৪০. ত্যাগরাজ (১৭৬৭–১৮৪৭)

মাইকেল এইচ. হার্ট

পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ইতিহাসে যেমন বিঠোফেন মোৎসার্টের নাম শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হয়, ভারতীয় সঙ্গীতের জগতে তেমনি এক মহান পুরুষ ত্যাগরাজ। ভারতীয় সঙ্গীতের অতলান্ত সৌন্দর্যকে তিনি তুলে ধরেছিলেন সাধারণ মানুষের কাছে। তার জীবনে সঙ্গীত আর ধর্ম মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। এই সাধক সঙ্গীতশিল্পীর জন্ম দক্ষিণ ভারতের তাঞ্চোর জেলার তিরুভারুর নগরে। জন্ম তারিখ ৪ঠা মে ১৭৬৭ সাল। যদিও জন্ম তারেখ নিয়ে বিতর্ক আছে। শোনা যায় ত্যাগরাজের পিতা রাম ব্ৰহ্মণকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, তিনি খুবই শ্রীঘ্রই একটি পুত্র সন্তানের পিতা হবেন, এই পুত্র সঙ্গীত সাহিত্য ক্ষেত্রে মহাকীর্তিমান হবে।

ত্যাগরাজের পিতা রাম ব্রাহ্মণ ছিলেন বিদ্বান ধার্মিক সৎ মানুষ। ছেলেবেলায় রামনবমী উৎসবের সময় ত্যাগরাজ বাবার সাথে গিয়ে রামায়ণ পড়তেন। তাঞ্জোরের রাজা রাম ব্ৰহ্মণকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। তিনি কিছু জমি আর একটি বাড়ি দিয়ে যান। এইটুকুই ছিল তাঁর সম্পত্তি।

ত্যাগরাজের মা সীতামামার কণ্ঠস্বর ছিল অপূর্ব। ত্যাগরাজের সঙ্গীতশিক্ষা শুরু হয় তাঁর মায়ের কাছে। সীতামামার ছিলেন সৎ উদার স্নেহশীলা। মায়ের এই সব চারিত্রিক গুণগুলো ত্যাগরাজের জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল।

ত্যাগরাজের শিক্ষা শুরু হয় তাঁর পিতার কাছে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হলেন তিরুভাইয়ের সংস্কৃত স্কুলে। ছেলেবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে ফুটে উঠেছিল কবি প্রতিভা। যখন তিনি ছয় বছরের বালক, ঘরের দেওয়ালে প্রথম কবিতা লেখেন। তারপর থেকে নিয়মিতভাবেই তিনি কবিতা রচনা করতেন। এই সব কবিতাগুলোর মধ্যে শিশুসুলভ সরলতা থাকলেও তাঁর প্রতিভার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয় কয়েকজন পণ্ডিত ত্যাগরাজের কবিতা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন।

বাবা যখন ভজন গাইতেন তিনিও তার সাথে যোগ দিতেন। অন্য সব গানের চেয়ে ভজন তাকে বেশি আকৃষ্ট করত। এই সময় তিনি দুটি ভজন রচনা করেন “নমো নমো রাঘবায়” ও “তব দাসোহম”–এই দুটি ভজন পরবর্তীকালে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।

ত্যাগরাজের বাবা প্রতিদিন সকালে পূজা করতেন। তাঁর পূজার ফুল আনবার জন্য ত্যাগরাজ কিছুদূরে একটি বাগানে যেতেন। পথের ধারে সেন্টি বেঙ্কটরমানাইয়ারের বাড়ি। বেঙ্কটরমনাইয়ার ছিলেন নামকরা সঙ্গীত গুরু। বাড়িতে নিয়মিত ছাত্রদের সঙ্গী শিক্ষা দিতেন। ত্যাগরাজ বেঙ্কটরমনাইয়ার বাড়ির সামনে এলেই দাঁড়িয়ে পড়তেন। গভীর মনোযোগ সহকারে তাঁর গান শুনতেন। একদিন রাম ব্ৰহ্মণের ব্যাপারটি নজরে পড়ল। তিনি বেঙ্কটরমনাইয়ের উপর ছেলের সঙ্গীতশিক্ষার ভার দিলেন।

সঙ্গীত ত্যাগরাজের ছিল স্বভাবসিদ্ধ প্রতিভা। অল্পদিনের মধ্যেই গুরুর যা কিছু বিদ্যা ছিল তা আত্মস্থ করে নিলেন।

ত্যাগরাজের শৈশব কৈশোর কেটেছিল সঙ্গীত ও সাহিত্য শিক্ষার পরিবেশের মধ্যে বাবা-মায়ের কাছে একদিকে তেমনি সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা করতেন বাবার সাথে। মহাকাব্য পুরাণ সঙ্গীত বিষয়ক বিভিন্ন রচনার সাথে অল্প বয়সেই পরিচিত হয়ে ওঠেন। উত্তরকালে সঙ্গীত বিষয়ে যে সব রচনা প্রকাশ করেছিলেন, প্রথম জীবনেই তার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল।

সে যুগের সঙ্গীত শিল্পীদের সঙ্গীতশাস্ত্র সম্বন্ধে কোন জ্ঞান ছিল না। তাই তাদের গানের মধ্যে নানান ব্যাকরণগত ভুল-ত্রুটি লক্ষ্য করা যেত। ত্যাগরাজ প্রথম রাগসঙ্গীতকে সুনির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে চালিত করে সঠিক পথে নিয়ে আসেন।

ত্যাগরাজের পিতার আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। তাই উত্তাধিকারসূত্রে বাড়ির অংশ ছাড়া আর কিছুই পাননি। কিন্তু তার জন্যে ত্যাগরাজের জীবনে কোন ক্ষোভ ছিল না। প্রকৃতপক্ষে তার জীবন ছিল সহজ সরল মহৎ আদর্শের সেবায় উৎসর্গীকৃত। নিজের, সংসারের ও শিষ্যদের ভরণপোষণের জন্য সামান্য কিছু জমি আর ভিক্ষাবৃত্তির উপরেই প্রধানত নির্ভরশীল ছিলেন।

১৮ বছর বয়সে ত্যাগরাজের বিবাহ হয়। স্ত্রী ছিলেন ত্যাগরাজের যোগ্য সহধর্মিণী। ত্যাগরাজের খ্যাতির কথা শুনে তাঞ্জোরের মহারাজা তাঁকে নিজের সভাগায়ক হিসাবে আমন্ত্রণ জানান। দক্ষিণ ভারতের তাঞ্জোর সঙ্গীতের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য স্থান। বহু মহান সঙ্গীত শিল্পী এখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রায় তিনশো বছর ১৬০০-১৯০০ ধরে তাঞ্জোর ছিল সঙ্গীতের পীঠস্থান। এখানকার রাজারা ছিলেন সঙ্গীতের প্রধান পৃষ্ঠস্থান। কিন্তু রাজপরিবারের কোন সম্মানের প্রতি তার সামান্যতম আকর্ষণ ছিল না তাই এই লোভনীয় প্রস্তাব তিনি হেলায় প্রত্যাখ্যান করেন। অর্থের লালসাকে তিনি ঘৃণা করতেন।

তাঁর বাড়িতে সব সময়েই শিষ্য, গায়ক, পণ্ডিতদের ভিড় লেগেই থাকত। এদের কেউ থাকত কয়েকদিন, কেউ কয়েক সপ্তাহ আর কেউ কয়েক মাস। এদের ভরণপোষণের জন্য সপ্তাহে একদিন ভিক্ষায় বার হবেন ত্যাগরাজ। তাঞ্জোরের মানুষ তাকে এত সম্মান করত, একদিনের ভিক্ষায় যা পেতেন তাতেই ভালভাবে সমস্ত সপ্তাহের ব্যয় মেটাতে পারতেন।

তার এই ভিক্ষাবৃত্তি ছিল বড় অদ্ভুত। কোন গৃহের দ্বারে যেতেন না। পথ দিয়ে ভজন গাইতে গাইতে হাঁটতেন। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল যেমন উদাত্ত তেমনি মধুর। চারদিকে এক স্বর্গীয় পরিমণ্ডল সৃষ্টি হত। পথের দুপাশের গৃহস্থরা যার যা সামর্থ্য ছিল, ভক্তিভরে এসে দিত ত্যাগরাজকে।

ত্যাগরাজ তখন সবেমাত্র যৌবনে পা দিয়েছেন। একদিন কাঞ্চিপুরম থেকে হরিদাস নামে এক ব্যক্তি তাকে ৯৬ কোটি বার রামনাম জপ করতে বলেন। ত্যাগরাজের মনে হল এ ঈশ্বরের আদেশ-একে কোনভাবেই লঙ্ঘন করা যাবে না। তারপর থেকে দীর্ঘ ২১ বছর তিনি প্রতিদিন ১,২৫, ০০০ বার করে রামনাম জপ করতেন। তার স্ত্রীও তার সাথে এইভাবে জপ করতেন। শোনা যায় মাঝে মাঝে জপ করতে করতে একসময় এত আত্মমগ্ন হয়ে যেতেন, তখন তার মনে হত স্বয়ং রাম যেন তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি দু চোখ মেলে তাকে প্রত্যক্ষ করতেন। মনের এই অনুভূতিতে তিনি রচনা করেছিলেন একটি বিখ্যাত গান “কানু গোন্টিনি” (আমি দেখা পেয়েছি)। মাঝে মাঝে যখন শ্রীরামের দর্শন পেতেন না, তার সমস্ত মন বেদনায় ভরে উঠত। এমনি এক সময়ে লিখেছিলেন “এলা নি দাইয়া রাহু”–তুমি কেন আমার প্রতি সদয় নও।

ক্রমশই ত্যাগরাজের খ্যাতি তাঞ্জোরের সীমানা ছাড়িয়ে দূর-দূরান্তরে ছড়িয়ে পড়ছিল। তাঁর রচিত গান বিভিন্ন অঞ্চলের গায়কেরা গাইতে আরম্ভ করল। শিক্ষার ব্যাপারে প্রাচীন কালের সঙ্গীত শিক্ষকদের মধ্যে লক্ষ্য করা যেত সংকীর্ণ গোঁড়ামি। তারা নিজেদের সঙ্গীতকলাকে শুধুমাত্র সন্তান আর শিষ্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখত। কিন্তু

ত্যাগরাজ ছিলেন সমস্ত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে।

যখন তার খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, দূর-দূরান্ত থেকে সঙ্গীতজ্ঞরা তাঁর কাছে আসত তাঁকে দর্শন করতে তিনি তাদের নিজের গৃহে আমন্ত্রণ করতেন, সেবা করতেন, নতুন গান যা তিনি রচনা করতেন তা শেখাতেন।

ত্যাগরাজ গানের সঙ্গে বীণা বাজাতেন। এই বীণাটিকে তিনি প্রত্যহ পূজা করতেন, গান শেষ হলে বীণাটি থাকত তাঁর পূজার ঘরে।

ত্যাগরাজের জীবন কাহিনী অবলম্বন করে বহু অলৌকিক প্রচলিত। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ হল স্বরার্ণব (ঈশ্বরের অনুগ্রহে প্রাপ্ত)। এই গ্রন্থে শিব ও পার্বতীর কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে সঙ্গীত বিষয়ে নানান আলোচনা করা হয়েছে। এই স্বরার্ণব গ্রন্থটি নাকি স্বয়ং নারদ ত্যাগরাজকে উপহার দিয়েছিলেন।

একটি কাহিনী প্রচলিত যে এক সন্ন্যাসী ত্যাগরাজের বাড়িতে এসে তার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে কিছু পুঁথি দিয়ে যান। রাওতে ত্যাগরাজ স্বপ্ন দেখলেন স্বয়ং দেবর্ষি তাঁর সামনে এসে বলছেন, তোমার গানে আমি তৃপ্ত হয়েছি, তাই পুঁথিগুলো রেখে গেলাম। এর থেকে তুমি নতুন পুঁথি রচনা কর। সেই সব পুঁথি থেকে রচিত হয় ‘স্বরার্ণব।

ত্যাগরাজের জীবনে এই ধরনের ঘটনা আরো কয়েকবার ঘটেছে। যখনই তিনি গভীর কোন সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন, কোন অলৌকিক শক্তির কৃপায় রক্ষা পেয়েছেন। যখন তিনি মাত্র পাঁচ বছরের বালক, গুরুতর অসুখে পড়েন, সকলেই তাঁর জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিল, এমন সময় এক সন্ন্যাসী এসে ত্যাগরাজের বাবাকে বললেন, কোন চিন্তা করো না, তোমার পুত্র কয়েকদিনেই সুস্থ হয়ে উঠবে। পরদিনই একেবারে সুস্থ হয়ে গেলেন ত্যাগরাজ।

জীবনে শুধু ঈশ্বর অনুগ্রহ পাননি ত্যাগরাজ। তাঁর জীবনও ঈশ্বরের মতই পবিত্র। তাঁকে দেখে মনে হত সাক্ষাৎ যেন পুরাকালের কোন ঋষি–স্থির শান্ত নম্র। চোখে-মুখে সর্বদাই ফুটে উঠত এক পবিত্র আভা। যে মানুষই তাঁর সান্নিধ্যে আসত তারাই মুগ্ধ হয়ে যেত ঔদার্যপূর্ণ ব্যবহারে। কেউ যদি কখনো তার সাথে রূঢ় আচরণ করত, তাঁর প্রতিও তিনি ছিলেন উদার। কখনো তার মুখ দিয়ে একটিও কটু বাক্য বার হত না। তিনি বলতেন, যাই হোক না কেন সর্বদাই সত্যের পথ আঁকড়ে ধরে থাক। ঈশ্বরের করুণা একদিন না একদিন তোমার উপর বর্ষিত হবেই।

ত্যাগরাজের জীবনের দু একটি ঘটনার বিবরণ থেকে তাঁর উদার মহৎ চরিত্রের ধারণা পাওয়া যায়। ত্যাগরাজের সময়ে একজন বিখ্যাত শিল্পী ছিলেন ত্রিভুবন সীতারামাইয়া। সীতারামাইয়ার সবচেয়ে প্রিয় ছিল আনন্দ ভৈরবী রাগ। এই রাগটি ছিল অপূর্ব এবং এই রাগের উপর কয়েকটি গানও লিখেছিলেন। ত্যাগরাজের শিষ্যরা সীতারামাইয়ার কণ্ঠে আনন্দ ভৈরবী শুনে মুগ্ধ হয়ে গুরুকে গিয়ে বললেন।

একদিন সীতারামাইয়ের কণ্ঠে আনন্দ ভৈরবী শোনবার জন্যে একটি অনুষ্ঠানে এলেন ত্যাগরাজ। তাঁকে দেখা মাত্রই উপস্থিত দর্শকরা তাঁকে মঞ্চের কাছে যাবার পথ করে দিল। তখন সীতারামাইয়া আনন্দ ভৈরবী গাইছিলেন। ত্যাগরাজকে দেখামাত্রই তিনি গান থামিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে এসে ত্যাগরাজের পায়ে লুটিয়ে পড়লেন। “আপনার মত সঙ্গীতসাধক যেখানে উপস্থিত সেখানে আমি কেমন করে গাইব!”

ত্যাগরাজ তাকে তুলে ধরে বললেন, “তোমার আনন্দ ভৈরবী শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছি। এমন মধুর সঙ্গীত বহুদিন শুনিনি।”

ত্যাগরাজের কথা শুনে সীতারামাইয়া বললেন, “আপনার কাছে আমার একটি প্রার্থনা আছে।”

ত্যাগরাজ বললেন, “আমি আগেই তোমার প্রার্থনা মঞ্জুর করলাম, এবার বল কি তোমার প্রার্থনা।”

সীতারামাইয়া বললেন, “আপনি কোনদিন আনন্দ ভৈরবী রাগে সঙ্গীত রচনা করবেন না। ভবিষ্যতে যদি কেউ কোনদিন এর কারণ জানতে চায় তবে আপনার সাথে আমার নামটিও উচ্চারিত হব।”

সীতারামাইয়ার এই অদ্ভুত প্রস্তাব শুনে সকলে বিস্মিত হল। শিষ্যদের মধ্যে কয়েকজন ক্রুদ্ধ হল। কিন্তু ত্যাগরাজের মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা গেল না, হাসিমুখেই তিনি বললেন, “তোমার প্রার্থনা আমি পূরণ করব।”

ভবিষ্যতে আর কোন দিন তিনি আনন্দ ভৈরবী রাগে কোন গান রচনা করেননি। এবং ইতিপূর্বে যে গান রচনা করেছিলেন তাও আর কাউকে শেখাননি।

আর একবার এক গরীব দারোয়ানের শখ হল সে ত্যাগরাজের কাছে একটি ভজন শিখবে। কিন্তু দেখা গেল তার কন্টস্বর, ত্যাগরাজের রচিত যে সব ভজন ছিল তা গাইবার উপযুক্ত নয়, তখন ত্যাগরাজ অত্যন্ত সহজ একটি গান লিখে “নী দয়াচে” ( তোমার কৃপায়) তা দারোয়ানকে শিখিয়ে দিলেন।

ত্যাগরাজ যে বীণাটি বাজাতেন তা অত্যন্ত পবিত্রভাবে রাখতেন। কেউ তার বীণাটি স্পর্শ করত না। ত্যাগরাজের এক শিষ্য ছিল কুপ্পায়ার। তিনি বীণাবাদনে খুবই দক্ষ ছিলেন। কিন্তু সে কথা কোনদিন ত্যাগরাজের কাছে প্রকাশ করেননি। তার খুব ইচ্ছা ছিল একেবার গুরুর বীণাটি বাজাবেন। একদিন ত্যাগরাজ কোথাও গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে কুপ্পায়ার তার পূজার ঘরে ঢুকে বীণা বাজাতে আরম্ভ করলেন। অল্পক্ষণের মধ্যে

গভীর সুরের জগতে হারিয়ে গেলেন কুপ্পায়ার। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে ফিরে এলেন ত্যাগরাজ। তাঁর পূজার ঘর থেকে অপূর্ব বীণার ধ্বনি শুনে বিস্মিত হয়ে ঘরে ঢুকতেই কুপ্পায়ার বীণা নামিয়ে ত্যাগরাজের পায়ের উপর লুটিয়ে পড়লেন। আপনার অনুমতি ছাড়া আপনার বীণা স্পর্শ করেছি, আমাকে ক্ষমা করুন।

ত্যাগরাজ তাকে কাছে ডেকে বললেন, তুমি এমন অপূর্ব বীণা বাজাও অথচ আমাকে বলনি। এবার থেকে প্রত্যহ বীণা বাজাবে।

ত্যাগরাজের এই মহত্ত্বতা উদারতায় সকলেই মুগ্ধ হত। সে যুগের এক বিখ্যাত কবি নরসিংহ দাস একটি কবিতায় লিখেছেন, “ত্যাগরাজের মত রামভক্ত দ্বিতীয় কেউ নেই।”

তামিল ভাষায় এক বিখ্যাত গীতিকার হলেন গোপালকৃষ্ণ ভারতী। তখন গোপালকৃষ্ণ সামান্য কয়েকটি মাত্র ভজন রচনা করেছেন। একদিন বহুদুর পথ অতিক্রম করে এলেন ত্যাগরাজের গৃহে। অতিথিকে স্বাগত জানিয়ে তাগরাজ প্রশ্ন করলেন, আপনি কোথা থেকে। ত্যাগরাজ তার কথা শুনে বললেন, আপনি কি সেখানকার গোপালকৃষ্ণ জবাব দিলেন মায়াভরম থেকে। ত্যাগরাজ তার কথা শুনে বললেন, আপনি কি সেখানকার গোপালকৃষ্ণ ভারতাঁকে চেনেন যিনি অপূর্ব সব ভজন রচনা করেছেন?

তাঁর মত একজন নগণ্য কবিকে ত্যাগরাজের মত মহান শিল্পী এভাবে সম্মান জানবেন তা কল্পনা করতে পারেননি গোপালকৃষ্ণ। তিনি ত্যাগরাজের পদধূলি নিয়ে বললেন, আমিই সেই অধম কবি গোপালকৃষ্ণ। ত্যাগরাজের প্রশংসা অনুপ্রেরণায় পরবর্তীকালে গোপালকৃষ্ণ তামিল ভাষায় বহু বিখ্যাত ভজন রচনা করেছিলেন।

ত্যাগরাজ সচরাচর কোথাও যেতেন না। একবার কাঞ্চিপুর থেকে উপনিষধ বাহ্মণ নামে পণ্ডিত ব্যক্তি ত্যাগরাজকে একটি চিঠি লিখলেন।

তুমি আমার আশীর্বাদ নিও। আমি ছিলাম তোমার পিতার সহপাঠী বন্ধু। বহু মানুষের কাছে তোমার অসাধারণ সৃষ্টির কথা শুনেছি। তাই তোমাকে দেখবার জন্য আমার সমস্ত মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। আমার বয়েস একশো বছরের বেশি তাই তিরুভাইয়ারে গিয়ে তোমার সঙ্গে দেখা করার সামর্থ্য নেই। সেই কারণে তোমাকে আমার গৃহে আসবার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। পিতৃবন্ধুর এই আমন্ত্রণ অগ্রাহ্য করতে পারলেন না ত্যাগরাজ। শিষ্যদের সাথে নিয়ে রওনা হলেন কাঞ্চির দিকে। কাঞ্চিপুর কয়েকদিন কাটিয়ে ত্যাগরাজ এলেন তিরুপতিতে।

সেখানে মন্দির দর্শনের জন্য ৭ মাইল পাহাড়ি চড়াই ভাঙতে হত। যখন পাহাড়ের চুড়ায় এসে পৌঁছলেন তখন মন্দিরের দেবতার বিগ্রহের সামনে পর্দা পড়ে গিয়েছে। তার মনে হল ঐ পর্দা মানুষের মনের অহংকরের রূপ। তিনি পর্দার সামনে বসে স্বরচিত গান গাইতে আরম্ভ করলেন “কেন তুমি পর্দা সরাচ্ছ না।” দেবতাকে দেখার আকুল আকাঙ্ক্ষা ফুটে ওঠে তার গানের প্রতিটি ছত্রে। শোনা যায় ত্যাগরাজের গান শেষ হতেই ঠাকুরের সামনের পর্দা আপনা থেকেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

ত্যাগরাজ দেবতা বেঙ্কটেশ্বর-এর মূর্তি দর্শন করে সাথে সাথে আর একটি গান রচনা করে কল্যাণী রাগে গেয়ে উঠলেন, “তোমার মহিমা প্রকাশ করা কি আমার দ্বারা সম্ভব।”

ত্যাগরাজ যখন যেখানে যেতেন সেখানেই কোন না কোন রাগের উপর ভিত্তি করে গান রচনা করতেন। এই সব গানের মধ্যে একদিকে যেমন ফুটে উঠত তার কবিত্বশক্তি অন্যদিকে তাঁর ঈশ্বরভক্তি।

ত্যাগরাজ তার ভ্রমণ শেষ করে ফিরে চলেছেন গৃহের পথে। তার এক প্রিয় ভক্ত এক হাজার স্বর্ণমুদ্রার একটি থলি ত্যাগরাজের অজান্তেই পালকিতে রেখে দিয়েছিল। দু একজন শিষ্য শুধু সে কথা জানত। পথ চলতে চলতে সেই অর্থের কথা জানতে পেরে ত্যাগরাজ বললেন, এই অর্থ নিজেদের জন্য ব্যয় করা হবে না। রামনবমী উৎসবে গরীব দুঃখীদের জন্য ব্যয় করা হবে।

পথে নাগলাপুর বলে এক জায়গায় সকলে এসে পড়ল। সেখানে ছিল ভীষণ ডাকাতের ভয়। পালকি দেখেই ডাকাতেরা পিছু নিল–শিষ্যরা ভয় পেয়ে বলল, গুরুদেব এখন কি হবে? ঐ ১০০০ স্বর্ণমুদ্রা যে আমাদের কাছে রয়েছে।

ত্যাগরাজ বললেন, ঐ স্বর্ণমুদ্রা ওদের দিয়ে দাও। একজন শিষ্য বললেন, তাহলে রামনবমী উৎসব কেমন করে হবে? ত্যাগরাজ বললেন, যার উৎসব তিনিই সে কথা ভাববেন। আমরা ভাববার কে?

টাকা দিলেও যে ডাকাতেরা কোন ক্ষতি করবে না এমন নিশ্চয়তা ছিল না। তখন ত্যাগরাজ তার গান শুরু করলেন। হে রাম, তুমি লক্ষ্মণকে সাথে নিয়ে আমাদের উদ্ধার কর।

ডাকাদের দল প্রায় ত্যাগরাজের কাছাকাছি এসে পড়েছিল হঠাৎ কোথা থেকে ঝাঁকে ঝকে তাদের উপর তীর বর্ষণ হতে আরম্ভ করল। তারা চেয়ে দেখে দুটি ছোট ছেলে তীরধনুক হাতে ত্যাগরাজকে রক্ষা করছে।

ডাকাতদলও দূর হতে তাদের অনুসরণ করে চলল। সকালবেলায় ত্যাগরাজ এসে উঠলেন এক মন্দিরে। আর ডাকাতদের কি মনে হল কে জানে তারা সব অস্ত্র ফেলে দিয়ে ত্যাগরাজের কাছে জিজ্ঞাসা করল, কাল রাতের ঐ বালক দুটি কে?

ত্যাগরাজের মনে হল ও স্বয়ং রাম-লক্ষ্মণ ছাড়া আর কেউ নয়। তিনি ডাকাতদের বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, তোমরা কত ভাগ্যবান, তোমরা স্বয়ং বালক শ্রীরামের দর্শন পেয়েছ। ত্যাগরাজের সংস্পর্শে এসে ডাকাতদের জীবনের বিরাট পরিবর্তন হয়ে গেল। তারা ডাকাতি ছেড়ে দিয়ে চাষবাস আরম্ভ করল।

গুরু ত্যাগরাজ ও সঙ্গীত শিক্ষক হিসাবে ত্যাগরাজ ছিলেন অসাধারণ। তাঁর মত এত শিষ্য পৃথিবীর ইতিহাসে বোধহয় আর কোন গুরুরই ছিল না। এদের মধ্যে বহু শিষ্যই উত্তরকালে গীতিকার গায়ক হিসাবে খ্যাতিলাভ করে। এইভাবে শিষ্য পরম্পরায় ত্যাগরাজের সঙ্গীত ধারা সমগ্র দক্ষিণ ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল।

ত্যাগরাজ সকলকে একইভাবে শিক্ষা দিতেন না। যার যেমন সামর্থ্য যোগ্যতা প্রতিভা, তাকে তেমনিভাবেই শিক্ষা দিতেন। যদি দেখতেন তার উপযুক্ত সঙ্গীত নেই তখন তিনি নিজেই গীত রচনা করতেন। সাধারণত দুজন শিষ্যকে একসাথে শিক্ষা দিতেন। সমস্ত জীবন ধরে ত্যাগরাজ বিভিন্ন রাগের উপর অসংখ্য গান রচনা করেছেন। এই সব গান প্রথমে তিনি তার কয়েকজন কৃতি ছাত্রকে মুখে মুখে শিখিয়ে দিতেন তারপর তারা অন্যদের শেখাত।

ত্যাগরাজের ত্রিশজন শ্রেষ্ঠ ছাত্রের মধ্যে একজন ছিলেন বেঙ্কটরমন। তিনি ত্যাগরাজের সমস্ত রচনাকে লিপিবদ্ধ করে যান। এছাড়াও তিনি ত্যাগরাজের জীবনের বহু উল্লেখযোগ্য ঘটনা লিখে গিয়েছেন।

গীতিকার ত্যাগরাজ ও ভগীরথ যেমন গঙ্গাকে মর্ত্যে আনয়ন করেছিলেন, ত্যাগরাজ তেমনি সঙ্গীতের প্রবাহিনী ধারাকে নিয়ে যে সঙ্গীত রচনা করেছেন তা স্বতস্ফূর্তভাবেই তার মধ্য থেকে উৎসারিত হত। ত্যাগরাজের সময়কে বলা যেতে পারে দক্ষিণ ভারতের সঙ্গীতের স্বর্ণযুগ। একই সময় একাধিক গীতিকারের জন্ম হয়েছিল দক্ষিণ ভারতে কিন্তু ত্যাগরাজের প্রতিভার পাশে সকলেই নিষ্প্রভ হয়ে গিয়েছিল।

ভারতের আধ্যাত্মিক গৌরব ও ঐতিহ্যকে তিনি সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করেছেন। তাঁর প্রতিটি গানে রয়েছে সুললিত ভাষা আর ছন্দ। শুধুমাত্র সাহিত্যকীর্তি হিসাবেও তার মূল্য অসীম।

একই সাথে তিনি কবি ও গীতিকার! এক টোড়ি রাগেই তিনি প্রায় ৩০টি গানে সুর দিয়েছেন। তার এই গানগুলোকে বলা হয় কৃতি। তার সুরের মধ্যে ঘটেছে একদিকে যেমন মনোহারিত্ব অন্যদিকে তেমনি গভীরতা। সঙ্গীতভাব, সাহিত্যভাব এবং ভক্তিভাব এই তিনের সংমিশ্রণেই তাঁর রচনা সমৃদ্ধ হয়েছে।

শুধু প্রচলিত রাগের উপর ভিত্তি করেই তিনি যে তাঁর সঙ্গীতে সুর দিয়েছেন তাই নয়–বহু লুপ্তপ্রায়, অবলুপ্ত রাগকে তিনি উদ্ধার করে তাকে নতুন করে প্রচলন করেছিলেন।

কলাসঙ্গীত, ধর্মসঙ্গীত, নাট্যসঙ্গীত, কীর্তন সর্বক্ষেত্রেই তার সৃজনীশক্তির প্রকাশ দেখা যায়। তবে ভজন গানের ক্ষেত্রে তাঁর দান অতুলনীয়। তার আগে ধারণা ছিল ভজন গানে সুরের আধিক্য ভক্তিভাবকে বিনষ্ট করে, কিন্তু প্রচলিত এই ধারণাকে ভেঙে দিয়ে তাঁর গানে সুর ও ভক্তির এক আশ্চর্য সংমিশ্রণ সৃষ্টি করলেন। তিনি যখন ভজন গাইতেন, মানুষ তা মুগ্ধ বিস্ময়ে শুনত। সাধারণ মানুষ, সঙ্গীতপিপাসু মানুষ সুরের লালিত্যে মুগ্ধ হত, আবার সাধক ভক্ত পুরোহিতের দল ভক্তিভাবে আপুত হত।

এই প্রসঙ্গে ত্যাগরাজ নিজেই বলেছেন, “ঈশ্বরের নামগান গুণকীর্তনের সাথে যদি শুদ্ধ শ্রুতি, শুদ্ধ স্বর, শুদ্ধ লয়ের সংমিশ্রণ ঘটে তবেই দিব্য আনন্দের উপলব্ধি হয়।”

ত্যাগরাজের স্ত্রী মারা যায় ১৮৪৫ সালে। তারপর থেকেই ত্যাগরাজের জীবনে পরিবর্তন শুরু হল। দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়েই তিনি ঈশ্বরের ধ্যানে আত্মমগ্ন হয়ে থাকতেন।

মৃত্যুর দশ দিন আগে তিনি স্বপ্ন দেখলেন তার প্রভু যেন তাকে ডাকছেন। আর দশ দিনের মধ্যেই তার জীবন শেষ হবে।

তাঁর স্বপ্নকে গিরিপাইনেলা (কেন তুমি গিরি-চূড়া শীর্ষে) এই গানের মধ্যে প্রকাশ করেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন। তাঁর সব শিষ্যদের বললেন, তোমরা নামগান কর, আগামীকাল আমি মহাসমাধিতে বসব।

চারদিক থেকে শিষ্য ভক্তের দল জমায়েত হতে থাকে। ভজন গানে চারদিকে মুখরিত হয়ে উঠল। নির্দিষ্ট সময়ে ধ্যানে বসলেন ত্যাগরাজ। কিছুক্ষণ পর তার দেহ থেকে এক অপূর্ব আলোকচ্ছটা বেরিয়ে এল। সেই সাথে মহাপ্রয়াণ ঘটল এই সাধক সঙ্গীত শিল্পীর।

তাকে কাবেরী নদীর তীরে শুরু সেঁন্টি বেঙ্কটরমানাইয়ার সমাধির পাশে সমাহিত করা হল। ১৮৪৭ সালের ৬ জানুয়ারি।

প্রায় দেড়শো বছর আগে ত্যাগরাজ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও তাঁর সঙ্গীত বেঁচে আছে লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে। তিনি তার সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে ভারতের সনাতন আত্মাকে তুলে ধরেছেন সাধারণ মানুষের কাছে। তাই আজও তাঁর সঙ্গীত মানুষকে আপুত করে। উত্তীর্ণ করে অন্য এক জগতে।

সকল অধ্যায়

১. ১. বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রি:)
২. ২. হযরত ঈসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ৬-৩০)
৩. ৩. হযরত মুসা (খ্রীষ্ট পূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দী)
৪. ৪. ইমাম আবু হানিফা (রঃ) (৭০২–৭৭২ খ্রি:)
৫. ৫. জাবির ইবনে হাইয়ান (৭২২-৮০৩ খ্রি:)
৬. ৬. ইমাম বোখারী (রঃ) (৮১০-৮৭০ খ্রি:)
৭. ৭. আল বাত্তানী (৮৫৮–৯২৯ খ্রি:)
৮. ৮. আল ফারাবী (৮৭০-৯৬৬ খ্রি:)
৯. ৯. মহাকবি ফেরদৌসী (৯৪১–১০২০ খ্রি:)
১০. ১০. আল বেরুনী (৯৭৩–১০৪৮ খ্রি:)
১১. ১১. ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রি:)
১২. ১২. ওমর খৈয়াম (১০৪৪-১১২৩ খ্রি:)
১৩. ১৩. ইমাম গাজ্জালী (রঃ) (১০৫৮–১১১১ খ্রি:)
১৪. ১৪. ইবনে রুশদ (১১২৬১১৯৯ খ্রি:)
১৫. ১৫. আল্লামা শেখ সা’দী (রঃ) (১১৭৫–১২৯৫ খ্রি:)
১৬. ১৬. মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রঃ) (১২০৭-১২৭৩ খ্রি:)
১৭. ১৭. ইবনুন নাফিস (১২০৮-১২৮৮ খ্রি:)
১৮. ১৮. ইবনে খালদুন (১৩২২–১৪০৬ খ্রীঃ)
১৯. ১৯. কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রীঃ)
২০. ২০. মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পাশা (১৮৮১-১৯৩৮)
২১. ২১. গৌতম বুদ্ধ (খ্রি: পূ: ৫৬৩ খ্রি: পূ: ৪৮৩)
২২. ২২. শ্রীরামকৃষ্ণ (১৮৩৩-১৮৮৬)
২৩. ২৩. শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৩)
২৪. ২৪. স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২)
২৫. ২৫. যোহান উলফগ্যঙ ভন গ্যেটে (১৭৪৯–১৮৩২)
২৬. ২৬. আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫)
২৭. ২৭. ওয়াল্ট হুইটম্যান (১৮১৯-১৮৯২)
২৮. ২৮. ফিওদর মিখাইলভিচ দস্তয়ভস্কি (১৮২১-১৮৮১)
২৯. ২৯. আলেকজান্ডার দি গ্রেট (৩৫৬ খ্রিস্ট পূর্ব-৩২৩ খ্রিস্ট পূর্ব)
৩০. ৩০. লেনিন (১৮৭০-১৯২৪)
৩১. ৩১. মাও সে তুং (১৮৯৩-১৯৭৬)
৩২. ৩২. কনফুসিয়াস (খ্রি: পূর্ব ৫৫১ খ্রি: পূর্ব ৪৭৯)
৩৩. ৩৩. বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০)
৩৪. ৩৪. পাবলো পিকাসো (১৮৮১-১৯৭৩)
৩৫. ৩৫. ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬)
৩৬. ৩৬. হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮)
৩৭. ৩৭. বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (১৭০৬-১৭৯০)
৩৮. ৩৮. কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)
৩৯. ৩৯. হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩)
৪০. ৪০. ত্যাগরাজ (১৭৬৭–১৮৪৭)
৪১. ৪১. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১)
৪২. ৪২. ভাস্করাচার্য (১১১৪-১১৮৫)
৪৩. ৪৩. পার্সি বিশী শেলী (১৭৯২-১৮২২)
৪৪. ৪৪. জোহন কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)
৪৫. ৪৫. জোহান্স গুটেনবার্গ (১৪০০–১৪৬৮)
৪৬. ৪৬ জুলিয়াস সিজার (খ্রি: পূ: ১০০খ্রি: পূ: ৪৪)
৪৭. ৪৭. গুলিয়েলমো মার্কোনি (১৮৭৪-১৯৩৭)
৪৮. ৪৮. রাণী এলিজাবেথ (১৫৩৩-১৬০৩)
৪৯. ৪৯. জোসেফ স্টালিন (১৮৮২-১৯৫৩)
৫০. ৫০. ফ্রান্সিস বেকন (খ্রি: ১৫৬১ খ্রি: ১৬২৬)
৫১. ৫১. জেমস ওয়াট (১৭৩৬-১৮১৯)
৫২. ৫২. চেঙ্গিস খান (১১৬২–১২২৭)
৫৩. ৫৩. এডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫)
৫৪. ৫৪. লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)
৫৫. ৫৫. অশোক (আনুমানিক খ্রি: পূ: ৩০০–২৩২ খ্রি: পূর্ব)
৫৬. ৫৬. সিগমুন্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯)
৫৭. ৫৭. আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল (১৮৪৭-১৯২২)
৫৮. ৫৮. যোহান সেবাস্তিয়ান বাখ (১৬৮৫–১৭৫০)
৫৯. ৫৯. জন. এফ. কেনেডি (১৯১৭-১৯৬৩)
৬০. ৬০. গ্যালিলিও গ্যালিলাই (১৫৬৪-১৬৪২)
৬১. ৬১. হো চি মিন (১৮৯০–১৯৬৯)
৬২. ৬২. মহাত্মা গান্ধীজী (১৮৬৯-১৯৪৮)
৬৩. ৬৩. লেভ তলস্তয় (১৮২৮–১৯১০)
৬৪. ৬৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)
৬৫. ৬৫. হিপোক্রেটস (৪৬০-৩৭০)
৬৬. ৬৬. জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮–১৯৩৭)
৬৭. ৬৭. আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫)
৬৮. ৬৮. উইলিয়ম শেকস্‌পীয়র (১৫৬৪-১৬১৬)
৬৯. ৬৯. জন মিলটন (১৬০৮–১৬৭৪)
৭০. ৭০. সক্রেটিস (৪৬৯-৩৯৯ খৃঃ পূ:)
৭১. ৭১. জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯)
৭২. ৭২. উইলিয়াম হার্ভে (১৫৭৮-১৬৫৭)
৭৩. ৭৩. পিথাগোরাস (৫৮০–৫০০)
৭৪. ৭৪. ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩-১৮৭৩)
৭৫. ৭৫. লুই পাস্তুর (১৮২২-১৮৯৫)
৭৬. ৭৬. নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)
৭৭. ৭৭. এন্টনি লরেন্ট ল্যাভোশিঁয়ে (১৭৪৩-১৭৯৪)
৭৮. ৭৮. এডওয়ার্ড জেনার (১৭৪৯–১৮২৩)
৭৯. ৭৯. ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল (১৮২০-১৯১০)
৮০. ৮০. হেনরিক ইবসেন (১৮২৮-১৯০৬)
৮১. ৮১. টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১)
৮২. ৮২. জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৬৫-১৯৫০)
৮৩. ৮৩. মার্টিন লুথার কিং (১৯২৯–১৯৬৮)
৮৪. ৮৪. সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)
৮৫. ৮৫. রম্যাঁ রোলাঁ (১৮৬৬-১৯৪৪)
৮৬. ৮৬. পাবলো নেরুদা (১৯০৪–১৯৭৩)
৮৭. ৮৭. আর্কিমিডিস (২৮৭-২১২খৃ. অব্দ)
৮৮. ৮৮. অ্যারিস্টটল (৩৮৫-৩২২খৃ. পূ.)
৮৯. ৮৯. মেরি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)
৯০. ৯০. জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)
৯১. ৯১. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২)
৯২. ৯২. উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট (১৮৭১-১৯৪৮) (১৮৬৭-১৯১২)
৯৩. ৯৩. চার্লি চ্যাপলিন (১৮৮৯-১৯৭৭)
৯৪. ৯৪. চার্লস ডিকেন্স (১৮১২-১৮৭০)
৯৫. ৯৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮-১৯৩২)
৯৬. ৯৬. আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮০৯-১৮৬৫)
৯৭. ৯৭. জন কিটস (১৭৯৫-১৮২১)
৯৮. ৯৮. প্লেটো (খ্রীস্টপূর্ব ৩২৭-খ্রীস্টপূর্ব ৩৪)
৯৯. ৯৯. মাইকেলেঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪)
১০০. ১০০. স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন