নির্ঘণ্ট : কড়ি দিয়ে কিনলাম – ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

বিমল মিত্র

নির্ঘণ্ট : কড়ি দিয়ে কিনলাম – ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

মধ্য বিংশ শতকের বিচিত্র-জটিল পরিস্থিতি ও অন্তর্বিরোধদীর্ণ মর্মবস্তু বাংলা উপন্যাস-সাহিত্যকে নানা সূক্ষ্ম ও স্থূলভাবে প্রভাবিত করিয়াছে। জীবনবোধের বিপর্যয়, আদর্শের কেন্দ্রচ্যুতি, নানা বিরোধী উপাদানের অসংহত সংঘাত আচরণের উৎকেন্দ্রিতা—এই সমস্তই বিভিন্ন উপন্যাসে প্রতিফলিত হইয়াছে। কিন্তু এই বিশ্বব্যাপী নৈরাজ্যবাদ, সমগ্র পৃথিবীর মোহাচ্ছন্ন নিম্নাভিমুখিতার তীব্র আকর্ষণশক্তি কোনও একখানি উপন্যাসে এ পর্যন্ত কেন্দ্রীভূত হয় নাই। বিমল মিত্রের সুবৃহৎ উপন্যাস ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ এই সাধারণ প্রবণতার একটি অসাধারণ ব্যতিক্রম। জীবনের প্রত্যেক স্ত রের ক্ষুদ্র পরিধির মধ্যে যে ভাঙ্গন ধীরে ধীরে ক্রিয়াশীল, বিমল মিত্রের মহাকাব্যধর্মী উপন্যাসে তাহার বিরাট, অসংখ্য-জীবন-প্রসারিত কেন্দ্রপ্রেরণা প্রলয়ঙ্কর মহিমায়, মনুষ্যত্বের মূলোচ্ছেদী বিদারণতীব্রতায় উদ্‌ঘাটিত। উহার বিপুল, বিচিত্রসংঘাতময় কণ্ঠে টাকার সর্বশক্তিমত্তা, অমোঘ প্রভাব, রবীন্দ্রনাথের কবিতায় ‘যেতে নাহি দিব’ এই সর্বব্যাপ্ত মূল সুরের ন্যায়, ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’-এর পুনঃপুনঃ উদ্‌গীত ধূয়া ধ্বনিত হইয়াছে। বাঁশীর সর্বরন্ধ্র-রণিত সুরের ন্যায় উপন্যাসের প্রত্যেকটি ঘটনা হইতে এই লৌহকঠোর বেসুরো ঝঝনা আমাদের ভাবতন্ত্রীতে নিদারুণ আঘাত হানিয়াছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় এই উপন্যাসের ঘটনাবস্থর বিন্যাস। ইহার কিছু পূর্ব হইতেই সমাজনীতিতে যে ফাটল ধরিয়াছিল, অঘোরদাদুর নীতিসংযমহীন ভোগবাদ ও অর্থাতায় তাহারই প্রকাশ। অঘোরদাদু যুদ্ধপূর্ব জগতে ও প্রাচীন আদর্শের কপট আবরণে অন্তরক্ষত গোপন-প্রয়াসী সমাজে একটি প্রতীকী চরিত্র। তাঁহার আতকেন্দ্রিকতা, অবজ্ঞা ও অবিশ্বাস তাঁহার রূঢ় নিঃস্নেহ আচরণে ও সদাউচ্চারিত মুখপোড়া গালিতে সমগ্র বাতাবরণকে বিষাক্ত করিয়াছে। ইহারই অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া ছিটে-ফোঁটার খদ্দরাবৃত চোরাকারবারী ও মুনাফাবাজিতে ও লক্কা-লোটনের মত পণ্যনারীর ছদ্মগৃহিণীত্বগৌরবে।

প্রাক্-যুদ্ধ যুগে কিন্তু নীতির বন্ধন একেবারে শিথিল হয় নাই। দীপুর মা ও কিরণের মা অসহনীয় দারিদ্র্যদুঃখের মধ্যেও গার্হস্থ্য জীবনের আদর্শ অক্ষুণ্ন রাখিয়াছিল। কিরণের মার দুঃখবরণে কেবল নিষ্ক্রিয় সহিষ্ণুতা ছিল; কিন্তু দীপুর মা বৃহৎ সংসারের দায়িত্বপালন, তেজস্বিতা ও স্পষ্টবাদিতা; ছেলেকে মানুষ করার উপযোগী চরিত্রদৃঢ়তা ও বিন্তীর মত অসহায় মেয়েকে সমস্ত সংসারের তাপ ও অপমান হইতে স্নেহপক্ষপুটে আচ্ছাদনের আত্মপ্রত্যয় প্রভৃতি ব্যক্তিত্বসূচক গুণের অধিকারিণী ছিল। ইহারা ধর্মনীতিকেন্দ্রিক অতীত জীবনাদর্শের শেষ প্রতিনিধি। দীপুর মা উঞ্ছবৃত্তির মধ্যে যেরূপ প্রখর বুদ্ধি ও চরিত্রগৌরবের পরিচয় দিয়াছে, অপেক্ষাকৃত সচ্ছল অবস্থার মধ্যে তাদৃশ চারিত্র্যশক্তি দেখাইতে পারে নাই, চাকুরে ছেলের সংসারে সর্বময়ী কর্ত্রীরূপে তাহার তীক্ষ্ণাগ্র ব্যক্তিত্ব যেন অনেকটা কুণ্ঠিত হইয়াছে। দীপুর চাল-চলনের নিয়ন্ত্রণব্যাপারে ও ক্ষীরোদার ভবিষ্যৎ বিষয়ে সে যেন অনেকটা বিহ্বলতা ও অস্থিরমতিত্ব দেখাইয়াছে। বরং কিরণের মা দীপুর সংসারে আশ্রয় লইবার পর ক্ষীরোদার সহিত দীপুর অনিশ্চিত, অস্বীকৃত সম্পর্কের অবসান ঘটাইতে তীক্ষ্ণতর প্রভাব বিস্তার করিয়াছে। সন্তোষ কাকার চরিত্রটি পল্লীসমাজের কৌতুককর অসঙ্গতি ও বিনা সম্পর্কে অধিকারপ্রতিষ্ঠার আত্ম- সম্মানজ্ঞানহীনতার দিক্‌টা উদ্‌ঘাটিত করিয়াছে।

এই সমস্ত চরিত্রের মধ্যে দিয়া সাবেকী জীবনযাত্রার ভাল ও মন্দ দুই দিকই ফুটিয়া উঠিয়াছে। তবে ইহার মন্দের মধ্যেও এক প্রকার হাস্যকর সরলতা আছে, উহা আমাদের উগ্র প্রতিবাদ বা দারুণ জুগুপ্সার উদ্রেক করে না।

কলিকাতার অভিজাত-সমাজের স্বার্থান্ধতা ও বড়মানুষির সীমাহীন ঔদ্ধত্য রূপ পাইয়াছে শ্রীমতী নয়নরঞ্জিনী দাসীর মধ্যে। এইরূপ একটা বিকৃত চরিত্রপরিণতি কলিকাতার বনিয়াদি বংশের মধ্যে কোথাও কোথাও কোন অজ্ঞাত কারণে, হয়ত বংশাভিমানের বিষক্রিয়ার জন্য আত্মপ্রকাশ করে। এই সমাজে মানুষের চারিদিকে একটা দুর্ভেদ্য আত্মগরিমার দুর্গ গড়িয়া উঠিয়া তাহাকে জড় পাষাণে পরিণত করে। নয়নরঞ্জিনীর ভয়াবহ অস্বাভাবিকতা, তাহার ছেলে-বৌএর সম্বন্ধেও একান্ত নির্বিকারত্বে, তাহার মায়া-মমতার নাড়ীগুলির সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়ত্বে। তাহার যে বিকৃতি তাহা যুগ- নিরপেক্ষ, যুদ্ধোত্তরকালের নীতিবিপর্যয়ের সহিত নিঃসম্পর্ক। অঘোরদাদুর মানববিদ্বেষ হয়ত তাঁহার কঠোর জীবনাভিজ্ঞতার অনিবার্য ফল; তিনি সংসারের নিকট যে অবজ্ঞা ও অনাদর পাইয়াছিলেন, তাহাই বহুগণিত করিয়া সংসারকে ফিরাইয়া দিয়াছেন। কিন্তু নয়নরঞ্জিনী ঐশ্বর্যের অপরিমিত প্রাচুর্যের মধ্যে বাস করিয়াও এই আত্মসর্বস্ব নির্মমতা অর্জন করিয়াছে। জীবনের দুই প্রান্তে অবস্থিত এই দুইটি চরিত্র অতীত ও আধুনিক যুগের জীবনযাত্রাবিধির মধ্যে কতকটা ভাবসাম্য রক্ষা করিয়াছে। তবে উহাদের মধ্যে নয়নরঞ্জিনীকেই অসাধারণ ও খানিকটা অবিশ্বাস্য ব্যক্তিক্রম বলিয়া মনে হয়। তাহার চরিত্রাঙ্কণে লেখকের কিছুটা সচেতন অতিরঞ্জনপ্রবণতা ও হয়ত কিছুটা ব্যঙ্গাভিপ্রায় লক্ষ্য করা যাইতে পারে।

কিন্তু যুদ্ধকালীন যে মূল্যবিভ্রান্তি ঘটিয়াছে তাহা একদিকে যেমন আকস্মিক ও অভাবনীয়, অন্যদিকে তেমনি সার্বভৌম। প্রাচীন নীতিশাসিত সমাজে মোটামুটি একটা আদর্শপ্রভাব কম-বেশী পরিমাণে কার্যকরী ছিল। কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট উৎকটরূপে দেখা দিল তাহা যুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক ব্যক্তির মনেই একটা উন্মত্ত তান্ডবের ঘূর্ণিবায়ুরূপে চিরপোষিত নীতিসংস্কার ও ঔচিত্যবোধকে লন্ডভন্ড করিয়া ছাড়িল। এই উদ্‌ভ্রান্তি সর্বাপেক্ষা উদ্ধত, বেপরোয়া প্রকাশ পাইয়াছে লক্ষ্মীর আচরণে। স্বাভাবিক অবস্থায় তাহার চরিত্রের যে তেজস্বী আত্মনির্ভরশীলতা তাহাকে সমস্ত সামাজিক মূল্যবোধ অক্ষুণ্ণ রাখিয়া স্বেচ্ছাবৃত প্রণয়ীর সঙ্গে শান্ত গৃহনীড়রচনায় উদ্বুদ্ধ করিত, যুদ্ধকালীন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তাহাই একটা ভদ্রতার মুখোশপরা, সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী একদল মানুষের সহযোগিতাপুষ্ট স্বৈরিণীবৃত্তির বীভৎস রূপ লইয়াছে। শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’-এ অভয়া-রোহিণীর সংযমপূত, একনিষ্ঠ মিলন যুগধর্মে এক কদর্য ব্যসন ও ব্যভিচারবিলাসে বিকৃত হইয়াছে। ইহার মূলগত কারণ ধর্মসংস্কার-বিলোপ ও দুর্নিবার ঐশ্বর্যমোহ। অভয়ার চরম উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল একটি দরিদ্র সংসারপ্রতিষ্ঠা, লক্ষ্মীর লক্ষ্য সামাজিক সম্ভ্রম ও অপরিমিত ধন-সম্পদলালসা। অথচ মনের গভীরতম স্তরে লক্ষ্মীও স্বামীপুত্র লইয়া সুখে সংসারযাত্রা নির্বাহ করিতেই চাহিয়াছিল। কিন্তু এই ন্যূনতম সাধটুকু মিটাইতেই যে বিপুল বস্তুসঞ্চয় ও ভোগোপকরণ নূতন যুগের মানদন্ডে অবশ্য প্রয়োজনীয় ছিল তাহাই আহরণের জন্য তাহাকে আত্মাবমাননার অন্ধতম গহ্বরে অবতরণ করিতে হইয়াছে। শেষ পর্যন্ত অবদমিত ধর্মবোধ তাহার উপর প্রচন্ডতম প্রতিশোধ লইয়াছে, অবহেলিত নীতিবিধানে অমোঘ বজ্রপাতের ন্যায় তাহার মস্তকে অগ্নিবর্ষণ করিয়াছে। লক্ষ্মীচরিত্রের মধ্যে কোথাও অন্তর্দ্বন্দ্ব নাই, তবে তাহার সমস্ত স্বেচ্ছাকৃত অপরাধের মধ্যে একটি অকুণ্ঠিত সরলতা আছে। মাঝে মধ্যে দীপুর কাছে, স্বামীসেবায় ও পুত্র-স্নেহে তাহার স্বরূপ-পরিচয়টি নিষ্কলুষ সত্যস্বীকৃতিতে নিরূপায় অসহায়তায় উদ্ঘাটিত হইয়াছে। তাহার চরিত্রটি এত সজীব, বক্রপঙ্কিল পথে তাহার পদক্ষেপ এতই সহজছন্দময়, তাহার পাপাচরণের ও ভোগাসক্তির মধ্যেও এমন একটি স্বভাবসুষমার পরিচয় মিলে যে সে কখনই আমাদের সহানুভূতি হারায় নাই। আমরা নীতিবাগীশের অগ্নিবৃষ্টি দৃষ্টি দিয়া তাহার বিচার করি না, সে নাটক-উপন্যাসের প্রথাচিত্রিত পিশাচী-শয়তানী রূপে আমাদের নিকট প্রতিভাত হয় না।

উপন্যাসের নায়িকা সতী আরও সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টির সহিত আরও উজ্জ্বল বর্ণে চিত্রিত হইয়াছে। তাহার ও লক্ষ্মীর মধ্যে চরিত্রের মূল কাঠামো সম্বন্ধে একটি পরিবারগত মিল আছে; আবার আদর্শ ও জীবনসমস্যার প্রকৃতিবিষয়ে গুরুতর প্রভেদও লক্ষণীয়। সতী গোড়া হইতেই লক্ষ্মীর পিতার অবাধ্যতার ও স্বাধীন প্রণয়চর্চার বিরোধী ছিল; পিতৃ- নির্বাচিত বরের সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হইয়া সুখী শান্ত পারিবারিক জীবনযাপনই তাহার একান্ত কাম্য ছিল। দীপুর প্রতি একটি অস্বীকৃত অনুরাগের বীজ হয়ত তাহার অবচেতন মনে সুপ্ত ছিল, কিন্তু অনুকূল পরিবেশে এ বীজ কোনদিনই অঙ্কুরিত হইত না। কিন্তু ভাগ্যের চক্রান্তে তাহার এই একান্তবাস্তব কিশোরী-কামনা মুকুলিত হইতে পারিল না। তাহার অদৃষ্ট-দেবতা এমন একটি পরিবারে তাহার স্থান নির্দেশ করিয়া দিলেন যেখানে তাহার আশ্রয়োৎসুক প্রকৃতি প্রতি মুহূর্তের রূঢ় আঘাতে, পুঞ্জীকৃত অমর্যাদা ও অবহেলার চাপে, স্নেহপ্রীতির অবলম্বনচ্যুত হইয়া সমাজবিধিসুরক্ষিত কক্ষপথ হইতে ছিটকাইয়া পড়িল। সতীর অবস্থা অনেকটা হার্ডির Tess-এর মত—সে প্রতিকূল দৈবের হাতে অসহায় ক্রীড়নক হইয়াছে। সনাতনবাবুকে লেখক দার্শনিক প্রজ্ঞা ও ঋষিসুলভ সমদর্শিতার আদর্শরূপে প্রতিষ্ঠিত করিতে চাহিয়াছেন, কিন্তু তাহার আচরণ কোথাও সঙ্গত ও স্বাভাবিক হয় নাই। সে একটি অশরীরী ভাবমূর্তি মাত্র, রক্তমাংসের মানুষ হইয়া উঠে নাই। তাহার মুহুমুহুঃ উচ্চারিত উদার উক্তিসমূহ তাহার অন্তরসত্যের কোন্ উৎস হইতে উদ্ভূত তাহা মোটেই পরিষ্কার হয় না। সে যেন কর্মজগৎ হইতে নির্বাসিত একজন গ্রন্থকীটের পরনির্ভর অসহায়তা, কর্তব্যসঙ্কটে স্থির-সংকল্প গ্রহণে অক্ষমতারই প্রতিমূর্তিরূপে আমাদের নিকট প্রতিভাত হয়। সুতরাং দীপঙ্করের প্রশস্তি সত্ত্বেও সতীর বিমুখতা ও অবজ্ঞাকেই আমরা তাহার ন্যায্য প্রাপ্য বলিয়া মনে করি।

কিন্তু মানসিক গঠন ও আদর্শে পার্থক্য থাকিলেও সতীকেও শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মীর পথ অনুসরণ করিতে হইল। মা-মণির দুর্ব্যবহারে ও সনাতনবাবুর নির্লিপ্ততায় সে। শ্বশুর বাড়িতে অতিষ্ঠ হইয়া হঠাৎ দীপুর আশ্রয় গ্রহণ করিল। দীপুর অতি সতর্ক শুচিতাবোধ ও উহার ও লক্ষ্মীর হিতৈষণা সতীকে আবার শ্বশুরালয়ে সাময়িকভাবে প্রতিষ্ঠিত করিল। কিন্তু এবারের নিদারুণ অপমান সতীকে একেবারে বে-পরোয়া করিয়া তুলিয়া তাহাকে প্রায় প্রকাশ্য রতিারূপে ঘোষালের আশ্রয়গ্রহণে বাধ্য করিল। দীপুর প্রতি দারুণ অভিমান ও শ্বশুরবাড়ির উপর প্রচণ্ড প্রতিশোধস্পৃহা তাহাকে স্পর্ধিত প্রকাশ্যতার সহিত কলঙ্কিত জীবনযাপনের প্রেরণা দিল। ঘোষালের সহিত তাহার সম্পর্কের মধ্যে বিদ্রোহের উষ্মাই প্রধান উপাদান ছিল, কিন্তু মনে হয় যে এই আগ্নেয়গিরির পিছনে খানিকটা স্বেচ্ছাসম্মতি, এমন কি কিছুটা কৃতজ্ঞতাজাত অনুকূল মনোভাবেরও অভাব ছিল না। সে একবার নিজের চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করিয়াও ঘোষালকে বাঁচাইবার জন্য আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার একটা আকস্মিক মানসপ্রতিক্রিয়ার প্রভাবে ঘোষালের ঘুষ লওয়ার প্রমাণ দাখিল করিয়া তাহাকে ফাঁসাইয়াছে। সতীর আবেগপ্রবণ হঠকারী প্রকৃতি ও তাহার মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার ফলে তাহার মনের গভীরে প্রবাহিত বিরীতস্রোতের ঘূর্ণিসংঘাত তাহার এই খামখেয়ালি আচরণকে খুবই স্বাভাবিক ও মনস্তত্ত্বসম্মত করিয়াছে। মজ্জমান ব্যক্তির তৃণকে অবলম্বন করিয়া বাঁচিবার এই প্রয়াস তাহাকে একদিকে ঘোষালের আশ্রয়ের উপর নির্ভরশীল; অপরদিকে ঘোষালের স্থুল, ইতরপ্রকৃতি ও যৌনস্বেচ্ছাচারিতার প্রতি দারুণ বিতৃষ্ণা তাহাকে বিদ্রোহের বিস্ফোরণোন্মুখ করিয়াছে। এই ঘাত-প্রতিঘাতের সদা-সচলতায় তাহার আচরণে এইরূপ অতর্কিত বৈষম্য ঘটিয়াছে। শেষদৃশ্যে ঘোষালই তাহার জীবন-রন্ধ্রে শনিরূপে প্রবেশ করিয়া তাহার উদ্ভ্রান্ত অপঘাত-মৃত্যুর কারণ হইয়াছে।

ঘোষালের গ্রেপ্তারের পর সতী অকস্মাৎ মূর্ছিত হইয়া হাসপাতালে নীত হইয়াছে ও সেখান হইতে দীপঙ্করের বার বার অনুরোধে লক্ষ্মীর গড়িয়াহাট লেভেল ক্রসিং-এর নিকটবর্তী বাড়িতে আশ্রয় লইয়াছে। সেখানে নির্জন বাসের সময় দীপু ও তাহার মধ্যে নীরব, নিষ্ক্রিয় সাহচর্যের একটি অদৃশ্য আকর্ষণ, একটা নিরুত্তাপ, কিন্তু অমোঘ আত্মিক সম্পর্ক দৃঢ়তর হইয়াছে। ইতিমধ্যে সনাতনবাবু, এমন কি মা-মণি সতীকে শ্বশুরবাড়িতে ফিরাইবার চেষ্টা করিয়াছেন, কিন্তু সে চেষ্টায় কিছুটা ভাবের আদান-প্রদান ঘটিলেও কোন স্থায়ী ফল হয় নাই। যে রাত্রিতে সতীর সমস্যাদুর্বহ জীবনের অবসান ঘটিয়াছে সেই সন্ধ্যায় স্বামীর সঙ্গে সতীর একটা স্থায়ী মিলনের ভূমিকা প্রস্তুত হইয়া এই মৃত্যুকে আরও করুণ করিয়াছে। স্বামীর সহিত বোঝা-পড়াতেও সতীর অব্যবস্থিতচিত্ততা, দৃঢ় সিদ্ধান্ত- গ্রহণে অক্ষমতা প্রকাশ পাইয়াছে। তাহার ক্ষুদ্র সত্তার উপর যে পর্বতপ্রমাণ সমস্যার বোঝা চাপিয়াছে যে নিদারুণ কর্তব্যসঙ্কট তাহাকে উদ্‌ভ্রান্ত করিয়াছে তাহার শ্বাসরোধী পেষণেই তাহার ইচ্ছাশক্তি কতকটা অসহায়ভাবে আন্দোলিত হইয়াছে। সতীর দোলকবৃত্তি তাহার প্রাণশক্তির ক্ষীণতার জন্য নয়, যুগপরিবেশ ও পরিবার-পরিস্থিতি তাহার জন্য যে কণ্টকশয্যা বিছাইয়াছে তাহার দুঃসহ তীক্ষ্ণতার জন্য। দীপঙ্কর, সনাতনবাবু, মা-মণি, লক্ষ্মীর অস্বীকৃত, কিন্তু নীরবক্রিয়াশীল দৃষ্টান্ত, ঘোষাল ও প্যালেস- কোর্টের বিকৃত জীবনযাত্রা ও গড়িয়াহাট লেভেল ক্রসিং-এর নিয়তি-চিহ্নিত অশুভ, নিগূঢ়চারী প্রভাব—সকলের সম্মিলিত শক্তি সতীর স্বভাব-পবিত্র, আনন্দ ও উৎসাহদীপ্ত, প্রাণোচ্ছল ব্যক্তিসত্তাকে এক অশোঘ ট্র্যাজেডির করুণ পরিণতির দিকে আকর্ষণ করিয়াছে। তাহার তীক্ষ্ণ উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব-দীপের নির্বাপণেই যুগের প্রলয়-ঝটিকার দুর্বার শক্তির যথার্থ পরিমাপ।

বিন্তী ও ক্ষীরোদা এই দুই কিশোরী হয়ত কোন যুগসংস্কৃতিপ্রভাবিত নয়, ব্যক্তিস্বভাবে বিশিষ্ট ও প্রথাসিদ্ধ প্রাচীন আদর্শের অনুসরণ প্রকাশকুণ্ঠ ও আত্মবিলোপপ্রবণ। কিন্তু তাহারা যে তাৎকালিক যুগপরিবেশে অত্যন্ত বিহ্বল ও সমাজধারাবিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াছে তাহা নিঃসন্দেহ। এই নিঃসঙ্কোচ আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মপ্রসারণের যুগে তাহাদের চাপা, আপনার মধ্যে গুমরাইয়া-মরা প্রকৃতিই তাহাদের উপর যুগের পরোক্ষ প্রভাব। এমন কি ঊনবিংশ শতকের শেষপাদেও বাঁচিয়া থাকিলে বিন্তী যে দুঃসহ শূন্যতা-বোধপীড়িত হইয়া আত্মহত্যা করিত না তাহা অনুমান করা যায়। অঘোরদাদু তাহার চারিদিকে যে নিঃস্নেহ নিঃসঙ্গতার আবহাওয়া সৃষ্টি করিয়াছিলেন তাহাই দীপঙ্কর ও তাহার মাতার সহিত বিচ্ছেদকে তাহার পক্ষে এত মারাত্মক করিয়াছে। কড়ির ধাতব ঝঙ্কার তাহার কানে মৃত্যুর আহ্বানরূপে ধ্বনিত হইয়াছে। ক্ষীরোদা তাহার মন্দ ভাগ্যকে স্বীকার করিয়া লইয়াছিল। কেননা দীপঙ্করের আশ্রয় তাহার স্বেচ্ছাবৃত, তাহার আবাল্য জীবন-প্রতিবেশ নয়। আশাভঙ্গের গুরুতর আঘাত সে সহ্য করিয়াছে, কিন্তু উহাতে উহার মূলীভূত জীবন-সংস্কার একেবারে উচ্ছিন্ন হয় নাই বিশেষতঃ সে আধুনিককালের যান্ত্রিক, নির্মম—প্রয়োজননিয়ন্ত্রিত, সুকুমার বৃত্তির সহিত শিথিলসংলগ্ন জীবনপ্রত্যাশায় অভ্যস্ত হইয়াছে। কাজেই জীবনের মুষ্টিভিক্ষাতেই সে সন্তুষ্ট, উদার বদান্যতার আশা সে করে নাই।

এই উদ্ভ্রান্ত পরিবেশের প্রাণপুরুষ হইতেছে দীপঙ্কর সেন। এই বিষদগ্ধ বাতাবরণের নিগূঢ়তম যন্ত্রণা তাহার অস্থিমজ্জাতে সংক্রামিত হইয়াছে, কিন্তু ইহা হইতেই সে এক অদ্ভুত অমৃতরস আহরণ করিয়াছে। সে একাধারে প্রতীকী ও ব্যক্তিপরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত চরিত্র। সে যেন এক অসাধারণ চুম্বকশক্তিবলে এই অস্বাভাবিক, বিপরীত- উপাদান-গঠিত যুগপরিস্থিতির সমস্ত ভাল ও মন্দ ভাবকণিকাগুলিকে নিজ আত্মার গভীরে আকর্ষণ করিয়া লইয়াছে। বাল্যকাল হইতেই জীবনজিজ্ঞাসা তাহার মধ্যে এক অনিবার্য প্রেরণারূপে সর্বগ্রাসী শক্তিতে বিকশিত হইয়াছে। অঘোরদাদুর বিকৃত জীবননীতি, কালীঘাটের শুচি ও অশুচি, ভক্তিভোগমিশ্র পরিবেশ, সহপাঠীদের উৎপীড়ন ও সমপ্রাণতা, বিশেষ করিয়া কিরণের কৈশোর কল্পনার উদার অবাস্তবতা তাহার শিশুমনকে এক অবোধ, অস্পষ্ট বিস্ময়ে বিভোর করিয়াছে। ইহার মধ্যে শিক্ষক প্রাণমথবাবুর আদর্শবাদ ও কিরণের দুঃখজয়ী দেশসেবার মহিমা তাহার মনে গভীর রেখায় অঙ্কিত হইয়াছে। এই স্তরে তাহার মাতার প্রভাবই তাহার উপর সর্বাপেক্ষা কার্যকরী।

এই সময়ে তাহার জীবনে লক্ষ্মীদি ও সতীর আবির্ভাব তাহার মানস-দিগন্তকে প্রসারিত করিয়া তাহার কৈশোর অনুভূতিগুলিকে গাঢ়তর বর্ণে রঞ্জিত করিয়াছে। লক্ষ্মীর ও সতীর জীবনের সহিত সে তাহার জীবনকে এরূপ একাত্মভাবে মিশাইয়াছে যে, উহাদের সুখ-দুঃখ, উহাদের জীবনসমস্যা যেন তাহার সম্প্রসারিত সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশে রূপান্তরিত হইয়াছে। লক্ষ্মীর সহিত তাহার সম্পর্ক বাহিরের হিতৈষণাতেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু সতীর রক্তস্রাবী সমস্যাচক্রের প্রত্যেকটি পাক দীপঙ্করের মনেও প্ৰায় রক্তের অক্ষরেই কাটিয়া বসিয়াছে। সতীর অবস্থা-সঙ্কটের একটা সুমীমাংসার জন্য তাহার জীবনে চিরঅশান্তিকে সে বরণ করিয়াছে। এমন কি সনাতনবাবু, স্নেহলেশহীনা, স্বার্থসর্বস্বা মা-মণির জন্যও তাহার সমবেদনার সীমাপরিসীমা নাই, তাহাদেরও ছটফটানির সে অংশীদার। চাকরিতে তাহার অভাবনীয় পদমর্যাদাবৃদ্ধি সত্ত্বেও ঘুষ দিয়া যোগাড়-করা চাকরির জন্য তাহার গভীর আত্মধিক্কার তাহাকে এক মুহূর্তের শান্তি দেয় নাই। অল্পবেতনের কেরানী গাঙ্গুলীবাবুর পারিবারিক জীবনের সুগভীর লাঞ্ছনা সে নিজের জীবন দিয়া অনুভব করিয়াছে। যুগজীবনের যে গ্লানি ও তিক্ততা প্রত্যেক মানুষের অন্তঃকরণে প্রতিনিয়ত জমিয়া উঠিয়াছে, তাহার সবটুকু যোগফল যেন দীপঙ্করের জীবনে কেন্দ্ৰীয়ভূত হইয়াছে। নীলকণ্ঠের ন্যায় যুগযন্ত্রণার সবটুকু বিষ সে পান করিয়াছে। কেবল দুইটি প্রাণী তাহার সার্বিক গ্রহণশীলতা, সকল পাপের প্রায়শ্চিত্তচর্যার অন্তর্ভুক্ত হয় নাই—ক্ষীরোদা ও মিঃ ঘোষাল। ইহাদের অন্তরলোকে প্রবেশের সে কোন চেষ্টাই করে নাই। হয়ত ক্ষীরোদার ব্যথা দূর করা তাহার সাধ্যাতীত ছিল, সতীর প্রতি নিঃশেষে সমর্পিত প্রাণ অপরকে দান করিবার কোন অধিকারই তাহার ছিল না। যে রেলদুর্ঘটনায় সতী প্রাণ দিয়েছে, সে দুর্ঘটনা দীপঙ্করকেও অক্ষত রাখে নাই—নিয়তির একই অমোঘ বন্ধন উভয়ের জীবনকে একই পরিণতিসূত্রে জড়াইয়াছে। সতীর মৃত্যুর পর দীপঙ্কর যেন ব্যক্তিস্তা হারাইয়া একটি ভাবাদর্শের অমূর্ত রূপ-ব্যঞ্জনায় পরিণত হইয়াছে। যে যুগ আদর্শকে হারাইয়াছে, ধন ও প্রতিষ্ঠার মোহে আত্মবিক্রয় করিয়াছে, তাহারই বধির কর্ণে সে বিস্মৃত আদর্শের বাণী শোনাইয়াছে, সব দিক দিয়া ফতুর বর্তমানকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাইয়াছে। সে নিজ ক্ষুদ্র জীবনসীমা ছাড়াইয়া বিরাট ভূমিকম্পে উন্মথিত বিশ্বের বিকারের মর্মমূলে প্রতীকী মহিমায় আসীন হইয়াছে। যাহার ব্যক্তিজীবনের প্রচেষ্টা কলিকাতার সংকীর্ণ সীমায় ও কয়েকটি নর-নারীর সহিত সংযোগরেখায় আবদ্ধ, তাহার বৃহত্তম চেতনা-তাৎপর্য সমস্ত বিশ্বে ছড়াইয়া পড়িয়াছে।

আধুনিককালের বাংলা ঔপন্যাসিকগোষ্ঠীর মধ্যে দুইজন উপন্যাসের ঘটনাপরিধির মধ্যে নিখিলব্যাপ্ত, কল্পান্তপ্রসারী জীববোধের ইঙ্গিত দিয়াছেন। ইহাদের মধ্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় অন্তর্জীবন ও অধ্যাত্মালোকের অতল রহস্যময়তা ও অসীমাভিমূখিতা ব্যঞ্জিত করিয়াছেন। আর দ্বিতীয়, বিমল মিত্র সমগ্র বিশ্বব্যাপী বহির্ঘটনাপ্রবাহের সার্বভৌম তাৎপর্যটি বর্তমান উপন্যাসে ফুটাইয়া তুলিয়াছেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় সমগ্র জগৎ শুধু কবির ভাষায় নয়, বাস্তব ভাবসংঘাত ও জীবননিয়ামক শক্তিরূপে, জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে এক বিপুল, অভাবনীয় আলোড়ন তুলিয়াছে। যুদ্ধোন্মত্ত পৃথিবী শত্রুধ্বংসের জন্য যে বিরাট মারণাস্ত্র সংগ্রহ করিয়াছে তাহারই নৈতিক বিস্ফোরণ সে শত্রুমিত্র সকলের উপর নির্বিচারে প্রয়োগ করিতে উদ্যত হইয়াছে। এই নির্মম দানবীয় শক্তি বাঙালীর শান্ত, স্বল্পে তুষ্ট, নীতি-সংযত জীবনযাত্রার গভীরে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া সেখানে তুমুল বিপর্যয় সৃষ্টি করিয়াছে। ক্ষুদ্র কলিকাতা শহরের উপর সমস্ত যুধ্যমান জগৎ ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে—সুদূর রণক্ষেত্রের গোলাগুলিবারুদ আমাদের আকাশে-বাতাসে উগ্র গন্ধ ও দাহ ছড়াইয়াছে। প্রতিদিনকার প্রয়োজনের সামগ্রীতে, নিকট প্রতিবেশী ও পরিবারগোষ্ঠীর সহিত আচরণে, যুগযুগান্তরের নীতি-সংস্কার ও কর্তব্যবোধে, বিশ্বের উত্তাল তরঙ্গবিক্ষোভে সমস্ত স্থির সিদ্ধান্তকে অস্থির ছন্দে আবর্তিত করিয়াছে। বিশ্ব খুব স্বাভাবিক এমন কি অনিবার্য ভাবেই শুধু আমাদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে নাই, আমাদের নিগূঢ়তম অন্তর্জীবনেও কাঁপন ধরাইয়াছে। উপন্যাসটিতে এই পরিধিবিস্ত ারের সার্থক চিত্র অঙ্কিত হইয়াছে। অবশ্য বিশ্বের আততায়ী দস্যুরূপই এখানে প্রকটিত। শুধু আলঙ্কারিক অর্থে নয়, শুধু ক্ষুদ্রের মধ্যে দার্শনিক ও ঐতিহাসিক অতিকায়তা প্রবর্তনের নেশায় নয়, মৌলিক প্রয়োজনের দূরন্ত তাগিদেই আমরা বিপরীত অর্থে বিশ্বরূপ দর্শন করিতে আরম্ভ করিয়াছি। দীপঙ্করের অন্তরতম চেতনার মধ্যে এই বিশ্বানুভূতি অনুপ্রবিষ্ট হইয়াছে। তাহার এই সাঙ্কেতিক মহিমাই উপন্যাসের বস্তুবেষ্টনীতে এক অপূর্ব আত্মিক তাৎপর্য সন্নিবিষ্ট করিয়াছে। বাংলার আধুনিকতম মানস রূপান্তরের স্মরণীয় চিত্ররূপেই উপন্যাসটির কালোত্তীর্ণ মূল্য।

বাঙালীর অন্তর্জীর্ণতার আর একটি নিম্নতর স্তর আসিয়াছে দেশ-বিভাগ ও উদ্ভাস্তুপ্লাবনের অনিবার্য ফলরূপে। লেখক এই চরম অধোগতির মূল্যায়ন এখনও করেন নাই। হয়ত ভবিষ্যৎকালের কোন উপন্যাসে ইহা বিষয়বস্তুরূপে গৃহীত হইবে। কিন্তু তখন লেখক দীপঙ্করের মত সূক্ষ্ম-অনুভূতিশীল, উদারচরিত, বসুধৈবকুটুম্বক নায়কচরিত্র উপহার দিতে পারিবেন কি? আপাততঃ দীপঙ্করই আমাদের উপন্যাসের আকাশে সমস্ত পাংশুল ধুম্রকলঙ্কের মধ্যে ধ্রুবতারার মত ভাস্বর হইয়া রহিল।

[বঙ্গসাহিত্য উপন্যাসের ধারা ]

সমাপ্ত

অধ্যায় ১০৪ / ১০৪

সকল অধ্যায়

১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১
২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২
৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩
৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪
৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫
৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬
৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭
৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮
৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯
১০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০
১১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১১
১২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১২
১৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৩
১৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৪
১৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৫
১৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৬
১৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৭
১৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৮
১৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১৯
২০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২০
২১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২১
২২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২২
২৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৩
২৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৪
২৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৫
২৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৬
২৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৭
২৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৮
২৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৯
৩০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩০
৩১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩১
৩২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩২
৩৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৩
৩৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৪
৩৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৫
৩৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৬
৩৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৭
৩৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৮
৩৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩৯
৪০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪০
৪১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪১
৪২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪২
৪৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৩
৪৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৪
৪৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৫
৪৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৬
৪৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৭
৪৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৮
৪৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৪৯
৫০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫০
৫১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫১
৫২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫২
৫৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৩
৫৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৪
৫৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৫
৫৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৬
৫৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৭
৫৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৮
৫৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৫৯
৬০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬০
৬১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬১
৬২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬২
৬৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৩
৬৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৪
৬৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৫
৬৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৬
৬৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৭
৬৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৮
৬৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৬৯
৭০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭০
৭১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭১
৭২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭২
৭৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৩
৭৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৪
৭৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৫
৭৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৬
৭৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৭
৭৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৮
৭৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭৯
৮০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮০
৮১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮১
৮২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮২
৮৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৩
৮৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৪
৮৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৫
৮৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৬
৮৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৭
৮৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৮
৮৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৮৯
৯০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯০
৯১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯১
৯২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯২
৯৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৩
৯৪. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৪
৯৫. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৫ উপসংহার
৯৬. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৬
৯৭. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৭
৯৮. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৮
৯৯. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৯
১০০. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০০
১০১. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০১
১০২. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০২
১০৩. কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.১০৩
১০৪. নির্ঘণ্ট : কড়ি দিয়ে কিনলাম – ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন