১৫. আল্লামা শেখ সা’দী (রঃ) (১১৭৫–১২৯৫ খ্রি:)

মাইকেল এইচ. হার্ট

গগণের উদারতা ও স্বর্গের শান্তির বাণী নিয়ে সময় সময় যে যে সবল মহাপুরুষ মর্ত্যের দ্বারে আতিথ্য গ্রহণ করেন এবং জগতের কিঞ্চিত যথার্থ কল্যাণ সাধন দ্বারা মানুষের স্মৃতিপটে অক্ষয় পদচিহ্ন রেখে যান, শেখ সা’দী (রঃ) তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সীমাহীন দারিদ্রতার মধ্যেও তিনি ধর্য্যের সাথে জ্ঞান অর্জন, পদব্রজে দেশ ভ্রমণ, কাব্য ও সাহিত্য রচনা এবং আধ্যাত্মিক চিন্তার মধ্য দিয়ে কাটিয়েছিলেন সারাটা জীবন। ডাক ও তার প্রথার যখন সৃষ্টি হয়নি, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত শত শত পত্র পত্রিকার অবাধ প্রচার যখন ছিল না; লঞ্চ, বাস, ট্রেন কিংবা প্লেনে চড়ে পৃথিবী ভ্রমণ করা যখন সম্ভব ছিল না; ধর্ম সাহিত্য ও ইতিহাসের অভিনব বার্তা যখন জনগণের নিকট পৌঁছবার কোন সুযোগ ছিল না, তখন শেখ সা’দী (রঃ) নৈশ নক্ষত্রের ন্যায় আপন অনাড়ম্বর কিরণ ধারা উৎসারিত করে জনগণের দুয়ারে দুয়ারে সে আলোক রশ্মি বিতরণ করতেন।

স্যার আউসলী এর মতে ১১৭৫ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের ফারেস প্রদেশের অন্তর্গত সিরাজ নগরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আয়ু ১২০ বছর। তবে তাঁর জন্ম ও মৃত্যু সাল নিয়ে মতভেদ আছে। কারো কারো মতে তাঁর জন্ম সাল ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দ এবং আয়ু ১০২ বছর। কিন্তু মুজাফফর উদ্দীন আতাবেক সা’দ বিন জঙ্গীর রাজত্বকালে যে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন তাতে কোন দ্বিমত নেই। বাল্যকালে তাঁর নাম ছিল শেখ মোসলেহ উদ্দীন। জানা যায়, ফারেসের শাসনকর্তা আতাবেক সা’দ বিন জঙ্গীর রাজত্বকালে তিনি যখন কবিতা লিখতেন তখন আপন নামের সাথে ‘সা’দী’ লিখতেন এবং এ নামেই তিনি সুখ্যাতি লাভ করেন। সা’দীর পিতা রাজ দরবারে চাকুরী করতেন এবং তিনি ছিলেন খুব ধার্মিক। ফলে শৈশব থেকেই সা’দীর পিতা রাজ দরবারে চাকুরী করতেন এবং তিনি ছিলেন খুব ধার্মিক। ফলে শৈশব থেকেই সা’দী ধর্মীয় অনুশাসনের ভিতর দিয়ে গড়ে উঠেন। কোন অসৎ সঙ্গ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। শৈশবেই তাঁর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় অসাধারণ প্রতিভা। শিক্ষা লাভের প্রতি ছিল তাঁর অস্বাভাবিক আগ্রহ। কিন্তু শৈশবেই পিতা মৃত্যু বরণ করায় তিনি হয়ে পড়েন নিতান্ত ইয়াতীম ও অসহায়। পিতার আর্থিক অবস্থাও ভাল ছিল না। সরকারী চাকুরী করে পিতা যে সামান্য বেতন পেতেন তা দিয়েই খুব কষ্ট করে তাঁকে সংসার চালাতে হত। কিন্তু পিতার মৃত্যুতে সংসারে নেমে আসে চরম দারিদ্রতা এবং তাঁর শিক্ষা লাভের উপর আসে মারাত্মক আঘাত। কিন্তু এ অসহায়ত্ব ও দারিদ্রের মধ্যেও তিনি ধৈর্য্য হারাননি। শেখ সা’দী (রঃ) এর জীবনকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ৩০ বছর শিক্ষা লাভ, দ্বিতীয় ৩০ বছর দেশ ভ্রমণ, তৃতীয় ৩০ বছর গ্রন্থ রচনা এবং চতুর্থ ৩০ বছর আধ্যাত্মিক চিন্তা ও সাধনা।

পিতার মৃত্যুর পর তিনি সিরাজ নগরের গজদিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। কারো মতে ফারাসের শাসনকর্তা আতাবেক সা’দ বিন জঙ্গী দয়াপর্বশ হয়ে স্বয়ং ইয়াতীম শেখ সা’দীর আশ্রয় দান বিদ্যা শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। উক্ত মাদ্রাসায় নিশ্চিত মনে বেশী দিন শিক্ষা লাভ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কারণ তখন রাজ্যের সর্বত্র রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি বিরাজ করছিল। তিনি উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় দারিদ্রের সাথে লড়াই করে চলে যান বাগদাদে। বাগদাদের নিযামিয়া মাদ্রাসা ছিল তঙ্কালীন বিশ্বের সবৃশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাগদাদে এসে তিনি অনাহারে, অর্ধাহারে এবং আশ্রয়ের অভাবে দিনের পর দিন পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। অতঃপর তিনি একজন সহৃদয় ব্যক্তির সহযোগিতায় স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে শিক্ষা লাভ শুরু করেন। তাঁর প্রতিভা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং শিক্ষা লাভে তার অসাধারণ পরিশ্রমের প্রেক্ষিত খুব অল্প সময়ের। মধ্যেই তাঁর প্রতি শিক্ষকগণের সুদৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। এরপর তিনি ভর্তি হন বাগদাদের নিযামিয়া মাদ্রাসায়। সেখানে তিনি বিখ্যাত আলেম আল্লামা আবুল ফাতাহ ইবনে জওজী (রঃ) এর নিকট তাফসীর, হাদিম ও ফিকাহ শাস্ত্র শিক্ষা লাভ করেন। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি মাদ্রাসার প্রধান ছাত্র হিসেবে পরিগণিত হন এবং মাসিক বৃত্তি লাভ করেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি তাফসীর, হাদিস, ফিকাহ, সাহিত্য, দর্শন, খোদাত ও ইসলামের বিবিধ বিষয়ে অসামান্য পান্ডিত্য অর্জন করেন। আল্লামা শেখ সাদী (রঃ) শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভেই সন্তুষ্ট ছিলেন না; বরং আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের প্রতিও ছিল তাঁর অস্বাভাবিক আগ্রহ। শেখ সাদী (রঃ) এর জন্মের ১০ বছর পূর্বে অর্থাৎ ১১৬৫ খ্রি: (৫৬১ হিঃ) তোপসশ্রেষ্ঠ শেখ আবদুল কাদির জিলানী (রঃ) ইন্তেকাল করেন। তাঁর অলৌকিক তপঃ প্রভাবের কথা সমগ্র বিশ্বে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। শেখ সাদী (রঃ) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের অবসর সময়ে ধন্য পুরুষদের আশ্রমে গিয়ে অতীন্দ্রিয় জগতের তথ্য সংগ্রহ করতেন। এতদুদ্দেশ্যে তিনি তকালীন তপস শেখ শাহাবুদ্দিন (রঃ) এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ধন্য পুরুষদের সঙ্গ লাভে অল্প দিনের মধ্যেই তার ধর্মগত প্রাণ তত্ত্বজ্ঞান ও পুণ্যের আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল।

৩০ বছর বয়সে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তির পর শুরু হয় তাঁর ভ্রমণ জীবন। জ্ঞান পিপাসা চরিতার্থ করার মানসে সংসার বৈরাগীর ন্যায় খালি হাতে তিনি পদব্রজে বিচরণ করেছেন জগতের বিভিন্ন দেশ এবং নানা স্থানে উপদেশ বিতরণের মাধ্যমে লোকদের ধর্ম ও সভ্যতার পথে উন্নীত করেছেন। স্যার আউসলী’র মতে প্রাচ্য জগতে সুবিখ্যাত ইবনে বতুতার পরে পরিব্রাজক হিসেবে যার নাম শীর্ষে রয়েছে, তিনি হলেন মাওলানা শেখ সা’দী (রঃ)। ডদব্রজ বা উষ্ট্রপৃষ্ঠ ব্যতীত যখন মরুভূমি পার হবার কোন উপায় ছিল না তখন শেখ সাদী (রঃ) শ্বাপদসঙ্কুল ও অসভ্য বর্বর অধুষিত জনপদের শত সহস্র বিপদ উপেক্ষা করে পব্রজে ভ্রমণ করেছিলেন দেশ থেকে দেশান্তরে। তিনি সমগ্র পারস্য, এশিয়া মাইনর, আরবভূমি, সিরিয়া, মিসর, জেরুজালেম, আর্মেনিয়া, আবিসিনিয়া, তুর্কিস্তান, ফিলিপাইন, ইরাক, কাশগড়, হাবস, ইয়ামন, শাম, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, হিন্দুস্তানের সোমনাথ ও দিল্লীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। পব্রজে ভ্রমণ করেছিলেন। এ সময় দেশ ভ্রমণ করতে গিয়ে তাঁকে পার হতে হয়েছিল পারস্য উপসাগর, ওমান সাগর, ভারত মহাসাগর, আরব সাগর প্রভৃতি। এ সুদীর্ঘ সফরের ফলে তিনি বিশ্বের ১৮টি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। পদব্রজে তিনি হজ্জ সম্পাদন করেছিলেন ১৪ বার। তাঁর এ ভ্রমণ কাহিনী তিনি তার গুলিস্তা ও বোস্তা বিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। গুলিস্তায় তিনি লিখেছেন–

“দর আফসায়ে আলম বগাশতম বসে,
বসর বোরদাম আ’য়ামে বহর কাসে,
তামাত্তায় যে হরগোশা ইয়াফতাম,
যে হর খিরমানে খোশা ইয়াফতাম।”

অর্থাৎ–

“ভ্রমিয়াছি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রদেশ,
মিলিয়াছি সর্বদেশে সবাকার সনে,
প্রতি স্থানে জ্ঞানে রেণু করি আহরণ,
প্রতি মৌসুমে শস্য করেছি ছেদন।”

বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে শেখ সাদী (রঃ) অর্জন করেছিলেন বিবিধ জ্ঞান; তাঁর চোখের সামনে ঘটেছিল বহু বিচিত্র ঘটনা, তিনি অবলোকন করেছিলেন জাতির উত্থান, পতনের ইতিহাস। কর্ডোভার মুসলিম সাম্রাজ্য যার ঐশ্বর্যে একদিন এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা প্রভাবান্বিত হয়েছিল তা ত্রয়োদশ শতাব্দীতে শেখ সা’দী (রঃ) এর চোখের সামনে নিশ্চিহ্ন হয়ে ধরা পৃষ্ট হতে মুছে গিয়েছিল। এ শতকেই সেলজুক এবং খাওয়ারিজম শাহীর আত্মদ্বন্দু উভয় সাম্রাজ্যের মূল উৎপাটন করে ফেলেছিল। বনি আব্বাসদের রাজ বংশ যা প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ বছর বিপুল বিক্রমে রাজত্ব করেছিল, তাও এ শতকে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সা’দী (রঃ) দেখেছিলেন দুর্ভিক্ষের হাহাকার। মিসর ও পারস্যের দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ হানি দেখে তার হৃদয় বিদীর্ণ হয়েছিল। যে দুর্ধর্ষ চেঙ্গিস খাঁর নামে আজও সমগ্র এশিয়ার লোক শিহরিত হয়, তারই পোত্র নৃশংস হালাকু খান এক বিরাট তাতার বাহিনী নিয়ে ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদের উপর আপতিত হয়েছিল। বর্বরদের নির্মম অক্রমণে ইসলামের শেষ খলিফা মোতাসেম বিল্লাহ নির্দয় ভাবে নিহত হলেন। এরপর শুরু হল নির্মম গণহত্যার অভিনব। নারী পুরুষের অকলঙ্ক শোণিতে রাজপথ, গৃহ ও টাইগ্রাসের পানি রঞ্জিত হল। বাগদাদ পরিণত হল এক মহা শ্মশানে। ইবনে খালদুন লিখেছেন, বিশ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ষোল লক্ষ লোক এ আক্রমণে নিহত হয়েছিল। শেখ সাদী (রঃ) গুলিস্তার প্রথম অধ্যায়েই এ সকল জালেমদের বিরুদ্ধে তাঁর লেখনী পরিচালনা করেছেন। তাঁর প্রায় সমগ্র কাব্য গ্রন্থের ভিতরই জালেম বাদশাহর উপর তার শ্লেষ বাক্য ও অবজ্ঞার চিহ্ন বিচ্ছুরিত দেখতে পাওয়া যায়।

দেশ ভ্রমণে নিষ্ঠুর, জালেম ও বর্বরদের হাতে সা’দীকে কতবার যে কষ্ট লোগ করতে হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। দ্বাদশ শতাব্দীতে ফিলিস্তিনীতে খিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে ধর্মযুদ্ধ যখন চরম আকার ধারণ করে তখন খ্রিস্টানদের আক্রমণ থেকে। পাবার জন্যে শেখ সা’দী (রঃ) নিকটস্থ এক নির্জন জঙ্গলে আশ্রয় নেন। খ্রিস্টানগণ জঙ্গল থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরী হতে আনীত ইহুদিদের সাথে তাঁকে পরিখা খননে নিযুক্ত করে। তখন তাঁর দুরাবস্থার সীমা ছিল না। একদিন আলিপ্পো শহরের এক সম্ভ্রান্ত বণিক (সাদীর এক সময়ের পরিচিত) সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। শেখ সা’দী (রঃ) তাকে দেখে সমুদয় ঘটনা বললেন। এতে বর্ণিত দয়াপরবশ হয়ে মনিবকে ১০ দিনার ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাঁকে মুক্ত করে সাথে করে আলিপ্পো শহরে নিয়ে যান। কিন্তু আলিপ্পো শহরেও তিনি সুখ পাননি। বণিকের এক বদমেজাজী ও বয়স্কো কন্যা ছিল। তার বদমেজাজের কারণে কেউ তাকে বিয়ে করতে রাজি হত না। বণিক ১০০ দিনার মোহরের বিনিময়ে কন্যাকে শেখ সা’দীর নিকট বিয়ে দেন এবং মোহরের অর্থ বণিক নিজেই পরিশোধ করেন। সা’দী বিপদে আপদে কখনো ধৈৰ্য্যহারা হতেন না। বিয়ের পর কবি শেখ সাদী (রঃ) আর সুখের মুখ দেখতে পেলেন না। বদমেজাজী রমণী একদিন সহসা বলে ফেলল যে, তুমি কি সেই হতভাগ্য নও, যাকে আমার পিতা অনুগ্রহ করে ১০ দিনার মূল্য দিয়ে স্বহস্তে মুক্ত করেছিলেন? উত্তরে শেখ সা’দী (রঃ) বললেন, “হ্যাঁ সুন্দরী! আমি সেই হতভাগ্য, যাকে তোমার পিতা ১০ দিনার দিয়ে মুক্ত করেছিলেন, কিন্তু পুনরায় ১০০ দিনার দিয়ে তোমার দাসত্বে নিযুক্ত করে দিয়েছেন। সম্ভবত আল্লাহ পাক তার প্রিয় বান্দাদেরকে এভাবে অভাব অনটন ও দুঃখ কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন।

আল্লামা শেখ সা’দী (রঃ) বহু কাব্যগ্রন্থ রচনা করে যান। তাঁর এ সকল কাব্যে রয়েছে মানুষের নৈতিক ও চরিত্র গঠনের অমূল্য বাণী। শেখ সাদীর অলঙ্কারময় ভাষা ও প্রকাশের জাদু পাঠকদের মনকে বিস্ময় বিমুগ্ধ করে রাখত। আজও তার লেখা কাব্য গ্রন্থ কারিমা, গুলিস্তা ও বোস্তা বিশ্বের বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসায় পাঠ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা পবিত্র কোরআন শিক্ষার পরই তাঁর রচিত কাব্য গ্রন্থ কারিমা, গুলিস্তা ও বোস্তা শিক্ষা লাভ করে থাকে। তাঁর সমস্ত রচনাই অতি সরল ও প্রাঞ্জল। আলেমগণ বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মীয় সভায় শেখ সা’দীর কবিতা আবৃত্তি করে থাকেন। তাঁর কবিতা আবৃত্তি না করলে আলেমগণ যেন ওয়াজ মাহফিল জমাতে পারেন না। শিশুরা শেখ সাদীর কারিমা গ্রন্থের কবিতা সুললিত কণ্ঠে পাঠ করতে থাকে–

“কারিমা ব–বখশায়ে বর হালে মা
কে হাস্তম আসীরে কামান্দে হাওয়া।
দারেম গায়ের আর্য ফরিয়াদ রাস্
তু–য়ী আসীয়ারা খাতা বখশ ও বাস্।
নেগাদার মারা যে রাহে খাতা
খাতা দার গোযার ও সওয়াবম নমা।”

অনুবাদ : হে দয়াময় প্রভু! আমার প্রতি রহম কর। আমি কামনা ও বাসনার শিবিরে বন্দী। তুমি ব্যতীত আর কেউ নেই, যার নিকট আমি প্রার্থনা করব। তুমি ব্যতীত আর কেউ ক্ষমাকারী নেই। তুমি আমাকে পাপ থেকে রক্ষা কর। আমার কৃত পাপ ক্ষমা করে পুণ্যের পথ প্রদর্শন কর।

শেখ সাদীর গুলিস্তা ও বোস্তা বিশ্ব কাব্য ও সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ। গুলিস্তা ও বোস্তা ব্যতীত জগতে এমন গ্রন্থ খুব কমই আছে যা বহু যুগ ধরে বিপুল ভাবে পঠিত হয়ে আসছে। ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে জেল্টায়াস নামক এক ব্যক্তি ল্যাটিন ভাষায় আমস্টারডাম নগরে ‘রোসারিয়াম পলিটিকাম’ নাম দিয়ে গুলিস্তার অনুবাদ প্রকাশ করেন। ১৭৪৭ খ্রিস্টাব্দে উহা ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়। বর্তমানে ইউরোপ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখ সাদীর গুলিস্তাসহ বিভিন্ন কিতাব ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, আরবী, ডাচ, উর্দু, তুর্কি, বাংলা প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। শেখ সাদী (রঃ) এর উপরোক্ত গ্রন্থগুলো ব্যতীত নসিহত-অল-মলুক’, ‘রিসালায়ে আশুকিয়ানো’, ‘কিতাবে মিরাসী’, ‘মোজালেসে খামসা, তরজিয়াত’, রিসালায়ে সাহেবে দিউয়ান, কাসায়েদল আরবী, আৎ তবিয়াত’, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

শেষ বয়সে শেখ সাদী (রঃ) মাতৃভূমি নগরের এক নির্জন আশ্রমে জীবন যাপন করতেন। এ স্থানেই তিনি অধিকাংশ সময় গভীর ধ্যানমগ্ন থাকতেন। মাঝে মাঝে আগন্তক ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ দেয়ার জন্যে আশ্রমের বাইরে যেতেন। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন ধনী, গরীব, শিক্ষিত, মূর্খ, রাজা প্রজা এবং নিকট সমবেত হত। শেখ সাদী (রঃ) বাল্যকাল থেকেই দৈনিক ৪/৫ ঘণ্টা পৃবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতেন। তিনি কখনো গৃহে বেনামাজী চাকর নিয়োগ করতেন না। আস্তে আস্তে তাঁর বার্ধক্য ঘনিয়ে আসে। বার্ধক্যেও তিনি যৌবনের তেজ ধারণ করতেন। অবশেষে ১২৮২ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৬৯১ হিজরীতে ১২০ বছর বয়সে এ মনীষী ইহলোক ত্যাগ করেন। সিরাজ নগরের ‘দিলকুশা নামক স্থানের এক মাইল পূর্ববর্তী পাহাড়ের নিচে তাঁর সমাধি রয়েছে। সমাধি জিয়ারতকারীদের পাঠের জন্যে সা’দীর নিজ হাতে লেখা একটি কাব্যগ্রন্থ সমাধি গৃহে রক্ষিত আছে। পারস্যে এ সমাধি গৃহ ‘সাদীয়া’ নামে অভিহিত হয়ে থাকে।

সকল অধ্যায়

১. ১. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রি:)
২. ২. হযরত ঈসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ৬-৩০)
৩. ৩. হযরত মুসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দী)
৪. ৪. ইমাম আবু হানিফা (রঃ) (৭০২–৭৭২ খ্রি:)
৫. ৫. জাবির ইবনে হাইয়ান (৭২২-৮০৩ খ্রি:)
৬. ৬. ইমাম বোখারী (রঃ) (৮১০-৮৭০ খ্রি:)
৭. ৭. আল বাত্তানী (৮৫৮–৯২৯ খ্রি:)
৮. ৮. আল ফারাবী (৮৭০-৯৬৬ খ্রি:)
৯. ৯. মহাকবি ফেরদৌসী (৯৪১–১০২০ খ্রি:)
১০. ১০. আল বেরুনী (৯৭৩–১০৪৮ খ্রি:)
১১. ১১. ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রি:)
১২. ১২. ওমর খৈয়াম (১০৪৪-১১২৩ খ্রি:)
১৩. ১৩. ইমাম গাজ্জালী (রঃ) (১০৫৮–১১১১ খ্রি:)
১৪. ১৪. ইবনে রুশদ (১১২৬১১৯৯ খ্রি:)
১৫. ১৫. আল্লামা শেখ সা’দী (রঃ) (১১৭৫–১২৯৫ খ্রি:)
১৬. ১৬. মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রঃ) (১২০৭-১২৭৩ খ্রি:)
১৭. ১৭. ইবনুন নাফিস (১২০৮-১২৮৮ খ্রি:)
১৮. ১৮. ইবনে খালদুন (১৩২২–১৪০৬ খ্রীঃ)
১৯. ১৯. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রীঃ)
২০. ২০. মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা (১৮৮১-১৯৩৮)
২১. ২১. গৌতম বুদ্ধ (খ্রি: পূ: ৫৬৩ খ্রি: পূ: ৪৮৩)
২২. ২২. শ্রীরামকৃষ্ণ (১৮৩৩-১৮৮৬)
২৩. ২৩. শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩)
২৪. ২৪. স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২)
২৫. ২৫. যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে (১৭৪৯–১৮৩২)
২৬. ২৬. আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)
২৭. ২৭. ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২)
২৮. ২৮. ফিওদর মিখাইলভিচ দস্তয়ভস্কি (১৮২১-১৮৮১)
২৯. ২৯. আলেকজান্ডার দি গ্রেট (৩৫৬ খ্রিস্ট পূর্ব-৩২৩ খ্রিস্ট পূর্ব)
৩০. ৩০. লেনিন (১৮৭০-১৯২৪)
৩১. ৩১. মাও সে তুং (১৮৯৩-১৯৭৬)
৩২. ৩২. কনফুসিয়াস (খ্রি: পূর্ব ৫৫১ খ্রি: পূর্ব ৪৭৯)
৩৩. ৩৩. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০)
৩৪. ৩৪. পাবলো পিকাসো (১৮৮১-১৯৭৩)
৩৫. ৩৫. ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬)
৩৬. ৩৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮)
৩৭. ৩৭. বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (১৭০৬-১৭৯০)
৩৮. ৩৮. কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)
৩৯. ৩৯. হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩)
৪০. ৪০. ত্যাগরাজ (১৭৬৭–১৮৪৭)
৪১. ৪১. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১)
৪২. ৪২. ভাস্করাচার্য (১১১৪-১১৮৫)
৪৩. ৪৩. পার্সি বিশী শেলী (১৭৯২-১৮২২)
৪৪. ৪৪. জোহন কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)
৪৫. ৪৫. জোহান্স গুটেনবার্গ (১৪০০–১৪৬৮)
৪৬. ৪৬ জুলিয়াস সিজার (খ্রি: পূ: ১০০খ্রি: পূ: ৪৪)
৪৭. ৪৭. গুলিয়েলমো মার্কোনি (১৮৭৪-১৯৩৭)
৪৮. ৪৮. রাণী এলিজাবেথ (১৫৩৩-১৬০৩)
৪৯. ৪৯. জোসেফ স্টালিন (১৮৮২-১৯৫৩)
৫০. ৫০. ফ্রান্সিস বেকন (খ্রি: ১৫৬১ খ্রি: ১৬২৬)
৫১. ৫১. জেমস ওয়াট (১৭৩৬-১৮১৯)
৫২. ৫২. চেঙ্গিস খান (১১৬২–১২২৭)
৫৩. ৫৩. এডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫)
৫৪. ৫৪. লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)
৫৫. ৫৫. অশোক (আনুমানিক খ্রি: পূ: ৩০০–২৩২ খ্রি: পূর্ব)
৫৬. ৫৬. সিগমুন্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯)
৫৭. ৫৭. আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল (১৮৪৭-১৯২২)
৫৮. ৫৮. যোহান সেবাস্তিয়ান বাখ (১৬৮৫–১৭৫০)
৫৯. ৫৯. জন. এফ. কেনেডি (১৯১৭-১৯৬৩)
৬০. ৬০. গ্যালিলিও গ্যালিলাই (১৫৬৪-১৬৪২)
৬১. ৬১. হো চি মিন (১৮৯০–১৯৬৯)
৬২. ৬২. মহাত্মা গান্ধীজী (১৮৬৯-১৯৪৮)
৬৩. ৬৩. লেভ তলস্তয় (১৮২৮–১৯১০)
৬৪. ৬৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)
৬৫. ৬৫. হিপোক্রেটস (৪৬০-৩৭০)
৬৬. ৬৬. জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮–১৯৩৭)
৬৭. ৬৭. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫)
৬৮. ৬৮. উইলিয়ম শেকস্‌পীয়র (১৫৬৪-১৬১৬)
৬৯. ৬৯. জন মিলটন (১৬০৮–১৬৭৪)
৭০. ৭০. সক্রেটিস (৪৬৯-৩৯৯ খৃঃ পূ:)
৭১. ৭১. জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯)
৭২. ৭২. উইলিয়াম হার্ভে (১৫৭৮-১৬৫৭)
৭৩. ৭৩. পিথাগোরাস (৫৮০–৫০০)
৭৪. ৭৪. ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩-১৮৭৩)
৭৫. ৭৫. লুই পাস্তুর (১৮২২-১৮৯৫)
৭৬. ৭৬. নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)
৭৭. ৭৭. এন্টনি লরেন্ট ল্যাভোশিঁয়ে (১৭৪৩-১৭৯৪)
৭৮. ৭৮. এডওয়ার্ড জেনার (১৭৪৯–১৮২৩)
৭৯. ৭৯. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০-১৯১০)
৮০. ৮০. হেনরিক ইবসেন (১৮২৮-১৯০৬)
৮১. ৮১. টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১)
৮২. ৮২. জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৬৫-১৯৫০)
৮৩. ৮৩. মার্টিন লুথার কিং (১৯২৯–১৯৬৮)
৮৪. ৮৪. সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)
৮৫. ৮৫. রম্যাঁ রোলাঁ (১৮৬৬-১৯৪৪)
৮৬. ৮৬. পাবলো নেরুদা (১৯০৪–১৯৭৩)
৮৭. ৮৭. আর্কিমিডিস (২৮৭-২১২খৃ. অব্দ)
৮৮. ৮৮. অ্যারিস্টটল (৩৮৫-৩২২খৃ. পূ.)
৮৯. ৮৯. মেরি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)
৯০. ৯০. জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)
৯১. ৯১. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২)
৯২. ৯২. উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট (১৮৭১-১৯৪৮) (১৮৬৭-১৯১২)
৯৩. ৯৩. চার্লি চ্যাপলিন (১৮৮৯-১৯৭৭)
৯৪. ৯৪. চার্লস ডিকেন্স (১৮১২-১৮৭০)
৯৫. ৯৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮-১৯৩২)
৯৬. ৯৬. আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮০৯-১৮৬৫)
৯৭. ৯৭. জন কিটস (১৭৯৫-১৮২১)
৯৮. ৯৮. প্লেটো (খ্রীস্টপূর্ব ৩২৭-খ্রীস্টপূর্ব ৩৪)
৯৯. ৯৯. মাইকেলেঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪)
১০০. ১০০. স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন