে। আমি কোন দুঃখে ভদ্র হবো? আমি সোজা কথা সোজা করে বলবো, তাতে তুমি খুশী হও বা অখুশী হও, আমার কিছু এসে যায় না।

—তা হলে আপনি কী চান বলুন?

—আই ওয়ান্ট ইউ! আমি তোমাকে চাই।

সতীর সমস্ত শরীর তীক্ষ্ণ হয়ে উঠলো। মুখ দিয়ে কড়া কথা বেরোতে যাচ্ছিল, কিন্তু সামলে নিলে। বললে—সেই জন্যেই আপনি রিভলবার নিয়ে এসেছেন? আমাকে ভয় দেখাবার জন্যে?

মিস্টার ঘোষাল বললে—না ওটা সেন-এর জন্যে। দ্যাট দীপঙ্কর সেন এখন শিলিগুড়িতে, সে আমার পোস্ট নিয়েছে, আমার চাকরি নিয়েছে, আমাকে জেলে পাঠিয়েছে সেই, এখন তোমাকে নেবার মতলব করছে। আমি এবার তাকে দেখে নেব,—কালই আমার লোক ভোরের প্লেনে শিলিগুড়ি যাবে এই রিভলবার নিয়ে—

—আপনি তাকে খুন করবেন?

—সোজা বাঙলায় তো তাকে তাই-ই বলে!

—কিন্তু সে আপনার কী ক্ষতি করলো? দীপু তো আপনার কোনও অপকার করেনি সে তো আমাকে আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে বলে নি আমি নিজেই সব করেছি, সে এ-সমস্ত কিছুর মধ্যেই নেই! তাকে আপনি কেন শাস্তি দিতে যাবেন মিছি-মিছি? কী করেছে সে আপনার? আপনাকে জেলে পাঠানোর জন্যে তো আমিই দায়ী, আর কেউ নয়! একলা আমি!

.

মিস্টার ঘোষাল বললে-আমি জানি সে-ই তোমাকে পেছন থেকে ইনস্টিগেট করেছিল, উত্তেজিত করেছিল—

—না, সত্যিই না, সে এর বিন্দু-বিসর্গও জানতো না। আমার কথায় আপনি বিশ্বাস করুন, সে কিছুই জানতো না! তার কোনও দোষ নেই। তাকে আপনি চেনেন না মিস্টার ঘোষাল, তার মতন ছেলে হয় না। সে সকলের ভালোই চায়, সে আপনার ভালো চায়, সে আমার ভালো চায়, সে পৃথিবীর সব লোকের ভালো চায়, জীবনে কখনও সে মিথ্যে কথা বলেনি, জীবনে কারোর সে ক্ষতি করেনি, কোনও অন্যায় করেনি কারো, আপনি তার ওপর রাগ করবেন না। আপনার কাছে আমি হাত-জোড় করে বলছি, আপনি তাকে ভুল বুঝবেন না—

মিস্টার ঘোষালের চোখে যেন একটা কটা খেলে গেল। বললে—তার ওপর তোমার এত দরদ কেন শুনি?

—দরদ?

—হ্যাঁ, তার জন্যে তুমি আমার কাছে হাত-জোড় করছো কেন? এত দরদ তো ভাল নয়! সে তোমার কে?

সতী বললে-কেউ নয় মিস্টার ঘোষাল, দীপু আমার কেউ নয়, আমার ভাই নয়, আত্মীয় নয়, বন্ধু নয়, আমার কেউই নয়। আমার কাছে আপনিও যা, সে-ও তাই।

—তা হলে তার জন্যে তোমার এত মাথাব্যথা কেন?

সতী বললে—তা আমি বলতে পারবো না, তবু তার আপনি কোনও ক্ষতি করবেন না দয়া করে। সে নিষ্পাপ। আমি আপনাকে বলছি মিস্টার ঘোষাল, পৃথিবীর সকলের কিছু-না-কিছু পাপ আছে, আমার মনে পাপ আছে, আমার স্বামীর মনে পাপ আছে, আমার বোনের মনেও পাপ আছে, আমার নিজের বাবার মনেও হয়ত সামান্য পাপ ছিল, কিন্তু ভগবানের মনেও যদি কোনও পাপ না থাকে তো দীপুর মনেও কোনও পাপ নেই, সে একেবারে নিষ্কলুষ, নিষ্পাপ, সে এই পৃথিবীর মানুষই নয়—

—এতখানি? মিস্টার ঘোষালের কটাক্ষ ভ্রুকুটি হয়ে ফুটে উঠলো গলার স্বরে। তারপর বললে—তা হলে তুমি চলো—

—কোথায়?

—প্যালেস-কোর্টে। তুমি যদি প্যালেস-কোর্টে যাও তো আমি সেন-কে ছেড়ে দেব। যে-কোনও একটা বেছে নাও—

সতী হতবাক হয়ে গেল। মিস্টার ঘোষাল বললে—খেসারত আমার চাই-ই। হয় তুমি চলো, নয় তো সেন উইল পে দি পেনাল্টি—এনি ওয়ান অব দি টু! আমার কম্‌পেনসেশন চাই-ই চাই—আজই—

সতী থরথর করে কাঁপছিল। মিস্টার ঘোষাল বললে—তুমি ভাবছো কী? আমার সময় নেই, আমি বেশীক্ষণ সময় দেব না তোমাকে। কোটা বেছে নেবে বলো—

সতী হঠাৎ মিস্টার ঘোষালের আরো কাছে ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াল। বললে—আপনি এত নিষ্ঠুর হচ্ছেন কী করে?

—আমাকে জেলে পাঠানোর সময় তো তোমরা নিষ্ঠুর হতে পেরেছিলে? তখন তো মায়া-দয়া করোনি?

সতী বললে—কিন্তু দীপুকে দোষ দিচ্ছেন কেন, সে তো এর মধ্যে নেই, এর মধ্যে একলা আমিই আছি, আমিই দায়ী—

তা হলে ছিঠ আছে, ইউ মাস্ট পে দি পেনাল্টি—তুমি প্যালেস-কোর্টে চলো—

—কিন্তু……..কিন্তু আমি কী করে যাই!

মিস্টার ঘোষাল রিভলবারটা তুলে নিয়ে একবার নাচিয়ে আবার পকেটে রেখে দিলে। বললে—তা হলে উঠি, কালকে ভোরের প্লেনেই আমার লোক এই রিভলবার নিয়ে শিলিগুড়ি চলে যাচ্ছে—

সতী ছটফট করে উঠলো। মিস্টার ঘোষাল তখন দরজার দিকে যাচ্ছে। সতী বললে—দাঁড়ান, একটু দাঁড়ান—

মিস্টার ঘোষাল পেছন ফিরে বললে—কী হলো?

সতী বললে—একটু দাঁড়ান, কিন্তু আপনি এইভাবে শাসিয়ে যাবেন? ভেবেছেন কলকাতা শহরে পুলিস, গভর্নমেন্ট কিছু নেই? আপনি গুন্ডামি করবেন, আর বাধা দেবার কেউ-ই নেই?

মিস্টার ঘোষাল বললে—যা ঘটছে এখন কলকাতায় তা তো দেখতেই পাচ্ছো, পুলিস, গভর্নমেন্ট, মিলিটারি কিছু কি করছে? আর গুন্ডার কথা বলছো, কিন্তু কে গুন্ডা নয়? ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট গুন্ডা নয়? মুসলিম লীগ গুন্ডা নয়? কংগ্রেস গুন্ডা নয়?

—কিন্তু আমাকে মেয়েমানুষ পেয়ে আপনি এইভাবে ভয় দেখিয়ে যাবেন?

—আমি তো ভয় দেখাচ্ছি না। আমি সোজা সরল ভাষায় তোমাকে সারেন্ডার করতে বলছি। আর তা যদি না পারো তো সারেন্ডার ক’রো না। সেন আছে, হি উইল পে—

সতী বললে—না, না, মিস্টার ঘোষাল, আপনি যাবেন না। আমাকে একটা রাত সময় দিন, একটা রাত ভাবতে সময় দিন শুধু। কালকে সকালটা পর্যন্ত আমি একটু ভাবি, তারপর যা হয় আপনি করবেন।

মিস্টার ঘোষাল কী যেন ভাবলে একবার। তারর কী সুমতি হলো কে জানে। বললে—একটা রাত? কিন্তু কাল ভোর সাতটায় যে শিলিগুড়ির প্লেন ছাড়বে?

—তার আগেই আপনি আসবেন, তখন আপনি যা বলবেন আমি তাই-ই করবো।

-–ঠিক?

—হ্যাঁ, ঠিক। আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে, একটা রাত মাত্র!

—আচ্ছা, ঠিক আছে—বলে মিস্টার ঘোষাল উঠলো। তারপর দরজার দিকে যেতে যেতে বললে—আমি কাল সকাল ছ’টার আগেই আসবো—

মিস্টার ঘোষাল বাইরে গিয়ে গাড়িতে উঠলো। গাড়ি স্টার্ট দেবার শর্ত হলো। গাড়িটা ছেড়ে দিলে। তখনও সতী সেখানে দাঁড়িয়ে রইল। তার মনে হলো সব যেন ফাঁকা হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে। দরজাটা বন্ধ করতেও ইচ্ছে হলো না। মনে হলো কোথায় দীপু রয়েছে কোন সুদূর শিলিগুড়িতে, সে কিছু জানতেও পারলে না। অথচ কাল সকালে তার চূড়ান্ত সর্বনাশ ঘটে যাবে। পৃথিবীর কেউ জানবে না কেন, কীসের জন্যে তাকে চরম দন্ড নিতে হলো। কেন নিজের জীবন দিয়ে অন্য আর একজনের সতীত্ব কিনতে হলো, অন্য একজনের জীবনের শান্তি, সংসার সম্ভ্রম, মর্যাদা বাঁচাতে হলো। সূর্য চন্দ্ৰ গ্ৰহ নক্ষত্র কারোর কাছে কোনও কালে ধরা পড়বে না—এ মূল্য কিসের? এ মূল্য কেন? মিস্টার ঘোষালের লোকও ধরা পড়বে না। তারা অভ্যস্ত। ফ্রি-স্কুল স্ট্রীট থেকে শুরু করে সভ্য সমাজে সর্বত্র তারা মানুষের চোখের সামনে এই কাজই করে বেড়াচ্ছে, এই-ই তাদের জীবিকা। বিংশ শতাব্দীর ধোপদুরস্ত সভ্যতার তারাই বাহন। তাদের কেউ কিছু বলবে না। শুধু একলা জানবে সতী। আর সতী সমস্ত জেনেশুনেও এই সংসারে বেঁচে থাকবে!

কী মনে হতেই সতী তাড়াতাড়ি দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ওপরে উঠলো। সনাতনবাবুর কথা এতক্ষণ যেন ভুলেই গিয়েছিল। সব শুনেছেন নাকি তিনি? কিন্তু ঘরের দরজার সামনে এসেই দেখলে সনাতনবাবু তেমনিভাবেই বিছানায় শুয়ে আছেন। সতীকে দেখে একটুও নড়লেন না। সতী আরো কাছে সরে এল। দেখলে সনাতনবাবু ঘুমিয়ে পড়েছেন। ক’দিন ধরে ঘুমোন নি। জীবনে এই যেন প্রথম শান্তি পেয়েছেন, প্রথম সহানুভূতি পেয়েছেন।

—ওগো, শুনছো?

কিন্তু ডাকতে গিয়েও সতী থেমে গেল। সনাতনবাবুর মুখের দিকে চেয়ে আর তাঁর ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে হলো না।

হঠাৎ সতীর মনে হলো কেমন করে দীপুকে খবরটা দেওয়া যায়! টেলিগ্রাফ করা যায় না? টেলিফোন? ট্রাঙ্ক-টেলিফোন? টেলিফোন করে সাবধান করে দেওয়া যায় না? বলে দেওয়া যায় না যে, মিস্টার ঘোষালের লোক যাচ্ছে শিলিগুড়িতে? সাবধানে থেকো, কিংবা তুমি ওখান থেকে চলে যাও। অন্য কোথাও লুকিয়ে থাকো। কিংবা পুলিসে খবর দাও। কিছু করা যায় না দীপঙ্করের জন্যে? কিছুতেই দীপুকে বাঁচানো যায় না? চারিদিকে চেয়ে দেখলে সতী! জানালার বাইরে বৃষ্টিটা বুঝি আরো জোরে পড়তে শুরু করেছে। ঘরটা অন্ধকার। হঠাৎ সতীর মনে হলো কেউ নেই ঘরে। সনাতনবাবুও নেই যেন। পাশের ঘরে লক্ষ্মীদিও নেই। এমন কি এই বাড়িটাও নেই। এক অনির্বচনীয় শূন্যতার মধ্যে দাঁড়িয়ে সতী যেন নিঃশব্দে হাহাকার করে বেড়াচ্ছে। কেউ তাকে বাঁচাবে না আজ, কেউ তাকে রক্ষা করবে না। সতীর অন্তরাত্মার অন্তস্থলে একটা সৃষ্টিছাড়া আর্তনাদ যেন ভেতর থেকে ঠেলা মারছে। কোথায় তার প্রতিকার? কোথায় তার পরিত্রাণ? কাকে ডাকবে সে? কাকে সে বাঁচাতে বলবে?

—ওগো, শুনছো? তুমি ঘুমিয়ে পড়লে!

কিন্তু ডাকতে গিয়েও যেন গলা আটকে গেল। ডেকে কী বলবে তাকে? কেন সে শাসাবার সাহস পায় এমন করে? কোন্ অধিকার সতী দিয়েছে তাকে? কোন্ সম্পর্কের অধিকার সে এমন করে এসে শাসন করে গেল? পুলিসে খবর দেবে? কিন্তু পুলিসকে খবর দিতে গেলেও তো থানায় যেতে হবে। থানায় গিয়ে সমস্ত বলতে হবে। সমস্ত খুলে বলতে হবে। কিন্তু কেমন করে যায় সে সব ফেলে? বাড়িতে যে কেউ নেই। কিন্তু টেলিগ্রাফ। এক্সপ্রেস টেলিগ্রাফ তো করে আসতে পারে পোস্ট আপিসে গিয়ে! কাছাকাছি কোথাও পোস্ট আপিস আছে নিশ্চয়ই।

কথাটা মনে পড়তেই সতী আলমারি খুলে শাড়িটা বদলে নিলে। নতুন শাড়ি একটা। কোনও দিন পরা হয়নি আগে। তারপর পাশের ঘরে গেল। লক্ষ্মীদি বিছানায় ঠিক তেমনি শুয়ে আছে। ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিল। আবার রাত্রে আর একবার খাওয়াতে হবে। আস্তে আস্তে আবার বাইরে এল। বারান্দায় দাঁড়াল খানিকক্ষণ। তারপর কী মনে করে আবার নিজের ঘরে ঢুকলো, সনাতনবাবু তখনও ঘুমোচ্ছেন।

—শুনছো, আমি একটু বেরোচ্ছি, আমি এখুনি আসবো—

তবু গলা থেকে যেন কথাগুলো বেরোল না।

—আমি যাবো আর আসবো। এসে সারারাত আমরা গল্প করবো দুজনে। আজ বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, আমি এখুনি চলে আসবো, বুঝলে?

গলা দিয়ে কথা বেরোল না সতীর। তবু যেন সনাতনবাবুর দিকে চেয়ে ওই কথাগুলোই বলতে চাইলে। তারপর আর একবার বাইরের দিকে চাইলে। জানালার বাইরে সন্ধ্যের অন্ধকার। বৃষ্টি পড়ছে পিটিপ করে তখনও। কিন্তু রঘু আসছে না কেন? এত দেরি হচ্ছে প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের বাড়িতে খবর দিয়ে আসতে? সে থাকলে তাকে রেখে নিশ্চিন্তে যাওয়া যেত।

তারপর তর-তর করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে সদর দরজা খুলে একেবারে রাস্তায় এসে দাঁড়াল। রাস্তাটা বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। অনেক দূরে চেয়ে দেখলে। কোথাও কেউ নেই। রঘুর কোনও চিহ্নই নেই কোথাও। রাস্তায় লোকজন চলাও কম হয়ে গেছে। কেমন যেন ভয় ভয় করতে লাগলো। প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের বাড়ি থেকে শেষ রাত্রে একদিন পালিয়ে আসবার সময় কিন্তু এমন ভয় করেনি। প্যালেস-কোর্টে যাবার সময়ও এমন ভয় করেনি সতীর। কিন্তু আজ যেন গা-টা ছম্ ছম্ করে উঠলো। তারপর সদর দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লো। সোজা।

চারিদিকে অন্ধকার। কোথাও কোনও সাড়া শব্দ নেই কারো। হাঁটতে হাঁটতে সোজা লেভেল ক্রসিং-এর দিকে চলতে গিয়ে হঠাৎ মনে হলো পেছনে কার পায়ের শব্দ হলো। ভরে ভয়ে পিছনে ফিরতেই মনে হলো অনেক দূরে কে যেন তাকে অনুসরণ করছে। তাকে পেছন ফিরতে দেখেই পাশের অন্ধকার গলির মধ্যে আত্মগোপন করলো। কে ও? কেন তার পেছন পেছন আসছে?

হঠাৎ একটা কথা মনে পড়তেই আর পা চললো না। মিস্টার ঘোষাল যদি কাউকে এখানে রেখে দিয়ে গিয়ে থাকে? কাউকে পাহারা দেবার জন্যে রেখে দিয়ে গিয়ে থাকে? এমনও তো হতে পারে যে লোক দুটো গাড়িতে ঘাপটি মেরে বসে ছিল তাদেরই একজনকে যাবার সময় নামিয়ে দিয়ে গেছে এখানে। বলেছে—নজর রাখিস একটু, দেখিস যেন কোথাও না পালায়—

সতী অনেকক্ষণ চেয়ে রইল একদৃষ্টে। গলির ভেতর থেকে লোকটা আর বেরোল না। স্পষ্ট ঝিঁ-ঝিঁর আওয়াজ কানে আসছে তখন দু’পাশ থেকে। তারপর আবার চলতে লাগলো। মিছিমিছি ভয় পেয়েছিল সে। হয়ত অন্য লোক। পাশের গলির ভেতর বাড়ি। নিজের বাড়িতে গিয়েই ঢুকেছে লোকটা—ঘোষালের লোক নয় সে।

আবার পা চালিয়ে দিলে। আবার আস্তে আস্তে চলতে লাগলো। সতীর মনে হলো এ যেন তার নিরুদ্দেশ যাত্রা। সামনে পেছনে ডাইনে বাঁয়ে শুধু বাধা, শুধু ষড়যন্ত্র, শুধু শত্রুতা। জীবন তার প্রয়োজন, সুখ তার প্রয়োজন, স্বামী সংসার সবই আজ তার প্রয়োজন। আজ সবাইকে নিয়ে তার বড় বাঁচতে ইচ্ছে করছে। এ পৃথিবী বড় সুন্দর, এ সংসার বড় মধুর। এমন সময় আবার কেন এই উৎপাত! আজ এই মুহূর্তে কেন এলে? এর আগে আসতে পারতে না? যখন কিছুরই প্রয়োজন ছিল না? যখন আমি মৃত্যু কামনা করেছি প্রতি মুহূর্তে। যখন সংসার আমার কাছে বিষ হয়ে উঠেছে, যখন বঞ্চনা অভিশাপ কলঙ্ক আমার নিত্যসাথী, তখন এলে না কেন?

অন্ধকারে সামনের সব কিছু অস্পষ্ট ঝাপসা দেখাচ্ছে। আস্তে আস্তে লেভেল ক্রসিংটা পার হলো সতী। এখন বোধ হয় কোনও ট্রেন নেই। গেটটা ওঠানো। আরো তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে চললো সতী। দীপুর ঠিকানা জানা নেই। তবু শিলিগুড়ির নাম দিলেই চলে যাবে নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই পৌঁছবে। নাম বললেই সবাই চিনবে নিশ্চয়ই এতদিন যে কেন চিঠি দেয়নি রাগ করে! কেন চিঠি দেয়নি তাকে। দু-একজন লোক যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। হঠাৎ মনে হলো রাস্তার মোড়ে যেন একটা পুলিস দাঁড়িয়ে। পুলিসকে খবর দেবে? খবর দেবে যে, তাকে শাসাতে এসেছিল মিস্টার ঘোষাল! আরো সামনের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু পুলিস তো নয়, একটা গাছ! একটা ছোট গাছ। দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যায়নি।

না, পোস্ট আপিসে গিয়ে টেলিগ্রাফ করে দেওয়াই ভালো। এক্সপ্রেস টেলিগ্রাফ। আজ শেষ রাত্রেই হয়ত পৌঁছে যাবে দীপঙ্করের হাতে। কিন্তু কোথায় পোস্ট আপিস! রাস্তার মোড়ে এসে ডান দিকে যেতে হবে। ডান দিকে ফিরতেই হঠাৎ নজরে পড়লো সেই লোকটা যেন আবার আসছে। যে লোকটা সেই তখন থেকে পেছন-পেছন আসছিল, সেই লোকটা।

সতী এবার সাহস করে সেইখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো। একেবারে সামনা-সামনি। মুখোমুখি। সামনে এলেই বলবে-কেন আপনি আমার পেছনে-পেছনে আসছেন? কী দরকার আপনার? কী চান আপনি?

বৃষ্টিটা বোধ হয় আরো জোরে নামলো। কিন্তু সতীকে থামতে দেখে লোকটাও হঠাৎ থেমে গেছে। আর এগোল না। তারপর পাশের একটা ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়লো লোকটা। কেমন একটা অজ্ঞাত আতঙ্কে সতী এবার আড়ষ্ট হয়ে উঠলো। এবার যেন আর তার ফেরবার উপায় নেই। সামনে পেছনে সব দিকে যেন কোন অদৃশ্য শক্তির ষড়যন্ত্র তাকে ঘিরে ফেলেছে। সতী যেন অসহায়ের মত আষ্টেপৃষ্টে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আর্তনাদ করতে চাইলো সেই নির্জন অন্ধকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে।

সকল অধ্যায়

১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১
২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২
৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩
৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪
৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫
৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬
৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭
৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮
৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯
১০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০
১১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১১
১২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১২
১৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৩
১৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৪
১৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৫
১৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৬
১৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৭
১৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৮
১৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৯
২০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২০
২১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২১
২২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২২
২৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৩
২৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৪
২৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৫
২৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৬
২৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৭
২৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৮
২৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৯
৩০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩০
৩১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩১
৩২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩২
৩৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৩
৩৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৪
৩৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৫
৩৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৬
৩৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৭
৩৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৮
৩৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৯
৪০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪০
৪১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪১
৪২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪২
৪৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৩
৪৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৪
৪৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৫
৪৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৬
৪৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৭
৪৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৮
৪৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৯
৫০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫০
৫১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫১
৫২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫২
৫৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৩
৫৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৪
৫৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৫
৫৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৬
৫৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৭
৫৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৮
৫৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৯
৬০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬০
৬১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬১
৬২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬২
৬৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৩
৬৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৪
৬৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৫
৬৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৬
৬৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৭
৬৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৮
৬৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৯
৭০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭০
৭১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭১
৭২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭২
৭৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৩
৭৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৪
৭৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৫
৭৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৬
৭৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৭
৭৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৮
৭৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৯
৮০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮০
৮১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮১
৮২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮২
৮৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৩
৮৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৪
৮৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৫
৮৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৬
৮৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৭
৮৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৮
৮৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৯
৯০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯০
৯১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯১
৯২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯২
৯৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৩
৯৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৪
৯৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৫ উপসংহার
৯৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৬
৯৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৭
৯৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৮
৯৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৯
১০০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০০
১০১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০১
১০২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০২
১০৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০৩
১০৪. নির্ঘণ্ট : কড়ি দিয়ে কিনলাম – ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন