কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৪

বিমল মিত্র

সবাই যখন চলে গেছে, মজুমদারবাবুও একবার নিজের আপিস ঘরে চলে গিয়েছিল। হঠাৎ আবার প্ল্যাটফরমে আসতেই সেন-সাহেবের সঙ্গে দেখা। সেন-সাহেব প্লাটফরম ধরে সোজা দক্ষিণ দিকে হেঁটে চলেছে। একটু অবাক হয়ে গেল মজুমদারবাবু। সেন- সাহেব অন্ধকারে বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাচ্ছে ওদিকে?

সামনে গিয়ে মজুমদারবাবু বললে-স্যার, আপনি ফিরে যাননি?

দীপঙ্কর বললে—না, আমার এদিকে একটা কাজ আছে—

বলে আর সেখানে দাঁড়ায়নি দীপঙ্কর। যেন সেদিন নিজেকে সকলের চোখ থেকে আড়াল করতেই চেয়েছিল। সকলের দৃষ্টি থেকে নিজেকে সরিয়েই নিতে চেয়েছিল। যেন অনেকদিন পরে গড়িয়াহাট লেভেল ক্রসিং-এর দিকে পা চালিয়ে দিয়ে নিজের কাছেও অপরাধ করেছিল দীপঙ্কর।

চলতে চলতে যেন অনেক রাত হয়ে গেল। অনেক শতাব্দী পার হয়ে যেন আর এক নতুন শতাব্দীতে এসে পদার্পণ করলো দীপঙ্কর। এতদিনের সব সংযম যেন বাঁধ ভেঙে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো। দীপঙ্কর কাঠের স্লিপারের ওপর পা দিয়ে দিয়ে চলতে-চলতে যেন অনেক দূরে এসে পড়লো। এই তো! আর তো বেশি দূর নয়। কাঁকুলিয়ার পর এক জোড়া লাইন চলে গেছে ঢাকুরিয়া স্টেশনের দিকে। আর এক জোড়া বজ-বজ। বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে স্লিপারগুলো পেছল হয়ে গেছে। ইস্পাতের রেল চকচক করছে। সেই চকচকে স্টীলের ওপর অন্ধকারের আলো পড়ে সব ঝাপসা করে দিয়েছে চারিদিক। হঠাৎ দীপঙ্করের মনে হলো যেন অনেক রাত হয়ে গেছে। আশে- পাশের ডোবা থেকে ঝিঁঝিঁর শব্দ আসছে। কী যেন একটা রোমাঞ্চ এসে ঘিরে ধরলো দীপঙ্করকে। আর বাধ মানলো না মন। একেবারে উড়ে যেতে চাইল সে। এতদিন নিজেকে আড়াল করে করে যেন তার আগ্রহকে আরো উদগ্র করে ফেলেছে সে। এতদিনের সব সংস্কার যেন ভেসে যেতে বসেছে।

হঠাৎ মনে হলো যেন সামনে একটা ট্রেনের হেড লাইট দেখা যাচ্ছে। দূর থেকে যেন একটা ট্রেন আসছে তারই দিকে। এত রাত্রে কোন্ ট্রেন আসবে? এখন এ সময়ে তো কোন ট্রেন নেই। তবে? তবে কি সেভেনটিন ডাউন?

দীপঙ্কর আরো তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে দিলে।

মনে হলো যেন ওটা কোনও ট্রেন নয়। বহুদিন আগে ১৯১২ সালের ১৮ই মার্চ যে ট্রেনটা একদিন উনিশের একের বি ঈশ্বর গাঙ্গুলী লেন থেকে স্টার্ট করেছিল, আজ এতদিন পরে এত ঝড়-ঝঞ্ঝা অতিক্রম করে, ফ্রী-স্কুল স্ট্রীট, প্রিয়নাথ মল্লিক রোড, স্টেশন রোড সব কিছু ছুঁয়ে আবার এই এখানে গড়িয়াহাট লেভেল ক্রসিং-এর কাছে পৌঁছেছে। এই সামান্য দূর আসতে এত বছর লাগলো? এত পরিশ্রম? এত সময়? এত সংগ্রাম?

দীপঙ্কর পকেটে হাত দিয়ে দেখলে। পকেটে তার চিঠিটা তখনও রয়েছে। লক্ষ্মণ সরকারের চিঠি। ক্ষীরোদা তার জন্যে আজ সারাদিন রান্না করেছে। তাকে আজ খেতে হবে ক্ষীরোদার বাড়িতে গিয়ে।

ট্রেনটা তখন আরো কাছে এসে পড়েছে। হেড লাইটটা আরো স্পষ্ট, আরো তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে। লাইনের ওপর ইস্পাতের চাকার প্রতিধ্বনি শুরু হয়ে গেছে। হঠাৎ মনে হলো ঠিক লেভেল-ক্রসিং-এর গুমটি ঘরের নিচে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে না? হেড লাইটের আলোয় ঝাপসা দেখা যাচ্ছে সামান্য! যেন সারা গায়ে শাড়িটা জড়িয়েছে। যেন মেয়েমানুষের মতো মনে হচ্ছে।

দীপঙ্কর দৌড়তে লাগলো-কে? কে ওখানে?

চীৎকার করতে করতে দীপঙ্কর দৌড়তে লাগলো। লক্ষ্মীদি? লক্ষ্মীদি কি আবার রেলের লাইনের কাছে এসেছে? গুমটি-ঘরের ডিউটিতে কে আছে এখন? ভূষণ দেখতে পাচ্ছে না? এই শাড়িটাই তো সেদিন দীপঙ্কর সতীকে কিনে দিয়েছিল। লক্ষ্মীদি কি সতীর শাড়িটা পরেছে?

—কে ওখানে? কে? লক্ষ্মীদি? সতী? কে তুমি?

ট্রেনটা তখন আরো কাছে সরে এসেছে। আরো নিষ্ঠুরভাবে এগিয়ে আসছে। দীপঙ্কর আরো জোরে দৌড়তে লাগলো।

—কে ওখানে? সরে যাও! লক্ষ্মীদি? লক্ষ্মীদি আবার এসেছে আত্মহত্যা করতে- ধরো ওকে, ওকে ধরো, ধরে ফেলো—

দীপঙ্কর প্রাণপণে তখন দৌড়চ্ছে, কিন্তু তার আগেই ট্রেনটা একেবারে হুড়মুড় করে দীপঙ্করের গায়ের ওপর এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো।

সাউথ কেবিনের করালীবাবু শেষ প্যাসেঞ্জারটার লাইন ক্লিয়ার দিয়ে একটু হেলান দেবার চেষ্টা করছিল। চেয়ারটার ওপর বসে আর একটা চেয়ার সামনের দিকে ঠেলে তার ওপর পা-জোড়া তুলে দিলে। আর সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ টেলিফোনের রিং বেজে উঠলো।

—কে রে? আবার কী হলো?

—হুজুর আমি ভূষণ!

—কীরে ভূষণ? কী হলো?

—হুজুর অ্যাকসিডেন!

করালীবাবু চেয়ার থেকে ছিটকে লাফিয়ে উঠলো।—অ্যাকসিডেন্ট? কীসের অ্যাকসিডেন্ট রে? কার অ্যাকসিডেন্ট?

—হুজুর, সেভেনটিন ডাউন!

সকল অধ্যায়

১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১
২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২
৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩
৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪
৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫
৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬
৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭
৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮
৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯
১০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০
১১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১১
১২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১২
১৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৩
১৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৪
১৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৫
১৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৬
১৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৭
১৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৮
১৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৯
২০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২০
২১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২১
২২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২২
২৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৩
২৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৪
২৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৫
২৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৬
২৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৭
২৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৮
২৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৯
৩০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩০
৩১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩১
৩২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩২
৩৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৩
৩৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৪
৩৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৫
৩৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৬
৩৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৭
৩৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৮
৩৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৯
৪০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪০
৪১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪১
৪২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪২
৪৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৩
৪৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৪
৪৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৫
৪৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৬
৪৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৭
৪৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৮
৪৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৯
৫০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫০
৫১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫১
৫২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫২
৫৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৩
৫৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৪
৫৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৫
৫৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৬
৫৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৭
৫৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৮
৫৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৯
৬০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬০
৬১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬১
৬২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬২
৬৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৩
৬৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৪
৬৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৫
৬৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৬
৬৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৭
৬৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৮
৬৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৯
৭০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭০
৭১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭১
৭২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭২
৭৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৩
৭৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৪
৭৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৫
৭৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৬
৭৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৭
৭৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৮
৭৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৯
৮০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮০
৮১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮১
৮২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮২
৮৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৩
৮৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৪
৮৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৫
৮৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৬
৮৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৭
৮৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৮
৮৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৯
৯০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯০
৯১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯১
৯২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯২
৯৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৩
৯৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৪
৯৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৫ উপসংহার
৯৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৬
৯৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৭
৯৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৮
৯৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৯
১০০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০০
১০১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০১
১০২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০২
১০৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০৩
১০৪. নির্ঘণ্ট : কড়ি দিয়ে কিনলাম – ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন