২৪. স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২)

মাইকেল এইচ. হার্ট

ভারতবর্ষের ইতিহাসে বিবেকানন্দ এক যুগপুরুষ! ভারত আত্মার মূর্ত রূপ। তারই মধ্যে একই সাথে মিশেছে ঈশ্বর প্রেম, মানব প্রেম আর স্বদেশ প্রেম। তাঁর জীবন ছিল মুক্তির সাধনা–সে মুক্তি জাতির সর্বাঙ্গীন মুক্তির। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই মানুষ যেন নিজেকে সকল বন্ধনের ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে পারে। সন্ন্যাসী হয়েও ঈশ্বর নয়, মানুষই ছিল তাঁর আরাধ্য দেবতা। তাই মানুষের কল্যাণ, তাদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গলই ছিল তাঁর সাধনা। তিনি বলতেন, “যে সন্ন্যাসীর মনে অপরের কল্যাণ করার ইচ্ছা নেই সে সন্ন্যাসীই নয়। বহুজনহিতায় বহুজনসুখায় সন্ন্যাসীর জন্ম। পরের জন্য প্রাণ দিতে, জীবের গগনভেদী ক্রন্দন নিবারণ করতে, সকলের ঐহিক ও পরমার্থিক মঙ্গল করতে এবং জ্ঞানালোক দিয়ে সকলের মধ্যে ব্রহ্মসিংহকে জাগরিত করতে সন্ন্যাসীর জন্ম হয়েছে।”

স্বামী বিবেকানন্দের জীবন সর্ব মানবের কাছেই এক আদর্শ। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনিই প্রথম উচ্চারণ করলেন, ঈশ্বর নয় মানুষ। মানুষের মধ্যেই ঘটবে ঈশ্বরের পূর্ণ বিকাশ। তিনি যুগ যুগান্তরের প্রথা ধর্ম সংস্কার ভেঙে ফেলে বলে উঠলেন আমরা অমৃতের সন্তান।

শুধু ভারতবর্ষে নয়, বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরলেন সেই অমৃতময় বাণী। পরাধীন ভারতবর্ষের প্রতিনিধি হিসেবে দৃপ্ত কণ্ঠে বললেন, I have a message to the west. তাঁর সেই Message-প্রাসঙ্গিকতা আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারছে বর্তমান বিশ্ব।

বিবেকানন্দের আবির্ভাবকাল এমন একটা সময়ে যখন বাংলার বুকে শিক্ষা সাহিত্য ধর্ম সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রেই শুরু হয়েছে নবজাগরণের যুগ। কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত ধনী শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বিবেকানন্দের পিতা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন উত্তর কলকাতার নামকরা আইনজীবী। তাঁর মধ্যে গোঁড়া হিন্দুয়ানী ছির না। বহু মুসলমান পরিবারের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। উদার বন্ধুবৎসল দয়ালু প্রকৃতির লোক ছিলেন তিনি।

বিশ্বনাথ দত্তের কন্যাসন্দান থাকলেও কোন পুত্র ছিল না। স্ত্রী ভুবনেশ্বরী দেবী শিবের কাছে নিত্য প্রার্থনা করতেন। অবশেষে ১৮৬৩ সালের ১২ই জানুয়ারী জন্ম হল তাঁর প্রথম পুত্রের। ডাক নাম বিলো, ভাল নাম শ্রীনরেন্দ্রনাথ দত্ত। যদিও তিনি বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত স্বামী বিবেকানন্দ নামে।

ছেলেবেলায় নরেন্দ্রনাথ ছিলেন যেমন চঞ্চল তেমনি সাহসী। সকল বিষয়ে ছিল তাঁর অদম্য কৌতূহল। বাড়িতে গুরুমহাশয়ের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হলেন মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশনে। তিনি সর্ব বিষয়ে ছিলেন ক্লাসের সেরা ছাত্র। কৈশোরেই তার মধ্যে দয়া-মায়া, মমতা, পরোপকার, সাহসিকতা, ন্যায়বিচার প্রভৃতি নানা গুণের প্রকাশ ঘটেছিল।

নরেন্দ্রনাথ ছিলেন সুঠাম স্বাস্থ্যের অধিকারী। ছেলেবেলা থেকেই নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন, কুস্তি বক্সিং দুটিতেই ছিল তাঁর সমান দখল নিয়মিত ক্রিকেট খেলতেন। কর্মক্ষেত্রে সবল নিরোগ দেহের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই তিনি চির রুগ্ন বাঙালীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, গীতা পাঠ করার চেয়ে ফুটবল খেলা বেশি উপকারী।

১৮৭৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নরেন্দ্রনাথ জেনারেল এসেম্বলী ইনস্টিটিউশনে এফ, এ পড়ার জন্য ভর্তি হলেন, এখানকার অধ্যক্ষ ছিলেন উইলিম হেস্টি। তিনি ছিলেন কবি দার্শনিক উদার হৃদয়ের মানুষ। তাঁর সান্নিধ্যে এসে দেশ বিদেশের দর্শনশাস্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হলেন। নরেন্দ্রনাথের সহপাঠী ছিলেন ডঃ ব্রজেন্দ্রনাথ শীল। পরবর্তীকালে যিনি এই দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দর্শনশাস্ত্রে এতখানি বুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন, অধ্যক্ষ উইলিয়ম হেস্টি তাঁর সম্বন্ধে বলেছিলেন, “দর্শনশাস্ত্রে নরেন্দ্রনাথের অসাধারণ দখল, আমার মনে হয় জার্মানী ও ইংলণ্ডের কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই তার মত মেধাবী ছাত্র নেই।”

পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও দর্শনের অনুশীলনে নরেন্দ্রনাথের চিন্তার জগতে এক ঝড় সৃষ্টি করল। একদিকে প্রচলিত বিশ্বাস ধ্যান ধারণা সংস্কার, অন্যদিকে নবচেতনা–এই দুয়ের দ্বন্দ্বে ক্ষত-বিক্ষত নরেন্দ্রনাথ প্রকৃত সত্যকে জানার আশায় ব্রাহ্মসমাজে যোগ দিলেন।

ব্রাহ্মধর্মের মতবাদ, জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, নারীদের প্রতি মর্যাদা তাকে আকৃষ্ট করলেও ব্রাহ্মদের অতিরিক্ত ভাবাবেগ, কেশবচন্দ্রকে প্রেরিত পুরুষ হিসেবে পূজা করা তাঁর ভাল লাগেনি। কিন্তু এই সময় মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপদেশে তিনি নিয়মিত ধ্যান করতে আরম্ভ করলেন। আচার-ব্যবহারে, আহারে,

পোশাক-পরিচ্ছদে তিনি প্রায় ব্রহ্মচারীদের মতই জীবন যাপন করতেন।

যতই দিন যায় সত্যকে জানার জন্যে ব্যাকুলতা ততই বাড়তে থাকে। পরিচিত অপরিচিত জ্ঞানী মূর্খ সাধুসন্ত যাদেরই সাথে সাক্ষাৎ হয়, তিনি জিজ্ঞাসা করেন ঈশ্বর আছেন, কি নেই? যদি ঈশ্বর থাকেন তবে তার স্বরূপ কি?-কারোর কাছেই এই প্রশ্নের উত্তর পান না। ক্রমশই মনের জিজ্ঞাসা বেড়ে চলে। বার বার মনে এমন কি কেউ নেই যিনি এই জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে পারেন!

১৮৮০ সালে ঠাকুর রামকৃষ্ণ সিমলাপল্লীতে সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের বাড়িতে এসেছিলেন। সেখানেই প্রথম রামকৃষ্ণের সাথে পরিচয় হল নরেন্দ্রনাথের। নরেন্দ্রনাথের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে ঠাকুর তাঁকে দক্ষিণেশ্বরে যাবার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

প্রথম পরিচয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ নরেন্দ্রনাথের মনে কোন রেখাপাত করতে পারেননি। পরীক্ষার ব্যস্ততার জন্য অল্পদিনেই নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণের কথা ভুলে যান। এফ এ পরীক্ষার পর বিশ্বনাথ দত্ত পুত্রের বিবাহের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। কিন্তু বিবাহ করে সংসার জীবনে আবদ্ধ হবার কোন ইচ্ছাই ছিল না নরেন্দ্রনাথের। তিনি সরাসরি বিবাহের বিরুদ্ধে নিজের অভিমত প্রকাশ করলেন।

রামকৃষ্ণদেবের গৃহী ভক্তগণের মধ্যে ছিলেন ডাক্তার রামচন্দ্র দত্ত। তিনি নরেন্দ্রনাথের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন। একদিন নরেন্দ্রনাথ তাঁর সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে নিজের মনের সব কথা বলতেই রামচন্দ্র বললেন, যদি প্রকৃত সত্যকে জানতে চাও তবে দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর রামকৃষ্ণের কাছে যাও, তিনি তোমাকে প্রকৃত পথের সন্ধান দিতে পারবেন।

রামচন্দ্রের উপদেশে নরেন্দ্রনাথ একদিন কয়েকজন বন্ধুর সাথে দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর রামকৃষ্ণের কাছে গেলেন। তাঁকে দেখামাত্রই আনন্দে বিভোর হয়ে উঠলেন রামকৃষ্ণ। সম্ভবত তিনি নরেন্দ্রনাথের মধ্যেকার সুপ্ত প্রতিভার, তার আধ্যাত্মিক শক্তিকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই প্রথম পরিচয়ে রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, “তুই এতদিন কেমন করে আমায় ভুলে ছিলি। আমি যে কতদিন ধরে তোর পথপানে চেয়ে আছি। বিষয়ী লোকের সঙ্গে কথা কয়ে আমার মুখ পুড়ে গেছে। আজ থেকে তোর মত যথার্থ ত্যাগীর সঙ্গে কথা করে শান্তি পাব।”

নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণের সরলতায় মুগ্ধ হলেও তাঁকে আদর্শ পুরুষ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেননি। তাছাড়া তাঁর যুক্তিবাদী মন বিনা পরীক্ষায় কোন কিছু মেনে নিতে চায়নি। ঠাকুরের প্রতি আকর্ষণে বারবার দক্ষিণেশ্বরে ছুটে গেলেও তাকে দীর্ঘদিন গুরু বলে গ্রহণ করেননি। আসলে তিনি কোন ভাবাবেগের দ্বারা পরিচালিত হননি। যখন তিনি পরিপূর্ণভাবে রামকৃষ্ণের মধ্যেকার আধ্যাত্ম চেতনাকে উপলব্ধি করেছেন তখনই তিনি তাঁর কাছে আত্মনিবেদন করেছেন।

নরেন্দ্রনাথ যখন রামকৃষ্ণের কাছে যাতায়াত করতেন তখনো তিনি নিয়মিত ব্রাহ্মসমাজে যেতেন। কেশবচন্দ্র, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখের কাছে ধর্ম উপদেশ শুনতেন। কিন্তু তার অন্তরের পিপাসাকে তৃপ্ত করত না। তাছাড়া নরেন্দ্রনাথের অনন্ত যে তেজদীপ্ত পৌরষ ছিল, ব্রাহ্ম ধর্মের আত্মনিন্দা, নিজেকে কীটাণুতুল্য হেয় জ্ঞান করার প্রবৃত্তির সাথে তা মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। এমনকি একদিন ঠাকুর রামকৃষ্ণ তাঁকে যখন স্পর্শ করলেন, তিনি মুহূর্তে নিজের চেতনা হারালেন। মনে হল তার সমস্ত সত্তা এক অনন্তের মধ্যে বিলিন হয়ে গেল। তিনি যেন হারিয়ে যাচ্ছেন এক অসীম মহাশূন্যে। আতঙ্কে আর বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠলেন, “তুমি আমার এ কি করলে, আমার যে যে বাবা-মা আছেন।”

রামকৃষ্ণ পুনরায় তাঁকে স্পর্শ করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনলেন। এই ঘটনাটিকে বিবেকানন্দের মনে হয়েছিল এক ধরনের সম্মোহন। ঠাকুরের প্রতি নরেন্দ্রনাথের ভালবাসা শ্রদ্ধা থাকলেও এই ঘটনার পর থেকে সব সময় সতর্ক থাকতেন যাতে ঠাকুর তাঁকে সম্মোহিত না করতে পারেন।

রামকৃষ্ণের কাছে তিনি যখন যাতায়াত করতেন সেই সময় বি-এ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। ধনীর সন্তান হয়েও কঠোর সংযমী জীবন যাপন করতেন। প্রতিদিন ধ্যান জপ করতেন, ধর্মগ্রন্থ পড়তেন। যথাসময়ে পরীক্ষা শেষ হল। সাংসারিক ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন করতেন। হঠাৎ তিনি মারা গেলেন। সংসারে আয়ের মত ব্যয়ও ছিল বিরাট কোন সঞ্চয় করে যেতে পারেননি। ফলে সংসারে নেমে এল বিরাট বিপর্যয়। সদ্যবিধবা জননী, ছোট ছোট ভাইবোনের দুঃখভরা মুখের দিকে তাকিয়ে বেদনায় নরেন্দ্রনাথের অন্তর ভরে উঠত। একদিন যারা বিশ্বনাথ দত্তের অনুগ্রহে পুষ্ট হয়েছিল আজ তারাই সকলে মুখ ফিরিয়ে নিল। মানুষের কৃতঘ্নতার এই কদর্য রূপ দেখে সংসারের অভাব দূর করার জন্য চাকরির সন্ধান শুরু হল। সারাদিন পথে পথে ঘুরে রাত্রিবেলায় বাড়ি ফিরতেন। তার অন্তরের বেদনা সেদিন একমাত্র উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন রামকৃষ্ণ। তাঁর আশীর্বাদ আর নরেন্দ্রনাথের আন্তিরিক প্রচেষ্টায় সংসারের অভাব সাময়িক দূর হল। সাথে কিছু কিছু অনুবাদের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতেন। কিছুদিন পর তিনি বিদ্যাসাগরের মেট্রোপলিটন স্কুলে চাকরি পেলেন।

কিন্তু যার অন্তরে আধ্যাত্মিকতার দীপ প্রজ্বলিত হয়ে উঠেছে, সংসার, চাকরি, অর্থ তাঁর বাঁধবে কেমন করে? ক্রমশই নিজের মধ্যে অনুভব করছিলেন ঠাকুরের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ।

১৮৮৫ সালে ঠাকুর রামকৃষ্ণ গলার ক্যানসারে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হল কাশীপুর উদ্যানবাটীতে। রাখাল, বাবুরাম, শরৎ, শশী, লাটু আরো সব ভক্তরা দিবরাত্র তার আরাধ্য কর্মকে সম্পূর্ণ করবার জন্যই নরেন্দ্রনাথের আবির্ভাব। নরেন্দ্রনাথও অনুভব করছিলেন তীব্র ব্যাকুলতা, চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি কাশীপুর উদ্যানবাটীতে এসে অন্য ভক্তদের সাথে ঠাকুরের শ্রীচরণে আশ্রয় নিলেন। অন্য ভক্তরা প্রথম দিকে মাঝে মাঝে গৃহে যেতেন, ধীরে ধীরে তাও বন্ধ হয়ে গেল। উদ্যানবাটী হয়ে উঠল রামকৃষ্ণ ভক্ত-শিষ্যদের আশ্রম। গুরুসেবার সাথে ভক্তরা সাধন ভজন ধ্যান, শাস্ত্রপাঠ আলোচনা করতেন।

প্রকৃতপক্ষে উত্তরকালে যে রামকৃষ্ণ সজ্ঞা গড়ে উঠেছিল এখানেই তাঁর সূচনা হয়।

ঠাকুর রামকৃষ্ণ ছিলেন গৃহী। কিন্তু তিনি জানতেন গৃহীদের পক্ষে তার উপদেশ বাণীকে জগতের মানুষের কাছে প্রচার করা সম্ভব নয়। যারা সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, সংসারের সকল বন্ধনকে ছিন্ন করতে পেরেছে একমাত্র তারাই পারবে সব দুস্তর বাধাকে অতিক্রম করে আরাধ্য কর্মকে সম্পাদন করতে। তিনি তাঁর শিষ্যদের মধ্যে আঠারো জনকে সন্ন্যাস প্রদান করলেন। নিজের হাতে তাদের গৈরিক বস্ত্র তুলে দিয়ে বললেন, “তোরা সম্পূর্ণ নিরভিমান হয়ে ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিয়ে রাজপথে ভিক্ষা করতে পারবি কি?”

গুরুর আদেশে নরেন্দ্রনাথ ও অন্য সব শিষ্যরা পথে বেরিয়ে পড়লেন। সংসার জীবনের শেষ বন্ধনটুকুও ছিন্ন হয়ে গেল। সন্ন্যাস গ্রহণের পর বিবেকানন্দের সমস্ত অন্তর মানুষের দুঃখ-বেদনা দূর করার আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল হয়ে উঠল। ১৮৮৬ সালের এপ্রির মাসে স্বামী বিবেকানন্দকে সাথে নিয়ে গয়া অভিমুখে যাত্রা করলেন। সেখান থেকে গেলেন বুদ্ধগয়ায়। এখানে এসেই তার মধ্যে জেগে উঠল বুদ্ধের মহামুক্তির তীব্র আকাক্ষা। বুদ্ধের মত মুষকে সকল যন্ত্রণা দুঃখ থেকে মুক্তির পথ দেখার জন্যেই তাঁর আবির্ভাব। এখানে বোধিসত্ত্বের মন্দিরে ধ্যানস্থ হয়ে গেলেন স্বামীজী। তিন দিন পর তাঁর ধ্যান ভঙ্গ হল। তারপর আবার ফিরে এরেন কাশীপুর উদ্যানবাটীতে।

তখন ঠাকুর গুরুতর অসুস্থ। একদিন তিনি বিবেকানন্দকে জিজ্ঞাসা করলেন, “নরেন, তুই কি চাস?” নরেন্দ্রনাথ উত্তর দিলেন, “শুকদেবের মত সর্বদা নির্বিকল্প সমাধিযোগে সচ্চিদানন্দ সাগরে ডুবিয়া থাকিতে চাই।”

ঠাকুর নরেন্দ্রনাথের এই কথায় ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, “ঐ কথা বলতে তোর লজ্জা করে? কোথায় তুই বটগাছের মত বেড়ে উঠে শত শত লোককে শান্তির ছায়া দিবি তা না তুই নিজের মুক্তির জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছিস, এত ক্ষুদ্র আদর্শ তোর!”

নিজের ভ্রান্তি অনুভব করে লজ্জিত হলেন নরেন্দ্রনাথ। প্রকৃতপক্ষে এই শিক্ষাই তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তখনই তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন “বহুজনহিতায় বহুজন সুখায় কর্ম করিব।”।

১৮৮৬ সালের ১৫ই আগস্ট রামকৃষ্ণ দেহত্যাগ করলেন। নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণের সঙ্গ পেয়েছিলেন পাঁচ বছর। শেষ কয়েক মাস ছাড়া কোনদিনই তাদের মধ্যে নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। কিন্তু তারই মধ্যে রামকৃষ্ণের আধ্যাত্মিক সম্পদ, তাঁর উদয় ধর্মমত, সর্বজীবের প্রতি দয়া, সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শকে আত্মস্থ করেছিলেন, তার মধ্যে ভারতবর্ষের সব মহাপুরুষদের সদগুণের পূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে। যিনি একাধারে শঙ্করের অদ্ভুত মস্তিষ্ক এবং চৈতন্যের অদ্ভুত বিশাল অনন্ত হৃদয়ের অধিকারী, যাঁহার হৃদয় ভারতান্তর্গত বা ভারতবহির্ত দরিদ্র দুর্বল পতিত সকলের জন্য কাঁদিবে…যিনি সকল বিরোধী সম্প্রদায়ের সমন্বয় সাধন করিবেন…এই রূপ ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন এবং আমি অনেক বর্ষ ধরিয়া তাহার চরণতলে বসিয়া শিক্ষালাভের সৌভাগ্যলাভ করিয়াছি।” রামকৃষ্ণদেব গৈরিক বস্ত্র দিলেও তাঁর শিষ্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন তাঁর মৃত্যুর পর। ঠাকুরের পবিত্র ভস্মকে সাক্ষী রেখে নরেন্দ্রনাথ ও তাঁর সঙ্গীরা শাস্ত্রানুমোদিতভাবে সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন।

ঠাকুরের মৃত্যুর পর কাশীপুর উদ্যানবাটী ছেড়ে দিতে হল। বিবেকানন্দ দেখলেন এই অবস্থায় যদি তরুণ সন্ন্যাসীরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তবে শ্রীরামকৃষ্ণের আদর্শকে প্রচারের পথে নানান ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া এই সব সন্ন্যাসীরা দিকহারা পথিকের মত অকূল পাথারে ভেসে যাবে।

রামকৃষ্ণের জনৈক ভক্ত বরানগরে একটি বাড়ি ঠিক করে দিল। সেখানে উঠলেন সকলে। সেখানকার অবস্থা বর্ণনা করে একজন লিখেছেন, “নিচের তলা ব্যবহার করা যায় না। উপরের তলায় তিনটে ঘর…একবেলা ভাত কোনদিন জুটত কোনদিন জুটত না। থালাবাসন তো কিছুই নেই। বাড়ির সংলগ্ন বাগানে লাউগাছ কলাগাছ ঢের ছিল! দুটো লাউপাতা কি একখানি কলাপাতা কাটবার উপায় ছিল না। শেষে মানকচুর পাতায় ভাত ঢেলে খেতে হত। তেলাকুচোর পাত সিদ্ধ আর ভাত। কিছু খেলেই গলা কুটকুট করতো। এত যে কষ্ট, ঐক্ষেপ ছিল না।”

এত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে সকলকে আনন্দ উৎসাহে প্রাণশক্তিতে ভরিয়ে রেখেছিলেন বিবেকানন্দ। গুরুর অবর্তমানে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন সংঘের প্রধান। সেই দিনকার মঠের সন্ন্যাসেীদের মধ্যে যে সাধনা ত্যাগ কষ্ট সহিষ্ণুতার প্রবল শক্তি জেগে উঠেছিল তারই প্রভাবে একদিন তারা সকলেই হয়ে উঠেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের আদর্শ শিষ্য।

কিছুদিন বরানগর মঠে থাকার পর শুরু হল তাঁর পরিব্রাজক জীবন। তিনি তার সতীর্থদের ডাক দিয়ে বললেন এবারে আমাদের প্রচারে নামতে হবে। ভারতবর্ষকে দেখতে হবে। বুঝতে হবে এই লক্ষ কোটি নর-নারীর দৈনন্দিন জীবনের স্তরে স্তরে কত বেদনা কত কুসংস্কারের জঞ্জাল পুঞ্জীকৃত হয়ে আছে। এদের কল্যাণব্রতের সাধনা শুধু স্বার্থত্যাগের কথা নয়, সর্বত্যাগের কথা।

১৮৮৮ সাল। শুরু হল বিবেকানন্দের ভারত পরিক্রম। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভারতবর্ষের এক প্রান্তে থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়ালেন। দেখলেন ভারতবর্ষের প্রকৃত রূপ। ধর্মের নামে ভণ্ডামি আর অধর্ম। দেশ জুড়ে শুধু দারিদ্র অশিক্ষা আর অন্ধ সংস্কার। বৃহত্তম মানব সমাজই পশুর স্তরে বাস করছে। এই সব দৃশ্য তাঁকে যে বিচলিত করত তাই নয়, কেমন করে এর থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় সেই বিষয়ও গভীরভাবে চিন্তা করতেন।

এই পরিব্রাজক জীবনের মধ্যে দিয়ে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে গড়ে তুলেছিলেন বিবেকানন্দ। তিনি যে শুধু সনাতন হিন্দু ধর্মের বাণীকে প্রচার করতেন, লোককে উদ্বুদ্ধ হবার শিক্ষা দিতেন তাই নয়, নিজেও বহু কিছু শিক্ষা লাভ করতেন। একবার তিনি খেতড়ির রাজদরবারে অতিথি ছিলেন। সন্ধ্যেবেলায় রাজা সঙ্গীতের আয়োজন করেছেন। এক বাঈজী গান আরম্ভ করতেই তিনি উঠে পড়তেন। বললেন সন্ন্যাসীর পক্ষে এই রকম আসরে উপস্থিত থাকা অনুচিত। বাঈজী দুঃখিতভাবে গান আরম্ভ করল, “প্রভু তুমি আমার নাম দোষ নিও না। তোমার নাম সমদর্শী, আমাকে উদ্ধার কর।” স্বামীজী গান শুনে বুঝতে পারলেন ঈশ্বর সর্ব মানবইর মধ্যেই বিরাজমান। সাথে সাথে নিজের ভ্রান্তি বুঝতে পারলেন। অনুশোচনায় নিজেকে ধিক্কার দিলেন। সন্ন্যাসী হয়েও নারী-পুরুষের ভেদ রয়েছে। তিনি পুনরায় নিজের আসনে এসে বসলেন। সঙ্গীত অনুষ্ঠানের শেষে বাঈজীর কাছে যে শিক্ষা পেয়েছেন। তার জন্যে তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ দিলেন।

সমাজের হীনতম ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা সমবেদনা পরবর্তী জীবনে আরো প্রবল হয়ে উঠেছিল। তারই প্রমাণ পাই স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে লেখা একটি চিঠিতে। “বেশ্যারা যদি দক্ষিণেশ্বরের মহাতীর্থে যাইতে না পায় তো কোথায় যাইবে? পাপীদের জন্য প্রভুর যত প্রকাশ পুণ্যবানদের জন্য তত নহে।…ভেদাভেদ সংসারের মধ্যে থাকুক…তীর্থে যদি ঐরূপ ভেদ হয় তাহলে তীর্থ আর নরকে ভেদ কি? যাহারা ঠাকুর ঘরে গিয়েও ঐ বেশ্যা, ঐ নীচ জাতি, ঐ গরীব, ঐ ছোটলোক ভাবে তাহাদের সংখ্যা যতই কম হয় ততই মঙ্গল। যাহারা ভক্তের জাতি বা যোনি বা ব্যবসায় দেখে তাহারা আমাদের ঠাকুরকে কি বুঝিবে? প্রভুর কাছে প্রার্থনা যে শত শত বেশ্যা আসুক তার পায়ে মাথা নোয়াতে এবং একজনও ভদ্রলোক না আসে নাই আসুক।”

স্বামীজী যখন যেখানে গিয়েছেন, যাঁরাই তাঁর সান্নিধ্যে এসেছেন, তাঁর ব্যক্তিত্ব পাণ্ডিত্য সদা প্রসন্নময় মুখমন্ডলের দিকে চেয়ে সকলেই মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি যখন দক্ষিণ ভারতে ছিলেন সেই সময় অধ্যাপক পণ্ডিত শঙ্কর পাণ্ডরঙ্গজী তাঁকে বলেন, স্বামীজী এদেশে ধর্মপ্রচার করে আপনি বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন বলে মনে হয় না। আপনার উদার ভাবসমূহ আমাদের দেশের লোক সহজে বুঝবে না। আপনি এদের মধ্যে শক্তি ক্ষয় না করে পাশ্চাত্যদেশে যান, সেখানকার লোক মহত্ত্বের ও প্রতিভার সম্মান করতে জানে। আপনি নিশ্চয়ই পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতার উপর সনাতন ধর্মের অপূর্ব জ্ঞানালোক নিক্ষেপ করে এক অভিনব যুগান্তর আনতে পারবেন।

সম্ভবত এই উপদেশই তাঁর মনে প্রথম বিদেশযাত্রার ইচ্ছাকে জাগিয়ে তুলেছিল। ১৮৮৮ সালে এক তরুণ মন নিয়ে বরানগর মঠ থেকে ভারত পরিভ্রমণে বার হয়েছিলেন বিবেকানন্দ। ১৮৯২ সালের শেষ প্রান্তে সমস্ত ভারতবর্ষে ভ্রমণ করে এসে পৌঁছালেন দক্ষিণে কন্যাকুমারিকায়। তখন তিনি জ্ঞান আর ব্যাপ্ত অভিজ্ঞতার আলোতে এক পরিণত প্রজ্ঞাবান। ভারতের শ্বেত পাথরের উপর বসে তার স্বীকার না করে তবে তিনি কেমন করে যাবেন!

শেষ পর্যন্ত শিষ্যদের একান্ত অনুরোধে তিনি বললেন, তোমরা সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে অর্থ ভিক্ষা কর। রাজা নবাবের অর্থে নয়, সাধারণ মানুষের দানের অর্থেই ধর্মসভায় যোগ দিতে চাই। একদিন স্বামীজী স্বপ্নে দেখিলেন স্বয়ং রামকৃষ্ণ যেন তাকে সমুদ্র পার হয়ে বিদেশযাত্রার ইঙ্গিত দিলেন।

মায়ের পত্র পেয়ে সব বাধা দূর হয়ে গেল। স্থানীয় উৎসাহী শিষ্যরা যখন তার যাত্রার আয়োজন শুরু করেছে এমন সময় খেতরির মহারাজার দূত এসে তাঁকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গেল খেতরিতে। স্বামীজীর আশীর্বাদ মহারাজের পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। তার অন্নপ্রাশন।

মহারাজই তার আমেরিকা যাত্রার আয়োজন করলেন। বোম্বাইতে এসে মহারাজার মুন্সী জগমোহন স্বামীজীর জন্য বহুমূল্য রেশমের আলখাল্লা ও পাগড়ী তৈরি করালেন। তার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দিলেন। একটি জাহাজে প্রথম শ্রেণীর কেবিন রিজার্ভ করা হল।

১৮৯৩ সালের ৩১ মে স্বামীজী শিকাগো অভিমুখে যাত্রা করলেন। কয়েকদিনের মধ্যেই জাহাজের অধিকাংশ যাত্রীর সাথে তার পরিচয় গড়ে উঠল। জাহাজ সিংহল মালয় সিঙ্গাপুর হয়ে হংকং-এ কয়েকদিনের জন্য অবস্থান করল। এই সুযোগে স্বামীজী দঃ চীনের রাজধানী ক্যান্টন ঘুরে এলেন। তাঁর গভীর দৃষ্টি দিয়ে প্রত্যক্ষ করলেন চীনের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা। ভারতবর্ষ ও চীন এই দুই প্রাচীন সভ্যতার তুলনা করে বললেন, “চীন ও ভারতবাসী যে সভ্যতা সোপানে এক পা অগ্রসর হতে পারছে না দারিদ্রই তার প্রধান কারণ।”

যখন আমেরিকায় এসে পৌঁছলেন তখন তিনি সন্ন্যাসী মাত্র। তাঁর কাছে ছিল না কোন নিমন্ত্রণ পত্র, ছিল না প্রয়োজনীয় অর্থ। ভারতবর্ষ থেকে ইতিমধ্যেই কয়েকজনকে মনোনীত করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ছিলেন ব্রাহ্মধর্মের প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, জ্ঞানশরণ চক্রবর্তী এছাড়া বৌদ্ধধর্ম, জৈনধর্ম, বৈষবধর্ম, পার্শী ধর্মের প্রতিনিধি কিন্তু হিন্দু ধর্মের কেউ ছিল না।

অপরিচিত অজানা দেশ। প্রতি পদে বাধা আর বিদ্রূপ। সবকিছু উপেক্ষা করে রইলেন স্বামীজী। তখনো ধর্ম সম্মেলনের বেশ কিছুদিন বাকি ছিল। কিভাবে ধর্ম সম্মেলনে যোগ দেবেন তারই চিন্তায় বিভোর হয়ে ছিলেন স্বামীজী। এই সময় তার সাথে পরিচয় হল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত অধ্যাপক মিঃ জে এইচ রাইটের সাথে। তিনি স্বামীজীর ব্যক্তিত্বে, তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হলেন। স্বামীজীর ব্যক্তিত্বে, তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হলেন। স্বামীজীর আমেরিকায় আসবার উদ্দেশ্য, তাঁর অসুবিধার কথা শুনে ধর্মমহাসভার সাথে যুক্ত মিঃ বনিকে একটি চিঠি লিখে দিলেন। তাতে মিঃ রাইট লিখেছিলেন এই অজ্ঞাতনামা হিন্দু সন্ন্যাসী আমাদের সব পণ্ডিতদের চেয়েও বেশি পণ্ডিত।

রাইট চিঠির সাথে শিকাগো যাওয়ার টিকিট কিনে দিলেন স্বামীজী যখন শিকাগো শহরে এসে পৌঁছলেন তখন দিন শেষ হয়ে এসেছিল। ধর্মমহাসভার অফিসের ঠিকানা। জানেন না। স্বামীজী দু-একজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁরা স্বামীজীর অদ্ভুত পোশাক দেখে উপহাস করল। রাত্রি কাটাবার জন্য কোথাও কোন আশ্রয় পেলেন না। শেষে নিরুপায় হয়ে রেলের মালগুদামের সামনে পড়ে থাকা একটি বড় প্যাকিং বাক্সের মধ্যে জড়সড় হয়ে বসে রইলেন। বাইরে প্রবল শীত। সমস্ত রাত্রি সেইভাবে কেটে গেল। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায়, অনাহারে স্বামীজীর তখন অর্ধমৃত অবস্থা। সকাল হতেই প্রচণ্ড ক্ষুধায় দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে আরম্ভ করলেন। কিন্তু কারো কাছ থেকে একমুষ্টি ভিক্ষা পেলেন না। ক্লান্ত অবসন্ন দেহে একটি বাড়ির সামনে এসে পড়লেন।

সেই বাড়িতে থাকতেন মিসেস জর্জ ডব্লিউ হেইল নামে একজন বয়স্কা মহিলা। স্বামীজীকে দেখামাত্রই তাঁর অন্তরে এমন এক ভাবের সঞ্চার হল, তিনি স্বামীজীকে নিজের ঘরে নিয়ে এসে যথেষ্ট আদর যত্ন করলেন। ধর্মসভায় যোগদানের ব্যাপারে এই ভদ্রমহিলা স্বামীজীকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন।

যথাসময়ে স্বামীজী হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে ধর্মসভার অন্তর্ভুক্ত হলেন। এই ব্যাপারে প্রতাপচন্দ্র মজুমদার নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা স্বামীজী নিজেই লিখে গিয়েছেন।

সকলেই বক্তৃতা প্রস্তুত করিয়া আনিয়াছিলেন। আমি নির্বোধ, আমি কিছুই প্রস্তুত করি নাই। দেবী সরস্বতীতে প্রণাম করিয়া অগ্রসর হইলাম। ব্যারোজ মহোদয় আমার পরিচয় দিলেন। আমার গৈরিক বসনে শ্রোতাবর্গের চিত্ত কিছু আকৃষ্ট হয়েছিল।

আমি আমেরিকাবাসীদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে আরো দু-এক কথা বলে একটি ক্ষুদ্র বক্তৃতা করলাম। যখন আমি আমেরিকাবাসী ভগ্নী ও ভ্রাতৃগণ বলিয়া সভাকে সম্বোধন করিলাম তখন দুই মিনিট ধরিয়া এমন করতালি ধ্বনি হইতে লাগিল যে কান যেন কালা করিয়া দেয়। তারপর আমি বলতে আরম্ভ করিলাম। যখন আমার বলা শেষ হইল আমি তখন হৃদয়ের আবেগেই একেবারে যেন অবশ হইয়া পড়িলাম। পর দিন সব খবরের কাগজ বলিতে লাগিল আমার বক্তৃতাই সেইদিন সকলের প্রাণে লাগিয়াছে। সুতরাং তখন সমগ্র আমেরিকা আমাকে জানিতে পারিল।”

এ্যানি বেসান্ত লিখেছেন, “মহিমাময় মূর্তি, গৈরিক বসন, ভারতীয় সূর্যের মত ভাস্বর, উন্নত শির, মর্মভেদী দৃষ্টিপূর্ণ চক্ষু, চঞ্চল ওষ্ঠাধর, মনোহর অঙ্গভঙ্গী…স্বামী বিবেকানন্দ আমার দৃষ্টিপথে এইরূপে প্রতিভাত হয়েছিলেন। প্রথম দৃষ্টিতে তিনি যোদ্ধা সন্ন্যাসী ছিলেন।”

স্বামী বিবেকানন্দ সেদিন পরাধীন ভারতবর্ষের প্রতিনিধি হিসেবে দুপ্তকণ্ঠে প্রাচ্যের সুমহান আদর্শকে তুলে ধরেছিলেন বিশ্বের সামনে। তাঁর মধ্যে এক দৈবশক্তি জেগে উঠেছিল। সেদিন তার মধ্যে পাশ্চাত্যের মানুষ দেখেছিল ভারতের মহিমান্বিত রূপ।

শিকাগো ধর্মসভা শেষ হবার পর স্বামীজী দু মাস হিন্দু ধর্ম প্রসঙ্গে বক্তৃতা দিয়ে নিজেকে নিবৃত্ত রাখেননি। পাশ্চাত্য সভ্যতার যা কিছু শ্রেষ্ঠ গুণ তাকে উপলব্ধি করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তিনি দেখেছিলেন তাদের বিজ্ঞানে অগ্রগতি। তাই তিনি লিখেছিলেন প্রাচ্যকে নিতে হবে প্রাচ্যের আধ্যাত্মিক জ্ঞান। এই দু-এর সম্মেলনেই গড়ে উঠবে প্রকৃত সভ্যতা।

প্রায় দু বছর তিনি আমেরিকাতে ছিলেন। সেখানকার বড় বড় শহরে ঘুরে ঘুরে তিনি বক্তৃতা দিতেন। তাঁর এই বক্তৃতায় আমেরিকার শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগিয়েছিল। বহু মানুষ তার ভক্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু ভারতীয় ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ তাঁর খ্যাতি প্রভাবে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। তারা স্বামীজীকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। আমেরিকায় থাকার সময় মিস হেনরিয়েটা মুলার নামে এক ইংরেজ মহিলার আমন্ত্রণে ১৮৯৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ইংলন্ডে এসে পৌঁছলেন। কয়েক মাস পরেই আবার আমেরিকায় যেতে হয়। চার মাস পর পুনরায় তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। প্রায় সাত মাস ইংলণ্ডে ছিলেন। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অভূতপূর্ব খ্যাতি অর্জন করেন। এখানেই পরিচয় হয় মার্গারেটের সাথে। যিনি পরবর্তীকালে হন স্বামীজীর প্রিয় শিষ্যা ভগ্নী নিবেদিতা।

ইংলণ্ডে স্বামীজীর প্রভাব সম্পর্কে বিপিনচন্দ্র পাল একটি চিঠিতে লিখেছেন, ইংলণ্ডের অনেক জায়গায় আমি এমন বহু লোকের সান্নিধ্যে এসেছি যারা স্বামী বিবেকানন্দের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি পোষণ করেন। সত্য বটে আমি তাঁর সম্প্রদায়ভুক্ত নই তথাপি আমাকে স্বীকার করতেই হবে বিবেকানন্দের প্রভাবগুণেই ইংলণ্ডে এখানকার অধিকাংশ লোক আজকাল বিশ্বাস করে যে প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রগুলোর মধ্যে বিস্ময়কর আধ্যাত্মিক তত্ত্ব নিহিত আছে।

১৮৯৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তিনি ভারতের দিকে যাত্রা শুরু করলেন। দীর্ঘ চার বছরের বিদেশ ভ্রমণ শেষ হল। “এবার কেন্দ্র ভারতবর্ষ”। ১৮৯৭ সালের ১৫ই জানুয়ারি তিনি কলম্বেয় এসে পৌঁছান।

স্বামীজী শুধুমাত্র প্রাচ্যের বাণীকে ইউরোপ আমেরিকায় তুলে ধরে দেশের সম্মান বৃদ্ধি করেননি তার এই ঐতিহাসিক সাফল্যে ভারতবর্ষের মানুষ ফিরে পেয়েছিল তাদের আত্মবিশ্বাস আর আত্মমর্যাদা। যুগ যুগ ধরে পরাধীনতা, অশিক্ষা আর দারিদ্রের মধ্যে ভারতবর্ষের মানুষ হারিয়ে ফেলেছিল নিজেকে। সেই দিন তারই অনুপ্রেরণায় ভারতবর্ষের মানুষ নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করল।

২০শে জানুয়ারি কলকাতায় এসে পৌঁছলেন স্বামীজী। সেই দিন সমস্ত কলকাতা উত্তাল হয়ে উঠেছিল। কলকাতা তথা ভারতবর্ষের মানুষ সেই দিন তাদের অন্তরের সব শ্রদ্ধা ভালবাসা উজাড় করেছিল স্বামীজীর পদপ্রান্তে।

দেশে ফিরে এসেও বিশ্রাম নেবার কোন অবকাশ পেলেন না স্বামীজী। তিনি নিজেও জানতেন দেশের মানুষকে জাগিয়ে তোলবার জন্য যে গুরুদায়িত্ব তিনি গ্রহণ করেছেন, সেখানে বিশ্রাম নেবার মত কোন অবকাশ নেই। তিনি দেশের যুবসমাজকে আহ্বান করে বলেছিলেন, “আমি তোমাদের নিকট এই গরীব অজ্ঞ অত্যাচারপীড়িতদের জন্য সহানুভূতি, এই প্রাণপণ চেষ্টা দায়স্বরূপ অর্পণ করিতেছি। তোমরা সারা জীবন এই ত্রিশ কোটি ভারতবাসীর উদ্ধারের ব্রত গ্রহণ কর–আমি সূচনা করিয়াছি, তোমরা সম্পূর্ণ কর।”

জাতীয় কল্যাণের এই আদর্শকে সামনে রেখে তিনি দেশের তরুণ সম্পদায়ের সামনে কর্মযোগের বাণীকে প্রচার করতে চেয়েছেন। এবং এই কাজের জন্য প্রয়োজন একটি কেন্দ্রীয় মঠের। যেখান থেকে শুধু তিনি নন, তাঁর শিষ্যরাও সন্ন্যাসযোগ ও কর্মযোগের সুমহান বাণীকে তুলে ধরতে পারবে দেশ-বিদেশে মানুষের কাছে।

১৮৯৭ সালে ১লা মে বলরাম বসুর বাড়িতে স্বামীজীর আহ্বানে শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্ত ও সন্ন্যাসীরা সকলে মিলিত হলেন। স্বামীজী বললেন, “নানান দেশ ঘুরে আমার ধারণা হয়েছে সঙ্ঘ ব্যতীত কোন বড় কাজ হতে পারে না।”

প্রতিষ্ঠিত হল রামকৃষ্ণ মিশন। বলা হল “মানবের হিতার্থে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ যে সকল তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন ও যে কার্যে তাহার জীবন প্রতিপাদিত হইয়াছে, তাহার প্রচারে এবং মনুষ্যের দৈহিক, মানসিক ও পারমার্থিক উন্নতিকল্পে যাহাতে সেই সকল তত্ত্ব প্রযুক্ত হইতে পারে তদ্বিষয়ে সাহায্য করা এই মিশনের উদ্দেশ্য।”

গঙ্গার তীরে বেলুড়ে জমি কেনা হল। এখানেই ১৮৯৮ সালের ৯ই ডিসেম্বর শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ স্থাপিত হল। বিবেকানন্দ সমস্ত আঞ্চলিকতার ঊর্ধ্বে উঠে রামকৃষ্ণ মিশনকে সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। স্বামীজীর ভক্ত মিসেস ওলি বুল ও মিস হেনরিয়েটা মূলারের প্রদত্ত অর্থেই বেলুড় মঠের জমি কেনা হয় ও ভবন নির্মাণ করা হয়।

এই সময় স্বামীজীকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হত। ক্রমশই তাঁর শরীর ভেঙে পড়ছিল। মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। চিকিৎসকের নির্দেশে দার্জিলিং গেলেন।

১৮৯৮ সালে কলকাতায় প্লেগ দেখা দিল। স্বামীজী ছুটে এলেন কলকাতায়। শিষ্যদের নিয়ে শুরু করলেন অসুস্থ মানুষদের সেবা। রামকৃষ্ণের শিবজ্ঞানে জীব সেবার আদর্শ মূর্ত হয়ে উঠল স্বামীজীর মধ্যে। ১৮৯৯ সালের ২০শে জুন স্বামীজী দ্বিতীয়বারের জন্য ইউরোপ আমেরিকা ভ্রমণে বার হলেন। এই বার তার সাথে ছিলেন স্বামী তুরিয়ানন্দ ও তাঁর মানসকন্যা নিবেদিতা। সর্বত্রই তিনি পৃজিত হয়েছেন ভারতবর্ষের এক মহান মানব হিসাবে। তিনি পাশ্চাত্যের মানুষের কাছে উপনিষদের বাণীকেই নতুন করে প্রচার করেছিলেন। তিনি বললেন, মানুষের অন্তরে যে দেবত্ব আছে তাকে জাগিয়ে তোলাই মনুষ্যত্বের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইংল্যাণ্ড আমেরিকা ছাড়াও প্যারিস ভিয়েনা এথেন্স মিশর ভ্রমণ শেষ করে ৯ই ডিসেম্বর ১৯০০ সালে বেলুড় মঠে ফিরে এলেন।

১৯০১ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি বেলুড় মঠের ট্রাস্ট ভীড় রেজিস্ট্রী হয়। ১০ই ফেব্রুয়ারি মঠের ট্রাস্টীদের সর্বসম্মতিক্রমে স্বামী ব্রহ্মানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ এবং স্বামী সারদানন্দ সাধারণ সম্পাদক হন।

স্বামীজী মঠের সমস্ত কাজকর্ম থেকে প্রকৃতপক্ষে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যান। কেউ কোন পরামর্শ চাইলে তিনি তাদের বুদ্ধিমত কাজ করার পরামর্শ দিতেন।

অত্যধিক পরিশ্রমে স্বামীজীর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল। বেশির ভাগ সময় ধ্যানমগ্ন হয়ে থাকতেন। ১৯০২ সালের জানুয়ারি মাসে জাপানী পণ্ডিত ডাঃ ওকাবুর সাথে বুদ্ধগয়ায় গেলেন। সেখানে থেকে কাশী। কিছুদিন পর আবার বেলুড়ে ফিরে এলেন। শরীর একেবারেই ভেঙে পড়েছিল।

১৯০২ সালের ৩রা জুলাই স্বামীজী তার ভক্ত-শিষ্যদের খাওয়ার পর নিজে হাত ধুইয়ে দিলেন। একজন জিজ্ঞাসা করল আমরা কি আপনার সেবা গ্রহণ করতে পারি? স্বামীজী বললেন, যীশুও তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন।

পরদিন ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই স্বামীজী সকাল থেকেই উৎফুল্ল ছিলেন। সকলের সঙ্গে একসাথে খেয়ে সন্ধ্যায় পর নিজের ঘরে ধ্যানে বসলেন। রাত ৯টা ৫০ মিনিটে সেই ধ্যানের মধ্যেই মহাসমাধিতে ডুবে গেলেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৯ বছর ৬ মাস।

সকল অধ্যায়

১. ১. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রি:)
২. ২. হযরত ঈসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ৬-৩০)
৩. ৩. হযরত মুসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দী)
৪. ৪. ইমাম আবু হানিফা (রঃ) (৭০২–৭৭২ খ্রি:)
৫. ৫. জাবির ইবনে হাইয়ান (৭২২-৮০৩ খ্রি:)
৬. ৬. ইমাম বোখারী (রঃ) (৮১০-৮৭০ খ্রি:)
৭. ৭. আল বাত্তানী (৮৫৮–৯২৯ খ্রি:)
৮. ৮. আল ফারাবী (৮৭০-৯৬৬ খ্রি:)
৯. ৯. মহাকবি ফেরদৌসী (৯৪১–১০২০ খ্রি:)
১০. ১০. আল বেরুনী (৯৭৩–১০৪৮ খ্রি:)
১১. ১১. ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রি:)
১২. ১২. ওমর খৈয়াম (১০৪৪-১১২৩ খ্রি:)
১৩. ১৩. ইমাম গাজ্জালী (রঃ) (১০৫৮–১১১১ খ্রি:)
১৪. ১৪. ইবনে রুশদ (১১২৬১১৯৯ খ্রি:)
১৫. ১৫. আল্লামা শেখ সা’দী (রঃ) (১১৭৫–১২৯৫ খ্রি:)
১৬. ১৬. মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রঃ) (১২০৭-১২৭৩ খ্রি:)
১৭. ১৭. ইবনুন নাফিস (১২০৮-১২৮৮ খ্রি:)
১৮. ১৮. ইবনে খালদুন (১৩২২–১৪০৬ খ্রীঃ)
১৯. ১৯. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রীঃ)
২০. ২০. মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা (১৮৮১-১৯৩৮)
২১. ২১. গৌতম বুদ্ধ (খ্রি: পূ: ৫৬৩ খ্রি: পূ: ৪৮৩)
২২. ২২. শ্রীরামকৃষ্ণ (১৮৩৩-১৮৮৬)
২৩. ২৩. শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩)
২৪. ২৪. স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২)
২৫. ২৫. যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে (১৭৪৯–১৮৩২)
২৬. ২৬. আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)
২৭. ২৭. ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২)
২৮. ২৮. ফিওদর মিখাইলভিচ দস্তয়ভস্কি (১৮২১-১৮৮১)
২৯. ২৯. আলেকজান্ডার দি গ্রেট (৩৫৬ খ্রিস্ট পূর্ব-৩২৩ খ্রিস্ট পূর্ব)
৩০. ৩০. লেনিন (১৮৭০-১৯২৪)
৩১. ৩১. মাও সে তুং (১৮৯৩-১৯৭৬)
৩২. ৩২. কনফুসিয়াস (খ্রি: পূর্ব ৫৫১ খ্রি: পূর্ব ৪৭৯)
৩৩. ৩৩. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০)
৩৪. ৩৪. পাবলো পিকাসো (১৮৮১-১৯৭৩)
৩৫. ৩৫. ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬)
৩৬. ৩৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮)
৩৭. ৩৭. বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (১৭০৬-১৭৯০)
৩৮. ৩৮. কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)
৩৯. ৩৯. হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩)
৪০. ৪০. ত্যাগরাজ (১৭৬৭–১৮৪৭)
৪১. ৪১. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১)
৪২. ৪২. ভাস্করাচার্য (১১১৪-১১৮৫)
৪৩. ৪৩. পার্সি বিশী শেলী (১৭৯২-১৮২২)
৪৪. ৪৪. জোহন কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)
৪৫. ৪৫. জোহান্স গুটেনবার্গ (১৪০০–১৪৬৮)
৪৬. ৪৬ জুলিয়াস সিজার (খ্রি: পূ: ১০০খ্রি: পূ: ৪৪)
৪৭. ৪৭. গুলিয়েলমো মার্কোনি (১৮৭৪-১৯৩৭)
৪৮. ৪৮. রাণী এলিজাবেথ (১৫৩৩-১৬০৩)
৪৯. ৪৯. জোসেফ স্টালিন (১৮৮২-১৯৫৩)
৫০. ৫০. ফ্রান্সিস বেকন (খ্রি: ১৫৬১ খ্রি: ১৬২৬)
৫১. ৫১. জেমস ওয়াট (১৭৩৬-১৮১৯)
৫২. ৫২. চেঙ্গিস খান (১১৬২–১২২৭)
৫৩. ৫৩. এডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫)
৫৪. ৫৪. লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)
৫৫. ৫৫. অশোক (আনুমানিক খ্রি: পূ: ৩০০–২৩২ খ্রি: পূর্ব)
৫৬. ৫৬. সিগমুন্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯)
৫৭. ৫৭. আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল (১৮৪৭-১৯২২)
৫৮. ৫৮. যোহান সেবাস্তিয়ান বাখ (১৬৮৫–১৭৫০)
৫৯. ৫৯. জন. এফ. কেনেডি (১৯১৭-১৯৬৩)
৬০. ৬০. গ্যালিলিও গ্যালিলাই (১৫৬৪-১৬৪২)
৬১. ৬১. হো চি মিন (১৮৯০–১৯৬৯)
৬২. ৬২. মহাত্মা গান্ধীজী (১৮৬৯-১৯৪৮)
৬৩. ৬৩. লেভ তলস্তয় (১৮২৮–১৯১০)
৬৪. ৬৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)
৬৫. ৬৫. হিপোক্রেটস (৪৬০-৩৭০)
৬৬. ৬৬. জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮–১৯৩৭)
৬৭. ৬৭. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫)
৬৮. ৬৮. উইলিয়ম শেকস্‌পীয়র (১৫৬৪-১৬১৬)
৬৯. ৬৯. জন মিলটন (১৬০৮–১৬৭৪)
৭০. ৭০. সক্রেটিস (৪৬৯-৩৯৯ খৃঃ পূ:)
৭১. ৭১. জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯)
৭২. ৭২. উইলিয়াম হার্ভে (১৫৭৮-১৬৫৭)
৭৩. ৭৩. পিথাগোরাস (৫৮০–৫০০)
৭৪. ৭৪. ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩-১৮৭৩)
৭৫. ৭৫. লুই পাস্তুর (১৮২২-১৮৯৫)
৭৬. ৭৬. নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)
৭৭. ৭৭. এন্টনি লরেন্ট ল্যাভোশিঁয়ে (১৭৪৩-১৭৯৪)
৭৮. ৭৮. এডওয়ার্ড জেনার (১৭৪৯–১৮২৩)
৭৯. ৭৯. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০-১৯১০)
৮০. ৮০. হেনরিক ইবসেন (১৮২৮-১৯০৬)
৮১. ৮১. টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১)
৮২. ৮২. জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৬৫-১৯৫০)
৮৩. ৮৩. মার্টিন লুথার কিং (১৯২৯–১৯৬৮)
৮৪. ৮৪. সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)
৮৫. ৮৫. রম্যাঁ রোলাঁ (১৮৬৬-১৯৪৪)
৮৬. ৮৬. পাবলো নেরুদা (১৯০৪–১৯৭৩)
৮৭. ৮৭. আর্কিমিডিস (২৮৭-২১২খৃ. অব্দ)
৮৮. ৮৮. অ্যারিস্টটল (৩৮৫-৩২২খৃ. পূ.)
৮৯. ৮৯. মেরি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)
৯০. ৯০. জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)
৯১. ৯১. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২)
৯২. ৯২. উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট (১৮৭১-১৯৪৮) (১৮৬৭-১৯১২)
৯৩. ৯৩. চার্লি চ্যাপলিন (১৮৮৯-১৯৭৭)
৯৪. ৯৪. চার্লস ডিকেন্স (১৮১২-১৮৭০)
৯৫. ৯৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮-১৯৩২)
৯৬. ৯৬. আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮০৯-১৮৬৫)
৯৭. ৯৭. জন কিটস (১৭৯৫-১৮২১)
৯৮. ৯৮. প্লেটো (খ্রীস্টপূর্ব ৩২৭-খ্রীস্টপূর্ব ৩৪)
৯৯. ৯৯. মাইকেলেঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪)
১০০. ১০০. স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন